#কন্ট্রাক্ট_অফ_ম্যারেজ
Sadia afrin nishi
— পর্বঃ৩০(অন্তিম পর্ব)
___________________
সকাল টা বেশ বিষন্নতায় পরিপূর্ণ। মুগ্ধর জীবনে
আজ একটি বিশেষ দিন। তবুও তার মনে কোনো ভালো লাগা বা খারাপ লাগার বহিঃপ্রকাশ নেই। সে রয়েছে একেবারে নিরবে, নিভৃতে। তার মলিন মুখশ্রী জানান দিচ্ছে সে এই বিয়েতে রাজি নয়, কিছুতেই রাজি নয়, একদমই রাজি নয়। তবু তাকে বিয়েটা করতে হচ্ছে সকলের মুখের দিকে তাকিয়ে। ভালবাসার জন্য সে তার মা, বোনকে কখনোই কষ্ট দিতে পারবে না। মৃধার কথা রাখতেই সে এই বিয়েতে মত দিয়েছে।
___
রাত এগোরা টার দিকে বউ নিয়ে চৌধুরী বাড়িতে প্রবেশ করে মুগ্ধ। মৃধার বিয়ে যে ক্লাবে হয়েছিল মুগ্ধর বিয়েটাও ওখানেই হয়েছে। এখন পর্যন্ত নববধূর মুখ দর্শন করেনি সে।দেখার কোনো ইচ্ছেও নেই তার। কবুল বলার সময়ও কোনো দিকে হুশ ছিল না। তাই নিজের স্ত্রীর নামটাও শুনেনি খেয়াল করে। বাড়িতে ঢুকতেই সকলে নববধূকে তাড়াহুড়ো করে উপরে নিয়ে চলে গেল। তার কিছুক্ষণ পরেই মুগ্ধকে সবাই জোড়াজুড়ি করে ঘরে গিয়ে ঢুকিয়ে দিয়ে আসল। আজ নাকি তার বাসর রাত। বিছানার মধ্যিখানে গোল হয়ে বসে আছে তার সদ্য বিবাহিত স্ত্রী। মাথায় তার একহাত ঘোমটা টানা। বন্ধ দরজার এপাশে দুজন কপট-কপটি নিজেদের মনের যুদ্ধ সংবরণে ব্যস্ত।কে কীভাবে কী শুরু করবে তা কিছুই বুঝতে পারছে না। নিরবতায় পাড় হলো অনেকক্ষণ। অতঃপর নিরবতা ভেঙে মুগ্ধর কাঠ কাঠ উত্তর,
“বিয়ে যখন করেছেন আমায় তখন নিশ্চয়ই আমার সম্পর্কে সবকিছু জেনে শুনেই করেছেন।আমি জানি আমার পরিবার কোনো কিছুই গোপন রাখেনি। আমি একজনকে ভালবাসি। ভীষণ ভালবাসি। তাকে ছাড়া কাউকে এই হৃদয়ে জায়গা দিতে পারব না কোনোদিন। আপুনির কথা রাখতে বিয়েটা করেছি।সব জেনেও যখন বিয়েটা করেই নিয়েছেন তখন আমার আর কিছুই করার নেই। এখন থেকে আপনি আপনার মতো থাকবেন আর আমি আমার মতো।”
“তাই বুঝি এতো ভালবাসো নিজের প্রেমিকাকে?”
সুপরিচিত কন্ঠস্বর শুনে কেঁপে উঠল মুগ্ধর হৃদয়। খনেকের জন্য মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে গেল। মনে হচ্ছে সে একদম জমে আছে। বহু কষ্টে আঁখি জোড়া ভেড়াল সেদিক পানে। কাঙ্ক্ষিত মুখের সন্ধান পেতেই দিশেহারা হয়ে পড়ল । কাঁপা কাঁপা পায়ে ধীরুজ গতিতে অগ্রসর হলো প্রেয়সীর নিকটে। মৌ তখন অধীর আগ্রহ নিয়ে চেয়ে আছে মুগ্ধর পানে। কখন পাবে সে তার উত্তর। ধপ করে বিছানায় বসে পরল মুগ্ধ। কম্পিত হস্তে মৌ এর মুখ স্পর্শ করতে করতে তার উত্তর,
“হুম খুব বেশি ভালবাসি।”
মৌ এর চোখে জল ছলছল করছে। একটু পিসি নাড়তেই টুপ করে গাল বেয়ে পড়তে শুরু করবে। সে কম্পিত অধরে বলল,
“সত্যি”
ততক্ষণাৎ গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ল দু’ফোটা জল। মুগ্ধ কোমল হাতে মুছে নিল সেই জল। অতঃপর বুকে জড়িয়ে নিল তার প্রেয়সীকে। চোখ জোড়া বন্ধাবস্থায় প্রেয়সীর নিকট প্রশ্ন ছুড়ল,
“তুমি কেন চলে গিয়েছিলে আমাকে ফেলে?সেদিন যখন মুখ ফসকে বলে ফেলেছিলাম আমি চৌধুরী বাড়ির নাতি তুমি তখন আমাকে ঠক, প্রতারক বলে ফেলে চলে গিয়েছিলে। একটি বার পেছন ফিরে তাকালে বুঝতে পারতে কতটা অসহায় ছিলাম আমি। তোমাকে হারানোর ভয়ে সত্য লুকিয়ে গেছি শুরু থেকে কিন্তু ফলাফল সেই শূন্য। তুমি ঠিকই জেনে গেলে। শুধু শুধু ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হলো। আচ্ছা তুমি এখানে কীভাবে এলে?আপুনি তো বলেছিল তুমি নাকি এই বিয়েতে রাজি নও।তাহলে?”
“হুম আমি প্রথমে রাজি ছিলাম না ই তো। তারপর তোমার আপু আমাকে তোমাদের অতীত সম্পর্কে খুলে বলে। সবকিছু বিবেচনা করে আমার মনে হয়েছে তোমাকে মেনে নেওয়াই যায়।”
“তাহলে আগে কেন এটা কেউ আমাকে বলেনি?”
“তা আমি জানি না বাপু। এসব মৃধা আপুর প্ল্যান তোমাকে জব্দ করার জন্য। আমি শুধু সবাই যেমন বলেছে তেমন করেছি।”
“তাই না, তবে আমিও দেখছি আমার সঙ্গে চালাকির ফল কী হয়। আজ সব সুদে-আসলে উশুল করে নিব।”
অতঃপর শুরু হয়ে গেল মৌ এর ওপর মুগ্ধর প্রেমময়ী অত্যাচার।
___
আকাশটা বেশ সুন্দর, স্বচ্ছ। ঝকঝকে কাঁচের মতো। মনের সুখে ফুল গাছে পানি দিচ্ছে আহিবা। আর খনে খনে গতরাতের কথা মনে হতেই লজ্জায় লাল, নীল,বেগুনি রুপ ধারণ করছে। হঠাৎই পেছন হতে আদ্র এসে তার গলায় মুখ গুজে দিল। কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠল আহিবা। আদ্রের স্পর্শ আরও গাঢ় হলো। আহিবা যেন দম নিতে ভুলে গেছে। আদ্রের ঘুমন্ত কন্ঠ,
“এত সকালে কেউ ওঠে নাকি বউ। তারওপর তোমার এই শাওয়ার নেওয়া ফ্রেশ লুকে আমাকে পাগল করার ধান্দা তাই না?”
আহিবার কম্পিত কন্ঠ,
“ইসসস, ঢং কতো। লজ্জা করে না আপনার ছোট ভাইয়ের বাসর রাতে নিজের বাস…. ছি ছি”
আর বলতে পারল না আহিবা লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে তার।আহিবার কান্ড দেখে আদ্র মুচকি হেসে বলল,
“আমার আবার তোমার মতো এতো লজ্জা শরম নেই বউ।বলতে পারো আমি নির্লজ্জ তোমার প্রেমে।”
এবার যেন দিগুণ লজ্জা বেড়ে গেল আহিবার। লজ্জায় মুখ লুকালো গিয়ে আদ্রের বক্ষে।
___
ঝপাত করে এক বালতি পানি ছুড়ে দিল মৃধা আয়ানের গায়ে। ধড়ফড়িয়ে লাফিয়ে উঠল আয়ান। সামনে তাকাতেই বুঝতে পারল তার সঙ্গে কী হয়েছে। আয়ান রাগের বদলে উল্টো মেকি হাসি দিয়ে বিছানা থেকে নেমে দৌড় দিল ওয়াশরুম।কারণ মৃধা ভয়ংকর রেগে আছে। আজ মুগ্ধর রিসেপশন উপলক্ষে আয়ানকে মৃধা সকাল সকাল উঠতে বলেছিল। সেই সকাল থেকে মৃধা আয়ানকে ডেকেই যাচ্ছে তো ডেকেই যাচ্ছে কিন্তু আয়ান শুধু এটা ওটা বাহানা ধরে আবার শুয়ে পরছে। অতঃপর রেগে গিয়ে মৃধা এক বালতি পানি আয়ানের গায়ে চালান করে দেয়।
ওয়াশরুমের মিররে আয়ান নিজেকে দেখছে আর হাঁপাতে হাঁপাতে বলছে,
“বাব্বাহ শুরুতে ভেবেছিলাম বিল্লি কিন্তু এখন তো দেখছি সিংহী। আমার কপালে বহুত দুঃখ আছে।”
এরই মধ্যে বাহির থেকে মৃধার ক্রোধান্বিত কন্ঠ,
“তুই কী দ্রুত বের হবি নাকি আমি ডোর ভেঙে ভেতরে ঢুকে তোকে টেনে বের করব?”
ততক্ষণাৎ আয়ান আসছি বলেই ঝপঝপ করে শাওয়ার নিতে শুরু করে দিল।
পরিশিষ্ঠঃ
_______
আদ্রের ছেলে আদ্রিয়ান আর আয়ানের ছেলে আহিয়ান। দু ভাইয়ের মধ্যে বেশ মিল। আহিয়ান আদ্রিয়ানের থেকে তিন মাসের বড়। তবে দু’জনের ভ্রাতৃত্ববোধ তুখোর। দু’জনের বয়স এই দু বছর চলে।
মৌ বর্তমানে প্রেগন্যান্ট। কেবল চার মাস চলে। কিন্তু তার দুই ননদ-জা এখনই তার বেবিকে নিয়ে টানা হেঁচকা শুরু করে দিয়েছে। মৃধা বলে তো মৌ এর মেয়ের সঙ্গে তার ছেলের বিয়ে দেবে ওদিকে আহিবা বলে মৌ এর মেয়ের সঙ্গে তার ছেলের বিয়ে দেবে। এটা নিয়ে চৌধুরী বাড়িতে প্রায়শই হুলুস্থুল লেগেই আছে। ওদিকে মৌ এর ছেলে হবে নাকি মেয়ে এটাই এখনো অজানা। ওদের ঝগড়া থামাতে শেষমেশ মুগ্ধ এসে বলে,আল্লাহ চাইলে তাদের টুইন বেবি হবে। দু’জনের ছেলেকে দুটোকে দিয়ে দেবে। তবুও তারা যেন ঝগড়া না করে। এদের এসব দৈনন্দিন কার্যকলাপে হাসি ফুটে চৌধুরী বাড়ির সবার মুখে।
________________সমাপ্তি_________________