কমলা রঙের রোদ পর্ব-৪০ এবং শেষ পর্ব

0
2

#কমলা_রঙের_রোদ [৪০_শেষ ]
#জেরিন_আক্তার_নিপা

বোনের ছেলেকে কোলে নিয়ে খুশবু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ওর ছোটছোট হাত-পা দেখছে। চোখ দু’টো পুরো বাবার পেয়েছে। আর নাকটা খুশির মতো খাড়া। দাদীর ভাষ্যমতে গায়ের রং নাকি খালার পেয়েছে। ছেলে মানুষ এত সুন্দর হলে বড় হলে তো মেয়েরা একে নিয়ে টানাটানি লেগে যাবে। চোখের পাতা পিটপিট করে কেমন খুশবুকে দেখছে। খুশবু কথা বললে ওর সাথে হাসে। খুশি গোসল সেরে ঘরে এসে বলল,

-এখনও তুই বাবুকে কোলে নিয়ে বসে আছিস!

-তোর ছেলে ঘুমায় না কী করব? শুইয়ে রাখলে কান্না করে।

-তোরও কোলে রাখার শখ আছে বোন। সারাদিন কোলে নিয়ে বসে থাকিস। একটু কষ্টও লাগে না?

-তোর ছেলে তো আর পাহাড়ের মতো ওজন না। ওটুকু তো তুলোর মতো পাতলা।

এর মাঝেই বাবু কান্না করতে শুরু করে দিয়েছে। খুশবু কোনভাবেই চুপ করাতে পারল না।

-ওর মনে হয় ক্ষিধে পেয়েছে। সেজন্যেই কাঁদছে। ওকে একটু খাওয়া তো।

খুশি বিছানায় উঠে বাবুকে কোলে নিয়ে অন্য দিকে ফিরে খাওয়াচ্ছে। খুশবু কতক্ষণ চুপচাপ মা ছেলেকে দেখল। এতক্ষণ তার কোলে কাঁদলেও মা’র কোলে যাওয়ার সাথে সাথে কেমন শান্ত হয়ে গেছে।

-খুশি, মা হওয়ার অনুভূতি কেমন হয় রে?

-তুই যখন হবি তখন বুঝবি। এই অনুভূতি পৃথিবীর অন্য কোন অনুভূতির সাথে তুলনা হয় না।

খুশবু দীর্ঘশ্বাস ফেলল। সে কোনদিন এই অনুভূতি অনুভব করতে পারবে না। আর না তার জন্য সান বাবা ডাক শুনতে পারবে।

ছয় দিনের দিন অনুষ্ঠান করে বাবুর নাম রাখা হলো। নামটা খুশবুর দেওয়া। সবাই অনেক পছন্দ করেছে। স্মরণ খুশবুর মাথায় গাট্টা মেরে বলল,

-তোর এই গোবর মাথায় এত সুন্দর নাম কোত্থেকে এলো রে?

খুশবু রাগী দৃষ্টি নিয়ে স্মরণের দিকে তাকাল। মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলল,

-এখন কিন্তু তোমার প্রতিটা অত্যাচারের বদলা তোমার ছেলের উপর দিয়ে যাবে। বুঝেশুনে মেরো কিন্তু।

স্মরণ হাসতে হাসতে বলল,

-আমার ছেলেকে তুই মারতে পারবি?

-অবশ্যই পারব। তার বাপকে তো আর মারতে পারব না। তাই ছেলেকে মেরেই বদলা নেব।

-ঠিক আছে মারিস। তোর ভাগ্নেকে তুই মারবি কাটবি নাকি আদর করবি এটা তুই জানিস।

খুশবু শুদ্ধকে মারবে তো দূর ওর মুখের দিকে তাকালেই ভালোবাসতে মন চায়। চুমু দিতে দিতে তুলতুলে গাল দু’টোকে লাল করে ফেলে। মাঝে মাঝে বিরক্ত হয়ে শুদ্ধ কাঁদতে শুরু করে। তখন খুশি ওকেই শান্ত করতে বলে। শুদ্ধকে রেখে খুশবুর এখন বাড়ি যেতে ইচ্ছে করে না। সানও ওকে বেশি জোর করে না। সময় পেলে সান এখানে চলে আসে। শুদ্ধর সাথে সময় কাটাতে তারও ভালো লাগে।

🌸

অজান্তেই মাহিয়ার সাথে তার বন্ধুত্বের সম্পর্কে একটা দূরত্ব চলে এসেছিল। খুশবু হয়তো নিজের জীবন নিয়ে একটু বেশিই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল। মাহিয়াও এক সময় নিজে থেকে খোঁজ খবর নেওয়া বাদ দিল। কিন্তু সেদিন সানের মুখে মাহিয়ার বিয়ের কথা শুনে কল দিয়ে বান্ধবীর সাথে সব মানঅভিমান শেষ করে নিয়েছে খুশবু।

-আমাকে ক্ষমা করে দে বান্ধবী। তুই তো জানিস আমি কখনও তোকে বন্ধুর চোখে দেখিনি। তোকে বোন ভেবে নিজের সব কথা শেয়ার করেছি। ভেবেছিলাম বিয়ের পর তোর সাথে সম্পর্কে আরও পাক্কা হবে। কারণ এখন আমি শুধু তোর বন্ধু না ভাবীও। কিন্তু কী হলো দেখ, সংসার জীবনে জড়িয়ে আমি তোকেই ভুলে গেলাম। তুমি প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দে।

যদিও মাহিয়ার রাগ ভাঙানো এত সহজ ছিল না। শেষ পর্যন্ত মাহিয়া বান্ধবীর উপর রাগ ধরে রাখতে পারল না।

-ভেবেছিলাম জীবনে আর কখনও তোর সাথে কথা বলব না।

-তুই কথা না বললে আমি তোর বাড়ি চলে আসব।

-দারোয়ানকে বলে আমি তোকে গেটের ভেতরই ঢুকতে দিতাম না।

-আমি গেট ভেঙে ফেলতাম।

-হয়েছে আর নাটক করিস না। তুই যে আমাকে কত ভালোবাসিস খুব জানা আছে।

-আমার ভালোবাসা দিয়ে তুই কী করবি? এখন তো তোকে ভালোবাসার জন্য পার্সোনাল মানুষ হচ্ছে। সে-ই তোকে দিনরাত চব্বিশ ঘন্টা ভালোবাসায় ডুবিয়ে রাখবে।

-তখন আমিও তোকে ভুলে যাব।

-আচ্ছা যাস। ওহ হ্যাঁ, খুশির ছেলে হয়েছে জানিস?

-জানি। খালামনি বলেছে।

-হোয়াটসঅ্যাপে তোকে ছবি পাঠাবো দেখে নিস। বাবুটা যে কী সুন্দর হয়েছে!

-বোনের ছেলেকে ভালোবাসা শেষ হলে এবার নিজের চিন্তাও কর। আমাকেও আমার ভাইয়ের ছেলে নিয়ে আদিখ্যেতা করার সুযোগ করে দে।

কথাটা মাহিয়া অন্য কোন উদ্দেশ্য নিয়ে না বললেও খুশবুর মন খারাপ করে দেওয়ার জন্য এই একটা কথাই যথেষ্ট। যার সাথেই সে কথা বলে কোনো না কোন ভাবে এই টপিক এসেই পড়ে। খুশবু আর বেশি কথা বলতে পারল না। মাহিয়াকে বুঝতে না দিয়ে ওর থেকে বিদায় নিয়ে ফোন রেখে দিল।

🌸

মাহিয়ার হলুদের দিন তৈরি হয়ে গেলেও খুশবু যেতে পারল না। দাদীর অসুস্থতার খবর শুনে তাৎক্ষণাৎ বাড়িতে ছুটে যেতে হলো। মাহিয়া একটু মন খারাপ করলেও খুশবুর সমস্যা বুঝল। এই প্রথম খুশবুর মনে হলো দাদী বুড়ো হয়ে গেছে। দাদীকে হারানোর কথা খুশবু ভাবতেও পারে না। এই মানুষটা না থাকলে পৃথিবীতে হয়তো তার বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে যেত। সারাদিন দাদীকে নিয়ে ছোটাছুটি করে রাতে বাড়ি ফিরে ক্লান্ত হয়ে খুশবু না খেয়েই শুয়ে পড়েছিল। কিন্তু সান ওকে না খেয়ে শুতে দিবে না। তাই নিজেই গিয়ে খাবার ঘরে নিয়ে এলো। খুশবুর চোখে তখন ঘুমঘুম ভাব চলে এসেছে। তারপরও সান ওকে টেনে তুললো।

-আহ বিরক্ত কেন করছেন?

-তুমি খেয়ে শুলেই আর বিরক্ত করব না।

-আমার ক্ষিধে নেই।

-ক্ষিধে না থাকলেও খেতে হবে।

এই লোক নাছোড়বান্দা। খাইয়ে ছাড়বেই। খুশবু ঘুমে টলতে টলতেই সানের হাতে কয়েক লোকমা মুখে নিলো।

-আপনিও খান। নাকি আমাকে খাওয়ালেই হবে। বউয়ের খাওয়া হলেই স্বামীর পেট ভরে যাবে।

সান হাসল। এতক্ষণ নিজেই খাচ্ছিল না। এখন তার চিন্তাও করছে।

-আমি খেয়ে নিব। তুমি এবার ঘুমাও।

-না। আমার সামনে খাবেন আপনি।

সান উঠে খুশবুর কপালে চুমু দিয়ে বলল,

-আমি এখন মা’কে আনতে যাব। খালার ততক্ষণ তোমার সাথে এসে থাকবে। ভয় পাবে না তো?

-উঁহু।

-ঠিক আছে লক্ষীটি। এবার তাহলে ঘুমাও।

🌸

বান্ধবীর বিয়েতে এসে খুশবু অনেকদিন পর মন থেকে খুশি ছিল। মাহিটাও সংসারী হয়ে যাবে। এখানে এসে খুশবুর মন ভালো হয়েছে দেখে সান মনে মনে প্ল্যান করল এবার থেকে মাসে একবার হলেও সে খুশবুকে নিয়ে ঘুরতে যাবে। মন ভালো করার জন্য নতুন জায়গা নতুন পরিবেশ ভালো কাজে দেয়। খালা শাশুড়ি খুশবুর খাতিরযত্নে কোন কমতি রাখল না। কিন্তু বিপত্তি বাঁধাল উটকো কয়েকজন মহিলা। যারা নামেমাত্র মিসেস সুলতানাকে চিনেন। ঘনিষ্ঠ কোন সম্পর্ক ছাড়াও তারা মিসেস সুলতানার উত্তরাধিকারের কথা ভাবছেন।

-আপা ছেলেকে বিয়ে করিয়েছেন তো অনেকদিন হলো। এবার বৌমাকে বাচ্চাকাচ্চা নিতে বলুন। আপনার একটামাত্র ছেলে। দুই তিনটা নাতিনাতনি এলে ঘর ভরা থাকবে।

মিসেস সুলতানা তখন একা ছিলেন না। খুশবুও উনার পাশে ছিল। মহিলাদের এসব কথা শুনে সে উঠে যেতে পারছে না। আবার মুখে হাসি নিয়ে বসে এদের কথাও শুনতে পারছে না। মিসেস সুলতানা তবুও ভদ্রতা বজায় রেখে বললেন,

-নাতিনাতনির জন্য তো আমি ছেলের বউ আনিনি। ওদের যখন সময় হবে তখন বাচ্চা নিবে।

স্বাস্থ্যবান একজন মহিলা মুখ বাঁকিয়ে বলে উঠলেন,

-না ভাবী, আমার ননদের মেয়েও বিয়ের পর জীবন এনজয় করতে চেয়েছিল। এখন দেখুন পাঁচ বছর ধরে চেষ্টা করেও বাচ্চা হচ্ছে না। কত ডাক্তার দেখিয়েছে। এখন নাকি বিদেশও যাবে শুনেছি।

খুশবু সত্যিই আর এসব কথা নিতে পারছে না। মিসেস সুলতানার যে এই আলোচনা ভালো লাগছে তা-ও না। ভদ্রতার খাতিরে শুধু উঠে যেতে পারছে না। সান কাছেপিঠে ছিল না। কিন্তু হুট করে কোত্থেকে চলে এসে মহিলা গুলোর উদ্দেশ্যে বলল,

-স্যরি আন্টিগণ আপনাদের মেয়েলি গসিপ যদি শেষ হয় তাহলে আমি আমার বউকে নিয়ে যেতাম।

সান হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। খুশবু সানের দিকে তাকিয়ে বিশাল সমুদ্রে শক্ত একটা ভরসা পাওয়ার মতো শান্তি অনুভব করল। মহিলারা সানকেও জ্ঞান দিতে গেলে সান কারো তোয়াক্কা করল না। মুখের উপর ওইসব আন্টিকে শুনিয়ে দিল,

-অন্যের লাইফে ইন্টারফেয়ার করা ছাড়াও পৃথিবীতে করার মতো আরও অনেক কাজ আছে। কিন্তু আপনাদের ইন্টারেস্ট এখানেই। কার লাইফে কী চলছে এটা নিয়ে গবেষণা না করলে আপনাদের আবার দিন কাটে না। আমাদের যখন বেবী নেওয়ার ইচ্ছে হবে তখন নেব। আপনার কথায় বেবী নিয়ে বেবীকে নিয়ে আপনার কাছে রেখে আসব না ওকে লালনপালন করে দিন।

মহিলা গুলো ফ্যালফ্যাল করে সানের দিকে তাকিয়ে আছে। খুশবু সানকে চুপ করার জন্য ঠেলছে। মিসেস সুলতানাও ছেলের হাত ধরে ওখান থেকে নিয়ে এলেন। একটু দূরে এসে বলল,

-তুইও কি পাগল হয়েছিস সান! উনারা সবাই তোর গুরুজন। ওসব কথা বলার কী খুব প্রয়োজন ছিল।

-ওহ মা প্লিজ। গুরুজন মাই ফুট। আমাদের লাইফ নিয়ে ইন্টারেস্ট দেখানোর উনারা কে? আর তুমিও চুপ করে বসে শুনছিলে।

-সব জায়গায় প্রতিবাদ করা বা উচিত কথা বলতে হয় না সান।

-তুমি সামাজিকতা ভদ্রতা মেনে চলো। আমি পারব না।

বিয়ে শেষ না করেই সান চলে আসতে চাচ্ছিল। খালার অনুরোধে মাহিয়ার বিদায় পর্যন্ত থেকেছে। বাড়ি ফেরার পথে খুশবু একেবারে চুপচাপ রইল। সান তার জন্য সবার বিরুদ্ধে যেতে পারবে এটা খুশবু জানে। নিজেকে তার বড্ড অপরাধী লাগে। বাড়ির পথে না গিয়ে অন্য রোড ধরলে খুশবু জিজ্ঞেস করল,

-কোথায় যাচ্ছেন?

-যেখানে দু-চোখ যাবে।

সান খুশবুকে নিজের বাড়িতে নিয়ে এসেছে। এখানে এসেই খুশবুর মন ভালো হতে পারে। রাত এগারোটার উপর বেজে গেলেও মানছুরা মেয়ে জামাইয়ের জন্য রান্না চড়াতে যাচ্ছিল। সান না করল। তারা বিয়ে বাড়ি থেকে এসেছে। এমনিতেই রাতে কিছু খাবে না। শুদ্ধ ঘুমিয়ে আছে। খুশবু এখন আর ওর ঘুম ভাঙাল না। কোন কারণে খুশবুর মন খারাপ বুঝতে পেরে জিজ্ঞেস করল,

-কী হয়েছে তোর? বরের সাথে ঝগড়া করেছিস নাকি?

খুশবু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

-বর আরও আমার জন্য মানুষের সাথে ঝগড়া করে।

খুশি হেসে বলল,

-এটা তো আরও ভালো কথা।

-ভালো না খুশি। উনি আমার জন্য পুরো পৃথিবীকে শত্রু বানিয়ে ফেলবেন। অথচ আমি উনাকে বাবা হওয়ার সুখই দিতে পারব না।

খুশি এব্যাপারে কিছুই জানত না। খুশবুর মুখে এই কথা শুনে প্রথমে বিশ্বাসই হলো না। খুশবু একথা নিজের মধ্যে আজ চেপে রাখতে পারছিল না। কাউকে না বলতে পারলে সে হয়তো পাগলই হয়ে যেত।

-কী বলছিস এসব তুই!

-ঠিকই বলছি। আমি কোনদিন মা হতে পারব না।

খুশি হতবুদ্ধি হয়ে কতক্ষণ খুশবুর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকল। খুশবুর চোখ ভিজে উঠেছে।

-এই কথা তোকে কে বলেছে? কোন ছাতার ডাক্তার দেখিয়েছিস? আনতাজে কিছু একটা বলে দিলেই হলো নাকি? কেন মা হতে পারবি না তুই? তোর মধ্যে কী সমস্যা আছে?

মানছুরা খুশবুকে ডাকতে এসেছিল। দরজার সামনে থেকে এই কথা শুনে মুখে আঁচল চেপে সে নিজের ঘরে ছুটে গেল। পরী বানু ভেবে পেলেন না বউয়ের আবার কী হলো।

-ও বউ কী হইছে তোমার? কী দেখে ওরকম ছুটে এলে? জ্বীন ভূত দেখছো নাকি?

মানছুরা শাশুড়িকে কিছুই বলতে পারল না। নীরবে শুধু চোখের জল ফেলে গেল। খুশবুর প্রতি মায়া মমতা তিনি কোনদিনও প্রকাশ করতে পারেননি। তবে তার প্রতিটা মোনাজাতে খুশবুর সুখ চেয়েছে। মেয়েটা সুখের দেখা পেয়েছিলও। কিন্তু এটা কী হলো? মা হওয়া যে প্রতিটা মেয়ের জীবন আশীর্বাদ।
বাকি রাত মানছুরার চোখে ঘুম এলো না। তাহাজ্জুদের সময় জায়নামাজে বসে আল্লাহর কাছে হাত তুলে খুশবুর জন্য চোখের পানি ফেলতে লাগল।

-আল্লাহ আমার এই অভাগী মেয়েটার জীবনে তুমি এত বড় অপূর্ণতা রেখো না। তুমি এই মেয়েটাকে মা হওয়ার সুখ দিও। এই মায়ের দোয়া তুমি কবুল কোরো। আমাকে তুমি খালি হাতে ফিরিয়ে দিও না মাবুদ।

পরিশিষ্ট

খুশবুর যমজ দুই মেয়ে হয়েছে। এই দিনের অপেক্ষায় মাঝের সাতটা বছর খুশবু সান সহ পুরো পরিবার ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে এসেছে। মানুষের কথায় খুশবু বারংবার ভেঙে পড়েছে। কিন্তু প্রতিবারই ওকে সামলে নেওয়ার জন্য সান ছিল। মিসেস সুলতানা শাশুড়ি না মা হয়ে খুশবুর পাশে থেকেছে। কখনও ওর মনোবল ভাঙতে দেয়নি। এই সাত বছরে খুশবু নিজের মা’র অন্য রুপ দেখেছে। খুশবু মনে মনে ভাবত মা হয়তো তাকে ভালোবাসে না। সাত বছরে খুশবু প্রতিটা দিন উপলব্ধি করেছে মা তাকে কতটা ভালোবাসে। হয়তো খুশির থেকেও বেশি। মা’র ভালোবাসা শাসনের আড়ালে লুকিয়ে ছিল এটা খুশবু আগে কখনও বোঝার চেষ্টা করেনি।

এতদিন দোয়া কবুল করানোর জন্য কেঁদেছে। আজ হাসপাতালের বেডে শুয়ে খুশবু দোয়া কবুল হওয়ার খুশিতে কাঁদছে। শুদ্ধ এখন বড় হয়েছে। খালামনিকে কাঁদতে দেখে সব বলল,

-খালামনি কেঁদো না। তুমি কাঁদলে আমার কষ্ট হয়।

চোখে জল মুখে হাসি নিয়ে খুশবু শুদ্ধকে বলল,

-আমি কাঁদছি না বাবা।

-না তুমি কাঁদছো। তোমার চোখে পানি।

খুশি ছেলেকে কাছে টেনে নিয়ে বুঝাল,

-তোমার খালামনি আজ খুশিতে কাঁদতে বাবা।

শুদ্ধ অবাক চোখে মা’র দিকে তাকিয়ে বলল,

-খালামনি তোমার জন্য কাঁদছে!

শুদ্ধর এই কথা শুনে সবাই হেসে দিল। তার মায়ের নাম খুশি। শুদ্ধ ভেবেছে খালামনি তার মা’র জন্য কাঁদছে।

সান খুশবুর কপালে চুমু খেয়ে দুই মেয়ের কপালে চুমু খেলো। মেয়ে দু’জন একসাথে ডাগর ডাগর চোখে বাবাকে দেখছে।

-আমার দুইটা জান্নাত!

তাদের অপেক্ষার ফল হিসেবে আল্লাহ তাদের ডাবল খুশি দিয়েছে। খুশবু মনে মনে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে।

-আমার অপেক্ষার ফল তুমি এত মিষ্টি দেবে আমি বুঝিনি মাবুদ। একসাথে দুই ফুল দিয়ে তুমি আমার কোল ভরিয়ে দিয়েছ। এ জীবনে আমার আর কিছু চাওয়ার রইল না। তুমি আমাকে পরিপূর্ণ করেছ।

সমাপ্ত

এডিট ছাড়া পর্ব। বানান ভুল ক্ষমা করবেন। অসমাপ্ত অবস্থায় ঝুলিয়ে রাখার চেয়ে কোনরকম একটা এন্ডিং টেনে দিলাম। শেষ পর্ব পড়ে যারা হতাশ হবেন তাদের কাছে অগ্রিম দুঃখিত।