#কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ অতঃপর প্রেম
পর্ব-বিশ
মাহবুবা বিথী
অর্ণবের ম্যাসেজ পড়ে মায়া মনে মনে ভাবে,কিসের যে তাড়া ছিলো তা অর্ণবের মতো উচ্চবিত্তের মানুষেরা বুঝবে না। নিম্মমধ্যবিত্ত পরিবারে যে মেয়ের জন্ম তার মান সম্মান নিয়ে বেঁচে বর্তে থাকাই একটা বিশাল তাড়া। যে মা বাবার ঘরে ও জন্ম নিয়েছে তাদেরকে ফেলে রেখে শুধু স্বার্থপরের মতো নিজের জীবনটা নিয়ে ও ভাবতে পারেনি। ছোটো ছোটো ভাইবোনগুলোর অসহায় মুখের দিকে তাকিয়ে তাদের দায়িত্বকে ও অস্বীকার করতে পারেনি। তারা ওর এই উদারতাকে মুল্য নাই দিতে পারে তাই বলে ও ওর কর্তব্যকে অবহেলা করতে পারেনি। ওর জন্মদাতা পিতা প্রতিমাসে যার পাঁচহাজার টাকার ওষুধের প্রয়োজন হয়। সেই টাকাটা মাস শেষে ওকে যোগান দিতে হয়। ওর ছোটো দুটো ভাই যাদের পড়ালেখার খরচ যোগাতে না পারলে স্কুল কলেজে যাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে তাদের দায়কে ও কিভাবে অস্বীকার করবে? যে গর্ভধারিণী মা নুন আনতে পান্তা ফুরায় সংসারে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে যায় তার হাতে মাস শেষে কিছু টাকা তুলে দেওয়ার জন্য মায়ার অনেক তাড়া থাকে। এরকম হাজারো তাড়ার উপলব্ধি অর্ণবের মতো ছেলেরা বুঝবে না। কারণ ওর পরিবারে ওকে কখনও এসবের মুখোমুখি হতে হয়নি।
মায়া গাড়ির জানালা দিয়ে দৃষ্টি বাইরে মেলে ধরে। আর ভাবে এটুকু বয়সে অনেক পুরুষ ওকে ভালোবাসার সাজি উপহার দিতে চেয়েছে। তাদের সবার চোখে ও কামনার আগুন দেখেছে। দেখেছে ওকে স্পর্শ করার সুতীব্র বাসনাকে। না, অর্ণবকে কখনও ও সেভাবে দেখেনি এ কথা সত্য। কিন্তু সমবয়সী হওয়াতে অর্ণবের উপর ও নির্ভর কিংবা আস্থাও রাখতে পারেনি। তবে আবীর আসলেই এক অন্যরকম পুরুষ। আজ ছ,মাসের উপর আবীরের সাথে আছে। কিন্তু মায়া দেখেছে সংযমের লৌহ বর্মে আবীর নিজেকে কিভাবে আবৃত রাখে। মাঝে মাঝে মায়ার খুব ইচ্ছে হয় আবীরের ছোঁয়া পেতে। কিন্তু ওর সংযম দেখে মায়া নিজেকে গুটিয়ে নেয়।
তবে এই কয়মাসে আবীর ওর হৃদয়ের সবটুকু জায়গা দখল করে নিয়েছে। আবীর ওকে অসম্মান করেনি। ওকে ছোটো করে দেখেনি। আবীরের ভালোবাসার জন্য মায়া যুগ যুগান্তর অপেক্ষা করতে পারবে। অর্ণবের জন্য মায়া অপেক্ষার প্রহর গুনেনি। তবে অর্ণবকে যে ওর ভালোলাগেনি তা নয়। ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে অর্ণবের সাথে পরিচয় হয়েছে। টং দোকানে চা খাওয়া, একসাথে লাইব্ররীতে বসে গ্রুপস্টাডি করা,ভ্যানে দাঁড়িয়ে চটপটি ফুসকা খাওয়া,ঝুম বৃষ্টিতে ভেজা পহেলা বৈশাখে রমনা বটমূলে পান্তা ইলিশ খাওয়া এরকম অনেক স্মৃতি অর্ণবকে জড়িয়ে আছে। সেখানে বন্ধুত্বের মোহ আছে কিন্তু ভালোবাসার বন্ধন তৈরী হয়নি। অথচ আবীরের জন্য ওর অন্তরটা পুড়ে। যত দিন গড়িয়ে যাচ্ছে মায়া যেন আবীরের ভালোবাসার জন্য মুখিয়ে আছে। শুধু নিজের আত্মসম্মান বোধটুকুর দেয়ালটা ভাঙ্গতে পারছে না। ফোনটা বেজে উঠলো। মোবাইলের স্ক্রীনে তাকিয়ে দেখে আবীর ফোন দিয়েছে। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে আবীর বলে,
—তুমি কোথায়?
—-ক্যান্টনমেন্ট পার হচ্ছি।
—-,আমাকে অফিস থেকে তুলে নিও।
—-ওকে
ফোনটা রেখে মায়া মোবারককে অফিসের দিকে যেতে বলে।
আবীর আসলে একটু অস্বস্তিতে আছে। মায়ার প্রতি অর্ণবের আচরণগুলো হয়তো স্বাভাবিক কিন্তু আবীরের ভালো লাগছে না। খুব ছোটোবেলায় প্রেমিকের হাত ধরে মায়ের চলে যাবার দুঃসহ স্মৃতি এখন ওর হৃদয়ে গেঁথে আছে। সেই ট্রমা থেকে মনে হয় ও আজও বের হতে পারেনি। সে কারণে মায়াকে নিজের করে নিতে ওর খুব ভয় হয়।
যদিও মায়ার আচরণ খুবই ভদ্রচিত তবে অর্ণবের চোখে মায়ার প্রতি প্রণয়ের কষ্ট আবীর দেখেছে। আবীরও একজন পুরুষ মানুষ। নারীর প্রতি পুরুষে দৃষ্টি কোনটা প্রেম কোনটা বিরহ আবীর সেটা বুঝতে পারে। আবীরের অন্তরে অর্ণবের বিষাদ ছাপানো মুখটা বারবার ভেসে উঠছে। পাশাপাশি অর্ণবের অন্তরে যে কষ্টের দাবানল জ্বলছে তাও আবীর অনুভব করতে পারছে। অর্ণবকে আবীর ছোটো ভাইয়ের মতো দেখে। মামা মামী আর রাহা যখন ইউকেতে চলে যায় অর্ণব তখন আবীরদের বাসায় থেকে ঢাকা ভার্সিটিতে পড়াশোনা করেছে। দাদীর দেখভাল করেছে। আর আবীর তখন লন্ডনে অর্ণবদের বাসায় থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করে জব করছিলো। সে কারণে দাদী জিনাতুন্নেছা ওকে যেমন ভালোবাসে তেমনি অর্ণবকেও ভালোবাসে। আবীরের ও অর্ণবের প্রতি দুর্বলতা আছে। আবীরের একটু একটু মনে পড়ছে মায়া যেন বলেছিলো,একটা ছেলে ওকে খুব পছন্দ করতো। তাহলে সেই ছেলেটা অর্ণব নয়তো?
এমন সময় কাঁচের দরজা ঠেলে অফিসরুমে প্রবেশ করে মায়া বলে,
—দারোয়ান চাচা বললো,তুমি আমাকে অফিসে আসতে বলেছো?
—হুম, ভাবলাম তোমার সাথে কিছুক্ষণ নিরিবিলিতে সময় কাটালে কেমন হয়?
—মন্দ তো হয় না। নিজের প্রিয় মানুষের সাথে সময় কাটাতে কার না ভালো লাগে? কিন্তু দাদীকে আবার বাসায় নিয়ে যেতে হবে।
—ফোন দিয়েছিলাম। অর্ণব বললো এই মাত্র কেমো দেওয়া শেষ হয়েছে। ডাক্তার ঘন্টাখানিক সময় অবজারভেশনে রেখেছে।
আবীর নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে কাঁচের দেয়ালটার পাশে রাখা সোফায় বসে। মায়াকে ওর পাশে বসতে বলে। আবীরের পাশে বসে মায়া সমস্ত রুমটায় চোখ বুলায়। বিয়ের দিন এখানেই বিয়ে পড়ানো হয়েছিলো। এরপর মায়া আর অফিসে আসেনি। আবীরের টেবিলের পাশে একটা ছোটো সেলফ আছে। ওখানে আবীর আর মায়ার বিয়ের দিনের একটা ছবি বাঁধাই করে রাখা আছে।সেদিকে দৃষ্টি পড়তেই আবীরও মায়ার দিকে খেয়াল করে। এরপর সোফা থেকে উঠে গিয়ে সেলফ থেকে ছবিটা নিয়ে এসে মায়ার হাতে দিয়ে বলে,
—ছবিটা কেমন হয়েছে।
মায়া খুব অবাক হয়। ওদের যুগল ছবি আবীর কি সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছে। মায়া আবীরের হাতে ছবিটা দিয়ে বলে,
–সুন্দর হয়েছে। তবে আমাকে আর এক কপি দিও।
—ঠিক আছে।
ছবিটা সেলফে রেখে এসে আবীর মায়ার পাশে এসে বসে। আবীর নিঃশ্বাসের শব্দ মায়ার কানে বাজছে। মায়ার বুকের ভিতর ধরফড়ানিটা হঠাৎ বেড়ে গেল। আবীর মায়ার হাতটা ধরে। আবীরের উষ্ণ স্পর্শে মায়ার শরীরের শিরা উপশিরায় কাঁপন ধরায়। ওর হাতের তালু ঘামতে থাকে। আবীর মায়ার মুখের দিকে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
” জানো মায়াবতী,প্রতিটি পুরুষ তার জীবনে প্রিয়তমা হিসাবে একজন নারীকেই কামনা করে। তার কামনার নারীকে যখন সে পায় তখন তাকে মহামুল্যবান হীরকখন্ডের চেয়ে দামী মনে হয়। তোমার মাঝে আমি সেই নারী সত্তার সন্ধান পেয়েছি। তুমি আমাকে ভালোবাসতে শিখিয়েছো। তোমার দিকে ছুটে যাওয়া ছাড়া আমার আর কোনো পথ খোলা নেই। বিশ্বাস করো, আমি বুঝতেই পারিনি কখন কিভাবে আমার সত্তা তোমার মাঝে জড়িয়ে গিয়েছে। তোমাকে ঘিরেই আমার সুখ, আমার আনন্দ। আমার নিরানন্দ জীবনে তুমি এসেছো ভালোবাসার ফাগুন হয়ে। আজ মনে হয় জীবনে ভালোবাসার চাইতে এতো সুখ আর কিসে আছে? কিন্তু—-
বলে আবীর নিরব হয়ে যায়। মায়া ওর চোখের কোন আদ্র হতে দেখে। সে কারণে ও আবীরের হাতটা ধরে ঝাকুনি দিয়ে বলে,
—-কথাটা তো শেষ করলে না। বলো,কিন্তু কি?
না আবীর বলতে চেয়েছিলো অর্ণবের সাথে মায়ার সম্পর্ক শুধুই কি বন্ধুত্ব ছিলো নাকি তার থেকেও বেশী কিছু। কিন্তু ও বলতে পারলো না। ওর কেন যেন মনে হয়েছিলো,যদি মায়া বলে, অর্ণব একসময় মায়ার ভালোবাসার মানুষ ছিলো হয়তো আবীর একথা সইতে পারবে না। অপরদিকে অর্ণবের প্রতি ওর দুর্বলতা আছে। ওর মা ওকে ছেড়ে চলে যাবার পর অর্ণবের মায়ের কাছেই ও মাতৃত্বের স্বাদ নিয়েছিলো। সে ক্ষেত্রে কিছুটা দায়বদ্বতা তো থেকেই যায়। কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবীর বলে,
“জানি না কেন যেন তোমাকে হারিয়ে ফেরার ভয় আমাকে তাড়া করে ফেরে।” কথাটা বলতে গিয়ে আবীরের গলাটা যেন ধরে আসলো। নিজেকে সামলাতে ওয়াশরুমে চলে যায়। মায়া আবীরের গমন পথের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে,” তুমি তো জানো না তোমার মুখের দীপ্তি আমার অন্তরে প্রণয়ের তীব্র বাসনা জাগিয়ে তুলে। চাঁদ যেমন তার পুর্ণিমার আলো দিয়ে রাতের অন্ধকারকে দূরে ঠেলে দেয় তেমনি তোমার ভালোবাসার তরঙ্গ আমার জীবনের সব অন্ধকারকে দূরে ঠেলে দেয়। আর আমি ও তোমার ভালোবাসার সুশীতল ছায়াতলে সিক্ত হবো বলে চাতক পাখির মতো বসে আছি। তুমি কি তা বুঝতে পারো না? আর তোমাকে ছেড়ে যাবার সেই বিষাক্ত দিন যেন আমার জীবনে কোনোদিন না আসে। আমি দিবানিশি আল্লাহপাকের কাছে সে প্রার্থনা করি।”
ওয়াশরুম থেকে বের হবার সাথে সাথে আবীরের ফোনটা বেজে উঠে। ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে অর্ণব বলে,
—-দাদা,ভাবি কোথায়?
আবীর গলার ভয়েসটা একটু নামিয়ে বলে,
—-আমার সাথে আছে।
—-দাদীমা ভাবিকে খুঁজছে। তোমরা তাড়াতাড়ি আসো।
ফোনে বলা সব কথাই মায়া শুনতে পায়। সোফা থেকে উঠে মায়া বলে,
—দাদী মনে হয় হাসপাতালে থাকতে চাইছে না। আমাদের তাড়াতাড়ি যাওয়া দরকার।
আবীর আর মায়া অফিসরুম থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠে বসে। রাত প্রায় এগারোটা বাজে। জ্যাম এখন কিছুটা কম। গাড়ি খুব তাড়াতাড়ি হাসপাতালে পৌঁছে যায়। মায়া কেবিনে ঢুকেই জিনাতুন্নেছার কাছে গিয়ে বলে
—দাদীমা,সরি আপনাকে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করিয়ে রাখলাম।
—আমার জন্য অস্থির হইনি। অস্থির হয়েছি এই ছেলেটার জন্য। প্লেন জার্ণি করে এসে বেচারা একটুও বিশ্রাম নিতে পারলো না।
মায়া অর্ণবের দিকে তাকিয়ে বলে,
—সরি অর্ণব,তোমাকে অনেকক্ষণ বসিয়ে রাখলাম।
অর্ণব মায়ার কথার উত্তর না দিয়ে ওর পাশ ঘেঁষে কেবিনের বাইরে চলে যায়। যাওয়ার সময় আস্তে করে বলে মেসেজের উত্তর চাই।
অর্ণবের এমন আচরনে মায়া খুবই অবাক হয়। তবে মনে মনে বলে,
” তোমার মেসেজের উত্তর দেবার দায় আমার নেই। তাছাড়া আমি তো কোনোদিন তোমাকে বলিনি যে ভালোবাসি। তুমি মনে মনে মনকলা খেলে আমার কিছু করার নেই।”
এরমাঝে আবীর ডাক্তার নিয়ে কেবিনে আসে। জিনাতুন্নেছাকে ডাক্তার সাহেব আর একবার দেখলেন। দেশের একটা নামকরা কোম্পানীর মালিক জিনাতুন্নেছা। ডাক্তারও উনার ক্ষেত্রে খুব সিরিয়াস। জিনাতুন্নেছাকে নিয়ে সবাই বাড়ির পথে রওয়ানা দেয়। এতো রাতে এভারকেয়ার থেকে বাসায় পৌঁছাতে ওদের খুববেশী সময় লাগে না। মোবারক মিয়া সবার আগে গাড়ি থেকে নেমে যায়। এরপর গাড়ির দরজা খুলে দেয়। মায়া জিনাতুন্নেছাকে গাড়ি থেকে ধরে নামায়। ততক্ষণে লাইলি চলে এসেছে। জিনাতুন্নেছাকে ধরে আস্তে আস্তে ঘরে নিয়ে যায়। মায়াও উনার পিছু পিছু ঘরে চলে যায়। আবীর অর্ণবের দিকে তাকিয়ে বলে,”ফ্রেস হয়ে আয় একসাথে রাতের খাবার খেয়ে ফেলি।”
অর্ণব মাথা নাড়িয়ে গেস্ট রুমে চলে যায়। মায়া দুলাল মিয়াকে টেবিলে খাবার দিতে বলে। এরমাঝে সবাই ফ্রেস হয়ে এসে টেবিলে বসে রাতের খাবার খেয়ে নেয়। মায়া আজ খুব ক্লান্ত। দ্রুত রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়ে। নিকোটিনের গন্ধে ওর ঘুম ভেঙ্গে যায়। প্রথম ওর ধাতস্ত হতে সময় লাগে। কিছুক্ষণ পর তাকিয়ে দেখে পাশে আবীর নেই। রুমের কোথাও আবীর নেই। দেয়াল ঘড়িটা ঢং ঢং করে বেজে রাত দুটো বাজার সংকেত জানান দেয়। বিছানা থেকে নেমে মায়া বেলকনিতে আবীরকে খুঁজতে যায়। ওদের বাড়িটা ডুপ্লেক্স হওয়াতে ছাদে কারো ছায়া ও বেলকনিতে থেকে দেখতে পায়। তবে শরীর অবয়ব বলছে এ আবীর নয়। তাছাড়া আবীরের সিগারেটের নেশা ও দেখেনি। এক আধবার বিয়ার খেতে দেখেছে তবে মায়া নিষেধ করার পর আবীরকে সেগুলো ছুঁতে দেখেনি। অর্ণবকে ও ভার্সিটিতে সিগারেট খেতে দেখেছে। এতো রাতে অর্ণব কেন ছাদে বসে সিগারেট ফুঁকছে।
মায়া আবীরকে খুঁজতে নিজের রুমের দরজা খুলে উঁকি দেয়। স্টাডি রুমের লাইট জ্বালানো রয়েছে। সিঁড়ি দিয়ে মায়া আস্তে আস্তে নীচে নেমে আসে। স্টাডি রুমের দরজা খুলে দেখে আবীর বই পড়ছে। মায়া ওর চোখের চশমাটা খুলে রেখে দেয়। বইটা বন্ধ করে বলে,”ঘুমাবে না?”
চলবে
#কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ অতঃপর প্রেম
পর্ব-একুশ
মাহবুবা বিথী
মায়া আর আবীর স্টাডি রুম থেকে বের হতেই ওর দাদীর রুম থেকে শব্দ শুনতে পেলো। মায়া দৌড়ে জিনাতুন্নেছার ঘরে গিয়ে দেখে উনি বমি করে বিছানা ঘর সব মাখিয়ে ফেলেছেন। মায়াকে দেখে লাইলি বলে,
—ম্যাম আমি আপনাকে ডাকতে যাচ্ছিলাম।
এই অসুস্থ অবস্থায় জিনাতুন্নেছার ভদ্রতা জ্ঞান টনটনে। মায়ার দিকে তাকিয়ে বললেন,
—-আমি ওকে ডাকতে নিষেধ করেছিলাম। সারাদিন তোমাকে হাসপাতালে দৌড়াইতে হলো আবার রাতের ঘুমটাও যদি ঠিকমতো না হয় তাহলে শরীর টিকবে কি করে।
আবীর রেগে গিয়ে বলে,
—-আমাদের শরীর নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। তোমার এখন কেমন লাগছে? এখনি তোমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাবো।
—-ভাইরে,যাওয়ার সময় এগিয়ে আসছে। এখন হাজার ওষুধ কেমোতে কিছুই হবে না। তোরা আমাকে আর হাসপাতালে ভর্তি করিস না। এই শরীরটাতে আর আঘাত করিস না। বলতে পারিস আমি আর কত সুঁই দিয়ে এই শরীরটাকে ফুটো করবো? বরং আমি যেকদিন বাঁচবো তোদের সাথে সময় কাটিয়ে যেতে চাই।
জিনাতুন্নেছা টেনে টেনে কথাগুলো বললেন। আবীর উৎকন্ঠা নিয়ে বলে,
—-মানুষ জানে না সে কতদিন বাঁচবে। সে কারণে চিকিৎসা না করে ঘরে পড়ে থাকা আমার কাছে আত্মহত্যার সামিল। সুতরাং তোমাকে ডাক্তারের কাছে যেতেই হবে।
—-আমাকে জোর করিসনা ভাই। আমি আইসিউর ঘরে মরতে চাই না। নিজের ঘরে আরাম করে কলেমা পড়তে পড়তে দুনিয়া থেকে যেতে চাই।
এরপর জিনাতুন্নেছা মায়ার দিকে তাকিয়ে বলেন,
—মায়াবতী,তুমি ওকে একটু বুঝাও। রাত কতো হলো মায়াবতী?
—রাত্রী শেষ হতে চললো দাদীমা। একটু পরেই ফজরের আযান দিবে।
এরমধ্যে মায়া আর লাইলি মিলে ঘরের সব নোংরা পরিস্কার করে ফেলে। আবীর অবাক হয়ে দেখে মায়া পরম মমতায় ভেজা তোয়ালে দিয়ে জিনাতুন্নেছার মুখ হাত পা মুছে দিচ্ছে। জিনাতুন্নেছা বাথরুমে যেতে চায়। মায়া বেশ সাবধানে জিনাতুন্নেছাকে ধরে বিছানা থেকে নামিয়ে ওয়াশরুমে নিয়ে গেল। সাথে ম্যাক্সিটা নিয়ে নেয়। আবীর মনে মনে ভাবে, সব কিছু আসলে টাকা দিয়ে বিচার করা যায় না। মেয়েটা আসলেই মায়াবতী। সবাইকে মায়ার বাঁধনে বেঁধে রাখতে পারে। ভালো না বাসলে কেউ এমনকরে কারো জন্য কিছু করতে পারে না। মায়াবতীর একটা সুন্দর মন আছে। জিনাতুন্নেছা পোশাক চেইঞ্জ করে এসে বিছানায় বসে। মায়া উনাকে খুব যত্ন করে বিছানায় শুইয়ে দেয়। গায়ে একটা পাতলা চাদর দিয়ে দেয়। জিনাতুন্নেছার মাথার কাছে বসে মায়া উনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
—-দাদী ঘুমানোর চেষ্টা করেন।
হাঁকডাক শুনে অর্ণব ছাদ থেকে নীচে নেমে আসে। জিনাতুন্নেছার ঘরে শোরগোল শুনে ঐ রুমে চলে আসে। ওকে দেখে জিনাতুন্নেছা বলে,
—তুই ঘুমাসনি?
—-আসলে দিন রাত্রীর ব্যবধানে ঘুম আসছে না।
—-তা এতোক্ষণ কোথায় ছিলি?
—-ছাদে ছিলাম।
কথাটা বলেই আড়চোখে মায়ার দিকে তাকিয়ে আবার দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।
আবীর তখন অর্ণবকে বলে,
—-তুই চাচা চাচীকে আসতে বলে দে। দাদী উনাদের দেখতে চাচ্ছেন।
—-আব্বু আম্মু আর রাহা ইতিমধ্যে রওয়ানা দিয়েছে।
—-তুই আমাকে জানালি না কেন?
—-এই যে এখন জানালাম।
—-রাত শেষ হতে চললো। তুই শুয়ে পড়।
এরপর আবীর মায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
—-কাল আমার খুব সকালে অফিসে যেতে হবে। বিদেশী বায়ারদের সাথে মিটিং আছে। তুমি দাদীর দিকে খেয়াল রেখো। আর ভোর ছ’টায় আমাকে ডেকে দিও।
এরপর অর্ণবের দিকে তাকিয়ে আবীর বলে,
—তুই ঘুমাবি না?
—-হুম, ঘুম পেয়েছিলো বলে ছাদ থেকে নীচে নেমে আসলাম। দাদীর রুমে কথা শোনা যাচ্ছে বলে দেখতে আসলাম।
এরপর অর্ণব মায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
—দাদী কি ঘুমিয়েছে?
—-হুম,
অর্ণব মায়াকে ভাবী বলে সম্বোধন না করাতে আবীরের খুব বিরক্ত লাগে। ও দাদীর রুম থেকে বের হয়ে ঘুমাতে গেল। অর্ণবও সাথে সাথে বের হয়ে নিজের রুমে চলে যায়। বাকি রাতটুকু মায়া জিনাতুন্নেছার ঘরে কাটিয়ে দেয়। ভোরে ফজরের নামাজ পড়ে মায়া ছাদে হাঁটতে যায়। ছাদের খোলামেলা জায়গায় সকালের বাতাসটা মায়ার বেশ ভালো লাগে। মায়া খুব চিন্তিত। আসলে জিনাতুন্নেছার শরীরটা ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে। উনি চলে গেলে এরপর এখানকার পরিস্থিতি কেমন হবে কেজানে? আবীরকে বুঝা একটু মুশকিল। মাঝে মাঝে ভীষণ আপন মনে হয়। আবার কখনও মনে হয় দূরের মানুষ। কখনও বা কাছে টানতে চায় আবার কখনও বা নিজেকে গুটিয়ে নেয়। মায়া বুঝে ওর মায়ের চলে যাবার ট্রমা থেকে আবীর এখনও পুরোপুরি বের হতে পারছে না। কিন্তু জীবন তো থেমে থাকে না। মায়ার হঠাৎ চোখে পড়ে ছাদে অনেক অর্ধ খাওয়া সিগারেট ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। আবীরের সিগারেটের নেশা নেই মায়া তা জানে। তবে অর্ণব যে খেয়েছে এ ব্যাপারে মায়া নিশ্চিত। কেননা গতকাল ওর রুমে বসেই নিকোটিনের গন্ধ পেয়েছে। এসবের এখন কি মানে মায়া বুঝে পায় না। আবীরের মিটিং এর কথা মনে পড়াতে মায়া দ্রুত নীচে চলে আসে। সিঁড়ি দিয়ে নেমে দোতলায় ওদের রুমে গিয়ে আবীরকে ডাকে। হঠাৎ আবীরের ঘুমন্ত মুখটার দিকে মায়ার দৃষ্টি চলে যায়। পুরো অবয়বে মায়া ছড়িয়ে আছে। হাত পা ছড়িয়ে বাচ্চাদের মতো ঘুমাচ্ছে।মায়া আবীরের মাথার কাছে বসে। আলতো করে আবীরের গায়ে ধাক্কা দিয়ে বলে,
—-ছ” টা বাজতে চললো, উঠে পড়ো।
আবীর চোখ খুলে মায়াকে জিজ্ঞাসা করে,
—-দাদীর শরীর এখন কেমন আছে?
মায়া ভীষণ অবাক হয়। তবে ও বুঝে, আবীরকে দাদীকে হারানোর ভয় পেয়ে বসেছে। মায়া ধীর স্থীরভাবে বলে,
—দাদী ঘুমাচ্ছে। আপাতদৃষ্টিতে ভালো মনে হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো দাদীর শরীর মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে।
—-হুম, বুঝতে পারছি।
—আমি দাদীর ঘরে গেলাম। দেখি ঘুম ভাঙ্গলো কিনা? তুমি রেডী হয়ে নীচে নেমে এসো।
মায়া নীচে জিনাতুন্নেছা ঘরে গিয়ে দেখে উনার ঘুম ভেঙ্গেছে। হাতমুখ ধুয়ে উনাকে ফ্রেস করে রুমে রাখা রকিং চেয়ারটায় মায়া উনাকে বসায়। এরপর ওর নিজ হাতে বানানো মুরগী সুপটা আস্তে আস্তে খাইয়ে দেয়। খাওয়া শেষ হলে জিনাতুন্নেছা মায়াকে আবীরের কাছে যেতে বলে। ওষুধ খাইয়ে মায়া নাস্তার টেবিলে আসে। দুলাল মিয়াকে টেবিলে নাস্তা দিতে বলে। আবীর আর অর্ণব টেবিলে এসে বসে। মায়াও ওদের সাথে বসে সকালের নাস্তা সেরে নেয়। আবীর অফিসের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ে। আর অর্ণব ওর বাবা মাকে আনতে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। এর মাঝে আবীরদের পারিবারিক ডাক্তার ফয়সল সাহেব এসে জিনাতুন্নেছাকে দেখে যান। ডাক্তার চলে যাবার পর
জিনাতুন্নেছা মায়াকে বলে,
—-দিদিভাই আজকের রান্নাগুলো তুমি করো।
মায়াও কিচেনে গিয়ে রান্নার তদারকি করতে থাকে। ডাইনিং রুমের দেয়ালে টাঙ্গানো ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে বেলা বারোটা বাজে। বাইরে গাড়ির শব্দ শোনা যায়। আবীরের গলার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। ডোরবেলটা বেজে উঠে। মায়া ওয়াশরুমে গিয়ে গোসল করে নেয়। এতোক্ষণ কিচেনে রান্না করাতে গায়ে আদা রসুন আর পিয়াঁজের গন্ধ লেগে আছে। ঘামের সাথে মিশে একটা টক গন্ধ মায়ার শরীর থেকে বের হচ্ছিলো। মেহেদী রঙের থ্রিপীচ গায়ে জড়িয়ে নিয়ে নিজেকে পরিপাটি করে নীচে নেমে আসে। আহছান আর ওর বৌ সাথী মায়ার দিকে মুগ্ধতার দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়। সাথে সাথে তাদের এটাও মনে হয় অর্ণবের জন্য যদি এমন একটা বউ পাওয়া যেতো খুব ভালো হতো। আবীর মায়াকে ডেকে নিজের পাশে বসিয়ে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলে,
—দাদীর জোরাজুরিতে দ্রুত বিয়ের সিদ্ধান্ত নিতে হলো। তোমাদের কাউকে জানাতে পারিনি। তবে আমার বিয়ের রিসিপশন এখন হয়নি। ভেবেছিলাম তখন সবাইকে বলবো। কিন্তু দাদীর শরীর দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে।
আহসান মায়াকে বলে,
—-কোথা থেকে পড়াশোনা করেছো?
মায়া কিছু বলার আগেই অর্ণব সাথে সাথে বলে,
—ও আর আমি একই ডিপার্টমেন্টে একই ইউনিভার্সিটিতে পড়েছি।
একথা শুনে রাহা বলে,
—তুমি আর নতুনভাবী সহপাঠি ছিলে অথচ এতো সুন্দর মেয়েটা তোমার চোখ এড়িয়ে গেল। অথচ আবীর ভাই তার জহুরী চোখ দিয়ে মেয়েটাকে বউ করে আনলো।
রাহার কথা শুনে মায়ার ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে। সাথী মনে হয় তা বুঝতে পেরেছে। সে কারণে রাহার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলে,
—-তোমার কথাটা ঠিক নয়। জন্ম মৃত্যু আর বিয়ে এসব কিছুই আল্লাহপাকের ঠিক করে দেওয়া থাকে।
—-আমি জানি মামনি,ভাবীর সাথে একটু মজা নিলাম।
এরপর রাহা মায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
—-ভাবী,তুমি আবার কিছু মনে করনিতো?
মায়া মাথা নাড়িয়ে বলে,
—নাহ্
তবে রাহার কথাটা অর্ণবের গায়ে লাগে। মায়া রাহার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়। বিদেশে বড় হয়েছে রাহা। অথচ পোশাকে শালীনতাবোধ বজায় রেখে চলে। আপাদমস্তক ঢাকা রয়েছে। প্যান্টের উপর আবায়া গায়ে জড়িয়েছে সাথে মাথায় হেজাব পড়েছে। মায়ার ধারণা ছিলো বিদেশে যারা বড় হয় তারা হয়তো খুব আপটুডেট পোশাক পড়ে। কিন্তু রাহাকে দেখে ওর ধারণাটা কিছুটা বদলালো। তবে রাহার কথায় আবীর খুব বিরক্ত বোধ করছে। মনে মনে ভাবে ভাইবোন দুটি একই স্বভাবের
হয়েছে। অতিরিক্ত কথা বলে। আবীর মায়াকে নিয়ে আর কোনো আলোচনা করার সুযোগ না দিয়ে বলে,
—-চাচাজী,দাদীর রুমে চলুন।আপনাদের অপেক্ষায় দাদী বসে আছে।
সবাই মিলে জিনাতুন্নেছার ঘরে আসে। জিনাতুন্নেছা ওদের দিখে ভীষণ খুশী হন। সাতদিনের ছুটিতে আহসান দেশে এসেছে এটা শুনে জিনাতুন্নেছা মন খারাপ করে বলে,
—-মাত্র সাতদিন।
অর্ণবের বাবা আহসান চৌধুরী বলে,
—- ফুফু,ওখানে কাজের খুব প্রেসার। এর বেশী ছুটি ম্যানেজ করা সম্ভব হচ্ছিলো না। ইনশাআল্লাহ আবার আসবো।
—এরপর আমাকে আর দেখতে পাবি না।
যাইহোক জিনাতুন্নেছা মায়ার দিকে তাকিয়ে বলে
—-দুলালকে টেবিলে খাবার দিতে বলো।
মায়া ঐ রুম থেকে বের হয়ে কিচেনে গিয়ে দুলাল মিয়াকে খাবার বেড়ে দিতে বলে।
সবাই দুপুরের খাবার খেয়ে জিনাতুন্নেছার ঘরে আড্ডা দিতে বসে। অনেকদিন পর নিজের ভাতিজা বৌমা নাতি নাতনী নিজের নাতবৌ সবাইকে নিয়ে জিনাতুন্নেছা সুন্দর সময় কাটায়। আবীর আর মায়ার বেডরুমে আহসান আর বৌমার থাকার ব্যবস্থা করা হয়। মায়াই উদ্যেগ নিয়ে নিজের রুমটা ছেড়ে দেয়। রাহা এতে বেশ অবাক হয়ে বলে,
—-ভাবি,তুমি তোমার রুমটা ছেড়ে দিলে কেন? আফটার অল তোমরা নিউলি কাপল। নিজেদের মতো করে সময় কাটাতে ইচ্ছে হয় তাই না? আমি বরং তোমাকে একটা বুদ্ধি দেই। গেস্টরুমে আমি আর আম্মু থাকি। ভাইয়া আর আব্বু না হয় তোমাদের পাশের রুমটা যেটা স্টাের রুম হিসাবে ব্যবহার হয় ওটাই পরিস্কার করে দিলেই সব ল্যাটা চুকে যেতো।
—-কি বলছো রাহা? ঐ রুমটাতে জানালা একটা। তাছাড়া জানালা বন্ধ থাকাতে একটা স্যাঁতস্যাতে গন্ধ আছে। ওখানে থাকা কিছুতেই সম্ভব নয়। তার থেকে এটাই ভালো হয়েছে। ঐ রুমে ডিভান রাখা আছে। তুমি চাইলে ডিভানের উপর ঘুমাতে পারো। আমি এখন দাদীমার সাথেই ঘুমাই। নিজেদের মতো সময় কাটানোর জীবনে বহু সুযোগ পাবো। সময় তো শেষ হয়ে যাচ্ছে না। কেউ বলতে পারে না কার হায়াত কতোদিন আছে। তবে অসুস্থ মানুষটার পাশে থাকলে উনার মানসিক শক্তি বৃদ্ধি পায়। নিজেকে অপাংতেয় মনে করে না। আর আবীর ওর স্টাডি রুমে ঘুমাবে। সুতরাং চাচা চাচী ঐ রুমে আরামে ঘুমাতে পারবে। আবীর বরং খুশীই হবে।
—সবাই কিন্তু তোমার মতো করে ভাবে না। তবে আবীর দাদা অনেক ভাগ্যবান যে তোমার মতো জীবন সঙ্গিনী পেয়েছে। তুমি তোমার মতো করে না ভেবে ওর চাওয়ার গুরুত্ব দিচ্ছো। তোমার জায়গায় আমি হলে আমার বেডরুম ছেড়ে দিতাম না।
মায়া সাথে সাথে বলে,
—-না রাহা,ভুল বললে,আসলে আমি অনেক ভাগ্যবান বলে এরকম স্বামী আর শ্বশুর বাড়ি পেয়েছি। তুমি তাহলে কোথায় ঘুমাবে?
—-না বাবা,ঐ রুমে আব্বু আম্মুই থাকুক। আমি ঐ রুমে থাকলে মোবাইল চালাতে পারবো না। আব্বুর আবার মোবাইলের আলোতে ঘুম আসে না। আমি ড্রইংরুমে ঘুমাবো।
সাতদিন সময় মুহুর্তে পার হয়ে গেল। আজ রাতে আহসানদের ফ্লাইট। গোধুলীর সময় হয়ে এসেছে। ওরা নিজেদের মতো করে গোছগাছ করছে। জিনাতুন্নেছা নিজের ঘরের দখিনার জানালার পাশে বসে ভাবেন,
–এতো চিকিৎসা করানো হলো কিন্তু রোগের কোনো উন্নতি হলো না। বুকের ভিতরটা সারাক্ষণ ধুকপুক করে। আসলে আয়ু যখন ফুরিয়ে আসে তখন ওষুধপত্র কোনো কাজে আসে না। চোখ মেলে জানালা দিয়ে বাইরে তাকান। বাগানে কি সুন্দর ফুল ফুটেছে!এই মায়ার পৃথিবী ছেড়ে একদিন সবাইকে চলে যেতে হবে। ঐদিন একটা ঘটনা ঘটে যায়। মায়ার মোবাইলটা আবীরের হাতে পড়ে। মানে স্টাডি রুমে মায়া আবীরের কছে জানতে গিয়েছিলো, কখন গাড়ি এয়ারপোর্টের দিকে রওয়ানা দিবে? সে সময় ভুলক্রমে মোবাইলটা আবীরের সামনে রেখে চলে আসে।ঐ সময় অর্ণব ম্যাসেজ পাঠায়।
“আমি আমার ম্যাসেজের অপেক্ষায় আছি।”
তাছাড়া আগে যে ম্যাসেজটা অর্ণব পাঠিয়েছিলো তার নীচে একটা লাভ রিয়েক্ট দেওয়া। আবীর কৌতূহল বশত ম্যাসেজটা কার দেখতে চায়। ওপেন করে দেখে অর্ণব ম্যাসেজ পাঠিয়েছে। ম্যাসেজটা পড়ে আবীর ভীষণ কষ্ট পায়। শেষ পর্যন্ত মায়াও ওর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলো।
চলবে