ওহে প্রিয় পর্ব-২৩+২৪

0
1935

#ওহে_প্রিয়
#জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_২৩
____________
বাড়িতে দু দন্ড শান্তি তে বসতে পারছেনা হ্যাভেন। সারাক্ষণ জ্বালিয়ে মারছে আহি। কানের কাছে সর্বক্ষণ প্রেমময় বাক্য আওড়াচ্ছে। কখনো বা বাচ্চা দের মতো কোলে চড়ার বায়না করছে। হুটহাট এসে কপালে,গালে,ঠোঁটে চুমু দিচ্ছে। হ্যাভেন বিরক্ত হয়ে চোখ রাঙালেই ঠোঁট উল্টিয়ে ন্যাকা কান্না করে বলছে, ‘আপনি এতো আনরোমান্টিক কেনো ‘? রেগে গিয়ে রোমান্টিকতা দেখানোর নাম করে বিধ্বস্ত করে ফেললে চোখের পানি ফেলে বলবে,’আপনি খুব অসভ্য, খুব খারাপ আপনি ‘। ঢং দেখিয়ে অভিমান করে থাকবে কিছুক্ষণ পরই আবার গলা জরিয়ে বলবে, ‘ একটু ভালোবাসা দিন না ‘। সোফায় বসে কাজ করলে গলা জরিয়ে কোলে বসে থাকবে। শুয়ে থাকলে জোর পূর্বক বুকে মাথা রেখে নিজেও শুয়ে পড়ছে। গভীররাতে স্বেচ্ছায় কাপড় খুলে নিজেকে উজার করে দিবে। এসব যেনো আর নেওয়া যাচ্ছে না। এতোদিন সে জ্বালিয়েছে এখন আহি জ্বালাচ্ছে। ভালোবাসা, ভালোবাসা করে মাথা খেয়ে ফেলছে। এই মেয়ে কি বুঝেনা স্বেচ্ছায় জান কবজ আর হবেনা। হঠাৎ করেই সব হিসেবে গড়মিল ধরে গেলো। যতো যাইহোক এবার ফাঁদে পা দেবে না সে। এসব কপটতা তাঁর সাথে আর চলবে না। আহির টর্চার গুলোতে বিরক্ত হয়ে ইদানীং বাড়িতে খুব কম সময় কাটায় হ্যাভেন। আগের মতো বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় বা বাড়িতে প্রবেশের সময় আহিকে নিজ থেকে চুমু দিতে হয় না। বরং আহি নিজেই বএিশটা দাঁত বের করে হিহি’হিহি করতে করতে কপাল এগিয়ে দেয়। একজন মানুষ আরেকজন মানুষ কে প্রতিনিয়ত টর্চার করার জন্য কিছু করলে সে কাজ গুলো যদি ঐ মানুষ টা একটা সময় এসে এনজয় করে, স্বেচ্ছায় করার জন্য সুযোগ করে দেয় তখন টর্চার উল্টোদিকের মানুষ টাই হয়। যেমনটা এখন হচ্ছে হ্যাভেন। বাড়ির সবাই হ্যাভেনের এমন জব্দ হওয়া দেখে কখনো হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খায়। কখনো বা ভয়ে নিরব থাকে। না জানি ক্রোধের বসে কখন কি কেলেঙ্কারি ঘটিয়ে ফেলে বিশ্বাস নেই।
.
হুমায়ুন তালুকদার ডক্টরের সাথে কথা বলেছেন। আগের প্রেসক্রিপশনও দেখিয়েছেন। সব কিছু দেখে নতুন করে ওষুধ পএ লিখে দিয়েছেন। আহিকেও ফোনে সবটা বুঝিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু বিপদ ঘটালো হ্যাভেন। তাঁর আড়ালে বড়সড় ষড়যন্ত্র চলছে তা আহির আচার-আচরণেই সন্দেহ করেছিলো। মনে হাজার সন্দেহ থাকলেও এতোদিন প্রকাশ করেনি। শুধু শেষটা দেখার অপেক্ষাতে ছিলো। অবশেষে দেখেও ফেললো। রাতে ঘুমানোর সময় আহি একগাদা ট্যাবলেট তাঁর সম্মুখে তুলে ধরলো। বললো,

-‘ এগুলো খেয়ে তারপর ঘুমাতে যান ‘।

ভ্রুযুগল কুঁচকে আহির মুখপানে তাকালো হ্যাভেন। তীক্ষ্ণ গলায় প্রশ্ন ছুঁড়লো,

-‘ এসব কিসের ওষুধ ‘?

এক ঢোক গিললো আহি। হাতে থাকা গ্লাসটা পাশের টেবিলে রেখে হ্যাভেনের মুখোমুখি হয়ে বসলো। হ্যাভেন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়েই আছে। সে দৃষ্টিতে নির্নিমেষ তাকিয়ে আহি বললো,

-‘ আমি বাবাকে বলেছিলাম আপনার যে একটা অসুখ রয়েছে সেটা সাড়িয়ে তুলতে চাই। তাই বাবা আমাকে সাহায্য করেছে। প্লিজ আপনি ওষুধ গুলো খেয়ে নিন। আপনার সব অসুখ সেড়ে যাবে। আমরা অনেক সুন্দর একটা জীবন উপভোগ করবো। আমাদের দাম্পত্য জীবনে কোন অসুখ থাকবেনা থাকবে শুধু সুখ ‘।

বলেই ওষুধ গুলো এগিয়ে দিতেই মাথা খারাপ হয়ে গেলো হ্যাভেনের৷”কতো বড় সাহস হলে এতোদূর যাওয়া যায়? এই মেয়ের বাড়াবাড়ি আজ কমাতেই হবে” ভেবেই একহাতে পিছন থেকে আহির এক হাত মুচড়ে ধরে ওষুধ গুলো কেড়ে নিলো এবং জোর করে আরেক হাতে আহির মুখেই ওষুধ গুলো ঢুকিয়ে মুখ চেপে ধরে দাঁত চেপে বলতে থাকলো,

-‘ আমার না তোর অসুখ কমাবো আজ সবগুলোই তিন সেকেন্ডে গিলবি গিল গিল। উহুম নো নড়নচড়ন একদম মাথা গরম করবিনা একদম চিবিয়ে খাবো আজ তোকে যদি এটা না গিলিস গিল বলছি গিল ‘ বলেই ঠোঁট কামড়ে ধমকে ওঠলো।

বেচারি ওষুধগুলো গিলতেও পারছেনা ফেলতেও পারছেনা৷ পানি ছাড়া শুকনো ট্যাবলেট গিলা সম্ভব নাকি? হাতে ব্যাথায় চোখ,মুখ রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে মেয়েটার৷ মুখ বন্ধ তারওপর ওষুধ গুলো জ্বিহ্বার লালায় গলতে শুরু করেছে। কি ভয়ংকর পরিস্থিতি! শরীরে ঘাম ছেড়ে দিয়েছে আহির। বদ্ধ ঘরে দুজন মানুষের ক্রমাগত ভারী নিঃশ্বাসের শব্দ ভয়ংকর নৈশব্দ্যের সৃষ্টি করেছে। প্রচন্ড গা গুলাতে শুরু করলো আহির। আর সহ্য করতে না পেরে ধস্তাধস্তি শুরু করে দিলো। হ্যাভেন মুখ থেকে হাত সড়িয়ে গলা চিপে ধরতে যাবে এমন সময় গা ভর্তি বমি করে দিলো আহি। ফর্সা মুখশ্রীর রক্তিম আভা, রক্তিম চোখ হ্যাভেনের সমস্ত ইন্দ্রিয় যেনো নাড়িয়ে দিলো। আহির দূর্বল শরীরটা নেতিয়ে পড়লো বিছানায়৷ সমস্ত রাগ নিভে গিয়ে চোখে,মুখে ভর করলো একরাশ মায়া। সেই মায়ার টানেই মাথায় হাত রেখে কয়েকবার নাম ধরে ডাকলো ‘আহি’। আহি চোখ বুজেই শুয়ে রইলো হ্যাভেনের দিকে ফিরেও তাকালো না। শুধু বিরবির করে বললো,

-‘ ছোবেন না আপনি আমায়। আপনি খুব খারাপ, খুব খারাপ আপনি ‘।

বমি হওয়া তে শরীর দূর্বল লাগছে বুঝলো হ্যাভেন তাই আর কিছু বললো না। শুধু বমির বিচ্ছিড়ি গন্ধে মুখোভঙ্গি বিকৃত করে ফেললো। নাক,মুখ কুঁচকে বিছানা ছেড়ে নামলো। কয়েক পা এগিয়ে আবার থেমে গেলো পিছন ঘুরে ভৎসনার সুরে বলে ওঠলো,

-‘ এই খরগোশের বাচ্চা তোর সাহস হয় কি করে আমাকে উল্টাপাল্টা ওষুধ খাওয়াতে আসার ‘?

উত্তর দিলো না আহি। উত্তর না পেয়ে গটগট পায়ে বাথরুম ঢুকে গেলো হ্যাভেন।

রোগি যদি চিকিৎসা নিতে না চায় আশেপাশের মানুষ শত চেষ্টা করেও লাভ হয়না৷ হ্যাভেনের চিকিৎসা করানোও সম্ভব হলোনা। আহিও মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো ‘ আমি আর আপনাকে ট্রিটমেন্টের জন্য জোর করবোনা হ্যাভেন এমন একটা দিন আসবে আপনি নিজ থেকেই নিজের ট্রিটমেন্ট করাবেন। সেই সাথে এখনকার করা ভুলের জন্যও অনুতাপ করবেন ‘।
.
ডিভোর্স পেপারে সাইন করেনি জিসান। তাই নিয়ে রূপসার মাথা প্রচন্ড গরম। জিসান ডিভোর্স পেপারে সাইন না করলে হ্যাভেনকে সেকেন্ড টাইম ফিরে পাওয়া জাষ্ট অসম্ভব। এ’কমাসে হ্যাভেনের সাথে যোগাযোগ রেখেছে সে। অসংখ্যবার ভালোবাসার দাবিও করেছে৷ কিন্তু প্রতুত্তরে হ্যাভেন শুধু মুচকি হেসেছে। আগের সেই হ্যাভেন আর এই হ্যাভেনকে একদম মেলাতে পারছেনা। রাতের সাথে যেমন দিনের কোন মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। তেমনি অতিতের চেনা পরিচিত হ্যাভেনের সাথে বর্তমানের হ্যাভেনের মিল পাওয়াও দুষ্কর। বর্তমান হ্যাভেন পুরোটাই যেনো রহস্যেঘেরা। যে মানুষ টার চোখের ভাষা একসময় অতিসহজেই পড়ে ফেলা যেতো আজ সেই মানুষ টার চোখের ভাষা পড়া তো দূরের কথা বোঝাও মষ্কিল। ভেবেছিলো হ্যাভেনকে ভুলিয়ে ভালিয়ে নিজের কাছে টেনে নেবে। একবার যদি খুব গভীরে যেতে পারে তাহলেই কেল্লাফতে। কনসিভ করে ফেলবে বাচ্চার জন্য হলেও বাঁধা পড়বে হ্যাভেন তাঁর কাছে। কিন্তু সে অবদি যেতেই পারছেনা। যতোবারই কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করেছে ততোবারই হ্যাভেন থামিয়ে দিয়েছে আর বলেছে, ‘ডিভোর্স না হওয়া অবদি তুমি জিসানের থালার ভাত আর অন্যের থালার ভাত আমি খাইনা’।
.
বেলকনিতে বসে কফি খাচ্ছে হ্যাভেন। মাঝে মাঝে আড়চোখে আহিকেও দেখছে। কালো রঙের সুতি শাড়ি পড়েছে আহি। ভরসন্ধ্যা বেলা কালো শাড়িতে খোলা চুলে মারাত্মক সৌন্দর্য ভর করেছে মেয়েটার ওপর। সচরাচর খোলা চুলে আহিকে দেখা যায় না। শুধু সকাল ছাড়া। সবসময় মাঝখানে সিঁথি করে খোঁপা করে রাখে।
অন্যান্য মেয়েদের মতো আহি ঘনকালো লম্বা চুলের অধিকারী নয়। বরং তাঁর চুলগুলো হালকা কোঁকড়ানো পিঠ অবদি। কাঁধ অবদি সোজা হলেও নিচের দিকে বেশ কোঁকড়ানো। চুলের কালারটাও ডিফারেন্ট হালকা বাদামি বর্ণের। অন্যান্য মেয়েদের মতো তাঁর কাজল কালো চোখ নেই বরং ডাবের পানির ন্যায় ঘোলাটে চোখ দুটোর মনি হালকা বাদামি বর্ণের। কফির মগে চুমুক দিচ্ছে আর আহির সারা অঙ্গে সন্তর্পণে চোখ বুলাচ্ছে হ্যাভেন। পৃথিবীতে কাজল কালো চোখের রমণীদের নিয়ে কবিরা অসংখ্য কবিতা বুনে গেছেন৷ আহির মতো ঘোলাটে চোখের রমণীদের জন্য কোন কবিতা কেনো বুনেনি কেউ? সে কি বুনে দেবে এক লাইন কবিতা?

-‘ কি ব্যাপার হা করে তাকিয়ে আছেন কেনো? মগটা দিন কফিতো শেষ’।

হাতে তুরি বাজিয়ে কথাটি বললো আহি৷ এতোটাই মগ্ন হয়ে দেখছিলো যে কখন আহি সম্মুখে এতো কাছে চলে এসেছে টেরই পায়নি। তাই খানিকটা চমকে ওঠলো। তা দেখে আহির ঠোঁটে দুষ্টু হাসি। আমতা আমতা করে কফির মগটা হাতে ধরিয়ে ওঠে দাঁড়ালো হ্যাভেন। আহি মগটা নিয়ে রুমে ফিরে গিয়ে আবার দ্রুত হ্যাভেনের সম্মুখে এসে দাঁড়ালো। ডানহাত বাড়িয়ে হ্যাভেনের বুকের বা’পাশে শক্ত করে চেপে ধরলো। হ্যাভেন ধমক দিতে গিয়েও দিতে পারলো না। বুকের ভিতর কেমন চিনচিনে ব্যাথা দিয়ে ওঠার পাশাপাশি শান্তি শান্তি অনুভব হলো। আহি হ্যাভেনের মুখপানে নির্নিমেষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে হাতটা বা’পাশে শক্ত করে চেপে ধরেই রইলো। এক ঢোক গিললো হ্যাভেন। তাঁর দৃষ্টিও আহির শুভ্র মুখশ্রী তে নিবদ্ধ । নিজেকে ধাতস্থ করে নিয়ে আহির হাতের ওপর নিজের হাত রেখে সড়াতে নিতেই আহি শীতল কন্ঠে বলে ওঠলো,

-‘ আপনারতো হার্টবিট দ্রুত চলছে হ্যাভেন ‘।

বিচলিত হয়ে গেলো হ্যাভেন। শতচেষ্টা করেও নিজের কাঠিন্য রূপের জাগরণ ঘটাতে পারলো না। আহি এক পা এগিয়ে অন্য হাত হ্যাভেনের কাঁধে রাখলো। এবার হ্যাভেন ঘামতে শুরু করলো৷ আহি একইভাবে তাকিয়ে বললো,

-‘ একি আপনি তো ঘামছেন এতো নার্ভাসনেস কেনো? আপনার মাঝে নব্য অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছে হ্যাভেন আপনি কি বুঝতে পারছেন? অনুভব করতে পারছেন’?

ফোন বেজে ওঠতেই দুজনই চমকে গেলো। চট করে আহির থেকে সড়ে গিয়ে পিছন ঘুরে প্যান্টের পকেট থেকে ফোন বের করলো। রিসিভ করার পূর্ব মূহুর্তেই আহি ফোনটা কেড়ে নিলো। আঙুল ওঠিয়ে বললো,

-‘ এই মেয়েকে আজ আমি দেখেই ছাড়বো ‘। বলেই রুমের দিকে পা বাড়িয়ে ফোন রিসিভ করতে নিবে তখনি হ্যাভেন পিছন থেকে হাত আঁটকে ধরে ক্রোধান্বিত স্বরে বললো,

-‘ ফোনটা দাও ‘।

আহি এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে রুমে গিয়ে ফোন রিসিভ করেই বললো,

-‘ এই বেহায়া মেয়ে তোর লজ্জা করেনা দিন নাই রাত নাই অন্যের জামাইকে বিরক্ত করিস থার্ডক্লাস মেয়ে কোথাকার। নোংরামি অন্য জায়গায় গিয়ে কর আমার বরের কাছে তোর কি ‘?

-‘ আহি ‘ ধমকে ওঠে এগিয়ে আসতেই আহি সড়ে গেলো। হ্যাভেন কাছে গিয়ে জোর পূর্বক ফোন নিতে চাইলেই দুজনের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়। না পেরে হ্যাভেন আহিকে টেনে বিছানায় ফেলে নিজের মধ্যে সম্পূর্ণভাবে আবদ্ধ করে ফেলে। নিজের দুপা দিয়ে আহির দুপা এবং একহাতে আহির দুটো হাত আঁটকে অন্যহাতে ফোন নিজের কানে দিয়ে হ্যালো বলে। আহি এবার চিৎকার শুরু করে দিয়েছে। প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয়ে হ্যাভেনের গালে সাজোড়ে এক কামড় দিলো। হ্যাভেন সেদিকে পাত্তা না দিয়ে রূপসাকে বললো,

-‘ এগারোটার দিকে আসছি ‘।

ফোন কাটতেই আহি আরো হিংস্র হয়ে কামড়াতে যেতেই হ্যাভেন ফোনটা বিছানার একপাশে ছুঁড়ে ফেলে বললো,

-‘ বড্ড বেশী বুঝো তুমি মিসেস. এবার এই বেশী বোঝার দাম দাও ‘ বলেই উন্মাদের মতো আহির শরীরে টর্চার করতে থাকলো। প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয়ে কাছে গেলেও ধীরে ধীরে দুজনই উন্মাদনায় মত্ত হলো। কিছুক্ষণ আগে কি হয়েছে তা যেনো কারোরই বোধগম্য নেই। অনেকটা সময় পর আহিকে ছাড়লো হ্যাভেন।

-‘ আপনি ওর কাছে যাবেন না হ্যাভেন। একটা মেয়ে কখনো তাঁর স্বামীর ভাগ কাউকে দিতে পারে না ‘। চোখ বুজে বিছানার চাদর খামচে ধরে হাঁপাতে হাঁপাতে বললো আহি।

চোখ বুজে নিশ্চুপ থাকলো হ্যাভেন৷ শুধু তাঁর নিঃশ্বাসের প্রবল অস্থিরতা বুঝতে পারলো আহি।

-‘ আপনি কেনো এমন করছেন? যে মেয়েটা আপনাকে একদম নিঃশ্বেষ করে দিয়েছে তাঁর ডাকে কেনো বার বার সাড়া দিচ্ছেন? যদি তাঁকে নিয়েই থাকবেন তাহলে আমাকে ছেড়ে দিন। আমি কোন চরিএহীনের সঙ্গে সংসার করতে চাইনা। স্বামীর ভালোবাসা নাই পেলাম তবুও চরিএবান হলে এও শান্তি ‘।

-‘ উফফ সুন্দরী বকবক করোনা তো ভীষণ ক্লান্ত আমি মেয়ে মানুষ সামলানো এত্তো কঠিন। বাঘিনী হতে গিয়েছিলেনা? মিউ মিউ করো কেনো এখন ‘?

-‘ কয়টা মেয়ে সামলিয়েছেন আপনি ‘?

প্রশ্নটি শুনে হো’হো করে হাসতে শুরু করলো হ্যাভেন। আহির জেলাসি আচরণ গুলো তাঁর মনে পৈশাচিক আনন্দ দেয়। হাসতে হাসতেই আবারো আহির অনেকটা কাছে চলে গেলো৷ দুহাতের আঙুলের ফাঁকে আঙুল ঢুকিয়ে শক্ত করে ধরে গলায় মুখ ডুবিয়ে উন্মুত্ত স্বরে বললো,

-‘ এগারোটার পর লাইভ দেখাবো তৈরী থেকো ‘।

কথাটি শোনামাএই চমকে গিয়ে হ্যাভেনের দুহাত শক্ত করে চেপে ধরে ভারী কন্ঠে বললো,

-‘ মানে ‘?

নাক ঘষতে ঘষতে হ্যাভেন উত্তর দিলো,

-‘ দেখলেই বুঝবে ‘।

দুচোখ উপচে পানি বেরিয়ে এলো আহির। কি দেখাবে হ্যাভেন? অসহনীয় কিছু নয় তো? বুকের ভিতরটা বড্ড অস্থির হয়ে ওঠলো। বুঝতে পেরে মুচকি হেসে আহির কানের লতিতে ওষ্ঠ ছুঁয়িয়ে ওঠে গেলো হ্যাভেন।

চলবে….

#ওহে_প্রিয়
#জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_২৪
__________
রাত ন’টায় দুজন বডিগার্ড নিয়ে বাড়ি থেকে বের হলো হ্যাভেন। ন’টা এিশের দিকে হ্যারি জিসানকে ম্যাসেজ করে একটি ঠিকানা পাঠিয়ে হিয়ার রুমে নক করলো৷ হিয়া হাই তুলতে তুলতে দরজা খুলে বললো,

-‘ একটু শান্তিতে ঘুমানোও যায় না এ বাড়িতে। কি হয়েছে ডিনারের সময় তো হয়নি ডাকাডাকি কিসের ‘?

হ্যারি হিয়ার মাথায় গাট্টা মেরে পাশ কাটিয়ে রুমের ভিতর ঢুকতে ঢুকতে বললো,

-‘ এ বাড়িতে শান্তিতে ঘুমানো যায় না যে বাড়িতে ঘুমানো যায় সে বাড়ি যা না যা নিষেধ কোথায়? সারাদিন গরুর মতো পড়ে পড়ে ঘুমাস আর বলস শান্তিতে ঘুমানো যায় না হ্যাবলা কোথাকার! ‘। বলেই হাতে থাকা শপিং ব্যাগটা বিছানার একপাশে রেখে গা এলিয়ে দিলো।

হিয়া ‘উফফ তুই হ্যাবলা’ বলে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে এগিয়ে এসে শপিং ব্যাগ দেখতেই বললো,

-‘ আল্লাহ ভাইয়ু গিফ্ট এনেছিস আমার জন্য ‘?

-‘ সারাক্ষণ গিফ্টের ধান্দা তাইনা? এটার ভিতর ইম্পরট্যান্ট একটা জিনিস রয়েছে। সব সেটিং করে ভাবি মা কে জলদি একটা আইডি ওপেন করে দিবি। ভাইয়ের সাথেও এড করে দিবি ক্লিয়ার ‘?

খুশিতে গদগদ হওয়া ভাবটা কমে গেলো হিয়ার। হ্যারির পাশে দু হাঁটু ভাঁজ করে বসে সন্দেহী মুখশ্রী তে ব্যাগের ভিতর ওঁকি দিলো। খানিকটা বিস্ময় নিয়ে বলে ওঠলো,

-‘ মোবাইল ফোন? আল্লাহ! এটা ভাবির ‘?

হ্যারি কাত হয়ে বোনের দিকে তাকালো। চোখে,মুখে রহস্যময় একটা ভাব ফুটিয়ে তুলে বললো,

-‘ হুম ভাইয়ের অর্ডারেই কেনা হয়েছে ‘।

-‘ হুট করে মোবাইল ফোন কাহিনী কি ব্রো ‘? ভ্রুযুগল উপর নিচ করে প্রশ্নটি করলো হিয়া।

-‘ কাহিনী পরে জানতে পারবি যা বলছি তাই কর আগে যা ভাবি মা’র রুমে যা ‘।

-‘ সিরিয়াসলি হজম করতে পারছিনা দাদান ভাবিকে ফোন তবুও পার্সোনাল ওহ মাই গড! ওহ মাই গড! বিলিভ করতেই কষ্ট হচ্ছে ‘।

-‘ তোকে বিলিভ করতে হবে না যা বলেছি জলদি কর ‘ বলেই এক লাফে ওঠে রুম ত্যাগ করলো হ্যারি। হিয়াও ফোন নিয়ে আহির রুমে চলে গেলো।
.
-‘ কি ব্যাপার সুন্দরী ভাবি জান রাত নটায় ভেজা চুলে পুরো ঘর জুরে শ্যাম্পুর ঘ্রাণ ছড়াচ্ছেন যে ‘?

তয়ালে দিয়ে চুলগুলো মুচড়িয়ে কাঁধের একপাশে নিয়ে হাত,পায়ে লোশন মাখছিলো আহি। হিয়ার করা প্রশ্নে পিছন না তাকিয়েই বললো,

-‘ বিয়ে করো আমার বরের মতো অসভ্য একটা বর জুটুক কপালে তারপর বুঝবে রাত নটা,দশটায়ও কেনো গোসল করা লাগে ‘।

খিলখিল করে হাসতে হাসতে বিছানার একপাশে বসলো হিয়া৷ আহিও তাঁর পাশে এসে বসলো। বললো,

-‘ এ সময় এ ঘরে কোন সমস্যা ‘?

হিয়া ঠোঁটে দুষ্টু হাসি একে বললো,

-‘ এ সময় না এলে তোমার এই রূপ যে দেখা হতো না ভাবি জান ‘।

হিয়ার দৃষ্টি অনুসরণ হতেই আহির পুরো মুখশ্রী লজ্জায় রক্তিম বর্ণ ধারণ করলো। শাড়ির আঁচল ভালোভাবে গায়ে টেনে আমতা আমতা করে বললো,

-‘ আর বলোনা আজকে দুজন বেশ মারামারি করেছি ‘।

-‘ তাই কে জিতলো ‘? বলেই ভ্রু নাচালো হিয়া।

-‘ ওমা ভারী দুষ্টু তো তুমি ক্ষেপাচ্ছো কেমন ‘।

হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা হিয়ার। আহির লজ্জায় মিইয়ে যাওয়া মুখশ্রী দেখে হাসিটা দমিয়ে বললো,

-‘ হয়েছে থাক আর লজ্জা পেতে হবে না এই দেখো দাদান তোমার জন্য কি পাঠিয়েছে ‘ বলেই ফোন এগিয়ে দিলো।

-‘ মোবাইল ফোন! ‘

– ‘ হুম আমিও প্রথম বেশ অবাক হয়েছিলাম হ্যারি ভাইয়া বললো দাদানের অর্ডারেই কেনা হয়েছে ‘।

-‘ এই ফোন আমি নেবো না৷ তোমার ভাইকে আমি হারে হারে চিনি নিশ্চয়ই এটার ভিতর যে সিমটা রয়েছে সেটা ট্র্যাক করা? এতো সাধু সে না যে আমার সুবিধার জন্য ফোন দেবে দিলে অনেক আগেই দিতো নিশ্চিয়ই কোন কাহিনী আছে এটার পিছনে ‘।

-‘ হুম তা তো আছেই হ্যারি ভাইয়া বললো দু’ঘন্টার মধ্যে সব করতে ‘।

চমকে ওঠলো আহি দ্রুত দৃষ্টি ফেললো দেয়াল ঘরিতে ন’টা চল্লিশ বাজে। এগারোটার দিকে কিছু একটা ঘটবে। তাহলে এজন্যই কি এই ফোনের ব্যবস্থা? উদ্বিগ্ন হয়ে বললো আহি,

-‘ ঠিকাছে ঠিকাছে ওনি যখন পাঠিয়েছে নিজের কাছে রাখি কি বলো ‘?

হিয়া সম্মতি জানিয়ে সব কিছু সেটিং করে আহিকেও সব কিছু বুঝিয়ে দিলো। দশটার দিকে বাড়িতে শশুর শাশড়ি ননদ ছাড়া কেউ ছিলোনা। তিনজনকে নিয়েই রাতের খাবার সেড়ে রুমে ফিরলো আহি। মনটা তাঁর বড্ড অস্থিরতায় ভুগছে। এর মধ্যে দুবার হ্যাভেনের নাম্বারে কলও করেছে। কিন্তু রিসিভ হয়নি। দুবার বেজে বেজে কেটে গেছে তৃতীয় বার বিজি দেখিয়েছে। বিরক্ত হয়ে আইডিতে ঢুকে হ্যাভেনের প্রোফাইল ঘাটাঘাটি করতে থাকলো। কয়েক সেকেন্ড অতিবাহিত হতেই হ্যারির আইডি থেকে একটি ম্যাসেজে এলো হিয়াই সবার সাথে আইডিটা এড করে দিয়েছে তখন। ম্যাসেজটি হলো,

-‘ ভাবি মা বিচলিত হবেন না। কিছুক্ষণের মধ্যেই লাইভ শুরু হবে আমি লিংক দিব খানিক বাদেই ‘।

হাত কাঁপতে শুরু করলো আহির। শুষ্ক গলায় রুদ্ধশ্বাস হয়ে ফোনের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে বসে রইলো।
.
শহড়ের ভিতরেই একটি ফ্ল্যাট বাসা ভাড়া করে থাকছে রূপসা। এ’কমাস হ্যাভেনকে অসংখ্যবার তাঁর বাসায় ইনভাইট করলেও আসেনি। সবসময় রাত দশটার পর রেষ্টুরেন্টে মিট করেছে। ফাইনালি আজ হ্যাভেন তাঁর বাসায় আসবে। সেই খুশিতে পুরো ঘরে গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে,ছিটিয়ে রেখেছে। গোলাপি রঙের পাতলা একটি শাড়ি পড়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে নিজেকে বেশ পরিপাটি করে সাজাচ্ছে। আর বার বার ফোন চেক করছে। সাজ শেষে বসা থেকে দাঁড়িয়ে পা থেকে মাথা অবদি নিজের দিকে নজর বুলিয়ে মুচকি হাসলো। পিছনের চুলগুলো কাঁধের এক পাশে ছড়িয়ে দিলো যাতে তাঁর ফর্সা,মসৃণ পিঠটা হ্যাভেনের চোখে পড়ে অতি সহজেই। কি নেই তাঁর চোখ ঝলসানো রূপ নজর কাড়া ফিগার, ভরা যৌবন সব আছে সব। ভাবতেই উচ্চস্বরে হেসে ওঠলো। সেসময়ই কলিং বেল বেজে ওঠলো। রূপসা চমকে গিয়ে দ্রুত নিজেকে আরেকবার আয়নাতে দেখে নিয়ে বুকের একপাশে আঁচল সড়িয়ে চোখে, মুখে আবেদনময়ী ভাব ফুটিয়ে তুলে এগিয়ে গেলো দরজার দিকে। দরজা খুলে অপরপাশের ব্যাক্তিটিকে দেখে দুপা পিছিয়ে গেলো। কিন্তু সে ব্যাক্তিটি পিছালো না বরং রক্তিম চোখ,মুখে এগিয়ে এসে হাতে থাকা রডটা দিয়ে এলোপাথাড়ি আঘাত করতে শুরু করলো রূপসার গায়ে। আর বলতে থাকলো,

-‘ শালীর ঘরের শালী আমার সাথে বাটপারি? এতোই খেলাধূলার শখ আয় আজ তোর শখ মেটাই ‘।

সে ভয়াবহ আঘাত সহ্য করতে না পেরে ‘ওমা গো’ বলেই এক চিৎকার দিয়ে মেঝেতে শুয়ে পড়লো রূপসা। আর বলতে থাকলো,

-‘ বাঁচাও কে আছো বাঁচাও আমায়। মেরে ফেললো আমায় বাঁচাও ‘ বলতে বলতে ফোন হাতে নিয়েই হ্যাভেনের নাম্বারে কল করলো ।

জিসান ক্ষিপ্ত হয়ে রূপসার চুলের মুঠী ধরে বিশ্রি গালিগালাজ করতে করতে আবারো মারতে শুরু করলো। এদিকে রূপসা চিৎকার করেই যাচ্ছে। একসময় জিসান ক্লান্ত হয়ে থেমে গিয়ে কাকে যেনো ফোন করলো। এই সুযোগে রূপসা হ্যাভেনকে লাগাতার ফোন করেই যাচ্ছে। হ্যাভেন ফোন রিসিভ করতেই রূপসা হাউমাউ করে কেঁদে দিয়ে বললো,

-‘ তুমি কোথায় হ্যাভেন জিসান আমাকে মেরে ফেললো প্লিজ বাঁচাও আমায় ‘।

বিকৃত আওয়াজে হো হো করে হাসতে লাগলো হ্যাভেন। চিৎকার করে বাজে ভাষায় গালি দিয়ে বললো,

-‘ তুই কি করে ভাবলিরে বেঈমানের বাচ্চা তোর সাথে আমি লুতুপুতু করতে যাবো? তোর সাথে আজ এ মূহুর্ত থেকে যা যা ঘটবে গতদিনে যা যা ঘটেছে সবটাই আমার প্ল্যানমাফিক। তোর মতো মা*র শরীরে এই হ্যাভেন থুথু ফেলতেও যাবেনা। কয়েক সেকেন্ডের ভিতরে দেখ ওখানে ঠিক কি কি ঘটে। নরক বানিয়ে দিব তোর জীবন আমি ‘।

-‘ না হ্যাভেন না তুমি আমার সাথে এটা করতে পারোনা৷ তুমি ভুলে গেছো আমাদের ভালোবাসার কথা? ভুলে গেছো আমাদের ভালোবাসাময় সেই দিনগুলোর কথা। কতো ভালোবাসা কতো প্রেম কতো স্মৃতি ‘? বলেই ডুঁকরে কেঁদে ওঠলো।

-‘বেঈমানরা বেঈমানী করার সময় যেমন কোন স্মৃতি মনে রাখেনা এই হ্যাভেনও বেঈমানদের কোন স্মৃতি মনে রাখেনা। তুই হলি বেঈমানের বাচ্চা’ বলেই ফোন কেটে দিলো৷

জিসান ফোনে কথা বলা শেষ করতেই রূপসার তল পেটের নিচে পরপর লাথি দিতে শুরু করলো। আর বললো,

-‘ খুব শখ না আজ তোর শখই মিটাবো আমি ‘।

সহ্য করতে না পেরে মেঝেতে গড়াগড়ি আর চিৎকার শুরু করে দিলো রূপসা। পাশের ফ্ল্যাটের লোকজন এসে ভীর জমিয়েছে ৷ পুলিশের গাড়ি সাংবাদিক সব এসে হাজির। পুলিশ এবং সাংবাদিক আসার পরই ক্ষ্যান্ত হয় জিসান। পুলিশকে দেখে রূপসা সাহায্য চায়। কিন্তু রূপসার বিরুদ্ধে আগেই প্রতারণার অভিযোগ করে ক্যাস করেছে জিসান। জিসানকে দিয়ে এসব করিয়েছে হ্যাভেন। যেহেতু হ্যাভেন একজন সংসদ সদস্য সেহেতু এসব নর্দমার ধারেকাছে আসা তাঁর পলিটিক্যাল জীবনে হুমকি স্বরূপ৷ তাই ঠান্ডা মাথায় আড়ালে থেকে অপরাধীর শাস্তির ব্যাবস্থা করেছে। কাঁটা দিয়েই আজ কাঁটা তুললো সে। আজ থেকে সাত বছর আগে যেভাবে হ্যাভেনের সঙ্গে প্রতারণা করেছিলো রূপসা আজ এতো বছর পরও একইভাবে জিসানের সঙ্গেও প্রতারণা করতে যাচ্ছিলো। সময় সব সময় এক পাক্ষিক কাজ করেনা। আজ সময় এসেছে উচিত শাস্তি পাওয়ার তাই প্রতারণার দায়ে বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৪২০ ধারা অনুযায়ী সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হলো রূপসাকে। প্রতিটি নিউজ চ্যানেল থেকে শুরু করে ভার্চুয়াল জগতেও ঘটনা টি ছড়িয়ে গেলো। লোকচক্ষু তে রূপসার স্থান আজ নরকের কীটের সমতুল্য। এই ঘটনাটি আমাদের সমাজের প্রতিটি ব্যাক্তির চোখেই আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো পাপ বাপকেও ছাড়েনা। বেঈমানদের এভাবেই হ্যানস্তা করতে হয়। সমাজের জঘন্যতম ঘৃণ্য নারীদের এভাবেই শাস্তি দিতে হয়৷ যাতে আর কেউ কারো সাথে প্রতারণা করার আগে অন্তত দুবার ভাবে।

পুরো ঘটনাটাই স্বচক্ষে দেখে ভয়ে শিউরে ওঠলো আহি। হাত,পা অনবরত কাঁপছে তাঁর। সে সময়ই ফোন বেজে ওঠলো কাঁপা হাতেই ফোন রিসিভ করলো আহি,

-‘ কি গো সুন্দরী ভয় পেয়েছো ‘? সুরেলা কন্ঠে বললো হ্যাভেন৷

-‘ আ’আপনি কোথায় ‘? কাঁপা গলায় প্রশ্ন করলো।

-‘ খুব বেশী ভয় পেয়েছো নাকি? আই লাইক ইট সুন্দরী। তোমার এই ভয়কে ভীষণ পছন্দ করি আমি।
ভালো করে দেখে নিয়েছো তো বেঈমানদের উপযুক্ত শাস্তি ঠিক কি ‘?

-‘ আপনি তাড়াতাড়ি বাসায় আসুন আমার শরীর খারাপ লাগছে প্লিজ এখুনি আসুন ‘।

আহির ভয় পাওয়ার কথা শুনেও দ্রুত বাড়ি ফিরলো না হ্যাভেন। তাঁর ফিরতে রাত প্রায় দু’টো বেজে গেলো। নেশা করে টলতে টলতে রুমে ঢুকলো সে। সবেই চোখটা লেগে গিয়েছিলো আহির। দরজায় শব্দ হওয়াতে চমকে ওঠে বসলো। হ্যাভেন একহাতে দরজা ধরে ঢুলুঢুলু শরীরে এগিয়ে টানা চোখে তাকিয়ে রইলো আহির দিকে। আহি দ্রুত বিছানা থেকে নেমে হ্যাভেনকে খুব শক্ত করে জরিয়ে ধরে বললো,

-‘ থ্যাংকিউ হ্যাভেন, থ্যাংকিউ সো মাচ’।

নেশাগ্রস্থ অবস্থায় হ্যাভেন সবসময় অন্য এক হ্যাভেন থাকে। না রাগ না ক্ষোপ না কোন হিংস্র আচরণ কোন কিছুই পরিলক্ষিত হয় না তাঁর মাঝে। যা হয় তা কেবল মুগ্ধই করে আহিকে। চোখ বুজে অন্ধভাবে সন্তর্পণে এই হ্যাভেনের প্রেমে পড়া যায় ।

হ্যাভেনও জরিয়ে ধরলো আহিকে। কানের কাছে মুখ ঠেঁকিয়ে উত্তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বললো,

-‘ নারীতে নারীতে এতো তফাত কেনো সুন্দরী? কেউ ভাঙে তো কেউ গড়ে। এই ভাঙা গড়ার মধ্যেখানে আমাদের মতো অবলা কিছু পুরুষ জাতি যে গভীর সংকটে থাকে ‘।

মুখ তুলে হ্যাভেনের মাতাল চোখের দিকে তাকালো আহি। ব্যাঙ্গ করে বললো,

-‘ উমহ কি আমার অবলা পুরুষ আসছে রে ‘।

মৃদু হাসলো হ্যাভেন। সেই হাসিতে আহির ভিতরটায় উথাল-পাতাল শুরু হয়ে গেলো। নির্নিমেষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

-‘ আপনার এই রূপ এই হাসি দীর্ঘস্থায়ী কেনো হয় না হ্যাভেন? আপনি কি জানেন আপনার এই মাতাল রূপে সেই শুরুতেই আঁটকে গেছি আমি ‘।

হ্যাভেন তাঁর সে চাহনী সে মোহময় বাক্যকে উপেক্ষা করে পাঁজা কোল করে নিয়ে বিছানায় ধপাস করে ফেলে দিলো। কোমড়ে বেশ লাগলো বলে ‘আহ ‘ করে ওঠলো আহি। সেই আর্তনাদ শুনে দাঁত কেলিয়ে হাসলো হ্যাভেন। আহি ক্ষেপে গিয়ে তাঁর বুকে কিল শুরু করে দিতেই সে হাত আঁটকে পাশে শুয়ে বুকে টেনে নিয়ে বললো,

-‘ ঘুমাও সুন্দরী ‘।

আহি পরম শান্তিতে বুকে মুখ গুজে বললো,

-‘ ভালোবাসেন আমায় ‘?

-‘ ভালোবাসলে ঠকতে হবে সুন্দরী দ্বিতীয় বার ঠকতে চাইনা ‘।

মনটা ভার করে হ্যাভেনকে জরিয়ে ধরেই শুয়ে রইলো আহি। বেশ অনেকটা সময় হ্যাভেন কি সব বির বির করে বলতে বলতে একসময় ঘুমিয়ে পড়লো। সে ঘুমাতেই আহি বললো,

-‘ খুব তাড়াতাড়ি সব ঠিক হয়ে যাবে হ্যাভেন। আপনার বুকের ভিতর প্রতিশোধের সমস্ত আগুন নিভে গেছে আজ। বুকের ভিতর তীব্র যন্ত্রণাটারও পরিসমাপ্তি ঘটেছে আজ। এখন শুধু আপনার শূন্যতা দূর করার পালা। ভালো যদি নাই বাসেন নেশার ঘোরে বুকে টেনে কেনো নেন? এই উত্তর কি দিতে পারবেন আপনি ‘? লম্বা এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে হ্যাভেনের বুকেই ঘুমিয়ে পড়লো সে।

.
পাখির কিচিরমিচির শব্দে চারিদিক মুখরিত। আহির ঘুমন্ত ভারী উত্তপ্ত নিঃশ্বাসগুলো হ্যাভেনের বুকের মধ্যেখানে গিয়ে ঠেকছে। ঘড়িতে সময় তখন কতো জানা নেই। আবছা দৃষ্টিতে তাকালো হ্যাভেন। আহির শরীরের উষ্ণতা অনুভব করতেই বেশ ভালোভাবে চোখ দুটো মেললো। আহির ঘুমন্ত নিষ্পাপ শুভ্রময় চেহেরাটা দেখে গতরাতের কথা মনে পড়ে গেলো। নিজের গায়ে থেকে আহির হাত সড়িয়ে ওঠে বসলো। মাথাটা বেশ ঝিমঝিম করছে তাঁর শাওয়ার না নিলে এই ঝিমঝিম ভাবটা ছাড়বেনা। তাই বিছানা ছাড়তে উদ্যত হতেই আহি তাঁর হাত টেনে ধরলো৷ ঘুমকাতুরে গলায় বললো,

-‘আরেকটু পর ওঠুন না ‘।

এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে দিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বললো,

-‘ ন্যাকামো হচ্ছে ন্যাকামো? এই বলেছিলাম দূরে সড়ে ঘুমাতে? সারারাত বুকে মাথা রেখে কে ঘুমাতে বলেছিলো আমি ‘? ধমকে ওঠলো হ্যাভেন।

আহি হাই তুলতে তুলতে শোয়া থেকে ওঠে বসলো। শাড়ির আঁচল বুকে টেনে মুখ ভেঙচি দিয়ে বললো,

-‘ উমহ ন্যাকা নেশা করে মাতাল হয়ে এসে জরাজরি করেতো আপনিই ঘুমালেন এখন সব দোষ হয়ে গেলো আমার ‘? বলেই হ্যাভেনের দিকে এগিয়ে গিয়ে গলা জরিয়ে ধরে ঠোঁট জোড়া চৌকা করে হ্যাভেনের ঠোঁট ছুঁই ছুঁই করে বললো,

-‘ একটুখানি চুমু খেয়ে সকালটা আমার চুমুময় করে দিন না ‘?

চোখদুটো বড় বড় হয়ে গেলো হ্যাভেনের। আবার শুরু হয়ে গেলো এই মেয়ের পাগলামি ভাবতেই এক ঢোক গিলে গলা থেকে হাতদুটো ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বললো,

-‘ চুপচাপ বিছানা ছাড়ো ‘।

-‘ উমহ না না চুমু খেয়ে সকালটা শুরু করতে চাই জান একটা চুমু দিন না ‘?

-‘ চুপপ। একদম চুপপ ফারদার এমন বেহায়ার মতো আচরণ করবে না আহি ভালোয় ভালোয় বলছি ‘। বলেই এক ঝটকায় ছাড়িয়ে বিছানা ছাড়লো হ্যাভেন।

আহিও চটপট বিছানা থেকে ওঠে হ্যাভেনের সম্মুখে দাঁড়িয়ে শার্টের কলার চেপে ধরে বললো,

-‘ আপনার মতো বড় মাপের অভিনেতা আমি দুটো দেখিনি। সারাক্ষণ বউয়ের শরীরে উন্মদের মতো মেতে থাকেন তখন সমস্যা হয়না আর বউ যদি ভালোবেসে স্বেচ্ছায় একটুখানি চুম্মা চায় তাই হয়ে যায় বেহায়া তাই না। চুমু দিন বলছি, দিন চুমু নয়তো আজ বিদ্রোহ চলবে। নারী পুরুষ সমান অধিকার শুধু নিজের ইচ্ছেতেই সব করবেন আমার ইচ্ছে তেও করতে হবে নিন চুমু খান ‘ বলেই গলা জরিয়ে আবারো ঠোঁট এগিয়ে দিলো।

চলবে..