ওয়েলকাম_টু_মাই_ডার্কসাইড পর্ব-৩৪+৩৫+৩৬

0
5

#ওয়েলকাম_টু_মাই_ডার্কসাইড
#পর্ব_৩৪
#সারিকা_হোসাইন

———-
চলছে আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি সময় ,প্রকৃতি ক্ষণে ক্ষণে তার রূপ বদল করে চলেছে।এই তীব্র অস্বস্তিকর রোদ আর গরম তো এই বৃষ্টি।প্রকৃতির এই রূপ বদলের সাথে সাথে মানুষের মন মেজাজের ও যখন তখন পরিবর্তন ঘটেছে।রোদের তেজের সাথে পাল্লা দিয়ে রাগের পারদ তর তর করে বাড়তে থাকছে আবার মেঘ বৃষ্টির শীতলতায় ধীরে ধীরে মনে ফুরফুরে হাওয়া বইছে।

শেরহাম যখন রেজোয়ান চৌধুরীর বাড়ির প্রধান ফটকে এসে দাঁড়ায় তখন আকাশে ঝকঝকে রোদ আর প্রখর তার তেজ।কিন্তু যুবরাজ আসার সাথে সাথেই তেজী রোদ মেঘের তলে লুকিয়ে বৃষ্টির সৃষ্টি করার ফন্দি এটেছে ।শুধু কি তাই?গুড় গুড় শব্দে থেকে থেকে মেঘের গর্জনে চারপাশ ভারী করে তুলছে।
রায়াফের সাথে কথা বলার মাঝখানে পরিচিত কন্ঠস্বর পেয়ে শেরহাম ঘাড় ঘুরিয়ে দরজায় দৃষ্টি ফেলতেই মুখে ফিচেল হাসি ঝুলানো যুবরাজ কে দরজার চৌকাঠে দুই হাতে ভর দিয়ে সামান্য ঝুকে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখতে পেলো।
আকস্মিক যুবরাজের এমন হাসিখুশি চেহারা দেখেই শেরহামের মস্তিকের পিটুইটারি গ্রন্থিতে রক্ত ছলকে উঠেলো।তবুও সকলের সামনে নিজের হিংস্রতা প্রকাশ না করে দাঁতে দাঁত চেপে সমস্ত রাগ গিলে নিলো মুহূর্তেই।

যুবরাজকে দেখতে পেয়ে রায়াফের বুকের উপর চাপা দেয়া পাথরটা যেনো নিমিষেই সরে গেলো।কিছুক্ষন আগেও যেই শ্বাস টা থমকে গিয়েছিলো নিমিষেই সেটা সচল হলো।ঠান্ডা অবহায়াতেও তার চিবুক বেয়ে দরদর করে ঘাম গড়িয়ে পড়তে লাগলো সমানে।
রায়াফের এমন বিধস্ত অবস্থা দেখে যুবরাজ স্মিত হাসলো।এরপর নিজের পকেট থেকে একটা রুমাল বের করে রায়াফের চিবুক থেকে আলতো হাতে ট্যাপ ট্যাপ করে ঘাম গুলো মুছে বলে উঠলো

“এতো ভয় পেলে চলে শালা সাহেব?ভয় গুলো সব আমার উপর ছেড়ে দিয়ে একটু রিল্যাক্স তো থাকতে পারিস নাকি?

যুবরাজ আর রায়াফের এমন অদ্ভুত আচরণ কারোরই বোধগম্য হচ্ছে না।এখানে রাজ্য পুরোপুরি নির্বাক হয়ে মিসেস তনুজার হাত চেপে দাঁড়িয়ে রয়েছে।রেজোয়ান চৌধুরী শেরহামের আগমন সম্পর্কে অবগত কিন্তু এই অদ্ভুত ছেলের আগমনের উৎস কি?

মিসেস তনুজা বহু কষ্টে নিজের গলার আওয়াজ বের করে নিভু নিভু কন্ঠে শুধালেন

“তোমাকে তো চিনতে পারলাম না বাবা!”

মিসেস তনুজার প্রশ্নে যুবরাজ ভড়কে না গিয়ে প্যান্টের পকেটে দুই হাত গুঁজে খানিক মেপে হাসলো।এরপর তনুজার সামনে এগিয়ে এসে ভারী কন্ঠে সকলের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো

“আমি আপনাদের মেয়েকে ভালোবাসি,শুধু আমি ই নই সেও আমাকে ভালোবাসে।আর আপনাদের মেয়ের অতীত,বর্তমান,ভবিষ্যৎ সব আমি।রাজ্য আমার না হলে আর কারো হতে পারবে না।সাফ সাফ কথা বলতে আমি খুব পছন্দ করি।একপ্রকার নির্লজ্জ্ব ও ভাবতে পারেন।তাতে আমার কিচ্ছুটি যায় আসে না।কিন্তু রাজ্যই আমার বউ হবে এটাই শেষ কথা।সেই ছোট থেকে দেখে দেখে রাখছি।সার বিষ পানি দিয়ে গাছ বড় করেছি আমি আর ফল অন্য কেউ খেয়ে চলে যাবে তা কি করে হতে দেই বলুন?”

যুবরাজের এমন অবলীলায় রাজ্য সম্পর্কে বলা কথায় শেরহামের যেনো গায়ে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে উঠলো।বহু ক্ষণ ধরে নিজের নিয়ন্ত্রণ রাখা ক্রোধ লাগামহীন হলো।অধৈর্য শেরহাম শক্ত হাতের মুষ্টিতে যুবরাজের দিকে এক ঘুষি উঁচিয়ে বলে উঠলো

“এটা তোর ভাবি হবে বাস্টার্ড”

শেরহামের উন্মাদনা অবস্থায় যুবরাজ ক্রুর হেসে সাইডে সরে যেতেই সেই ঘুষি গিয়ে পাশের দেয়ালে লাগলো।ঘুষির পাউন্ড এতোই শক্তিশালী ছিলো যে ওয়াল থেকে কিছুটা চটচটে সিমেন্ট রঙ সমেত উঠে গেলো।

এটা দেখে রেজোয়ান চৌধুরী আর মিসেস তনুজা ভয়ে সামান্য কেঁপে উঠল।তারা দুজনেই রায়াফের দিকে তাকিয়ে আসল ঘটনা বুঝার চেষ্টা করলেন।রায়াফ চোখের ইশারা দিতেই রাজ্যকে নিয়ে মিসেস তনুজা এবং রেজোয়ান চৌধুরী দূতলার সিঁড়ি ধরে উপরে উঠে গেলেন।

এদিকে শক্ত দেয়ালে চোট পেয়ে শেরহামের হাত ফেটে ঝরঝর করে উষ্ণ তরল ধারা প্রবাহিত হতে লাগলো।সেটা দেখে যুবরাজ হো হো শব্দ তুলে হেসে বলে উঠলো

“তোর হবু বউয়ের সর্বাঙ্গে আমার উষ্ণ স্পর্শ জড়িয়ে আছে মামাতো ভাই!আমার এটো করা খাবার খেতে তোর রুচিতে বাধবে না?”

যুবরাজের এমন কথায় শেরহাম হিংস্র ক্ষিপ্ত বাঘের ন্যায় গর্জে উঠলো।রাগে তার হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেললো।যুবরাজকে আক্রমন করার উদ্দেশ্যে সমানে ফুঁস ফুঁস করে শ্বাস নিতে লাগলো।কিন্তু সেসবে পাত্তা না দিয়ে যুবরাজ পুনরায় বলে উঠলো

“ম্যাগান আমার কেউ ছিলো না তবুও তুই তাকে মে*রেছিস,কিন্তু রাজ্য আমার দীর্ঘ বছরের ভালোবাসা তাকে তুই ছুঁয়েও দেখতে পারিস নি।কতো বড় ব্যার্থতা এটা তোর একবার ভেবে দেখেছিস?

বলেই পুনরায় যুবরাজ প্রচন্ড খুশিতে ফেটে পড়লো।যুবরাজের এহেন দুধর্ষ সাহসিকতায় শেরহাম টেবিলের উপর থাকা ফলের ঝুড়ি থেকে একটা চাকু নিয়ে যুবরাজের দিকে তেড়ে গেলো।শেরহামের এমন বোকামি দেখে যুবরাজ মুখে ক্রুর হাসি ঝুলিয়ে শেরহাম কে পাল্টা আক্রমণ করে বসলো।শেরহাম কিছু বুঝে উঠার আগেই থাবার ন্যায় শক্ত হাত মুষ্টি পাকিয়ে একের পর এক ঘুষি বসিয়ে দিলো শেরহামের মুখ বরাবর।মুহূর্তেই শেরহামের ঠোঁট কেটে ফিনকি দিয়ে র*ক্ত ছুটে গেলো।তবুও শেরহাম দমার পাত্র নয়।সেও সুযোগ বুঝে যুবরাজকে চাকু দিয়ে গভীর এক পোচ বসিয়ে দিলো।এতে যুবরাজের রাগ সপ্তম আকাশে ছুলো।
কায়দা করে শেরহামের সামনের চুল গুলো মুঠ পাকিয়ে ধরে গম্ভীর ভারী কন্ঠে হিসহিসিয়ে বলে উঠলো

“তোকে আমি এক মুহূর্তের জন্য শান্তিতে থাকতে দেবো না মামাতো ভাই।তোকে টর্চার করে তোর বাপ কে এখানে আনবো আমি।তোর সাথে আমার খেলা পরে হবে।আগে তোর বাপের কোরবানিটা করে নেই।তুই কি ভেবেছিস আমার হেল থেকে পালিয়ে আমাকে ডজ দিয়েছিস?আরে পাগল মামাতো ভাই আমি ই নিজেই তোকে পালানোর সুযোগ দিয়েছি।যেদিন আমি সদিচ্ছায় তোকে বন্দি করবো সেদিন আর নিস্তার পাবিনা।

কথা গুলো বলেই শেরহামের মাথা থেকে এক মুঠ চুল তুলে এনে ফু দিয়ে হাওয়ায় উড়িয়ে দিলো যুবরাজ।
যুবরাজের থেকে এমন নাস্তানাবুদ হয়ে সমানে নিজের মাথায় নিজেই আঘাত করতে লাগলো শেরহাম। এরপর পাগলের মতো বলতে লাগলো―

“আমি তোকে ছাড়বো না যুবরাজ,আমি কক্ষনো তোকে ছাড়বো না।রাজ্য আমার হবে।তোর থেকে রাজ্য কে ছিনিয়ে নিয়ে আমি তোকে আবারো নারকীয় কষ্ট দেবো।আমাকে চিনতে তুই বড্ড ভুল করেছিস।তুই আবারো সারা জীবন পস্তাবি।তোর ক্যারিয়ার এর মতো তোর লাইফ ও আমি একদম ফিনিসড করে দেবো দেখিস।

শেরহাম কে কথা গুলো শেষ করতে না দিয়েই পুনরায় নিজের থাবা যুক্ত হাত দিয়ে সজোড়ে শেরহামের গলা চেপে ধরলো যুবরাজ।এরই মাঝে দ্রুত পদে সিঁড়ি বেয়ে নীচে নেমে এলো রাজ্য।শেরহাম আর যুবরাজের এমন ধস্তাধস্তি দেখে তার চোখ কপালে উঠে গেলো।
পুরো ড্রয়িং রুমের এলোমেলো অবস্থা সেই সাথে সাথে মেঝে জুড়ে রক্তিম পদার্থের হুটোপুটি।
রাজ্যকে দেখতে পেয়ে শেরহাম নিজেকে যুবরাজের হাত থেকে ছড়ানোর বেশ চেষ্টা চালালো।কিন্তু অসুর সম যুবরাজের সাথে না পেরে বহু কষ্টে ভাঙা ভাঙা কন্ঠে বলে উঠলো

“প্লিজ সেভ মি,হি ইজ এ কিলার!আই হ্যাভ প্রুফ”

যুবরাজের এমন ক্রোধিত চেহারা রাজ্য এর আগে কখনো দেখেনি।যুবরাজকে আজকে পুরোটাই অন্য ধাঁচের মানুষ মনে হচ্ছে রাজ্যের কাছে।রাজ্য যুবরাজের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবতে লাগলো

“এ কোন যুবরাজকে দেখছি আমি?আমি কি এই যুবরাজকে ই ভালোবেসে ছিলাম?এতোটা হিংস্র কবে কবে হয়েছে সে?

শেরহামের দম যখন প্রায় নিভু নিভু তখন রায়াফ এগিয়ে এসে যুবরাজের হাত খামচে ধরে বলে উঠলো

“ম*রে যাবে প্লিজ ছেড়ে দে।”

যুবরাজ রায়াফের হাত ঝটকা দিয়ে সরিয়ে গর্জে উঠলো
“তোকে ছেড়ে ছিলো?

শেরহামের জিভ যখন অনেক খানি বেরিয়ে এলো তখনই শেরহামের গলা ছেড়ে দিয়ে মেঝেতে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো যুবরাজ।ধাক্কার টাল সামলাতে না পেরে হাটু মুড়ে ফ্লোরে বসে গেলো শেরহাম সেই সাথে অনবরত জোরে জোরে কাশতে লাগলো।সেই অবস্থাতেই যুবরাজ শেরহামের সামনে হাটু গেড়ে বসে রায়াফের দিকে আঙ্গুল তাক করে শুধালো

“ও কে জানিস?

শেরহাম কাশির চোটে কথাই বলতে পারছে না।শেরহাম কথা না বলাতে যুবরাজের রাগ আরো বেড়ে গেলো। পুনরায় গর্জে উঠে একই প্রশ্ন করতেই রায়াফ রাজ্য দুজনেই কেঁপে উঠলো।
যুবরাজের প্রশ্নের উত্তরে শেরহাম কিঞ্চিৎ মাথা নাড়িয়ে বুঝালো রায়াফ কে তা সে জানেনা।

যুবরাজ শেরহামের হাত মোচড়ে ধরে বলে উঠলো
“ডক্টর রেহান চৌধুরী যাকে তুই প্রাণে বাঁচিয়ে রেখে চরম বোকামি করেছিস”!

যুবরাজের মুখে রেহানের নাম শুনে বিস্ফারিত নেত্রে রায়াফের দিকে তাকালো শেরহাম।লম্বা চওড়া সুদর্শন রায়াফের দিকে অবিশ্বাস্য নজরে কিছুক্ষন তাকিয়ে বলে উঠলো

“তোদের দুজনকে আমি আবার শেষ করবো যুবরাজ শাহীর,এবার আর বাঁচতে পারবি না”

সাথে সাথেই যুবরাজ শেরহামের কলার চেপে ধরে দাঁড় করিয়ে টেনে হিচড়ে বাড়ির বাইরে বের করে এনে শক্ত গলায় বলে উঠলো

“আর কিচ্ছুটি করতে পারবি না তুই ।আর আমি যে তোকে এভাবে মেরেছি এটা তোর বুড়ো শয়তান বাপ কে বলে দিস।এটাও বলবি ওই বুড়োর শীতল র*ক্ত খাওয়ার জন্য আমি অনেক পিপাশিত।”

দুজন সম বয়সী যুবকের পাল্টাপাল্টি আক্রমণে কখন মেঘ ফুঁড়ে বৃষ্টি পতিত হয়েছে ধরনীতে এটার খবর কেউ রাখেনি।বাহিরে ভারী বর্ষণ ঝড়ে যাচ্ছে বিরামহীন ভাবে।সেই সাথে বিকট বজ্রপাত।এমন অবস্থায় শেরহাম কে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বৃষ্টিতে নামিয়ে দিলো যুবরাজ।শেরহাম যখন বৃষ্টিতে ভিজে যুবরাজের দিকে আঙ্গুল উঁচিয়ে কিছু বলতে যাচ্ছিলো সেই সময় রায়াফ এসে যুবরাজকে ভেতরে টেনে নিয়ে ধাম করে দরজা লাগিয়ে দিলো।

********
রেজোয়ান চৌধুরীর ড্রয়িংরুমে শান্ত হয়ে বাড়ির প্রত্যেক সদস্য সমেত যুবরাজ পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে।
রায়াফ তার মেডিকেল কলেজ থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনা একে একে সবিস্তারে সকলকে খুলে বলে দম ফেললো।
চিন্তিত বিরস মুখে রেজোয়ান চৌধুরী নানান ভাবনা ভেবে চলেছেন আর মিসেস তনুজা আঁচলে মুখ গুজে কেঁদে চলেছেন।রাজ্য কাকে কিভাবে শান্তনা দেবে সেটাই যেনো ভেবে পেলো না।সকলেই যখন নীরবতা পালনে ব্যাস্ত ঠিক সেই সময় সমস্ত নীরবতা ভঙ্গ করলো যুবরাজ।

“আপনাদের কারো কোনো অমত না থাকলে আমি আজই রাজ্যকে বিয়ে করতে চাই,শেরহাম কে একদম ভরসা নেই।নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য পৃথিবীর যেকোনো নিকৃষ্ট কাজ করতে সে এক সেকেন্ডের জন্যও দ্বিধানিত হবে না”

রেজোয়ান চৌধুরী সমানে কপালে স্লাইড করে আসন্ন পরিস্থিতি ভাবতে লাগলেন।মিসেস তনুজা নিরুপায় হয়ে সোফায় হেলান দিয়ে দুই চোখ বন্ধ করে বসে রইলেন।রাজ্য কিছু বলবে কি বলবে না সেই ভাবনায় মত্ত হলো।

“বাবা যুবরাজ খুব ভালো ছেলে,আর মানুষ হিসেবেও অমায়িক।আজ এই যুবরাজের জন্যই তোমরা তোমাদের ছেলেকে নতুন করে ফিরে পেয়েছো।রাজ্যের খেয়াল যুবরাজ খুব ভালো ভাবে রাখতে পারবে।আমরা একটা ট্র্যাপে পরে গেছি বাবা।শেরহাম হিংস্র থাবা মেলার আগেই আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে।

কথা গুলো বলে রেহান রেজোয়ান চৌধুরীর দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো।কীয়তখন বাদে মিসেস তনুজা ধীর কন্ঠে বলে উঠলো

“রেহানের বাবা কিসের এতো ভাবনায় মগ্ন হয়েছো তুমি?ওই ছেলেকে প্রথম থেকেই আমাদের ভালো লাগেনি।ওর চোখের দৃষ্টি কতো অদ্ভুদ।এই ছেলের থেকে রাজ্যকে যত দূরে রাখা যায় ততই মঙ্গল।আর যুবরাজকে আমার বেশ পছন্দ হয়েছে।আমরা সবাই রাজি।

স্ত্রীর কথা শুনে হুঁশে ফিরলেন রেজোয়ান চৌধুরী।যুবরাজের দিকে দৃষ্টি মেলে চিন্তিত কন্ঠে বলে উঠল

,”আজ রাতেই বিয়ে,তোমার বাবা মায়ের সাথে আমাদের যোগাযোগ করবার ব্যাবস্থা করো”

#চলবে

#ওয়েলকাম_টু_মাই_ডার্কসাইড
#পর্ব_৩৫
#সারিকা_হোসাইন

**********
মেঘমেদুর দিন সাথে শিরশিরে সমীরণ সমকিছু মিলিয়ে এক রোমাঞ্চকর পরিবেশ।আকাশে বিরাজমান হালকা কালচে রঙা মেঘ সকাল বেলায়ই সূর্যকে লুকিয়ে ফেলেছে এখনো বের হতে দেয়নি।তাই ঘড়ি দেখা ব্যাতিত সঠিক সময় অনুমান করা বেশ কষ্টকর।অল্প সময় বাদে বাদেই ঝিরঝিরে বৃষ্টি ঝরে পড়ার পরেই আবার সামান্য আলোর ঝলক দৃষ্টি গত হচ্ছে।

রেজোয়ান চৌধুরীর বিশাল ড্রয়িং রুমে বিরস মুখে মাথা নিচু করে বসে আছেন সাদাফ শাহীর।মুখে তার কোনো কথা নেই শুধু ভেবে চলেছেন আসন্ন বিপদ নিয়ে।এদিকে সামিনা উৎসুক হয়ে বারবার ফিসফিস করে মিসেস তনুজার সাথে এটা সেটা নিয়ে কথা বলছেন।নিস্তব্ধ পরিবেশে তাদের ফিসফিসানি কথাবার্তা যেনো বিশাল কোলাহল ঠেকছে দুই ভদ্রলোকের কাছে।।
কিন্তু রেহান আর যুবরাজ দুজনেই নির্বিকার।তারা তাদের ধ্যানে ব্যাস্ত।এখানে কি হচ্ছে না হচ্ছে সেটা নিয়ে তাদের মধ্যে বিন্দুমাত্র আগ্রহ দেখা গেলো না।কিন্তু এক কোনে বসে বসে রাজ্য সমানে ঘেমে অস্থির হয়ে যাচ্ছে।

তার কাছে সাদাফ শাহিরকে সুবিধার মনে হচ্ছে না।টিভিতে বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে তাকে দেখা গিয়েছে খুব রিজার্ভ ভাবে থাকতে।যুবরাজের থেকেও জেনেছে ভদ্রলোক খুবই রাগী।

“এখন যদি উনি বিয়েতে অমত করেন তখন কি হবে?আমাকে কি শেরহামের গলায় ঝুলে পড়তে হবে?ওহ নো!আ উইল ডাই।

এক নাগাড়ে বৃদ্ধাঙ্গুলি কামড়ে নানান ভাবনা ভেবে চলেছে রাজ্য।এদিকে যুবরাজের কোনো হেলদোল না দেখে রাজ্যের মাথায় দপ দপ করে আগুন জ্বলে উঠলো।

“দেখো কেমন ফাজিলের মতো বসে বসে দাঁত কেলাচ্ছে।মনে হচ্ছে সব চিন্তা আমার,তার কোনো ভাবান্তরই নেই।ব্যাটা বজ্জাত !দেবো নাকি বুক বরাবর একটা শুট করে?

আবার পরক্ষণেই মাথা নাড়িয়ে মনে মনে বলে উঠল
“আস্তাগফিরুল্লাহ, ছি ছি কি ভাবছি আমি এসব?এমন পরিস্থিতি কখনো না হোক আমাদের।আমার বন্দুক কখনো যেনো যুবরাজের দিকে না উঠে”

অবশেষে সাদাফ শাহীর মুখ খুললেন,খুব মেপে মেপে সমান্য কিছু কথাই তিনি বললেন ।আর সেই কথাগুলো শুনে সকলেই নড়েচড়ে উঠলেন।

‘”আমার ছেলের বিয়ে নিয়ে আমার সেরকম কিছু বলার নেই চৌধুরী সাহেব।ওর মায়ের মৃত্যুর পর আমি সেভাবে ওকে কিছুই দিতে পারিনি।আর যুবরাজ কখনো কিছুর জন্য জেদ ও করেনি।কিন্তু আপনার মেয়েকে বিয়ে করবে বলে গতকাল সন্ধ্যায় ছোট বাচ্চাদের মতো খুব জেদ করেছে আমার ছেলেটা ।ছেলে আমার কাছে একটা জিনিস চেয়েছে আর আমি দেবো না এটা কিছুতেই হতে পারেনা।কিন্তু একমাত্র ছেলে হিসেবে ওর বিয়ে নিয়ে আমার অনেক ফ্যান্টাসি ছিলো।হয়তো এই টুকু বেলার মধ্যে সেসব আমি কমপ্লিট করতে পারবো না।কিন্তু কিছু অপূর্ন ও রাখবো না মিস্টার চৌধুরী।

রেজোয়ান চৌধুরী সামান্য গলা খাকরি দিয়ে আহত স্বরে বলে উঠলেন
“কি বা করার আছে বলুন? খাল কেটে কুমির এনেছি,এখন সেই কুমির আমাদের সবাইকে ভক্ষণ করতে চাচ্ছে।যদি ঘূর্ণাক্ষরেও টের পেতাম এরা বাপ ছেলে এমন ধুরন্দর তাহলে এভাবে বাপ হিসেবে নিজের মেয়েকে জলাঞ্জলি দিতাম না।ছেলেটা একদম হাত ধুয়ে মেয়েটার পিছনে লেগেছে।সকাল বিকাল বাড়িতে এসে বিয়ের জন্য তাগাদা দিয়ে চলেছে।

সাদাফ শাহীর পুরো ঘটনাই জানেন তাই বেশি কিছু না ঘাটিয়ে ধীর কন্ঠে বললেন
“ওরা দুজন মিলে আমার ছেলেটার লাইফ টাই হেল করে দিয়েছে।মামা হয়ে ভাগ্নের পিছনে এভাবে লেগে থাকবে সেটাই তো আমার কল্পনার বাহিরে।আপনি কোন চিন্তা করবেন না।শেরহাম যাতে আপনাদের কোনো ক্ষতি করতে না পারে সেই ব্যাবস্থা আমার ছেলে অবশ্যই করবে।শুধু একটু সময় দিয়ে ভরসা আর বিশ্বাস রাখুন যুবরাজের উপর।”

রেজোয়ান চৌধুরী আর সাদাফ শাহীরের আলোচনার মাঝে হঠাৎই সামিনা তাগাদা দিয়ে বলে উঠলেন
“ভাইজান দুপুর গড়াতে চললো বিয়ের কেনাকাটা ,এরেঞ্জমেন্ট সব বাকি পরে আছে।কখন কি হবে?

সাদাফ শাহীর সামান্য হেসে বলে উঠলেন
“তোর ছেলে সকল প্রস্তুতি নিয়ে তবেই মাঠে নেমেছে।তোর কিছুই ভাবতে হবে না।সময় মতো সবকিছুরই ব্যাবস্থা হয়ে যাবে দেখবি!

সাদাফ শাহীরের এমন অদ্ভুত কথা শুনে অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যুবরাজের দিকে বিস্ফারিত নেত্রে তাকালো রাজ্য।মুহূর্তেই চোখাচোখি হলো দুজনের।সুযোগ বুঝে যুবরাজ বাঁকা হেসে চোখ টিপে জানান দিলো
“আজ তোমার খবর আছে!

যুবরাজের এমন আচরণে লজ্জার শিহরণ বয়ে গেল রাজ্যের সর্বাঙ্গে।রক্তিম আভায় ছেয়ে গেলো পুরো গাল আর নাকের ডগা।না চাইতেও বারবার ঠোঁটের কোণে হাসির ঝিলিক চলে আসছে।তাই নিজেকে এমন পরিস্থিতি থেকে বাঁচাতে চুপিচুপি নিজের কক্ষে এসে দরজা লাগিয়ে দুই হাতের আজলায় মুখ লুকিয়ে বিছানায় সটান হয়ে শুয়ে পড়লো রাজ্য।

***********
নিজের অন্ধকার ঘুটঘুটে কক্ষে পাগলের মতো সমান তালে পায়চারি করে চলেছে শেরহাম আর থেকে থেকে ওয়ালের সাথে নিজের মাথা নিজেই বাড়ি মারছে।কানের কাছে বারবার যুবরাজের বলা কথা গুলো কে যেন চিৎকার করে বলে যাচ্ছে সমানে

‘তুই কাপুরুষ, তুই ব্যার্থ শেরহাম ফাইয়াজ।তুই রাজ্যকে ছুঁয়েও দেখতে পারলি না আর যুবরাজ মেয়েটাকে আজ রাতে পুরো দমে ভোগ দখল দেবে।ইউ আর এ লুজার শেরহাম ফাইয়াজ ইউ আর এ লুজার।

দুই হাতে কান চেপে ধরে সজোড়ে গর্জে উঠছে শেরহাম।তবুও কানের কাছে থেকে কথা গুলো সড়ছে না।উপায়ন্তর না পেয়ে দেয়ালে মাথা দিয়ে জোরে জোরে আঘাত করতে করতে এক পর্যায়ে নিজের মাথাই ফাটিয়ে ফেললো সে।কপাল গড়িয়ে নাকের ডগা বেয়ে ঠোঁটের কাছে এসে বিলীন হলো সেই রঞ্জন তরল।সেসবে শেরহামের ভ্রূক্ষেপ নেই।সে শুধু যুবরাজকে কিভাবে শেষ করবে সেই ভাবনা ভাবতে লাগলো।

একপর্যায়ে নিজের ফোন বের করে সুবহান শেখের নম্বরে ডায়াল করে ফোন কানে তুললো শেরহাম।বার কয়েক রিং হয়ে ফোন কেটে গেলো।রাগে শেরহাম তার বোধ শক্তি হারালো।সে একের পর এক কল করতেই থাকলো।অবশেষে ওপাশ থেকে সুমিস্ট স্বরে উত্তর এলো

“সুইচড অফ”

সবকিছু যখন সহ্যের বাহিরে চলে গেলো ঠিক সেই মুহূর্তে সুবহান শেখ কে অকথ্য গালিগালাজ করে শেরহাম চলে গেলো ড্রিংক্স কর্নারে।ড্রিংক্স কর্নার থেকে কোকেইন পাউডার ,কটন ফিল্টার সিরিঞ্জ আর মিনারেল ওয়াটার এর বোতল নিয়ে চেয়ার টেবিল নিয়ে বসে গেলো সে।এরপর নিজের শরীরে ড্রাগস ইনজেক্ট করে উদ্ভ্রান্তের ন্যায় উঠে দাঁড়ালো এবং এলোমেলো পায়ে বিছানায় শুয়ে গেলো। কিছুক্ষনের মধ্যেই শেরহাম তার পরিচিত জগতে চলে গেলো এবং অস্ফুট স্বরে কি যেনো বির বির করতে করতে মুহূর্তেই তলিয়ে গেলো গভীর ঘুমে।

*********
রেজোয়ান চৌধুরীর বাড়িতে ঘরোয়া ভাবে বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।সেরকম কোনো নিকট আত্মীয় না থাকায় রাজ্যের কিছু বন্ধু আর কলিগ কে নিমন্ত্রণ করা হয়েছে শুধু।বরযাত্রী হিসেবে আছেন সাদাফ শাহীরের অফিসের সেক্রেটারি আর কয়েকজন ব্যাবসায়িক বন্ধু।
দুপুরের পর থেকে রেহান খুবই ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে,এক মাত্র বোনের বিয়ে বলে কথা।রাজ্যের মেসেজ পেয়ে এনি দুপুরের পর পরই এসে পড়েছে।কিন্তু এই সাড়ে পাঁচ ঘন্টায় এক মুহূর্তের জন্যও রেহানের দেখা পায়নি সে।এতে অবশ্য মন আকাশে বিষাদের মেঘেরা উড়াউড়ি করেছে।কিন্তু এনি তা কাউকে বুঝতে দেয়নি।

পার্লার থেকে কয়েকজন মেয়ে এসে রাজ্যকে সাজাতে বসে গেলো।এনি এসেই রাজ্যের দুই হাত ভরে মেহেন্দির নিখুঁত ডিজাইনে আল্পনা একে দিয়েছে।সুন্দর করে অভিনব কায়দায় দুই হাতের তালুতে যুবরাজের নাম খানা লিখতে মোটেও ভুল করেনি সে।নাম লিখা নিয়েও বন্ধু মহলের কতো হাসি তামাশা।বহুত দিন বাদে বেনজির আশফী কেও আজকে অনেক খুশি লাগছে।নিজের হাতে দায়িত্ব নিয়ে সব কিছুর খেয়াল রাখছেন তিনি।আজকে মোটেও তাকে কোনো খবিস রাগী বজ্জাত অফিসার মনে হচ্ছে না।মনে হচ্ছে সে রাজ্যের খুব কাছের কেউ।বেনজির আশফির হাসিখুশি ক্লান্ত মুখের দিকে তাকিয়ে রাজ্যের বুক ভেঙে কান্না এলো।সহসাই তার মনে হলো
“দায়িত্ব বড় অদ্ভুত জিনিস।নিখুঁত ভাবে এমন দায়িত্ব পালন করতে কজন পারে?আমি আপনার রেগে যাবার কারন আজ বুঝতে পেরেছি স্যার।ভবিষ্যতে আমি আর কোনো কাজে হেয়ালিপনা করবো না প্রমিস”

হঠাৎই হন্তদন্ত করে রেহান দৌড়ে এসে খবর জানালো বর আসছে।
এই খবর পুরো বাড়ি ছড়িয়ে যেতেই রাজ্যের কানেও চলে এলো এনি মারফত।
পার্লারের মেয়েটা তখন ব্লাশন এর লাস্ট টাচ আপ করবে।বর আসার খবর শুনে ভয়ে রাজ্যের মুখ পাংশু ফ্যাকাশে হয়ে গেলো।হঠাৎ অজানা আতঙ্কে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে দুই চোখ ছলছল করে উঠলো।
রাজ্যের মনের ভয় এনি বুঝতে পারলো।সে রাজ্যকে বুকে জড়িয়ে হাতের ইশারায় পার্লারের মেয়ে গুলোকে রুমের বাইরে চলে যেতে নির্দেশ দিল।
এনির নির্দেশ পেতেই মেয়ে গুলো তাদের ব্যাগপত্র নিয়ে রুমে বাইরে বেরিয়ে যেতেই দরজা লক করে দিলো এনি।

“ভয়ের কিছুই নেই,যুবরাজ বাড়ির বাইরে তার নিজস্ব লোক সেটিং দিয়ে রেখেছে।আর আমরা তো আছিই।তোর কি মনে হয় আমরা শুধু বিয়ে খেতে এসেছি?আজ তোদের পুরো পরিবারের সেফটির দায়িত্ব আমাদের।তুই ভয় না পেয়ে জাস্ট চিল কর।নিজের জীবন দিয়ে হলেও তোর ভাইকে আমি প্রটেক্ট করবো প্রমিস”

কথা গুলো শক্ত কন্ঠে বলে রাজ্যকে জড়িয়ে ধরে পিঠে হাত বুলিয়ে রিল্যাক্স করার চেষ্টা চালালো এনি।এনির দেয়া সাহসে রাজ্য কিছুটা স্বস্তি পেলো।তবুও ভয় পুরোপুরি কাটলো না তার।

“শেরহাম কে একদম বিশ্বাস নেই।দাদাভাই কে পেলে এবার সে আর ছাড়বে না।আমরা দাদাভাই কে এবার হারালে আর বাঁচবো না রে এনি।”

এনি রাজ্যের মাথায় হাত বুলিয়ে নম্র কন্ঠে বলে উঠলো
“কিচ্ছু হবে না তার।তুই আমার উপর ভরসা রাখ”

“তুই কি দাদাভাই কে ভালোবাসিস?
রাজ্যের এহেন আকস্মিক প্রশ্নে ভড়কে গেলো এনি।নিজের থেকে রাজ্যকে ছাড়িয়ে এদিক সেদিক মুখ ঘুরিয়ে খুক খুক করে কাশতে লাগলো শুধু।

“আমি জানি তুই দাদাভাই কে ভালোবাসিস,আমার চোখে ফাঁকি দিতে তুই অক্ষম হয়েছিস এনি রহমান”

রাজ্যের এমন জিজ্ঞাসাবাদে লজ্জায় রাঁঙ্গা হলো এনির শ্যাম বর্ণের পাতলা গাল।রাজ্যের প্রশ্নের উত্তর কি দেবে সেটাই মস্তিস্ক হাতড়ে খুঁজতে লাগলো।অবশেষে সন্তোষজনক কোনো উত্তর না পেয়ে অযথাই এটা সেটা ধরে নাড়াচাড়া করতে লাগলো!

“আমার দাদা ভাইকে বিয়ে করবি!

জানিনা”

“আলবাত জানিস,বল বিয়ে করবি?

“যদি বলি হ্যা করবো তাহলে কি করবি”?

“কি করবো আবার বিয়ে দেবো”

“আচ্ছা তাহলে তোর দাদা ভাইকে আমাকে দিয়ে দে আমি তার সারাজীবনের খেয়াল রাখবো।কখনো কষ্ট পেতে দেবনা।ছোট বাচ্চার মতো বুকে ভেতর আগলে রাখবো।”

দরজার এপাশ থেকে কেউ একজন সব গুলো কথা শুনে লজ্জায় মুচকি হেসে মাথা চুলকে নিজের কক্ষে চলে গেলো।

*********
বরপক্ষ এসেছে আরো আধ ঘন্টা আগে।কাজী তার পেপার্স গুলো রেডি করে যুবরাজের কাছে পাঠিয়ে দিলেন।কোনো প্রকার বাছবিচার ছাড়াই ঘসঘস করে সিগনেচার দিয়ে সেই কাগজ কাজীর পিএর কাছে দিয়ে যুবরাজ বলে উঠলো

“তাড়াতাড়ি আমার বউয়ের সিগনেচার এর ব্যাবস্থা করুন।আবহাওয়ার অবস্থা বেশি ভালোনা।আমি বউ নিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে যাবো।বহুদিন পর বিয়ে করতে আসছি।মনের অবস্থা বুঝেন না?

কাজীর পি এ মনে মনে বলে উঠলো
“আচ্ছা নির্লজ্জ্ব তো এই লোক,এভাবে এতো গুলো মানুষের সামনে এভাবে কেউ কথা বলে?

“নির্লজ্জ্ব ই আমি।নিজের বউ নিয়ে টানাটানি কোন সাধু পুরুষ সহ্য করবে বলুন দেখি?

যুবরাজের এমন কথায় থতমত খেলো কাজীর পিএ।যুবরাজের দিকে সন্দিহান দৃষ্টি মেলে দৌড়ে কাজীর কাছে চলে এলো।
এসে কাজীর কানে কানে ফিসফিস করে বলে উঠলো
“আমার মনে হয় মেয়েটির বাবা মা মেয়েটিকে জোর করে কোনো পাগল ছাগলের হাতে তুলে দিচ্ছে”

পান চিবুতে চিবুতে পানের পিক বাইরে ফেলে আঙুলের ডগা থেকে খ্যানিক চুন জিহবার আগায় নিয়ে চশমার উপর দিয়ে পি এর দিকে তাকিয়ে ভারিক্কি ঝনঝন গলায় কাজী ধমকে উঠলেন

“যাকে পাগল বলছো জানো সে কে?

কাজীর পিএ চমকে উঠে মিনমিন করে বলে উঠলো
“কে স্যার?

“আমি নিজেও জানিনা”

বলেই কাজী তার কাজে মনোযোগ দিলেন ।এদিকে কাজীর উত্তর শুনে রেগে আগুন লাল হয়ে কোমরে দুই হাত রেখে কাজীর দিকে ক্রুর দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে রইলো তার পিএ ।

******
কাবিনের পেপারে রাজ্য সিগনেচার দিয়েছে আরো অনেক আগেই।এখন শুধু বিয়ে পড়ানো বাকি।মিসেস তনুজা তজবিহ হাতে ফ্যাকাশে মুখে সমানে আল্লাহকে ডেকে চলেছেন।

“হে মাবুদ আমার ছেলে মেয়েকে ভালো রাখো।কোনো বিপদ তুমি আমার সন্তানদের উপর দিও না।বাবা মা হয়ে সন্তানের এমন দুর্ভোগ সহ্য করার ক্ষমতা যে নেই গো মাবুদ”..

তনুজার হুশ ফিরলো সকলের হইহুল্লোড় এ।রাজ্যের বন্ধুরা নাচ গান করতে করতে একটা টকটকে লাল রঙা সামিয়ানার নিচে খুব যত্নের সাহায্যে রাজ্যকে নিয়ে নীচে নেমে আসছে।মুহূর্তেই বউ এসেছে বউ এসেছে বলে পুরো ড্রয়িংরুম অস্থির হয়ে উঠলো।

বউ এসেছে শুনে যুবরাজের টনক নড়লো।
ঘাড় ঘুরিয়ে এক পলকের জন্য রাজ্যকে দেখে সে হার্টবিট মিস করে বুক চেপে ধরে ঠাঁয় বসে রইলো।আর মুখ ফুটে সজোড়ে বেরিয়ে এলো

“মাশাআল্লাহ, সুবহানাল্লাহ””

রাজ্য তার গায়ে অফ হুয়াইট রঙের জামদানি জড়িয়েছে যার জমিন পাড় আর আঁচল জুড়ে সোনালী জরি সুতার কাজ।সারা শরীরে শোভা পেয়েছে ভারী ভারী স্বর্ণালঙ্কার।মুখে হালকা প্রসাধনীর ছোয়া,চোখে ডার্ক আইশ্যাডো ঠোঁটে ন্যুড কালার লিপস্টিক আর হালকা ব্লাশনের টাচ।যুবরাজের কাছে রাজ্যকে সাধারণ কোনো মানবী ঠেকছে না ।

“আরে আমার বউ তো পুরা রূপকথার শেহজাদীর মতো সুন্দরী।ইয়া মাবুদ এতো সুন্দর বউ আমার কপালে কেমনে রাখলে তুমি?

খুশিতে দেয়ালে মাথা বাড়ি মারতে ইচ্ছে করছে যুবরাজের।নিজের উচ্ছাস ধরে রাখতে না পেরে খুশি খুশি মুখ নিয়ে সাদাফ শাহীরের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো
“পাপা আমার হুরমতি বউ,কতো সুন্দর দেখেছো?
সাদাফ শাহীর ছেলের এমন বোকা বোকা কথায় আবেগে আপ্লুত হয়ে গোপনে চোখের জল মুছলেন।কতদিন বাদে তিনি তার একমাত্র ছেলেকে এতোটা খুশি দেখেছেন মনেই করতে পারলেন না।

রাজ্যকে নীচে আনা হলে ফুলের তৈরি ছাদনা তলায় বসানো হলো তাকে এরপর মাঝখানে দেয়া হলো ধবধবে সাদা রঙের পাতলা পর্দার বেড়া।সেই বেড়ার ওপর পাশে বসানো হলো যুবরাজকে।
সকলের মধ্যে উপচে উঠা উচ্ছাস।কাজিকে সাদাফ শাহীর দ্রুত বিয়ে পড়ানোর হুকুম দিলেন।শুরু হলো বিয়ের কাজ।

রাজ্যকে কবুল বলতে বললে মেয়েটি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।সেই কান্নার শব্দে রেহান,তনুজার হৃদয় মুষড়ে উঠলো।কঠিন হৃদয়ের মানুষ রেজোয়ান চৌধুরী ও আজকে নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না।মেয়েকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন।সকলের কান্নায় যুবরাজের চোখ থেকেও এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো।
রেহান রাজ্যকে বুকে জড়িয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে আহত স্বরে কবুল বলতে আদেশ দিলো।সেই আদেশ মান্য করে রাজ্য নিভু কন্ঠে বলে উঠলো
“কবুল”

সকলে সজোড়ে আলহামদুলিল্লাহ বলে যুবরাজের মতামত জানতে চাইলে সর্বাধিক খুশি যুবরাজ প্রশস্ত হাসিতে সজোড়ে বলে উঠলো
“আলহামদুলিল্লাহ কবুল”

#চলবে

#ওয়েলকাম_টু_মাই_ডার্কসাইড
#পর্ব_৩৬
#সারিকা_হোসাইন

***********
অঝোর ধারায় ঝরঝর করে এক নাগাড়ে ঝরে যাচ্ছে ভারী বর্ষনের ধারা।বর্ষনের রাত টুকুকে আরো গভীর রূপ দিতে পাল্লা দিয়ে ক্রমাগত গুড় গুড় শব্দে বিদ্যুৎ চমকে যাচ্ছে।নিস্তব্ধ এই রাতে কোনো মানুষের সাড়া শব্দ পাওয়া তো দূর একটা পশুপাখির ও নিঃশ্বাসের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না।

শহর থেকে খানিক দূরে গহীন বনের কাছটায় দূতলা বিশিষ্ট একটি ধবধবে সাদা বাংলো।চারপাশে হরেক পদের গাছের সমাহার সেই সাথে নয়নাভিরাম ফুলের মেলা।দূর থেকে দৃষ্টি দিলে দূতলার দক্ষিণের কামড়াটায় টিম টিমে হলুদ আলোর অস্পষ্ট ঝলকানি দেখা যাচ্ছে।
সেই কক্ষে বধূ বেশে আধ হাত ঘোমটা টেনে হাটু ভাঁজ করে তার উপর হাতের ভর দিয়ে থুতনি পেতে আখি পল্লব মুদে বৃষ্টির সুর মূর্ছনা উপভোগ করছে রাজ্য।অপেক্ষা বিশেষ পুরুষের জন্য।এই পুরুষ যেই সেই পুরুষ নয়।একদম দলিল করে পাওয়া প্রেমিক পুরুষ।
হঠাৎই যুবরাজের বাঁকা হাসি যুক্ত চেহারা চোখের সামনে ভেসে উঠতেই অজানা ভয় আর লজ্জায় আড়ষ্ট হলো রাজ্য।সারা শরীর থর থর করে কেঁপে উষ্ণ শরীর শীতল হয়ে উঠলো নিমিষেই।
খানিক ঘোমটা তুলে কক্ষের চারপাশে চোখ বুলালো রাজ্য।কক্ষটিতে কোনো কৃত্রিম ফকফকে বৈদ্যুতিক বাতির রোশনাই পরিলক্ষিত হলো না।পুরো কক্ষ জুড়ে বাহারি রঙের মোমবাতি শোভা পেয়েছে।কারুকার্য খচিত নান্দনিক বাতিদানেও শোভা পেয়েছে সাদা রঙের এক ঝাঁক মোম বাতি।সেই মোম বাতি গুলো পুরো কক্ষ জুড়ে মোলায়েম উষ্ণ আলো বিলিয়ে গলে যাচ্ছে সেই সাথে বিলিয়ে দিচ্ছে মাদকতা মিশ্রিত সুবাস।

কিন্তু এতো কিছুর মধ্যেও যুবরাজের অপেক্ষা রাজ্যকে অধীর করে তুললো।সেইযে এই কক্ষে রাজ্যকে বসিয়ে দিয়ে চলে গেলো এখনো ফিরলো না!

রাজ্যকে বিয়ের পর যুবরাজ তার নিজের বাড়িতে নিয়ে যায়নি।বাড়ির প্রত্যেক সদস্যের থেকে বিদায় নেবার পর যুবরাজ নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করে রাজ্যকে এখানে নিয়ে এসেছে।কিন্তু জায়গাটা কোথায় রাজ্য জানেনা।হঠাৎই যাত্রাপথে নিজেদের কথোপকথন মস্তিষ্কে হানা দিলো রাজ্যের।

“আজ থেকে তুমি যুবরাজ শাহীরের একান্ত ব্যাক্তিগত সম্পত্তি।তোমাকে পাবার বাসনা তো দূর তোমার দিকে যে চোখ তুলে তাকাবে তার চোখ ই উপড়ে নেবো আমি”

শক্ত কন্ঠে কথা গুলো বলে এক হাত স্টিয়ারিং এ রেখে অপর হাত দিয়ে রাজ্যের নরম তুলতুলে হাত চেপে ধরলো যুবরাজ।এরপর সেই হাতের করপুটে নিজের উষ্ণ চুম্বন বিনিময় করে বুকে চেপে ধরে গভীর শ্বাস নিলো।

সেই মুহূর্ত মনে পড়তেই বুকের ধুকপুকুনি বেড়ে গেলো রাজ্যের।কিন্তু পরক্ষণেই যুবরাজের অদ্ভুত এক কান্ড মনে পড়তেই বিস্ময়ে হতবাক হলো।

শার্টের বুক পকেট থেকে একটা কালো কাপড় বের করে রাজ্যের দুই চোখ বেঁধে দিয়ে যুবরাজ বলে উঠলো

“ওয়েলকাম টু মাই কিংডম”

যুবরাজের কথার আগামাথা কিছুই না বুঝে চুপচাপ গাড়িতে বসে রইল রাজ্য।তার ডান হাত তখনো যুবরাজের হাতের মুঠোয় বন্দি।কতো সময় এভাবে পেরিয়ে গেছে রাজ্য জানেনা।হঠাৎ গাড়ির ব্রেক কষার শব্দে নড়েচড়ে উঠলো সে।

“লক্ষী মেয়ের মতো এভাবেই বসে থাকবে।একদম ছটফট করবে না ঠিক আছে?

যুবরাজের কথায় সম্মতি জানিয়ে রাজ্য ঘাড় কাত করলো।গাড়ির দরজা খুলে যুবরাজ বাইরে বেরিয়ে এসে রাজ্যের পাশের দরজা খুলে তুলতুলে নরম কন্ঠে আহ্বান জানালো

“প্লিজ গিভ মি ইউর হ্যান্ড মাই ডিয়ার বিলভড ওয়াইফ”

যুবরাজের এমন আহ্বানে রাজ্যের সারা শরীরে অদ্ভুত বৈদ্যুতিক তরঙ্গ খেলে গেলো ।উচ্ছাস আর আবেশ দুইয়ের মিশেলে নিজের কাঁপা কাঁপা দুই হাত যুবরাজের দিকে বাড়িয়ে লাজুক হাসলো সে।

রাজ্যের পদ্মের পাপড়ির ন্যায় দুই হাতে উষ্ণ চুম্বন দিয়ে রাজ্যকে পাঁজাকোলে তুলে নিলো যুবরাজ।
দৃষ্টি হীন রাজ্য পরম আস্থাতে দুই হাত দিয়ে যুবরাজের গলা জড়িয়ে বুকে মাথা ছোয়ালো।রাজ্যকে কোলে নিয়ে নিজের পা চালালো যুবরাজ।
কীয়তখন বাদে দুজন পুরুষের গলার স্বর পেলো রাজ্য।কিন্তু খুবই চাপা।যুবরাজের ইশারায় দরজা খুলে দিলো একজন পুরুষ।রাজ্য মনে মনে ভাবল
“এই বাড়ির চাকর বাকর হবে হয়তো”

কক্ষে প্রবেশ করতেই অসম্ভব রকমের সুন্দর সুবাসে ঠোঁট প্রশস্ত হলো রাজ্যের।সেই নরম উষ্ণ ঠোঁটে যুবরাজ তার ঠোট ছুঁইয়ে রাজ্যের কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো

“সো ম্যানি এরেন্জমেন্টস ফর ইউ ডিয়ার বউ”

কথাটি বলতে বলতে রাজ্যের কানের লতিতে উষ্ণ স্পর্শ ছুঁইয়ে দূরে সরে গেলো যুবরাজ।রাজ্য যুবরাজকে আকড়ে ধরতে চেয়েও বিফল হলো।শেষমেশ নিজের হাত গুটিয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইলো রাজ্য।যুবরাজ রাজ্যের চোখের বাধন উন্মুক্ত না করেই রাজ্যকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে উদ্বিগ্ন স্বরে বলে উঠলো
“এভাবেই বসে থাকবে,কোথাও এক পা নড়বে না।আমি যাবো আর আসবো!

যুবরাজের অপেক্ষায় এভাবেই বসে থেকে কতো সময় ব্যয় করলো রাজ্য তার হিসেব রাখলো না।যখন ধৈয্যের বাঁধ ফুরাবার উপক্রম তখন চোখের বাধন উন্মুক্ত করে বিষন্ন মনে আরো এক প্রহর অপেক্ষার সিদ্ধান্ত নিলো সে।

হঠাৎই বিকট বজ্রপাতে ধ্যান ছুটলো রাজ্যের।সেই সাথে কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠলো।এরপর মনে সাহস এনে সময় কতো হয়েছে সেটা দেখার জন্য কক্ষের চার দেয়ালে দৃষ্টি বুলালো।কিন্তু কোনো দেয়াল ঘড়ি নজরে এলো না।বাধ্য হয়ে বিছানা থেকে নেমে ঘোমটা খুলে নিজের ব্যাগ থেকে মোবাইল খানা বের করে পাওয়ার অন করে সময় দেখে নিলো।ঘড়িতে সময় রাত বারোটা বেজে পঁচিশ মিনিট।
এবার বেশ ঘাবড়ালো রাজ্য

“যুবরাজ গেলো টা কোথায়?’

**********

শুনশান ফাঁকা রাস্তা,কোনো জনমানব তো দূর একটা গাড়ি পর্যন্ত দৃষ্টিগত হচ্ছে না।পুরো আকাশ কাঁপিয়ে ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে সেই সাথে জোরে বৃষ্টি হচ্ছে।ঘুটঘুটে অন্ধকারে চারপাশের সবকিছুই দৃষ্টিগোচর।এমন ভয়ানক পরিস্থিতিতে প্রানপনে দৌড়ে চলেছে দুজন কালো পোশাকধারী মাঝবয়সী লোক।নিজের প্রিয় জীবনখানা বাঁচানোই যেনো এখন মুখ্য উদ্দেশ্য তাদের।
বৃষ্টির দাপটের সাথে পাল্লা দিয়ে দৌড়াতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে তাদের।বারবার মাঝ রাস্তায় মুখ থুবড়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে যাচ্ছে কিন্তু সেসব তারা গায়ে মাখছে না।ঘন্টাখানেক এভাবে দৌড়ানোর পর সামান্য হাফ ছেড়ে দুই হাঁটুতে হাতের ভর দিয়ে মুখ খোলে জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে লাগলো তারা।
কিন্তু সেই নিশ্বাস বেশিক্ষন স্বস্তির হলো না।চোখের সামনে যম তুল্য মানুষটিকে দেখে দুজনের ই চক্ষু কোটর ছেড়ে বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো।সেই সাথে শ্বাস টাও যেনো বুকের কাছে এসে গট করে আটকে গেলো।এমন শীতল বর্ষনেও গলা শুকিয়ে কাঠ হলো পানির পিপাসায়।ভয়ে জিভ বের করে বৃষ্টির পানি শুষে নিয়ে গলা ভেজানোর বৃথা চেষ্টা করলো দুজনে।

তাদের এই দৃশ্য দেখে হো হো শব্দে হেসে উঠলো সামনে দাঁড়ানো ব্যাক্তি।একদিকে বিকট বজ্রপাত অপরদিকে আগন্তুকের অদ্ভুত হাসি দুই মিলেই লোক দুটোর কলিজা কাঁপিয়ে দিলো।
নিজের গাড়ির সামনের অংশে হেলান দিয়ে হাতে একটা রিভলবার ঘুরাতে ঘুরাতে আরো কিছুক্ষন হেসে নিলো ব্যাক্তিটি।এরপর চোখে আগুন নিয়ে গর্জে উঠা কন্ঠে শুধালো

“আমার বাবাকে মা*রার মতো সাহস কে দেখিয়েছে তোদের ওই সুবহান শেখ?

লোক দুটো বলার মতো কোনো ভাষা খুঁজে পেলো না।উপায়ন্তর না পেয়ে শুধু হাটু মুড়ে দুই হাত জোড় করে নিজের জীবন ভিক্ষার আকুতি জানালো।

“আমাদের ক্ষমা করে দিন যুবরাজ স্যার।আমরা বুঝতে পারিনি উনি আপনার বাবা।আমরা শুধু কন্ট্রাকে কাজ করি।আমরা যদি ঘূর্ণাক্ষরেও টের পেতাম সাদাফ শাহীর আপনার বাবা তাহলে আমরা কখনো এই চুক্তি করতাম না”

লোক দুটোর কান্না আর ভয়ার্ত আহাজারী শুনে যুবরাজের মনে বেশ এক আনন্দ হলো।সেই আনন্দ বেশিক্ষন স্থায়ী না হয়ে মুহূর্তেই হিংস্র রূপে বহিঃপ্রকাশ ঘটলো।

“বাসর ঘরে নতুন বউ রেখে এই বৃষ্টির মধ্যে তোদের পিছনে ছুটে চলেছি।ওদিকে বউ আমার একা।কতখানি হয়রানি করেছিস জানিস?কোন মুখে ক্ষমা চাইছিস সেটাই তো বুঝতে পারছি না”

লোক দুটো দৌড়ে এসে যুবরাজের পা খামচে ধরে কেঁদে উঠলো হাউমাউ করে।কিন্তু কঠিন হৃদয়ের যুবরাজ সেসব কেচ্ছা শুনতে নারাজ।এতোক্ষন বউয়ের সাথে থাকলে এক গেম হয়ে যেতো।কিন্তু এখানে এসে দৌড়াদৌড়ি খেলা খেলতে হচ্ছে।এসব অহেতুক খেলা সহ্য করবে কোন সবল পুরুষ?

প্রচন্ড ক্রোধে ঝটকা দিয়ে নিজের পা সরিয়ে গাড়ির দরজা খুলতে খুলতে গাম্ভীর্য পূর্ণ কন্ঠে যুবরাজ বলে উঠলো

“এসব মামুলি পাতি মাস্তান পেটাতে আমাকে বাসর ঘর থেকে এখানে কেনো অনলি রেহান?এসব ছোট কেস তো তুই নিজেই সামলাতে পারিস।ছুঁচো মেরে হাত নোংরা করা বহু আগেই ছেড়ে দিয়েছি জানিস না?তার চেয়ে মা*ল দুটোকে ঠুকে দিয়ে কফিনে ভরে ফুল দিয়ে সাজিয়ে সুবহান শেখের কাছে পাঠানোর ব্যাবস্থা কর।তোর বোন আমাকে না পেয়ে কেঁদে বুক ভাসালো বোধ হয়,বৃষ্টি ফুরিয়ে গেলে বাসর এর মজাই মাটি হবে।আর আমার বাসর ভালো না হলে সুবহান শেখের চামড়া তুলে ডুগডুগি বাজাবো এই আমি বলে দিলাম।”

রাগে গজগজ করতে করতে গাড়ির দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে গাড়ি স্টার্ট দিলো যুবরাজ।স্কেলেটরে পা চেপে ধরতেই সচল হলো গাড়ির চাকা।এক মিনিট ও না আগাতেই ভিক্ট শব্দে বাজ পড়লো সেই সাথে শোনা গেলো দুজন ব্যাক্তির গগন বিদারী চিৎকার।সেই চিৎকারে শব্দে ক্রুর হাসলো যুবরাজ।

গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে শীষ বাজাতে বাজাতে প্রশস্ত হেসে বলে উঠলো
“ইউ হ্যাভ ডান ভেরি ব্র্যাভ ডিয়ার রেহান”

********

নিজের মাথার লম্বা ঘোমটার ওড়না খুলে চুলের বাধন আলগা করে ধীরে ধীরে নিজের গা থেকে সমস্ত অলঙ্কার খুলে ফেললো রাজ্য।বিষাদের মেঘ তার মন দখল করে উষ্ণ স্রোতে ভাসিয়ে দিচ্ছে সব কিছু।বার বার চেষ্টা করেও নিজের নেত্র বারী রোধ করা যাচ্ছে না।বাতিদানে থাকা মোমবাতি গুলোও অকারণে উদ্দীপনার সাথে জলে জলে নিজের শক্তি হারিয়ে নিভে যাওয়ার বাহানা করছে।

“যেই মানুষটার জন্য এতো মনোমুগ্ধকর সাজসজ্জা এতো আবেগঘন অপেক্ষা সে একটি বার তাকিয়েও দেখলো না”!

যুবরাজের এহেন কাণ্ডে এক নিমিষে ভেঙেচুরে দুর্বল হয়ে পড়লো রাজ্য।শেষমেশ নিজের অশ্রুদানা মুছতে খোলা বেলকনির কাছে গিয়ে নিজেকে মেলে ধরলো ।দুই হাত পাখির ডানার মতো মেলে ধরে চক্ষু মুদে নিজেকে বৃষ্টির ধারার সামনে সপে দিলো সে ।বুকের ভেতরের উত্তাল কষ্টে ক্রমশ ফুঁপিয়ে উঠা নীরব কান্নারা উঠানামা করছে বারংবার।মুহূর্তেই বৃষ্টির মোটা মোটা ছিটা রাজ্যকে অনেকটাই ভিজিয়ে দিলো।
পুরো মুখমন্ডল আর গলা জুড়ে শিশির বিন্দুর মতো মুক্তা দানার ন্যায় বৃষ্টির ফোঁটা রাজ্যকে দখল করলো।
খট করে খোলে গেলো কক্ষের দরজা।ব্যাথায় নিমগ্ন রাজ্য সেটা খেয়ালই করলো না।
অভিজাত্যে ভরপুর ড্রেসিং টেবিলের দিকে করুন দৃষ্টিপাত করে নিজের দীর্ঘশ্বাস লুকালো যুবরাজ।বিছানার উপর অনাদরে পড়ে রয়েছে সোনালী রঙা ঘোমটা খানা।
নিজের ভেজা কাপড় ওয়াশিং মেশিনে ফেলে একটা ট্রাউজার পরিধান করে খালি গায়ে বেলকনির দিকে অগ্রসর হলো যুবরাজ।
বিদ্যুৎ চমকানোর ঝকঝকে আলোয় বিষাদে ভরা রাজ্যের ছোট মুখ খানি বেশ করে নজর কাড়লো যুবরাজের।
ধীরপায়ে রাজ্যের পিছনে দাঁড়িয়ে নিজের পেশীবহুল হাতের বেষ্টনীতে শক্ত করে বেঁধে ফেললো নিজের প্রিয়তমা স্ত্রীকে।
যুবরাজের উষ্ণ স্পর্শে কেঁপে উঠার পরিবর্তে ঠোঁট টিপে চোখ বুঝে নীরব অশ্রু বিসর্জন দিলো রাজ্য।সবটাই বুঝতে পেরে যুবরাজ আরো শক্ত বাঁধনে রাজ্যকে জড়িয়ে আহত স্বরে বলে উঠলো

“আমি ভুল করেছি,আমাকে কঠিন শাস্তি দাও।তুমি যেই শাস্তি দিবে আমি সেটাই মাথা পেতে নিতে প্রস্তুত”

যুবরাজের এমন শীতল কন্ঠে রাজ্যের কষ্ট গুলো বাধন ছাড়া হলো।যুবরাজের দিকে ঘুরে নিজের সিক্ত দুই হাতে যুবরাজকে জড়িয়ে ধরে জোড়ে কেঁদে উঠলো রাজ্য।

“আপনি আসলেই কঠিন হৃদয়ের পুরুষ,আপনি ইচ্ছে করেই আমাকে কষ্ট দিতে পছন্দ করেন।আমি আর এক মুহূর্তও আপনার সাথে থাকবো না।আমি এক্ষনি বাড়ি চলে যাবো।

রাজ্যের আহত কান্না বৃষ্টির ধারার সাথে ধুয়ে মুছে যুবরাজের প্রশস্ত বুকে বিলীন হচ্ছে।মেয়েটার এহেন বিধস্ত অবস্থায় যুবরাজের কষ্টে হৃদপিন্ড খানা ফেটে যাবার উপক্রম হলো।রাজ্যের মাথায় গাঢ় চুম্বন একে যুবরাজ পুনরায় বলে উঠলো

“আম সরি জান”

নিজের কান্নাকে কোনো মতে রোধ করে রাজ্য তার মলিন মুখ খানা নিয়ে যুবরাজের দিকে দৃষ্টি পাতলো।চোখে তার হাজারো প্রশ্ন।কিন্তু মুখ ফুটে একটাও করতে পারলো না।
চতুর যুবরাজ সবগুলো প্রশ্ন পড়ে ফেললো সদ্য হওয়া স্ত্রীর সমুদ্রের ন্যায় স্বচ্ছ নয়ন থেকে।

দুই হাতের আজলায় রাজ্যের মুখ জড়িয়ে যুবরাজ মাদকতা মিশ্রিত কন্ঠে জবাব দিলো

“সকল প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে আছে বউ।সময় এলে সুদে আসলে পুষিয়ে উত্তর দেবো।

ভারী বৃষ্টি আর ঠান্ডা বাতাস রাজ্যের ভেজা শরীরে কাঁপন ধরালো।সেই কাঁপনে তিরতির করে কেঁপে উঠলো গোলাপের পাপড়ি সম রাজ্যের পাতলা ঠোঁট জোড়া।সেই ঠোটের কম্পনে খেই হারালো যুবরাজ।নেশাক্ত ব্যাক্তির ন্যায় পরম আবেশে রাজ্যের সিক্ত দুই ঠোঁট আকড়ে ধরলো নিজের খসখসে শীতল উষ্ঠদ্বয় দিয়ে।
যুবরাজের ভালোবাসার স্পর্শে চোখ বুজে যুবরাজের গলা জড়িয়ে ধরলো রাজ্য।মুহূর্তেই বৃষ্টির দাপট আরো তেজী হলো।নিজেকে উষ্ণ করতে যুবরাজের পেশিযুক্ত পিঠে জাপ্টে ধরলো রাজ্য।
ঠান্ডায় জমে যাওয়া রাজ্যকে হ্যাচকা টানে কোলে তুলে নিলো যুবরাজ এরপর কক্ষের দিকে পা বাড়ালো।মোমবাতির কোমল আলোয় নব বধূর আকর্ষণীয় স্নিগ্ধ রূপ দেখে চূড়ান্ত বেসামাল হলো নির্লজ্জ্ব যুবরাজ।লেহন আর উষ্ণ স্পর্শে রাজ্যকে অস্থির করে তুলতে ব্যাস্ত হলো বেহায়া প্রেমিক পুরুষ।
সহ্যের সীমা পেরিয়ে গেলে যুবরাজের পিছনের চুল খামচে ধরে নেশাক্ত চোখে মাদকতা মিশ্রিত ভাঙা ভাঙা স্বরে রাজ্য গুঙ্গিয়ে উঠে

“প্লিজ”

রাজ্যের আকুতি শুনে যুবরাজের হাতের বিচরণ অবাধ্য থেকে অবাধ্যতর হতে থাকলো। সইতে না পেরে এক পর্যায়ে শরীরের ভর ছেড়ে দিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো রাজ্য।ধীরে ধীরে রাজ্যের গায়ের পেঁচানো শাড়ি খুলে মেঝেতে ছুড়ে ফেললো যুবরাজ।
উন্মাদ যুবরাজ রাজ্যের গ্রীবাদেশে,বক্ষ ভাঁজে এবং সর্বশেষ মেদহীন উদরে মুখ ডুবালো
যুবরাজের মাসেল পিঠে নখ যুক্ত আঙ্গুলি দিয়ে সজোড়ে খামচে ধরলো রাজ্য।বৃষ্টির সাথে পাল্লা দিয়ে উঁচু হলো রাজ্যের শীৎকার আর গোঙানির আওয়াজ।
নিজেকে পুরোপুরি পরিতৃপ্ত করতে রাজ্যকে চূড়ান্ত সুখের সাগরে ভাসাতে আহবান জানালো।যুবরাজের ঠোঁট আকড়ে ধরে সম্মতি জানালো রাজ্য।
ঝড় বৃষ্টির রাতে উন্মাদনা যুক্ত আদিম খেলায় মত্ত হলো পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ দুজন মানব মানবী।তাদের শারীরিক কসরতে দলিত মথিত হলো বিছানার দামি মখমলি চাদর খানা।অসহনীয় অস্থিরতা ছেয়ে গেলো পুরো বাংলো জুড়ে।
দুজনের পবিত্র সুখের শীৎকার মূর্ছনা তুললো বদ্ধ কক্ষজুড়ে।
নিজের পিপাসা মিটিয়ে সমস্ত ভর রাজ্যের উপর ছেড়ে দিয়ে পরিতৃপ্ত যুবরাজ রাজ্যের কপালে নাকে আর চোখে গভীর চুমু আকলো।এরপর মাদকতা মিশ্রিত আবেগী কন্ঠে বলে উঠলো

“হাও ডু ইউ ইনজয় মাই টরচার্ড লাভ?

বেকাবু রাজ্য অস্ফুট ভাঙা স্বরে উত্তর করলো

“শেইমলেস”

নিজের নির্লজ্জ্বতার পরিচয় দ্বিগুন হারে দিতে নগ্ন রাজ্যকে নিজের বুকের উপর শুইয়ে সারা মুখমন্ডলে চুমু একে শক্ত হাতে বুকের সাথে মিশিয়ে রাজ্যের ঝলমলে চুলের ভাঁজে মুখ ডুবিয়ে বলে উঠলো

“লাভ ইউ সেনিওরিটা”

#চলবে।