কাননে ফুটিল ফুল পর্ব-০৩

0
327

কাননে ফুটিল ফুল — ৩ (১৭৩০+ শব্দ)

আরেকবার নৈশীর কাছে ক্লিন বোল্ড হয়ে আন্দালিব ঝিম মেরে গেল। ও সকাল থেকেই আজ সারজিমদের বাড়ির আশেপাশে ছিল। শুধু আজ না, গত দুইদিন ধরে সময়ে পেলেই ও সারজিমদের বাড়ির আশেপাশে ঘুরঘুর করেছে, নৈশী বের হবে বাসা থেকে এই আশায়।

নৈশী যখন সাব্বিরের সাথে বের হলো আন্দালিবও তখন পিছু নিল ওদের। নৈশীর সাথে হুট করে দেখা হয়ে যাওয়ার ভান করা, তুমি বলে সম্মোধন করে আরেকটু ফ্রী হওয়ার চেষ্টা করা, ওকে লাঞ্চ অফার করা, এমনকি নির্দিষ্ট এই রেস্টুরেন্টটাতে এসে খাবার অর্ডার করা সবটাই খুব সুন্দর করে গুছিয়ে করার জন্য আন্দালিব প্লান করেছে আরও দুই দিন আগে।

ভেবেছিল এত নিঁখুত অভিনয় দেখে নৈশী বুঝতেই পারবে না যে সবটা পূর্বপরিকল্পিত ছিল। অথচ মেয়েটা ঠিক বুঝে ফেলল যে আন্দালিব পুরো ব্যাপারটা প্লান করে ঘটিয়েছে, এবং কথায় কথায় সেটা বুঝিয়েও দিল আন্দালিবকে। নাহ, এই মেয়ের সাথে অভিনয়ে যাওয়া আর ঠিক হবে না। মনের কথাগুলো সরাসরিই বলতে হবে এবার থেকে।

যেহেতু ধরা পড়েই গেছে আন্দালিব তাই আর ভণিতায় গেল না। সরাসরি বলল,
“স্যরি, তোমার সাথে কিছুক্ষন টাইম স্পেন্ড করার লোভে এত প্লান করলাম, তবুও শেষরক্ষা হলো না দেখো, ঠিক ধরা পড়ে গেলাম।”

“অথচ এত ড্রামা করার কোনো প্রয়োজন ছিল না। আপনি একবার আমাকে ফোন করে যদি দেখা করতে চাইতেন, আমি রাজি হয়ে যেতাম।”

“সেটাই ভুল হয়ে গেল। আরও একটা ভুল আমি করেছি। পারমিশন ছাড়াই তোমাকে তুমি করে বলা শুরু করে দিয়েছি। অবশ্য তোমার আপত্তি থাকলে আবার আপনিতে ফিরে যাব।”

“না, থাক। সময়ের সাথে সাথে সম্মোধন বদলাবে, এটাই তো স্বাভাবিক। তাছাড়া এমনিতেও আমি আপনার থেকে বয়সে অনেকটা ছোট। তাই তুমি করেই বলুন।”

আন্দালিব সম্ভবত এই টপিকটা থেকে বের হতে চাইছিল, ও বলল,
“এই যে, এসে গেছে তোমার ব্রুশেটা। তুমি এক কাজ করতে পারো নৈশী, তোমার প্রিয় সবকিছুর লিস্ট আমাকে দিতে পারো। যেমন ধরো, তোমার প্রিয় ফুল, প্রিয় বই, শখ।”
“আচ্ছা, এসব জেনে আপনি কী করবেন?”
“মাঝে মাঝে তোমাকে সারপ্রাইজ দেব। সারপ্রাইজ দিতে আমার খুব ভালো লাগে।”

“কিন্তু আমার সারপ্রাইজ পেতে ভালো লাগে না।”
“ও মাই গড! এই প্রথম কোনো মেয়ে দেখলাম যার সারপ্রাইজ পেতে ভালো লাগে না।”
“হয়তো আমি এক্সেপশনাল।”
“সেরকমই মনে হচ্ছে, আচ্ছা তোমার বয়ফ্রেন্ড কখনও তোমাকে সারপ্রাইজ দেয়নি?”

আন্দালিবের প্রশ্ন শুনে নৈশী মিটিমিটি হেসে বলল, “আবারও ভণিতা, আপনি এমনি সরাসরি আমাকে প্রশ্ন করতে পারেন যে আমার বয়ফ্রেন্ড আছে কিনা।”

আন্দালিব বিরক্তিতে মনে মনে নিজেই নিজেকে খুব কুৎসিত একটা গালি দিল। কিন্তু মুখে স্মিত হাসি টেনে বলল, “অ্যাগেইন স্যরি।”

নৈশী খাবারের প্লেটটা নিজের একটু কাছে টেনে নিয়ে বলল, “ইটস ওকে। বাট এত বেশি স্যরি যাতে না বলতে হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। নইলে স্যরিটা একসময় একেবারে সস্তা হয়ে যাবে। এনিওয়ে, একটা প্রশ্ন করি আপনাকে?”

“প্লিজ, গো অন।”

“এইযে কয়েকদিনের পরিচয়েই আপনি আমাকে সারপ্রাইজ দিতে ব্যাকুল হয়ে উঠছেন, এরকমটা কি শুধু আমার ক্ষেত্রেই নাকি সব মেয়েদের সাথেই পরিচয়ের পর আপনি সারপ্রাইজ দিতে থাকেন?”

“শুধু তোমার ক্ষেত্রে বললে ভুল হবে, আবার সব মেয়েদের বলাটাও ঠিক হবে না। আমি প্রথম রিলেশন করেছিলাম ক্লাস নাইনে পড়াকালীন। সেই মেয়েটাকেই আমি জীবনে প্রথম সারপ্রাইজ গিফট দিয়েছিলাম, আর সেদিনই আমার ব্রেকাপ হয়ে গিয়েছিল।”

নৈশীকে খুব আগ্রহী মনে হলো এবার, “কী গিফট দিয়েছিলেন সেদিন?”

“পেট্রোলিয়াম জেলি আর বডি লোশন। আসলে তখন শীতকাল চলছিল। বেশিরভাগ সময় ওর ত্বক থাকত প্রচন্ড রুক্ষ, আমার দেখতে ভালো লাগত না। তাই ভাবলাম দরকারি কিছু গিফট করি। কিন্তু সেই গিফটই আমার কাল হলো৷ সুন্দর লাভ শেপের রেড র‍্যাপিং পেপারে মোড়ানো বক্স খুলে ওসব দেখে আমাকে আনরোমান্টিক বলে দুই মাসের রিলেশন ব্রেকাপ করে ফেলল সে।”

নৈশী শব্দ করে হেসে ফেলল। বলল, “আপনি এত ফানি।”

“সেটাই তো সমস্যা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমি চাইলেও সিরিয়াস হতে পারি না।”

“এতে খুব একটা প্রব্লেম দেখছি না। সবার যে সিরিয়াস পার্সন হতে হবে এমন তো কোনো কথা নেই। আপনাকে বরং এটাই বেশি স্যুট করছে। তাছাড়া যেসব ছেলেদের সেন্স অব হিউমার ভালো, আজকালকার মেয়েরা তাদের প্রতি বেশি ইম্প্রেসড হয়, লাইক করে।”

“মেয়েরা ফানি ছেলেদের লাইক করে তবে সেটা শুধুই ফ্রেন্ড কিংবা বয়ফ্রেন্ড হিসেবে। হাজবেন্ড হিসেবে তারা সবসময় সিরিয়াস টাইপ ছেলে চায়। নিজের হাজবেন্ড বাইরের মেয়েদের হাসাচ্ছে সেটা বেশিরভাগ ওয়াইফরা ঠিক মেনে নিতে পারে না। শেষে সন্দেহ করে বসে অকারণে।”

“আপনি কথাটা খুব একটা ভুল বলেননি। তবে এক্সেপশনালও আছে কিন্তু। কিছু মেয়েরা আছে যারা তার হাজবেন্ডকে খুব বেশিই বিশ্বাস করে।”

“বুঝলাম। আচ্ছা, যদি প্রশ্ন করি তুমি এই দুই ধরনের মেয়েদের মধ্যে কোন দলের অন্তর্ভুক্ত?”

“মাঝামাঝি। আমি কাউকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করি না আবার অল্পতে সন্দেহ করাও শুরু করি না। কোনো ইস্যু তৈরি হলে আমি চোখ কান খোলা রেখে পুরো ঘটনা পর্যবেক্ষন করি, তারপরে সিদ্ধান্ত নেই। এনিওয়ে, আপনার সাথে আজ সময় কাটিয়ে ভালো লাগল। অনেকটা সময় চলে গেছে। এখন বোধহয় আমাদের ওঠা উচিৎ।”

“শিওর।”

আন্দালিব নৈশীকে বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে গেল। প্রথম দিকের পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গেলেও, আজকের প্লানটা একেবারে বৃথা যায়নি বলে মনে হলো ওর। অন্তত আপনি থেকে তুমিতে তো আসা গেল। মুখে হুইসেল বাজিয়ে আপন গন্তব্যে রওয়ানা হলো আন্দালিব।

৪.
“তারা একটি দু’টি তিনটি করে এলো
তখন বৃষ্টি-ভেজা শীতের হাওয়া
বইছে এলোমেলো…।”

আফরোজা বেগমের বাসার ছাদে রাতের এই সময়টুকু খুব করে উপভোগ করে নৈশী। বাড়িটা মফস্বলের দিকে হওয়ায় তেমন হৈচৈ বা গাড়ি-ঘোড়ার আওয়াজ নেই। আশেপাশে বড় বড় গাছ আছে। সন্ধ্যার পর থেকে মৃদুমন্দ হাওয়া বইতে থাকে। রাতে খাওয়ার পর কিছুক্ষন হাঁটাহাঁটি করার অভ্যাস নৈশীর। এই সময়টাতে নৈশী তাই ছাদে চলে আসে। মাঝেমধ্যে আফরোজা বেগম এসে সঙ্গ দেন ওর সাথে। আজ ছাদে এসেই একটা ব্যাপার বেশ মুগ্ধ করল নৈশীকে। অন্ধকারে গাছের আনাচে কানাচে অনেকগুলো জোনাকিপোকা বিক্ষিপ্তভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত তাদের নিজস্ব সবুজাভ আলো জ্বলছে আর নিভছে ক্রমাগত৷ ও আপন মনেই আবৃতি করতে থাকল,

“…তখন থমকে দাঁড়ায় শীতের হাওয়া
চমকে গিয়ে বলে-
খুশি খুশি মুখটি নিয়ে
তোমরা এলে কারা?
তোমরা কি ভাই নীল আকাশের তারা?
আলোর পাখি নাম জোনাকি
জাগি রাতের বেলা..।”

নৈশী প্রথমবার যখন জোনাকি দেখেছিল তখন ওর বয়স ছয়। সেবার বাবা মায়ের সাথে আমেরিকায় গিয়েছিল ও। নৈশীর চাচার একটা বাগান বাড়ি ছিল। ঘন জঙ্গলের বুক চিড়ে এঁকেবেঁকে চলে যায় হাইওয়ে, সেই রোডের একপাশে বিশালাকৃতির বাগান বাড়ি৷ এরকমই শীতল হাওয়া বইছিল সেদিন। রাতে আড্ডা দিতে সবাই ছাদে উঠল। বাড়ির তিনপাশই ঘেরা ঘন জঙ্গলে। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। হঠাৎ সেই অন্ধকার ফুঁড়ে ছোট ছোট আলোকবিন্দু জ্বলে নিভে যাওয়া দেখে ঘাবড়ে গেল ও। অল্প দুরত্বে দাঁড়িয়ে থাকা মাকে টেনে এই এই আশ্চর্য দৃশ্য দেখাল ও। সেদিন জোনাকি পোকার দিকে তাকিয়ে এই কবিতাটাই আবৃত্তি করেছিল ওর মা আয়েশা।

নৈশী মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছিল কবিতাটা। সেদিন মায়ের থেকেই জোনাকি সম্পর্কে জেনেছিল নৈশী। কোমল শিশুমনের বোধহয় কিছুটা ইচ্ছেও হয়েছিল জোনাকি হওয়ার। সাধারনত এত ছোটবেলার স্মৃতি মানুষের মনে থাকে না, কিন্তু নৈশীর মনে সেদিন সেই মুহূর্তটুকু গেঁথে থাকবে আজন্মকাল। নৈশীর একা থাকার সময়টুকুতে ওর সবচেয়ে প্রিয় কাজ হলো মায়ের স্মৃতিচারণ করা।

নৈশীর মায়ের পুরো নাম আফিয়া আনজুম আয়েশা, জন্মস্থান বরিশাল। নৈশীর নানা আতিউর রহমান পেশায় ছিলেন একজন কলেজের অধ্যক্ষ। আতিউর রহমানের এক ছেলে এবং দুই মেয়ের মধ্যে আয়েশা ছিল সবচেয়ে ছোট। বড় দুই ভাইবোন বাবার ভয়ে সারাক্ষন তটস্থ হয়ে থাকলেও আয়েশা ছিল ব্যতিক্রম। ছোটবেলা থেকেই অদম্য এক জেদ ছিল ওর মধ্যে। নিজের জেদে সবসময় অটল সে৷ সবাই বলত স্বভাবের দিক থেকে একেবারে বাবার মতোই হয়েছে আয়েশা। বাড়ির সবচেয়ে ছোট সদস্য বিধায় কিছুটা ছাড়ও দেওয়া হতো অবশ্য।

আফরোজা বেগমের যখন বিয়ে হলো আয়েশা তখন এইটে পড়ে। বিয়ের মাস দুয়েক পর স্বামীর সঙ্গে আফরোজা বেগম পাড়ি জমালেন ইতালিতে। দুই বোনের মধ্যে বেশ ভালো একটা বয়সের পার্থক্য থাকলেও সখ্যতা ছিল চোখে পড়ার মতো। আফরোজা বেগম দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পরে আয়েশা একা হয়ে পড়ল একেবারে। বিয়ের দুই বছর পরে সারজিম হলো। তারও একবছর পরে আফরোজা বেগম বাবার কাছে অনুরোধ করলেন অন্তত কয়েকমাসের জন্য যেন আয়েশাকে তার কাছে ইতালিতে পাঠানো হয়। আতিউর রহমান রাজি হলেন। একা একা এতদূর যাওয়ার ভয়, আর এত বছর পর বোনের সাথে দেখা হওয়ার আনন্দের বিপ্রতীপ অনুভূতি মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছিল আয়েশার মধ্যে।

ওখানকার এয়ারপোর্টে পৌঁছে আয়েশার দিশেহারা চোখ যখন পরিচিত কাউকে খুঁজছিল তখন কয়েক মুহূর্তের জন্য ষোড়শী আয়েশার মনে হয়েছিল বোধহয় বিদেশ বিভূঁইয়ে হারিয়ে যাবে সে। তখনো আয়েশা জানত না অপরিচিত সেই দেশটাই একদিন তার খুব পরিচিত এবং একান্ত আপন হয়ে উঠবে।

নৈশীর বাবা জায়ানের সাথে আয়েশার প্রথম দেখা হলো ইতালি যাওয়ার দেড়মাস পরে। সেই দেখা হওয়াটাও ছিল অনেকটা নাটকীয়৷ সেদিন সারজিমকে নিয়ে আফরোজা বেগম আর আয়েশা বের হয়েছিল ঘুরতে। হঠাৎ আফরোজা বেগমের হাত ছাড়িয়ে দিয়ে সারজিম অন্যদিকে দৌড় দিল৷ আয়েশাকে ওখানে অপেক্ষা করতে বলে আফরোজাও ছুটলেন ছেলের পিছু পিছু৷ আয়েশার একা দাঁড়িয়ে থাকতে আনইজি লাগছিল বলে কিছুক্ষন পরে আফরোজা বেগম যেদিকে গিয়েছেন সেই পথ ধরে এগিয়ে গেল আয়েশাও। অনেকক্ষন যাবত খোঁজাখুজি করার পরেও যখন বোনকে খুঁজে পাওয়া গেল না, অতঃপর আয়েশা বুঝতে পারল সে হারিয়ে গেছে। পার্কের পাশে একটা বেঞ্চিতে বসে হাপুসনয়নে কাঁদতে শুরু করল সে।

অপরিচিত লোকজন হেঁটে যাচ্ছে পাশ থেকে। এদের মধ্যে অনেকে কান্নারত মেয়েটির দিকে একপলক তাকালেও সাহায্যের জন্য এগিয়ে এলো না কেউ।

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামল। আয়েশার এবার ভয় লাগতে শুরু করল। সন্ধ্যার সেই আলো আঁধারিতে সুদর্শন এক পুরুষ এসে দাঁড়াল ওর সামনে। হরবর করে ইংরেজি ভাষায় কতগুলো কথা বলল যা অধিকাংশই বুঝল না আয়েশা। শুধু এতটুকু বুঝল যে লোকটা ওর কান্নার কারণ জানতে চাইছে। আর লোকটার শেষের কথাটুকু বুঝল ও,
“ক্যান আই হেল্প ইয়্যু?”

আয়েশার মাথায় তখন দুশ্চিন্তার শুয়োপোকারা কিলবিল করছে। রাত হয়ে গেছে, এখন বাসায় কীভাবে যাবে? কখন পৌঁছাতে পারবে? আদৌ এই অপরিচিত লোকটাকে বিশ্বাস করা ঠিক হবে কিনা? বিশ্বাস করেও বা কী লাভ, ঠিকানা ছাড়া লোকটাকে কীভাবে হেল্প করতে বলবে? দুশ্চিন্তায় মাথার চুল খামচে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেলল আয়েশা। লোকটা উদ্বিগ্ন স্বরে বলল,
“প্লিজ, কুল ডাউন। ইয়্যু ক্যান ট্রাস্ট মি। প্লিজ, টেল মি, হোয়াট ইজ ইওর প্রব্লেম?”

আয়েশা একটা প্রশ্নেরও জবাব দিল না। ঝিম মেরে বসে থাকল শুধু। সুদর্শন সেই পুরুষটিও প্রশ্ন করতে করতে একসময় হাল ছেড়ে দিয়ে আয়েশার থেকে কিছুটা দুরত্ব বজায় রেখে বসল। অনেক চেষ্টার পরে অবশেষে আয়েশা নিজেকে একটু স্থির করতে পারল। অস্থিরতা কমার পরে হঠাৎ করেই স্মৃতি ফেরার মতো করে ওর মনে পড়ে গেল সব। এখানে আসার পরের দিনই আফরোজা বেগম ওর পার্সে বাড়ির ঠিকানা লেখা একটা কাগজ রেখে দিয়েছিল। আয়েশা আশার আলো দেখতে পেল। ওর মনে তখনও সংশয়, লোকটাকে বিশ্বাস করা ঠিক হবে তো? অনেক ভেবে শেষে লোকটার হাতে কাগজটা তুলে দিল আয়েশা। ঠিকানা দেখে সে বলল,
“প্লিজ, কাম উইদ মি।”

অনুসরন করতে শুরু করল আয়েশা। পার্কিং এরিয়ায় রাখা একটা গাড়ির সামনে গিয়ে লোকটা ওকে সেই গাড়িতে উঠে বসতে বলল ওকে। আয়েশা দুরুদুরু বুকে ভয় আর রাজ্যের সংশয় নিয়ে গাড়িতে উঠে বসল। যতক্ষন গাড়ি চলল ততক্ষনই কুৎসিত সব চিন্তা ওর মাথায় একের পর এক চলতে লাগল৷ এই বুঝি নির্জন কোনো রাস্তা পেয়ে লোকটা ওর উপর ঝাপিয়ে পড়বে কিংবা হয়তো অন্য কোথায় নিয়ে যাবে। আবোল তাবোল ভাবতে ভাবতে একসময় আয়েশা দেখল আফরোজা বেগমের বাসার সামনে গাড়ি এসে থেমেছে। এবার ও মনে মনে লজ্জিত হলো ভালো মানুষটা সম্পর্কে এমন উল্টোপাল্টা ভাবার জন্য।

আয়েশা বাসার ভেতরে ঢুকে দেখল আফরোজা বেগম সোফায় বসে কাঁদছেন। আয়েশাকে দেখে ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরলেন তিনি। সাথে আরেকজন অচেনা শ্বেতাঙ্গ যুবককে দেখে যা বোঝার বুঝে গেলেন। সুদর্শন যুবক সাধারণ সৌজন্যমূলক আলাপের পর চলে গেল।

সেদিনের পর আয়েশা ভয়ে বাসা থেকে বের হওয়া পুরোপুরি বন্ধ করে দিল। কিন্তু সময়ে অসময়ে সেই বিদেশী যুবককে দেখা যেতে লাগল আফরোজাদের বাসার সামনের রাস্তায়। এই আগমন যে শুধু ওর জন্যই সেটা বুঝে গেল আয়েশা।

(চলবে ইনশাআল্লাহ)

নোট ১- আজকের পর্বে দেওয়া কবিতাটি আহসান হাবীবের। কবিতার নাম “জোনাকিরা”।
_____
গোধুলি বেলায় পিচঢালা রাস্তার উপর অযত্নে অবহেলায় পড়ে থাকা আলগা ধুলো উড়িয়ে চলে গেল সিএনজি। গেটের সামনে স্থবির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল শুভ্রতা। অপমানটা খুব করে গায়ে লেগেছে ওর। ঠিক যেন শরীরে সোনামুখি সূচ বিঁধিয়ে দিয়েছে কেউ।

❝পড়ুন “ বিষাদবেলা ফুরায়ে যায়” এই লিংকে
https://link.boitoi.com.bd/VWDt