কলংকের বিয়ে পর্ব-০৮

0
1

#কলংকের_বিয়ে
#ইসরাত_জাহান_এশা
#পার্ট_০৮
১৫
ওহহ নো! এত তারাতাড়ি সু্যোগ আসবে ভাবতেই পারিনি। ওকে আমি তোকে মেইল পাঠাচ্ছি সেইটা চেক দে মানুষের মান সম্মান নিয়ে খেলা কতটা ভয়ংকর হতে পারে এবার ওরা বুঝতে পারবে।
রায়হান দ্রুত মেইল চেক করে। রায়হান সবকিছু দেখে চোখ ছানাবড়া হয়ে আছে।
আবার আনামকে বলে তুই কিভাবে এগুলো যোগাড় করেছিস?
আনামা হাসতে হাসতে বলে চুরি করেছি।
রায়হান বলে মানে কি বলিশ?
___হ্যাঁ চুরি করেছি এখানে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে অনেক প্ল্যান করে করতে হয়েছে।
___কি হয়েছে বল না।
___শোন তাহলে আমি একটা ছ্যাচড়া চোরকে টাকা দিয়ে ছিলাম নিহান কে সব সময় ফলো করতে আর ও যখন রাস্তায় মোবাইল দেখছিল তখন ওর ফোনটা চুরি করে এনেছে আর আগেই সর্ত দিয়েছিলাম মোবাইলটা লক খোলা অবস্থায় চুরি করতে হবে। তো চোরও সুযোগ করে চলন্ত মোবাইল চুরি করে আমাকে দিয়ে দেয়। আর আমি হাতে পেয়ে সাথে সাথে ভিতরে গিয়ে আমার ফিঙ্গারপ্রিন্ট এডড করে ফেলি। তারপর সব ডকুমেন্টস ল্যাপটপে নিয়ে আসি।
___ভাই তুই তো জিনিয়াস এমন বুদ্ধি নিয়ে ঘুমাস কেমনে? এগুলো একটা প্রকাশ করতে পারলে ওর হাত থেকে দশবারো টা নারী বেচেঁ থাকতে পারবে।
___তুই কি খেয়াল করেছিস ওর বউ আর একটি ছেলে সন্তান আছে।
__কি বলিস সেটা তো দেখিনি। আছে দেখ তুই আমি অনেক কষ্টে ওর ঠিকানা এনেছি তুই ঐ ঠিকানায় গিয়ে পুরোটা তদন্ত করে আসবি।
__সে না হয় যাওয়া যাবে কিন্তু তোর প্লান কি কি করতে চাস? সেটা বিয়ের দিনই সবার সামনে দেখবি। তোর বোনের সাথে হওয়া অন্যায় আর আমাদের সাথে হওয়া অন্যায়ের দাঁত ভাঙ্গা জবাব পাবে।
__মোবাইলটা কোথায়?
__আজকে কুরিয়ার করে পাঠিয়ে দিয়েছি ওটার আমার কোনো কাজ নেই।
___ভাই তুই জিনিস একটা।
___ও একটু কনফিউজড থাকুক ভাবুক চুরি হয়ে যাওয়া মোবাইল আবার কুরিয়ারে লাল গোলাপের শুভেচ্ছায় ফিরে পাওয়া।
নয়না পিছন থেকে আনাম কে জিজ্ঞেস করে কি করছেন?
___এই তো তোমার বোনের বিয়ের গিফট রেডি করছি।
___আমার বোনের বিয়ে?
__হ্যাঁ ছাব্বিশ তারিখ।আচ্ছা নয়না তোমার মায়ের মৃত্যু কিভাবে হয়েছিল তুমি জানো?
__হুমম শুনেছিলাম আমার মায়ের প্রসবের পরে নাকি কিভাবে শরীরের মধ্যে বিষাক্ত কিছু ঠুকে গেছে। এর এফেক্ট সহ্য করতে না পেরে আমার মা মারা গেছে।
__কিন্তু সত্যি টা সেটা না। তাহলে সত্যি টা কি?
___সত্যি টা হলো তোমার মায়ের উপর বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল।
__কি বলছেন এসব আপনি কিভাবে জানেন?
___হ্যাঁ আমি গোপনে নাফিজাদের খোঁজ নিয়ে জানতে পারি। তোমার মায়ের ডেলিভারির সময় যিনি তোমার মায়ের কাছে ছিলেন ওনার মাধ্যমে । উনি তো তোমাদের আত্মীয় ও হয় রায়হান যখন নিখুঁত ভাবে ওদের সবটা নোট করছিল তখন তোমাদের এই ঘটনা ফাসঁ হয়।
___বাবা জানেন এটা?
___নাহ উনি জানেন না।ওনাকে ডাক্তার টাকা খেয়ে ভুল বুঝিয়েছেন আগের দিনের মানুষ এতোটা বুঝতে পারননি।
নয়না কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে কে করছে এমনটা আমার মাকে মেরে কি লাভ ছিল তার?
__তোমার সৎ মা এইটা করেছে উনি চেয়েছিলো তোমাদের দু’জন কে মারতে কিন্তু ধরা পড়ে যাবে এর জন্য রিক্স নেয়নি।
নয়না অঝোরে কাঁদতে থাকে আর বলতে থাকে এতোদিন আমি আমার মায়ের খুনির সাথে একই সাথে থেকেছি মা বলে ডেকেছি। ভাবতাম মা মারা গেলে উনি আমাকে একটু হলেও তো আদর করেন।এটাও বা কয়জনে করে অনেকে তো সৎ মেয়েকে মারে ধরে কিন্তু আমাকে কখনো মারেনি।

আনাম নয়নাকে বুকের সাথে জড়িয়ে বলে কান্না করো না সময় এসেছে সব কিছুর হিসেব করার। তোমার সৎ মা তোমাকে ভালোবাসত?
___ভালোবাসত কি না জানি না তবে উনি আমাকে নিয়ে ভালো মন্দ কিছুই ভাবত না ওনার সন্তাদের জন্য ভালো ভালো খাবার লুকিয়ে রাখত গোপনে খাওয়াত প্রায় আমি দেখেছি আমাকে না দিয়ে তারা রুমে বসে খাচ্ছে আবার রুমে গেলে আমাকে একটু দিত।
__তোমার বাবা কিছু বলত না?
__বাবার তো কাজ ছিল সব সময় তো বাড়ি থাকতেন না৷ যখন বাড়ি থাকতেন তখন আমাকে ওনার কাছে বসিয়ে সবাইকে নিয়ে খেতেন। আমি এখন বুঝি বাবার ভয়ে উনি আমার গায়ে হাত তোলার সাহস করেননি।
আমি এখনি বাড়ি যাব আমার মায়ের খুনিকে আমি নিজের হাতে শেষ করব।
___আহারে এত পাগল হলে হয়না।বলছি তো সব হবে সময়ের অপেক্ষা দেখতে থাকো। ওদের সবার শাস্তি হবে তুমি চিন্তা করো না। আনাম নয়নাকে স্বান্তনা দিতে থাকে।

১৬,
নিহানের মোবাইল চুরি হওয়ার কারনে নিহান কারো সাথেই যোগাযোগ করতে পারছিল না৷ নিহান মনে মনে অনেক ভয়ে থাকে যদি মোবাইলের ভিতরে কি আছে বা না আছে কেউ দেখে ফেলে। আবার এটাও ভাবে শুধু শুধু ভাবছি মোবাইলের লক খুলবে কিভাবে এমনিতেও তো ফ্লাস ছাড়া ফোন খুলতে পারবে না।
এসব ভাবতে ভাবতে নিহানের মায়ের নম্বরে ফোন আসে।
___হ্যালো কে বলছেন?
___আন্টি নিহান নামে কেউ কি আপনার কাছে আছে? ওনার নামে একটি পার্সেল আমাদের অফিসে আসছে এখন এটা কোথায় পাঠাবো?
___নিহান তো আমার ছেলে হয়ত ও দিয়েছে। তুমি বাবা বাসায় দিয়ে যাও।
__আচ্ছা আন্টি ঠিকানা বলেন আমি নিয়ে আসছি।
নিহানের মা ঠিকানা দিলে ঘন্টাখানিক পরে পার্সেল চলে আসে। নিহান তখন নতুন ফোন কিনার জন্য বের হবে তখনই গেটের সামনে ডেলিভারিম্যান দাড়ায়।
___এইটা কি নিহানদের বাসা?
___কেনো?
___ওনার একটা পার্সেল ছিল।
___কিন্তু আমি তো কোনো অর্ডার দেয়নি। কি আছে এতে?
___সম্ভাবত মোবাইল ফোন।
নিহান অবাক হয়ে পার্সেল রিসিভ করে। সাথে আবার লাল গোলাপ নিশ্চয়ই নাফিজা দিয়েছে।

নিহান ডেলিভারি ম্যানকে বিদায় দিয়ে পার্সেল নিয়ে উপরে আসে। মুচকি মুচকি হাসি আর লজ্জা মাখা মুখ নিয়ে পরিবারের সামনে বসে নিহান পার্সেলটি খোলে নিহান অবাক হয়ে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকে এটাতো আমার পুরোনো মোবাইল।
কিন্তু এইভাবে কে পাঠিয়েছে?

নিহান অনেক ভাবার পর মনে করে আমাকে নিয়ে কেউ কি ষড়যন্ত্র করতেছে?
নিহান মোবাইলের ভিতরে গিয়ে দেখে ফিঙ্গারে একজনের ফিঙ্গার আছে। নিহান মনে মনে নাফিজাকে সন্দেহ করে। কিন্তু নাফিজা যদি ফোন চুরি করাত তাহলে আবার ফেরত দিবে কেনো ডকুমেন্টস বা কিছু হাতে পেলেও তো ও আমাকে কিছু হলেও জানাত।
নিহান অনেক ভাবনা চিন্তা করে বের করে হয়ত আনাম এসব চালাকি করেছে আর ওর কাছে যদি কোনো ডকুমেন্টস চলে যায় তাহলে তো আমি শেষ।

নিহান দ্রুত নাফিজাকে ফোন দিয়ে বলে আচ্ছা আমার পঞ্চাশ হাজার টাকার প্রয়োজন দ্রুত পাঠাও।
___এতো টাকা হটাৎ কোথায় পাবো?
___জানি না কালকে সকালের মধ্যে আমি টাকা হাতে চাই না হলে বিয়ে ক্যান্সেল। বলেই নাফিজার মুখের উপর ফোন কেটে দেয়। নাফিজা কাঁদতে কাঁদতে আয়েশা বেগমের কাছে গিয়ে বলে মা নিহান পঞ্চাশ হাজার টাকা চাচ্ছে কি করব? কালকে সকালের মধ্যে দিতে হবে। নাহলে বিয়ে ক্যান্সেল করে দিবে।
___ কি ঝামেলা তুই আমার তৈরি করলি এখনো তো জামি বিক্রির টাকা হাতে পায়নি কিভাবে দিব।
___মা দেখো না কোনো ম্যানেজ হয় কিনা। নাহলে ও কি করবে জানিনা।
নাফিজার কান্না দেখে আয়েশা বেগম কান্না করে ফেলেন বলেন কান্দিস না। ভাগ্য নিজের হাতে লিখতে চাইছো এখন তো শাস্তি পাইতেই হবে। তোরা দুই ভাই বোন আমার সংসারের সকল শান্তি নষ্ট করে দিলি।
আয়েশা বেগম কয়েক জায়গা থেকে নিজের জমানো টাকা বের করে হিসাব শুরু করে। হিসবে করে পয়ত্রিশ হাজার টাকা যোগাড় করতে পারেন৷

নাফিজা সাকলে নিহানকে ফোন দিয়ে বলে পয়ত্রিশ হাজার টাকা অনেক কষ্ট যোগাড় করেছি।
__আর পনেরো?
___এখন আর পারবো না। পারবোনা বললে হবে?
আমার টাকাটা জরুরি প্রয়োজন।
__প্লিজ দয়া করো এমন ভাবে আর প্রেশার দিও না। আমার আম্মু চিন্তায় একদম ভেংগে পড়েছেন। তুমি এমন কইরো না আমরা পারলে পঞ্চাশ হাজারি দিতাম।
___শোন এতো কথা শোনার আমার সময় নেই। পয়ঁত্রিশ হাজার টাকা এখনি বিকাশ কর। আর বাকিটা যতদ্রুত পারো বিকালের মধ্যে যোগাড় করে দে না হলে খারাপ হয়ে যাবে।

নাফিজা নিজের রুমে মাটিতে গড়াগড়ি করে কাঁদতে থাকে নিজের কপালে নিজে আঘাত করতে থাকে। আয়েশা বেগম মেয়ের কান্না শুনে দৌড়ে আসেন মেয়ের কাছে বলেন কি হয়েছে এমন করছিস কেনো মা?
___ওমা ও একটা পাশান ওর কোনো মায়া দয়া কিছু নেই। এতো করে বুঝিয়ে বললাম আমি আর পারছি না শুনলোই না বিকালের মধ্যে বাকি পনেরো হাজারো যোগাড় করতে বলেছে।
আয়েশা বেগম মনে মনে বলে আমার পুরানো পাপ আজ আমার সন্তানদের শেষ করে দিচ্ছে।
___তুই এমন করিস না। বাইরে মানুষ জানাজানি হবে। তুই চিন্তা করিস না৷ আমি দেখি তোর মামাদের সাথে কথা বলে যোগাড় করতে পারি কিনা।

আয়েশা বেগম রেডি হয়ে টাকার খোঁজে বাবার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন।

নিহান ওর লোকদের আনামের উপর নজর রাখার নির্দেশ দেয়। আনাম রাতে অফিস থেকে আসার সময় একটা বাইক এসে আনাম কে ধাক্কা দিয়ে টানতে টানতে নিয়ে যায়। আশে পাশে লোকজন চলে আসলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। আসে পাশের লোকজন এসে আনামকে হসপিটালে নিয়ে যায়। এদিকে রায়হান হসপিটালে দ্রুত পৌঁছে গিয়ে আনামের ট্রিটমেন্ট শুরু করে বাড়িতে খবর দেয়।
নয়না আনামের এই অবস্থা শুনে সাথে সাথে সেন্সলেস হয়ে যায়৷

আনামের মা নয়নাকে সেন্সলেস অবস্থায় গাড়িতে তুলে নয়নার গাড়িতে বসে হুস আসলে নয়না আবার কান্না শুরু করে। রফিক তালুকদার বলে মা তোমরা এভাবে ভেংগে পড়ো না কিছু হবে না। তোমার শাশুড়ী তুমি দুজন যদি এমনে ভেংগে পড়ো আমি কিভাবে তোমাদের সামলাবো?

হসপিটালে গিয়ে রফিক তালুকদার ডাক্তারের সাথে কথা বলে। ডাক্তার সাহেব আমি আনাম তালুকদারের বাবা ওর কন্ডিশন কেমন?
___ অবস্থা অনেক ক্রিটিকাল আপনারা অনুমতি দিলে আমরা আইসিওতে দিব। আর রেগুলার খরচা বাবদ ষাট হাজার টাকা বিল আসবে।
__ ডাক্তার সাহেব যা লাগে আপনারা করুন আমার ছেলে কে বাঁচান।
তিন দিন পার হয়ে যায় আনামের জ্ঞান এখনো আসেনি। এদিকে রফিক তালুকদারের জমানো টাকা প্রায় শেষ। মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন।
এদিকে গ্রাম থেকে আনামের ফুফুরা এসেছে আনাম কে দেখতে সাথে নিহানো ছিলো।

রফিক তালুকদার তাদের দেখেই রাগান্বিত কন্ঠে বলেন তোমরা এখানে কেনো?
আনামের বড় ফুফু বলে কি বলেন ভাইসাব আনামের এত বড় একটা খবর শুনে দেখতে না এসে পারি। নিহান তখন বলে মামা এমনে বলবেন না আগে যাই হয়েছে এখন আনাম মৃত্যুশ্যায়া প্লিজ রাগারাগি বাদ দিন।

নয়না নিহানের কথা শুনে বলে এতোবড় সাহস কার? আমার স্বামীর মৃত্যু কামনা করে? এই মুহুর্তে আপনারা সবাই এখান থেকে বেড়িয়ে যান। আপনাদের যেনো আনামের চারোপাশেও না দেখি।

এর মধ্যে ডাক্তার এসে জানায় আনামের জ্ঞান এসেছে। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে অপারেশন লাগবে দুইলাখ টাকা জমা দিতে হবে বাকি এক লাখ অপারেশন শেষে হলে।রফিক তালুকদার দাঁড়ানো থেকে বসে পড়েন এতো টাকা এই মুহুর্তে কিভাবে যোগাড় করবেন?
আনামের ছোট ফুফু বলে ভাইসাব আপনি জিবনে আমাকে অনেক উপকার করেছেন যতযাই হোক আমার পড়ান আনামের জন্য পোড়ে আমার কাছে এত টাকা নাই কিন্তু আমি পঞ্চাশ হাজার টাকার ব্যবস্থা করতে পারি।

নয়না চিৎকার দিয়ে বলে আপনাদের আমাদের কোনো উপকারের প্রয়োজন নেই। আমার স্বামীর জন্য যত টাকার প্রয়োজন হয় আমি ব্যবস্থা করব। নিহান ভ্রু কুঁচকে চেয়ে মনে মনে বলে এ কি পাগল এরে এক কাপড়ে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে এ নাকি টাকা যোগাড় করবে।

রেহানা বেগম বলে পাগলামি করিস না মা তুই কই পাবি এতো টাকা?
__আমার কাছে দশলাখ টাকা আছে আজ আমার এই টাকা যদি আমি কাজে না লাগাই তাহলে এই টাকার কোনো মুল্য আমার কাছে নেই।

নিহান মনে মনে বলে ওর কাছে দশলাখ টাকা কিভাবে? বিষয়টা তো আমার খতিয়ে দেখতে হচ্ছে_________

চলব______