#কলংকের_বিয়ে
#ইসরাত_জাহান_এশা
#পার্ট_০৪
আর হ্যা এসব নিয়ে বেশি মাথা ঘামিও না সবটা কিন্তু ভাইরাল হয়ে যাবে গুড বায় দেখা হবে।
নাফিজা ভিতুর মত নিহানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। নাফিজা ভাবে নিহান আনামের থেকে কিসের প্রতিশোধ নিবে। ওদের সাথে কি এমন সত্রুতা আছে যার জন্য আমাকে ব্যবহার করেছে আর বিয়েটা কিভাবে ওর মাধ্যমে হয়েছে?
নাফিজা বাড়িতে গিয়ে ঘটকের কাছে যায়। এবং ঘটককে জিজ্ঞেস করে ঘটক চাচা আমাদের বিয়েটা কিভাবে কি হয়েছে একটু বিস্তারিত বলবেন?
___যেই বিয়ে এতো ঘটনা ঘটে ভেংগে গেছে সেই বিয়ের খোঁজ নিচ্ছ? আমার নামে আবার মামলা টামলা করবা নি? বাপু আমি ঘটক মানুষ সবার মুখে শুনেছি ছেলে অনেক ভালো কথায়ও মনে হয় ভালো কিন্তু অন্তর এমন তা তো জানতাম না৷
___এমন কিছু না। আপনি আমাকে বিস্তারিত বলুন কিভাবে কি হয়েছে? আপনি এই ছেলের সন্ধান কিভাবে পেয়েছেন?
___শোনো তাহলে, একদিন সন্ধ্যায় একটা ইয়াং ছেলে তোমার জামাইর মতই মানে পরিচয় দিয়ে ছিল ছেলের কাজিন হয়। সাথে ছেলের ছবি দিয়ে বলে এটা আমার কাজিন। আপনাদের উত্তর পাড়াতে নাফিজা নামের একটি মেয়ে ভার্সিটিতে আসা যাওয়া করে চিনেন তো? আমি বললাম হ্যাঁ চিনি রাজ্জাক ভূঁইয়ার মেয়ে। তা যার মেয়েই হোক আপনি যদি সমন্ধটি করিয়ে দিতে পারেন আপনাকে দশ হাজার টাকা দিব নগদ সাথে জামা কাপর সব পাবেন।
___আপনাকে টাকা অফার করেছে আর আপনি না জেনেই আমার বাবার কাছে প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন?
___আরেহ না।এমন অফার প্রায় সমন্ধতেই হয়। শুনো তোমার বাবার যেমন নাম ডাক আছে রফিক তালুকদারেরও অনেক নাম ডাক আছে পরে তোমার বাবাকে প্রস্তাব দিলে তিনিও এই সমন্ধ নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। আর যাই বলো না কেনো ছেলের ব্যাকগ্রাউন্ড কিন্তু খুব ভালো ছিলো।
এখানে আমার কোনো দোষ নেই আমি উভয় পক্ষকে প্রস্তাব জানালে তার নিজেরা নিজেরাই সব কথা ভাঙ্গেন।
___আপনাকে সেই ছেলেটা মানে ওর কাজিন টাকা দিয়েছিল?
___হ্যাঁ দিয়েছিল।
নাফিজা সকল কথা শুনে যেনো একদম তব্দা খেয়ে যায়। নাফিজার মাথা কাজ করছে না সব কিছু ভাবতে ভাবতে বাড়ির দিকে রওনা করে।
নাজিফা মাথায় হাত দেয় আর মনে মনে বলে এ কি বাটপারের সাথে আমি জরিয়েছি। আমার কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে আমারই সর্বনাশ করেছে। নিহান ঘটকে যে দশ হাজার টাকা দিয়েছে সেটাই তো আমাকে বিশেষ কারনে লাগবে বলে ধার হিসেবে নিয়েছে মনে হয়না আর কখনো ফেরত পাবো। আমি এখন কি করব সব দিক দিয়ে আমি চেপে আছি এখান থেকে উঠার তো কোনো উপায় দেখছি না৷
নাজিফা বাড়িতে ঢুকলে আয়েশা বেগম কঠিন কন্ঠে বলেন কই গেছিলি? কত করে বলছিলাম জামাইয়ের যত্ন নে সেই তো হাতছাড়া হলো।আমার মেয়ে হয়ে তুই নিজের স্বামীকে হাতে আনতে পারলি না। সতীনের সংসার করেও সংসারের সকল দায়িত্ব আর চাবি নিয়ে ঘুরেছি। যদি জানতাম নয়না আমাদের এতো বড় সর্বনাশ করবে তাহলে ওরেও দেখে নিতাম।
নাফিজা মনে মনে নয়না কে দোষ দিয়ে লাভ নেই। ওর জন্য কুয়ো কেটে সেই কুয়োতে নিজেই পড়েছি। এখন কিসে কি করব বুঝতে পারছি না।
নাফিজা নাফিজের কাছে গিয়ে বলে আচ্ছা ভাইয়া রাহাতের সাথে তোমার কি আমাদের প্লান নিয়ে কোনো কথা হয়েছিল?
___ওই তো প্লান টা আমাকে দিয়েছিলো অবশ্য তো বলতে নিষেধ করেছে তাই বলেনি। ও চায় দ্রুত তোর ডিভোর্স হোক তাই ও আমাকে এই বুদ্ধি দিয়েছে যেনো তোর ডিভোর্স ও হয় আর নয়নাও এই বাড়ি থেকে চলে যায়।
___কি বলছ এসব বাইরের একটা লোকের কথায় তুমি আমাকে নিয়ে এগুলো করছ?
___কি বাইরের লোক ও না তোর বয়ফ্রেন্ড শিগগিরই তো বিয়ে করবি।
___ভাইয়া আমরা চরম ভাবে ফেঁসে গেছি। ও রাহাত না ওর নাম নিহান ও আনামের কাজিন হয়।
___কি বলছিস এসব সিরিয়াসলি আমার বিশ্বাস হচ্ছে না৷ আর যদি কাজিনই হয় তাহলে বিয়েতে এতো লোক আসল ওকে তো দেখিনি।
___ভাইয়া ও একটা পাক্কা ক্রিমিনাল। আমার বিয়েটাও ও এখানে করিয়েছে। ও আনামের থেকে প্রতিশোধ নিতে চাইছে।
___তাই বলে আমাদের কে দিয়ে প্রতিশোধ নিবে? ও তো তোকে ভালোবাসে। তাও তোকে আরেকটা ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েছে।
দুই ভাইবোনে মিলে বসে বসে ভাবছে কিভাবে ওরা লুডুর গুটির মত চাল হিসাবে ব্যবহারিত হয়েছে।
১০,
রফিক তালুকদার নয়নাকে নিয়ে আবারো ডাক্তারের কাছে যায়। ডাক্তার আবারো বলে সময় নিয়ে চিকিৎসা করতে হবে আপনারা চিকিৎসা শুরু করুন না হলে আপাতত একটা কান ভালো আছে ওটাও ড্যামেজ হয়ে যাবে।
রফিক তালুকদার বলেন ঠিক আছে ডাক্তার সাহেব আপনি চিকিৎসা শুরু করুন কয়েকদিনের মধ্যে আমরা ঢাকায় চলে যাচ্ছি তারপর ওখানেই চিকিৎসা করব।
নয়নার ট্রিটমেন্টে প্রায় দশ হাজার টাকার মত খরচ হয়ে যায় নয়না মনে মনে চিন্তা করে এতোগুলো টাকা রেগুলার যদি আমার লাগে ওনারা কই পাবেন।
রেহানা বেগম বলেন কি চিন্তা করছ নয়না?
___আন্টি আমার জন্য আপনাদের কতগুলো টাকা নষ্ট হচ্ছে।
___চিন্তা করো না৷ আমাদের টাকা পয়সা নেই তা তো আর না। যা আছে তাতে চলে যাবে আলহামদুলিল্লাহ।
সন্ধ্যায় আনাম ঢাকার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে যাওয়ার জন্য রেডি হয়। বাবা মাকে বিদায় জানালেও নয়নার দিকে ফিরেও তাকায় না। আনামের মনে ধারনা নয়নাও ওর বোনের মত বাজে মেয়ে। মেয়েরা ভালোই হতে পারে না দিন শেষে সব মেয়েই বয়ফ্রেন্ড দ্বারা সতিত্ব হারানো নষ্টা।
এই ঘটনার পর থেকে আনাম মেয়ে মানুষকে মনে মনে ঘৃনা করতে শুরু করে।
প্রায় সপ্তাহখানিক পরে রফিক তালুকদার নিজের ভিটে মাটি ছেড়ে ঢাকায় পাড়ি জমায়। মনে মনে বলে শহরে থাকাটা নিজের কাছে একটি বন্দি জীবন মনে হত। সব সময় ভাবতাম শহরের মানুষ কিভাবে চারদেয়ালের মাঝে আটকে থাকে।আর আজ সেচ্ছায় ভাগ্যের দোষে বন্দী জীবনে চলে যাচ্ছি। আর কখনো হবে না সন্ধ্যার পরে বাজারে গিয়ে চায়ের আড্ডা সাথে কিছু বিচার ব্যবস্থা করা৷ সকাল সকাল মসজিদ থেকে এসে নদীর তীরে দাঁড়িয়ে
কল কল শব্দ, বাতাসের সাঁ সাঁ শব্দ যেগুলো না শুনলে মনে শান্তি লাগত না৷ তা মনে হয় আর হবে না। পারব কি সার্ভাইব করতে শহরের সাথে?
রেহানা বেগম রফিক তালুকদার কে হালকা একটু নাড়া দিয়ে বলেন গভীর ভাবে কি এতো ভাবছেন? নতুন জায়গায় যাচ্ছি সব কিছু ভুলে নতুন মানুষদের সাথে নতুন ভাবে বাঁচব।
___বললেই কি সব ভুলা যায় সেই জন্ম থেকে যেই বাড়িটায় সেই বাড়িটা আজকে শুন্য করে চলে আসতে হয়েছে৷ জীবন কখন কাকে কোথায় দাড় করায় কেউ বলতে পারে না৷
___মন খারাপ কইরেন না৷ দেখবেন ভালো কিছু হবে ধৈর্য রাখেন৷ আমিও তো সব কিছু ছেড়ে আসছি এতো বছরের মায়ার সংসার একটু একটু করে কত জিনিস ঘরে এনে নিজের মত ঘর খানা সাজিয়েছি। আমার ছাব্বিশ বছরের সংসার কত সৃতি বাড়িটিতে। সব কিছু রেখে কয়একটা জিনিস পত্র নিয়ে চলে আসলাম৷
দু’জনেই কান্নার সহিত একজন আরেকজনকে শান্তনা দিচ্ছে নয়না বসে বসে নাটকের দৃশ্যের মত দেখছে কিছুই বলছে না।
নতুন বাড়িতে যাওয়ার পর প্রায় মাস তিনেক চলে যায়৷নয়নার কানের অবস্থা ভালো তবে কানের ভিতরে মেশিন ব্যবহার করতে হয় নাহলে দূরের স্বাভাবিক কথা শুনতে পায় না। তবে এতোদিনে নয়নার সাথে আনামের দেখা হলেও কখনো কথা হয়না। কেউ কারো দিকে তাকায়ও না৷
আনামের মা ছেলে আর বউয়ের এই অবস্থা দেখে রফিক তালুকদার কে বলেন কতদিন আর এই ভাবে চলবে? সব কিছুই তো পরিবর্তন এসেছে এখন ওদেরও স্বাভাবিক হতে বলেন জীবন কি এই ভাবেই যাবে?
___দেখি কি করা যায়।স্বাভাবিক জীবনে তো ফিরতে হবে। আনাম বাসায় আসলে আমাকে জানাবে।
সন্ধ্যায় আনাম বাড়িতে আসলে রেহনা বেগম বলে নয়না কে ডেকে নিয়ে আয় তোর বাবা দুজনকে একসাথে ডাকে।
___মা তুমি ডাকো না। আমি পারব না।
___তোকেই ডাকতে হবে৷
মায়ের জোরাজোরিতে আনাম নয়নার রুমে গিয়ে বলে বাবা ডাকছে। নয়না হটাৎ পুরুষের কন্ঠ শুনে চমকে উঠে পিছনে ঘুরে দেখে আনাম। একজন আরেক জনের চোখ পড়তেই আনাম বাবার রুমে চলে আসে।
আনাম নয়না দুজনেই রুমে প্রবেশ করে।রফিক তালুকদার খুব কড়া ভাবে বলেন তোমরা দুজন এভাবে আর কতদিন চলবে?
স্বাভাবিক জীবন যেনো পার করতে পারি তাই সব ছেড়ে দূরে চলে এসেছি আর তোমরা এখনো অপরিচিত লোকের মত ব্যবহার করো?
আনাম বলে কিন্তু বাবা ___
___চুপ করো, কোনো কিন্তু শুনতে চাই না। আজ থেকে তোমরা এক ঘরে থাকবে। মানুষের জীবনে উত্থান পতন থাকবে। তোমার একার জীবনেই কি কলংক হয়েছে? কলংক নবীজি (সা:) প্রিয়তমা স্ত্রী মা আয়েশা রাদিআল্লাহ আনহারও হয়েছিল তারা কি তোমাদের মত ভেংগে পড়েছিল?
এই মেয়ে, নয়না মাথা নিচু করে বলে বলুন আংকেল৷
এখন থেকে আংকেল টাংকেল বাদ দাও তো। বাবা মা সম্মোধন করবে। জীবন সংগ্রাম অনেক কঠিন মা আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা ঐরকম একটা পরিস্থিতি পার করেননি? তোমরা জানো ওনার নামে কত বড় অপবাদ দেওয়া হয়েছিল?
মা আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা)-এর বিরুদ্ধে যে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়েছিল, তা ইসলামের ইতিহাসে “ইফক-এর ঘটনা” সূরা আন-নূর-এ (২৪:১১-২০ আয়াত)। সব বলা হয়েছে।
নবিজি যখন সফরে যেতেন, তখন তিনি স্ত্রীদের মধ্য থেকে কাউকে না কাউকে সাথে নিয়ে যেতেন। ওই যাত্রায় তাঁর সাথে ছিলেন মা আয়েশা (রা.)।
সফরের সময় নারীদের উটে চাপিয়ে হাওদাজে (এক ধরনের কেবিন) রাখা হতো। এক জায়গায় বিরতি শেষে কাফেলা রওনা হয়ে যায়। মা আয়েশা (রা.) একটি ব্যক্তিগত প্রয়োজনে শিবিরের বাইরে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে দেখলেন, কাফেলা চলে গেছে। তাঁর হাওদাজ ছিল হালকা, তাই সবাই ভেবেছিল তিনি তাতে বসা অবস্থাতেই আছেন।
তিনি সেই স্থানে বসে থাকলেন, হয়তো কেউ তাঁকে খুঁজে পাবে ভেবে। কিছু সময় পর সাহাবী সফওয়ান ইবনু মু‘আত্তাল (রাঃ) পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন এবং তাঁকে একা বসে দেখতে পান। তিনি ‘ইন্না লিল্লাহি…’ পড়ে নীরবে উট নামিয়ে তাঁকে উঠতে বলেন। তারপর উট ধরে হাঁটতে থাকেন, যতক্ষণ না তারা কাফেলায় পৌঁছান।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুনাফিকদের নেতা আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সালুল মিথ্যা ও কুৎসা রটিয়ে দেয় যে, মা আয়েশা (রা.) ও সফওয়ান (রা.)-এর মধ্যে কিছু হয়েছে। অনেকে গুজব ছড়াতে শুরু করে।
মা আয়েশা (রা.) এই অপবাদে ভীষণ কষ্ট পান। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং নিজের বাবার ঘরে চলে যান।
রফিক তালুকদারের বলার মাঝখানে নয়না বলে উঠে নবিজী (সা.) প্রতিবাদ করেননি? রফিক তালুকদার বলেন নবিজি (সা.)-ও কষ্ট পেতেন, তবে সঠিক পথনির্দেশনার জন্য আল্লাহর ওয়াহির অপেক্ষা করছিলেন।
____আল্লাহর পক্ষ থেকে কি কোনো সমাধান এসেছিল?
___হ্যাঁ এসেছিল তবে তা একমাস পর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা ওহি নাজিল করেন। সূরা আন-নূর, আয়াত ১১-২০-তে আল্লাহ নিজেই মা আয়েশা (রা.)-এর পবিত্রতা ঘোষণা করেন এবং যারা এই অপবাদ ছড়িয়েছিল, তাদের কঠোর শাস্তির কথা বলেন।
“নিশ্চয়ই যাদের একটি দল তোমাদের মধ্য হতে অপবাদ এনেছে, তা তোমাদের জন্য মন্দ নয়; বরং তা তোমাদের জন্য কল্যাণ…”
(সূরা নূর, আয়াত ১১)
আনাম নয়না দুজনে একটু গভীর ভাবে চিন্তা করে দেখো যেটা হয়েছে একদিক থেকে ভালোই হয়েছে।
আনাম বলে ঠিক আছে ভেবে দেখব৷ আপনাদের কথা আমি কখনো অমান্য করেনি আর কখনো করব না৷ তবে আমার সময় লাগবে।
___তা যাই লাগুক নয়না আজ থেকে তোমার রুমেই থাকবে৷
নয়না কিছু না বলে নিজের রুমে গিয়ে বসে থাকে। রেহনা বেগম ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বলেন যাও নয়না কে নিয়ে রুমে যাও।
আনাম বিরক্তি নিয়ে নয়নার রুমে গিয়ে বলে বাবা কি বলেছে শুনতে পাওনি? এইটুকু বলে আনাম চলে আসে নিজের রুমে নয়না নিজের বালিশ নিয়ে রুমে গিয়ে দেখে_________________
চলবে_______