ওরা মনের গোপন চেনে না পর্ব-২৫+২৬

0
2

#ওরা_মনের_গোপন_চেনে_না
#পর্বঃ২৫(বোনাস)
#লেখিকা_দিশা_মনি

দৃঢ়তা হোস্টেলে ফিরে জাবিরের বলা কথা গুলোই ভাবছিল বসে বসে। তার মনে কেন জানি এক বিন্দু পরিমাণ শান্তি ছিল না। দৃঢ়তার এই অবস্থার মাঝেই হঠাৎ করে ইউভান এসে তার পাশে বসে। দৃঢ়তার কাধে হাত রেখে বলে,
“কি ভাবছেন দৃঢ়তা? নিশ্চয়ই জাবির চৌধুরীর বলা কথা গুলোই!”

দৃঢ়তা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,
“মিথ্যা বলব না। আমি আসলেই সেই ব্যাপারে ভাবছিলাম। আমি জানি না কেন, কিন্তু ওনার বলা কথাগুলো আমায় ভীষণ ভাবাচ্ছে। উনি কেন বলে গেলেন যে,আমাকে যেভাবেই হোক আবার ওনার জীবনে ফেরাবেন? আমি তো ওনার জীবনে আর ফিরতে চাই না।”

“এত চিন্তা করার কিছু নেই। উনি বললেই তো আর কিছু হয়ে গেল না। তোমার উপর জোর করে উনি কিছু করতে পারবেন না।”

দৃঢ়তা এবার একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। এমন সময় হঠাৎ করে বাইরে থেকে কিছু হট্টগোলের আওয়াজ শুনে দৃঢ়তা রুম থেকে বের হয়। ইউভানও বের হয় তার সাথে। মিষ্টি দৃঢ়তাকে দেখেই বলে,
“দৃঢ়তা! তুমি কেন আসতে গেলে?”

দৃঢ়তা বলে,
“কিসের যেন আওয়াজ শুনলাম এখানে৷ কিছু কি হয়েছে আপু?”

“না কিছু হয়নি৷ তুমি ভেতরে যাও।”

দৃঢ়তা ভেতরে যেতে নেবে এমন সময় হঠাৎ করে জাবির ছুটে আসে। জাবিরকে দেখেই দৃঢ়তা হতবাক স্বরে বলে,
“আপনি এখানে?! আমার ঠিকানা আপনি কিভাবে পেলেন।”

জাবির দৃঢ়তার হাত ধরে বলে,
“তোমাকে আমি নিজের সাথে নিয়ে যেতে এসেছি দৃঢ়তা। চলো আমার সাথে ঢাকায় ফিরে যাবে।”

“আমি আপনার সাথে কোথাও যাব না। ছাড়ুন আমার হাত।”

“তোমায় যেতে হবে। তুমি যেতে বাধ্য। কারণ আইনত আমি এখনো তোমার স্বামী।”

“আমি মানি না এই সম্পর্ক আর না তো আপনাকে স্বামী বলে মানি। আপনি প্লিজ আমার চোখের সামনে থেকে দূর হয়ে যান।”

জাবির নাছোড়বান্দা। সে বলে ওঠে,
“তুমি যদি না যাও তাহলে কিন্তু আমি..”

“কি করবেন? আপনার যা করার আপনি করে নিন।”

জাবিরের মাথায় যেন জেদ চেপে যায়। জাবির এবার দৌড়ে বেলকনির কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। দৃঢ়তা হতবাক স্বরে বলে ওঠে,
“এ কি করছেন আপনি?”

জাবির বলে,
“আমার সাথে যাবে না তো তুমি। এবার দেখো।”

বলেই জাবির ঐ উঁচু বেলকনি থেকে একটা লাফ দেয়। সবকিছু এত দ্রুত ঘটে যায় যে দৃঢ়তা কিছু বুঝেই উঠতে পারে না৷ কিন্তু যখন বুঝতে পারে তখন ভয়ে চিৎকার করে বলে ওঠে,
“মিস্টার জাবির!”

★★
জাবিরকে কক্সবাজারের স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু এত উপর থেকে পড়ে যাওয়ায় তার অবস্থা ভীষণ খারাপ। অনেক ব্লাড লস হয়েছে আর তার চিকিৎসার জন্যেও অনেক ব্লাডের প্রয়োজন। এছাড়া কক্সবাজারে তার চিকিৎসার জন্য উন্নত প্রযুক্তিও নেই এজন্য চট্টগ্রামে স্থানান্তর করা হলো। তবে চট্টগ্রামে নিয়ে গিয়েও বেশ একটা লাভ হলো না। দৃঢ়তা, ইউভান সাথে রাফসানও এসেছে চট্টগ্রামে। মোহনাও খবর পেয়ে ছুটে এসেছে। মোহনার চোখে জাবিরের জন্য উৎকণ্ঠা দেখেছে দৃঢ়তা। যা থেকে বোঝা যায় মোহনার মনে হয়তো জাবিরের প্রতি একটু হলেও অনুভূতি আছে। ব্যাপারটা ভেবেই দীর্ঘ শ্বাস ফেলে দৃঢ়তা। তার কেন জানি ব্যাপারটা একটু খারাপ লাগে। মনের কোণে একটু ঈর্ষা বোধ হয়।

এরইমধ্যে একজন ডাক্তার এসে বলেন,
“ওনার চিকিৎসার জন্য আমাদের প্রচুর A- ব্লাড গ্রুপ দরকার।”

দৃঢ়তা বলে,
“আমার ব্লাড গ্রুপ A- আমি ওনাকে ব্লাড দিব।”

“বেশ, আসুন তাহলে।”

মোহনা দৃঢ়তার দিকে এগিয়ে এসে বলে,
“আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। জাবির আপনার সাথে এত কিছু করেছে তবুও আপনি…”

“এখানে ধন্যবাদের কিছু নেই। ওনাকে রক্ত দেয়াটা আমার কর্তব্য।”

বলেই একটু থমকে যায়। অতঃপর বলে,
“ওনার যায়গায় অন্য কেউ হলেও আমি দিতাম। কারণ এটা মানবতার ব্যাপার।”

দৃঢ়তা চলে যায় জাবিরকে ব্লাড দিতে। ইউভান খেয়াল করে জাবিরের কথা ভেবে দৃঢ়তা যেন একটু বেশিই চিন্তিত হয়ে গেছে। এই ব্যাপারটা তার একদম ভালো লাগে না। তবুও সে এটা ভাবে যে, দৃঢ়তা হয়তো সবটা মানবিকতার খাতিরেই করছে। এটা ভেবেই সে শান্ত হয়।

★★
দুই দিন পর,
জাবির এখন একদম সেরে উঠেছে। জাবিরের এক্সিডেন্টের খবর পেয়ে আমিনা চৌধুরী ও ললিতা চৌধুরী, জলিল চৌধুরীও ছুটে এসেছেন। তবে আনিকা চৌধুরী আসেন নি। কারণ তার নিজের শরীরও খুব একটা ভালো না এবং তিনি কিছুদিন থেকে বিছানায় পড়ে আছেন।

ললিতা চৌধুরী তো নিজের ছেলের পুরো অবস্থার দায় মোহনার উপর চাপিয়ে বললেন,
“এই মেয়েটার সাথে ঘুরতে এসেই আমার ছেলেটার আজ এই অবস্থা।”

তখন মোহনাও চুপ না থেকে বলে,
“আমাকে দোষারোপ করা বন্ধ করে সত্যটা জানুন। আমি যদিও এটা বলতে চাইনি কিন্তু এখন বলছি, আমি না আপনার ছেলের এই অবস্থার জন্য সে নিজেই দায়ী৷ সে তার প্রাক্তন স্ত্রী দৃঢ়তাকে ফিরে পাওয়ার জন্য ব্লাকমেইল করতে বেলকনি থেকে ঝাপ দিয়েছে।”

দৃঢ়তার কথা শুনেই আমিনা চৌধুরী হতবাক হন। বলেন,
“তার মানে ঐ মেয়েটা এখন চট্টগ্রামে আছে।”

এরইমধ্যে একজন ডাক্তার এসে বলেন,
“মিস্টার জাবির চৌধুরীর জ্ঞান ফিরেছে। কিন্তু উনি বেশ পাগলামি করছেন।”

কথাটা শোনামাত্রই সবাই ছুটে যায় জাবিরের কেবিনের দিকে। কেবিনে প্রবেশ করামাত্রই সবাই দেখতে পায় জাবির নিজের ক্যানুলা খুলছে আর বলছে,
“আমি কিছু জানতে বা শুনতে চাই না। আমি আমার দৃঢ়তার কাছে যাব। আমার ওর সাথে কথা বলা দরকার।”

ললিতা চৌধুরী এগিয়ে এসে বলেন,
“শান্ত হও জাবির।”

“না,আম্মু। আমি শান্ত হবো না। তোমরা সবাই দৃঢ়তাকে আমার থেকে আলাদা করে দিয়েছ। ওকে ছাড়া আমি বাঁচতে চাই না। আমি নিজেকে শেষ করে দেব।”

ললিতা চৌধুরী জাবিরকে সামলাতে বলেন,
“তুমি শান্ত হও। আমি কথা দিচ্ছি, দৃঢ়তাকে আবার তোমার জীবনে ফিরিয়ে আনবো।”

আমিনা চৌধুরী রাগী কন্ঠে ললিতা চৌধুরীর উদ্দ্যেশ্যে বলেন,
“এসব তুমি কি বলছ ছোট বৌমা? তুমি ঐ মেয়েটাকে আবারো ফেরাতে চাও।”

“ক্ষমা করবেন আম্মা। আমি কখনো আপনার বিরুদ্ধে যাই নি। কিন্তু এবার প্রসঙ্গ আমার ছেলের জীবন-মরণ নিয়ে। তাই আমি এবার আপনার বিরুদ্ধে যেতে বাধ্য হবো।”

জাবির বলে,
“দৃঢ়তা অনেক জেদি। ও ফিরবে না। তোমরা ওকে আমার থেকে আলাদা করে দিয়েছ।”

ললিতা চৌধুরী বলেন,
“ভুল আমরা করেছি তো? বেশ, প্রায়শ্চিত্তও আমরা করবো। প্রয়োজনে আমি গিয়ে দৃঢ়তায় পায়ে পড়ব। ওর কাছে ভিক্ষা চাইব যেন ও তোমার জীবনে ফেরে।”

“তোমার মাথাটা খারাপ হয়ে গেছে নাকি ছোট বৌমা?”

“আমার ছেলেকে আমি মরতে দেখতে পারবো না আম্মা। আপনার অহংকার আর দম্ভ আপনি সাইডে রাখেন। আপনার এই অহংকারের জন্য এই মোহনার মতো একটা ডাইনিকে আমার ছেলের জীবনে এসেছে। এর থেকে তো দৃঢ়তাই ভালো ছিল। আমরা সত্যি হিরার মূল্য বুঝতে পারি নি। তবে এবার আর ভুল করবো না। এবার আমি ওকে ফিরিয়ে আনবোই। ”

এমন সময় জাবির বলে,
“আমি জানি ও কোথায় থাকে। সেদিন আমি চট্টগ্রামে ওদের ঠিকানাটাও জেনে নিয়েছি।”

“বেশ, আমায় ঠিকানাটা দাও। আমি নিজে গিয়েছিল দৃঢ়তাকে নিয়ে আসব।”

মোহনা দূর থেকে এসব শুনে। তার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে থাকে। তাহলে কি এবার তার সব হারানোর পালা?

এদিকে আমিনা চৌধুরী ভাবেন,
“যাইহোক, এই দৃঢ়তা মেয়েটা অন্তত মোহনার থেকে ভালো হবে। ছোট বৌমাকে আপাতত না আটকাই। এই মোহনা তো মরলোও না এবার ওকে অন্যভাবে সরাতে হবে। তার জন্য যদি দৃঢ়তাকে ব্যবহার করা যায় তাহলেও বা মন্দ কি!”

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

#ওরা_মনের_গোপন_চেনে_না
#পর্বঃ২৬
#লেখিকা_দিশা_মনি

দৃঢ়তা মিষ্টিদের বাসার মধ্যে সোফায় বসেছিল। বসে কিছু কথা ভাবছিল এমন সময় হঠাৎ করে কলিং বেল বেজে ওঠে। দৃঢ়তা গিয়ে দরজাটা খুলে দিতেই দেখতে পায় ললিতা চৌধুরীকে৷ অবাক স্বরে বলে ওঠে,
“আপনি!”

“হ্যাঁ, আমি তোমার সাথে কিছু জরুরি কথা আছে। ভেতরে আসতে বলবে না?”

দৃঢ়তা বলে,
“জ্বি, আসুন। কি বলবেন, বলুন।”

ললিতা চৌধুরী ভেতরে প্রবেশ করে কাদো কাদো সুরে বলেন,
“তুমি চলে আসার পর আমার সংসারটা পুরো ভেসে গেছে দৃঢ়তা। তুমি সত্যিই আমাদের পরিবারের জন্য সেরা ছিলে। তুমি চলে আসার পর সব এলেমেলো হয়ে গেছে। জানি না, কোন কুক্ষণে আম্মা ঐ মোহনা মেয়েটাকে আমাদের বাড়ির বউ করে এনেছিল। ও আমাদের হারমাশ একদম জ্বালিয়ে খেয়ে নিচ্ছে। আমার ছেলেটাও ওর সাথে সুখী না। আমার ছেলেটাকে কি পরিমাণ মানসিক টর্চার করেছে তা বলার বাইরে।”

দৃঢ়তা শক্ত কন্ঠে বলে,
“এসব আপনাদের পারিবারিক ব্যাপার-আপনারাই সামলে নিন। আমাকে এসব কেন বলছেন?”

ললিতা চৌধুরী অপমান বোধ করেন। তবুও শান্ত থেকে বলেন,
“আমি জানি তুমি ভীষণ রেগে যাচ্ছ। আর তোমার রাগ করাটাই স্বাভাবিক কিন্তু…”

“ভুল ভাবছেন আপনি। আমি রাগ করছি না। যা সত্য তাই বলছি৷ আপনি বোধহয় এখানে আমাকে আপনাদের পারিবারিক কেচ্ছা শোনাতে এসেছেন কিন্তু আমি সেসব শুনতে আগ্রহী নই সো এক্সকিউজ মি।”

“আমি জানি, তোমার সাথে আমি, আমরা সবাই অনেক অন্যায় করেছি। কিন্তু আমার ছেলে..জাবির ও সত্যি তোমায় ভালোবাসে। তাই আমি তোমার কাছে অনুরোধ করছি তুমি দয়া করে ফিরে চলো আমাদের বাড়িতে।আমরা সবাই তোমাকে বাড়ির বউয়ের মর্যাদা দিয়ে ঘরে তুলব।”

“না। ঐ বাড়িতে আমি আর ফিরবো না। আর না তো আমার আপনাদের দেয়া বউয়ের মর্যাদার প্রয়োজন। আমি এখন যেমন আছি তেমনি ভালো আছি। ঐ বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার সময়েই আমি শপথ নিয়েছিলাম যে আর জীবনেও ঐ বাড়ির চৌকাঠ মারাব না। আমার সেই কথা আমি রাখবো।”

বলেই দৃঢ়তা চলে আসতে নেয়। এমন সময় হঠাৎ করে ললিতা চৌধুরী তার পায়ের কাছে বসে পড়ে বলে,
“আমি তোমায় পায়ে পড়ছি..”

দৃঢ়তার মন হঠাৎ নরম হয় ললিতা চৌধুরীর এই আচরণে। সে ললিতা চৌধুরীকে পা থেকে টেনে তুলে বলে,
“ছি ছি! এসব কি করছেন আপনি। আপনি আমার গুরুজন। এভাবে পায়ে হাত দিচ্ছেন কেন?”

“আমার কথাটা রাখো দৃঢ়তা মা। তোমার সাথে যা যা অন্যায় হয়েছে তা তো আমি বদলাতে পারব না কিন্তু..”

এমন সময় ললিতা চৌধুরীর ফোন বেজে ওঠে। জাবির ফোন করেছে। ললিতা চৌধুরী ফোনটা রিসিভ করতেই জাবির বলে ওঠে,
“তুমি দৃঢ়তার সাথে কথা বলেছ আম্মু? ও ফিরবে তো আবার?”

“হ্যাঁ..মানে.. ”

“ওহ বুঝতে পেরেছি। ও রাজি হয়নি তাই না? আম্মু তুমি শুধু ওকে একবার হাসপাতালে আসতে বলো। আমি ওর সাথে শুধু একবার মুখোমুখি হয়ে কথা বলতে চাই। ওকে বলো, এরপর আর কখনো ওর মুখোমুখি হবো না।”

ললিতা চৌধুরী ফোনটা রেখে আবারো দৃঢ়তার পায়ের কাছে বসতে যায় তখন দৃঢ়তা তাকে আটকে বলে,
“আন্টি প্লিজ..এবার আমার খারাপ লাগছে।”

“জাবির শুধু একবার তোমার সাথে দেখা করতে চায়। তুমি একটু চলো প্লিজ…”

এমন সময় মিষ্টিও সেখানে চলে আসে। দৃঢ়তা বলে,
“বেশ, চলুন। আমি যাচ্ছি।”

মিষ্টি দৃঢ়তাকে বলে,
“তুমি যা সিদ্ধান্ত নিচ্ছ ভেবেচিন্তে নিচ্ছ তো দৃঢ়তা? এনাদের অতীতের করা কর্মগুলোর পরেও তুমি এনাদের বিশ্বাস করতে চাও?”

দৃঢ়তা বলে,
“আপু আমার মনে হচ্ছে ওনারা যথেষ্ট অনুতপ্ত। আর তাছাড়া, উনি তো বেশি কিছু চাইছেন না শুধু এটাই চাইছেন যে আমি যেন হাসপাতালে গিয়ে মিস্টার জাবির চৌধুরীর সাথে একবার কথা বলি। এটা কোন কঠিন ব্যাপার না, আমার জন্য। আমি বরং গিয়ে কথা বলে আসি।”

বলেই দৃঢ়তা রওনা দেয় ললিতা চৌধুরীর সাথে। মিষ্টি ভাবে,
“দৃঢ়তা এটা কি করলো? না জানি এনারা আবার হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে কিভাবে ওর ব্রেনওয়াশ করে। আমাকে কিছু করতে হবে।”

মিষ্টি এবার নিজের ফোন বের করে ইউভানের নাম্বারে একটা কল করে। ইউভান ফোনটা রিসিভ করতেই তাকে সব ঘটনা খুলে বলে। সব শুনে ইউভান বলে,
“ঠিক আছে, চিন্তা করবেন না আপু। আমি দেখছি কি করা যায়।”

★★
মোহনা জাবিরকে তার খাবার ওষুধগুলো দিতে এসেছে। এদিকে জাবির মোহনাকে দেখেই রাগী স্বরে বলে ওঠে,
“আপনি কি করছেন এখানে? আপনাকে আমি বলেছি না আমার ত্রীসীমানায় না আসতে।”

মোহনা বলে,
“দেখুন, আমি নিজের ইচ্ছায় আসিনি। আপনার এই ওষুধ গুলো দিতেই আসা। এগুলো খেয়ে নিন।”

“খাব না। আপনার হাতে ওষুধ খাওয়া মানে বিষ খাওয়ার সমান। এসব ওষুধ নিয়ে দূর হন আমার সামনে থেকে।”

“এই যে শুনুন, একদম এসব ফালতু জেদ করবেন না। খেতে বলছি ভালোয় ভালোয় খেয়ে নিন। নাহলে কিভাবে খাওয়াতে হয় সেটা আমার জানা আছে।”

“খাবো না, দেখি আপনি কি করেন।”

মোহনার মাথায় জেদ চেপে যায়। সে জোরপূর্বক জাবিরের মুখে ওষুধ খাইয়ে দিতে যায় এমন সময় দৃঢ়তা ললিতা চৌধুরীর সাথে সেখানে চলে আসে এবং মোহনাকে এভাবে দেখে বলে ওঠে,
“কি করছেন কি এটা আপনি?”

মোহনা থেমে গিয়ে পিছন ফিরে তাকায়। দৃঢ়তাকে দেখে অবাক হয়৷ দৃঢ়তা বলে ওঠে,
“একজন অসুস্থ মানুষের সাথে কেউ এমন আচরণ করে? আপনার কি মিনিমাম সেন্সটুকুও নেই?”

ললিতা চৌধুরী এই সুযোগ বুঝে বলেন,
“তাহলেই বুঝতে পারছ তো দৃঢ়তা, এই মেয়েটা আমার অসুস্থ ছেলের সাথেই কেমন আচরণ করছে। তাহলে ও যখন সুস্থ ছিল তখন কিভাবে টর্চার কর‍ত আমার ছেলের উপর।”

মোহনা বলে ওঠে,
“আমি ওনাকে ওষুধ খাওয়াচ্ছিলাম উনি খেতে চাইছিল না আর তাই..”

দৃঢ়তা এগিয়ে গিয়ে বলে,
“এভাবে কেউ ওষুধ খাওয়ায়? ওষুধটা আমার হাতে দিন। আমি খাইয়ে দিচ্ছি।”

মোহনা কিছু বলতে যাবে তার আগেই জাবির বলে,
“হ্যাঁ, দৃঢ়তা। তুমি আমায় ওষুধ খাইয়ে দাও। তুমি না খাইয়ে দিলে আমি খাবো না। আর এখন আমি তোমাকে ছাড়া কাউকে ভরসাও করি না।”

মোহনা আর তাই কিছু বলল না। কারণ জাবিরের এখন ওষুধটা খাওয়া ভীষণ প্রয়োজন। দৃঢ়তাও অগত্যা জাবিরকে ওষুধটা খাইয়ে দিলো। দৃশ্যটা দেখে মোহনার ভীষণ খারাপ লাগলো। এদিকে ললিতা চৌধুরী মনে মনে বললেন,
“এই মোহনা এতদিন আমাদের অনেক জ্বালিয়েছে৷ এবার ওর জ্বলার পালা।”

দৃঢ়তা ওষুধটুকু খাইয়ে দিয়ে জাবিরের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“এখন আপনার যা বলার জলদি বলুন। আমাকে আবার ফিরতে হবে।”

জাবির দৃঢ়তার হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলে,
“ফিরবে মানে কি? কোথাও যাবে না তুমি। তোমাকে আমার সাথে ঢাকায় যেতে হবে।”

“এসব কি বলছেন আপনি? আমি আপনার সাথে কোথাও যাব না। হাতটা ছাড়ুন আমায়।”

“তোমায় যেতেই হবে নাহলে আমি..”

বলেই জাবির হসপিটাল বেডের সামনে থাকা একটা ধারালো কাচি হাতে তুলে নেয়৷ দৃঢ়তা বলে ওঠে,
“এটা কি করছেন! ফেলুন ওটা।”

“নাহ, তুমি আগে বলো আমার সাথে ঢাকায় ফিরবে। নাহলে কিন্তু আমি নিজেকে এবার সত্যি শেষ করে দেবো। আর তুমি জানো আমি কোন মজা করছি না। এর আগেও আমি বেলকনি থেকে ঝাঁপ দিয়েছিলাম তাই এবারো নিজেকে শেষ কর‍তে অসুবিধা হবে না।”

দৃঢ়তা কিছু বলছিল না। জাবির এবার কাচিটা দিয়ে হাতে সামান্য চাপ দিতেই রক্ত বের হতে শুরু করে যা দেখে দৃঢ়তা ভয়ে ভয়ে বলে ওঠে,
“আমি আপনার সাথে ঢাকা ফিরে যেতে রাজি আছি। প্লিজ নিজের আর কোন ক্ষতি করবেন না।”

ইউভান কেবিনের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল দৃঢ়তার বলা কথাটা শুনেই তার পা জোড়া থমকে গেল।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨