#ওয়েলকাম_টু_মাই_ডার্কসাইড
#পর্ব_৪২
#সারিকা_হোসাইন
*********
দিনের আলো ফুরিয়ে দিগন্তের সূর্য ঘন তিমিরে তলিয়ে গিয়েছে বেশ কিছুক্ষণ আগে।নিশাচর প্রাণী গুলো বড় বড় ডানা ঝাপটিয়ে ছুটে চলেছে আকাশের এই কোন থেকে সেই কোন।বড় হাইওয়ে রাস্তার দুধার আলোকিত করে জ্বলে উঠেছে সোডিয়াম লাইট।সাই সাই গতিতে রাস্তা জুড়ে যাওয়া আসা করছে নানান পদের যানবাহন।
গাড়ির পেছনের সিট থেকে উঁকিঝুঁকি মেরে ঘটনা বুঝার চেষ্টা করছেন সুবহান শেখ।এই ভাবে এতো অল্প সময়ের ব্যাবধানে যুবরাজের গ্যাড়াকলে আটকা পড়বেন তা ঘূর্ণাক্ষরেও টের পাননি প্রবীণ এই ব্যাক্তি।টের পেলে কি আর দেশে আসেন নাকি?
যুবরাজ শক্ত স্কচটেপ এর সহিত তার দুই হাত দুই পা এবং মুখ বেঁ*ধে রেখেছে।সব কিছু অবলোকন করার জন্য শুধু দৃষ্টি দুটি খোলা।সেই খোলা দৃষ্টি দিয়েও আশেপাশের সব কিছু অনুধাবন করা যাচ্ছে না।এ যেনো বেঁচে থেকে মৃ*ত্যু সমতুল্য।
গাড়ির ভেতর সামান্য আলোকিত করে লুকিং গ্লাসে সুবহান শেখের অবস্থা দেখে নিলো যুবরাজ।
বুড়োটা হাত পা গুটিয়ে সিটে শুয়ে শুয়ে এদিক সেদিক তাকিমকি করছে।সুবহান শেখের এমন করুন অবস্থা দেখে বিগলিত হাসলো যুবরাজ।সেই হাসির শব্দ শুনে ধরফড়িয়ে নড়ে চড়ে উঠলো সুবহান শেখ।
‘দেখলে তো মামুজান ভাগ্নে হয়ে কিভাবে কব্জা করলাম তোমাকে?কেনো অযথা ভিমরুলের চাকে ঢিল ছুড়লে বলতে পারবে?নিজের পরিণতির জন্য নিজেই দায়ী হলে”চিন্তা করো না তোমার পিছে পিছে তোমার ছেলেও চম্বুকের মতো এসে হাজির হবে।বেশ মজার একটা খেলা হবে তাই না বলো?
যুবরাজের কথার মর্মার্থ বেশ ভালো করেই বুঝতে পারলেন সুবহান শেখ।তবুও মুখে কিছুই বলতে পারলেন না।কিন্তু চোখে তার ভীতি প্রদর্শিত হলো।
গাড়ির লাইট অফ করে যুবরাজ আরো জোরে স্কেলেটরে চেপে স্পিড বাড়িয়ে দিলো।নিয়ন্ত্রণ হীন গাড়ির মতো ঝড়ের বেগে চলতে লাগলো সুবহান শেখের কালো রঙের রোলস রয়েস গাড়ি খান।গাড়ির এতো গতিতে বেশ ভড়কে গেলেন সুবহান শেখ।ছেলেটাকে একদম ভরসা নেই।যখন তখন যা খুশি হয়ে যেতে পারে।শয়তানির চক্করে কোনো দিন সৃষ্টি কর্তাকেও ডাকা হয়নি।বুড়ো সুবহান জানেও না কিভাবে উপরওয়ালা কে ডেকে সন্তুষ্ট করতে হয়।আজ যেনো সত্যি সত্যি তার মৃ*ত্যু*র ডাক এসেছে!
*********
যুবরাজকে কোত্থাও খুঁজে না পেয়ে যখন ক্লান্ত শরীরে নিজের এপার্টমেন্টে ফিরে আসে শেরহাম তখন বৃহৎ গেটের কাছে কালো রঙের কেটিএম মটর বাইক দেখে বেশ অবাক হয় সে।
তার নিজের বাইক চালানোর হবি নেই,সুবহান শেখ বৃদ্ধ মানুষ তার দ্বারা এটা মোটেও সম্ভব নয়।তাহলে কে?
লম্বা লম্বা পা ফেলে বাইকের নিকট এসে থমকে দাঁড়ায় শেরহাম।বাইকের হেলমেট এ খুব সুন্দর করে পেইন্ট করে লিখা “yuv”
যুবরাজের নাম দেখেই রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে বাইক থেকে হেলমেট তুলে সজোড়ে আছাড় মেরে পাথরের বাঁধাই করা রাস্তার উপর ফেলে দিলো শেরহাম।এতো জোরে আছাড় খেয়েও অক্ষত অবস্থায় পড়ে রইলো যুবরাজের দামি হেলমেট খানা।
আর এক মুহূর্ত সেই জায়গায় দাঁড়ালো না শেরহাম।ক্রোধে জেদে ফুঁস ফুঁস করতে করতে নিজের ব্লেজারের ইনার পকেট থেকে রিভলবার বের করে গুলি লোড করে সেটা তাক করে ছুটে চললো ঘরের ভেতর।
প্রথমে ড্রয়িং রুমে তন্ন তন্ন করে পাগলের মতো খুজলো এরপর চিৎকার করে ডেকে উঠলো
“যুবরাজ বা*স্টা*র্ড কোথায় তুই?সাহস থাকে তো আমার সামনে আয়”
শূন্য বৃহৎ এপার্টমেন্টে শেরহামের কথাই প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে এলো কিন্তু যুবরাজের কোনো শব্দ পাওয়া গেলো না।শেরহামের ক্রোধের মাত্রা ছাড়িয়ে যাবার উপক্রম হলো।সিঁড়ি বেয়ে দৌড়ে দুতলায় উঠতে উঠতে ডেকে উঠলো
পপ্স”!
সুবহান শেখের ও কোনো আওয়াজ পাওয়া গেলো না।বদ্ধ উন্মাদের ন্যায় প্রতিটা ঘরে চিরুনি তল্লাশি চালালো শেরহাম।কিন্তু ঘরের কোত্থাও না আছে যুবরাজ আর না আছে সুবহান শেখ।
কোনো উপায় না পেয়ে শেরহাম সুবহান শেখের নম্বরে কল করলো।
প্রথম রিং বাজতে না বাজতেই ফোন রিসিভ হলো
“হেই ডুড ইটস ইউভি।তোমার পপ্স কে নিয়ে সমুদ্রে হাওয়া খেতে এলাম”
কথাটি হাস্যরসাত্মক স্বরে বলে শেরহাম কে কিচ্ছুটি বলার সুযোগ না দিয়েই খট করে লাইন কেটে দিলো যুবরাজ।
শেরহাম সাথে সাথেই আবার কল করলো
কিন্তু নম্বর সুইচড অফ”
রাগে নিজের চুলের মুঠি চেপে ধরে নিজের রাগ কন্ট্রোলের চেষ্টা করলো শেরহাম।এরপর দুচোখ বন্ধ করে নিজের ক্রোধ কে গিলে খেয়ে ক্রুর হাসি হাসলো
“তাহলে তোর বাপকে নিয়ে আমিও একটু পিকনিক খেয়ে আসি”!
রিভলবার হাতে নিয়েই হনহন করে নিজের গাড়িতে গিয়ে বসলো শেরহাম।এরপর গাড়িখানা স্টার্ট দিয়ে ছুটে চললো সাদাফ শাহীরের বাড়ির উদ্দেশ্যে।
*******
শেরহামের সাথে কথা শেষ করেই ফোনটা সজোড়ে রাস্তায় ছুড়ে মারলো যুবরাজ।শক্ত কাঠামোর পিচঢালা রাস্তায় বাড়ি খেয়ে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে ভেঙে পড়ে রইলো সুবহান শেখের বিদেশি দামি ফোন খানা।নিমিষেই আরেকটি মালবাহী কার্গো ট্রাক এসে রাস্তার সাথে পিষে ফেললো সিম সহ মোবাইলের অবশিষ্ট অংশ।
“তোর ছেলে তোর চাইতেও বোকা রে সুবহান।তোর ছেলের সাথে হাডুডু খেলতে আমার বাপকে ওই বাংলোতে আমি বসিয়ে রেখেছি নাকি?তামাম দুনিয়া এক করে ফেললেও আমার বাপের একটা চুলের হদিস ও পাবে না তোর ছেলে”
মনে মনে সুবহান শেখ জেদে ফেটে পড়ে ইচ্ছেমতো গালিগালাজ করে উঠলো যুবরাজকে।
এদিকে মিনিট বিশেকের ব্যাবধানেই যুবরাজের বাড়ির সামনে কড়া ব্রেক কষলো শেরহাম।বাড়িটির সামনে এসে তার পুরো শরীর থরথর করে কেঁপে উঠলো।বাড়িটির বিশাল গেটে মস্ত বড় বড় দুটো তালা ঝুলছে।
গাড়ি থেকে না নেমে পুনরায় সেই গাড়ি স্টার্ট দিয়ে রেহান দের বাড়ির উদ্দেশ্যে গাড়ি হাকালো।
সেখানেও একই দৃশ্য দেখে নিজের মাথাটাকে সজোড়ে স্টিয়ারিং এর সাথে বা*ড়ি মারলো শেরহাম।ক্রোধ এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে মনে হচ্ছে নিজের বন্দুকের গুলি নিজের ঘিলুতে ঢুকিয়ে দিতে পারলে বেশ হতো।
“কিন্তু তোর সমাপ্তি না দেখে আমি ম*র*বো না যুবরাজ।পাতাল থেকে হলেও তোকে খুঁজে বের করবো আমি…..
**********
সুবহান শেখের নম্বর ট্র্যাক করে এটুকু জানা গিয়েছে তারা চট্রগ্রাম হাইওয়ের দিকে যাচ্ছে।এরপর থেকে আর কোনো খবর পাওয়া যায়নি।সোয়াট পুলিশ শেরহাম কে আশ্বস্ত করে নিজেদের টিমকে হেলিকপ্টার এ করে চিটাগাং এর দিকে পাঠানোর ব্যাবস্থা করলো সেই সাথে চিটাগাং পুলিশ কে পুরো ঘটনা ইনফর্ম করলো।
মুহূর্তের ব্যাবধানে পুরো চট্রগ্রাম শহর পুলিশের গাড়ির পু পু সাইরেন আর হেলিকপ্টার এর পাখার খটখট শব্দে উত্তাল হয়ে উঠলো।
রাস্তার বিভিন্ন সিসি টিভি ফুটেজ চেক করে সুবহান শেখের গাড়ি চিহ্নিত করতে সক্ষম হলো পুলিশ।গাড়িটি পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের দিকে যাচ্ছে।
মুহূর্তেই যুবরাজ খেয়াল করলো পিছনে পুলিশের গাড়ির বহর আর উপর থেকে দুটো হেলিকপ্টার সমানে টর্চ জ্বেলে যাচ্ছে।তারা যুবরাজকে থামার জন্য বার বার হুঁশিয়ারি দিয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু যুবরাজ আজ যেনো কিচ্ছুটি কানেও শুনছে না চোখেও দেখছে না।সে তার গতিতে অটুট।
রাস্তার সকল ট্রাফিক সিগন্যাল ভঙ্গ করে এলোমেলো স্পিডে জেটি ঘাটের দিকে এগিয়ে চললো যুবরাজ।
কিছু মুহূর্তের জন্য হেলিকপ্টার আর গাড়ি গুলোকে নজরে পড়ছে না।চতুর যুবরাজ এই সময়টাকেই কাজে লাগিয়ে বৃদ্ধ সুবহান কে এক হাতের ঝটকায় কাঁধে তুলে নিমিষেই হারিয়ে গেলো বড় বড় জাহাজের ভিড়ে।
সোয়াট হেলিকপ্টার এ করে ঝাঁকে ঝাঁকে নেমে এলো পঞ্চাশ জন টিম মেম্বার সেই সাথে শেরহাম।
বেনজির আশফী যাত্রা পথে বারবার শেরহাম কে সাবধান করেছে সে যাতে একা একা কোথাও পা না ফেলে কারণ সমস্ত পরিস্থিতি হাতের বাহিরে।কিন্তু উন্মাদ শেরহাম কি এতো কিছু বুঝে?
যেটি ঘাটে হেলিকপ্টার এর রশি বেয়ে নেমেই সকলের অগোচরে দৌড়ে চললো যুবরাজকে খ*ত*ম করার উদ্যমে।
*******
জাহাজের বড় ওপেন ডেকে শক্ত করে দড়ি দিয়ে বেঁধে ক্রুর হাসলো যুবরাজ।
“তোর ছেলে আর তোকে জাহান্নামের দরজায় পৌঁছে দিয়ে তবেই দম ফেলবো আমি”
কথাটি বলতে বলতে নিজের গায়ের পোশাক গুলো খুলে একটি কাঠের বক্সে ভরে পানিতে ছুড়ে মারলো যুবরাজ।
কিছুক্ষণ আগেও যেই আশার আলো সুবহান শেখ দেখে ছিলেন হঠাৎই যেনো ঝড়ো বাতাসে তা দপ করে নিভে গেলো।শেষ ভরসা টুকুও যেনো অথাও পানিতে তলিয়ে গেলো।
“আর কি বেঁচে ফেরার পথ নেই তবে?
********
জাহাজের ছোট গোপন বদ্ধ কক্ষে বসে খুবই সতর্কতার সাথে নিজের বানানো ছোট ড্রোনটি উড়িয়ে সব কিছু পর্যবেক্ষণ করছে রেহান।পুলিশের চাইতে তার মূল টার্গেট এখন শেরহাম।শেরহাম কে ধরতে পারলেই খেলা প্রায় শেষের পথে।হঠাৎই একটা ফিশিং জাহাজের আশেপাশে এলোমেলো দৌড়াতে দেখা গেলো তাকে।
মুখের হাসি প্রস্তুত হলো রেহানের।ব্লুটুথ ডিভাইস কানেক্ট করে বলে উঠলো
“ক্যাচ হিম”
রেহানের থেকে দিক নির্দেশনা পেতেই গায়ে জাহাজের নাবিকের পোশাক জড়িয়ে মাথায় পিকড ক্যাপ দিয়ে চোখ পর্যন্ত ঢেকে লাফিয়ে পড়লো জাহাজ থেকে।উদ্দেশ্য ফিশিং জাহাজ।নিচের দিকে তাকিয়ে হাটতে হাটতে হঠাৎই কারো সাথে জোরে ধাক্কা খেলো যুবরাজ।মুখে কিছু বলার আগেই ঝড়ের বেগে কেউ একজন যুবরাজের পিঠে জাপ্টে ধরে ফুঁপিয়ে উঠলো।
মানুষটি কে তা যুবরাজ জানে।কিন্তু এই মুহূর্তে রাজ্যকে প্রশ্রয় দেয়ার ফুসরত কই।হুট করেই এনি দৌড়ে এসে রাজ্যকে টেনে হিচড়ে দূরে নিয়ে চলে গেলো।
“পাগল হয়েছিস?চীফ দেখলে কি হবে ভুলে গিয়েছিস?এটা কি আবেগ দেখানোর জায়গা?এসব কি ধরনের ইম্যাচিউড়িটি?
কান্নার হিড়িক এ কথা বলতে পারছে না রাজ্য।যদি কখনো দুঃস্বপ্নেও ভাবত নিজের হাজব্যান্ড কে ক্র্শ ফায়ার করার জন্য তার নিজেকেই কোনো দিন বন্দুক তাক করতে হবে তবে সে পুলিশের চাকরি কেন অন্য কোনো চাকরিতেও যোগদান করতো না।গ্রামের মেয়েদের মতো সংসারী হয়ে পতি সেবায় জীবন উৎসর্গ করতো।
কান্না থামিয়ে আশেপাশে নজর বুলাতেই যুবরাজের আর দেখা পাওয়া গেলো না।কাদা মাটিতে হাটু গেড়ে বসে বালি যুক্ত কাদামাটির দিকে তাকিয়ে পিস্তল হাতে অশ্রু বিসর্জন দিতে লাগলো রাজ্য।
********
এই জাহাজ সেই জাহাজে উদ্ভ্রান্তের মতো যুবরাজকে খুঁজে চলেছে শেরহাম।কিন্তু কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না তাকে।শেরহামের ধৈর্যে আর কুলাচ্ছে না।ইচ্ছে হচ্ছে সব গুলো জাহাজ বো*মা মেরে ব্লা*স্ট করে দিতে।সামান্য একটা ছেলে হয়ে তাকে এত নাকনিচুবানি খাওয়াচ্ছে এটা কোনো ভাবেই মানা যাচ্ছে না।
হঠাৎই মাথায় ভারী কিছুর আঘাত টের পেতেই পিছন দিকে ঘুরে তাকানোর সুযোগ পেলো না শেরহাম।তার আগেই পোক্ত হাতে কেউ তাকে ধরাশায়ী করে ফেললো।অজ্ঞাত ব্যাক্তির চেহারা দেখার আগেই দুই চোখ ঝাপসা হয়ে এলো।চোখ বুঝার আগে শুধু যুবরাজের গলার কাছের ট্যাটুটা দৃষ্টি গত হলো।
যুবরাজের হাতের ইশারা পেতেই দুজন শক্ত পেশী ওয়ালা ছেলে এগিয়ে এলো।কাঁধে তাদের কাঠের বড় একটি বাক্স।
আশেপাশে সর্তক দৃষ্টি বুলিয়ে যুবরাজ আদেশ করলো
“বাপের কাছে পাঠানোর ব্যাবস্থা কর”
#চলবে
#ওয়েলকাম_টু_মাই_ডার্কসাইড
#পর্ব_৪৩
#সারিকা_হোসাইন
********
উত্তাল সমুদ্র সেই সাথে বড় বড় ঢেউ,।সেই গর্জে আসা ঢেউয়ের বুক চিড়ে ছুটে চলেছে চার তলা উচ্চতার মাঝারি আকারের সাদা রঙা বাণিজ্যিক জাহাজ।জাহাজটির দূতলা পর্যন্ত মালামালে বোঝাই আর তিন তলা চার তলা খালি।চার তলার পুরোটা জুড়েই ওপেন ডেক।সেই ওপেন ডেকে মোটা একটা স্টিলের খুঁটির সাথে পিছ মোড়া করে বেঁ*ধে রাখা হয়েছে সুবহান শেখ আর তার একমাত্র গুণধর পুত্র শেরহাম ফাইয়াজ কে।করুন চোখে ছেলের র*ক্তা*ক্ত মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে নীরবে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছেন এই বৃদ্ধ।এতো গুলো বছর পেরিয়ে যাবার পরে আজকে প্রথম ছেলের জন্য তার মনে মায়ার উদ্রেক হলো।
সুবহান শেখ নিজের বৃদ্ধ ঝাপসা চোখের অশ্রু নিয়ন্ত্রণে আনতে নীরবে চোখ বুজে ফেললেন আর সাথেই সাথেই অক্ষিপটে ভেসে উঠলো শেরহামের মায়ের মায়াবী মুখ খানি।
কতো নরম মনের মানুষ ছিলেন ভদ্র মহিলা।নবনিতাকে ঠিক ছোট বোনের মতো স্নেহ করতেন।ভদ্র মহিলার এতো ভালমানুষী ই যেনো তার জীবনের কাল হয়ে দাঁড়ালো।
নবনীতার প্রতি সুবহান শেখের হিং*সা আর আ*ক্রোশ শুরুতেই ধরতে পেরেছিলেন শারমিন।এজন্য বার বার এতটা নিকৃষ্ট হতে বাঁধ সেধেছেন তিনি সুবহান শেখ কে।
কিন্তু শয়তান কে কেউ কোনো দিন পোষ মানাতে পেরেছে?
তবুও সুবহান শেখের অনিষ্ট থেকে নবনিতাকে বাঁচানোর অনেক চেষ্টা গোপনে গোপনে করেছেন তিনি।হঠাৎ একদিন নবনীতার মৃত্যু হ*লো।
সারা বছরই কম বেশি অসুস্থ থাকতেন নবনীতা।যুবরাজ এর জন্ম হবার পর সেই অসুস্থতা আরো দ্বিগুন হারে বাড়তে লাগলো।উচ্চবিত্ত সাদাফ দেশ বিদেশের বহুত ডাক্তার দেখালেন।কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না নবনীতার।যুবরাজকে পাঁচ বছরের রেখে পরপারে পাড়ি জমালেন।অসহায় ছোট মাতৃহীন শিশুকে নিয়ে সাদাফ শাহীর বেশ বিপদে পড়লেন।শেষ ভরসা হিসেবে শারমিন এর কাছে সাহায্যের হাত পাতলেন।
নরম মনের অধিকারী শারমিন ও রাজপুত্রের মতো দেখতে যুবরাজকে বুকে আগলে রাখতে হাপিত্তেস করে উঠলেন।
কিন্তু নিজের জঘন্য রূপটা তখনই দেখালেন সুবহান শেখ।
সাদাফ শাহীরের সাথে শারমিনের যোগাযোগ এর সকল পথ বন্ধ করে দিলেন শুধু তাই নয় সাদাফ শাহীরের কাছে শারমিন কে জড়িয়ে পৃথিবীর নিকৃষ্ট তম মিথ্যে কথা গুলো বললেন।
শারমিন নিজের ছেলে রেখে যুবরাজকে মানুষ করতে পারবেনা এমন কঠিন অসত্য কথাও খুব দুঃখ দুঃখ মুখে সাদাফ চৌধুরীর কাছে পেশ করলেন নিকৃষ্ট সুবহান।
হঠাৎ শারমিনের এতো পরিবর্তন এ মনে বেশ কষ্ট পেলেন সাদাফ চৌধুরী।শেষমেশ বাধ্য হয়ে নিজের নিঃসন্তান বোনের হেফাজতে বড় করলেন যুবরাজকে।এখানেই ঘটনার শেষ নয়।
শেরহাম ছোট থেকেই স্কিজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত ছিলো।এই রোগের সঠিক চিকিৎসা না করিয়ে যুবরাজকে শেষ করে দেবার জঘন্য খেলায় মেতে উঠলেন সুবহান।নিজের চোখের সামনে নিজের সন্তানের প্রতি এতোটা অবিচার মেনে নিতে পারলেন না শারমিন।সুবহান শেখের হাতে পায়ে ধরে ক্ষমা চাইতে শুরু করলেন।শুধু তাই নয় নিজের ছেলে কে নিয়ে দূরে কোথাও চলে যাবেন সেই আকুতি ও জানালেন।
শারমিনের এতো কাকুতি মিনতি মোটেও সহ্য হলো না সুবহান শেখের।অসুস্থ শেরহামের সামনেই বে*ধড়ক পে*টা*তে*ন শারমিন কে।সুবহন শেখের প্রতিটা আঘাতে র*ক্তা*ক্ত হতো শারমিন।
এই মা/র/ধ*রের দৃশ্য দেখে প্রথমে শেরহাম খুবই ভয় পেতো।দুই হাতে কান চেপে ঘরের অন্ধকার কোনায় লুকিয়ে থাকতো।কিন্তু এক পর্যায়ে এমন নৃশংসতাই সবচেয়ে বেশি প্রিয় হয়ে উঠলো শেরহামের।মানুষকে আ/ঘা*ত করে কষ্ট দিয়েই স্বগীয় শান্তি অনুভব করতো শুরু করলো শেরহাম।এক পর্যায়ে নিজেকে পুরোটাই গুটিয়ে নিলেন শারমিন।কিন্তু নিজেকে শেষ রক্ষা আর করতে পারলেন না।ছেলে কবে কবে নিজের কল্পনার জগতে নর*খা*দ*কে রূপান্তরিত হয়েছে শারমিন ঘূর্ণাক্ষরেও তা টের পায়নি।
ছেলেকে শেষ বারের মতো নিজের বুকে আগলে নিতে চেয়ে অনুরোধ করলেন
“বাবা শেরহাম!মানিক আমার বুকে ফিরে আয় তোর বাপের পাপের সাম্রাজ্য ছেড়ে।চল তুই আমি দূরে কোথাও পালিয়ে যাই”এসব পাপ কাজ আমি যে আর সহ্য করতে পারছি না বাবা”
ব্যাস চটে গেল শেরহাম।ঘরের কোণে থাকা হকি স্টিক দিয়ে সজোড়ে শারমিনের কান বরাবর এক বা*ড়ি বসিয়ে দিয়ে বলে উঠলো
“বেশি কথা বলা একদম পছন্দ করি না মম”
আর কোনো সাড়া শব্দ পাওয়া গেলো না শারমিনের।ধড়াস করে মেঝেতে পড়ে গেলো সেই সাথে উষ্ণ রঞ্জন পদার্থে রঞ্জিত হলো পুরো মেঝে।দুই চোখ বোজার আগে ছেলের ভয়ানক চেহারা দেখে কেঁপে উঠলো শারমিনের শীর্ন দেহ খানা।পরিশেষে মায়াবী চোখ দুটো থেকে খসে পড়লো উষ্ণ দুফোঁটা জল।
মেঝেতে র*ক্তে*র বন্যা দেখে শেরহামের যেনো আনন্দ রাখার জায়গা ধরলো না।আনন্দে হাসতে হাসতে হলি খেলায় মেতে উঠলো সে।
নিজের বড় চাপাতি ,চাইনিজ চপার আর ইলেকট্রিক করাত দিয়ে পি*স পি*স করে ফেললো শারমিন কে মুহূর্তের ব্যাবধানেই।
না হলো কোনো অনুশোচনা না হলো কোনো দুঃখ।
নিজের কাজ শেষ করে বিশাল সস প্যানে নিজের পছন্দের স্পাইস, সস আর বিদেশি এলকোহল এর সমন্বয়ে রান্না হলো শারমিনের কঙ্কাল সার দেহের হাড় যুক্ত মাংস।
চকচকে চোখে সেই মাংস খুব মজা করে খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুললো শেরহাম।
“তোমার পাপের সাম্রাজ্যের শেষ তবে হলো নর পিচাশ সুবহান শেখ”
শারমিনের ধিক্কার জনিত অট্ট হাসিতে ধরফড়িয়ে চোখ মেলে তাকালো সুবহান শেখ।এদিকে শেরহামের জ্ঞান ও ফিরেছে।
ছেলের দিকে তাকিয়ে অনেক কিছু বলার চেষ্টা করলেন সুবহান শেখ।কিন্তু কোনো কথাই গুছাতে পারলেন না।
সমুদ্রের গর্জনের শব্দ ভেদ করে হুংকার দিয়ে উঠলো যুবরাজ।
“তোদের বাপ ছেলেকে কি এখানে ঘুমানোর জন্য ধরে নিয়ে এসেছি”?
যুবরাজের ভয়ানক ধমকে কেঁপে উঠলেন সুবহান শেখ।কিন্তু শেরহামের অবস্থার কোনো উন্নতি হলো না।
হাঁপিয়ে উঠা স্বরে হা হা করে হেসে উঠলো শেরহাম।সেই হাসি দেখে যুবরাজের শরীরে যেনো জ্বালা ধরে গেলো।
নিজের বিশ্রী হাসি থামিয়ে শেরহাম বলে উঠলো
“আমাকে তুলে নিয়ে এসে নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনলি যুবরাজ।তোর জ্বালে আমি ইচ্চে করেই ধরা দিয়েছি।কেনো জানিস?
যুবরাজ দৃষ্টি ছোট করে ভ্রু কুঁচকে শেরহামের ভাবাবেগ বোঝার চেষ্টা করলো।
“আমার কাছে জিপিএস ট্র্যাকার আছে।এটা ধরেই সোয়াট পুলিশ এখানে এসে তোকে ডিরেক্ট ক্রস ফায়ার করবে।আর আমাকে উদ্ধার করে নিয়ে যাবে।তোর মৃ*ত্যু*র পর তোর সুন্দরী বউ আমার শয্যা সঙ্গী হবে”
এমন নোংরা কথা গুলো বলে কিটকিটিয়ে হেসে উঠলো শেরহাম।সুবহান শেখ ছেলের বুদ্ধিতে বুকে বেশ বল পেলেন।ছেলের আনন্দে শামিল হয়ে যুবরাজকে অস্রাব্য গালিগালাজ করতে শুরু করলেন।
বাপ ছেলের এমন নোংরা খেলা দেখে ক্রোধে ফেটে পড়লো যুবরাজ।
পাশে থাকা লোহার পাইপ নিয়ে সমানে আঘাত করতে লাগলো বৃদ্ধ সুবহান কে।
যুবরাজের শক্তিতে কুলাতে না পেরে মুহূর্তেই রক্তাক্ত হলেন বৃদ্ধ সুবহান।নিজের চোখের সামনে রক্তাক্ত সুবহান কে দেখে অস্থির হয়ে উঠলো শেরহাম।তার চোখ চকচক করে জিভ লকলকে বেরিয়ে এলো।রক্তের ঘ্রানে বদ্ধ উন্মাদের ন্যায় আচরণ করতে লাগলো।
এবার মহা খুশিতে ফেটে পড়লো যুবরাজ।চোখের ইশারা দিতেই দুজন ছেলে শেরহাম কে বাঁধনমুক্ত করতে এলো।
এই দৃশ্য দেখে বৃদ্ধ সুবহান দুর্বল গলায় চিৎকার করে উঠলেন।
কাকুতি মিনতি করে মাফ চাইতে লাগলেন যুবরাজের কাছে।
‘বাবা যুবরাজ ওর বাধন খুলে দিও না।দরকার পড়লে আমাকে মাঝ সমুদ্রে ছেড়ে দাও।রহম করো প্লিজ।আমি সারা জীবন তোমার গোলামী করবো”
“তোর গোলামীর কোনো প্রয়োজন আমার নেই সুবহান শেখ।তোকে পৃথিবীর চূড়ান্ত কষ্টটা দেবো বলেই তো তোর ছেলেকে এতদিন ধরে বাঁচিয়ে রেখেছি।না হলে কবেই তো দুনিয়া ছাড়া করতাম”
শেরহাম কে বাধন মুক্ত করে একটা স্টিলের চেয়ার টেনে পায়ের উপর পা তুলে বসে পড়লো যুবরাজ।
“সামনে বসে সিনেমার ট্রেইলার দেখার মজা যে আলাদা”
হামাগুড়ি দিয়ে সুবহান শেখের কাছে ধীরে ধীরে এগিয়ে চলছে শেরহাম।অনেক দিন বাদে র*ক্তে*র স্বাদ নেয়া যাবে।
“তোমার র*ক্তে*র টেস্ট মমের চাইতে বেশি সুস্বাদু হবেনা তাই না পপ্স?কারন শয়তানের রক্ত যে নোংরা র*ক্ত”
ছেলের ভয়ানক চেহারার দিকে তাকিয়ে থর থর করে কেঁপে উঠলেন সুবহান শেখ।
চিৎকার করার ও এর কোন সুযোগ পেলেন না।পাশে থাকা লোহার পাইপ খানা তুলে নিয়ে মাথা বরাবর সজোড়ে এক আঘাত করে বসলো শেরহাম।শারমিনের মতো ঠিক একই পরিণতি হলো সুবহান শেখের।
জাহাজের অপেন ডেক র*ক্তে রঞ্জিত হলো।
কুকুরের মত জিভ বের করে সেই র*ক্ত চেটে খেতে লাগলো শেরহাম।
জম্বির মতো ভয়ানক র*ক্তা*ক্ত মুখে যুবরাজের দিকে তাকিয়ে আপ্লুত কন্ঠে শেরহাম বলে উঠলো
“পপ্স এর র*ক্ত একদম মজা নয় যুবরাজ”
*********
সারা পতেঙ্গা সৈকতের জাহাজ নৌকা কোনো কিছু খুঁজেও যখন যুবরাজের হদিস পাওয়া গেলো না তখন সকলের খেয়াল হলো এখানে শেরহাম ফাইয়াজ ও নেই।চতুর বেনজির আশফী নিজের জিপিএস ট্র্যাকার অন করতেই মাঝ সমুদ্রে শেরহামের লোকেশন দেখালো।
সাথে সাথেই কানে থাকা ব্লুটুথ ডিভাইস ক্লিক করে কমান্ড দিলেন
“হেলিকপ্টার রেডি করো,যুবরাজ শেরহামকেও কিডন্যাপ করেছে!
#চলবে