ঔজ্জ্বল্যের আলোক প্রহর পর্ব-০৯

0
1

#ঔজ্জ্বল্যের_আলোক_প্রহর

#পর্বঃ৯

#লিখাঃতাসফিয়া_তাসনিম

শাহরিয়ার বসে আছে সোফায়। জায়গাটা জ্যোতিদের ড্রয়িং রুম। ঠিক তার মুখোমুখি সোফাটায় বসে আছে নওশাদ। দুজনই দুজনকে পরখ করছে নিজেদের আন্দাজে।

নওশাদ বলে উঠলো,

“আপনার সাথে প্রথমবারই দেখা হয়েছে, তাই না? আমি নওশাদ।”

শাহরিয়ার সরু চোখে তাকিয়ে বললো,

“আমি অবশ্য এর আগেও একবার আপনাকে দেখেছি, সেদিন…গেইটে!”

শেষ কথাটা একটু থেমে বললো সে।

নওশাদের মুখে কৌতুক ভর করলো শাহরিয়ারের কথায়।

“তা, কী হোন আপনি জ্যোতির?”

নওশাদ একটু থেমে থেকে বললো,

“কাজিন… ওর বড় খালার ছেলে।”

“ওহহ, তাহলে খালাতো ভাই!”

শাহরিয়ার মাথা দুলিয়ে বললো কথাটা।
নওশাদের মুখটা মূহুর্তেই থমথমে হয়ে গেলো। শাহরিয়ার সেটা গোপনে পর্যবেক্ষণ করে বেশ মজা পেলো।

জ্যোতিদের বাসায় মাহিরার জোরাজুরিতেই আসতে হয়েছে আজকে। তিনদিন আগে মাহিরা ফোন করে আবদার ধরেছে সে ভাবীর বাসায় কিছু আচার পাঠাতে চায়, শাহরিয়ার যেন অবশ্যই সেগুলো পৌঁছে দিয়ে আসে। সে তো প্রথমে একদমই রাজি হয়নি। কিন্তু মাহিরাও জিদ আঁকড়ে ধরেছিলো, জিনিসগুলো শাহরিয়ারকেই পৌঁছে দিতে হবে। অগত্যা প্রথমে মাহিরার বাসায় গিয়েছে জিনিসগুলো আনার জন্য, এই ফাঁকে বোন ভাগ্নের সাথেও দেখা হয়েছে। তারপর আজকে এসেছে জ্যোতিদের বাসায়। প্রথমে ভয়েই ছিলো আঙ্কেলের সামনে পড়ে কিনা। কিন্তু এইখানে আসার পর যখন জেনেছে হামজা সাহেব বাসায় নেই তখন একটু স্বস্তি বোধ করলো সে।
আপাতত ড্রয়িং রুমে বসে জ্যোতির জন্য অপেক্ষা করছে সে, জ্যোতি সম্ভবত শাওয়ার নিচ্ছে। রত্নাও তাকে ড্রয়িং রুমে বসতে দিয়ে কখন যে উধাও হয়েছে আর আসার নাম নেই। অগত্যা এই নওশাদকেই এখন চোখের সামনে সহ্য করতে হচ্ছে তার!

ভাবতে ভাবতেই রত্না এসে হাজির ট্রেতে করে চা নাস্তা নিয়ে।

“আরে আন্টি এসবের প্রয়োজন ছিলো না। আমি এসেছিই অল্পক্ষণের জন্য। জ্যোতির সাথে দেখা করেই চলে যাবো।”

রত্না ট্রে রাখতে রাখতে বললো,

“তা কী করে হয়? তুমি এসেছো আর আমি কোনো কিছু না খাইয়ে তোমাকে বিদায় দিবো তা আবার হয় নাকি? বসো, জ্যোতি আসবে কিছুক্ষণের মধ্যেই। ততক্ষণে চা নাস্তা করো। নওশাদ তুমিও নেও।”

বলেই নওশাদের পাশের সিঙ্গেল সোফাটায় বসলেন তিনি। নওশাদ তীর্যক দৃষ্টিতে খালা আর শাহরিয়ারের কথোপকথন দেখছিলো। এতো স্বাভাবিক? যেন কিছুই হয়নি! খালার চিন্তা চেতনা নওশাদের মাথায় ধরলো না একদমই।

শাহরিয়ার চা নিতে নিতে নওশাদকে জিজ্ঞেস করলো,

“তা কতদিন আছো এখানে?”

নওশাদও চায়ের কাপ হাতে তুলতে তুলতে বললো,

“শিওর না। আম্মু যতদিন থাকে।”

এরই মধ্যে চুলে গামছা প্যাঁচানো অবস্থায় জ্যোতি এলো সেখানে। শাহরিয়ারকে দেখে বিস্মিত হয়ে বললো,

“আপনি? এখানে?”

শাহরিয়ার জ্যোতির কন্ঠ শুনে ঘাড় কাত করে তাকালো। তৎক্ষনাৎ দাঁড়িয়ে হাসিহাসি মুখ করে বললো,

“হ্যাঁ, কী অবস্থা তোমার? তোমাকে দেখতে চলে এসেছি।”

জ্যোতি একে একে সবার মুখের দিকে তাকালো কপালে ভাঁজ ফেলে। তারপর কনফিউজড হয়ে বললো,

“আমাকে দেখতে এসেছেন?”

“তো আর কী?”

নওশাদের উপস্থিতিতে জ্যোতি নিজের মনোভাব চেপে বললো,

“ওহ আচ্ছা। খুশি হলাম।”

এর মধ্যে রত্না বললেন,

“তুই নিজের রুমে নিয়ে যা ওকে। তোরা কথা বল আলাদা ভাবে।”

“কোনো দরকার—”

“হ্যাঁ, সেটাই ভালো হয়। কী বলো?”

জ্যোতির মুখের কথা টেনে নিয়ে বললো শাহরিয়ার। জ্যোতি কড়া চোখে তাকালো লোকটার দিকে। চাইছে দৃষ্টি দিয়ে ভস্ম করে দিতে। কিন্তু মনের ইচ্ছা মনেই মাটি দিয়ে মেকি হেসে বললো,

“হ্যাঁ, চলুন!”

শাহরিয়ারকে নিয়ে নিজের কামরায় ঢুকে জ্যোতি দরজা আটকে ক্রুদ্ধ কন্ঠে বললো,

“আমি আপনাকে দেখে একদমই খুশি হয়নি! কেনো এসেছেন?”

শাহরিয়ার জ্যোতির রাগ দেখে কিঞ্চিৎ কৌতুক অনুভব করলো।

“সেদিন বলা হয়নি, তুমি কিন্তু একটু মুটিয়ে গেছো!”

নিজের ক্রোধের বিপরীতে এই প্রতিক্রিয়া একদমই আশা করেনি জ্যোতি। তাই অপ্রস্তুত হয়ে গেলো মূহুর্তেই।

“কীহ?”

শাহরিয়ারও পুনরায় বললো,

“বলেছি তুমি আগের থেকে একটু গলুমলু হয়েছো।”

জ্যোতি কড়া দৃষ্টি হেনে রুক্ষ স্বরে বললো,

“ফাজলামো করছেন আমার সাথে? আমি মোটা হই, চিকন হই আপনার কী? কী কারণে এসেছেন সেটা বলুন!”

“হয়েছে হয়েছে! এতো রাগের কিছু নেই। মাহিরা আচার পাঠিয়েছে তোমার জন্য। সেগুলো তোমাকে দেওয়ার জন্যই এসেছি। নয়তো আমার আসার দরকার ছিল না।”

জ্যোতির চেহারায় আবারও বিভ্রান্তি ভর করলো। কনফিউজড হয়ে বললো,

“আপনি আচার দিতে এসেছেন?”

“তো আর কী? কিন্তু তুমি তো পণ করেছো আমাকে দেখলেই ক্ষ্যাপা বাঘিনী হয়ে তেড়ে আসবে আমার উপর। এতো খারাপ লাগি আমি তোমার কাছে?”

জ্যোতি দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

“বিষাক্ত লাগেন আপনি আমার কাছে!”

জ্যোতির এই কথাতে শাহরিয়ারের চেহারা থেকে হাস্যোজ্জ্বল ভাবটা ধীরে ধীরে কেমন মিলিয়ে গেলো। কন্ঠনালী তার শুষ্ক অনুভব হলো ভীষণ।

“একটু পানি দিবে?”

জ্যোতি শীতল চোখে একবার তাকিয়ে টেবিল থেকে পানির বোতলটা নিয়ে বাড়িয়ে দিলো শাহরিয়ারের দিকে।

শাহরিয়ার দাঁড়িয়েই পানি খেতে নিলে বিরক্ত কন্ঠে বললো,

“দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পানি খেতে হয় না, জানেন না? এভাবে শয়তান পানি খায়!
অবশ্য আপনি নিজেই তো শয়তান!”
শেষ কথাটা বিড়বিড় করে বললো জ্যোতি।

জ্যোতির সাবধানবাণীতে সতর্ক হয়ে শাহরিয়ার বেডে বসে পড়লো, তারপর ঢকঢক করে পুরো এক লিটার পানির বেশঅর্ধেকটা পান করে ফেললো। জ্যোতি ভ্রু জোড়া বক্র করে বললো,

“আমার কথা শুনে এতো পিপাসা পেয়েছে আপনার?”

শাহরিয়ার বোতলের কর্ক আটকাতে আটকাতে বললো,

“পিপাসা তো ইদানীং অনেক কিছুরই পায়। কিন্তু তৃষ্ণা নিবারণের কোনো উপায় পাই না।”

“কে মানা করেছে?”

পরক্ষণে জ্যোতি নিজেই বিব্রতবোধ করলো। আরও কিছুটা সরে গেলো শাহরিয়ারের কাছ থেকে।

শাহরিয়ার সেটা দেখে মলিন হেসে বললো,

“ভয় পাচ্ছো নাকি আমাকে?”

“আপনি বনের বাঘ না ভাল্লুক যে ভয় পাবো?”

জ্যোতি কাঠকাঠ উত্তর দিলো। উত্তর শুনে শাহরিয়ার হাসলো একটু।

“আচ্ছা ছাড়ো। আমার যাওয়ার সময় হয়েছে।”

“তো আমি কি ধরে রেখেছি?”

শাহরিয়ার উঠে গিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো। জ্যোতি ঠিক তার একটু পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। দরজার লক খোলার মূহুর্তে শাহরিয়ারের মস্তিষ্কে হুট করেই কী যেন ভর করলো।

আচমকা তড়িৎ গতিতে পিছন ফিরে জ্যোতিকে নিজের বাহুডোরে বেঁধে ফেলে শক্ত করে একটা দীর্ঘ চুমু খেলো জ্যোতির পানপাতার মতোন ওষ্ঠজোড়ায়।
ঘটনার আকস্মিকতায় জ্যোতি পুরোই স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। যখন হুঁশ ফিরলো নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালালো, কিন্তু মুক্তি মিললো না শাহরিয়ারের শক্তসমর্থ বাহুবন্ধনী হতে।

বেশ কিছুক্ষণ পর শাহরিয়ার ছেড়ে দিলো জ্যোতিকে। জ্যোতি বিস্ফোরিত চোখে শাহরিয়ারকে দেখতে লাগলো অনবরত। একটু আগে এটা কী ছিলো!

শাহরিয়ার একটা দীর্ঘ দম নিয়ে বললো,

“স্যরি, বাট থ্যাংকস! আমার ভীষণ তেষ্টা পেয়েছিলো!”

শাহরিয়ার জ্যোতিকে একই অবস্থায় রেখে দরজা খুলে বেরিয়ে এলো। রত্নার থেকে বিদায় নিয়ে প্রফুল্লচিত্তে বেরিয়ে এলো জ্যোতিদের বাড়ি থেকে!

___________________°________________

জ্যোতি একেবারেই থম মেরে গিয়েছে। এই ঘটনার পর নিজের রুম থেকেও একবারের জন্যও বের হয়নি। সে যেন অনুভূতি শূন্য হয়ে গেছে এমন ভঙ্গিতে চুপচাপ বিছানায় শুয়ে আছে।

ভিতরে তার অজস্র স্মৃতি ডানা ঝাঁপটাচ্ছে। নিজের সংসারজীবনের বিভীষিকাময় দৃশ্য, জীবনসঙ্গিনীর অবহেলা, বাকি সদস্যদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য, সওওওব!
একজন নারী আর সব সইতে পারলেও অপমান এবং চরিত্রে দাগ, এ দুটো জিনিস সইতে পারে না। জ্যোতির সাথে এ দুটোই ঘটে গিয়েছে।
একটা মেয়ে যখন বিয়ে করে সম্পূর্ণ নতুন একটা পরিবেশে এবং জীবনে পদার্পণ করে, তখন বাকিদেরও দায়িত্ব থাকে তাকে মানিয়ে নিতে সাহায্য করা।
একটা মেয়ে নিজের চেনা সব ছেড়ে অচেনা একটা সংসার আপন করে নেওয়ার চেষ্টা নিশ্চয়ই চাট্টিখানি কথা নয়?
জ্যোতিও তো আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু তার সাথে আশেপাশের মানুষের ব্যবহার এতো জঘন্য ছিলো কেনো? তারাই তো জ্যোতিকে পছন্দ করে নিয়ে গিয়েছে। তবে প্রথম থেকেই তার মুখের উপর তাদের স্ট্যাটাস মিলে না এই তাচ্ছিল্য করার কী প্রয়োজন ছিলো? জ্যোতি একটা মানুষ ছিলো, কোনো অনুভূতি শূন্য কাঠের পুতুল নয়! তবে মানুষগুলো কেনো তাকে এতো তুচ্ছ তাচ্ছিল্য, অপমান, অবহেলা করতো?
সে তো সবগুলো মানুষকেই আপন করে নিতে চেয়েছিলো। তবে সেই মানুষগুলো কেনো তাকে বহিরাগতের মতো ট্রিট করলো?
শ্বশুরবাড়িতে আসার পরদিন থেকেই জ্যোতিকে কিচেনের সব দায়িত্ব ধরিয়ে দেওয়া হলো। কিছু বুঝিয়ে না দিয়েই ফারিয়া চলে গেলেন। জ্যোতি কষ্ট পেলেও কিছু মনে করেনি। নিজের অনুভূতি উড়িয়ে দিয়ে খুশি মনেই সেই দায়িত্ব নিয়েছিলো৷
কিন্তু সব থেকে কষ্ট পেয়েছিলো সেদিন যেদিন বাড়ির অন্য একজন সার্ভেন্টের কাছ থেকে জানতে পেরেছিলো জ্যোতি আসার আগেআগেই বাড়ির বাবুর্চিকে বিদায় করে দেওয়া হয়েছিলো। টুকটাক আরো ফাইফরমাশ খাটার জন্য আলাদা আরেকজন ছিলো। জ্যোতি আসার পর জ্যোতির সামনেই তাকে বিদায় করা হয়েছে। তার কাজগুলো করবার ভার পড়েছিলো জ্যোতির উপর।
এই বিষয়টা একটা মেয়ের জন্য কতটা অপমানজনক সেটা সে মেয়ে ছাড়া আর কেউ অনুভব করতে পারবে না।
নিজের সংসারের কাজ জ্যোতি খুশি মনেই করতো। কিন্তু শ্বাশুড়ি ননদের এমন আচরণে বারবার মনে হতো তারা একজন চাকরকে বিদায় করে আরেকজনকে এনেছে। আর তার সাথে রুক্ষ স্বরে কথা তো আছেই।
শাহরিয়ার যতক্ষণ বাসায় থাকতো হয় ল্যাপটপ নিয়ে বসে থাকতো, নয়তো বাড়ির বাকিদের সাথে আড্ডায় মেতে থাকতো জ্যোতিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে। জ্যোতিকে সময় দেওয়া বলতে কিছু যেন পৃথিবীতেই এক্সিস্ট করে না! জ্যোতির সাথে শাহরিয়ারের আচরণও ভালো ছিলো না। কথায় কথায় ধমকে উঠা, অযথা বিরক্ত হওয়া, এমনকি…..এমনকি সেদিনের চড়টাও! সব মনে আছে জ্যোতির। কিচ্ছু ভুলেনি সে। সেদিনের পর থেকে ফারিয়া এবং অরোরার আচরণেও পূর্বের থেকে তারতম্য এসেছে, আরও বাজে হয়েছে তাদের আচরণ। জ্যোতির জীবনের এরপরের দিনগুলো ছিলো আরও দূর্বিষহ!
জ্যোতি মনে প্রাণে বিশ্বাস করে মা-বোনকে শাহরিয়ারই প্রশ্রয় দিয়েছে। শাহরিয়ারের কারণেই তাদের স্পর্ধা এত বেড়েছিলো। স্বামী যদি মা, বোনের সামনে স্ত্রীর গায়ে হাত তুলে তাহলে এটা তো হওয়ারই কথা!

~~~~~~~~~

শাহরিয়ার শাওয়ার শেষে বের হয়ে নিজের কাপড় কাভার্ড থেকে বের করে দেখে সেটা প্রেস করা হয়নি। বিরক্ত হয়ে বিছানায় তাকিয়ে দেখে জ্যোতি শুয়ে আছে। ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললো,

“আমার স্যুট প্রেস করোনি কেনো?”

শাহরিয়ারের কথায় জ্যোতি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো কাভার্ডের পাশে স্যুট হাতে দাড়িয়ে থাকা শাহরিয়ারের দিকে।

ক্লান্ত কন্ঠে বললো,

“আপনি এটার কথা বলেননি তো!”

তীব্র হলো শাহরিয়ারের কন্ঠ,

“বলিনি তাই করে রাখবে না? এখনও তোমাকে সব বলে বলে করাতে হবে?”

জ্যোতি শোয়া ছেড়ে পেটে চেপে উঠে দাঁড়ালো। বুঝাই যাচ্ছে সে মাসিক অসুস্থতায় ভুগছে। শাহরিয়ারের কাছে এগিয়ে গিয়ে বললো,

“এতো রাগছেন কেনো? আমাকে দিন, আমি প্রেস করে দিচ্ছি।”

“আশ্চর্য! আমি রাগবো না? আজকে আমার কতো ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং ছিলো তুমি জানো? এখন স্যুট প্রেস করার মতোন বেহুদা সময় আছে আমার হাতে?”

“আচ্ছা, যে স্যুটটা প্রেস করা আছে সেটা পরে নিন, তাহলেই তো হয়।”

শাহরিয়ার ক্ষেপে বললো,

“বেয়াদব! তুমি বলবে আমাকে কী পরে যেতে হবে?”

ততক্ষণে শাহরিয়ারের চিৎকার চেচামেচিতে ঘরে ফারিয়া, মাহিরা এবং অরোরার উপস্থিতি ঘটেছে, দরজাটাও লক করা ছিলো না।

জ্যোতি সেদিকে চেয়ে সংকোচে বললো,

“এমন করছেন কেনো? সবাই দেখছে। আমি তো খারাপ কিছু বলিনি—-”

বলে শেষ করতে পারলো না জ্যোতি, তার আগেই শাহরিয়ারের শক্ত হাতের চড় এসে পড়লো জ্যোতির নরম গালে। জ্যোতি টলে পিছিয়ে গেলো তৎক্ষনাৎ।
ঘটনার আকস্মিকতায় জ্যোতি হতভম্ব। বাকিরাও হকচকিয়ে গিয়েছে। জ্যোতি অপলক চোখে স্তব্ধ হয়ে শাহরিয়ারের ক্রুদ্ধ চেহারায় তাকিয়ে আছে। রাগে লোকটার মুখের রগগুলোও দপদপ করছে।

“লতিফ! এই লতিফ! জলদি আমার এই স্যুটটা প্রেস করে দেও দুই মিনিটে! কুইক! নয়তো আজকে তোমার খবর আছে!”

স্যুট নিয়ে কামরা থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে চিৎকার করে বললো শাহরিয়ার।

ধপাস করে বিছানায় বলহীন হয়ে বসে পড়লো জ্যোতি। লজ্জায়, অপমানে, বিস্ময়ে তার ইচ্ছে করছে মাটিতে মিশে যেতে।
ফারিয়া এবং অরোরা জ্যোতিকে কয়েক পলক দেখে শাহরিয়ারের পিছন পিছন ছুটলো। মাহিরা ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো দোরগোড়ায়। এখনও হতভম্ব সে।

~~~~~~~

জ্যোতি বাস্তবে ফিরে এলো। সেদিনের ঘটনা যতবার মনে পড়ে জ্যোতির গলায় যেন কান্না দলা পেকে যায়। নিজেকে সামলে নিতে ভীষণ বেগ পেতে হয় তাকে।
এরপর সেদিন শাহরিয়ার বাসায় ফিরে এসে ক্ষমা চেয়েছে অনেক, তার নাকি মেজাজ ঠিক ছিলো না। কিন্তু ক্ষতি যা হওয়ার তা তো হয়েই গিয়েছে। জ্যোতির মন থেকে তো এই ক্ষত আর কখনো ঠিক হবে না।
জ্যোতি নিজের চোখের পানি মুছে নিলো হাতের তালুতে।
শাহরিয়ার এখন জ্যোতির অনুপস্থিতি বুঝতে পারছে এটা সে বেশ বুঝতে পারছে। বুঝুক। কিন্তু তার দূর্বল হওয়া চলবে না। তাকে মুভ অন করতেই হবে। তার এমন কোনো মানুষের প্রয়োজন নেই যে কাছে থাকলে দূর দূর করবে এবং দূরে গেলে কাছে টানবে। প্রয়োজন নেই তার, কোনো প্রয়োজন নেই!

#চলবে……..