#কন্ট্রোললেস
#অনুপ্রভা_মেহেরিন
[পর্ব ১৫ ]❌কপি করা নিষেধ❌
বেশ কয়েকদিন পর বাড়ি ফিরেছে উজ্জ্বল।এলাকার পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক এবার অন্তত বউকে নিয়ে নিজ নীড়ে ফেরা যাক।উঠনে বাইকের শব্দে ছুটে এলেন নার্গিস, ছেলেকে দেখতে পেয়ে অনেকটা অবাক সুরে বলেন,
” তুই যে আসবি বললি না তো।”
” আমি কোন কাজ বলে করেছি?”
” উর্মি কেমন আছে?তাকে নিয়ে এলেও তো পারতি।”
” আসতে বলেছি আসেনি।”
উজ্জ্বল ঘরে প্রবেশ করলো।নিজের কক্ষে ফিরে শটান হয়ে শুয়ে পড়লো।পাশে থাকা বালিশটা আঁকড়ে ধরে ভাবনার সাগরে ডুবে গেল।ইসস বউটা কবে যে আসবে,পাশে শুয়ে খোশ গল্পে মেতে থাকবে।নার্গিস ফিরলেন লেবুর শরবত নিয়ে। যত্নে নিয়ে টেবিলে গ্লাসটা রেখে বলেন,
” কি খাবি? ”
” আম্মা ভাত দাও।”
” আমি বাড়ছি তুই আয়।”
নার্গিদ দরজা পর্যন্ত গিয়ে ফিরে এলেন চিন্তিত কণ্ঠে বলেন,
” রুমু কেমন আছে?”
” আমি কি জানি।”
“তুই না বললি সে যেখানে আছে নিরাপদে আছে।”
” হু”
” তাহলে?”
” বাদ দাও।রাশেদ আর ঝামেলা করেছে?”
” সে তো প্রতিদিনি করে ওর বাড়ির উঠন থেকে আমাদের গালাগালি করে কতদিন এসব সহ্য করা যায় বলতো।”
” যত দিন না ওর মুখটা সেলাই করতে পারছি।”
” তোর চাচীর আশকারা পেয়ে ছেলেটা বখে গেছে।”
” বাদ দাও এরা জাহান্নামে যাক।খিদে পেয়েছে খেতে দাও।”
উজ্জ্বল উঠে গিয়ে খেতে বসে খাবার শেষ করে সোফায় বসে টিভি অন করে।নার্গিস হাতের কাজ শেষ করে পুনরায় উজ্জ্বলকে বলে,
” এলাকার সবাই গুজব ছড়িয়েছে রুমু নাকি তোর সাথে পালিয়েছে।”
” হুম।”
” হুম মানে?”
” হুম মানে হুম।”
” উজ্জ্বল তোর মতিগতি আমার ভালো ঠেকছে না।এসব কি সত্যি বাপ?”
উজ্জ্বল নড়েচড়ে বসে।গলা ঝেরে কেশে বলে,
” দশদিন আগে বিয়ে করেছি আম্মা।”
” মজা করছিস?”
” একদম না।তোমার মুরগির বাচ্চগুলার কসম।”
নার্গিস বেশ অবাক হলেন বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন।
” এসব কি বলিস?সত্যি বিয়ে করেছিস?”
” একদম সত্যি পিউর সত্যি আম্মা।কাবিন চল্লিশ লক্ষ।জিন্দেগীতে এই টাকা সহজে পরিশোধ করতে পারবো না রুমুকে ছাড়বোও না ডিসিশন ফাইনাল।”
নার্গিসের কণ্ঠরোধ হয়েছে।তিনি ভূত দেখার ন্যায় তাকিয়ে রইলেন উজ্জ্বলের পানে।
” আম্মা টাস্কি খাইও না।রাশেদ ঝামেলা পাকালেও রুমুরে ছাড়বো না।কাবিন সেচ্ছায় বেশি নিসি।”
” ওই মেয়ে যদি তোরে ছাড়ে?”
” ছাড়বে না।মগজ ধোলাই করছি।”
নার্গিস কিছুই বললেন না তিনি কিয়ৎক্ষণ উজ্জ্বলের পানে তাকিয়ে আচমকা চেতনা হারালেন।উজ্জ্বল তার মাকে ধরার আগেই তিনি মেঝেতে পড়ে মাথায় আঘাত পান।উজ্জ্বল কিংকর্তব্যবিমূঢ়!এটা কি হলো!তখনি ঘরে প্রবেশ করেন সৈয়দ শামসুল।স্ত্রীকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখে তিনি নিজেও হতভম্ব।
.
বিছানায় গড়াগড়ি করে কাঁদছেন নার্গিস ছেলের লুকিয়ে বিয়ে তিনি কিছুতেই মানতে পারছেন না।সবচেয়ে বড় ভয় জমেছে রাশেদের কর্মকান্ড দিনে দুপুরে এই ছেলে খু না খু নি করতে দ্বিধা করবে না।তার একটা মাত্র ছেলে, ছেলেটার মাথার উপর অসীম বিপদ ঘুরপাক খাচ্ছে।কোন মা নিশ্চয়ই এই অবস্থা মেনে নেবে না।সৈয়দ শামসুল গম্ভীর কণ্ঠে শুধায়,
” তুই যে বিয়েটা করবি আমাদের সাথে একটু আলাপ পরামর্শ করলেও তো পারতি।”
” পরিস্থিতি এমন ছিল যে…”
” তুই আমাকে পরিস্থিতি শেখাচ্ছিস?ইচ্ছে করছে গায়ের সব শক্তি দিয়ে মারতে।”
” আব্বা আপনার ছেলে বড় হয়েছে ভুলে গেছেন?”
” আমার ছেলে বড় হয়েও বেকুবের মতো কাজ করেছে।”
” তোমরা তো জানোই আমি রুমুকেই বিয়ে করবো।কি জানতে না?”
” তাই বলে এভাবে!”
সৈয়দ শামসুল উঠে দাঁড়ালেন পাইচারি করে পুনরায় উজ্জ্বলের সম্মুখে বসলেন,
” এরপর যা যা হবে সব কিছু তুই সামলাবি।আমি এসবের কিছু জানি না।”
” ঠিক আছে।বিয়ে করেছি আমি,বউটা আমার ঝামেলাটাও আমার।”
” বউ!বড় বড় কথা ফুটছে মুখে।বউ পালার সাধ্য তোর আছে?ইতর কোথাকার।”
উজ্জ্বলের মেজাজ বিগড়ে গেল।ডানে বামে না তাকিয়ে সোজা বাইরে গিয়ে বাইক স্টার্ট করলো এখানে আর থাকা যাবে না এক মুহূর্তও না।
.
বারান্দার গাছগুলো পরিষ্কার করে রুমু কক্ষে ফিরতে দেখতে পেল উজ্জ্বলকে।ছেলেটা শটান হয়ে শুয়ে আছে।মাথার উপর ঘুরছে ফুল স্প্রিডে ফ্যান।রুমু হাটু ভেঙে বসলো বিছানায় উজ্জ্বলের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
” আপনাকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে উজ্জ্বল।”
” গরমে সব ভুলে গেছিরে শুধু মনে আছে, লাউ আর কদু তুমি আমার বধূ।”
রুমু খিলখিলিয়ে হেসে উঠল।
” আম্মাকে আজ বিয়ের কথা বলেছি রুমু।”
” বাড়ি গিয়েছিলেন?”
” হুম।”
” চাচী আম্মা কি বললো?”
” মাথা ঘুরে পড়ে গেছে।”
” কি!”
” জি।”
” আর চাচাজান কি বলল?”
” এই বিয়ে সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না সব দায় আমার।”
” আপনার সাথে রাগারাগি করেছে?”
” খুব বেশি না অল্প।না জানিয়ে বিয়ে করেছিতো হঠাৎ জানায় কষ্ট পেয়েছে।ব্যপার না সব ঠিক হয়ে যাবে।”
উজ্জ্বল চোখ বন্ধ করল।ভেতর থেকে তাকে হতাশায় ঘিরে ধরেছে যদিও এমন একটা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত সে।উজ্জ্বল হঠাৎ অনুভব করল তার গালে পানির ফোঁটা পড়ছে।তড়িৎ গতিতে চোখ তুলতে দেখতে পায় রুমু কাঁদছে।
” এই তুই কাঁদছিস কেন?”
” আমার কারণেই এমনটা হয়েছে।আমি আমি….”
গলা ধরে এলো তার।ভেতর থেকে অপরাধবোধ নিংড়ে ফেলছে তাকে।
” আমি কেন আপনাকে এমন প্রস্তাব দিলাম উজ্জ্বল ভাই।”
” একটা চড় মারবো।কে ভাই?”
” সরি আবেগে বলে ফেলেছি।”
” এই আবেগ দেখিয়ে একটু ভালোবাসার কথাও তো বলতে পারিস।”
রুমুর কান্না বেড়ে যায়।উজ্জ্বল মেয়েটাকে শান্ত করতে নানান কথায় ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা চালায়।
” রুমু কি খাবে?রুমু একটা চুমু খাবে।দিব চুমু?”
” বাজে কথা বন্ধ করুন।”
” এটা বাজে কথা?”
” ভালো লাগছে না আমার।”
উজ্জ্বল প্রত্যুত্তর করে না।আলতো ভাবে জড়িয়ে ধরে মেয়েটাকে।রুমু উজ্জ্বলকে আঁকড়ে ধরে,
” দুই পরিবার যদি না মানে আমরা কোথায় যাব উজ্জ্বল?”
” এইজন্যই তো বলি দুঃখ আসার আগে সুখটা ভোগ করতে দে সময় অপচয় করা যাবে না।চল ঘুরে আসি রেডি হ।”
রুমু চোখ মুছে উঠে দাঁড়ালো।ডয়ার থেকে জামা বের করে দ্রুত ওয়াশরুমে যায়।উজ্জ্বল উঠে বসতে দেখতে পেল রুমুর ফোনটা বিছানায় পড়ে আছে।সাইলেন্ট মুডে থাকায় কেউ যে ফোন করছে আওয়াজ নেই।’Vai’ লেখা নাম্বারটা থেকে একেরপর এক ফোন এসেই যাচ্ছে।উজ্জ্বলের বুঝতে বাকি নেই এটা রাশেদের নাম্বার।রুমুকে বারবার বারণ করা হয়েছিল এই সিমটা যাতে না লাগায় তাহলে রুমু কেন এই সিমটা লাগালো?মনের সন্দেহের দরুনে ফোনটা ধরল উজ্জ্বল।অপর পাশ থেকে শোনা গেল রাশেদের তিরিক্ষি ধ্বনি।
” হারামজাদি ফোন কেন ধরিস না?তোকে কি বলেছি আর তুই কি করছিস?আমার কথা মতো কাজ না করলে আমি যে কি করবো তুই ভালো করেই জানিস।সময় মতো ফোন দিচ্ছিস না কেন?”
উজ্জ্বল অবাক হলো।দ্রুত ফোন কেটে কল লিস্টে ডিলেট করে ফোন ছুড়লো বিছানায়।সে ভেবেছিল রাশেদ ফোন করে নিশ্চয়ই বলবে কোথায় আছে ঠিকানা দিতে বা অনন্যা।অথচ রাশেদের কথার ভাজে বোঝাই যাচ্ছে রুমুর সাথে তার যোগাযোগ চলমান।অজানা আতংকে থমকে গেল উজ্জ্বল।রুমু ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আয়নায় দাঁড়ালো।তার গলায় ঝুলে থাকা ওড়নাটা পেছন থেকে টেনে ধরল উজ্জ্বল যার দরুনে গলায় ফাঁস পড়ল রুমুর।শ্বাস আটকে আসায় মেয়েটা ছোটফট করে উঠে নিজেকে বাঁচাতে গলা দিয়ে দেদারসে গোঙানির শব্দ বের হয়।
উজ্জ্বল ওড়না ছেড়ে রুমুকে টেনে কাছে আনে।
” খুব কষ্ট হচ্ছে?একটু বুঝালাম ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে পাওয়া আঘাতগুলো কেমন যন্ত্রণা দেয়।”
রুমু কাশতে কাশতে বিছানায় বসে।উজ্জ্বল পানি নিয়ে তার হাতে দেয়।
” সরি ডার্লিং পানি শেষ করো।”
রুমু পানি শেষ করলো।উজ্জ্বলের এমন আচরণে মেয়েটা অবাক না হয়ে পারে না।
“একটুর জন্য…”
” একটুর জন্য কী?”
” আমার গলা… ”
রুমু গলায় হাত রাখে।উজ্জ্বল পরখ করে বুঝতে পারে চামড়া লাল হয়ে গেছে।
” গলাটাই যদি না থাকে?”
উজ্জ্বলের প্রশ্নে রুমু অবাক হয়ে বলে,
” উজ্জ্বল এসব কি বলছেন?মাথা ঠিক আছে?”
” না ঠিক নেই।”
চলবে…