ওরা মনের গোপন চেনে না পর্ব-০৭

0
1

#ওরা_মনের_গোপন_চেনে_না
#পর্বঃ৭
#লেখিকা_দিশা_মনি

জাবিরকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে আসার প্রস্তুতি চলছে। তবে এক্ষেত্রে এক নতুন সমস্যা দেখা যাচ্ছে। জাবিরের এখন সর্বক্ষণ দেখাশোনা করার জন্য একজন লোক দরকার। আর জাবির বলে দিয়েছে, হাসপাতালে যেই নার্স তার দেখাশোনা করেছে তাকেই যেন তার দেখাশোনার দায়িত্বে রাখা হয়। এদিকে জাবিরের দাদি আমিনা চৌধুরীর নার্সটির উপর প্রথম থেকেই সন্দেহ। তাই তিনি জাবিরের প্রস্তাব শুনে বলেন,
“এভাবে তো আমরা যার তার উপর তোমার দেখাশোনার দায়িত্ব দিতে পারি না। তুমি আমার কথা শোনো, আমি এই শহরের সেরা নার্সকে ঠিক করবো তোমার জন্য। কিন্তু তুমি এমন কথা বলো না যে এভাবে অজানা অচেনা একটা নার্সকে তোমার দায়িত্ব দিতে হবে।”

জাবির জেদ দেখিয়ে বলে,
“আমার যা বলার আমি বলে দিয়েছি দাদি। ঐ নার্সই আমার সেবা করবে৷ অন্য কোন নার্স নয়।”

ললিতা চৌধুরীও শাশুড়ীর কাছে অনুরোধ করে বলেন,
“রাজি হয়ে যান না আম্মা। আমার ছেলেটা কি ভীষণ কষ্ট পাচ্ছে। আপনি অন্তত একটু বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করেন।”

আমিনা চৌধুরী এবার বাধ্য হয়ে বলেন,
“বেশ আমি তোমার শর্ত মেনে নিলাম। তবে তার আগে আমায় ঐ মেয়েকে দেখতে হবে৷ মেয়েটাকে না দেখা পর্যন্ত এভাবে আমি নিয়োগ দিতে পারবো না। মেয়েটা সবসময় মাস্ক পড়ে থাকে তাই ওর উপর আমার এত সন্দেহ।”

এমন সময় একজন ডাক্তার আসতেই আমিনা চৌধুরী বলেন,
“যেই নার্সটা জাবিরের সেবা করেছিল তাকে এখানে নিয়ে আসুন।”

ডাক্তার বলেন,
“আচ্ছা৷ একটু অপেক্ষা করুন। আমি নিয়ে আসছি।”

আমিনা চৌধুরী অপেক্ষা করতে থাকেন। একটু পর নার্সটি ভেতরে আসে। আমিনা চৌধুরী বলেন,
“এই মেয়ে মাস্ক খোলো।”

নার্সটি ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। আমিনা চৌধুরী এবার রেগে গিয়ে নিজেই মেয়েটির মুখের মাস্ক খুলে দেন আর অবাক হয়ে যান৷ কারণ এই মেয়েটি সম্পূর্ণ অচেনা একজন মেয়ে ছিল। জাবির বলে,
“দেখলে তো দাদি, তুমি শুধু শুধু সন্দেহ করছিলে। এই মেয়েটাকে তো আমরা কেউই চিনি না। ও কেন শুধু শুধু আমাদের ক্ষতি করতে চাইবে? তোমার বুঝতে কোথাও ভুল হয়েছিল।”

আমিনা চৌধুরী বলেন,
“এত বড় ভুল আমার হবে বলে মনে হয় না, এই মেয়ে সত্যি করে বলো,তুমি কি সত্যি সেই মেয়ে যে জাবিরের সেবা করেছিলে?”

নার্সটি মাথা নাড়িয়ে বলে,
“জ্বি..”

আমিনা চৌধুরী ভাবেন,
“কন্ঠস্বরটা একটু অন্যরকম লাগছে যেন..”

তবে এখন আপাতত তিনি এই বিষয়ে কিছু বলেন না। জাবির বলে,
“দাদি,এখন তুমি এসব সন্দেহ বাদ দিয়ে ওকে নিয়ে আমাদের বাসায় চলো। ও অনেক ভালো ভাবে আমার খেয়াল রাখতে পারবে।”

আমিনা চৌধুরী বলেন,
“বেশ, তবে তাই হোক। আমি এই মেয়েকেই তোমার নার্স হিসেবে নিয়োগ দিচ্ছি।”

কিছুটা দূরে লুকিয়ে কথাটা শুনে নেন আনিকা চৌধুরী। আর সাথে সাথেই তার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। তিনি তার পাশে দাঁড়ানো দৃঢ়তার কাধে হাত রেখে বলেন,
“তৈরি হয়ে নাও দৃঢ়তা। এবার তোমার সবথেকে বড় পরীক্ষা আসতে চলেছে। এবার তোমায় নিজের স্বামীকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তুলতে হবে। তার মনে নিজের জন্য যায়গা করে নিতে হবে। তুমি পারবে তো?”

দৃঢ়তা আত্মবিশ্বাসের সাথে বলে,
“পারবো। পারতে আমাকে হবেই।”

আনিকা চৌধুরী এবার দূর থেকেই আমিনা চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলেন,
“আপনি চলেন ডালে ডালে তো আমি চলি পাতায় পাতায়, এবার দেখতে থাকুন, সামনে আরো কি কি হয়।”

মূলত তিনিই এই নকল মেয়েটিকে নার্স সাজিয়ে পাঠিয়েছেন। যাতে করে আমিনা চৌধুরীসহ বাকি সবাইকে ধোকা দেয়া যায়।

★★
১ সপ্তাহ পর,
জাবির বিছানায় শুয়ে আরাম করছে। এখনো সে ভালো ভাবে হাঁটতে পারে না। হাঁটার জন্য কারো না কারো সাহায্যের প্রয়োজন হয়।

আর তাকে সর্বদা সাহায্য করে তার জন্য নিয়োগকৃত নার্স। এই এক সপ্তাহে মেয়েটি বিরামহীন ভাবে তার সেবা করে গেছে। জাবির আজ যতটুকুই সুস্থ হতে পেরেছে সবটাই এই মেয়েটার অবদান।

জাবির আজকাল নার্সটির ব্যবহারে ভীষণ মুগ্ধ। নার্সটি তার সামনে তেমন একটা কথা বলে না৷ শুধু হু, হা করে কিন্তু তার খেয়াল রাখতে একদম কার্পন্য করে না।

জাবির আজ সন্ধ্যাবেলায় হঠাৎ করে উঠে বসে বলে,
“এই যে মিস শুনুন।”

দৃঢ়তা একটু বাইরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল এমন সময় জাবিরের ডাক শুনে থেমে যায়। জাবির নিজের ক্রাচে ভড় দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
“আমায় একটু বেলকনিতে নিয়ে যাবেন।”

দৃঢ়তা মাথা নাড়িয়ে জাবিরকে নিয়ে বেলকনিতে যায়। জাবির সেখানে গিয়েই বলে,
“জানেন, এখানকার ফ্রেশ বাতাস আমার ভীষণ ভালো লাগে।”

দৃঢ়তা চুপ থাকে। জাবির এবার খানিক বিরক্তির স্বরেই বলে,
“আচ্ছা, আপনি সবসময় এতটা চুপচাপ থাকেন কেন? বোবা তো নন আপনি আর মুখেও সবসময় মাস্ক পড়ে থাকেন। সত্যি করে বলুন তো আপনি কি কিছু আড়াল করতে চান?”

দৃঢ়তা এবার ভীষণ ঘাবড়ে যায়। গলার স্বর যতটুকু সম্ভব পরিবর্তন করে বলে,
“না..আপনি ভুল ভাবছেন।”

“আমি ভুল ভাবছি না ঠিক সেটা নাহয় একটু পরে বিবেচনা করলেন। আগে এটা বলুন, আপনার উদ্দ্যেশ্য কি? আপনি কি শুধু আমার সেবা করার জন্যই এখানে এসেছেন?”

দৃঢ়তা বেশ বিরক্ত হয়ে বলে,
“না, আপনার সব সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে এসেছি।”

বলেই সে চলে যেতে নিতেই জাবির তার হাত শক্ত করে ধরে বলে,
“আর পালিয়ে লাভ নেই..আপনার আসল পরিচয় আমি জেনে গেছি..”

ভয়ে দৃঢ়তার এবার হৃদস্পন্দন বন্ধ হবার দশা। সে মনে মনে দোয়া দরুদ পড়তে থাকে। জাবির নিজের মুখটা একদম দৃঢ়তার কানের কাছে নিয়ে আসে। জাবিরের গরম নিঃশ্বাস পড়ছিল দৃঢ়তার কানে। দৃঢ়তা কিছু বলতে যাবে তার আগেই হঠাৎ আচমকা জাবির দৃঢ়তার থেকে দূরে সরে এসে বলে,
“আপনি মেবি খুব ফেমাস কোন নার্স, রাইট? এজন্যই এত বেশি ডিমান্ড আপনার। যখনই আপনি আমার পাশে থাকেন আমার ভীষণ ভালো অনুভব হয়। মনে একটা আশা জাগে যে আমি জলদি সুস্থ হতে পারব।”

দৃঢ়তা একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলে,
“ধন্যবাদ..”

“আপনার কন্ঠস্বরটা ভীষণ ভালো মেবি..আচ্ছা আমায় একটা গান শোনাবেন..আমার না খুব গান শুনতে মন চাইছে।”

“গান?”

“প্লিজ না করবেন না.. একটা গানই তো শোনান না।”

অগত্যা দৃঢ়তা গাইতে শুরু করে,
Kaisi teri khudgarzi
Na dhoop chune na chhanv
Kaise teri khudgarzi
Kisi thor tike na panv

Ban liya apna paigambar
Tar liya sat samandar
Phir bhi sookha man ke andar
Kyun rahega

Re kabira maan ja
Re fakeera maan ja
Aaja tujhko pukaarein
Teri parchhaiyaan

বলতে বলতেই হঠাৎ দৃঢ়তার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। জাবির দৃঢ়তার সেই চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলে,
“কাঁদছেন কেন? আপনাকে কি কেউ কষ্ট দিয়েছে/”

“আমার ভীষণ কাছের একজন মানুষ..”

“আচ্ছা, বুঝলাম। যে আপনার কষ্ট বোঝে না তার জন্য কেঁদে লাভ নেই, বুঝলেন?”

দৃঢ়তা মাথা নাড়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আর জাবির মুগ্ধচোখে দৃঢ়তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨