#কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ অতঃপর প্রেম
পর্ব-বাইশ
মাহবুবা বিথী
অবশেষে আহসানদের যাওয়ার সময় ঘণিয়ে আসলো। রাত দশটায় ওদের ফ্লাইট। আহসান আর সাথী মাগরিবের নামাজ পড়ে নিলো। জিনাতুন্নেছা নিজের রুমে নামাজ আদায় করে লাইলিকে ধরে আস্তে আস্তে হেঁটে ড্রইং রুমে এসে সোফায় বসে। এখনি ওদের এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে বের হতে হবে। আহসান ড্রইংরুমে আবীর আর অর্ণবের দিকে তাকিয়ে বলে,
—-তোমরা মাগরিবের নামাজ পড়েছো?
এ কথা শুনে দুজনেই ইতিউতি করতে লাগলো। অর্ণব কারন হিসাবে বললো,ওকে গোসল করতে হবে। আর আবীর কোনো মন্তব্য করলো না। আহসান দুজনের দিকে তাকিয়ে বলে,
–আল্লাহপাক তোমাদের এতো কিছু দিয়েছেন তার শোকরিয়া আদায় করতে এতো কার্পন্য কেন? আর অর্ণব শরীর সব সময় পাকপবিত্র থাকে না কেন?সর্বপরি তোমরা সুস্থ সবল মানুষ। যা তোমাদের প্রতি আল্লাহপাকের বিশেষ দান। একটা অসুস্থ মানুষ বুঝে সুস্থতার কি মুল্য?এই শোকরিয়া আদায় করে কোনোদিন শেষ করতে পারবে না। আর বাকী প্রাপ্তির কথা নাই বলি।
আহসানের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে জিনাতুন্নেছা বলেন,
—তুই একটু ভালো করে বুঝিয়ে বল। আবীরকে বলতে বলতে আমি ক্লান্ত।
এরপর রাহা আর মায়ার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করতেই ওরা দুজনে নামাজ পড়েছে বলে মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়। জিনাতুন্নেছা এসময় বলে,
—-তোমরা আর দেরী করো না। এখনি রওয়ানা দেওয়া দরকার।
আহসান জিনাতুন্নেছার কাছে এসে উনাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। সে জানে,এরপর দেশে আসলে এই স্নেহশীল মাতৃস্থানীয় মানুষটাকে সে হয়তো দেখতে পাবে না। তবে ও দোয়া করে আল্লাহপাক যেন উনার হায়াত বাড়িয়ে দেন। তবে এ কথাও সত্যি দিন দিন মানুষটার শারীরিক কষ্ট বেড়েই চলেছে। মানুষটা দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত। কতদিন বাঁচবে সে জানে না। বিদেশে এতো কাজের প্রেসার থাকে যে একটু ঘন ঘন মানুষটার কাছে আসবে সে ফুরসুতটুকু ওর হয়ে উঠে না। বাবা মা চলে যাবার পর এই মানুষটাই তার কাছে বাবা মা হয়ে উঠেছিলো। একসময় আহসানকে নিজের বুকের থেকে দুহাত দিয়ে আলগা করে জিনাতুন্নেছা বলেন,
—-বাবা,আর কাঁদিস না। এই পৃথিবী থেকে একদিন সবাইকে চলে যেতে হবে। শুধু দোয়া করিস আল্লাহপাক যেন আমাকে বিনা হিসাবে জান্নাতে কবুল করে নিন।
এরপর সাথীর দিকে তাকিয়ে বলেন,
—বৌমা আমার ছেলেটার দিকে খেয়াল রেখো। আর এটা কখনও ভুলো না অর্ণবের সাথে আবীর নামে তোমার আরো একটা ছেলে আছে। ওর বিয়ে হয়েছে। দুদিন পর ছেলে মেয়ে হবে। আমার অবর্তমানে তুমিই ওর অভিভাবক।
এরপর মায়ার দিকে তাকিয়ে বললেন,
—সারাজীবন আহসান আর বৌমাকে নিজের শ্বশুর শাশুড়ীর সম্মান দিয়ে যাবে। আর আমার আবীরের দিকে সারাজীবন খেয়াল রাখবে।
মায়া সাথে সাথে আবীরের দিকে তাকায়। আবীর মুখটা ঘুরিয়ে নেয়। আবীরের এহেন আচরণে মায়া খুব অবাক হয়। জ্ঞানত ও এমন কোনো অপরাধ করেনি যে আবীর ওর সাথে এমন আচরণ করবে। এরপর অর্ণবের দিকে তাকিয়ে বলেন,
—সারাজীবন বাবা মায়ের কথা শুনে চলবে। এই অমুল্য রত্ন বেঁচে থাকা অবস্থায় কেউ বুঝে না। দুনিয়া থেকে চলে যাবার পর বুঝে সে কি হারালো! পৃথিবীতে অনেকেই নিজের বাবা মায়ের আদর দিতে চাইবে কিন্তু কেউই বাবা মা হতে পারবে না। এটাই বাস্তবতা। সেই কারণে ওদের মনে কখনও কষ্ট দিও না।
এরপর রাহার দিকে তাকিয়ে বললেন,
—-তোমার চালচলন আমার খুব ভালো লেগেছে দিদিভাই। তোমার শালীন পোশাক মার্জিত ভদ্রতাবোধ দেখে ভীষণ খুশী হয়েছি। আসলে কি জানো তো নারীর সম্মান নারীকেই রক্ষা করতে হয়। এমন ভাবে চলবে যাতে সবাই তোমাকে সম্মান করে। কিছু দুষ্টলোক তো সমাজে থাকবে। তাদেরকে চিনে রেখে সাবধানে চলতে হয়।
এরপর আবীরের দিকে তাকিয়ে বললেন,
—-তোমাকে আমি শুধু একটা কথাই বলবো যাকে জীবন সঙ্গীনি হিসাবে বেছে নিয়েছো কোনোদিন তার হাত ছাড়বে না।
দাদীর কথা শুনে আবীরের মনে হলো ওর বলা উচিত যদি কেউ স্বেচ্ছায় চলে যেতে চায় তাকে আটকে রাখার সাধ্য এই পৃথিবীতে কারো নাই। কিন্তু বলতে পারলো না। আসলে মায়ার আচরণে এখন পর্যন্ত আবীর প্রতারণা মূলক আচরণ দেখতে পায়নি। সুতরাং ওর তো বলার মতো মুখ নাই। আর মোবাইলের বিষয়টা বললে ওই তো ধরা খাবে। কারো অনুমতি ছাড়া তার মোবাইল ধরা উচিত নয়। আর আবীর ভাবছে এটা ছাড়াও মায়ার মোবাইল চেক করে ও একটা অপরাধ করে ফেলেছে। কিন্তু এছাড়া তো উপায় নেই। যার জীবনটা শুরু হয়েছে মায়ের ধোঁকাবাজি দিয়ে সে মানুষকে বিশ্বাস করবে কিভাবে? প্রতিটি সন্তানের কাছে তার আস্থার জায়গা তার মা। আবীরের সে জায়গাটি অবিশ্বাসের ভুমিকম্পে ধ্বসে গিয়েছে। তাই সামান্য গড়মিল দেখলে ওর বিশ্বাসের ভীতটা নড়ে উঠে। এ ছাড়া এটাতো ওর কাছে পরিস্কার অর্ণব একদিন মায়ার মাঝে ওর ভালোবাসা খুঁজেছিলো। তবে এটা ঠিক যতই পছন্দ করুক অর্ণবের এখন মায়াকে ম্যাসেজ পাঠানো একদম উচিত হয়নি। কেননা মায়া ওর বড় ভাইয়ের বৌ। সবই ঠিক ছিলো কিন্তু ঐ লাভ রিয়েক্টটা মায়া দিলো কিভাবে? এটাই আবীরের অস্বস্তি। না পারছে মায়াকে জিজ্ঞাসা করতে না পারছে অর্ণবের উপর রাগ ঝাড়তে। তবে মোবাইলটা এক ফাঁকে দাদীর ঘরে রেখে এসেছে। যাতে মায়া আবীরকে সন্দেহ না করে।
জিনাতুন্নেছা অর্ণবের দিকে তাকিয়ে বলেন
—আর দেরী করা ঠিক হবে না। এবার রওয়ানা দাও।
আহসান বাড়ির যে ক’জন কাজের হেলপার আছে সবাইকে ডেকে কিছু টাকা বখশিস দিয়ে আস্তে আস্তে গাড়ির কাছে এগিয়ে গেলেন। জিনাতুন্নেছা লাইলির হাত ধরে আস্তে আস্তে গাড়ির কাছে চলে আসেন। আহসান শেষবারের মতো জিনাতুন্নেছাকে জড়িয়ে ধরে বলেে,
—মন তো যেতে চায় না। তবুও যেতে হবে। এটাই বাস্তবতা। আসি ফুফু।
এ কথা বলে আহসান গাড়িতে উঠে বসে। সাথী জিনাতুন্নেছাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
—আপনার আদেশ পালন করার চেষ্টা করবো। আপনি আমার এবং আমার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন।
—-আমার শেষবেলায় আমি তোমাদের সবার জন্য শুধু দোয়াই করতে পারবো।
এরপর রাহাও সবার কাছে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে। অর্ণব অবশ্য আরো কিছুদিন থাকবে। তাছাড়া ওর গন্তব্য তো আমেরিকা। মায়া মনে মনে চাইছিলো, ও চলে যাক। তবে ওর চাওয়াতে কিছু হবে না সেটাও মায়া জানে। গাড়ি এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে ছুটে চললো।
আবীর সাথে সাথে নিজের স্টাডি রুমে ঢুকে জোরে শব্দ করে দরজাটা লাগিয়ে দেয়। এতে জিনাতুন্নেছা অবাক হয়ে মায়াকে জিজ্ঞাসা করে,
—-আবীরের কি হয়েছে? মনে হলো কারো উপর রাগ দেখালো। মায়া গিয়ে একটু দেখতো কি হলো ওর? মায়া বুঝতে পারে রাগটা মনে হয় আবীর ওর উপর ঝেড়েছে। এটা যাচাই করার জন্য মায়া আস্তে আস্তে স্টাডি রুমের দরজাটায় নক করে। ভিতর থেকে আবীর গম্ভীর কন্ঠে বলে,
—কে,
—আমি,
আবীর দরজাটা খুলে দিয়ে নিজের নির্ধারিত চেয়ারটায় গিয়ে বসে। মায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
—-কিছু বলবে?
আবীরের এই আচরণটা মায়ার কাছে খুব বিরক্ত লাগে। আজকে এক সপ্তাহ ও আর আবীর একসাথে সময় কাটাতে পারেনি। ঘরে মেহমান থাকাতে এমনিতেই রান্না ঘরে সময় কাটাতে হয়েছে। তার উপর একটা অসুস্থ মানুষের দেখভাল ওকে করতে হয়। যদিও উনার জন্য ফুলটাইম লোক রাখা আছে তারপরও ও নিজ দায়িত্বে এই বয়স্ক মানুষটার খেয়াল রাখে। এখন একটু ফ্রী থাকাতে এসেছে অথচ জিজ্ঞাসা করছে,”ও কিছু বলবে কিনা?”
আর এতো রাগ দেখানোর কি আছে? মায়ারও মনে মনে অভিমান হলো। সেটা আবীরকে বুঝতে না দিয়ে বলে,
—আমার মোবাইলটা খুঁজে পাচ্ছি না,তুমি দেখেছো?
—-তোমার মোবাইলের দেখে রাখার দায়িত্ব নিশ্চয় আমার নয়?
এ কথা আবীর নিজের ল্যাপটপে কাজ করতে লাগলো। মায়া কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে অবাক হয়ে আবীরের দিকে তাকিয়ে ভাবলো,
—এই মানুষটা আজ ওর সাথে এমনভাবে কেন কথা বলছে?
অভিমানে কান্নাগুলো দলা পাকিয়ে গলার কাছে তড়পাতে থাকে। আবীর ওর রিমলেজ চশমার উপরের অংশ দিয়ে চোখ সরু করে মায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
—-এ ঘরে তোমার কোনো কাজ না থাকলে যেতে পারো। আমার সামনে কেউ খাম্বার মতোন দাঁড়িয়ে থাকলে কাজের ডিস্টার্ব হয়।
মায়া খুব অপমানিতবোধ করলো। আবীরের দিকে একবার অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে ও ঘর থেকে বেরিয়ে আসলো। চোখদুটো অশ্রুতে টলমল করছে। এমন সময় লাইলি এসে মায়ার হাতে মোবাইল দিয়ে বলে,
—-ম্যাম,আপনার মোবাইলে ফোন এসেছিলো।
মায়া মোবাইল হাতে নিয়ে মাথা নামিয়ে নিজের সিক্ত চোখকে আড়াল করে বলে,
—-ফোনটা কোথায় ছিলো?
—-দাদীজানের ঘরে ছিলো।
—-ঠিক আছে। তুমি দাদীমার কাছে যাও। আমি ফোনে কথা বলে আসছি।
মায়া দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে নিজের রুমে চলে যায়।
মায়ার সাথে এরকম ব্যবহার করতে আবীরের খারাপ লেগেছে। তারপরও করেছে। কেন করেছে এর উত্তর ওর কাছে নেই। তবে মায়াকে আঘাত করে ও যেন নিজেকেই রক্তাক্ত করেছে। মায়া চলে যাবার সময় ওর ভাসা ভাসা চোখ দুটির পাপড়িতে শিশিরবিন্দুর মতো অশ্রুকনা লেগেছিলো যা আবীরের দৃষ্টি এড়ায়নি। রক্তিম অধরটা মেঘের অভিমানে ভার হয়েছিলো তা আবীরের চোখে পড়েছে। বুকের ভিতর মায়ার জন্য কষ্ট হয়। তারপরও পারেনি নিজের অভিমানের কারণটুকু মায়ার কাছে প্রকাশ করতে। নিজের ইগোটা যেন ওকে বাঁধা দিয়েছে। তবে আবীর মনে মনে মায়াকে বলে,
” ঘর সংসার বাঁধার ইচ্ছে আমার কখনও ছিলো না। কিন্তু তোমার সাথে আমার এই জীবনটা জড়িয়ে যাবার পর বুঝেছি জীবনে এসবের প্রয়োজন আছে। আমার জীবনে কোনো প্রেমঘটিত ব্যাপার ছিলো না। বহু মেয়ে আমার জীবনে আসতে চেয়েছে। তাদের কাউকে দেখে আমার ভিতরে প্রেম জেগে উঠেনি। অথচ তুমি আমার ভিতরের সুপ্ত প্রেমটাকে জাগিয়ে তুলেছো। তুমি আমার ভিতর ভালোবাসা নামক এক দুঃসাহসের জন্ম দিয়েছো। যা প্রতিনিয়ত চুম্বকের মতো তোমার দিকে টানতে থাকে। মানুষ গুপ্তধন পাওয়ার জন্য মাটির নীচে খোঁড়াখুঁড়ি করে। আমার যদি তোমার সাথে সাক্ষাত না হতো তাহলে কস্মিনকালেও আমি ভালোবাসা পাবার জন্য হৃদয়ে খোঁড়াখুঁড়ি করতাম না। অথচ সেই তুমি কিভাবে অর্ণবের ম্যাসেজটায় সাড়া দিলে। এ তোমার কেমন দ্বিচারিতা।”
জিনাতুন্নেছার মনটা ভীষণ খারাপ। ওরা চলে যাবার পর জানালার ধারে বসে নিজের সারাজীবনের স্মৃতিগুলো মনে মনে রোমন্থন করতে লাগলেন। হৃদয়ের আলমারীটা খুলতেই নানা রঙের ছেঁড়া ফোঁরা স্মৃতিগুলো হুড়মুড় করে সামনে এসে হাজির হলো। ছোটো বেলার সেই সব রঙিন স্মৃতি মধ্যদুপুরে পুকুরে সাঁতার কাটা,ঘুঘু ডাকা সন্ধাবেলায় হা ডু ডু দাঁড়িবান্ধা খেলে বাড়ি ফেরা, বৈশাখের ঝড়ে আম কুড়াতে যাওয়া, শীতের ভোরবেলা চুলার কাছে বসে খেজুরের রসে ভেজানো পিঠে খাওয়া আরো কতনা মধুর সেসব স্মৃতি। তারপর আবীরের দাদার সাথে বিয়ে হয়ে ঢাকায় চলে আসা। নিজেদের ব্যবসাকে দাঁড় করানো,ছেলে স্বামী হারিয়ে ফেলে নাতীকে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে নীলাম্বরী ফার্মটাকে আন্তজার্তিক পর্যায় নিয়ে যাওয়া। আল্লাহপাকের কাছে উনার শোকরানার শেষ নেই। জীবনের সকল পরিস্থিতি আল্লাহপাকের রহমতে সামলাতে পেরেছেন। শরীরটা হঠাৎ ঘেমে উঠছে। বুকে একটু ব্যথা অনুভব হচ্ছে। জিনাতুন্নেছা লাইলিকে ডেকে বলেন,
—তোর ভাবীকে ডেকে নিয়ে আয়।
উনার অবস্থা দেখে লাইলি মায়াকে ডেকে নিয়ে আসে। মায়া আসার সাথে সাথে জিনাতুন্নেছা বলে,
—-তুমি আমার কানের কাছে কলেমা পড়।
মায়া জোরে জোরে কলেমা পড়তে লাগলো। এর মাঝে আবীর চলে আসে। উনাকে ডাক্তারের কাছে নিতে চায়। জিনাতুন্নেছা রাজী হয় না। এর মাঝে উনি বমি আর কাপড়ে ইউরিন পাস করে। মায়াকে ডেকে বলে,
—মায়াবতী আমাকে গোসল করতে হবে। কাপড় নোংরা করে ফেলেছি।
মায়াবতী বলে,
—-দাদী,এই শরীরে গোসল করা ঠিক হবে না।
উনি রেগে গিয়ে বলেন,
—-তোমাকে যা বলছি তাই করো। চেয়ার সহ আমাকে ওয়াশরুমে নিয়ে যাও।
এরপর আবীরের দিকে তাকিয়ে বলে
—তুই একটু বাইরে যা।
এরপর উনি মায়াবতীর কানের কাছে ফিস ফিস করে বলে,
—বিছানার চাদরটা চেইঞ্জ করে দাও। ওরা সবাই আসছে। ওদেরকে বসতে দাও।
কিন্তু মায়া রুমে কাউকে দেখতে পায় না। শুধু ও আর লাইলি ছাড়া কেউ নেই। মায়া এর মাঝে লাইলিকে দিয়ে চাদর বদলে দেয়। উনাকে ওয়াশরুমে নিয়ে যায়। দরজাটা খোলা ছিলো দেখে জিনাতুন্নেছা মায়াকে বলে,
—+দরজাটা টেনে দাও। ওরা দেখতে পেলে আমার পর্দার বরখেলাপ হবে। আর আলমারী থেকে একটা শাড়ি লাইলিকে আনতে বলো। আমাকে এখুনি যেতে হবে।
অথচ ঘরে তো কেউ নেই। মায়ার গাঁটা কাঁটা দিয়ে উঠে। এর মাঝে লাইলি শাড়ি পেটিকোর্ট ব্লাউজ নিয়ে আসে।উনি খুব সুন্দর করে শাড়িটা পড়ে আসেন। এরপর বিছানায় শুয়ে পড়েন। আর মায়াকে বলেন মাথায় কাপড় দিয়ে তুমি জোরে জোরে কলেমা পড়ো। উনি আস্তে আস্তে চোখ বুঁজলেন।
চলবে
#কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ অতঃপর প্রেম
পর্ব-তেইশ
মাহবুবা বিথী
মায়া একটা চেয়ার নিয়ে জিনাতুন্নেছার খাটের পাশে বসে দোয়া দরুদ পড়তে থাকে। জিনাতুন্নেছার একটা হাত মায়ার হাতের মুঠোর মধ্যে রাখা আছে। মাঝে মাঝে হাতটা কেঁপে উঠছে। জিনাতুন্নেছার মুখের উপর রোগ যন্ত্রণাক্লিষ্টের ছাপ স্পষ্ট হয়ে আছে। মায়ার মনে হচ্ছে ওনার রোগ বালাইয়ের বিষগুলো যদি শুষে নেওয়া যেত তাহলে কষ্ট হয়তো কিছু কম হতো। এমনিতেই মানুষের মৃত্যু যন্ত্রণার কষ্ট হয় ভয়াবহ। মায়া একভাবে জিনাতুন্নেছার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। লাইলি খাটের পাশে দাঁড়িয়ে নিঃশব্দে কাঁদছে। মায়া ভাবে এই মানুষটার সাথে তার কত দিনেরই বা পরিচয় অথচ অন্তরের পুরোটা জায়গা দখল করে নিয়েছে। মনে হচ্ছে এই মানুষটা তার রক্তের সম্পর্কের কেউ হয় কিংবা তার নিজের দাদী হয়।মায়ার ভিতরটা ভেঙ্গেচুরে যাচ্ছে। মানুষটা কবে তার এতো আপন হয়ে উঠলো মায়া বুঝতেই পারেনি। কি গভীর মমতায় মানুষকে আপন করে নেওয়ার ক্ষমতা আল্লাহপাক তাকে দান করেছেন! মায়ার হাতের মুঠোয় মানুষটার হাতটা শিথিল হয়ে যায়। মায়া চমকে উঠে। মনে হলো জানপাখিটা মনে হয় শরীর থেকে বের হয়ে গেল। মুখের উপর এখন আর সেই যন্ত্রণার লেশমাত্র নেই। সেখানে শান্তির সুশীতল ছায়া বিরাজমান। মায়া নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলো না। অঝোরে কাঁদতে লাগলো।
জীবনের পথে চলতে চলতে মায়া যখন ক্লান্ত শ্রান্ত তখন আল্লাহপাক তাকে এই মানুষটার সাথে সাক্ষাত ঘটিয়েছেন। এই মানুষটার সাথে থেকে মায়া শিখেছে কি করে নিজের কষ্টকে আড়ালে রেখে হাসতে হয়। শরীরে এতো যন্ত্রণা ছিলো তবুও কখনও উহ্ আহ্ শব্দ করেননি। সবসময় হাসি মুখে সবার সাথে কথা বলেছেন। মানুষ একটা জীবন নিয়ে এই পৃথিবীতে এসে। সেই জীবনটা নিয়েই কখনও সুখী কখনও বা দুঃখের নদী পার হয়। মায়া ওর জীবনটা নিয়ে দুঃখের নদীটাতে নাবিকবিহীন ভাবে নৌকা নিয়ে ঘুরছিলো। কিন্তু কোথায় তার নৌকাটি ভিড়বে তার সুনিদিষ্ট ঠিকানা খুঁজে পাচ্ছিলো না। নদীর উত্তাল ঢেউয়ের মাঝে যখন নৌকা সমেত ডুবে যাওয়ার উপক্রম হয় তখনি আল্লাহপাকের অসীম মহিমায় এই মানুষটা তার নৌকার হাল ধরে। আজ মানুষটা মৃত্যুতে মায়া যেন সত্যি খুব অসহায় হয়ে পড়ে। কান্নার শব্দে আবীর দৌড়ে ওর দাদীর ঘরে চলে আসে। দাদী জিনাতুন্নেছাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু মায়ার কেন যেন মনে হয়েছিলো কোনো লাভ হবে না। সে কারণে আবীরকে বলে,
—তুমি আগে ফয়সল আঙ্কেলকে খবর দাও। উনি দেখে যা সিদ্ধান্ত নিবেন তাই হবে।
আবীর মায়ার কথায় সায় দিয়ে ডাক্তার ফয়সলকে ডেকে আনে। উনিও মুহুর্তের মধ্যে চলে আসেন। এবং জিনাতুন্নেছাকে মৃত ঘোষণা করেন। অফিসের সবাই খবর পেয়ে চলে আসেন। মোবারক মিয়া সাথে সাথে চলে আসে। আবীরদের পারিবারিক লয়্যারও চলে আসেন। তবে জিনাতুন্নেছার শেষ ইচ্ছে ছিলো মৃত্যুর পর তাকে যেন দ্রুত দাফন কাফন করা হয়। আর তাকে যেন কোনো পর পুরুষকে দেখতে দেওয়া না হয়। লাইলি এই কথাগুলো আবীরকে জানালো। মৃতের মত অনুযায়ী সব কিছু করা হলো। জানাযার সময় অর্ণব চলে আসে। ঘটনার আবহে প্রথমে ওর ধাতস্থ হতে সময় লাগে। তারপর আবীরকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। খবর পেয়ে প্রচুর মানুষ চলে আসে। লাশ নিয়ে সবাই বনানী ইদগাহ মাঠে চলে যায়। ওখানেই জানাযা পড়িয়ে রাতে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে। জিনাতুন্নেছার জন্য বনানী কবরস্থানে আগেই জায়গা সিলেক্ট করে রাখা হয়েছিলো। মায়া আর লাইলি গেটের কাছে দাঁড়িয়ে জিনাতুন্নেছার শেষ যাত্রার দিকে তাকিয়ে থাকে আর মনে মনে আল্লাহপাকের কাছে তার জন্য জান্নাতের প্রার্থনা করে। জিনাতুন্নেছাকে বহনকারী খাটিয়া দৃষ্টির আড়াল হতেই মায়া আর লাইলি লিভিংরুমে চলে আসে। মায়া লাইলির দিকে তাকিয়ে বলে,
—মানুষের মৃত্যু এতো সুন্দর হতে পারে এ ধারণা তার ছিলো না। দাদীমা অনেক ভালো মানুষ ছিলেন।
লাইলীও সাথে সাথে বলে,
—ম্যাম, আপনি ঠিকই বলেছেন। ছোটোবেলা থেকে মানুষের বাসায় কাজ করে পেট চালাই। কিন্তু উনার মতো মিষ্টভাষী মানুষ আমার দেখা হয়নি। আর একটা কাজ করতেন, মাস শেষ হওয়ার আগেই আমাদের বেতন দিয়ে দিতেন। মাঝে মাঝে বলতাম, দাদীমা মাসের তো এখনও কটা দিন বাকি আছে। উনি বলতেন শ্রমিকের ঘাম শুকিয়ে যাবার আগে তার পারিশ্রমিক বুঝিয়ে দিতে হয়। আমি শুধু সেটুকুই পালন করি। আর কখনও আমাদের বাসী পঁচা খাবার খেতে দিতেন না। উনি নিজে যা খেতেন আমাদের তাই খেতে দিতেন।
মায়া মন্ত্রমুগ্ধের মতো লাইলির কথাগুলো শুনছিলো। মায়ার ভিতরটা কেমন অস্থির হয়ে উঠে। হঠাৎ মনে হলো বিয়ের শর্ত অনুযায়ী আবীর যদি ওকে চলে যেতে বলে তখন আবার ওকে চাকরি খুঁজতে হবে। সামনে রুবেলের এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। ইরাও আবার পড়াশোনা শুরু করেছে। যদিও টিউশনি শুরু করেছে। কিন্তু টিউশনির টাকা দিয়ে হাত খরচ চালানো যায়। সংসার চালানো যায় না। এর জন্য মোটা টাকার যোগান দিতে হয়। সামনে ওর ভাগ্য কি ঘটবে জানে না। নিজেকে প্লাটফর্মে অপেক্ষামান যাত্রীর মতো মনে হলো। হয়তো ওর গম্তব্য পৌঁছে দিতে আবার নতুন কোনো ট্রেনের অপেক্ষা করতে হবে। আজ কতদিন হয়ে গেল আবীর ওর সাথে ভালো করে কথা বলে না। কি ওর অপরাধ তাও মায়া জানে না। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত একটা বাজে। মানুষের জীবন কতোই না ক্ষনস্থায়ী। এই তো সন্ধার সময় যখন আহসান আঙ্কেল চলে যাচ্ছিলেন তখনও দাদী হেঁটে গিয়ে বিদায় জানালো। আর এই ঘন্টা কয়েকের মধ্যে মানুষটা সাড়ে তিনহাত মাটির ঘরে ঠিকানা হলো। মায়ার একটু একা থাকতে মন চাইছে। ও সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় নিজের ঘরে চলে যায়। ইরা তখন ফোন দিয়েছিলো। মায়ার ব্যাক করা হয়নি। ফোনটা কাছে নিয়ে ওপেন করতেই দেখে অর্ণব আবারো ম্যাসেজ পাঠিয়েছে। ম্যাসেজের উত্তর জানতে চেয়েছে। আগের ম্যাসেজটার নীচে লাভ রিয়েক্ট দেওয়া আছে। কিন্তু মায়াতো কোনো রিয়েক্টই দেয়নি। তাহলে এটা কিভাবে হলো। সাথে সাথে মায়া লাভ চিহ্নটা সরিয়ে ফেললো। হয়তো ওর অজান্তে চাপ লেগে এই ঘটনা ঘটতে পারে। হঠাৎ মায়ার মনে হলো,আবীরের চোখে আবার পড়েনিতো? তাহলে তো বিশাল ব্যাপার ঘটে যাবে। নীচে গেট খোলার শব্দ শোনা গেল। মনে হলো আবীর আর অর্ণব চলে এসেছে। মোবারক মিয়ার গলাও শোনা গেল। মায়া নীচে নেমে আসলো। আবীর ওর স্টাডি রুমে বসে আছে। মায়া রুমের দরজায় নক করলো। ভিতর থেকে আবীর বলে,
—কে,
—আমি
বলে মায়া রুমের ভিতরে ঢুকে যায়। আবীর টেবিলের উপর মাথা রেখে মৃদুস্বরে কাঁদতে থাকে। মায়া টেবিলের সামনে দাঁড়ায়। ওর খুব ইচ্ছে হচ্ছে আবীরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে। কিন্তু পরক্ষনে নিজেকে সামলে নেয়। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে আবীরের সামনের চেয়ারটায় মায়া বসে। এরপর ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
—এভাবে ভেঙ্গে পড়লে চলবে না। তোমাকে এখন সবকিছুর হাল ধরতে হবে। সেই দুপুরে খেয়েছো। এসো কিছু মুখে দাও। আমি জানি তোমার গলা দিয়ে হয়তো কিছু নামবে না তারপরও জোর করে কিছু মুখে দাও।
আবীর টেবিলের উপর থেকে মাথা তুলে মায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
—আমার খেতে ইচ্ছে করছে না। আমি একটু একা থাকতে চাইছি। তুমি মোবারককে আসতে বলো।
আবীরের কথায় মায়া একটু আহত হয়। তবে আবার এটাও ভাবে শোকের মাঝে হয়তো ওর কিছু ভালো লাগছে না। মায়া স্টাডি রুম থেকে বের হয়ে লিভিং রুমে আসে। মোবারক মাথা নীচু করে সোফায় বসে আছে। মায়ার পায়ের শব্দে মাথা তুলে তাকিয়ে সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
—ম্যাম কিছু বলবেন?
—-,আবীর আপনাকে রুমে ডাকছে। আর আপনার স্যারকে কিছু খেতে বলেন। উনার আবার গ্যাস্টিকের সমস্যা আছে।
—-ঠিক আছে।
মোবারক সাথে সাথে আবীরের রুমের সামনে গিয়ে দরজায় নক করে। আবীর ওকে ভিতরে যেতে বলে।
মোবারক রুমের ভিতরে গিয়ে বলে,
—-স্যার আমাকে ডেকেছেন?
—-হুম,মানে দাদীমা কি সব কিছুর উইল করেছেন?
—-হুম,তবে কাগজ পত্র সব উকিল মজিদমোল্লার কাছে রাখা আছে।
—-উনাকে কাল আসতে বলেন।
—-ঠিক আছে। স্যার একটু কিছু মুখে দেন। তা,না হলে শরীর খারাপ করবে।
আবীর নিজের রুম থেকে বের হয়ে দেখে লিভিংরুমে অর্ণব কাঁদছে। আর মায়া ওকে সান্তনার বানী শোনাচ্ছে। এই দৃশ্য দেখে আবীরের মেজাজ চড়ে গেল। মোবারক মিয়াকে ডেকে স্টাডি রুমের ভিতরে নিয়ে বলে,
—মায়ার বাকি টাকাটা বুঝিয়ে দেন। আর ওকে চলে যেতে বলেন। লাইলিকেও ছুটি দিয়ে দেন।
—-দাদীমা তো ম্যামকে ছাড়তে আপনাকে নিষেধ করেছে।
—সেটা আমি বুঝবো। আপনাকে যা করতে বলেছি তাই করুন।
আবীরকে দেখে মায়া অর্ণবের সামনে থেকে উঠে নিজের রুমে চলে যায়। মায়া এটুকু বুঝেছে আবীর ওর ক্ষেত্রে ভীষণ পজেসিভ। আবীরের এই আচরণটা মায়ার অপছন্দ তবুও মেনে নেওয়ার চেষ্টা করে। দরজায় কে যেন নক করছে। মায়া উঠে দরজাটা খুলে দেখে মোবারক দাঁড়িয়ে আছে।
—-ম্যাম একটু কথা আছে। ভিতরে আসবো?
—আসুন।
মোবারক ভিতরে এসে মায়াকে বলে,
—-শোকে স্যারের মাথা ঠিক নেই। আপনি বরং কাল আপনার বাসায় চলে যান। আর আপনার কাবিনের বাকি টাকা কাল আপনার ব্যাংকে ট্রান্সফার করে দিবো।
—-কথাটা কি আপনার স্যারের?
কথাগুলো বলে মোবারক মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে। মায়া ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
—-ঠিক আছে। আমার বুঝা হয়ে গেছে। আর কিছু বলবেন?
—-না,মানে সকালে গাড়ি কখন আসতে বলবো?
মায়া বিষন্নতার হাসি হেসে বলে,
—আমাকে নিয়ে আপনার স্যার অনেক ভেবেছেন। আর ভাবতে হবে না। আমি এখন একটু একা থাকতে চাচ্ছি।
মোবারক রুম থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর মায়া বালিশে মাথা রেখে অঝোরে কাঁদতে থাকে। সারারাত মায়া ঘর থেকে বের হয়নি। রাতে একবার লাইলি এসে ডেকেছিলো। মায়া দরজা খুলেনি। চোখ বন্ধ করে বিছানায় শুয়েছিলো।
ভোরের দিকে মায়া শোয়া থেকে উঠে নিজের সুটকেসটা গুছিয়ে নেয়। ঠিক এ বাড়িতে আসার সময় যে কয়টা কাপড় সাথে নিয়ে এসেছিলো ঠিক সে কয়টি কাপড় সুটকেসে নিয়ে নেয়। আবীরের দেওয়া গয়না সব ক্লসেটে রেখে তালা দিয়ে চাবি টেবিলের উপর রাখে। এরপর আবীরকে উদ্দেশ্য করে একটা চিঠি লিখা শুরু করে।
“আবীর”
যেদিন তোমার সাথে আমার প্রথম দেখা হলো,সেদিনই আমি তোমার প্রেমে পড়েছিলাম। তোমার ব্যক্তিত্ব, তোমার ভদ্রতাবোধ আমাকে তোমার দিকে আকৃষ্ট হতে প্রলুদ্ধ করেছে। মধ্যবিত্ত পরিবারে আমার জন্ম। আমার উপর অলিখিত ভাবে আমার পরিবারের দায় ছিলো। দেখতে সুন্দরী ছিলাম বিধায় অনেকেই প্রেমের সাজি উপহার দিতে চেয়েছে। কিন্তু আমি নিতে পারি নাই। কিংবা কেন যেন আমি তাদের কারোপ্রতি আকর্ষণ অনুভব করি নাই। তার একটাই কারণ আমার মনে হতো তারা আমার সৌন্দর্যকে উপভোগ করতে চায়। কিন্তু আমি চেয়েছিলাম অন্তরের ভালোবাসা। তুমি বিশ্বাস করবে কিনা জানি না,তোমাকে আমার ভালোলাগার প্রধান কারণ আমি এতোদিন তোমার সাথে থাকলাম,আমাকে ভোগ করার বিন্দুমাত্র অভিপ্রায় তোমার মাঝে দেখিনি। আমি বুঝেছি তুমি আগে আমার অন্তরের ভালোবাসা ছুঁতে চেয়েছো। কারণ যে পুরুষ কোনো নারীর অন্তরকে যখন ছুঁতে পারে সেই নারী এমনিতেই তার বাহুবন্ধনে ধরা দেয়। আজ বলতে দ্বিধা নেই বকুলের সুবাস নিয়ে তুমি আমার হৃদয়ের চরাচরে আবির্ভূত হয়েছো। আর আমার শরীরের সমস্ত স্পন্দন প্রতিনিয়ত তোমার দিকে ধাবিত হয়েছে। আমার চেতনার স্তরে স্তরে ভালোবাসার আমন্ত্রণ অনুভব করলাম। মনে হলো এই আমি যুগ যুগ ধরে তোমার ভালোবাসার পথ চেয়ে বসে আছি। তোমাকে দেখে আমার চোখের তারা কেঁপে উঠেছে। তোমার শরীরের সুঘ্রান আমাকে মোহিত করেছে। মনে হলো তোমার জন্য আমি সব কিছু সইতে পারবো। দুস্তর সমূদ্র পাড়ি দিতে পারবো। তোমার জীবনের সাথে নিজেকে জড়িয়ে আল্লাহপাকের কাছে শোকরিয়া আদায় করেছি। তুমি আমার বুকে ভালোবাসার শতদল ফুটিয়ে দিয়েছো। আমার শরীরের প্রতিটি রক্তবিন্দু আমাকে তোমার দিকে তাড়িত করেছে। তুমি বুঝতে কিনা আমি জানি না। কখনও মনে হতো তুমি আমার অনেক আপন আবার কখনও মনে হতো দূরের কেউ। সবশেষে এটাই ভেবেনিলাম তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসোনি।তবে তোমায় একটা কথা বলি,ভালোবাসার মানুষকে বিশ্বাস করতে হয়। কারণ বিশ্বাসের ভিতের উপর দাম্পত্য টিকে থাকে। দু’একটা ঘটনা ব্যতিক্রম হতেই পারে তাইবলে সবাইকে এক পাল্লায় মাপতে যেও না। এতে তুমি তোমার জীবনের সুহৃদকে হারিয়ে ফেলবে। যখন ভুল বুঝতে পারবে তখন হয়তো তার ফেরার সময় হবে না। আর একটা কথা তোমাদের দেিয়া সব গয়না ক্লসেটে রাখা আছে। চাবি দিয়ে খুলে দেখে নিও।
“মায়াবতী”
মায়া খুব ভোরে ফজরের নামাজ আদায় করে জান্নাত মহল থেকে বের হয়। গেটের দারোয়ান সাদেক মিয়া মায়াকে দেখে জিজ্ঞাসা করে,
—-ম্যাম, এতো সকালে কোথায় যাচ্ছেন? গাড়ি নিলেন না?
মায়া মিষ্টি করে হেসে বলে,
—-তোমার স্যার সব জানে।
মায়া ওর অপমান ওর কষ্ট কাউকে বুঝতে দিতে চায় না। সে কারনে মুখে মিষ্টি হাসি টেনে একবুক বেদনা নিয়ে জান্নাত মহল থেকে বের হয়ে নিজের বাড়ির পথে রওয়ানা দেয়।
চলবে