#কাঠগোলাপের মোহে🌼
#মোনামী শেখ
#part:2
— তোকে কি ছাদে ছেলেদের উঁকিঝুঁকি দিয়ে দেখার জন্য এ বাড়িতে রাখা হয়েছে??পকেটে দুইহাত গুজে রেগে চোয়াল শক্ত করে কথাটা বললো প্রণয় ভাইয়া!!!
বিকেল ৫ টা…
ছাদের কর্ণিশ ঘেষে দাড়িয়ে পাশের বিল্ডিংএ আমার ২ নম্বর ক্রাশ কে একটা নজর দেখার চেষ্টা করছিলাম।
কিন্তু তখনই পিছনে কারো অস্তিত্ব টের পাই।তখন আর আমার বুঝতে বাকি রইলো না যে কে আমার পিছনে দাড়িয়ে আছে।
পিছনে আমার জম প্রণয় ভাইয়া দাড়িয়ে আছে। আমি আস্তে আস্তে প্রণয় ভাইয়ার দিকে ঘুরলাম। তখনি এই কথাটা বললো আমায় প্রণয় ভাইয়া।
আমার কলিজাটা মোচর দিয়ে উঠলো।হৃৎস্পন্দন থেমে থেমে কাজ করছিলো।প্রণয় ভাইয়ার এহেন রুপ দেখে।এখন শান্তদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আমার উপরের অপেক্ষা করছেন তিনি!!!বুঝতে পারছি ঝড় আসার পূবাভাস দিচ্ছেন তিনি।
এসব মনে মনে ভাবতে না ভাবতেই আবার প্রণয় ভাইয়া বলে উঠলেন–কিরে ওই রকম করে কি দেখছিস আমায়??তোর নাগরের সাথে আমায় মেলানোর চেষ্টা করছিস নাকি???
আমি এবার কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলাম– ভা ভা ভাইয়া আসলে তুতু তুমি যা ভাবছো ঠিক তাতা তা নয়।
আমি তো ঐ খানে একটা আজব এলিয়েন কে দেখছিলাম।
আমার কথা মাথামুন্ডু না বুঝতে পেরে প্রণয় ভাইয়া আমাকে জোরে একটা ধমক দিয়ে বললো–ফাজলামো করিস আমার সাথে??
আমি উত্তেজনায় কি বলেছি তা বুঝতে পারার সাথ সাথ জ্বিভের আগালে দিলাম এক কামড়। ব্যাস ব্যাথায় আবার চিল্লিয়ে উঠলাম।
আমার চিল্লানো দেখে প্রণয় ভাইয়া কিছুনা বলেই হনহন করে ছাদ থেকে নেমে গেলেন।
ভাইয়ার এহেন কান্ড চরম অবাক হলাম আমি!!!
কি হলো এই এলিয়েনটার আবার ?!কিছুনা বলেই চলে গেলো?? এতক্ষণে হয়তো আমার পিন্ডচটকানো শেষ করতো।কিন্তু তা না করে চলে গেল কেনো??? নিশ্চিত মনে মনে কোনো ফন্দি এঁটেছে। নয়তো আমার পিছনে লাগার সুযোগটা তিনি এভাবে ছেড়ে দিতেন না।
আবার এটাও হতে পারে তিনি কালকের ব্যাবহারের জন্য অনুতপ্ত তাই আজ আর কিছু বললো না।
মাথা চুলকাতে চুলকাতে কথাগুলো ভাবছিলাম তখনি পাশের বিল্ডিং থেকে অরিন এর ডাক পড়লো।
অরিনঃএই অয়ত্রি কি খবর একাভাবে পিলারের মতো দাড়িয়ে আছিস কেন???
আরেহ না কিছুনা।তা তোর কি খবর রে অরিনোকো??
–এই অয়ত্রি এই!! তোর এসব আজব নামে আমাকে আর ডাকবিনা বলে দিলাম। আমার এত সুন্দর নামটা তুই ঘুরিয়ে পেচিয়ে চুইম গামের আটার মতো করে দিয়েছিস।কোমরে হাত গুজে বললো অরিন।
আমি অরিন এর কথা দাত কেলিয়ে হাসতে লাগলাম।
কারণ অরিন রেগে গেছে।আর কোনো রাগান্বিত মানুষের সামনে দাতঁ কেলিয়ে হাসতে আমার খুব ভালোলাগে।একথায় কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দেয়া যাকে বলে।
এই অয়ত্রি তোর সাথে কিন্তু আড়ি দিবো বলে দিলাম।দাঁত কিড়মিড়িয়ে বললো অরিন।
— এবার হাসি থামিয়ে নিজেকে শান্ত করে বললাম–আচ্ছা বাবা সরি। তো মাই ডিয়ার ফ্রেন্ড তোর পড়ালেখার কি খবর??
অরিনঃবেশ ভালোই।তোর??
—হুম আমারো আল্লাহর মতে কোনোরকম ভালোই চলছে।
অনির এবার নিজের ভাবভঙ্গি পাল্টে লজ্জা মিশ্রিত হাসি দিয়ে বললো–
অরিনঃ এই অয়ত্রি জানুওওও
অরিনের এমন মুধুময় ডাক শুনে আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না অরিন এবার কি বলবে..প্রণয় ভাইয়ার গুণগানের রেকর্ড বাজানো শুরু করবে।আর আমার কানটা ঝালাফালা করে ছাড়বে।
__অরিনোকো বাইইইইইইইইইই বলেই দৌড়ে ছাদ থেকে নেমে গেলাম।
আর কিছুক্ষণ ছাদে থাকলে আমার মাথাটা ঘোলা ডিমের ন্যায় করে ছাড়তো অরিন।
অনির ডায়লগ—
এই অয়ত্রি প্রণয় ভাইয়া কই রে??প্রণয় ভাইয়ার সাথে কি তোর আজ দেখা হয়েছিলো??প্রণয় ভাইয়ার শরীর ঠিক আছে তো??আজ তিনি কি পোশাক পড়েছেন??কি খেয়েছেন??হসপিটালে গিয়েছিলেন কি?? প্রণয় ভাইয়ার কোনো গার্লফ্রেন্ড আছে কি?? আমাকে একটু চান্স পাওয়াই দিবি দোস্ত??আমি তোর ভাবি হতে চাই রে অয়ত্রি!!!! দীর্ঘ ২ মাস ধরেই এসব শুনতে হচ্ছে আমায়।এখন আবার এসব বলেই আমার মাথার মগজ ধোলাই দিতো তাই এভাবে ছাদ থেকে নেমে গেলাম।
অরিন প্রণয় ভাইয়ার পেছনে পড়েই আছে।আর অরিন এর লক্ষ প্রণয় ভাইয়াকে পটানো। জানিনা ওই উল্লুখটার মাঝে কি পেয়েছে অরিন!!!
২ মাস হতে প্রণয় ভাইয়াকে চেনে সে।
শুধু অরিন নয় আমাদের পুরো পাড়া এই শহরের প্রায় সব মেয়েরাই ডক্টর প্রণয় প্রহসন কে চেনে।এবং তার উপর চরম লেভেলের ক্রাশিত। যার জন্য প্রতিনিয়ত বিরক্ত আর হ্যারেস আমি। যেখানে যাই সেখানেই শুনতে হয়— এই অয়ত্রি তোর প্রণয় ভাইয়া সেই লেভেলের হ্যান্ডসাম,স্টাইলিস সুদর্শন ও গুড পারসোনালিটির মানুষ।প্লিজ তোর প্রণয় ভাইয়ার নাম্বার টা দিবি??ব্লা ব্লা ব্লা ব্লা আরো কত কি যে আমাকে শুনতে হয় তার কোনো ইয়ত্তা নেই।
বাড়িতে এই এলিয়েনের জ্বালাতন বাহিরে এই এলিয়েনের জন্য আরেক পাগল এলিয়েনরা জ্বালাতন করে!!
না এসব আর ভাববোনা। এসব ভাবলেই মাথাটা কেমন চক্কর দিয়ে উঠে ডান হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে মনে মনে বললাম।
ছাদ থেকে নেমে সোজা নিজের রুমে চলে গেলাম। গিয়েই সটান দিয়ে শুয়ে পড়লাম বিছানায়। বালিশের নিচ থেকে ফোনটা বের করে ফেসবুকে লগইন করলাম।
ফেসবুকে লগইন করতে না করতেই আমার ২ নম্বর ক্রাশ আহানের একটা পিক দেখতে পেলাম। পিকটা দেখতে মনটা শান্ত ও ক্লান্ত ভাবটা কমে গেলো।
আহানের আইডিটে ক্লিক করলাম।প্রায় দুইদিন ধরে ফেসবুকে ঢুকিনা।কারণ এই দুইদিন ওয়াইফাই কানেকশনের একটু প্রব্লেম ছিলো।
আহানের আইডিতে গিয়ে দেখলাম নতুন পাঁচটা পিক আপলোড করেছে।পিক গুলা যাস্ট ওয়াও।আর লাইক কমেন্টও পড়েছে হাজার হাজার।
আহানের একটা পিকে কমেন্ট করতে যাবো তখনি খালামনির ডাক কানে পড়লো।তাই ফোনটা বন্ধ করে বালিশের নিচে রেখে খালামনির কাছে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম।
নিচে গিয়ে দেখলাম খালামনি সোফায় বসে আছেন।
আমিও গিয়ে খালা মনির পাশে গিয়ে বসে পড়লাম।
খালামনি বললো— কিরো অয়ত্রি আজ চা খেতে নিচে আসিস নি যে?? তোর তো এই সময়টা চা খাওয়া মিস হয়না??? তাই তোকে ডাকলাম।
আমি— আসলে খালামনি মনে ছিলোনা গো একদমই।ছাদে অরিনের সাথে কথা বলছিলাম তো তাই।
তখনি চা নিয়ে আসলো শাপলা।
––এইযে অয়ত্রি আফা আর খালাআম্মা তোমাদের চা বলেই চায়ের কাপ আমার আর খালামনির হাতে ধরিয়ে দিলো শাপলা।
আমি আর দেরি না করে চায়ে চুমুক দিলাম।একচুমুক মুখে শুষে নিতেই চোখ বুঝে ফেললাম।চা টা অসাধারণ বানিয়েছে শাপলা। ইভেন চা টা খুব ভালো বানায় শাপলা।
—কিরে শাপলা তুই আজ চা খাবি না? বললো খালামনি।
না আজই চা খামুনা খালা।ভাল লাগতেছে না।সোফায় বসতে বসতে বললো শাপলা।
— শাপলা তোর বাড়ির সবাই ভালো আছে তো?? খালা কেমন আছে??শাপলাকে উদ্দেশ্য করে বললাম আমি।
— হ আফা আম্মা ভালোই আছে।বাড়ির সবাই ও ভালো আছে।তয় এখখান খবর আছে তোমাদের দেওয়ার..
লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে বললো শাপলা।
—কি খবর রে শাপলা???ভ্রু কুঁচকে বললো খালামনি।
— খালা আমারে না কাল দেখতে আইছিলো।মাথা নিচু করে বললো শাপলা।
___সেটা তো ভালো খবর রে শাপলা।তা পাএ পক্ষ কি তোকে পছন্দ করেছে???খালামনি কিছুটা হাসিমুখ করে বললো।
আমি ওদের কথা চুপচাপ শুনে যাচ্ছি চায়ে চুমুক দিতে দিতে। কারণ চা খাবার সময় আমি কোনো কথা বলিনা প্রয়োজন ছাড়া।
_______________________________________________
রাত ১০ টা
খাবার টেবিলে বসে আছি। আমার পাশে বসেছে প্রণয় ভাইয়া। প্রতিদিনের মতো আজও তার মুখটা কালুপেচাঁর মতো করে রেখেছে।তবে আজ তাকে একটু বেশিই গম্ভীর দেখাচ্ছে।
খাওয়া দাওয়া শেষ হতেই নিজের রুমে চলে গেলেন প্রণয় ভাইয়া।
আমি খাওয়াদাওয়া সেরে কিছুক্ষণ খালামনি ও ছোট আব্বুর সাথে গল্প করে রুমে গেলাম।
রুমে গিয়ে কিছুক্ষন রেস্ট নিয়ে পড়তে বসলাম।
টানা ৩ ঘন্টা পড়ে হাই তুলতে তুলতে পড়ার টেবিল থেকে উঠলাম। খুব পিপাসা পেয়েছে তাই পানির জগটা হাতে নিলাম পানি খাওয়ার জন্য কিন্তু ভাগ্য খারাপ জগে এক ফোটাও পানি নেই। তাই নিচে গেলাম পানি আনার জন্য।
রান্না ঘরে অনেক অন্ধকার। তাই লাইট জ্বালানোর জন্য পা বাড়ালেই হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়ে গেলাম।
এইরে আমার কোমরটা বুঝি গেলো।আর কখনো হয়তো উঠে দাড়াতে পারবোনা।না পারবো নাচতে চোখ বুঝে মনে মনে ভাবছিলাম। হঠাৎ মনে হলো কোমরে একটুও ব্যাথা অনুভব হচ্ছেনা আমার। তাই চোখ খুলে যা দেখলাম তাতে আমি কয়েক সেকেন্ডের জন্য থমকে গিয়েছিলাম। কারণ আমি প্রণয় ভাইয়ার বুকের উপর শুয়ে আছি। আর প্রণয় ভাইয়া আমার দিকে কেমন যেন দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন। ডয়িংরুমের কিছুটা আলো এসে প্রণয় ভাইয়ার মুখে পড়েছে।যার জন্য তার মুখটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
প্রণয় ভাইয়া আমার কোমর জরিয়ে আছে এটা বুঝতে পেরে আমি উঠতে নিলেই প্রণয় ভাইয়া আমার মাথা টেনে তার বুকের সাথে জড়িয়ে নিলো। আমার এবার হার্ডএ্যাটাক হওয়ার মতো অবস্থা হলো। সাথে প্রণয় ভাইয়া হার্ডবিড শুনতে পাচ্ছি।যা আমার হার্ডবিডকে আরো দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে!!! কান দিয়ে অদৃশ্য গরম ধোঁয়া বেড়োচ্ছে। শরীর টা অবশ হতে চাচ্ছে!!!
👉continue 👈