ওয়েলকাম_টু_মাই_ডার্কসাইড পর্ব-৪৪

0
4

#ওয়েলকাম_টু_মাই_ডার্কসাইড
#পর্ব_৪৪
#সারিকা_হোসাইন

********
যুবরাজের এহেন ধূর্ত কৃত কর্মের উপর বেনজির আশফির ক্রোধ যেনো গগন চুম্বী হলো।নিজের রাগ কোনো ভাবেই কন্ট্রোল করতে না পেরে হনহনিয়ে রাজ্যের সামনে এসে দাড়ালো।এরপর নিজের কড়া পড়া শক্ত হাতের থাবায় রাজ্যের বাহু চেপে ধরে গর্জে উঠলো

“ইউ হ্যাভ টু সাফার ফর ডিজ”

বেনজির আশফির শক্ত হাতের চাপে ব্যাথায় ককিয়ে উঠলো রাজ্য।এমনিতেই কাঁদতে কাঁদতে তার চোখের জল ফুরিয়ে বিদীর্ণ হয়ে রয়েছে তার মধ্যে বেনজির আশফির এমন জঘন্য হুংকার।সব মিলিয়ে যেনো কাঠের পুতুলের মতো নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো রাজ্য।এনি সবটাই অবলোকন করে দৌড়ে এসে বেনজির আশফির হাত থেকে রাজ্যকে ছুটিয়ে চিৎকার করে উঠলো

“বিহেইভে ইউরসেলফ”

এনির এমন উদ্ধ্যত দেখে বেনজির আশফী নিজের বোধ শক্তি হারালেন।এরপর রক্ত চক্ষু এনির দিকে তেড়ে গিয়ে বলে উঠলেন

“হাউ ডেয়ার ইউ”?

এনি ও দমে যাবার পাত্রী নয়।সে দ্বিগুন উদ্যমে বেনজির আশফী কে বেকায়দায় ফেলতে তেজী কন্ঠে শুধালো

“হাউ ডেয়ার ইউ টাচ হার?

এনির এমন পাল্টা প্রশ্ন থতমত খেলো বেনজির আশফী।সে চাইলেই একজন অফিসার কে এভাবে আঘাত করতে পারে না।শুধু তাই নয় এটা নিয়ে রাজ্য কমপ্লেইন করলে তার চাকরি চলে যাবার চান্স 99.99।

“স্যার হেলিকপ্টার রেডি”

একজন সোলজার এসে কথাটি বলতেই নড়েচড়ে উঠলেন বেনজির আশফী।যুবরাজ পুরো একটি জাহাজ নিয়ে সমুদ্রে রওনা করেছে।তার সাথে কে আছে না আছে এটাও অজানা।আদৌ সেই জাহাজে যুবরাজ একা নাকি আরো দলবল আছে এই ব্যাপারেও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।মাঝ সমুদ্রে একা একা ওই জাহাজে যাওয়া মানে নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনা।খাল কেটে কোনো মতেই কুমির ডেকে আনতে চান না বেনজির আশফী।এদিকে সব টিম মেম্বার ই সকল বিষয়ে এক্সপার্ট নয়।তাই না চাইতেও এনি আর রাজ্যকে টিম মেম্বার হিসেবে সাথে নেবার সিদ্ধান্ত নিলেন বেনজির আশফী।

সোলজার কে অনুসরণ করে যেতে যেতে এনিকে উদ্দেশ্য করে বেনজির আশফী বলে উঠলেন

“হেলিকপ্টার এ উঠে যাও।হয় বাঁচবে না হয় ম*র*বে””

আর এক মুহূর্ত দাড়ালেন না বেনজির আশফী।কাদা মাটি ডিঙিয়ে হেলিকপ্টার এ উঠার জন্য পা বাড়ালেন তিনি।

“যুবরাজ বাঁচবে তো এনি?

অসহায় মলিন কন্ঠে অস্ফুট স্বরে এনিকে প্রশ্নটি করে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে এনির পানে তাকিয়ে রইলো রাজ্য।এলইডি লাইট যুক্ত হ্যালমেট এর ফকফকে আলোয় রাজ্যের বিধস্ত অবস্থা সম্পূর্ণ ভাবে দৃষ্টি গত।এক দিনেই মেয়েটির বেহাল দশা।চোখ গুলো ফুলে টসটসে লাল হয়ে আছে।নাকের ডগা আর গাল দুটোও অসম্ভব লাল হয়ে রয়েছে।মনে হচ্ছে এটা সেই হাসি খুশি প্রাণবন্ত রাজ্য নয়।এটা অন্য কোনো বিধস্ত বিদীর্ণ মানবীর কায়া।

কোন দিক থেকে কোন দিক সামলাবে তার কোনো কুলকিনারা খুঁজে পেলো না এনি।ফুঁস করে তপ্ত শ্বাস ছেড়ে রাজ্যের হাত চেপে ধরে বলে উঠলো

“চল”

*******
শেরহামের পৈচাষিকতায় বৃদ্ধ সুবহান শেখের ইহ জীবনের সমাপ্তি ঘটেছে বহু আগেই।ধীরে ধীরে পাপের বিনাস হচ্ছে।একে একে খসে যাচ্ছে পাপ সাম্রাজ্যের প্রত্যেকটা ইট।বুক থেকে ধীরে ধীরে নেমে যাচ্ছে ভারী বোঝাটা।এই বুঝি নিঃশাস টা বাতাসের মতো হালকা হয়ে এলো।
জাহাজের বারান্দার রেলিংয়ে ভাঁজ করা হাতের উপর থুতনি রেখে অন্ধকার ভয়ংকর সমুদ্রের বিশালতা উপভোগ করছে যুবরাজ।
নিজের সাক্ষাৎ মৃ*ত্যু*কে সে দেখে ফেলেছে অনেক আগেই।এখন শুধু দু চোখ চিরতরে বন্ধ করবার পালা।

“আচ্ছা ওই কঠিন হৃদয়ের বোকা মেয়েটা কি অনেক কাঁদবে?এই মাঝ সমুদ্রে তাকে শান্তনা কে দেবে?রেহান আর এনি কি ওকে সামলে নিয়ে ঘরে পৌঁছে দিবে?আর মা পাপা?কিভাবে সামলাবে আমার মৃ*ত্যু শোক?

আর ভাবতে পারে না যুবরাজ।চারিদিক থেকে ব্যার্থতা আর হতাশা পুরোদমে তাকে গ্রাস করেছে।মনে হচ্ছে বেঁচে ফেরার সকল পথ অবরুদ্ধ।

“তুমি কেনো আমার জীবনে এসেছিলে ম্যাগান গ্যাব্রিয়েলা?

উন্মাদ শেরহামের দিকে কাতর দৃষ্টি মেললো যুবরাজ।সে এখন অবহেলায় পরে থাকা সুবহান শেখের ছিন্নভিন্ন শরীর নিয়ে মেতে উঠেছে।শেরহামের এই করুন ভয়ঙ্কর অবস্থা দেখে যুবরাজের চোখের কোনে চিকচিকে জলের আগমন হলো।

“ছেলেটাকে ভালো একটা ডক্টর এর ট্রিটমেন্ট করালে কি খুব ক্ষতি হতো?

নীরবে যুবরাজের দুই চোখের কার্নিশ বেয়ে উষ্ণ জলের ধারা গড়িয়ে পড়লো।সেই অশ্রু গুলোকে দমন করতে জোর করে টেনে বন্ধ করে ফেললো অক্ষি পল্লব”
চোখের পাতা বন্ধ করতেই পুরো দুনিয়া অন্ধকার হবার পরিবর্তে অসহায় মৃ*ত ম্যাগানের বরফের আস্তরনে আচ্ছাদিত নিথর শরীর খানা ভেসে উঠলো।

একদিকে রেহানের জীবন মরনের সন্ধিক্ষন অন্য দিকে কঠিন কষ্ট নিয়ে দুনিয়া ছেড়ে যাওয়া ম্যাগান।কাকে রেখে কার কাছে যাবে কিছুই খেয়াল করতে পারলো না যুবরাজ।

এদিকে লোক মারফত যুবরাজের কাছে খবর এলো দ্রুত যেনো সে এসে সৎকার এর কাজ শুরু করে।কারন অলরেডি তিন দিন পর হয়ে গিয়েছে।এভাবে কোনো মেডিসিন ছাড়া লা*শ ফ্রিজে রাখা যায় না।

ব্রিটিশ শ্রমিক ছেলেটির কাছে এই খবর পেয়ে ডক্টর নিকোলাস এর হাতে রেহান কে সমর্পণ করে স্পিডে বোর্ডে উঠে যায় যুবরাজ।
ক্রুজ শিপ থেকে ম্যাকের জাহাজের দূরত্ব দুই কিলোমিটার।যেতে বেশি সময় লাগবে না।

যাত্রা পথে ব্রিটিশ ছেলেটি যুবরাজকে নানান ধরনের কথা শুধালো।কিন্তু বোবা মানুষের ন্যায় শূন্য দৃষ্টি সমুদ্রের নীল জলে দৃষ্টি ফেলে চুপচাপ রইলো যুবরাজ।এই মুহূর্তে তার কিচ্ছুটি ভাবতে ইচ্ছে করছে না।
ছেলেটি যুবরাজের অনাগ্রহ দেখে অল্প করে “সরি” বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো।
প্রায় মিনিট পনেরোর মধ্যেই ম্যাকের বিশাল জাহাজের কাছে এসে দাড়ালো স্পিড বোর্ড টি।জাহাজের মোটা দড়ির সিঁড়ি বেয়ে ভীতি হীন ভাবে জাহাজে উঠে গেলো যুবরাজ।আর ব্রিটিশ ছেলেটি তার কিছু সহকর্মীর সহায়তায় স্পিড বোর্ড টিকে জাহাজে তুলতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো।

যুবরাজকে তিন দিন পর কাছে পেয়ে ম্যাক শক্ত করে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরলো।এরপর পিঠ হাতড়ে শান্তনার বাণী আওড়ালো।আজকে যুবরাজকে আর সেরকম নরম হৃদয়ের মনে হলো না।মনে হচ্ছে কোনো কঠিন হৃদয়ের পুরুষ।
কোনো প্রকার ভনিতা না করে যুবরাজ হাকলা কুসুম গরম পানি চাইলো।
ম্যাকের বুঝতে বাকি রইলো না যুবরাজ কেনো পানি চাইলো।
যুবরাজের কাঁধ চাপড়ে সেই জায়গা থেকে প্রস্থান নিলো ম্যাক।
জাহাজের ওপেন শাওয়ার এর নিচে গিয়ে ইচ্ছেমতো নিজেকে জলে ভিজিয়ে নিলো যুবরাজ।শরীর থেকে সকল জড়তা যে দূর করতে হবে।না হলে এতো এতো ভার কিভাবে বইবে সে?

নিজেকে পবিত্র করে ওযু করে নিজেই ম্যাগানের বরফের আস্তরনে ঢাকা পড়া শক্ত জমে যাওয়া দেহ খানা বের করে নিয়ে এলো।মেয়েটির তুলতুলে মুখটা একদম ফ্যাকাশে হয়ে আছে।না চাইতেও যুবরাজের চোখ থেকে জলের ধারা গড়িয়ে পড়লো।

“আমাকে এতোটা কষ্ট দিতেই বুঝি তোমার জন্ম হয়েছিলো?

নিথর ম্যাগান যুবরাজের কষ্ট ও বুঝলো না শান্তনার বানিও ছুঁড়লো না।দুই হাতে দ্রুত চোখের জল মুছে বহু কষ্টে ম্যাগান কে উপরের বৃহৎ স্পেসে নিয়ে আসলো যুবরাজ।একটা স্টিলের পাটাতনের উপর শক্ত ম্যাগান কে শুইয়ে দিয়ে নিজেই বালতি ভর্তি উষ্ণ জল নিয়ে এলো।নিজের দুই হাতের
সাহায্যে উষ্ণ জলের সহিত ঘষে ঘষে দূর করলো সমস্ত বরফ আর শেরহামের লাগানো কালিমা।
এক পর্যায়ে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারল না যুবরাজ।হু হু করে হাটু মুড়ে বসে দুই হাঁটুতে ভর দিয়ে কেঁপে কেঁপে কেঁদে উঠলো।ভারী জলের ফোয়ারা আর ম্যাগানের শরীরের গলিত বরফ দুই ই মিলেমিশে একাকার হয়ে গেলো।যুবরাজের কান্নায় আজকে কঠিন হৃদয়ের ম্যাক ও বেসামাল হলো।বুক চেপে ধরে জাহাজের ডেকের দরজায় হেলান দিয়ে নীরবে অশ্রু বিসর্জন দিতে লাগলো ম্যাক।জাপানি আর ব্রিটিশ ছেলে দুটোও মুখ চেপে কেঁদে উঠলো।

এক পর্যায়ে সম্বিৎ ফিরে পেতেই দ্রুত হাতে কাজ চালাতে লাগলো যুবরাজ।ম্যাগান কে পরিস্কার করে একটা টাওয়েল দিয়ে মুছিয়ে খুব যত্ন সহকারে কালো রঙের লম্বা গাউন টি পরিয়ে দিলো যুবরাজ।
ম্যাগানের ধর্ম অনুযায়ী ই তার বিদায় হবে।তাও যেনো তেন ভাবে নয়।একদম যুবরাজের মনের মাধুরী মিশিয়ে।
যুবরাজের কথা অনুযায়ী ম্যাক খুবই দামি একটা কফিনের ব্যাবস্থা করেছে।মেরুন রঙের চকচকে কফিন।সেই কফিনের নরম বিছানায় সযত্নে শোয়ানো হলো ম্যাগান কে।দেখে মনে হচ্চে নিষ্পাপ মেয়েটি গভীর নিদ্রায় মগ্ন।যুবরাজ ম্যাগান কে সমস্ত সৌন্দর্যের সহিত বিদায় দিতে চাইলো।কিন্তু র*ক্ত হীন শরীর কি আর কখনো সৌন্দর্যে ভরপুর হয়?
যুবরাজের মনে হলো ম্যাগানের কফিনে কি যেনো কম পড়েছে।
মস্তিষ্কে নাড়া দিতেই মনে পড়লো একটা লাল গোলাপের খুবই প্রয়োজন।গোলাপ হীন ম্যাগানের আকর্ষণীয় হাত দুটো এক দম খালি খালি লাগছে।
চারপাশে খুঁজেও যখন কিছুই পেলোনা তখন নিজের গলায় থাকা লকেট সমেত সোনার চেইনটি খুলে ম্যাগানের হাতে পেঁচিয়ে দিলো।এরপর খুব যত্নের সহিত কফিনের ঢাকনা এঁটে সিল করে দিলো।

ইদানিং সমুদ্রের গভীর জলে কফিন বিসর্জন দেয়া বিশাল এক ট্রেন্ড হয়েছে বিদেশিদের কাছে।কিন্তু যুবরাজ কখনো ম্যাগান কে এভাবে বিদায় দিতে চায়নি।যুবরাজ সারাটা জীবন ম্যাগানের সমাধিতে এসে ফুল দিতে চায়।কিন্তু নিষ্ঠুর নিয়তি সব কিছুর বিপক্ষে।
সমস্ত কাজ যখন শেষ হলো তখন প্রায় বেলা শেষের দিকে।আকাশ গৌধুলি লগ্নে পরিপূর্ণ হয়েছে।জাহাজের চারপাশ ঘেষে সাদা রঙা সিগাল উড়ে চলেছে।কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় একটা সিগাল ও শব্দ করছে না।

“তোরাও বুঝি এই কোমলমতির মৃ*ত্যু*তে শোক প্রকাশ করছিস?

নির্বাক পাখি উত্তর দিতে পারে না।
অবশেষে ম্যাক এগিয়ে এলো সাথে আরো পাঁচজন নাবিক আর তাদের সহকারী।
সকলে যুবরাজকে সমস্বরে বলে উঠলো

“ইটস দ্যা বেস্ট টাইম ফর বিউরিয়াল”

সকলের এই কথাটা যেনো যুবরাজের কলিজা ভেদ করলো।

“তার মানে এখনই মেয়েটা পৃথিবীর সকল মায়া ছিন্ন করে চির তরে সমুদ্রের অকাল গর্ভে হারিয়ে যাবে?
এবার আর কান্না পেলো না যুবরাজের।একজন পুরুষ আর কত কাঁদতে পারে?

সকলের সম্মতিতে কফিন কাঁধে নিয়ে জাহাজের নিচের তলায় আনা হলো।এরপর জলের উপরি ভাগের দরজা খুলে বারান্দায় একটা কাঠের পাটাতনের উপর রাখা হলো কফিন খানা।
সকলেই সমস্বরে বলতে লাগলো

“গুড বাই পিউর সৌল।রিবর্ন এন্ড কাম ব্যাক এগেইন”

কথা গুলো শেষ করে সকলেই কফিনটি সমুদ্রে সমাধি করতে উদ্দত হলো।
যুবরাজ সেই দলে সামিল হয়ে সিক্ত কন্ঠে বলে উঠলো

“গুড বাই ম্যাগান গ্যাব্রিয়েলা।ওপারে ভালো থেকো।আমাদের আর কোনো দিন দেখা হবে না।

বিশাল শব্দে বৃহৎ ঢেউ তুলে গভীর নীল জলে পড়ে গেলো কফিন খানা।মুহূর্তেই তলিয়ে গেলো সমুদ্রের লবনাক্ত জলে।যেখানে ম্যাগানের সমাধি হলো সেখানকার জল গুলো এখনো নড়ছে।ধীরে ধীরে স্থির হয়ে উঠলো জল রাশি আর জাহাজ পাড়ি দিলো ম্যাগানের সমাধি স্থল।

হঠাৎ শব্দে কল্পনার রাজ্য থেকে চোখ মেলে তাকালো যুবরাজ।চোখ মেলে তাকিয়ে শব্দের সন্ধান করতেই দেখা মিললো শেরহাম লোহার সেই র*ক্তা*ক্ত পাইপ খানা জাহাজের মেঝের সাথে ঘষে ঘষে জম্বির মতো হেলে দুলে দাঁত খেচিয়ে খেচিয়ে যুবরাজের দিকে এগিয়ে আসছে।
কপাল কুচকে কিছু বোঝার আগেই দৌড়ে এলো শেরহাম।যুবরাজের দিকে আঘাত উঁচিয়ে হাপানো কন্ঠে বলে উঠলো

“তুই আমার পপ্স কে মে*রে ফেলেছিস যুবরাজ।আমি তোকে ছাড়বো না।

মুহূর্তেই শেরহামের প্রতি জমে থাকা সকল দরদ দূরে সরিয়ে আহত চিতার ন্যায় হিংস্র হয়ে উঠলো যুবরাজ।
শেরহামের হাত থেকে লোহার পাইপ টি হ্যাচকা টানে কেড়ে নিয়ে এলোপাতাড়ি মা*র*তে লাগলো শেরহাম কে।
ব্যাথায় যন্ত্রনায় জোরে চিৎকার করে উঠলো শেরহাম।কিন্তু যুবরাজের মনে কোনো দয়ার উদ্রেক হলো না।
এক পর্যায়ে ধরাশায়ী হয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়লো শেরহাম।
নিজের কপালের জমে যাওয়া নোনতা ঘাম আঙুলের ঝটকায় সরিয়ে হাটু মুড়ে পাইপে ভার দিয়ে বসলো যুবরাজ।এরপর শেরহামের চুলের ঝুটি মুঠি পাকিয়ে ধরে দাঁতে দাঁত পিষে বলে উঠলো

“গলায় পাথর বেঁধে তোকে যদি এই সমুদ্রে সমাধিস্থ করে দেই তোর কেমন লাগবে শেরহাম?

যুবরাজের এমন ভয়ানক কথায় কেঁপে উঠলো শেরহাম।র*ক্তা*ক্ত মুখে জড়িয়ে যাওয়া কন্ঠে ভয়ে ভয়ে বলে উঠলো

“পানিতে আমার অনেক ভয় করে”

শেরহামের কথায় যুবরাজ এক চোট হেসে নিলো।এরপর শার্টের কলার ধরে দাড় করিয়ে বলে উঠলো

“চল ভয়কে জয় করা যাক”

************
হঠাৎই হেলিকপ্টার এর পাখার খটখটানির শব্দে একদিক সেদিক তাকাতে লাগলো শেরহাম।সেই সাথে যুবরাজের ক্রোধ আরো দ্বিগুন হলো।
জাহাজের চারপাশ ঘিরে ফেলেছে সোয়াট পুলিশ ।পালিয়ে যাবার সমস্ত পথ বন্ধ।বেঁচে ফেরার আনন্দে লাফিয়ে উঠলো শেরহাম।

একে একে দড়ি বেয়ে নেমে এলো পঞ্চাশ জন সোয়াট পুলিশ।সকলের হাতেই ভারী অস্ত্র।এই বুঝি যুবরাজের জীবনের সমাপ্তি ঘটলো।

পুরো জাহাজ জুড়ে সোয়াট পুলিশের বোটের খট খট শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।সেই সাথে যুবরাজের প্রতি মাইকে দেয়া হলো কঠিন হুঁশিয়ারি।
পুরো জাহাজ তন্ন তন্ন করে খুঁজে অবশেষে পাওয়া গেলো শেরহাম আর যুবরাজের হদিস।

চারপাশ থেকে বন্দুক তাক করে পজিশন নিলো সকল অফিসার।
বেনজির আশফী হুঙ্কার ছাড়লেন

“শেরহাম কে ছেড়ে দিয়ে আমাদের সাথে চলুন যুবরাজ”

যুবরাজ যেনো আজ কিছু দেখেই ভীত নয়।শেরহামের কাছে যুবরাজের মুখ ভঙ্গি ভালো ঠেকছে না।
এদিকে সুবহান শেখের অবস্থা দেখে কারো কারো পেট গুলিয়ে উঠলো।
ঘটনাটি কে ঘটিয়েছে তা শেরহামের শরীর আর চেহারা দেখেই অনুমেয়।

বেনজির আশফির নির্দেশে যুবরাজের পুরো শরীর ভরে গেলো বন্দুকের টার্গেট লাইটে।
বেনজির আশফী গুনতে থাকলেন

“ওয়ান,টু,

থ্রি বলার আগেই এনির বন্দুকের নল থেকে বেরিয়ে এলো গুলি সেই গুলি ঝাঁঝরা করলো যুবরাজের বুক।
গুলির শক্তিতে জাহাজের রেলিং ঘেষে পানিতে পড়ে যেতে নিলো যুবরাজ।যুবরাজের হাতের থাবায় এখনো শেরহামের শার্টের কলার।দাবার চালের মতো নিমিষেই পাল্টে গেলো পুরো চাল।শেরহাম কে কব্জা করেই পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়লো যুবরাজ।

এনির এহেন কাণ্ডে সকলেই স্তব্ধ।চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারালো রাজ্য।

#চলবে