কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ অতঃপর প্রেম পর্ব-১৬+১৭

0
1

#কন্ট্রক্ট ম্যারেজ অতঃপর প্রেম
পর্ব-ষোলো
মাহবুবা বিথী

মায়া রাতটা কোনো রকমে চেয়ারে বসে কাটিয়ে দেয়। রুবেল ওর সাথে ছিলো। তবে ও খুব ভোরে উঠে চলে যায়। কোচিং এ রুবেলের আজ একটা
পরীক্ষা আছে। সামনে ওর এইচএসসি পরীক্ষা। সে কারণে মায়াও চায়নি রুবেল হাসপাতালে থাকুক। ওতো সামলে নিতে পারছে। বরং আজ ওকে বনানী চলে যেতে হবে। আগামিকাল জিনাতুন্নেছাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। সেকেন্ড কেমোটা কাল দেওয়ার কথা। মায়া ক্যান্টিনে গিয়ে নাস্তা করে কেবিনের জন্য কথা বলতে অফিসরুমে যায়। সেখানে একটা সেমি কেবিন ইরার জন্য নিয়ে নেয়। ভাড়াটা মায়ার জন্য ঠিক আছে। আসলে যেমন অবস্থা তেমন ব্যবস্থা। আবীর যতই বলুক চিকিৎসার সব খরচ ও বহন করবে কিন্তু মায়ার কারোকাছে হাত পেতে সাহায্য নিতে লজ্জা লাগে। জীবন চলার পথে ওকে অনেকেই সাহায্য করতে চেয়েছে। তারা বেশীরভাগই ওর অফিসের বস। সাহায্যের হাত ঠিকই বাড়িয়ে দিয়েছে কিন্তু পরক্ষণেই ওদের চোখে মায়া লালসার দৃষ্টি দেখেছে। সবে তখন গ্রাজুয়েশন শেষ করেছে। পরিবারের হাল ধরার জন্য হন্যে হয়ে চাকরি খুঁজছে। তখনি এসব নোংরা মনের মানুষের সাথে ওর পরিচয় ঘটে। নারী যতই শিক্ষিত হোক কিছু পুরুষ মানুষ আছে নারীদেরকে ভোগের সামগ্রী মনে করে।
মায়া সত্যি আর ওদের সাথে পারছিলো না সেকারনে এভাবে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়।
কেবিন ঠিক করে সিস্টারের সাথে নিদিষ্ট কেবিনে চলে যায়। ওরা বেডকভার বিছিয়ে দেয়। বালিশের কভার চেইঞ্জ করে রুমটা পরিপাটি করে গুছিয়ে দেয়। পাশে একটা ডিভান রাখা আছে।
একটু পরেই হুইল চেয়ারে করে ইরাকে আনা হয়। রুমে এসে ইরা একাই হুইল চেয়ার থেকে নেমে ওর বেডে শুয়ে পড়ে। ইরাকে দেখে মায়ার ভীষণ খারাপ লাগে। কি সুন্দর ফুটফুটে বোনটার চেহারা আজ কেমন হয়ে গিয়েছে। কন্ঠের হাড় গুলো ভালোই ফুটে উঠেছে। চোয়ালের মাংস ঝরে গিয়েছে। চোখগুলো কোটরে ঢুকে আছে। ঠোঁটটা পাংশুটে হয়ে আছে। না বুঝে কতো বড় ভুল ইরা করেছে আজ তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। জীবনে কেউ দেখে শিখে আর কেউ শিখে ঠেকে। ঠেকে শিখলে অনেক বড় মাসুল গুনতে হয়। ইরার ক্ষেত্রে সেটাই ঘটেছে। সিস্টাররা উনাদের সব আনুষ্টানিকতা সেরে চলে গেলেন। মায়া একটা চেয়ার নিয়ে ইরা মাথার পাশে বসে জিজ্ঞাসা করে,
—এখন বল,তুই কেন জাওয়াদের সংসার করবি না। আর জাওয়াদ কেন উধাও হলে আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
ইরা নিজেকে সামলে নিয়ে কথাগুলো একটু গুছিয়ে নিয়ে বলে,
—আদাবরে তিনরুমের একটা ফ্লাট ভাড়া করে জাওয়াদরা থাকতো। আমাকে নিয়ে যাবার পর স্টাের রুমে আমাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়। ঐ রুমটা গুদাম ঘরের মতো। একটা খুব ছোটো ভেন্টিলেশন ছিলো। তাও মানিয়ে নিলাম এই কারণে যে ভালোবাসার মানুষটাকে নিজের করতে পেরেছি। যেদিন ও বাড়িতে গিয়েছি সেদিন থেকে আমার কাজে হাত দিতে হয়। অথচ জাওয়াদ আমার কাছে এমন ভাব দেখাতো ও খুব বড়লোকের ছেলে। বিয়ের দিন বলে ওদের সংসার নাকি টানাটানির সংসার। আমার তখন ওকে বিয়ে না করে উপায় ছিলো না। একটা ভুলে আমার চরম ক্ষতি হয়ে গেল। আমি তখন কনসিভ করে ফেললাম। আপু তুমি সত্যি কথাই সেদিন বলেছো। যে ছেলে বিয়ের আগে শারীরিক সম্পর্ক করতে চায় সে কোনোদিন ভালো চরিত্রবান পুরুষ হতে পারে না। যা আমি বিয়ের পর কঠিনভাবে উপলব্ধি করেছি। সংসারের সব কাজ কর্ম আমার করতে হতো কারণ জাওয়াদ তো কোনো ইনকাম করে না। অপরদিকে আমার জা কিছুই করতো না কারণ তার স্বামীর টাকায় বলতে গেলে পুরো সংসার চলে। শ্বশুরের পেনশনের টাকায় উনার ওষুধপত্র শাশুড়ীর হাত খরচ আর জাওয়াদের পড়াশোনার খরচ চলতো। এভাবে বিয়ে করাতে আমার শ্বশুর পড়াশোনার খরচ বন্ধ করে দেয়। পড়াশোনা বন্ধ হওয়াতে জাওয়াদের রাগের সব বহিঃপ্রকাশ ঘটতো আমার উপর। সারাক্ষণ আমার সাথে খিটমিট করতো। ফলে বাধ্য হয়ে আমি তোমার কাছে হুন্ডার জন্য টাকা ধার চাই। জাওয়াদ ও উবার চালাতে রাজি হয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে জাওয়াদ হুন্ডা কিনে নাই।
মায়া অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে,
—তাহলে টাকা দিয়ে ও কি করেছে?
—সংসারে মাঝে মাঝে বাজার করতো আর বন্ধুদের নিয়ে মোজমাস্তি করে উড়িয়েছে। আমি মাঝে মাঝে ওকে হুন্ডা কেনার জন্য প্রেসার দিতাম। তখন আবার আমাকে বড় মুখ করে বলতো”তোমার বোনের টাকা আমি সময় মতো শোধ করে দিবো। কারো টাকা মেরে খাওয়ার অভ্যাস আমার নয়। যদিও শ্বশুর বাড়ি থেকে আমি আংটি ঘড়ি ফার্নিচার কিছুই পাইনি। বরং তোমার বোন জায়গা মতো কায়দা করে তোমাকে আমার কাঁধে তুলে দিয়েছে।
আমিও রেগে গিয়ে বলতাম,
–+আমার বোন তুলে দেয়নি বরং তুমি কর্মের ফল ভোগ করছো। সেদিন রাতে আমাদের দুজনের মাঝে অনেক তর্ক হয়। চিৎকার চেঁচামেঁচি শুনে আমার শাশুড়ী মা আমার ঘরে আসেন। যখন জানতে পারে তুমি ব্যবসা করার জন্য ওকে কিছুটাকা ধার দিয়েছো তখন আমার শাশুড়ী মা আগুনে ঘি ঢালার মতো বলে,
—কিসের টাকা তুই শোধ দিবি,জামাই হিসাবে এই টাকা তোর প্রাপ্তি। আগুনে ঘি ঢালার মতো আমার শাশুড়ী মা বললেন।
আর কি এমনিতেই জাওয়াদ নাচুনে বুড়ি তারউপর শাশুড়ী মা দিলেন ঢোলে বাড়ি। ওদিকে আমার জা বলে বাসার টিভি ফ্রিজ ক্লসেট খাট আলমারী সোফাসেট সব ওর বাবার বাড়ি থেকে দিয়েছে। আমার বাবা মা জাওয়াদকে ঠকিয়ে আমাকে চাপিয়ে দিয়েছে। কেমন রাগ হয় বলো? তারপর দাঁতে দাঁত চিপে হজম করতে লাগলাম। এদিকে আমাকে নিয়ম মতো ডাক্তার দেখনো হচ্ছে না। তোমার টাকাটা পেয়ে আমাকে দুতিনবার ডাক্তার দেখিয়েছে। এতে আমার শাশুড়ী মা রেগে গিয়ে বলে,
— তোর নাই ইনকাম তারপর ও এতোবার ডাক্তার দেখানোর রস আসে কোত্থেকে? আমি ডাক্তার না দেখিয়ে দুটো ছেলে পয়দা করলাম। এতে আবার আমার জা ফোপরদালালী করে আমার শাশুড়ীকে বলে,
—-মা আপনার মনে আছে আমার বেবি কনসিভ করার পর থেকে আমার বাবা মায়ের কাছেই ছিলাম। উনারাই তো আমার সব খরচ বহন করতেন।
—-তা আর বলতে! আমার সব মনে আছে। তোমার বাবা মায়ের মতো আক্কেলবুদ্ধি আবার সবার থাকে না।
এভাবে প্রতিনিয়ত কথার খোঁচায় আমার ভিতর বাহির ঝাঁঝড়া হতে থাকে।
ইরার কথাগুলো শুনে মায়ার ভীষণ কষ্ট হয়। আহারে! ইরাটা এটুকু বয়সে কতো কঠিন সময় পার করেছে। ইরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে মায়া বলে,
—তুই আমাকে জানাসনি কেন?
—কোন মুখে জানাবো? জাওয়াদকে তো আমি পছন্দ করে বিয়ে করেছি।
—তারপরও আমাকে তোর জানানো উচিত ছিলো। এখন বল,বাচ্চাটা কিভাবে মিসক্যারেজ হলো?
—তোমাকে যে কিভাবে বলি,
—-এখন আর কোনো কথা গোপন করা তোর ঠিক হবে না। সব খুলে বল।
ইরা ইতি উতি করতে করতে একসময় বলেই ফেলে।
—আপু, জাওয়াদ তোমাকে কক্সবাজারে তোমার বসের সাথে ঘুরতে দেখেছে একথা তুমি আম্মার কাছে শুনেছো। কিন্তু ও তোমাকে নিয়ে একটা বাজে মন্তব্য করেছিলো। সেটা আমি আম্মাকে বলিনি। যেদিন আমার মিসক্যারেজ হয় সেদিন আমি ওকে বললাম,
—তুমি আমার বোনের টাকাটা নয়ছয় করে উড়িয়ে দিলে তবু হুন্ডাটা কিনলে না। ও সাথে সাথে আমায় বলে,
—শরীর বেচা টাকা দিয়ে ব্যবসা করলে সে টাকা হালাল হবে না। কথাটা শুনে আমার মাথার চাঁদিটা গরম হয়ে গেল। ও তখন খাটের কোনায় বসা ছিলো আর আমি ওর সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। রাগ সামলাতে না পেরে আমি ওর গায়ে কষে থাপ্পর লাগিয়ে বলি,
—আর কখনও যেন আমার নিশ্পাপ বোনের চরিত্রে কলঙ্ক লাগাতে না দেখি। সবাইকে নিজের পাল্লায় মেপো না।
জাওয়াদ খাটে বসা অবস্থায় আমাকে জোরে লাথি মেরে বলে,
—চোরের মায়ের আবার বড় গলা। তোর কি ধারণা আমি আন্দাজে এই কথা বলেছি? আন্দাজে বলেনি। সমস্ত খোঁজ খবর নিয়ে বলেছি। আমি রিসিপশনে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জেনেছি তোর বোন তার বসের সাথে স্বামী স্ত্রীর পরিচয়ে একই রুমে উঠেছে।
একথা বলে ইরা হু হু করে কেঁদে উঠে বলে,
—- তোমার মুখের কথা আমি বিশ্বাস করি না।
শয়তানটা তখন বলে,
–জানতাম তুই এই কথা বলবি সে কারনে ছবি তুলে আনতে চেয়েছিলাম। হোটেল কতৃপক্ষ বলেছে,এটা ওদের নিয়মে নাই।
এদিকে আমার প্রচন্ড পেট ব্যথা শুরু হয় সাথে রক্তক্ষরণ হতে থাকে। এরপর আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। চিন্তা করো আপু, ওর কতো বড় সাহস! টাকা ফেরত দিতে বলায় তোমার চরিত্রে কালিমা লাগাতে দ্বিধা করলো না।
মায়ার ফোনটা বেজে উঠলো। আবীর ফোন দিয়েছে। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে আবীর বলে,
—-আজ তোমাকে আনতে কখন গাড়ি পাঠাবো?
ইরার কথাগুলে শুনে মায়ার অন্তরটা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। ফোনটা নিয়ে কেবিনের বাইরে এসে বলে,
—তোমার যখন ইচ্ছা তখন পাঠিয়ে দিও।
মায়ার গলা শুনে আবীর ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলে,
—তুমি ঠিক আছো মায়াবতী?
মায়া নিজেকে আর ধরে রাখতে পারে না। ঝরঝর করে কেঁদে ফেলে। আবীর বুঝে পায় না মায়ার এই কান্নার কারণ। তারপরে ওর মনে হয় মায়া হয়তো ওর অসুস্থ বোনকে রেখে আসতে চাইছে না সে কারনে বলে,
–ঠিক আছে তুমি আরো দুদিন থাকতে চাইলে থাকতে পারো, আমি এদিকটা সামলে নিবো।
মায়া ততক্ষণে নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
—সমস্যা নেই। ইরা এখন অনেকটা সুস্থ। সন্ধার দিকে পাঠিয়ে দিও।
আবীর কথা বাড়ায় না। মায়াকে একটু সামলে উঠার সুযোগ দিতে ফোনটা রেখে দেয়।
মায়া বাইরে চেয়ারটায় অসহায়ের মতে বসে পড়ে। এই মুহুর্তে সে সম্পূর্ণ একা থাকতে চায়। যে মান সম্মানের বজায় রাখার জন্য লড়াই করলো তারউপর এতো বড় আঘাত আসবে ও ভাবতে পারেনি। ইরার মুখে ঐ কথাগুলো শোনার পর ওর দুই কান দিয়ে ধোয়া বের হতে লাগলো। ডিসেম্বর মাসেও ওর শরীরটা ঘেমে উঠলো।

মায়ার মতো মেয়েদের ভেঙ্গে পড়লে তো চলবে না। তারা হোঁচট খেয়ে পড়ে যাবে আবারও উঠে দাঁড়াবে। মায়াও বেশীক্ষণ কষ্টের ভার বয়ে বেড়াতে পারলো না। বাড়িতে ফোন দিয়ে ওর মা নয়তো রুবেলকে আসতে বলে দেয়। ওকে আজ ও বাড়িতে যেতেই হবে। কাল জিনাতুন্নেছাকে কেমো দিতে হবে। জীবনে যা কিছুই ঘটিক দায়িত্বে অবহেলা করার মতো মেয়ে মায়া নয়।

সন্ধায় আবীর নিজে গাড়ি ড্রাইভ করে চলে আসে। ফোনে মায়াকে ওভাবে কাঁদতে দেখে দিনটা ওর ভালে যায়নি। শুধু মনে হয়েছে কখন মায়াকে আনতে যাবে। হাসপাতালে পৌঁছে মায়াকে ফোন দেয়। মায়া সবার কাছে বিদায় নিয়ে বের হবার সময় ওর মা বলে,
—এই রাতে তুই একা একা মানিকগঞ্জ কিভাবে যাবি? রুবেলকে সাথে নিয়ে যা।
সাথে সাথে রুবেল বলে,
—কাল আমার কোচিং নেই আর কলেজেও এখন তেমন একটা ক্লাস হয় না। সামনে টেস্ট পরীক্ষা। আমি তোমার সাথে গিয়ে কাল চলে আসবো।
মায়া ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলে,
—কাউকে আমার সাথে যেতে হবে না। অফিসের গাড়ি আছে। সুতরাং সমস্যা নেই। আর রুবেলের এদিকে ইরার কাছে থাকাটা জরুরী।
ইরা মায়াকে বলে,
—আপু,সাবধানে যাও। আয়াতুল কুরছি পড়ে নিও।

মায়া সবার কাছে বিদায় নিয়ে গাড়ির কাছে আসতেই আবীর দরজা খুলে দেয়। মায়া ড্রাইভিং সীটের পাশের সীটে বসে। সীটবেলটা লাগিয়ে নেয়। আবীর আড়চোখে মায়া দেখে। মায়ার মলিনমুখটা দেখে ওর খুব খারাপ লাগপ। গাড়ি স্টার্ট দেয়। বনানীর পথে প্রাডোটা ছুটে চলে। জ্যামে একসময় গাড়ি থেমে যায়। মায়া হাতদুটো কোলের উপর রেখে দৃষ্টিটা বাইরে মেলে ধরে। আবীর একসময় মায়ার হাতের উপর হাত রাখে। আজ আর মায়া হাত সরিয়ে নেয় না। বরং আবীর হাতটা ও শক্ত করে চেপে ধরে। আবীর ফিসফিস করে বলে,
—-আমি আছিতো তোমার পাশে।
গাড়ির ক্যাসেট প্লেয়ারে বাজছে,
“কাজল নদীর জলে ভরা ঢেউ ছল ছলে
প্রদীপ ভাসাও কারে স্মরিয়া
সোনার বরণই মেয়ে বলো কার পথো চেয়ে
আঁখি দুটি উঠে জলে ভরিয়া।”

চলবে

#কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ অতঃপর লাভ
পর্ব-সতেরো
মাহবুবা বিথী

বাসায় ফিরে মায়া জিনাতুন্নেছার রুমে যায়। উনি বিছানায় চোখ বুঝে শুয়ে আছেন। টেনে টেনে নিশ্বাস নিচ্ছেন। মায়ার মনে হলো বহুদিন পর জিনাতুন্নেছাকে দেখতে পেলো। অথচ মাত্র দুদিন উনার সাথে দেখা হয়নি। এই দুদিনেই উনি যেন অনেকটা শুকিয়ে গেছেন। মায়া আলতো করে উনার কপালে হাত রাখে। চোখে খুলে মায়াকে দেখে জিনাতুন্নেছার চোখ দুটো আনন্দে ঝলমল করে উঠে। বিছানা থেকে উঠে বসার চেষ্টা করছেন। মায়া উনাকে ধরে বসালো। এরপর মায়ার দিকে তাকিয়ে বললেন,
—বাবা মায়ের সাথে দুরত্বটা এখন কি কমেছে?
মায়া মাথা নাড়িয়ে বলে,
—-কিছুটা
মায়ার বাবা মা এই বিয়ে সম্পর্কে না জানার কারণে জিনাতুন্নেছাকে বলা হয়েছে ওর বাবা মা এই বিয়েটা মেনে নেয়নি। মায়া জোর করেই আবীরকে বিয়ে করে চলে এসেছে। জিনাতুন্নেছা মায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
—একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। তবে তোমার বাবা মাকে আমার দেখার খুব ইচ্ছা। এরকম একটা রত্ন যারা জন্ম দিয়েছেন তাদের সাথে পরিচয় হওয়া তো দরকার।
মায়া একটু আড়ষ্ট হয়ে বলে,
—আপনি আমাকে একটু বেশী ভালোবাসেন।
—যাক সে হিসেব এখন করতে হবে না। দুদিন তুমি ছিলে না তোমার স্বামী বিরহে কাতর হয়ে আছে। আমি আর সামলাতে পারবো না। এমনিতেই আমার জীবন যায় যায় অবস্থা। তুমি ওর কাছে যাও।
মায়ার এরুম থেকে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না। কেন যেন মনে হচ্ছে মানুষটার আয়ু ফুরিয়ে এসেছে। চেহারাটা বড্ড ফ্যাকাশে লাগছে। মায়া জিনাতুন্নেছার দিকে তাকিয়ে বলে,
—-আমাকে এঘর থেকে ঠেলে পাঠিয়ে দিচ্ছেন কেন? এই দুদিন আপনি আমাকে মিস করেননি?
—করিনি একথা বলে মিথ্যা বলা হবে। তোমাকে মিস না করে উপায় আছে। সবাইকে তুমি মায়ার ডোরে বেঁধে ফেলেছো। আমার সাথে পরে এসে গল্প করতে পারবে এখন আমার নাতিটাকে একটু সময় দাও।
অনিচ্ছা সত্বেও মায়া ঐ রুম থেকে বের হলো। আবীরের মুখোমুখি হতে ওর একটু লজ্জা লাগছে। আবার এদিকে এই বিয়ের ব্যাপারটায় সুরাহা হওয়া প্রয়োজন। মানুষ ওকে নিয়ে নানা কথা বলছে। ধীর পায়ে মায়া সিঁড়ি বেয়ে নিজের রুমে চলে আসে। আবীর ততক্ষণে নিজের পোশাক বদলে ট্রাউজার আর টিশার্ট পড়ে নিয়েছে। মায়াকে দেখে আবীরের মনে হলো ও বড্ড ক্লান্ত। সেই কারণে ওকে বলে,
—তুমি ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে পোশাক বদলে ফেলো। দুদিন হাসপাতালে একই পোশাকে ছিলে। ঘুম হয়নি, বিশ্রাম ও হয়নি। সাথে ছিলো মানসিক চাপ। ইরার হাসব্যান্ড কি পরে এসেছিলো।
—নাহ্
—,ওর বিরুদ্ধে তাহলে অ্যাকশনে যাওয়া উচিত।
—ইরা পরিপূর্ণ সুস্থ হবার পরে একটা সিদ্ধান্তে আসা যাবে।
মায়া আসলে কিছুই ভাবতে পারছে না। পারিপার্শ্বিকচাপে পুরো মাথাটা হ্যাঙ হয়ে আছে। ও ক্লসেট থেকে কাপ্তান বের করে নিয়ে ওয়াশরুমে গেল। হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেস হয়ে ঘরে আসতেই দেখে লাইলি চা সাথে পাকোড়া দিয়ে গেছে।
আবীর ওকে বলে,
—এদিকে আসো,আগে গরম গরম চা আর পাকোড়া খাও দেখবে ভালো লাগবে।
মায়া আবীরের পাশে বসে। আসলে ডিভানের এক পাশে আবীর আর অন্যপাশে মায়া বসেছে। আবীর মায়ার হাতে চায়ের কাপটা তুলে দিয়ে পাকোড়ার প্লেট এগিয়ে দেয়। আবীরের নিঃশ্বাসের শব্দ মায়ার কানে বাজছে। পুরুষালি একটা সুবাস মায়ার নাকে এসে লাগছে। খারাপ লাগছে না। অথচ এখানে আসার আগে রুবেল আর নোবেলকে ওদের গায়ের গন্ধ নিয়ে কতো বকাঝকা করেছে। আজ আবীরের গায়ের গন্ধ ওর খারাপ লাগছে না। বরং কেমন একটা মাদকতা মিশে আছে। আবীরের সঙ্গটাও উপভোগ করছে। ওর কাছাকাছি থাকতে মন চাইছে। অথচ অর্ণবও ওকে ভালোবেসেছিলো। কিন্তু সেদিন মায়ার ওর ডাকে সাড়া দিতে ইচ্ছে হয়নি। মায়া নিজেই যেন নিজের পরিবর্তনে অবাক হচ্ছে। মায়া আবীরের দিকে না তাকিয়ে বুঝতে পারছে ও অপলক মায়ার দিকে তাকিয়ে আছে। মায়া খুব বিব্রত বোধ করছে। সে কারণে আবীরকে বলে,
—রাতের ডিনার দিতে বলবো?
দেওয়ালে টাঙ্গনো ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আবীর বলে,
—-রাত দশটা বাজে। দুলাল মিয়াকে ডিনার দিতে বলো।
মায়া উঠে দরজার কাছে যেতেই আবীর বলে,
—তুমি যাচ্ছো কেন। কলিংবেলটা বাজালেই ওরা আসবে।
মায়া আর যেতে পারলো না। বেলটা বাজিয়ে নিজের জাগায় এসে বসে। একটু পরেই দরজা নক করার শব্দ হয়। আবীর ভিতরে আসতে বলে। লাইলি ভিতরে আসতেই মায়া ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
—-দুলালকে টেবিলে খাবার দিতে বল।
লাইলি চলে যাবার পর আবীর আবেগমিশ্রত কন্ঠে বলে,
—আজ ফকফকা জোছনা উঠেছে। যদিও পূর্ণিমা দুদিন পরে তবে আকাশ পরিস্কার থাকায় চাঁদের আলো যেন ঠিকরে বের হচ্ছে। ডিনার করে আমরা ছাদে বসে কিছুক্ষন সময় কাটালে কেমন হয়?
মায়ার খুব ক্লান্ত লাগছে। এদিকে আবার সঙ্গটা ভালো লাগছে। সেকারণে আর অমত করে না।

জিনাতুন্নেছা সহ ওরা তিনজন রাতে খাবার খেয়ে নিলো। জিনাতুন্নেছা বেশী খেতে পারলেন। অল্প একটু ভাত কাঁচাকলা আর সিঙ মাছের ঝোলের তরকারী দিয়ে ভালো করে ভাত মাখিয়ে খেয়ে নিলেন। এরপর নিজের ঘরে গিয়ে ওষুধ খেয়ে শুয়ে পড়লেন। মায়া খেয়াল করলো উনার হাঁটাতেও জড়তা এসেছে। আস্তে আস্তে হেঁটে গেলেন। মায়া ভাত খেয়ে আগেই ছাদে উঠে গেল। ছাদে পেতে রাখা স্টিলের চেয়ারটায় বসে মায়া ফুলের গাছগুলোর দিকে তাকালো। একটা মিষ্টি সুবাস ছড়িয়ে পড়ছে। আজ আবীর ওর সাথে কি কথা বলবে সেই ভাবনার অতলে ক্রমে হারিয়ে যাচ্ছে। আকাশে তখন চলছে জোছনার আলো আধাঁরির খেলা। আবীর পায়ের শব্দে মায়ার পিছন ফিরে তাকায়। পর হাতে দুকাপ কফি। মায়া সেদিকে দৃষ্টি দিয়ে বলে,
—আমাকে বললেই হতো। তুমি নিজে আবার কষ্ট করে আনতে গেলে কেন?
—তোমাকে আবার কষ্ট করে নীচে নামতে হতো। সে কারণে আমি যেহেতু ছাদে আসবো তাই সাথে করে আনলাম।
আবীর মায়ার মুখোমুখি চেয়ারটায় বসে। ওর হাতে এক কাপ কফি তুলে দিয়ে নিজের হাতে এক কাপ তুলে নেয়। এরপর কফিতে চুমুক দিয়ে বলে,
—-মানুষের জীবনটা খুবই ক্ষণস্থায়ী। এই ক্ষণস্থায়ী জীবনটাকে ভোগ করার জন্য আমরা কখনও ছলনার আশ্রয় নেই কখনও কারো সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করি। আবার কেউ চুরি করে কেউবা করে ডাকাতি। আবার কেউ করে দুর্নীতি। শুধুমাত্র এই জীবনটাকে ভোগ করার জন্য মানুষ এতো কিছু করে। তুমি হয়তো ভাবছো হঠাৎ আমি এই প্রসঙ্গে কথা কেন বলছি। কারণ আছে মায়াবতী। আমি এমন এক নারীর গর্ভে জন্মেছি সে ছিলো বিশ্বাসঘাতিনী। আচ্ছা মানুষকে গুলি করলে কিংবা ছুরিকাহত করে মেরে ফেলা যায় কিন্তু এসব না করেও একটা মানুষকে মেরে ফেলা যায়। যে কাজটা আমার মা করেছে। আমার বাবাকে সে খুন করেছে। আমি মানছি তার একজন ভালোবাসার মানুষ আছে। তাহলে সে আমার বাবাকে কেন বিয়ে করলো? আমার এবং আমার বাবার জীবন নষ্ট করার কোনো অধিকার তাকে কে দিয়েছে? তার একটা ভুলে আমি এতিমের মতো বড় হলাম। তোমাকে এই কথাগুলো বলার একটাই কারণ আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। যদি তোমার কোনো পছন্দের মানুষ থাকে তুমি আমাকে নির্দ্ধিধায় বলতে পারো। আমি তোমাকে বাঁধা দিবো না। বুঝতেই তো পারছো।দাদীর আয়ু ফুরিয়ে আসছে। দাদী চলে গেলে তোমাকে আমি মুক্ত করে দিবো। তারপরও তোমাকে জোর নেই। তুমি নিজের মনকে জিজ্ঞাসা করো আমাকে সে ভালোবেসেছে কিনা।

আবীর কথাগুলো একনাগাড়ে বলে মায়ার দিকে তাকালো। সত্যিকার অর্থে আবীর চায় ওর কথাগুলো মায়ার অন্তরকে স্পর্শ করুক। মায়ার চোখ জোড়া জ্বল জ্বল করছে। আবীরের মনে হলো ওর কথাগুলো মায়ার অন্তরকে ছুঁয়েছে।
মায়ার ধীরে সুস্থে চেয়ার থেকে উঠে ছাদের কিনারায় গ্রীলের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বলে,
—মিথ্যা বলবো না,আমাকে একজন পছন্দ করেছিলো। আমার যে তাকে ভালো লাগতো না তা নয়। কিন্তু কেন যেন আমি তার ডাকে সাড়া দিতে পারিনি। ও আমার জীবন থেকে চলে গেছে চার বছর হয়ে গেল। এরমাঝে আর কারো প্রতি আমার তীব্র আকর্ষণ বোধ তৈরী হয়নি। তবে তোমার সাথে যেদিন আমার প্রথম দেখা হলো কে যেন মনে হয়েছিলো এরকম একটা মানুষ পাশে থাকলে মন্দ হয় না।
—তোমাকে যে ছেলেটা ভালোবেসেছিলো তার সাথে কি তোমার এখনও যোগাযোগ আছে?
–নাহ্। তবে যোগাযোগ করার কখনও ইচ্ছে হয়নি।
–চাঁদনি আমার জীবনের সময় তোমাদের মতো সহজ স্বাভাবিক ভঙ্গিতে যায়নি। সে কারণে এই জীবনে আমি প্রতারণা আর নিতে পারবো না। সেজন্য তোমাকে এতগুলো কথা বললাম।
মায়ার ভয় ওর নিজেকে নিয়ে নয়। আবীরকে নিয়ে। যদি আবীর কখনও ওকে ছেড়ে চলে যায় সেদিন ও নিজেকে সামলাবে কি করে। জীবনের সাথে লড়াই করতে করতে ও আজ বড় ক্লান্ত। আজ ওর মনে হয় ওর একজন শখের মানুষ থাকুক। যার বুকে মাথা রেখে ও রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমাবে আর দিনের সময় গুলো পরম নির্ভরতায় কেটে যাবে। মায়ার চোখ জোড়া ভিজে উঠে। কার্ণিশে জমে থাকা অশ্রুগুলো মায়া আবীরের কাছে লুকাতে পারে না। আবীর আলতো করে রক্তিম গালে পড়ে থাকা অশ্রুবিন্দুগুলো সরিয়ে দেয়। আবীরের স্পর্শে মায়ার শরীর রোমাঞ্চিত হয়। কান্নাগুলো যেন দিগুন বেগে বের হতে চায়। এটুকু জীবনের বয়সে কত অপমান কত লাঞ্চনার স্বীকার ওকে হতে হয়েছে। অথচ দেশের নাম্বার ওয়ান বিজনেস আইকন আজ ওকে ভালোবাসায় জড়িয়ে নিতে চাইছে। এই জায়গাটায় মায়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। চিরজীবন আবীর কি ওকে এভাবেই ভালোবাসবে নাকি জীবনের কোনো একটা সময়ে এই আর্থিক বৈষম্য বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে। আবীর যদি ওকে কোনোদিন অসম্মান করে এই দুঃখ ও কিভাবে পুষে রাখবে? এতো লড়াইয়ের পর ওর আর দুঃখ যন্ত্রণা পুষে রাখার জায়গা নেই। আবীর কোমল স্বরে বলে,
—কি এতো ভাবছো মায়াবতী?
কান্না ভেজা কন্ঠে মায়া বলে,
—্তুমি আমাকে কোনোদিন ভুলে যাবে নাতো? কিংবা তোমার জীবনের গন্ডি থেকে আমাকে বের করে দিয়ে দুরত্বের দেওয়াল তুলে দিবে নাতো?
—,আমি তোমাকে আমার হৃদয়ের সবটুকু অনুভূতী দিয়ে ভালোবেসেছি। আর সত্যিকারের ভালোবাসার বন্ধন অনেক মজবুত হয়। তোমার কাছে হাত জোর করে মিনতি করছি তুমি কোনোদিন আমাকে ত্যাগ করো না। এতে শুধু তোমার জীবন নয় আমাকেও তুমি হত্যা করবে। ঐ যে তোমাকে বললাম খুন না করেও কিভাবে মেরে ফেলা যায়। সেদিন আমার সত্যি মরণ হবে।
মায়া আবীরের ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে বলে,
—এসব কথা আর কখনও বলবে না। আমার শুনতে ভালো লাগে না।
আবীর এই প্রথম মায়াকে পিছনদিক থেকে জড়িয়ে ধরে। আবীরের উষ্ণশ্বাস মায়ার শরীরের সমস্ত রক্ত বিন্দুতে কাঁপন ধরায়। আকাশের চাঁদটা আস্তে আস্তে অস্তরাগের দিকে ধাবিত হচ্ছে। আবীর ধরা গলায় বলে,
—তুমি আমার প্রথম তুমি আমার শেষ প্রণয়। বুকের ভিতর তুমি ছাড়া আর কারো নাম এজীবনে লিখেনি।
রাত আস্তে আস্তে শেষ হয়ে আসছে। দুজনে ওদের রুমে ফিরে আসে। ঘুমে আর প্রশান্তিতে মায়ার দুচোখ জড়িয়ে আসছে। আজ মায়ার ডিভানে ঘুমানোর পালা। কিন্তু আবীর ওকে বিছানায় ঘুমাতে বলে। অস্বস্তি হলেও আবীরের চাওয়াটা ফেলতে পারে না। মায়া জড়সড় হয়ে বিছানার একপাশে শুয়ে পড়ে। আবীর ওয়াশরুমে যায়। প্রচন্ড ক্লান্তিতে শোয়ার সাথে সাথে মায়া ঘুমের অতলে তলিয়ে যায়।
পরদিন ডোরবেল বাজার শব্দে আবীর আর মায়ার ঘুম ভেঙ্গে যায়। দেওয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ন,টা বাজে। মায়া শোয়া থেকে দ্রুত উঠে পড়ে। ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়। আবীরকে ফ্রেস হয়ে নীচে নামতে বলে মায়া সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে আসে। লাইলি দরজাটা খুলে দিয়েছে। মায়া ওকে জিজ্ঞাসা করে,
—-কে আসছে?
—-সারের মামাতো ভাই বিদেশ থেকে আসছে।
এমন সময় আবীর নীচে নেমে এসে ড্রইংরুমে চলে যায়। আবীরের পিছু পিছু মায়াও ড্রইংরুমে গিয়ে প্রচন্ড ধাক্কা খায়। এ ও কাকে দেখছে। ওকে দেখে অর্ণব অবাক হয়ে বলে,
—,তুমি এখানে,
মায়া তখন আবীরের দিকে তাকায়। আবীর ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে বলে,
–তোমরা কি দুজন দুজনকে চেন?
অর্ণব সাথে সাথে বলে,
—চিনি মানে খুব ভালো করে চিনি।
আবীর সাথে সাথে বলে,
—,ও তোর ভাবী।
অর্ণব অবাক হয়ে বলে,
—-তুমি বিয়ে করলে কবে?
আবীর হেসে বলে,
—আসলে হুট করে হয়ে গেল। কাউকে তেমন জানানো হয়নি। দাদীমার শরীরটা একটু ভালো হলে রিসিপশনের আয়োজন করবো। ভেবেছি তখন সবাইকে একবারে জানাবো।

চলবে