কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ অতঃপর প্রেম পর্ব-০৬

0
1

#কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ অতঃপর প্রেম
পর্ব-ছয়
মাহবুবা বিথী

মায়া রুমটা সুন্দর করে গুছিয়ে দেয়। বাড়ির সবাইকে বলে কেউ যেন ইরা আর জাওয়াদের সাথে খারাপ ব্যবহার না করে। মায়া বাইরে থেকে খাবার অর্ডার করে। কাচ্চি বিরিয়ানি মুরগীর রোস্ট গরুর মাংসের রেজালা, দই মিষ্টি বোরহানি সবই নিয়ে আসে। রুবেল আর নোবেল ভীষণ খুশী হয়। আজ ম নিজ হাতে খাইয়ে দেয়। কাল থেকে মায়ার নতুন জীবন শুরু হবে। বাবাকে আর কবে খাওয়াতে পারবে কে জানে? অনেকদিন পর এতো মজার খাবার খেতে পেরে ওর বাবার চোখ দুটে ভিজে উঠে। মায়ার ও চোখটা আদ্র হয়ে উঠে। ওর মনে পড়ে বাবা যখন চাকরিতে ছিলো প্রতি শুক্রবার ওদের বাসায় পোলাও রান্না হতো। ওর বাবা নামাজ পড়ে আসার পর সব ভাইবোন একসাথে খেতে বসতো। ওর বাবা ওর মাকে বলতো,
—-আমার মেয়েদের প্লেটে বেশী বেশী পোলাও রোস্ট দিবে। যাতে শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে খাওয়ার আক্ষেপ না থাকে।
আহা! কতনা মধুর ছিলো সেসব দিন। চাইলেও আর সেসব দিনে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়।
তবে খাওয়া শেষ হবার পর মায়া ওর বাবার কাছে ইরার বিয়ের কথা বলে। অসুস্থ হলে কি হবে। মাথা তে ঠিক কাজ করে। সাথে সাথে ইসহাক মিয়া বললেন,
—তোর বিয়ের আগে ও কিভাবে বিয়ে করে? তুই তো বড়। বিয়ে তো তোর আগে হওয়া উচিত।
—- আব্বা এতে কোনো সমস্যা নাই। আল্লাহর হুকুম হলে আমারও বিয়ে হয়ে যাবে।
ডোর বেলটা বেজে উঠে। মায়া ওর বাবার মুখ মুছিয়ে দিয়ে ওষুধ খাইয়ে ড্রইংরুমে চলে আসে। কারণ ওর মায়ের তো ঠিক নাই। যদি ওদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে ফেলে। না ওর মা কথা রেখেছে। মুখে হাসি না থাকলেও দায়িত্ব ঠিকঠাকভাবে পালন করেছে। শরবত আর মিষ্টি খাইয়ে ওদের বরণ করে ঘরে তুলেছে। যদিও ইরা আর জাওয়াদও অস্বস্তিতে আছে। সহজ হতে পারছে না। মায়া ওদের দুজনকে বাবার কাছ নিয়ে গেল। ইরা কাঁদতে কাঁদতে ওর বাবাকে বললো,
—আব্বা আমাকে মাফ করে দাও। আমি একটা ভুল করে ফেলেছি।
—-বিয়ে করাটা ভুল নয় তবে তোমার সময়টা ভুল ছিলো। তোমার বড় বোনের এখনও বিয়ে হয়নি। সে কথা ভাবা উচিত ছিলো। তোমাদের পড়াশোনা এখনও শেষ হয়নি। সে কারনে এই মুহুর্তে বিয়ে করা উচিত হয়নি।
মায়া ওর বাবার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলে,
—যা হওয়ার তাতো হয়ে গিয়েছে। আব্বা এখন ওদের সামনের চলার পথ যেন সহজ হয় সেই দোয়া করো। আর আমিও কাল নতুন চাকরিতে জয়েন করছি। আমাকে এখন থেকে মানিকগঞ্জে থাকতে হবে। আমার জন্য দোয়া করো আব্বা।

এর মাঝে সালেহা বেগম টেবিলে খাবার বেড়ে দিলেন। মায়া ওদেরকে ওর বাবার রুম থেকে নিয়ে এসে খাবার টেবিলে বসিয়ে দিলো। খুব মজা করে সবাই রাতের খাওয়া শেষ করলো। মায়া সবার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলো। কাল থেকে ওকে এগুলো মিস করতে হবে। বুকের ভিতরটা মোঁচড়াতে লাগলো। চোখটা বার বার ভিজে উঠতে লাগলো। কত সুন্দর এই দিনগুলো। সালেহা বেগম খেয়াল করলেন, মায়া তেমন কিছুই খেলো না। উনি ভাবছেন ইরা এভাবে বিয়ে করাতে হয়তো মায়ার মনের উপর চাপ পড়েছে। মনে মনে ইরার উপর উনি ক্ষুদ্ধ হলেন।

খাওয়া শেষ করে ইরা আর জাওয়াদ নিজেদের রুমে চলে যায়। মায়া বালিশ নিয়ে ড্রইংরুমে চলে আসে। এই রুমে একসেট সোফার পাশে একটা ছোটো খাট রাখা হয়েছে। কালে ভদ্রে বাসায় মেহমান আসলে এখানেই ঘুমায়। খাটের পাশে একটা টেবিল রয়েছে। টেবিলের কোল ঘেঁসে একটা বুকসেলফ রয়েছে। সেখানে নানা ধরণের বই রাখা আছে। এতোটুকু ঘরে এতোগুলো ফার্নিচার থাকায় রুমটা যেন হিজিবিজি হয়ে আছে। রাতের সব কাজ গুছিয়ে সালেহা বেগম মায়ার পাশে বসে বলেন,
—-আমাকে কি তোর বোকা মানুষ মনে হয়?
মায়ের কথা শুনে মায়া চমকে উঠে। মনে মনে ভাবে আম্মা কি কিছু বুঝে ফেলেছেন? না বুঝার ভান করে মায়া বলে,
—-এটা তুমি কি বললে আম্মু? তোমাকে বোকা ভাবতে যাবো কোন দুঃখে। তাছাড়া তুমি খোলাসা করে না বললে কিভাবে বুঝবো তুমি কোন বিষয়ে কথা বলছো?
—-ইরা কনসিভ করেছে তাই না? সেই কারণে বোনের কুকর্ম চাপা দিতে এভাবে চটজলদি বিয়ে দিয়েছিস?
—-আস্তে বলো। দেয়ালেরও কান আছে। তোমার ছেলেরা শুনলে ইরার মান সম্মান থাকবে না। এছাড়া আমি আর কি করতে পারতাম? ভাগ্যিস ছেলেটা পাশ কেটে চলে যায়নি। ওকে সাথে সাথে বিয়ে করতে রাজী হয়েছে। তা,না হলে কি হতো বলতো?
—+আজ মনে হচ্ছে জন্মের সময় ওর মুখে লবন দিয়ে মারা উচিত ছিলো। এই অকাম করতে ও কিভাবে পারলো?
—-আম্মা এসব কথা বলো না। যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। এখন সামনের দিন যেন ভালো হয় সেই দোয়াই করো। রাত বারোটা বাজে। তুমি শুয়ে পড়ো। আমারও একটু ঘুমানো দরকার।
সালেহা বেগম চলে গেলেন। মায়া জানে আজ ওর দুচোখে ঘুম আসবে না। এটা ভেবে ওর ভালো লাগছে, ইরা অন্তত ওর ভালোবাসার মানুষের সাথে ঘর বাঁধতে পেরেছে। মায়ার মতো ভাগ্য ওকে অন্তত বরণ করতে হলো না। কাল থেকে শুরু হবে ওর নতুন জীবন। সে জীবনটা কেমন হবে ও জানে না। বিছানায় শুয়ে ও ঘুমানোর চেষ্টা করছে।

ঘুম ভাঙতেই ইরার দৃষ্টি জানালা ভেদ করে আকাশের বুকে পড়লো। আকাশটা বিশাল। বিশাল আকাশটা দেখলে মনটাও বিশাল হয়ে যায়। আজকের সকালটা ইরার কাছে অন্যরকম সুন্দর লাগছে। ওযে কনসিভ করেছে এটা ও বুঝতে পেরেছিলো। কিন্তু কিভাবে বিষয়টা সামনে আনবে সেই উপায় বের করতে পারছিলো না। মাথা থেকে একটা বিশাল চিন্তা দূর হলো। জাওয়াদের দিকে ইরা তাকিয়ে দেখলো। ওকে জড়িয়ে কি নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে। ইরা ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো। চেহারাটা নিস্পাপ লাগছে। ইরার তাকিয়ে থাকা দেখে জাওয়াদ বললো,
—-এভাবে তাকিয়ে থেকো না নজর লাগবে। আপন মানুষের নজর বেশী লাগে।
—-তুমি ঘুমের ভান করে শুয়ে বউয়ের আদর খাওয়ার চেষ্টা করছো।
—কিন্তু বউয়ের আদর তো কপালে জুটলো না।
ইরা হঠাৎ একটু গম্ভীর হয়ে গেল। সেদিকে লক্ষ্য করে জাওয়াদ বলে,
—-কি ব্যাপার মুড অফ হয়ে গেল কেন? কি ভাবছো?
—-তেমন কিছু না। আপার জন্য মন খারাপ লাগছে। আমাদের এই সংসারটার জন্য আপা মুখে রক্ত তুলে ইনকাম করছে। সব দায়িত্ব সুচারুরুপে পালন করার চেষ্টা করছে। আর আমি স্বার্থপরের মতো বিয়ে করে নিজের সুখটা উপলব্ধি করছি। আপার ঋণ আমি কোনোদিন শোধ করতে পারবো না। আমি জানি, আমার পরিবারের সবার চোখে আমি অনেক ছোটো হয়ে গিয়েছি। শুধু তোমার জন্য।
—-শুধু শুধু আমাকে দোষের ভাগিদার কেন করছো? আমিও এই মুহুর্তে বিয়েশাদী করতে চাইনি।
—-কেন,মনে নাই? তুমি আমাকে জোর করলে কেন?
—-কিন্তু রুমডেট তুমি করতে চেয়েছো?
—-চেয়েছি,আজকাল সবাই তো করে। তাই বলে—-। আমি আম্মাকে এই মুখ দেখাবো কি করে?
জাওয়াদের কাছেও বিষয়টা খুব বিব্রত করছে। ওকেও তো সবাই চরিত্রহীন ভাববে। জাওয়াদ গলার স্বরটা কোমল করে ইরাকে বলে,
—যা হবার তাতো হয়ে গিয়েছে। এখন এই বিষয়টা নিয়ে আফসোস কিংবা অনুশোচনা করে লাভ নেই। বরং যে আসছে তার জন্য আমাদের দুজনকে মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে হবে।
দরজা নক করার শব্দে দুজনেই তাদের কথপোকথন বন্ধ রাখলো। এরপর ইরা নিজের এলোমেলো শাড়িটা গুছিয়ে নিয়ে খাট থেকে নেমে দরজা খুলে বললো,
—-ডাকছিস কেন?
— আম্মা তোমাদের নাস্তা খেতে ডাকছেন,
—-আসছি।

আজ শুক্রবার। সালেহা বেগম দুই ছেলেকে জুম্মার নামাজে পাঠানোর জন্য হাঁকডাক করছেন। ইরাও জাওয়াদকে নামাজে যাওয়ার জন্য তাড়া দিতে লাগলো। মায়া সকাল এগারোটায় কাউকে কিছু না বলে বাসা থেকে বের হয়ে গিয়েছে। আসলে কাল ওর মাথা কাজ করেনি। জাওয়াদের জন্য আরো কিছু কেনাকাটার দরকার ছিলো। বেশীদূর যায়নি। মিরপুর নিউমার্কেটে ঢুকে দুটো ট্রাউজার টি শার্ট আর একটা সুতি পাঞ্জাবী কিনে রিকশা করে বাড়ির পথে রওয়ানা দিলো।আসলে ওর হাতে সময় কম।আজকে ওকে তিনটার মধ্যে বাসা থেকে বের হতে হবে। আবীর চৌধুরী সাথে সেরকমই কথা হয়েছে। ঘরে ঢুকতেই সালেহা বেগম বললেন,
—–সাত সকালে না বলে কোথায় গিয়েছিলি?
হাতে শপিং ব্যাগটা দেখিয়ে বললো,
—-কিছু টুকটাক কিনতে গিয়েছিলাম।
এরপর ইরা আর জাওয়াদকে ড্রইংরুমে ডেকে মায়া শপিং ব্যাগটা জাওয়াদের হাতে দিয়ে বললো,
—-দেখো তোমার পছন্দ হয় কিনা?
—-আপা,এসবের দরকার ছিলো না।
—-ছিলো ভাই,আজ তো জুম্মাবার। তোমাকে তো নামাজে যেতে হবে।
পোশাকগুলো দেখে জাওয়াদ বললো,
—-খুব সুন্দর হয়েছে।
এরপর মায়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
—- আপা,আমি ভাবছি আমাদের বাসায় গিয়ে আব্বা আম্মাকে আরো একবার বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করবো। বুঝিয়ে বললে হয়তো উনারা মেনে নিতেও পারেন। এভাবে শ্বশুরবাড়ি থাকাটা ভালো দেখাবে না।
জাওয়াদের কথা শুনে সালেহা বেগম মনে মনে বললেন,
“এমনিতেই টানাটানির সংসার। তার উপর আবার নতুন একজন সদস্য বাড়লে উনার পক্ষে সংসার চালানো কঠিন হয়ে যাবে। নিজের সন্তানদের শাক, ভর্তা, ভাজি দিয়ে ভাত খেতে দেওয়া যায় কিন্তু পরের সন্তানকে এগুলো দেওয়া যায় না। মাঝখানে বদনামের ভাগিদার হতে হবে। যেভাবেই হোক জামাইতো হয়েছে। সুতরাং উনি চান না নিন্দার ভাগিদার হতে। আপদ বিদেয় হলে উনি খুশী। আর ইরার ও নিজের ভুলের খেসারত দেওয়া উচিত।”
মায়া কিছু বলার আগেই সালেহা বেগম বললেন,
—সেটাই মনে হয় ভালো হয়।
এমন সময় ডোর বেলটা বেজে উঠলো। নোবেল দরজা খুলে দেখে ওর ছোটো ফুফু জবা আর চাচা জহির এসেছে। নোবেল সালাম দিয়ে ভিতরে আসতে বলে। জবা ভিতরে ঢুকেই ড্রইংরুমে সালেহাকে বললো,
—-ভাবি চুপি চুপি মেয়ের বিয়ে দেওয়াটা কি ঠিক হলো। আমাদের ভাইয়ের মেয়ের বিয়ে তুমি আমাদের ছাড়াই দিয়ে দিলে এ কেমন কথা?
—-কেবল তো কাবিন হয়েছে। উঠানোর সময় তোমাদের অবশ্যই বলতাম।
চাচা জহির এসময় একটু খোঁচা দিয়ে বললো,
—-তা কাজটা তুমি ঠিক করো নাই। বড়টাকে রেখে ছোটোটার আগে বিয়ে দেওয়া একদম উচিত হয় না।
সালেহা বেগম মনে মনে ভাবছেন এই বিয়ের খবর উনারা কিভাবে জানলেন? মায়া ঠিক বুঝেছে। এটা ইরার কাজ। নিশ্চয় ফেসবুকে ওর আর জাওয়াদের ছবি আপলোড দিয়েছে। এর পর জাওয়াদের দিকে তাকিয়ে জবা বললো,
—এই বুঝি তোমাদের জামাই।
কথার ধরণটা জাওয়াদের ভালো লাগেনি। তারপরও ভদ্রতা রক্ষা করে সালাম দিলো। জহির মিয়া সালামের উত্তর দিয়ে বললো,
—-জামাই বাবাজী কোথায় চাকরি করছেন?
—-না, এখন পড়াশোনা শেষ হয় নাই।
—-ও—বেকার।
বমির বেগ আসাতে ইরা ছুটে ওয়াশরুমে চলে গেল। মায়া ইরার উপর প্রচন্ড বিরক্ত হলো। কথার প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে দিতে মায়া বললো,
—-চাচা, আজ তো জুম্মাবার। নামাজে যেতে হবে। আপনি কি প্রস্তুতি নিয়ে এসেছেন?
—-হা, আমি গোসল করেই এসেছি। কতদিন ভাইজানের সাথে দেখা হয় না। তাই সময় বার করে আজকে আসলাম।
সালেহা বেগম মনে মনে বললেন,তা ঠিক বলেছো জহির মিয়া। আজ তো এসে আমাকে কথা শুনাতে পারবে। এমনিতে সাহায্য সহযোগিতার নাম গন্ধ নেই। কথা শোনানোর বেলায় ষোলো আনার উপর আঠারো আনা। সালেহা বেগম বুঝে পেলেন না ওদের কানে কিভাবে এই বিয়ের খবর পৌঁছালো? সংসারের ঝামেলায় ডিজিটাল নেটওয়ার্ক সম্পর্কে উনার ধারণা নাই। যদি জানতেন হয়তো চুলের মুঠি ধরে ইরাকে কয়েক ঘা লাগিয়ে দিতেন। যাইহোক এখন উনাকে কিল খেয়ে কিল হজম করতে হচ্ছে।
এদিকে মায়া জাওয়াদকে এখান থেকে সরিয়ে দিতে বললো,
—তুমি গোসল সেরে নাও। একটু পরেই নামাজে যেতে হবে।
জাওয়াদ চলে যেতেই জহির মিয়া সালেহাকে বললো,
—শেষ পর্যন্ত বেকার ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে দিলে? এমনিতেই ভাইজানের সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হয় তারউপর আবার উটকো ঝামেলা বাড়ি বয়ে নিয়ে আসলে।
ওর চাচার কথা শুনে মায়ার প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে। নিজের বিরক্তি দমন করতে না পেরে বললো,
—-চাচা,আমাদের সংসার তো আপনাকে চালাতে হয় না। তাই এই বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করে আপনার সুস্থ মাথা ব্যস্ত করে লাভ নেই।
—এই তোমাদের এক দোষ। ভালো কথা বললেই গায়ে ফোসকা পড়ে। যাই ভাইজানের সাথে দেখা করে আসি।
জহির চলে যেতেই জবা ইতিউতি করে সালেহা বেগমকে বললো,
—-তোমার মেয়ে কি কনসিভ করেছে?
সালেহা বেগম কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন। মায়া তাকে বলতে না দিয়ে বললো,
—বিয়ে যখন হয়েছে কনসিভ করাতো স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে এসব কথা কি আলোচনার বিষয়?
জবা জানে,তার এই ভাতিজীর কথায় ধার আছে। তাই আর কথা বাড়ালেন না। সালেহা বেগম মায়াকে এখান থেকে সরিয়ে দিতে বললেন,
—-তোর তো তিনটায় বের হতে হবে। তুই গোছগাছ করে নে।
আসলেই হাতে সময় নেই। মায়ার এখনও ব্যাগ গোছানো হয়নি। ওদিকে জাওয়াদ রুবেল নোবেল সবাই নামাজে চলে গিয়েছে। ওর চাচা এখনও যায়নি। মায়া উনাকে ছোটোবেলা থেকে দেখেছে মসজিদে ঢুকেন সবার শেষে আর বের হয়ে আসেন সবার আগে। ওয়াশরুমটা খালি পেয়ে ও দ্রুত গোসল সেরে নেয়। রুমে এসে দেখে ইরা মুখ গম্ভীর করে বসে আছে। সেদিকে লক্ষ্য করে মায়া বলে,
—-কিরে,এরকম প্যাঁচার মতো মুখ করে রেখেছিস কেন?
—ভাবছি,এখানে থাকা ঠিক হবে না। জাওয়াদের সাথে ওর বাড়িতে চলে যাওয়াই ভালো হবে।
—যা করবি বুঝে শুনে করবি। তবে একটা পরামর্শ দিতে পারি।
—-কি
—-অফিসে আজ জয়েন করার পর বুঝবো অফিসের হাফভাব।যদি লোন নেওয়ার অপশন থাকে জাওয়াদকে একটা বাইক কেনার জন্য লোন দিবো। ও প্রতিমাসে একটু একটু করে দিয়ে লোনটা শোধ করে দিবে। আর যতদিন চাকরি না হয় এটা চালিয়ে খরচ যোগাবে। কেমন হয়?
—ঠিক আছে বিষয়টা মাথায় থাকলো। তোমাকে সময় মতো জানাবো।
মায়া মনে মনে ভাবছে ওকে জিজ্ঞাসা করবে, ফেসবুকে ছবি আপলোড দিয়েছে কিনা? মায়ার ভাবগতিক দেখে ইরা বললো,
—-তুমি কি কিছু বলবে আপু?
—-না,মানে তুই কি ফেসবুকে তোর আর জাওয়াদের ছবি আপলোড দিয়েছিলি?
ইরা আমতা আমতা করে বললো,
—-হুম,
মায়া রেগে গিয়ে বললো,
—-মাথায় একটু বুদ্ধি নিয়ে চলা ফেরা করিস। এভাবে হাঁদার মতো কাজ করলে তো চলবে না। তার উপর এখন বিয়ে হয়েছে। ঘটে এখন বুদ্ধি আরো বেশী রাখা লাগবে।
—কেন কি হয়েছে?
—-চাচা ফুফুরা কোত্থেকে খবর পেলো?
—-কোত্থেকে?
—-ন্যাকা যেন বুঝতে পারছে না। ফেসবুক থেকে। তোর সাথে তো কাজিনরা সবাই এড আছে।
—-নাহ্ সবাইকে ব্লক করে দিয়েছি। শুধু জেবা এড আছে।
–তাহলে ও সবাইকে জানিয়ে দিয়েছে। ছোটো ফুফুর মেয়েটা পুরো ওর মায়ের মতো হয়েছে। খবরটা শোনা মাত্রই দৌড়ে দৌড়ে বাড়ী বয়ে এসেছে যাচাই করতে। এরকম গাধামী আর করিস না। বিয়েটা কেন করেছিস তাতো তুই জানিস। এই বিয়ে নিয়ে ঢোল পিটিয়ে বলার কিছু নাই।
ইরা জেবার উপর প্রচন্ড বিরক্ত হলো। মনে মনে বললো,সমস্ত আত্মীয়স্বজনকে ব্লক মেরে দিবে।

মায়া গোসল সেরে চুলগুলো শুকিয়ে নিচ্ছে। কোমর ছাপিয়ে চুলগুলো শুকাতে কষ্ট হচ্ছে। কতদিন ভেবেছিলো একটা হ্যাডড্রায়ার কিনবে। তা আর কেনা হয়ে উঠেনি। মায়া মনে মনে ঠিক করলো আজ ও শাড়ি পরবে। যেভাবেই হোক বিয়ে তো হচ্ছে। নাইবা বাজলো সানাই, না আসলো বরযাত্রী,হলো না গায়ে হলুদ, না পড়লো মেহেদী। তারপরও বিয়ে তো হবে। সে কারনেই ও নিজেকে একটু সাজিয়ে নিয়ে বের হবে। বাসন্তি রঙের শাড়িটা বের করলো। শাড়ির ভাঁজে ন্যাপথেলিনের গন্ধ লেগে আছে। ইরার দিকে তাকিয়ে বললো,
—-এই শাড়িটার কথা তোর মনে আছে। আমি যখন কলেজে উঠি নবীনবরণের সময় আব্বা কিনে দিয়েছিলেন।
—হা মনে আছে। তুমি যখন শাড়িটা পড়ে রেডী হয়ে আব্বার সামনে এসে দাঁড়ালে,আব্বা কি বলেছিলো তোমার মনে আছে?
দীর্ঘশ্বাস ফেলে মায়া বললো,
—-হা মনে আছে। আব্বা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,”আমার মেয়েটাকে রাজরানীর মতো লাগছে।”
কিন্তু রাজরানী আর হতে পারলাম কই।
ইরা ওর আপুর কষ্ট হয়তো উপলব্ধি করতে পারলো। সে কারনে বোনকে সান্তনা দিয়ে বললো,
—-বাবার দোয়া কখনও বিফলে যায় না। আমার মন বলছে তুমি একদিন ঠিক রাজরানী হবে।
—-এখন আর ঐসব নিয়ে ভাবি না।
মায়া সুন্দর করে শাড়িটা পরে নিলো। মুখে হালকা ফেস পাউডার লাগালো। চোখে কাজলের প্রলেপ দিলো। ঠোঁটে হালকা রংয়ের লিপস্টিক দিয়ে চুলগুলো গোছ করে একটা হাত খোঁপা বেঁধে নিলো। মাথায় হেজাবটা সুন্দর করে সেট করলো। আয়নাতে নিজেকে নিজে একবার দেখে নিলো। ইরা মায়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
—তোমাকে বউ বউ লাগছে। তবে খুব সুন্দর লাগছে।

এরপর দুপুরে সবার সাথে মায়া খাওয়া শেষ করলো। যদিও অস্বস্তি লাগছে। চাচা ফুফু হয়তো অফিসের নাম জানতে চাইবে। কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। যাই হোক একটা কিছু বলে দিবে। তিনটা বাজার বিশ মিনিট আগে মায়া ওর বাবার ঘরে গেল। ঐ রুমে ওর মা চাচা ফুফু গল্প করছে। মায়াকে দেখে ইসহাক মিয়া ওর মুখের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলো। মায়া ওর বাবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই ইসহাক মিয়া আবেগপ্রবন হয়ে গেলেন। মায়া সান্তনা দিয়ে বললো,
—আব্বা,আপনি মন খারাপ করছেন কেন? আমি তো প্রতি সপ্তাহে আসবো।
—-তোর উপর অনেক দায়িত্ব।
—-এতো ভেবো না। শুধু দোয়া করো যেন আমি ঠিকঠাকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারি। আমার এখুনি বের হতে হবে।
সালেহা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো,
—-কোনো সমস্যা হলে আম্মা ফোন দিয়েন।
সালেহা বেগম মায়ার কাছে এসে ওকে জড়িয়ে ধরলো। চোখ দুটো ছলছল করে বললো,
—সাবধানে থাকিস।
চাচা ফুফুর থেকে বিদায় নিয়ে বের হওয়ার সময় জহির মিয়া জিজ্ঞাসা করলেন,
—-তোমার অফিসটার নাম কি?
মায়া বিরক্ত হয়ে বললো,
—খোঁজ নিতে যাবেন নাকি?
—-নাম বলতে অসুবিধা কি?
মায়া মুখ কালো করে গম্ভীর হয়ে বললো,
—নীলাম্বরী করপোরেশন।
ওখানে আর দাঁড়ালো না। ট্রলী ব্যাগটা নিয়ে দরজার দিকে এগুতে লাগলো। রুবেল আর নোবেল ও সামনে এসে দাঁড়ালো। মায়া ওদের ভালোমতো লেখাপড়া করতে বললো। ইরা এসে মায়াকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। মায়া কপট রাগ দেখিয়ে বললো,
—এভাবে ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ করে কান্নাকাটি করা আমার একদম পছন্দ না।
অবশেষে সবার কাছে বিদায় নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে একটা রিকশা নিয়ে অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে মায়া এগিয়ে চললো।

মায়া রুমটা সুন্দর করে গুছিয়ে দেয়। বাড়ির সবাইকে বলে কেউ যেন ইরা আর জাওয়াদের সাথে খারাপ ব্যবহার না করে। মায়া বাইরে থেকে খাবার অর্ডার করে। কাচ্চি বিরিয়ানি মুরগীর রোস্ট গরুর মাংসের রেজালা, দই মিষ্টি বোরহানি সবই নিয়ে আসে। রুবেল আর নোবেল ভীষণ খুশী হয়। আজ ম নিজ হাতে খাইয়ে দেয়। কাল থেকে মায়ার নতুন জীবন শুরু হবে। বাবাকে আর কবে খাওয়াতে পারবে কে জানে? অনেকদিন পর এতো মজার খাবার খেতে পেরে ওর বাবার চোখ দুটে ভিজে উঠে। মায়ার ও চোখটা আদ্র হয়ে উঠে। ওর মনে পড়ে বাবা যখন চাকরিতে ছিলো প্রতি শুক্রবার ওদের বাসায় পোলাও রান্না হতো। ওর বাবা নামাজ পড়ে আসার পর সব ভাইবোন একসাথে খেতে বসতো। ওর বাবা ওর মাকে বলতো,
—-আমার মেয়েদের প্লেটে বেশী বেশী পোলাও রোস্ট দিবে। যাতে শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে খাওয়ার আক্ষেপ না থাকে।
আহা! কতনা মধুর ছিলো সেসব দিন। চাইলেও আর সেসব দিনে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়।
তবে খাওয়া শেষ হবার পর মায়া ওর বাবার কাছে ইরার বিয়ের কথা বলে। অসুস্থ হলে কি হবে। মাথা তে ঠিক কাজ করে। সাথে সাথে ইসহাক মিয়া বললেন,
—তোর বিয়ের আগে ও কিভাবে বিয়ে করে? তুই তো বড়। বিয়ে তো তোর আগে হওয়া উচিত।
—- আব্বা এতে কোনো সমস্যা নাই। আল্লাহর হুকুম হলে আমারও বিয়ে হয়ে যাবে।
ডোর বেলটা বেজে উঠে। মায়া ওর বাবার মুখ মুছিয়ে দিয়ে ওষুধ খাইয়ে ড্রইংরুমে চলে আসে। কারণ ওর মায়ের তো ঠিক নাই। যদি ওদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে ফেলে। না ওর মা কথা রেখেছে। মুখে হাসি না থাকলেও দায়িত্ব ঠিকঠাকভাবে পালন করেছে। শরবত আর মিষ্টি খাইয়ে ওদের বরণ করে ঘরে তুলেছে। যদিও ইরা আর জাওয়াদও অস্বস্তিতে আছে। সহজ হতে পারছে না। মায়া ওদের দুজনকে বাবার কাছ নিয়ে গেল। ইরা কাঁদতে কাঁদতে ওর বাবাকে বললো,
—আব্বা আমাকে মাফ করে দাও। আমি একটা ভুল করে ফেলেছি।
—-বিয়ে করাটা ভুল নয় তবে তোমার সময়টা ভুল ছিলো। তোমার বড় বোনের এখনও বিয়ে হয়নি। সে কথা ভাবা উচিত ছিলো। তোমাদের পড়াশোনা এখনও শেষ হয়নি। সে কারনে এই মুহুর্তে বিয়ে করা উচিত হয়নি।
মায়া ওর বাবার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলে,
—যা হওয়ার তাতো হয়ে গিয়েছে। আব্বা এখন ওদের সামনের চলার পথ যেন সহজ হয় সেই দোয়া করো। আর আমিও কাল নতুন চাকরিতে জয়েন করছি। আমাকে এখন থেকে মানিকগঞ্জে থাকতে হবে। আমার জন্য দোয়া করো আব্বা।

এর মাঝে সালেহা বেগম টেবিলে খাবার বেড়ে দিলেন। মায়া ওদেরকে ওর বাবার রুম থেকে নিয়ে এসে খাবার টেবিলে বসিয়ে দিলো। খুব মজা করে সবাই রাতের খাওয়া শেষ করলো। মায়া সবার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলো। কাল থেকে ওকে এগুলো মিস করতে হবে। বুকের ভিতরটা মোঁচড়াতে লাগলো। চোখটা বার বার ভিজে উঠতে লাগলো। কত সুন্দর এই দিনগুলো। সালেহা বেগম খেয়াল করলেন, মায়া তেমন কিছুই খেলো না। উনি ভাবছেন ইরা এভাবে বিয়ে করাতে হয়তো মায়ার মনের উপর চাপ পড়েছে। মনে মনে ইরার উপর উনি ক্ষুদ্ধ হলেন।

খাওয়া শেষ করে ইরা আর জাওয়াদ নিজেদের রুমে চলে যায়। মায়া বালিশ নিয়ে ড্রইংরুমে চলে আসে। এই রুমে একসেট সোফার পাশে একটা ছোটো খাট রাখা হয়েছে। কালে ভদ্রে বাসায় মেহমান আসলে এখানেই ঘুমায়। খাটের পাশে একটা টেবিল রয়েছে। টেবিলের কোল ঘেঁসে একটা বুকসেলফ রয়েছে। সেখানে নানা ধরণের বই রাখা আছে। এতোটুকু ঘরে এতোগুলো ফার্নিচার থাকায় রুমটা যেন হিজিবিজি হয়ে আছে। রাতের সব কাজ গুছিয়ে সালেহা বেগম মায়ার পাশে বসে বলেন,
—-আমাকে কি তোর বোকা মানুষ মনে হয়?
মায়ের কথা শুনে মায়া চমকে উঠে। মনে মনে ভাবে আম্মা কি কিছু বুঝে ফেলেছেন? না বুঝার ভান করে মায়া বলে,
—-এটা তুমি কি বললে আম্মু? তোমাকে বোকা ভাবতে যাবো কোন দুঃখে। তাছাড়া তুমি খোলাসা করে না বললে কিভাবে বুঝবো তুমি কোন বিষয়ে কথা বলছো?
—-ইরা কনসিভ করেছে তাই না? সেই কারণে বোনের কুকর্ম চাপা দিতে এভাবে চটজলদি বিয়ে দিয়েছিস?
—-আস্তে বলো। দেয়ালেরও কান আছে। তোমার ছেলেরা শুনলে ইরার মান সম্মান থাকবে না। এছাড়া আমি আর কি করতে পারতাম? ভাগ্যিস ছেলেটা পাশ কেটে চলে যায়নি। ওকে সাথে সাথে বিয়ে করতে রাজী হয়েছে। তা,না হলে কি হতো বলতো?
—+আজ মনে হচ্ছে জন্মের সময় ওর মুখে লবন দিয়ে মারা উচিত ছিলো। এই অকাম করতে ও কিভাবে পারলো?
—-আম্মা এসব কথা বলো না। যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। এখন সামনের দিন যেন ভালো হয় সেই দোয়াই করো। রাত বারোটা বাজে। তুমি শুয়ে পড়ো। আমারও একটু ঘুমানো দরকার।
সালেহা বেগম চলে গেলেন। মায়া জানে আজ ওর দুচোখে ঘুম আসবে না। এটা ভেবে ওর ভালো লাগছে, ইরা অন্তত ওর ভালোবাসার মানুষের সাথে ঘর বাঁধতে পেরেছে। মায়ার মতো ভাগ্য ওকে অন্তত বরণ করতে হলো না। কাল থেকে শুরু হবে ওর নতুন জীবন। সে জীবনটা কেমন হবে ও জানে না। বিছানায় শুয়ে ও ঘুমানোর চেষ্টা করছে।

ঘুম ভাঙতেই ইরার দৃষ্টি জানালা ভেদ করে আকাশের বুকে পড়লো। আকাশটা বিশাল। বিশাল আকাশটা দেখলে মনটাও বিশাল হয়ে যায়। আজকের সকালটা ইরার কাছে অন্যরকম সুন্দর লাগছে। ওযে কনসিভ করেছে এটা ও বুঝতে পেরেছিলো। কিন্তু কিভাবে বিষয়টা সামনে আনবে সেই উপায় বের করতে পারছিলো না। মাথা থেকে একটা বিশাল চিন্তা দূর হলো। জাওয়াদের দিকে ইরা তাকিয়ে দেখলো। ওকে জড়িয়ে কি নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে। ইরা ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো। চেহারাটা নিস্পাপ লাগছে। ইরার তাকিয়ে থাকা দেখে জাওয়াদ বললো,
—-এভাবে তাকিয়ে থেকো না নজর লাগবে। আপন মানুষের নজর বেশী লাগে।
—-তুমি ঘুমের ভান করে শুয়ে বউয়ের আদর খাওয়ার চেষ্টা করছো।
—কিন্তু বউয়ের আদর তো কপালে জুটলো না।
ইরা হঠাৎ একটু গম্ভীর হয়ে গেল। সেদিকে লক্ষ্য করে জাওয়াদ বলে,
—-কি ব্যাপার মুড অফ হয়ে গেল কেন? কি ভাবছো?
—-তেমন কিছু না। আপার জন্য মন খারাপ লাগছে। আমাদের এই সংসারটার জন্য আপা মুখে রক্ত তুলে ইনকাম করছে। সব দায়িত্ব সুচারুরুপে পালন করার চেষ্টা করছে। আর আমি স্বার্থপরের মতো বিয়ে করে নিজের সুখটা উপলব্ধি করছি। আপার ঋণ আমি কোনোদিন শোধ করতে পারবো না। আমি জানি, আমার পরিবারের সবার চোখে আমি অনেক ছোটো হয়ে গিয়েছি। শুধু তোমার জন্য।
—-শুধু শুধু আমাকে দোষের ভাগিদার কেন করছো? আমিও এই মুহুর্তে বিয়েশাদী করতে চাইনি।
—-কেন,মনে নাই? তুমি আমাকে জোর করলে কেন?
—-কিন্তু রুমডেট তুমি করতে চেয়েছো?
—-চেয়েছি,আজকাল সবাই তো করে। তাই বলে—-। আমি আম্মাকে এই মুখ দেখাবো কি করে?
জাওয়াদের কাছেও বিষয়টা খুব বিব্রত করছে। ওকেও তো সবাই চরিত্রহীন ভাববে। জাওয়াদ গলার স্বরটা কোমল করে ইরাকে বলে,
—যা হবার তাতো হয়ে গিয়েছে। এখন এই বিষয়টা নিয়ে আফসোস কিংবা অনুশোচনা করে লাভ নেই। বরং যে আসছে তার জন্য আমাদের দুজনকে মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে হবে।
দরজা নক করার শব্দে দুজনেই তাদের কথপোকথন বন্ধ রাখলো। এরপর ইরা নিজের এলোমেলো শাড়িটা গুছিয়ে নিয়ে খাট থেকে নেমে দরজা খুলে বললো,
—-ডাকছিস কেন?
— আম্মা তোমাদের নাস্তা খেতে ডাকছেন,
—-আসছি।

আজ শুক্রবার। সালেহা বেগম দুই ছেলেকে জুম্মার নামাজে পাঠানোর জন্য হাঁকডাক করছেন। ইরাও জাওয়াদকে নামাজে যাওয়ার জন্য তাড়া দিতে লাগলো। মায়া সকাল এগারোটায় কাউকে কিছু না বলে বাসা থেকে বের হয়ে গিয়েছে। আসলে কাল ওর মাথা কাজ করেনি। জাওয়াদের জন্য আরো কিছু কেনাকাটার দরকার ছিলো। বেশীদূর যায়নি। মিরপুর নিউমার্কেটে ঢুকে দুটো ট্রাউজার টি শার্ট আর একটা সুতি পাঞ্জাবী কিনে রিকশা করে বাড়ির পথে রওয়ানা দিলো।আসলে ওর হাতে সময় কম।আজকে ওকে তিনটার মধ্যে বাসা থেকে বের হতে হবে। আবীর চৌধুরী সাথে সেরকমই কথা হয়েছে। ঘরে ঢুকতেই সালেহা বেগম বললেন,
—–সাত সকালে না বলে কোথায় গিয়েছিলি?
হাতে শপিং ব্যাগটা দেখিয়ে বললো,
—-কিছু টুকটাক কিনতে গিয়েছিলাম।
এরপর ইরা আর জাওয়াদকে ড্রইংরুমে ডেকে মায়া শপিং ব্যাগটা জাওয়াদের হাতে দিয়ে বললো,
—-দেখো তোমার পছন্দ হয় কিনা?
—-আপা,এসবের দরকার ছিলো না।
—-ছিলো ভাই,আজ তো জুম্মাবার। তোমাকে তো নামাজে যেতে হবে।
পোশাকগুলো দেখে জাওয়াদ বললো,
—-খুব সুন্দর হয়েছে।
এরপর মায়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
—- আপা,আমি ভাবছি আমাদের বাসায় গিয়ে আব্বা আম্মাকে আরো একবার বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করবো। বুঝিয়ে বললে হয়তো উনারা মেনে নিতেও পারেন। এভাবে শ্বশুরবাড়ি থাকাটা ভালো দেখাবে না।
জাওয়াদের কথা শুনে সালেহা বেগম মনে মনে বললেন,
“এমনিতেই টানাটানির সংসার। তার উপর আবার নতুন একজন সদস্য বাড়লে উনার পক্ষে সংসার চালানো কঠিন হয়ে যাবে। নিজের সন্তানদের শাক, ভর্তা, ভাজি দিয়ে ভাত খেতে দেওয়া যায় কিন্তু পরের সন্তানকে এগুলো দেওয়া যায় না। মাঝখানে বদনামের ভাগিদার হতে হবে। যেভাবেই হোক জামাইতো হয়েছে। সুতরাং উনি চান না নিন্দার ভাগিদার হতে। আপদ বিদেয় হলে উনি খুশী। আর ইরার ও নিজের ভুলের খেসারত দেওয়া উচিত।”
মায়া কিছু বলার আগেই সালেহা বেগম বললেন,
—সেটাই মনে হয় ভালো হয়।
এমন সময় ডোর বেলটা বেজে উঠলো। নোবেল দরজা খুলে দেখে ওর ছোটো ফুফু জবা আর চাচা জহির এসেছে। নোবেল সালাম দিয়ে ভিতরে আসতে বলে। জবা ভিতরে ঢুকেই ড্রইংরুমে সালেহাকে বললো,
—-ভাবি চুপি চুপি মেয়ের বিয়ে দেওয়াটা কি ঠিক হলো। আমাদের ভাইয়ের মেয়ের বিয়ে তুমি আমাদের ছাড়াই দিয়ে দিলে এ কেমন কথা?
—-কেবল তো কাবিন হয়েছে। উঠানোর সময় তোমাদের অবশ্যই বলতাম।
চাচা জহির এসময় একটু খোঁচা দিয়ে বললো,
—-তা কাজটা তুমি ঠিক করো নাই। বড়টাকে রেখে ছোটোটার আগে বিয়ে দেওয়া একদম উচিত হয় না।
সালেহা বেগম মনে মনে ভাবছেন এই বিয়ের খবর উনারা কিভাবে জানলেন? মায়া ঠিক বুঝেছে। এটা ইরার কাজ। নিশ্চয় ফেসবুকে ওর আর জাওয়াদের ছবি আপলোড দিয়েছে। এর পর জাওয়াদের দিকে তাকিয়ে জবা বললো,
—এই বুঝি তোমাদের জামাই।
কথার ধরণটা জাওয়াদের ভালো লাগেনি। তারপরও ভদ্রতা রক্ষা করে সালাম দিলো। জহির মিয়া সালামের উত্তর দিয়ে বললো,
—-জামাই বাবাজী কোথায় চাকরি করছেন?
—-না, এখন পড়াশোনা শেষ হয় নাই।
—-ও—বেকার।
বমির বেগ আসাতে ইরা ছুটে ওয়াশরুমে চলে গেল। মায়া ইরার উপর প্রচন্ড বিরক্ত হলো। কথার প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে দিতে মায়া বললো,
—-চাচা, আজ তো জুম্মাবার। নামাজে যেতে হবে। আপনি কি প্রস্তুতি নিয়ে এসেছেন?
—-হা, আমি গোসল করেই এসেছি। কতদিন ভাইজানের সাথে দেখা হয় না। তাই সময় বার করে আজকে আসলাম।
সালেহা বেগম মনে মনে বললেন,তা ঠিক বলেছো জহির মিয়া। আজ তো এসে আমাকে কথা শুনাতে পারবে। এমনিতে সাহায্য সহযোগিতার নাম গন্ধ নেই। কথা শোনানোর বেলায় ষোলো আনার উপর আঠারো আনা। সালেহা বেগম বুঝে পেলেন না ওদের কানে কিভাবে এই বিয়ের খবর পৌঁছালো? সংসারের ঝামেলায় ডিজিটাল নেটওয়ার্ক সম্পর্কে উনার ধারণা নাই। যদি জানতেন হয়তো চুলের মুঠি ধরে ইরাকে কয়েক ঘা লাগিয়ে দিতেন। যাইহোক এখন উনাকে কিল খেয়ে কিল হজম করতে হচ্ছে।
এদিকে মায়া জাওয়াদকে এখান থেকে সরিয়ে দিতে বললো,
—তুমি গোসল সেরে নাও। একটু পরেই নামাজে যেতে হবে।
জাওয়াদ চলে যেতেই জহির মিয়া সালেহাকে বললো,
—শেষ পর্যন্ত বেকার ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে দিলে? এমনিতেই ভাইজানের সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হয় তারউপর আবার উটকো ঝামেলা বাড়ি বয়ে নিয়ে আসলে।
ওর চাচার কথা শুনে মায়ার প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে। নিজের বিরক্তি দমন করতে না পেরে বললো,
—-চাচা,আমাদের সংসার তো আপনাকে চালাতে হয় না। তাই এই বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করে আপনার সুস্থ মাথা ব্যস্ত করে লাভ নেই।
—এই তোমাদের এক দোষ। ভালো কথা বললেই গায়ে ফোসকা পড়ে। যাই ভাইজানের সাথে দেখা করে আসি।
জহির চলে যেতেই জবা ইতিউতি করে সালেহা বেগমকে বললো,
—-তোমার মেয়ে কি কনসিভ করেছে?
সালেহা বেগম কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন। মায়া তাকে বলতে না দিয়ে বললো,
—বিয়ে যখন হয়েছে কনসিভ করাতো স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে এসব কথা কি আলোচনার বিষয়?
জবা জানে,তার এই ভাতিজীর কথায় ধার আছে। তাই আর কথা বাড়ালেন না। সালেহা বেগম মায়াকে এখান থেকে সরিয়ে দিতে বললেন,
—-তোর তো তিনটায় বের হতে হবে। তুই গোছগাছ করে নে।
আসলেই হাতে সময় নেই। মায়ার এখনও ব্যাগ গোছানো হয়নি। ওদিকে জাওয়াদ রুবেল নোবেল সবাই নামাজে চলে গিয়েছে। ওর চাচা এখনও যায়নি। মায়া উনাকে ছোটোবেলা থেকে দেখেছে মসজিদে ঢুকেন সবার শেষে আর বের হয়ে আসেন সবার আগে। ওয়াশরুমটা খালি পেয়ে ও দ্রুত গোসল সেরে নেয়। রুমে এসে দেখে ইরা মুখ গম্ভীর করে বসে আছে। সেদিকে লক্ষ্য করে মায়া বলে,
—-কিরে,এরকম প্যাঁচার মতো মুখ করে রেখেছিস কেন?
—ভাবছি,এখানে থাকা ঠিক হবে না। জাওয়াদের সাথে ওর বাড়িতে চলে যাওয়াই ভালো হবে।
—যা করবি বুঝে শুনে করবি। তবে একটা পরামর্শ দিতে পারি।
—-কি
—-অফিসে আজ জয়েন করার পর বুঝবো অফিসের হাফভাব।যদি লোন নেওয়ার অপশন থাকে জাওয়াদকে একটা বাইক কেনার জন্য লোন দিবো। ও প্রতিমাসে একটু একটু করে দিয়ে লোনটা শোধ করে দিবে। আর যতদিন চাকরি না হয় এটা চালিয়ে খরচ যোগাবে। কেমন হয়?
—ঠিক আছে বিষয়টা মাথায় থাকলো। তোমাকে সময় মতো জানাবো।
মায়া মনে মনে ভাবছে ওকে জিজ্ঞাসা করবে, ফেসবুকে ছবি আপলোড দিয়েছে কিনা? মায়ার ভাবগতিক দেখে ইরা বললো,
—-তুমি কি কিছু বলবে আপু?
—-না,মানে তুই কি ফেসবুকে তোর আর জাওয়াদের ছবি আপলোড দিয়েছিলি?
ইরা আমতা আমতা করে বললো,
—-হুম,
মায়া রেগে গিয়ে বললো,
—-মাথায় একটু বুদ্ধি নিয়ে চলা ফেরা করিস। এভাবে হাঁদার মতো কাজ করলে তো চলবে না। তার উপর এখন বিয়ে হয়েছে। ঘটে এখন বুদ্ধি আরো বেশী রাখা লাগবে।
—কেন কি হয়েছে?
—-চাচা ফুফুরা কোত্থেকে খবর পেলো?
—-কোত্থেকে?
—-ন্যাকা যেন বুঝতে পারছে না। ফেসবুক থেকে। তোর সাথে তো কাজিনরা সবাই এড আছে।
—-নাহ্ সবাইকে ব্লক করে দিয়েছি। শুধু জেবা এড আছে।
–তাহলে ও সবাইকে জানিয়ে দিয়েছে। ছোটো ফুফুর মেয়েটা পুরো ওর মায়ের মতো হয়েছে। খবরটা শোনা মাত্রই দৌড়ে দৌড়ে বাড়ী বয়ে এসেছে যাচাই করতে। এরকম গাধামী আর করিস না। বিয়েটা কেন করেছিস তাতো তুই জানিস। এই বিয়ে নিয়ে ঢোল পিটিয়ে বলার কিছু নাই।
ইরা জেবার উপর প্রচন্ড বিরক্ত হলো। মনে মনে বললো,সমস্ত আত্মীয়স্বজনকে ব্লক মেরে দিবে।

মায়া গোসল সেরে চুলগুলো শুকিয়ে নিচ্ছে। কোমর ছাপিয়ে চুলগুলো শুকাতে কষ্ট হচ্ছে। কতদিন ভেবেছিলো একটা হ্যাডড্রায়ার কিনবে। তা আর কেনা হয়ে উঠেনি। মায়া মনে মনে ঠিক করলো আজ ও শাড়ি পরবে। যেভাবেই হোক বিয়ে তো হচ্ছে। নাইবা বাজলো সানাই, না আসলো বরযাত্রী,হলো না গায়ে হলুদ, না পড়লো মেহেদী। তারপরও বিয়ে তো হবে। সে কারনেই ও নিজেকে একটু সাজিয়ে নিয়ে বের হবে। বাসন্তি রঙের শাড়িটা বের করলো। শাড়ির ভাঁজে ন্যাপথেলিনের গন্ধ লেগে আছে। ইরার দিকে তাকিয়ে বললো,
—-এই শাড়িটার কথা তোর মনে আছে। আমি যখন কলেজে উঠি নবীনবরণের সময় আব্বা কিনে দিয়েছিলেন।
—হা মনে আছে। তুমি যখন শাড়িটা পড়ে রেডী হয়ে আব্বার সামনে এসে দাঁড়ালে,আব্বা কি বলেছিলো তোমার মনে আছে?
দীর্ঘশ্বাস ফেলে মায়া বললো,
—-হা মনে আছে। আব্বা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,”আমার মেয়েটাকে রাজরানীর মতো লাগছে।”
কিন্তু রাজরানী আর হতে পারলাম কই।
ইরা ওর আপুর কষ্ট হয়তো উপলব্ধি করতে পারলো। সে কারনে বোনকে সান্তনা দিয়ে বললো,
—-বাবার দোয়া কখনও বিফলে যায় না। আমার মন বলছে তুমি একদিন ঠিক রাজরানী হবে।
—-এখন আর ঐসব নিয়ে ভাবি না।
মায়া সুন্দর করে শাড়িটা পরে নিলো। মুখে হালকা ফেস পাউডার লাগালো। চোখে কাজলের প্রলেপ দিলো। ঠোঁটে হালকা রংয়ের লিপস্টিক দিয়ে চুলগুলো গোছ করে একটা হাত খোঁপা বেঁধে নিলো। মাথায় হেজাবটা সুন্দর করে সেট করলো। আয়নাতে নিজেকে নিজে একবার দেখে নিলো। ইরা মায়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
—তোমাকে বউ বউ লাগছে। তবে খুব সুন্দর লাগছে।

এরপর দুপুরে সবার সাথে মায়া খাওয়া শেষ করলো। যদিও অস্বস্তি লাগছে। চাচা ফুফু হয়তো অফিসের নাম জানতে চাইবে। কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। যাই হোক একটা কিছু বলে দিবে। তিনটা বাজার বিশ মিনিট আগে মায়া ওর বাবার ঘরে গেল। ঐ রুমে ওর মা চাচা ফুফু গল্প করছে। মায়াকে দেখে ইসহাক মিয়া ওর মুখের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলো। মায়া ওর বাবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই ইসহাক মিয়া আবেগপ্রবন হয়ে গেলেন। মায়া সান্তনা দিয়ে বললো,
—আব্বা,আপনি মন খারাপ করছেন কেন? আমি তো প্রতি সপ্তাহে আসবো।
—-তোর উপর অনেক দায়িত্ব।
—-এতো ভেবো না। শুধু দোয়া করো যেন আমি ঠিকঠাকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারি। আমার এখুনি বের হতে হবে।
সালেহা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো,
—-কোনো সমস্যা হলে আম্মা ফোন দিয়েন।
সালেহা বেগম মায়ার কাছে এসে ওকে জড়িয়ে ধরলো। চোখ দুটো ছলছল করে বললো,
—সাবধানে থাকিস।
চাচা ফুফুর থেকে বিদায় নিয়ে বের হওয়ার সময় জহির মিয়া জিজ্ঞাসা করলেন,
—-তোমার অফিসটার নাম কি?
মায়া বিরক্ত হয়ে বললো,
—খোঁজ নিতে যাবেন নাকি?
—-নাম বলতে অসুবিধা কি?
মায়া মুখ কালো করে গম্ভীর হয়ে বললো,
—নীলাম্বরী করপোরেশন।
ওখানে আর দাঁড়ালো না। ট্রলী ব্যাগটা নিয়ে দরজার দিকে এগুতে লাগলো। রুবেল আর নোবেল ও সামনে এসে দাঁড়ালো। মায়া ওদের ভালোমতো লেখাপড়া করতে বললো। ইরা এসে মায়াকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। মায়া কপট রাগ দেখিয়ে বললো,
—এভাবে ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ করে কান্নাকাটি করা আমার একদম পছন্দ না।
অবশেষে সবার কাছে বিদায় নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে একটা রিকশা নিয়ে অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে মায়া এগিয়ে চললো।