কন্ট্রোললেস পর্ব-২২

0
131

#কন্ট্রোললেস
#অনুপ্রভা_মেহেরিন
[পর্ব ২২ ]

উজ্জ্বলের চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে আছে রাবেয়ার পানে।তাদের সম্পর্ক এখন বদলেছে।একটা সময় ছিল চাচি আর এখন শাশুড়ী উভয় দিক বিবেচনা করলে তিনি সম্মানীয় ব্যক্তি।কিন্তু এই মুহূর্তে রাবেয়াকে সম্মান করার মন মানসিকতা নেই উজ্জ্বলের।অতিরিক্ত রাগে থরথর করে কাঁপছে সে।এই মহিলার চালবাজিতে আজ এতকিছু হচ্ছে ঘটছে।

” আপনাকে সম্মান করার মুড চলে যাচ্ছে শাশুড়ী।”

” তুই কথা না বাড়িয়ে এখান থেকে যা।”

” যাব।এখানে থাকার জন্য আসিনি।রুমু কোথায় বলুন আমি চলে যাচ্ছি।”

” আমার মেয়েকে তুই ভাগিয়ে নিয়েছিলি আমার মেয়ে কোথায় সেটা তুই জানিস।”

” এসব কাঁচা নাটক বন্ধ করুন জল বেশি দূর গড়ানোর আগে ভালোয় ভালোয় সবটা সমাধান করুন।”

” সমাধান কিসের সমাধান?তোকে এই বাড়ির জামাই হিসেবে কোনদিন মানবো না।”

” আপনি মানেন আর না মানেন তাতে আমার কী যায় আসে?আমি আমার বউকে চাই, আমি সেই সমাধান চাইছি।”

রাবেয়া উজ্জ্বলের সাথে তর্কে পারে না।বাড়িতে পুরুষ কেউ নেই রাশেদ বেরিয়ে গেছে কিছুক্ষণ আগে।আনিকা থমথমে চোখে মুখে তাকিয়ে আছে উজ্জ্বলের পানে।মেয়েটা যে ভয় পাচ্ছে ঘাবড়ে আছে তা তার চোখে মুখে স্পষ্ট।উজ্জ্বল সূক্ষ্ম চোখে তাকায় আনিকার পানে,

” ভাবী আপনি কলেজে গিয়েছিলেন মিথ্যা বলে রুমুকে এনেছেন।”

” এ..এসব কি বলো উজ্জ্বল এমন কিছুই আমি করিনি।”

” মিথ্যা কেন বলছেন ভাবী?আপনার কি একটুও লজ্জা লাগছে না?”

” উজ্জ্বল অযথা ঝামেলা করবেন না।আমি এমন কিছুই করিনি।”

“অন্তত আপনাকে ভালো জানতাম এখন দেখি অমানুষদের সাথে চলে আপনিও অমানুষে পরিণত হয়েছেন।”

আনিকা দ্বিতীয়বার কিছু বলার সাহস করে না।উজ্জ্বল বুঝতে পেরেছে বাড়িতে রাশেদ নেই রাশেদ থাকলে নিশ্চয়ই বেরিয়ে এসে ঝামেলা করতো।উজ্জ্বল রুদ্ধশ্বাস ছাড়ল আর সময় অপচয় না করে অতিদ্রুত প্রবেশ করল ঘরে।উজ্জ্বলের কর্মকান্ডে রাবেয়া আনিকা দুজনেই অবাক।রাবেয়া উজ্জ্বলের পেছন পেছন ছুটছিলেন তার চিৎকার চেচামেচি কোন কিছুই পরোয়া করল না।উজ্জ্বল সারা ঘরের আনাচে-কানাচে তন্ন তন্ন করে খুঁজলো অথচ রুমুকে কোথাও পাওয়া গেল না।উজ্জ্বলের রাগ বাড়লো ছেলেটা রাগ সামলাতে না পেরে রান্না ঘরে থাকা সকল বাসন মেঝেতে আছড়ে ফেলল।

” ভাবী তিন ঘন্টা সময় দিলাম এর মাঝে সত্যিটা প্রকাশ করো যদি আমার কথার হেরফের হয় তবে এই বাড়িতে আগুন জ্বলবে আগুন।”

উজ্জ্বল বেরিয়ে পড়ল রাবেয়া পেছন থেকে উজ্জ্বলকে একেরপর এক গাল মন্দ করলেন তাতে অবশ্য উজ্জ্বলের কিছু যায় আসে না।
.
সৈয়দ শামসুল ভাতের লোকমা মুখে তুলে চোখ ঘুরালেন।উজ্জ্বলের কোন কথাই উনার কানে ঢুকছে না।ঢুকছে না নাকি ঢুকাতে চাইছেন না তা বেশ ভালো করে বুঝে উজ্জ্বল।বাবার এতটা পাষাণ মনোভাব উজ্জ্বলকে ব্যথিত করে।

” আব্বা আমার সাথে থানায় চলেন।আপনি গেলে ব্যপারটা জোরালো হবে।”

” কাঁচা কাজে থানায় যাব তাও আমি?”

” আব্বা এমন করবেন না আপনার ছেলের বিপদ আপনি বুঝতে পারছেন না?”

” হুম আমি বেশ ভালো করে বুঝতে পারছি তোর বিপদ নয় বরং বিপদ পালিয়ে গেছে।”

” বিপদ পালিয়ে গেছে মানে?”

” যার বিপদ সে নিয়ে গেছে তুই এসবে আর নিজেকে জড়াবি না।”

” আব্বা আপনি এসব কী বলছেন?”

” বুঝতে পারছিস না?”

” একদমি না।”

” তোর চাচাদের সাথে আমাদের একবার খু না খু নি র পর্যায়ে চলে গেছিল মনে আছে?”

” আব্বা এসবের সাথে চাচার সম্পর্ক ছিল না সেটা তুমি ভালো করেই জানো।এসব করেছে রাশেদ আর চাচি আম্মা।”

” সে যেই করুক হয়েছে তো।শুন, আমি তোকে বলছি রুমুকে তারা নিয়ে গেছে ভালো হয়েছে তোর মাথা থেকে আপদ বিদায় হয়েছে।”

” আব্বা!আপদ মানে?রুমু আমার স্ত্রী আপনি এভাবে বলতে পারেন না।”

” আমি তোর ভালোর জন্য বলছি তা কি তুই বুঝতে পারছিস না?”

” কোনটা ভালো কোনটা মন্দ তা বোঝার বয়স আমার হয়েছে।”

” না হয়নি।অহেতুক ঝামেলা করবি না।রুমুকে ডিভোর্সদে এসব ঝামেলা আমি আর সহ্য করতে পারবো না।আমার খোঁজ তুই রাখিস?প্রেসার সবসময় হাই থাকে রাতে ঘুমাতে পারিনা এসব কার জন্য হচ্ছে তোর চিন্তায় হচ্ছে।”

” ডিভোর্স!কে দেবে, আমি?এতই সহজ।”

” আমি বলছি, আমি সৈয়দ শামসুল বলে রাখলাম এই মেয়ে ফিরে আসবে তবে তোর সংসার করতে না সংসার ভাঙতে আসবে।রুমু নিজেই তোকে ডিভোর্স দেবে।”

” আমি দেব না।প্রয়োজনে ওর হাত পা ভেঙে সংসার চালিয়ে যাব।আমি বলছি,আমি সৈয়দ উজ্জ্বল আনিস বলছি রুমু কখনোই ডিভোর্স দিবে না।”

ছেলেটা মনের জোর নিয়ে কথাটা বলল তবে তার কথায় তাচ্ছিল্য হাসলেন সৈয়দ শামসুল।

” ঠিক আছে যা হবার হবে।”

” তুমি এখন অন্তত আমার সাথে থানায় চলো।”

” পারবো না।”

” কিন্তু কেন?”

” তোর ব্যপার তুই বুঝবি।”

উজ্জ্বল হতাশার শ্বাস ছাড়ল।নিজেকে প্রচন্ড অসহায় লাগল তার।বিপদে কেউ পাশে না থাকলে বিপদটাকে হাজারগুন বেশি ভারী মনে হয়।উজ্জ্বলেরো এখন তাই মনে হচ্ছে।

” ঠিক আছে থানায় আমি যাব।তোমার ভাইয়ের নামেও মামলাটা কিন্তু দিব।”

“যা ইচ্ছা কর।তবে মাথায় রাখিস যদি রুমু বিগড়ে যায় আর সে তোকে পালটা কিডন্যাপের মামলায় ফাসিয়ে দেয় তখন কী করবি?”

” রুমু এমন কিছুই করবে না।”

” করতেও পারে।নারী নির্যাতন সাথে কিডন্যাপের মামলা কতটা ভয়াবহ হবে তোর ধারণার বাইরে।যেহেতু রুমুকে তার পরিবার নিয়ে গেছে নিশ্চিয়ই তার সাথে খারাপ কিছু হবে না।এখন স্থির হও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে যা করার করবি।”

” আশ্চর্য আমি বসে থাকব!আব্বা আপনার কথা শুনে আমার নিজেকে বেকুব ছাড়া কিছুই মনে হচ্ছে না।যা করার আমি করব।”

উজ্জ্বল উঠে দাড়াল।নার্গিস এতক্ষণ সঙ্কিত চোখে মুখে তাকিয়ে ছিলেন ভয় হচ্ছিল বাবা ছেলে আবার না অতিরিক্ত ঝগড়ায় লিপ্ত হয় তবে উজ্জ্বল এবং সৈয়দ শামসুল কেউ অতিরিক্ত পর্যায়ে গেল না।এখন শুধু একটাই ভয় উজ্জ্বল যদি থানা পুলিশ করে তবে তার নিজের ফেসে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি।তাছাড়া রাশেদ ওত পেতে আছে উজ্জ্বলকে মা র বে বলে, সব মিলিয়ে নিজের ছেলের জীবনটা নিরাপদ চান তিনি।
উজ্জ্বল যখন বেরিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলো তখনি তাকে আঁকড়ে ধরেন নার্গিস।

” বাপ তুই থানা পুলিশ করিস না।আমার একমাত্র ছেলে তুই। আমাদের কথা একবার চিন্তা কর।”

” আম্মা আমার বউয়ের খোঁজ নাই আমি চুপচাপ হাত পা কোলে নিয়ে বসে থাকবো?”

” আমি তা বলিনি।তোর বন্ধু বান্ধবদের দিয়ে খোঁজ নে কিন্তু তুই থানা পুলিশে যাবি না।”

” গেলে কী হবে?”

” তুই নিজেই বিপদে পড়বি।আমাকে কথা দে আল্লার ওয়াস্তে আমাকে কথা দে তুই এসব করবি না।”

নার্গিস ডুকরে কেঁদে উঠেন।উজ্জ্বল দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,

” ঠিক আছে।তবে এর শেষ দেখে ছাড়বো আমি।”

সৈয়দ শামসুল আবারো হাসলেন।আজ মনে হয় তিনি উজ্জ্বলকে অবজ্ঞায় শেষ করবেন।

” শুন,এমনটা যে হবে তুইও জানতি। কি জানতি না?নিজ দায়িত্বে যখন বিয়ে করেছিস তখন ঝড়ঝাপটা সবটাই তোকে সামলাতে হবে।”

উজ্জ্বল প্রত্যুত্তর করে না বেরিয়ে যায় ঘর ছেড়ে।
সময় গড়িয়ে সন্ধ্যা হলো রুমুর খোঁজ উজ্জ্বল এখনো পায়নি।উজ্জ্বলের শেষ ভরসা ছিল রুমুদের বাড়ির কাজের লোক রহিমা।অথচ তিনি জানান এক সাপ্তাহ আগে রাশেদ তাকে আসতে মানা করে দিয়েছে তাদের নাকি আর কাজের লোকের প্রয়োজন নেই।রুমুর বাবা ব্যবসায়ীক কাজে ঢাকায় গেছেন সব মিলিয়ে উজ্জ্বলের পক্ষ নিয়ে লড়ার মতো কেউ নেই,কেউ রইল না।

উজ্জ্বলের সকল বুদ্ধি যখন নিষ্প্রাণ তখন সে তার দলবল নিয়ে হাজির হলো রুমুদের বাড়ি রাশেদ যেন এমনটাই চাইছিল।উজ্জ্বলের আগমনে সে তীক্ষ্ণ হাসলো।

” আরে উজ্জ্বল যে আয় আয়।”

” এই শালা তোর দুলাভাই হই।দুলাভাই ডাক।”

” কি!”

” শ্লা বুঝিস না?দুলাভাই হই তোর। তোকে মামা ডাক শোনানোর দায়িত্ব নিয়েছি অথচ তুই আমার ঘরে আগুন দিচ্ছিস।”

” উজ্জ্বল…”

” অব দুলাভাই। শ্লা!”

চলবে….