ওয়েলকাম_টু_মাই_ডার্কসাইড পর্ব-২৮+২৯+৩০

0
4

#ওয়েলকাম_টু_মাই_ডার্কসাইড
#পর্ব_২৮
#সারিকা_হোসাইন

**********
ভোরের আলো ফুটেছে আর ঘন্টা তিনেক আগে।সূর্যের প্রখর তেজ নিয়ে চিলবিল করে রোদ উঠে পুরো পৃথিবী ঝলসে দেবার চেষ্টা করছে।চারপাশে দাঁড় কাক গুলো কা কা ধ্বনিতে অস্থির এক পরিবেশের সৃষ্টি করে তুলেছে।নেই কোনো প্রাকৃতিক সমীরণ।নিজের বাসভবন পর্যন্ত গুমোট কবরের ন্যায় ঠেকছে।
এরকম অস্থির অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে নিজের কক্ষে উদোম গায়ে ইজি চেয়ারে বসে সমানে বিড়ি ফুকে চলেছে যুবরাজ।আজকাল কোনো ভাবেই দুই চোখের পাতায় ঘুম ধরা দিচ্ছে না তার।চোখ বন্ধ করলেই অতীতের বিশ্রী কিছু স্মৃতি চোখের সামনে এসে চিৎকার করে চলেছে সমানে।অজানা ভয়ে বারবার হৃদয় কেঁপে উঠছে।সর্বদাই মনে হচ্ছে এই বুঝি ভালোবাসার কেউ হারিয়ে গেলো।
যেই দুঃসময় যুবরাজ পাড়ি দিয়ে এপর্যন্ত এসেছে সেই সময়ের পুনরাবৃত্তি কি দ্বিতীয় বার হবে?

সিগারেট পুড়ে কখন হাতের কাছে আগুন এসে ঠেকেছে ঠাহরই করতে পারেনি যুবরাজ।ভাবনায় মগ্ন থাকা যুবরাজ হঠাৎই তীক্ষ্ণ ব্যাথায় আউচ্ শব্দ করে উঠলো।
সিগারেট এর টকটকে লাল অগ্নি তার মধ্যমা আর তর্জনী দুটো আঙুলকেই সযত্নে পুড়িয়ে দিয়েছে কয়েক সেকেন্ড এর ব্যাবধানে।মুহূর্তেই আঙ্গুলি দুটি গোলাপি বর্ন ধারণ করলো সেই সাথে অস্বস্তিকর জ্বলুনি।অজানা হিংস্র রাগে মাথা ফেটে যাবার উপক্রম হলো যুবরাজের।দ্রুত হাতে সিগারেট এর ফিল্টার গুলোকে এস ট্রে তে ফেলে ইজি চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো যুবরাজ।

“বহুত হয়েছে চিন্তা ভাবনা এবার শরীরের একটু একটু আরাম করা চাই।আর কতোদিন এভাবে হাইড এন্ড সিক খেলতে হবে কে জানে?তবে এতটুকু জানি খুব শীঘ্রই তোমার সাথে দেখা হতে চলেছে মামু”

কথা গুলো আপন মনে ভেবে এসির পাওয়ার কমিয়ে চোখে মুখে কাঁথা জড়িয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করলো যুবরাজ।চোখ বন্ধ করতেই চোখের সামনে ধরা দিলো রেহানের ঝুলন্ত বরফে পরিণত দেহ।

——–
জিপিএস ট্র্যাকার এর নির্দেশনা অনুযায়ী যুবরাজ শহরের অদূরে একটি জঙ্গলের ভেতর প্রবেশ করে ।শহর থেকে জঙ্গলটির দূরত্ব বেশি নয় গাড়ীতে গেলে খুব করে হলেও আধা ঘন্টা সময়ের মতো ব্যায় হয়।কিন্তু যুবরাজের পায়ে হেটে কোমড় সমান বরফের স্তুপ পাড়ি দিয়ে সেই জঙ্গলে পৌঁছাতে সময় লেগেছে দুই ঘণ্টার মতো।
আশেপাশের কিছুরই দিক নির্দেশনা অনুমান করা যাচ্ছে না।এদিকে হঠাৎই জিপিএস ট্র্যাকার টিও কাজ করা বন্ধ করে দেয়।হাড় হিম করা ঠান্ডা বাতাস সাথে কোমড় সমান বরফ।

“কোথায় আছিস রেহান তুই?আমি যে কোনোভাবেই আর টিকে থাকতে পারছি না,আমি পৌঁছাতে পৌঁছাতে তুই বাচবি তো?”

নিজের এমন করুন দশায় দুই চোখ ফেটে উপচে জল বেরিয়ে এলো যুবরাজের।বার বার ধৈর্য্য হারিয়ে যেতে লাগলো।শরীরটাও যেনো আর সায় দিচ্ছে না।শক্তি হীন দুর্বল মানুষের মতো পা দুটো অসাড় হয়ে বার বার বরফে মুখ থুবড়ে পড়ে গেলো যুবরাজ।বেদুইন যেমন একটু পানির আশায় হন্যে হয়ে মরীচিকার পিছনে ছুটে চলে মাইলের পর মাইল যুবরাজের ঠিক সেই অবস্থা হলো।
পায়ের সমস্ত শক্তি হারিয়ে শেষমেশ হামাগুড়ি চলতে চলতে খুঁজতে লাগলো রেহানের শেষ অস্তিত্ব।

টানা তিন ঘণ্টার অভিজানেও যখন রেহানের সন্ধান মিললো না তখন চরম হতাশা আর ব্যার্থতায় দুই চোখ আপনাআপনি বন্ধ হয়ে এলো।
কিন্তু চক্ষু বোঝার আগে অদূরে পরিত্যক্ত ফকফকে বরফে ঢাকা সাদা রঙের বাড়িটি যুবরাজের দৃষ্টি পরখ করতে ভুললো না।

বাড়িটি দেখার সাথে সাথেই যুবরাজের সারা শরীরে যেনো বিদ্যুৎ তরঙ্গ খেলে গেলো।নিমিষের ব্যাবধানে সিংহের ন্যায় শক্তি এসে জমা হলো মাঝারি গড়নের শরীরটাতে।

নিজের দুই হাতের পেশির শক্তির সহায়তায় গাছের মোটা মোটা দুটো ডাল ভেঙে তাতে ভর দিয়ে হেটে চললো সেই বাড়ির অভিমুখে।
কিছুক্ষণ এর মধ্যেই ডাল দুটোর সহায়তায় বাড়িটির ভেতরে প্রবেশের বরফ পরিস্কার করে ভেতরে ঢুকে পড়ল যুবরাজ।আসে পাশে উদ্ভ্রান্তের ন্যায় দৃষ্টি বুলিয়ে দড়িতে উপুড় করে ঝুলিয়ে রাখা বরফ জমে সাদা হয়ে থাকা একজন মানুষের অবয়ব এর দিকে চোখ গেলো তার।প্রথম দেখায় ভয় পেলেও মনে সাহস সঞ্চয় করে দ্রুত পদে সামনে এসে দাড়ালো।

নিজের সমবয়সী একটা ছেলে যার শরীরের গড়ন রেহানের মতো।যুবরাজ হাতের লাঠি ফেলে তৎক্ষণাৎ পায়ের বাধন আলগা করে ধীরে ধীরে নীচে নামালো এরপর নিজের গায়ের মোটা পোশাক তার গায়ে জড়িয়ে চেহারার দিকে নজর দিতেই আঁতকে উঠলো।পুরোটা মুখ একদম ঝলসে কালো হয়ে গিয়েছে।কিছু কিছু জায়গা থেকে তেল ঝরে বরফে জমে রয়েছে।চোখ গুলো পুড়ে কুঁচকে রয়েছে।এমন বিভৎস দৃশ্য চোখের সামনে দেখে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো যুবরাজ।এরপর নিজের চোখের গড়িয়ে পড়া জল গুলোকে না মুছেই ছেলেটির বাম হাত চেপে ধরলো।

কব্জির কাছের বার্থ মার্ক স্পষ্ট বলে দিচ্ছে এটা রেহান।
রেহানের সারা শরীর বরফে আচ্ছাদিত,মনে হচ্ছে তাকে কোনো ডোম ঘরের রেফ্রিজারেটর থেকে সদ্য বের করা হয়েছে।যুবরাজ তার মনের আশা হারালো না তবুও।

“তুই কখনোই এভাবে মরতে পারিস না।আমি মরতে দেবো না তোকে।তোকে আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম তোর সবকিছুর জিম্মিদার আমি।তবে কেনো তুই মৃত্যু পথযাত্রী?

যুবরাজ প্রথমে ভাবলো রেহান হয়তো বেঁচেই নেই।এরপরেও মন মানতে চাইলো না।হাতের পালস চেক করতেই হুহু করে ডুকরে চিৎকার করে কেঁদে উঠলো যুবরাজ।
কথায় আছে না ?
“রাখে আল্লাহ মারে কে?

যুবরাজ যেনো নতুন করে রেহানকে বাঁচানোর সুযোগ পেলো।রেহান বেঁচে আছে,হ্যা রেহান বেঁচে আছে।তার পালস রেট খুবই ক্ষীন গতিতে চলছে।তবুও সে বেঁচে আছে।রেহানের দেহে প্রাণ আছে এটাই যুবরাজের জন্য অনেক কিছু।

নিজের গায়ের শার্ট দিয়ে কোনো ভাবে নিজের সাথে বেঁধে নিজের পিঠে তুলে নিলো রেহান কে।নিজের সম উচ্চতার একজন শক্ত সামর্থ্য যুবক কে পিঠে তুলতে বেশ বেগ পেতে হলো যুবরাজকে।তবুও যেখানে জীবন মৃত্যুর মাঝখানে অবস্থান সেখানে মৃত্যুর আগে জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করতে দোষ কোথায়?

রেহানকে নিয়ে কোথায় যাবে কি করবে কিছুই ভেবে পেলো না যুবরাজ।একজন জেল পলাতক ক্রিমিনাল এই কঠিন অপরিচিত শহরে এক সেকেন্ড ও টিকতে পারবে না।কিন্তু একটা ভালো হসপিটালে নিয়ে রেহানকে ইমারজেন্সি ট্রিটমেন্ট করাতে হবে।এক সেকেন্ড বিলম্ব করার মতো সময় ও আর অবশিষ্ট নেই।

চারপাশে যখন ঘন অন্ধকার আর হতাশা যুবরাজকে গ্রাস করলো তখন সবশেষে শেষ আশ্রয় স্থল হিসেবে যুবরাজের মাথায় ম্যাগানের নাম এলো।যুবরাজ যেনো তার চোখের সামনে আলোকিত ভোর দেখতে পেলো।

রেহান কে নিয়ে দুই লাঠিতে ভর দিয়ে কচ্ছপের গতিতে হেটে চললো ম্যাগানের বাড়ির উদ্দেশ্যে।
সেখানে পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় ভোর হবার উপক্রম হলো।
জ্যকব গ্যাব্রিয়েল এর প্রকান্ড বাড়ির সামনে এসে আরো কুলকিনারা হারা হলো যুবরাজ।বরফে চারপাশ এমন ভাবে সব কিছু ঢেকে আছে বাড়ির ভেতরে ঢুকবার কোনো অবস্থা নেই।

“রেহান কে নিয়ে কোনো ভাবেই ভেতরে প্রবেশ করা সম্ভব নয়,কি করবো এখন আমি?
চারপাশে দৃষ্টি বুলাতেই তুষারে আচ্ছাদিত একটি বড় গাড়ি দেখতে পেলো যুবরাজ,দ্রুত সেই গাড়ির কাছে গিয়ে কুনুই দিয়ে গাড়ির কাঁচ ভেঙে ভেতর থেকে লক খুলে সেই গাড়ির ভেতর রেহান কে পরম যত্নে শুইয়ে দিলো।

“পরিস্থিতি তোকে আর আমাকে কোথায় এনে দাঁড় করিয়েছে দেখেছিস?কখনো কি ভাবেছিলি আমাকে বন্ধু হিসেবে পেতে গিয়ে তোকে এমন নিষ্ঠুর নিয়তির সম্মুখীন হতে হবে?

নির্জিবের মতো পরে থাকা রেহানের পক্ষ থেকে কোনো জবাব আসে না।নিজের কুৎসিত মন্দ ভাগ্যের উপর উপহাস করে কপাল চাপড়ে গাড়ির দরজা বন্ধ করে বাইরে বেরিয়ে এলো যুবরাজ ।

রেহান কে তুষারে আচ্ছাদিত গাড়ির ভেতর শুইয়ে রেখে বাইরের ওয়ালের সাথে থাকা স্টিলের ড্রেন পাইপ পরিষ্কার করতে করতে বেয়ে বেয়ে দুতলায় উঠে গেলো যুবরাজ।খোলা বেলকনি ডিঙিয়ে বাসার ভেতর প্রবেশ করতেই চারপাশ কেমন ভয়ানক ঠেকতে লাগলো।ঝা চকচকে বিশাল বড় বাড়ি কিন্তু মানুষের কোনো কোলাহল নেই।যুবরাজ জানে জ্যাকব গ্যাব্রিয়েল ছাড়া ম্যাগান মেয়েটির আর কেউ নেই ।নিকট আত্মীয় বলতে এক চাচা রয়েছে সে সুইজারল্যান্ডে বাস করে।

“এতো বড় বাড়িতে মেয়েটি একা একা কিভাবে বাস করছে?মেয়েটিকে পুরোপুরি একা করে দেবার জন্য কি সত্যিই আমি দায়ী?
নানান অসহ্য ভাবনা ভাবতে ভাবতে প্রতিটা কক্ষে গিয়ে ম্যাগান কে খুঁজে হতাশ হলো যুবরাজ।
আসে পাশে ঘুরে পুরো বাড়িতে কারো সন্ধান না পেয়ে একটা বদ্ধ রুমের সামনে আসতেই থমকে দাঁড়ালো যুবরাজ।ভেতর থেকে মৃদু গোঙানির আওয়াজ আসছে।দরজায় ধাক্কা দিতেই মনে হলো ভেতর থেকে লাগানো।তবুও যুবরাজ নব ঘুরিয়ে ডেকে উঠলো

“ম্যাগান?
“ইটস ডক্টর ইউভি,ক্যান ইউ হিয়ার মি?

যুবরাজের কন্ঠ পেয়ে মৃত্যু পথ যাত্রী ম্যাগানের বুকের ছাতি ফেটে কান্না এলো।কিন্তু চোখের জল সব অনেক আগেই শুকিয়ে গিয়েছে।সে এতটাই নিরুপায় হয়ে গিয়েছে আজ যে,কান্না করে নিজের দুঃখ পর্যন্ত নিজের পছন্দের মানুষের সাথে শেয়ার করতে পারবে না।
ধীরে ধীরে ম্যাগানের গোঙানির আওয়াজ বাড়লো।

“ইজ শি অলরাইট?

আকষ্মিক চিন্তায় দ্বিতীয় দফায় ধক করে উঠলো যুবরাজের বুক।
চারপাশে খুঁজে হতবুদ্ধি হয়ে নিজের সর্ব শক্তি খাটিয়ে দরজা ভাঙার চেষ্টা করলো সে।যখন শক্তিতে আর কুলালো না তখন ডাইনিং রুমে গিয়ে চেয়ার এনে সজোড়ে একের পর এক বাড়ি দিতে লাগলো।ওক কাঠের চেয়ারটি কিছুক্ষণ পরেই ভেঙে চুর্ন বিচূর্ণ হলো সেই সাথে খুলে গেলো দরজা।

দরজা খুলে বিবস্ত্র রক্তাক্ত ম্যাগান কে দেখে শিউরে উঠলো যুবরাজ।ধপ করে হাটু মুড়ে জ্ঞান শূন্য জড়বস্তুর ন্যায় ম্যাগানের সামনে বসে পড়লো যুবরাজ।

এ কাকে দেখছে সে?সেই মোমের মতো তুলতুলে নিখুঁত চেহারার ম্যাগান আর এই রক্তাক্ত বিভৎস ম্যাগানের আকাশ পাতাল ফারাক।কিছু একটা দিয়ে মেয়েটাকে ঢেকে দেবার ভাবনা পর্যন্ত যুবরাজের মস্তিষ্কে এলো না।ঐভাবেই মাথা নিচু করে নীরবে অশ্রু বিসর্জন দিতে লাগলো যুবরাজ।

কিছু সময় অতিবাহিত হবার পর ম্যাগান তার রক্তাক্ত আঁচড় আর কামড়ের দাগ যুক্ত কাপাকাপা শীর্ন হাতে যুবরাজের হাত চেপে ধরে গুঙ্গিয়ে উঠলো।তার মুখের জিভটা পর্যন্ত কামড়ে ছিড়ে নিয়েছে শেরহাম।

কীয়তখন পার হতেই যুবরাজ অশ্রু সিক্ত নয়নে ব্যাথিত কন্ঠে শুধালো
“হু ডিড দিস?

যুবরাজের উরুতে কাঁপা আঙ্গুলির স্পর্শে কলম হীন কালীর মতো ধীরে ধীরে সময় নিয়ে ইশারা আকলো।

সেই ইশারা টের পেয়ে যুবরাজ বিস্ফারিত অশ্রু যুক্ত নয়নে নিভু নিভু কন্ঠে বলে উঠলো

“dr ফাইয়াজ?

ম্যাগান কিঞ্চিৎ মাথা দুলিয়ে সায় জানিয়ে ফ্লোরে উপুড় হয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে রইলো।একটা প্রাণ এমন মৃত্যু যন্ত্রনা নিয়ে আর কতক্ষন বাঁচবে?

যুবরাজ নিজের জ্ঞানে ফিরে একটা চাদর দিয়ে ঝটপট ম্যাগান কে মুড়িয়ে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করলো।
ম্যাগান তার ক্ষতবিক্ষত আঙ্গুলি দ্বারা আরো কিছু ইশারা আকলো

“আই লাভড ইউ ডক্টর ইউভি,এন্ড দ্যাট ওয়াজ মাই বিগ অফেন্স টু ডক্টর ফাইয়াজ,হি রেপড মি,হি হ্যাজ ফিনিসড মি টু গিভ ইউ দ্যা গ্রেটেস্ট পেইন”..

ম্যাগানের আঙুলের প্রতিটা স্পর্শের লিখিত শব্দ নিমিষের ব্যাবধানে বুঝতে পেরে চিৎকার করে কেঁদে উঠলো যুবরাজ।

ম্যাগান আরো কিছু লিখতে চাইলো,কিন্তু ধিকিধিকি প্রাণে আর কতক্ষন চলা যায়?

তবুও শেষ বারের মতো যুবরাজের বুকে আঙ্গুল উঁচিয়ে লিখলো

“উইল ইউ হাগ মি ওয়ান্স ডক্টর Yuv?

#চলবে

#ওয়েলকাম_টু_মাই_ডার্কসাইড
#পর্ব_২৯
#সারিকা_হোসাইন

*********
যুবরাজের শক্ত বাহুডোরে ম্যাগানের নিথর দেহ খানি পড়ে রয়েছে।এইতো কিছুক্ষণ আগেই মেয়েটির প্রাণবায়ু তার দেহ ছেড়ে দূর আকাশে ডানা মেলেছে।মেয়েটা সারা জীবনের জন্য যুবরাজকে অপরাধী বানিয়ে ধরা থেকে বিদায় নিলো।অবলীলায় মেয়েটি বারংবার তার ভালোবাসার কথা ব্যাক্ত করে গেলো যুবরাজের কাছে অথচ যুবরাজ তার প্রতিদান কিছুই দিতে পারলো না।ম্যাগানের মৃত্যুর সাথে সাথেই যুবরাজের চোখ দুটো স্থির হয়ে রইলো।সেগুলো থেকে এখন আর অশ্রু কণা গড়াচ্ছে না।যুবরাজের হৃদয় যেনো হাজার বছরের ভূমিতে পতিত হওয়া শক্ত পাথর হয়ে গেলো নিমিষেই।।তাতে না আছে অনুশোচনা না আছে আফসোস।শুধু বারবার একটা কথাই মাথায় ঘুরছে

“শেরহাম ফাইয়াজ আ উইল কি*ল ইউ এট এনি কষ্ট,আ উইল গিভ ইউ দ্যা বেস্ট পেইন অফ ডেথ ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড।জাস্ট ওয়াইট ফর মি”

ম্যাগান কে কোলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে সারা ঘরে তল্লাশি চালালো যুবরাজ।এই মুহূর্তে আবেগী না হয়ে কিভাবে সার্ভাইভ করা যাবে সেই চিন্তাই যেনো মুখ্য হলো।ম্যাগানের ঘর থেকে প্রথমেই যুবরাজ একটা গাড়ির চাবি পেলো।এটাই যেনো সে চাইছিলো,এরপর না চাইতেও নিজের মনের বিরুদ্ধে গিয়ে আলমারি খুলে কিছু নগদ টাকা আর ডায়মন্ড এর গহনা নিয়ে নিলো।সব কিছু গুছিয়ে একটা ব্যাগে ভরে ম্যাগানের ফোন খুঁজে বের করে জেল থেকে একসাথে পালানো সেই ক্রিমিনাল এর নম্বর ডায়াল করলো।প্রথম রিং কেটে গেলো কিছুক্ষন রিং হয়ে।যুবরাজ তবুও হতাশ না হয়ে ঝটপট দ্বিতীয় বার সেই নম্বর ডায়াল করলো।
ফোন কেটে যাবে এই মুহূর্তে ফোন রিসিভ হতেই যুবরাজ বলে উঠলো

“হেই ম্যাক,ইটস ইউভি”
“আই নিড ইউর হেল্প”

ওপাশের ব্যাক্তি যেনো যুবরাজের নাম শুনেই বেশ খুশি হলো।খুশিতে গদগদ হয়ে যুবরাজকে একটি নির্দিষ্ট ঠিকানা প্রদান করে কল কেটে দিলো ম্যাক।

কান থেকে ফোনটা নামিয়ে নিজের পকেটে পুড়ে ম্যাগানের নিথর দেহের দিকে তাকিয়ে যুবরাজ পুনরায় আলমারি খুললো এবং সেখান থেকে বেছে বেছে কালো রঙের একটা গাউন নিয়ে ব্যাগে ভরে ম্যাগান কে কাঁধে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নেমে এলো।
পার্কিং লটে এসে কী সুইচ প্রেস করতেই ম্যাগানের পার্সোনাল রোলস রয়েস কারটির হেড লাইট জ্বলে বিপ সাউন্ড হলো।

গাড়ির দরজা খুলে ম্যাগান কে শুইয়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো যুবরাজ।এরপর রেহানের গাড়ির কাছে এসে দ্রুত রেহানকে কোলে তুলে নিজের পাশের সিটে বসিয়ে সিট বেল্ট বেঁধে মাথায় একটা ক্যাপ পরিয়ে মোটা শীত বস্ত্র দিয়ে ভালো করে ঢেকে দিলো।

চারপাশে অলরেডি রোদ উঠার উপক্রম হয়েছে।যুবরাজ বারবার শঙ্কিত মনে নানান ভাবনা ভেবে চলেছে।

“রাস্তা কি ক্লিয়ার পাবো?আমাকে যদি পুলিশ আবার এরেস্ট করে নিয়ে যায় তাহলে কি হবে?ম্যাক পর্যন্ত এদের দুজনকে পৌঁছাতে পারবো তো?

নানান ভাবনা ভাবতে ভাবতে হাইওয়ে তে এসে বেশ অবাক হলো যুবরাজ।ইতিমধ্যে সিটি কর্পোরেশন থেকে রাস্তার বরফ পরিষ্কারের কাজ প্রায় শেষের পথে।চতুর যুবরাজ সতর্কতা অবলম্বন করে গাড়ি চালাতে লাগলো যাতে কারো সন্দেহ না হয়।ধীরে ধীরে শহর ছাড়িয়ে গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে যুবরাজ ছুটে চললো তার নির্দিষ্ট ঠিকানায়।

গন্তব্য পোর্ট নিউইয়র্ক

এদিকে হঠাৎই রেহানের শ্বাসকষ্ট হতে লাগলো।যুবরাজ জানে এই মুহূর্তে কি করতে হবে।কিন্তু তার কাছে কোনো ব্যাবস্থা নেবার অবস্থাই নেই।যুবরাজ গাড়ির স্পিড আরো বাড়িয়ে দিলো।যেকরেই হোক রেহানকে বাঁচাতেই হবে।রেহান না বাচলে যুবরাজ নিজেও হাডসন নদীতে ঝাঁপ দিয়ে নিজের এই কুৎসিত দুর্দশা আর হতাশা গ্রস্থ জীবন থেকে মুক্তি নেবে।এই কঠিন ভাবনা ভাবতে ভাবতে অসহায় করুন চোখে রেহানের দিকে দৃষ্টি দিলো।রেহানের অবস্থা ধীরে ধীরে আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে।সব কিছুই যেনো যুবরাজের হাতের বাইরে।এরই মাঝে ম্যাকের কল এলো।

ঝটপট ফোন রিসিভ করতেই ম্যাক বলে উঠলো
“আর দুই মিনিট পর জাহাজ ছেড়ে দেবে,কোথায় তুমি?

যুবরাজ কোনো প্রতিউত্তর না করে ফোন রেখে সকল ট্রাফিক সিগন্যাল ব্রেক করে পোর্টে প্রবেশ করতেই ম্যাকের লোকজন যুবরাজকে গাড়ি সহ জাহাজের ভেতর ঢুকিয়ে দেবার ইশারা করলো।এদিকে জাহাজও হুইসেল বাজিয়ে পোর্ট থেকে যাত্রা করার প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে।যুবরাজ তাদের নির্দেশ ফলো করে স্কেলেটর চেপে নিজের জীবনের মায়া না করে একপ্রকার জাম্প করেই জাহাজে উঠতে সক্ষম হলো।

ম্যাকের লোকজনের সহায়তায় দ্রুততার সহিত রেহানকে ধরে একটা বেডে চিৎ করে শোয়ানো হলো।এরপর যুবরাজ দুই হাতের সহিত রেহানের বুকে প্রেস করতে লাগলো।প্রেস করতে করতে এই হিম শীতল পরিবেশে যুবরাজের ঘাম ছুটে গেলো।তবুও রেহানের কোনো অবস্থার উন্নতি হলো না।

“আমি কি কোনো ভাবেই তবে তোকে বাঁচাতে পারবো না রেহান?এতো দূর পর্যন্ত এসে তবে কি কোনো লাভ ই হলো না?

কাঁদতে কাঁদতে কথা গুলো বলে আরো কিছুক্ষন বুকে পাম্প করে মুখে কৃত্রিম শ্বাস দিলো।
যুবরাজ যখন হাল ছেড়ে দেবার উপক্রম তখন একজন জাপানি লোক এসে জানালো

“আমাদের জাহাজে অক্সিজেন মাস্ক এর ব্যাবস্থা আছে,চাইলে ব্যবহার করে দেখতে পারো।”

যুবরাজ যেনো ডুবে গিয়েও বেঁচে ফিরলো।
জাপানি লোকের সহায়তায় অক্সিজেন সিলিন্ডার সহ মাস্ক এনে রেহানকে অক্সিজেন সাপোর্ট দিতেই কিছুটা শান্ত হলো সে।

“রেহানকে বাঁচাতে হলে এই মুহূর্তে কিছু ইনজেকশন,মেডিসিন আর স্যালাইন ইমারজেন্সি প্রয়োজন,কিন্তু এই সমুদ্রে আমি কোথায় পাবো এগুলো?

বহু কষ্টে আটকে রাখা জল আর ধরে রাখতে পারল না যুবরাজ।না চাইতেও জলের ধারা কপোল গড়িয়ে বুক ভাসিয়ে দিলো।
সবটাই অবলোকন করে ম্যাক বলে উঠলো

“মনে করো আমি আলাদিনের দৈত্য ,তুমি তোমার মনের ইচ্ছে আমাকে জানাও, আমি চেষ্টা করে দেখবো এই কথা বলে তোমাকে শান্তনা দেবেনা। আমি হান্ড্রেড পার্সেন্ট সেটা এনে দেবো তোমাকে”

ম্যাকের কথা যুবরাজের অবিশ্বাস্য মনে হলো তবুও একটু আশায় যুবরাজ জানালো রেহানকে বাঁচাতে এই মুহূর্তে কি কি লাগবে।

কিছুক্ষন বাদেই জাহাজের আশেপাশে হেলিকপ্টার দেখে ভয়ে সিটিয়ে গেলো যুবরাজ।একজন মার্ডারের আসামিকে নিউ ইয়র্ক পুলিশ পাতাল থেকে হলেও বের করে আনবে।

“রেহানের অবস্থা সংকটাপন্ন এদিকে ম্যাগানের ফিউনারেল বাকি রয়ে গেছে।এই অবস্থায় আমাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেলে এই দুটো মানুষের কি উপায় হবে?

এরই মাঝে দৌড়ে এলো ম্যাক।ম্যাকের উদ্বিগ্নতা দেখে যুবরাজ ভয়ে কেঁদে দেবার উপক্রম হলো।
কিন্তু ম্যাক তার পিঠে চাপড় দিয়ে বললো

“এ গুড নিউজ ফর ইউ”

সুসংবাদ এর কথা শুনে যুবরাজের বুকের পাথর যেনো কিছুটা সড়লো।ম্যাক জানালো
“এখান থেকে তিন মাইল দূরেই একটা ক্রুজ শিপ রয়েছে যেখানে অসুস্থ পেশেন্ট বা নাবিকদে চিকিৎসা দেয়া হয়।এই হেলিকপ্টার এ করে তুমি সেখানে পৌঁছে যাও।আমার জাহাজের একজন লোক যাবে তোমার সাথে,আমি সব কিছুর ব্যাবস্থা করে দেবো।প্লিজ ডোন্ট প্যানিক”

রেহানকে রেডি করতে করতে যুবরাজ অসহায় চোখে ম্যাকের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে

“মেয়েটা আমার জন্য প্রাণ হারিয়েছে।আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তার ফিউনারেল করতে চাই”

ম্যাক ব্যাথিত বদনে যুবরাজের হাত ধরে বলে উঠলো
“ডোন্ট ওয়ারি,জাহাজের রেফ্রিজারেটর এ আমি যত্নের সাহায্যে তার দেহ সংরক্ষণ করবো।একটা পবিত্র আত্মাকে ফিউনারেল ছাড়া বিদায় দিতে আমিও সমর্থন করি না।সকল নিয়ম মেনেই ফিউনারেল হবে।আগে যে বেঁচে আছে তাকে বাঁচাও।”

ম্যাক কে থ্যাঙ্কস জানিয়ে রেহান কে হেলিকপ্টার এ তুলে যুবরাজ শেষ বারের মতো ম্যাগানের ফ্যাকাশে মুখ খানা দেখে সিক্ত কন্ঠে বলে উঠলো

“উই উইল মিট এগেইন,আ উইল ডু ইউর ফিউনারেল বাই মাইসেলফ,প্লিজ ডোন্ট বি এঙরী”

কথাগুলো বলতে বলতে যুবরাজের গলা ধরে এলো,বারবার মেয়েটির সুন্দর মিষ্টি হাসি মাখা মুখশ্রী চোখের সামনে ভেসে উঠছে।বড় বড় নীল চোখের পাপড়ি ঝাপ্টানো আর ধীর কণ্ঠে নম্র ভাবে কথা বলার ধরন।সব মিলিয়ে যুবরাজের মন বেদনার নীল কষ্টে বিষিয়ে উঠলো।

“তোমার প্রতি আমার সাময়িক ভালোলাগা ছিলো ম্যাগান গ্যাব্রিয়েলা, সেই ভালোলাগা থেকে বাকি অসাধু পুরুষদের মতো সামান্য ফ্লার্টিং করার ইচ্ছেও জেগেছিলো।কিন্তু বিশ্বাস করো তোমার মায়াবী মুখশ্রী দেখে আমার বিবেক আমাকে বাধা দিয়েছে।আমি নিজেকে কঠিন শাসনে বেঁধে নিয়েছিলাম।কখনো তোমাকে নিয়ে বাজে কোনো চিন্তা পর্যন্ত করিনি।অথচ আমাকে ভালোবাসার অপরাধে কঠিন দণ্ডে দণ্ডিত হলে তুমি।তুমি ভুল মানুষকে ভালোবেসে ছিলে ম্যাগান।আম সরি”

গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়া জল গুলোকে আঙুলের সহায়তায় মুছে ম্যাকের সহায়তায় জাহাজের নিচের একটা ফ্রিজের ড্রয়ারে কাপড়ে মুড়িয়ে নাকে তুলো গুঁজে ম্যাগান কে কাঁপা হাতে ভরে দরজা লাগিয়ে উপরে উঠে এলো যুবরাজ।দ্বিতীয় বারের জন্য যুবরাজ আর পিছনে তাকিয়ে সেই বিষাদ ময় স্মৃতি দেখার ইচ্ছে পোষন করলো না।ম্যাগান কেবল যুবরাজের কালো বিষাদি অধ্যায় হয়ে রইলো।

**********
বিশাল বড় মেডিকেল ক্রুজ শিপটিতে সকল ধরনের মেডিকেল ইকুইপমেন্ট এ পরিপূর্ণ।যুবরাজ নিজের পরিচয় দিতেই ভেতরে থাকা আরো দুজন স্পেশালিষ্ট সার্জন বেরিয়ে এলো।এরা মূলত সমুদ্রে থাকা নাবিক,জাহাজের যাত্রী এবং কোস্ট গার্ডদের চিকিৎসা করে থাকেন।এই জাহাজ গুলোতে অপারেশন থিয়েটারে থেকে শুরু করে সকল প্রকারের মেডিসিন সহ আরো বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা বিদ্যমান।

রায়াফের সমস্ত শারীরিক কন্ডিশন সেই ডাক্তার দুটোকে খুলে বললো যুবরাজ।সেই অনুযায়ী তারা রায়াফকে চিকিৎসা দিতে ব্যাতিব্যাস্ত হলো।

প্রথমেই রায়াফের হার্ট পালস রেট পজিশনে আনার জন্য সিপিআর দেয়া হলো।বার বার লুব্রিকেন্ট লাগিয়ে শক দেবার পরেও রায়াফের অবস্থার কোনো উন্নতি হলো না।এদিকে যুবরাজ হার্টের ব্লাড ফ্লো বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের ইনজেকশন দিয়ে সবকিছু আয়ত্তে আনার চেষ্টা করছে।লাস্ট বারের মতো একজন সহযোগী ডক্টর সিপিআর দিতেই রায়াফের নিভু নিভু প্রাণ প্রদীপ কিছুটা সচল হলো।যদিও ঠিক ভাবে শ্বাস প্রশ্বাস নিতে সক্ষম হলো না রেহান।

পাশে থাকা একজন প্রবীণ ডক্টর যুবরাজকে কাঁধ চাপড়ে বলে উঠলো
“দেখুন ডক্টর ইউভি আপনি নিজেই একজন হার্ট স্পেশালিষ্ট।আপনাকে সব কিছু বুঝিয়ে বলার কোনো বিষয় নেই।তবুও আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে উনাকে লাইফ সাপোর্ট এ রাখা প্রয়োজন।উনার সিচুয়েশন কেমন যেনো আমার ভালো লাগছে না।আর উনার চেহারার যেই অবস্থা তাতে আমার মনে হয় না উনি সারভাইভ করতে পারবে।আর তাছাড়া উনাকে এভাবে রাখাও যাবেনা।তাই আমার মনে হয় উনাকে লাইফ সাপোর্ট এ রেখে উনার শারীরিক কন্ডিশন এর রিপোর্ট করে তারপর ট্রিটমেন্ট করা উচিত।আদৌ উনি ব্রেন ডেথ কিনা সেটাও জানা জরুরি..অতিরিক্ত ঠান্ডায় তার রক্তনালী সংকুচিত হয়ে হার্টে ঠিক ভাবে ব্লাড ফ্লো হতে পারছে না এখন যদি করোনারি আর্টারি ব্লক হয় উনি হার্ট এট্যাক করবে।

ডক্টর এর বলা কথা গুলো যুবরাজ মন দিয়ে ভেবে কিছু ক্ষণ চিন্তা করলো এরপর আহত কন্ঠে বলে উঠলো

“ডক্টর রেহান যেই সিচুয়েশন থেকে প্রাণ নিয়ে ফিরেছে সেই সিচুয়েশনে কারো বেঁচে থাকা পসিবল নয় ডক্টর ।ও বাঁচবে,ওকে বাঁচাতে আমি সব কিছু করতে প্রস্তুত আছি ।আপনি ওর ট্রিটমেন্ট এর ব্যাবস্থা করুন।ওকে লাইফ সাপোর্ট দিন।ও কখনোই ব্রেন ডেথ নয়।

———
একটানা সাত ঘন্টা ঘুমানোর পর শেরহামের হঠাৎ করেই ডক্টর রেহানের কথা মনে পড়লো।চট করে শোয়া থেকে উঠে মনে মনে বলে উঠলো

“আরে সালাকে না মে*রেই তো চলে এসেছি,একবার গিয়ে দেখে আসবো নাকি বেঁচে আছে নাকি ম*রে গেছে?

রেহানের কাছে যাবার জন্য ঝটপট রেডি হয়ে নিচে নেমে এলো শেরহাম।ড্রয়িং রুমে বসে বসে সুবহান শেখ দুপুরের খাবারের প্রস্তুতি নিচ্ছেন আর টিভি দেখছেন।

“এই অসময়ে কোথায় যাচ্ছ নাকি?

“যুবরাজকে একটা বড় ধাক্কা দিতে যাচ্ছি পপস”

“এটর্নির সাথে ভালো করে কথা বলেছো?যুবরাজ কি কোনো ভাবে বেল নিতে পারবে?

“না,যুবরাজকে আজীবন জেলে পঁচেই মরতে হবে”তুমি চিন্তা করো না।আমি সব সামলে নেবো।

“চিন্তা কি আর সাধে করি?তোমার দাদুর সম্পত্তির ফিফটি পার্সেন্ট যুবরাজের মা নবনীতা কে দিয়ে গেছে।একমাত্র ছেলে হিসেবে যুবরাজ ই সব কিছুর মালিক হবে এটাই স্বাভাবিক।যুবরাজ বেঁচে না থাকলে তবেই তুমি রাজত্ব করতে পারবে সাদাফের সম্পত্তি পর্যন্ত হাতাতে পারবে।

“যুবরাজের অস্তিত্ব আমি মাটির সাথে মিশিয়ে দেবো পাপা,প্লিজ অযথা চিন্তা করো না।

হঠাৎই টিভির ইংলিশ চ্যানেলের খবরে চোখ আটকে গেলো বাবা ছেলের।

“ডক্টর ইউভি এস্ক্যাপড ফ্রম জেল”

#চলবে

#ওয়েলকাম_টু_মাই_ডার্কসাইড
#পর্ব_৩০
#সারিকা_হোসাইন

———-
দিনের ঝলমলে আলো গড়িয়ে ধীরে ধীরে দিগন্তে মিলিয়ে যাচ্ছে।একটু আগের মৃদু তাপ বিলিয়ে দেয়া সূর্যটা টকটকে লাল বর্ণ ধারণ করে পশ্চিম আকাশে সমুদ্রের কোল ঘেঁষে বিলীন হবার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।ধীরে ধীরে বাড়ছে শীতের প্রকোপ।ভূ-উপরি ভাগের তুলনায় মাঝ সমুদ্রে শীতের মাত্রা যদিও কিছুটা কম।

বিশাল সমুদ্রের নীল জলরাশির বুক চিড়ে ধীরে ধীরে ছুটে চলেছে সাদা রঙের ছয় তলা বিশিষ্ট ক্রুজ শিপটি।চারপাশে শুধু জল আর জলের সমারোহ,দৃষ্টির সীমানায় সমুদ্রের কোনো কুলকিনারা দেখা যাচ্ছে না।শিপটি আপন মনে তার গন্তব্যে ছুটে চলেছে বিরামহীন ভাবে।এই শিপের গন্তব্যের শেষ কোথায় যুবরাজ জানেনা।যুবরাজ শুধু জানে যেকোনো মূল্যে রেহানকে সুস্থ করে বাংলাদেশে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে ।কারন রেহানের এরূপ নৃশংস অবস্থার সাথে কোনো না কোনো ভাবে সে উৎপ্রেত ভাবে জড়িত।

জাহাজের ওপেন ডেক এর বারান্দায় রেলিংয়ে দুই হাত ভাঁজ করে তার উপর থুতনির ভর দিয়ে জাহাজের চারপাশ জুড়ে উড়ে চলা সিগালের দিকে এক মনে তাকিয়ে আছে যুবরাজ সেই সাথে নিজের মনের সাথে চলছে নানান কল্পনা জল্পনা।গোধূলী লগ্নের শিরশিরে বাতাসে যুবরাজের ঝলমলে ছোট করে ছাটা চুলগুলো কিছুটা উড়াউড়ি করছে সেই সাথে পতপত করে উড়ে চলেছে গায়ের সাদা রঙের পাতলা শার্ট আর তার কলার।এই অল্প কদিনেই যুবরাজের মুখের মসৃন ত্বকে মলিনতা জেঁকে বসেছে।যেই গাল দুটো ক্লিন শেভে চকচকে দ্যুতি ছড়াতো সেই গাল দুটো খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে ভরে গিয়ে যুবরাজের বয়স আরো দুই ধাপ বাড়িয়ে দিয়েছে। আয়নায় নিজেকে দেখে নিজেরই চিনতে বড্ড কষ্ট হয় তার।মুহূর্তের ব্যাবধানেই গন্তব্যহীন নাবিকের ন্যায় তার জীবনের রূপরেখা মোড় নিয়েছে।ভাগ্যই তাকে এখন সব কিছু নির্ধারণ করে দেবে কেননা তার নিজের হাতে এখন আর তার ভাগ্য নেই।যুবরাজ তার গভীর বাদামি দৃষ্টি মেলে ধীরে ধীরে সমুদ্রের অতলে তলিয়ে যাওয়া সূর্যের টিমটিমে আলো দেখছে আর শ্লেষত্বক হাসছে।

“নানান ঝড় ঝাপটায় পেরিয়ে গিয়েছে পনেরো টি দিন।আমাকে না পেয়ে পাপা আর মা কি খুব বেশি ভেঙে পড়বে?আমার কি একবার তাদের সাথে যোগাযোগ করা উচিত?কিন্তু কিভাবে যোগাযোগ এর মাধ্যম খুঁজে পাবো এই মাঝ সমুদ্রে?যদি পাপা কোনো ভাবে আমার জেল হওয়া বা পালিয়ে যাবার নিউজ শুনতে পায় তখন কি হবে?আমার এক্সপ্লেনেশন উনার বিশ্বাস হবে তো?

আজকাল নিজের জীবন যুবরাজের কাছে খুব খুব দুর্বিষহ ঠেকছে।সামান্য ভাবলেই চোখের দুকূল ছাপিয়ে অশ্রুরা এসে হানা দেয়।চিৎকার করে কান্না করতে খুব ইচ্ছে করে।কিন্তু ছেলে মানুষের এতো ফ্যাচফ্যাচ কান্না কি মানায়?
এরকম জীবন তো তার কাম্য ছিলো না।তবে চারপাশ থেকে হতাশা আর বিবিধ ভয় কেনো তাকে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে বারংবার?

নিজের জীবনের সমীকরণ কিছুতেই মেলাতে পারছে না যুবরাজ।তার মনে হচ্ছে সে যদি এই সিগাল গুলোর মতো বাধা হীন স্বাধীন ভাবে চলতে পারতো তবে কতই না ভালো হতো!কিন্তু এখন কি আর তা সম্ভব?সে তো এখন আর কোনো ডাক্তার ফাকতার নয় ।সেতো এখন জেল পলাতক খু*নের ওয়ান্টেড আসামি।

“এতক্ষনে নিশ্চয়ই পুরো নিউইয়র্ক জুড়ে আমার জেল থেকে পালানোর খবর ফলাও হয়ে গিয়েছে।পুলিশ বোধ হয় হন্যে হয়ে আমাকে খুঁজছে।অবশ্যই টিভিতে টিভিতে সংবাদ মাধ্যম গুলো রসিয়ে রসিয়ে আমাকে জড়িয়ে খুব বিশ্রী খবর প্রচার করে চলছে সমানে।আর শেরহাম?সেকি আমার পালানোর খবর জানতে পেরেছে?কিসের এতো শত্রুতা আমার সাথে তার?সেতো আমার আপন মামাতো ভাই”!

আর ভাবতে পারেনা যুবরাজ।লম্বা হাত যুক্ত শার্টের কাফ দিয়ে চোখের জল মুছে পুনরায় জাহাজের প্রোপেলার এর ঘূর্ণনে দ্বিভাগ হয়ে যাওয়া ঢেউয়ের দিকে দৃষ্টি বুলায়।

“ডক্টর ইউভি আপনার বন্ধুর শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক হয়েছে,প্লিজ কাম উইথ মি।”

বিদেশি ক্রুজ ডাক্তার এর কথা কর্ণপাত হতেই যুবরাজ যেনো কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেললো।নির্বাক হয়ে শূন্য দৃষ্টিতে ডক্টর এর দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করলো সে যা শুনেছে সেটা সঠিক কিনা!

যুবরাজের মুখের অবয়ব দেখেই ডক্টর নিকোলাস মৃদু হাসলেন।এরপর যুবরাজের কাঁধ চাপড়ে বলে উঠলেন
“ডোন্ট ওয়ারি,হি উইল রিকোভার সুন”

যুবরাজকে চোখের ইশারায় তাগাদা দিয়ে ডক্টর নিকোলাস প্রস্থান নিলেন।যুবরাজ নিজেকে ধাতস্থ করে ডক্টর এর পিছু পিছু আইসিইউ রুমের দিকে দ্রুত পদে অগ্রসর হলো।

লাইফ সাপোর্ট এর সকল মেশিন অক্সিজেন মাস্ক,আরো যাবতীয় যন্ত্রপাতি খুলে নরমাল একটি কেবিনে শিফট করা হলো রেহানকে।যুবরাজের ধারনাই সত্যি হয়েছে।রেহান ব্রেন ডেথ নয়।তার শারীরিক কন্ডিশন আগের তুলনায় অনেকটাই ভালো।মুখের পুড়ে যাওয়া বিকৃত অবস্থা ছাড়া আর বাকি কন্ডিশন পুরোপুরি ওকে।এখন শুধু জ্ঞান ফেরার পালা।বাকি ডক্টরদের মধ্যে রেহানের অবস্থা নিয়ে যতোটা খুশি দেখা গেলো যুবরাজের মধ্যে তার সিকি ভাগ ও দেখা গেলো না।
কিছুক্ষনের মধ্যেই রেহান খুবই ধীরে ধীরে নিজের পায়ের আঙ্গুলি আর হাত নাড়াতে সক্ষম হলো।সেই দৃশ্য দেখে বাকি ডক্টরস দের মুখের হাসি প্রশস্ত হলো কিন্তু যুবরাজের ভয় দ্বিগুন হারে বাড়তে লাগলো।এক সময় যুবরাজের বুক ভার হয়ে দুই পা অসাড় হয়ে এলো।বলহীন মানুষের মতো পাশে থাকা চেয়ারে ধপ করে বসে পড়লো যুবরাজ।

“ডক্টর ইউভি আর ইউ ওকে?

নার্সের চিকন সুরের উদ্বিগ্ন আওয়াজ যুবরাজের কর্ণকুহরে পৌঁছালো না।সে শুধু রেহানের কথা ভেবে চলেছে।

“রেহান তুই তোর এই অবস্থা সহ্য করতে পারবি তো?নিজের নিখুঁত সুদর্শন চেহারা হারিয়ে নিজেকে কিভাবে ধরে রাখবি তুই?আমি তোকে সামলাতে পারবো তো?

যুবরাজের মনের ভয় প্রবীণ ডক্টর নিকোলাস সহজেই বুঝে গেলো।রেহানকে দ্রুত হাতে কিছু ইনজেকশন পুশ করে যুবরাজকে এক প্রকার বগল দাবা করে কেবিনের বাইরে নিয়ে এলো।

“ডক্টর ইউভি ডোন্ট ওয়ারি।এখন এসব কোনো চিন্তারই বিষয় নয়।আজকাল চিকিৎসা বিজ্ঞান অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে।গড এর কাছে প্রে করুন সে জানে বেঁচে আছে।চেহারা সে তো চাইলেই পরিবর্তন করা যায়।

ডক্টর নিকোলাস এর স্মিত হাসি যুক্ত মুখের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে যুবরাজ বলে উঠলো
“যখন সে সুস্থ ছিল সে একজন সুদর্শন পুরুষ ছিলো।আজ তার চেহারা কুৎসিত অঙ্গার এর ন্যায়।এটা সে কিভাবে মানবে ডক্টর?

যুবরাজের হতাশা কমাতে ডক্টর নিকোলাস নিজের ওয়ালেট বের করে তার থেকে একটা কার্ড বের করে যুবরাজের হাতে দিলো

“হি ইজ মাই ফ্রেন্ড এন্ড অলসো এ প্লাস্টিক সার্জন,শারীরিক পুনর্গঠন বা রূপ বর্ধক তার বা হাতের খেল।শুধু আমার পরিচয় দেবে।আর কিচ্ছু লাগবে না।আম সিউর ইউ উইল নট বি ডিসাপয়েন্টেড।”

ডক্টর নিকোলাস এর হাত থেকে কার্ডটি নিয়ে যুবরাজ কিছুক্ষন উল্টে পাল্টে দেখলো।এরপর চকচকে চোখে ডক্টর এর দিকে তাকিয়ে অধিক উচ্ছাসের সহিত বলে উঠলো।।

“থ্যাঙ্কিউ ডক্টর,থ্যাঙ্কিউ।আম রেস্পন্সিবল ফর হিজ কন্ডিশন।আমি কোনো ভাবেই তার এই অবস্থা মেনে নিতে পারছি না।বারবার নিজেকে চরম দোষী মনে হচ্ছে।আমি তার হতাশা আর বিষাদ গ্রস্ত হীনমন্যতায় ভোগা চেহারা কখনোই সহ্য করতে পারবো না।তাকে খুশি রাখার জন্য আমি সব কিছু করতে রাজি আছি ডক্টর”

ডক্টর নিকোলাস যুবরাজকে আশস্ত করে কেবিনে ঢুকে গেলেন।একটু পর যুবরাজ দ্রুত পদে কেবিনে ঢুকে রেহানের জ্ঞান ফেরার প্রতীক্ষা করতে লাগলো।নির্দিষ্ট সময় পার হবার পরও রেহান যখন চোখ মেলে তাকালো না তখন সকলের মনে দ্বিতীয় ভয় জেঁকে বসলো।

“ডক্টর রেহান কি কোমায় চলে গেলো?

ডক্টরদের মুখায়ব দেখে যুবরাজ যা আন্দাজ করার তা করে ফেললো।বিচলিত উদ্বিগ্নতা কাটিয়ে রেহানের বেডের কাছে এসে হাত টেনে ধমকে উঠলো যুবরাজ।

“এই উঠ,অনেক হয়েছে তোর নাটকবাজি,এসব হাইড এন্ড সিক মোটেও ভালো লাগছে না আর।এক থেকে তিন পর্যন্ত গুনবো।এর মধ্যে না উঠলে চিরতরে জেগে ওঠার সব পথ বন্ধ করে দেবো বলে দিলাম।

যুবরাজের এমন হুংকারে পাশে থাকা ডাক্তার গুলো নড়েচড়ে উঠলো এবং যুবরাজকে শান্ত করার চেষ্টা চালালো।কিন্তু যুবরাজ কি সেসব শোনার পাত্র?

ডক্টরস দের সকল নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পুনরায় টেনে বালিশে হেলান দিয়ে রেহানকে বসিয়ে নাসারন্ধ্র চেপে ধরলো যুবরাজ।
এটা দেখে ডক্টর নিকোলাস চিৎকার করে উঠলো

“ডক্টর ইউভি আর ইউ ম্যাড?প্লিজ কাম ডাউন,কাম টু ইউর সেন্স”

কিন্তু এসব কিছুই যুবরাজের কানে গেলোনা।সে তার কাজে অনড়।এভাবেই কিছুক্ষন অতিবাহিত হবার পরে রেহান ডাঙ্গায় তোলা মাছের মতো তড়পাতে লাগলো ।যুবরাজকে পাগল খেতাব দিয়ে কিছুটা রাগত হয়েই ডক্টর নিকোলাস আর তার সহযোগী যুবরাজকে টেনে রেহানের থেকে দূরে সরাতে চাইলো।
কিন্তু অসুর সম যুবরাজকে কিছুতেই এক চুল ও নাড়াতে পারলো না।

টানাহেঁচড়ার এক পর্যায়ে রেহান পুড়ে যাওয়া কুঁচকানো চোখের পাতা কিঞ্চিৎ মেলে তাকিয়ে হাত পা ছুড়তে লাগলো।
এবার যেনো যুবরাজ স্বস্তির শ্বাস ফেললো।

“আমি জানতাম তুই কোমায় যাসনি, শুধু শুধু আমাকে হয়রানি করার ধান্দা করেছিলিস তাই না?

কিছুক্ষণ সময় অতিবাহিত হবার পর রেহান ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকালো,এবং হাত পা ভালো মতো নাড়াতে সক্ষম হলো।বহু চেষ্টা করে কথা বলতে চাইলো।কিন্তু গলা দিয়ে কোনো আওয়াজ বের হলো না।

এবারও যেনো যুবরাজ অধৈর্য হলো।

“তোকে কি কথা বের করে আনার জন্য গলা টিপে ধরতে হবে নাকি?গলার ভেতর এক হাত ঢুকিয়ে দেবো?

যুবরাজের কথা শুনতে পেয়ে অজ্ঞজনক খানিক হাসলো রেহান।এরপর অনেক কষ্টে জড়িয়ে যাওয়া নিভু নিভু কন্ঠে শুধালো

“আমি দেখতে অনেক বিশ্রী হয়ে গেছি তাই না?

“কে বলেছে তুই বিশ্রী হয়েছিস?যার মন সাফ পরিস্কার সে কি কখনো বিশ্রী হয়?তুই আগের থেকে আরো বেশি সুদর্শন হয়েছিস।”

“মিথ্যে শান্তনা দিচ্ছিস?

“আমাকে কখনো মিথ্যা বলতে শুনেছিস?

“dr ফাইয়াজ আমাকে এসিড দ্বগ্ধ করেছে”

“বাহ্যিক সৌন্দর্য কি মানুষের সব কিছু রেহান?তুই তো ভেতর থেকে সুন্দর।বাইরের সৌন্দর্যে কি আসে যায়?

“আমি কুৎসিত হয়ে গেলাম,আমাকে সকলে ঘৃণার নজরে দেখবে”

“তোকে আমি আমার মন মতো নতুন চেহারা দেবো, নিবি?

“আমি আয়নায় একবার আমাকে দেখতে চাই!

“উহু একদম না, সময় এলে অবশ্যই দেখবি।এখন দেখার কোনো দরকার নেই।

#চলবে