কন্ট্রাক্ট অফ ম্যারেজ পর্ব-১৭(বিয়ে-শেষাংশ)

0
899

#কন্ট্রাক্ট_অফ_ম্যারেজ
Sadia afrin nishi

“পর্ব-১৭(বিয়ে-শেষাংশ)”

গাঁ ভর্তি কাঁচা ফুলের গহনা পড়ে বসে আছে মৃধা। এখন তার হলুদ সন্ধ্যা। দুপুরে আয়ানের গায়ে ছোঁয়া হলুদ দিয়ে তাকে গোসল করানো হয়েছে। এখন সন্ধ্যা বেলা আবার অনুষ্ঠান করা হচ্ছে। মুর্তির ন্যায় বসে আছে মৃধা। আর সবাই এসে এসে তাকে ইচ্ছে মতো হলুদ লাগিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। মৃধার এসব প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে তবুও কিচ্ছু করার নেই।

এদিকে আহিবারও সেই একই অবস্থা কিন্তু আহিবা এসবে বিরক্ত না হয়ে লজ্জা পাচ্ছে। আশেপাশের অনেক কাকিমারা এসে তাকে হলুদ ছুঁইয়ে দিয়ে যাচ্ছে। তার এসবে বেশ ভালোই লাগছে। নতুন জীবনের সূচনা অধ্যায়গুলো একটু অন্যরকম হয় আহিবার ক্ষেত্রেও তার ব্যাতিক্রম নয়।

আয়ান আর আদ্র তারা তো রীতিমতো হলুদ সন্ধ্যা শেষ করে এখন বিন্দাস মনে ফ্রেন্ড’দের সঙ্গে ব্যাচেলর পার্টি করছে।

—————————

পার্লার থেকে কনের সাজে বেড়িয়ে এলো মৃধা। এখন সবার সঙ্গে তাকে যেতে হবে ইউনাইটেড ক্লাবে।সেখানেই তাদের বিয়েটা সম্পন্ন হবে। আফরোজ চৌধুরী কনেকে নেওয়ার জন্য গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন। পার্লার থেকে বেড়িয়ে যখনই মৃধা গাড়িতে উঠতে যাবে ঠিক তখনই তার সামনে উপস্থিত হয় নয়ন। মৃধা বেশ অবাক হয়। নয়নকে কেমন জানি অন্যরকম দেখাচ্ছে। অনেকটা পাগলের মতো। মৃধার ভাবনার মধ্যে নয়ন বলল,

–‘ মৃধা প্লিজ একটু দাড়াও। তোমার সঙ্গে অনেক জরুরি কথা আছে।’

মৃধা আতঙ্কিত হয়ে বলল,
–‘ কী হয়েছে নয়ন ভাই কোনো সমস্যা? ‘

–‘ হ্যাঁ মস্ত বড় সমস্যা মৃধা?’

–কী সমস্যা বলুন না তাড়াতাড়ি?

–‘মৃধা আমি তোমাকে প্রচন্ড ভালবাসি। জানি এই মুহুর্তে এসব কথা বলাটা যদিও আমার ঠিক হচ্ছে না তবুও আমি নিরুপায়। অনেক চেষ্টা করেও মনকে বোঝাতে না পেরে শেষমেশ বাধ্য হয়ে তোমার কাছে ছুটে এসেছি।’

মৃধার রাগ হলো ভীষণ। সে ক্ষিপ্ত কন্ঠে বলল,

–‘এসব আপনি কী বলছেন নয়ন ভাই। এখুনি এখান থেকে চলে যান। আমার হাতে একদম সময় নেই। ওদিকে সবাই ওয়েট করছে আমার জন্য। ‘

এতটুকু বলে মৃধা চলে যাচ্ছিল ঠিক তখনই নয়ন পেছন থেকে মৃধার হাত টেনে ধরে। মৃধা ততক্ষণাৎ পেছন ফিরে তাকায়। নয়নের হাতে নিজের হাত আবদ্ধ দেখে প্রচন্ড রেগে যায় সে। নয়ন করুণ চোখে চেয়ে আছে মৃধার দিকে কিন্তু মৃধার চোখে ক্রোধের আগুন। মৃধা এক ঝটকায় নয়নের থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিল। তারপর ক্রোধান্বিত কন্ঠে বলল,

–‘ খবর্দার বলছি এমন সাহস আর ভুলেও দেখাবেন না। নয়তো খুব খারাপ হয়ে যাবে। ত্যাগেই প্রকৃত ভালবাসা প্রকাশ পায়, জোর করে জাহির করে নয়। আপনি যদি আমাকে সত্যিই ভালবেসে থাকেন তবে আমাকে আমার মতো সুখে থাকতে দিন।’

মৃধা নয়ন দুজনেই চুপ। মৃধা নয়নকে আর একবার ঘৃণ্যত দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করে দ্রুত গাড়িতে উঠে চলে গেল। নয়ন এখানো সেভাবেই দাড়িয়ে।

মৃধার গাড়ি অদৃশ্য হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আড়াল থেকে কেউ একজন বেড়িয়ে এলো। আগন্তুক ব্যক্তিটি এসে দাড়াল নয়নের সামনে। নয়ন তাকে দেখে বিজয়ের হাসি হাসল। সেও নয়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হাসল। নয়ন বলল,

–‘কাজ হয়েছে?’

আগন্তুক বলল,
-‘ ইয়েস’

————————–

ক্লাবে এসে মৃধা আর আহিবা দুজনেই অবাক। তাদের অবাকতা দুর করে আফরোজ চৌধুরী তাদের সব ঘটনা খুলে বলে দিল। সবকিছু শোনার পর দুই বান্ধবীর খুশি আর দেখে কে। মৃধা তো খুশিতে নিজের নানাভাইকে জড়িয়ে ধরে ধন্যবাদ জানাল। আর আহিবাও তাদের সঙ্গে যোগ দিল। সবকিছু ঠিক ঠাক চলছে। কাজীও এসে অলরেডি আদ্র – আহিবার বিয়ে পড়ানো শুরু করে দিয়েছে। আয়ান তো সেই খুশি। আজ সে মৃধাকে তার মনের সমস্ত লুকায়িত অনুভূতির ব্যাখ্যা দিবে। কীভাবে কী করে মৃধাকে প্রপোজ করবে এগুলোই ভাবছে সে এখন। তার ভাবনার ব্যাঘাত ঘটে ফোনের রিংটোনের আওয়াজে। আয়ান অনিচ্ছা সত্ত্বেও ফোনের স্কিনে চোখ বুলায়। একটা আননোন নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে। আয়ান মেসেজ টা সিন করল। মেসেজের সঙ্গে একটা ভিডিও। মেসেজ আর ভিডিও ক্লিপ টা দেখার সঙ্গে সঙ্গে মুহূর্তের মধ্যে থমকে গেল আয়ানের পৃথিবী। মনের মধ্যে মৃধাকে ঘিরে থাকা সমস্ত অনুভূতি জলাঞ্জলি দিল এক নিমেষে। আয়ানের ঠিক পাশের চেয়ারে বসে ছিল মৃধা। আয়ান সেদিকে তাকালো। মনে মনে ভাবল,

–‘ এটাই বুঝে তোমার আমাকে বিয়ে করতে রাজি না হওয়ার একমাত্র কারণ? বেশ তবে তাই হোক। হবে না বিয়ে আমাদের। তুমি তোমার মতো সুখে থেকো। আমি না হয় দুর থেকে ভালবেসে যাবো।’

মনের কথা থেকে গেল মনে। এসব অভিমানের ভাষা আর মৃধার পড়া হলো না। মৃধার সামনে যেটা উন্মোচিত হলো সেটা হলো আয়ানের ক্রোধ। সকলের সামনে দিয়ে আয়ান মৃধার এক হাত শক্ত করে চেপে ধরে নিয়ে যেতে লাগল একটা জনমানবহীন কামড়ায়। পেছন থেকে সবাই অনেক ডাকল। সবাইকে আয়ান বলল, তারা এখুনি চলে আসবে কিছু কথা বলে। সকলে জানে আয়ান কেমন নাছোড়বান্দা তাই আর কেউ আটকালো না।

একটা ফাঁকা ঘরে মৃধাকে এনে ছুড়ে মে’রে ফেলে দিল আয়ান। মৃধা আয়ানের এমন ব্যবহারে বিস্মিত। সে আশ্চর্য হয়ে চেয়ে আছে আয়ানের দিকে। মৃধা কিছু বলতে নিবে ঠিক তখনই আয়ান বলল,

–‘ আমি এই বিয়েটা করতে চাই না।’

মৃধা হতভম্ব আয়ানের কথায়। বিয়ের আগমুহূর্তে এমন হেয়ালি করার মানে কী? মৃধা কপট রাগ দেখিয়ে বলল,

–‘ এসব আপনি কী বলছেন। এখন বিয়েটা ভেঙে দিলে নানাভাই, মা তাদের কী অবস্থা হবে ভাবতে পারছেন? আমি তো আপনাকে আগেই বলেছিলাম তাহলে তখন কেন রাজি ছিলেন আপনি? আর এখন কেনই বা এসব কথা বলছেন?’

আয়ান দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
–‘ আমি তোমাকে কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নই। তোমাকে বিয়ে করতে রাজি হওয়াটা ছিল আমার জীবনের সবথেকে বড় ভুল। আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম যে,”বনের পাখিকে মনের খাঁচায় পোড়াটা কতটা দুঃসাধ্য।” যাক গে এসব কথা বাদ। ডিসিশন ফাইনাল এই বিয়ে ক্যান্সেল।

মৃধা আয়ানের এসব হেয়ালিতে পাত্তা না দিয়ে সোজা দরজার কাছে চলে গেল। তারপর পেছন ফিরে বলল,

–‘ আমি যাচ্ছি আপনিও আসুন। এসব চিন্তা মাথা থেকে বাদ দিয়ে বিয়ের আসরে চলুন। সবাই ওয়েট করছে।’

আয়ান তখন বলল,
–‘ সামলাতে পারবে তো?’

— কী?

— ‘ এই যে, বিয়ের পর তোমার সঙ্গে ঠিক কী কী হবে তাই?’

মৃধা বলল,
–‘ ইনশাল্লাহ, আল্লাহ যেটা আমার কপালে লিখেছেন সেটাই হবে।আর বেশি কিছু ভাববার প্রয়োজন নেই। ‘

–‘ ওকে এ্যাজ ইউর উইশ। তাহলে চলো।’

তারপর দুজনেই চলে গেল বিয়ের আসরে। অগত্যা আয়ানের অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিয়েটা হয়ে গেল।

————————-

ঠাস করে দরজা বন্ধ করার শব্দে চমকে উঠল মৃধা। চোখ তুলে সামনে তাকাতেই চোখাচোখি হলো চারটি চোখ। তৎক্ষণাত আয়ানের রক্তিম ভয়ংকর দৃষ্টির স্বীকার হতে হলো মৃধাকে।মৃধা একটা ফাঁকা ঢোক গিলে চোখ নামিয়ে ফেলল।ওই চোখে বেশিক্ষণ দৃষ্টি অব্যাহত রাখার দুঃসাহস তার নেই। মৃধা মনে মনে ভীষণ ভয় পেয়ে আছে।দু’হাতে শাড়ি খামচে ধরে বসে আছে । আয়ান চৌধুরীর মতের বিরুদ্ধে গিয়ে তাকে বিয়ে করাটা খুব একটা সুবিধাজনক ব্যাপার নয়। দাদুর কথায় বিয়েটা তো করে নিল কিন্তু এখন তার কী হবে। বাসর রাতে স্বামীর সোহাগের বদলে শাস্তি অপেক্ষা করছে না তো তারজন্য? গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসছে মৃধার।আয়ান দরজা থেকে সরে ধীরে ধীরে মৃধার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আয়ান যত এগোচ্ছে মৃধার ভয় তত বাড়ছে।বর্তমানে আয়ান মৃধার একদম সামনে দাড়িয়ে আছে। তার দৃষ্টিতে রক্তিম আভা বিদ্যমান। মৃধা কী করবে কিচ্ছু বুঝতে পারছে না। শুধু এদিক ওদিক চোখ ঘোরাচ্ছে। হঠাৎ গায়ে কিছুর স্পর্শ পেয়ে মৃধা নিজের কাঁধে,মাথায় দৃষ্টি দিল। দেখলো কিছু কাগজ উড়ে পড়ছে তার গায়ের ওপর। মৃধা আয়ানের দিকে প্রশ্নত্বক দৃষ্টি স্থাপন করে বলল,

-এগুলো কীসের পেপারস?

আয়ান একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বলল,

-কন্ট্রাক্ট পেপারস

চলবে,