কাননে ফুটিল ফুল পর্ব-০৯

0
166

কাননে ফুটিল ফুল — ৯ (১৭৫০+ শব্দ)

গাড়িটা কার, সেই রহস্য সমাধান হলেও নৈশীর মাথায় নতুন চিন্তার ঝড় শুরু হয়ে গেল। আন্দালিব ওকে মিথ্যে কেন বলল।

তাহলে কি বেশি তাড়াহুড়া হয়ে যাচ্ছে আন্দালিবের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে। আরেকটু কি খতিয়ে দেখা উচিৎ আন্দালিবকে?

সারাটাদিন ভেবেও নৈশী কুলকিনারা করতে পারছিল না, আর কীভাবে আন্দালিবের ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া যায়। ছাদে গিয়ে খোঁজ রাখা যায় যে আন্দালিব আবার কবে গাড়ি এভাবে পার্ক করে এলাকায় ঢোকে। কিন্তু সারাদিন নিশ্চই ছাদে গিয়ে বসে থাকা যায় না।

ওর মাথায় বুদ্ধিটা এলো পরেরদিন সকালে। নৈশী বাসা থেকে বের হলো সাথে সাথেই। আগেরদিন আন্দালিব যেখানে গাড়িটা পার্ক করেছিল ঠিক সেখানে গিয়ে দাঁড়াল নৈশী। আশেপাশে তাকিয়ে কতক্ষন কী একটা দেখল। অনেক চিন্তা ভাবনার পর অপজিটের একটা কনফেকশনারি দোকানের দিকে এগিয়ে গেল নৈশী। দোকানদার একটু বয়স্ক। নৈশী গিয়ে সালাম দিল আগে। তারপর বলল,
“আঙ্কেল, আপনার সাথে একটু কথা বলতে পারি?”

দোকানদার জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে বললেন, “বলুন।”

আন্দালিবের ফেসবুকে ফটো দেওয়া ছিল গাড়ির সামনে দাঁড়ানো অবস্থায়। সেই ফটোটা বের করে দোকানদারের সামনে ধরল নৈশী৷ তারপর পুরো ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলল তাকে। যদি কখনও সে ছবির লোকটাকে গাড়িটা এই রোডের আশেপাশে কোথাও পার্ক করতে দেখে তাহলে যেন নৈশীর নাম্বারে একটা কল করে জানায়।

দোকানি প্রথমে রাজি হলো না কিছুতেই। বরং সন্দেহের চোখে নৈশীর দিকে তাকিয়ে বলল, “আরেকজন কী করছে না করছে সেটা দিয়ে আপনার কী দরকার।”

নৈশী বুঝল এভাবে কাজ হবে না। একবার মনে হলো সরাসরি টাকা অফার করা যাক এই কাজের বিনিময়ে। তারপর মনে হলো, এতে উলটো রিয়্যাকশনও হতে পারে৷ ইমোশোনাল কথা বলে দেখা যায় একবার। বয়স্ক মানুষ, কাজ হলেও হতে পারে।
নৈশী বলল, “আঙ্কেল প্লিজ। একটু হেল্প করুন আমাকে। আপনার যদি কোনো মেয়ে থাকে তাহলে নিশ্চই অনেকটা আমার বয়সীই হবে। ধরে নিন, আপনার মেয়ের বয়সী একটা মেয়েকে বিপদ থেকে রক্ষা করছেন। আমাকে আপনি বিশ্বাস করতে পারেন। আপনার এই তথ্যটুকু হয়তো আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্তটা নিতে সাহায্য করবে। আপনি প্রয়োজনে আমার নাম ঠিকানা সব রেখে দিন৷ পরে কোনো সমস্যার পড়লে আমাকেই নাহয় গিয়ে ধরবেন। তবুও আমাকে হেল্পটা করেন প্লিজ।”

এবার একটু নরম হলো লোকটা। বলল, “আচ্ছা, ছবিটা আমার ফোনে রেখে যান, আর আপনার কন্টাক্ট নাম্বারটা দিয়ে যান।”

নৈশী নিশ্চিন্ত হলো। কিছুক্ষন ইতস্তত করে একটা এক হাজার টাকার নোট বের করে লোকটার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,”আপনি এত কষ্ট করছেন তাই…।”
“এসবের দরকার নেই। আপনার কথাগুলো আমার বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়েছে, তাই আপনাকে আমি হেল্প করব।”

যেহেতু লোকটা টাকা নেয়নি। তাই ওই টাকাটা দিয়ে নৈশী বেশকিছু কেনাকাটা করল ওই দোকান থেকে।

তারপর শুধু অপেক্ষা একটি ফোনকলের। কিছু কিছু সময় সিক্সথ সেন্স খুব ভালো কাজ করে নৈশীর। ওর মন বারবার বলছিল কিছু একটা হবে।

নৈশী মনে মনে বারবার বলছিল, “আল্লাহ সবকিছু সহজ করে দাও আমার জন্য৷ জেনে বুঝে সঠিক সিদ্ধান্তটা যেন আমি নিতে পারি।”

তখনও নৈশী জানত না। সত্যিটা আর বেশি দূরে নেই৷ ও বুঝতে পারেনি, খুব শীঘ্রই ও পরিচিত হবে ভদ্রতার মুখোশের আড়ালে থাকা নোংরা মুখের সাথে।

১১.
সারজিমের আজ অফ ডে। যদিও অফ ডে বলে আসলে কিছু থাকে না কর্পোরেট সেক্টরে। ছুটির দিনেও একগাদা কাজ। দুপুরের খাবার খেয়ে ল্যাপটপ আর কিছু ফাইল নিয়ে বসে গেল ও। বাসার কলিংবেল বাজল পরপর দুবার। সারজিম জলদি উঠে গিয়ে দরজা খুলল,
“আন্দালিব, তুই? এই সময়ে?”
“কেন, আসতে পারি না?”
“না, ইদানিং তো আর আসিস না তেমন বাসায়৷ তাই কিছুটা অবাক হয়েছি। আয়, ভেতরে আয়।”

আন্দালিব বাসার ভিতরে ঢুকল। ইতিউতি তাকিয়ে প্রশ্ন করল, “বাসা এত নীরব যে। কেউ নেই?”

“আছে তো, সবাই দুপুরের খাবার খেয়ে ঘুমাচ্ছে। কাল রাতে হঠাৎ মায়ের প্রেসারটা ফল করেছিল। অনেক রাত অব্দি জেগে ছিলাম সবাই। তাই দুপুরের খাবার খেয়ে ঘুমিয়েছে আবার।” আন্দালিবের পাশাপাশি সোফায় বসে উত্তর দিল সারজিম।

“এখন কী অবস্থা খালাম্মার?”
“আলহামদুলিল্লাহ, আগের চেয়ে বেটার।”
“ও। তোর সাথে ইদানিং তো দেখাই হয় না। তাই ভাবলাম একটু দেখা করে যাই। আরও একটা ব্যাপারে কথাও বলার ছিল তোর সাথে।”
“হ্যা, বল। কী কথা।”
“কথাটা আসলে নৈশীর ব্যাপারে। তুই সম্ভবত জানিস না, নৈশী আর আমি দুজন দুজনকে পছন্দ করি।”

“দুজন দুজনে লাইক করিস, এমন কিছু তো শুনিনি। যতদূর জানি, তুই নৈশীকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিস এবং নৈশী এখনও সেটা পেন্ডিং রেখেছে।”

“হ্যাঁ, রেখেছে। তবে ওর জবাবটা পজিটিভই হবে আশা করি। তুই যেহেতু আমার বেস্ট ফ্রেন্ড তাই তোর সাথে ব্যাপারটা আগেই বলা উচিৎ ছিল কিন্তু কীভাবে শুরু করব বুঝতেই পারছিলাম না। যেহেতু তোর নিজেরও নৈশীর প্রতি একটা দুর্বলতা আছে। নৈশীর প্রতি তোর অনুভূতি জানার পরেও আমি নৈশীকে প্রপোজ করলে সেটা তুই কীভাবে নিবি সেই চিন্তায় ছিলাম। আসলে হয়েছে কী বল তো, নৈশীকে প্রথম দেখাতেই এত ভালো লেগে গেল যে আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলাম না। ওকে অবশ্য আমি কোনো জোর করিনি। নৈশী স্বেচ্ছায় যাকে খুশি বেছে নিতে পারে।”

“আন্দালিব, তোকে একটা কথা প্রথমেই ক্লিয়ার করে বলি। আমি তোর সাথে কোনো প্রতিযোগিতায় নামিনি। যদিও তোর ইচ্ছে সেরকমই ছিল। তুই জানতি আমি নৈশীকে পছন্দ করি। তারপরেও তুই একটা কম্পিটিশনে মেতে উঠলি। আমার অনুপুস্থিতিতে নৈশীর সাথে ক্লোজ হওয়ার চেষ্টা করলি। আমি তোকে বলেছিলাম নৈশী দেশে ফিরলে আমার অফিসিয়াল থাইল্যান্ড ট্যুর থেকে দেশে ফিরেই মায়ের মাধ্যমে ওকে বিয়ের প্রস্তাব দেব। কিন্তু তুই কি করলি, আমি দেশে ফেরার আগেই তড়িঘড়ি করে নৈশীকে প্রস্তাব দিলি। যাক, তোর যা ভালো মনে হয়েছে তুই তাই করেছিস। নৈশী যদি তোকে লাইফ পার্টনার হিসেবে পছন্দ করে, তোর সাথে ভালো থাকে তাতে আমার অসুবিধা নেই। নৈশী ভালো থাকলে সেটাই আমার জন্য যথেষ্ট। আমি মুভ অন করে যেতে পারব।

আর আমি কিন্তু চাইলেই পারতাম তোর সাথে প্রতিযোগিতায় নামতে। কিন্তু আমি সেটা করিনি। কেন জানিস? শুধু নৈশীর কথা ভেবে। এখন যদি নৈশীকে আমি নিজের মনের কথা জানাই, তাহলে বেচারি দোটানায় পড়ে যাবে, তোর আর আমার মধ্যে কাকে বেছে নেবে এটা ভেবে। তোর প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলেও গিল্ট ফিল করবে আমার কথা ভেবে। কে জানে, হয়তো কখনও স্বাভবিকভাবে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারবে না আমার সাথে। নৈশীর এখন আপন বলতে আছে মা। ওর সবচেয়ে কাছের আপনজন। এই ম্যাটারটা কেন্দ্র করে যদি আমার পরিবারের সাথে নৈশীর দুরত্ব বাড়ে তাহলে মেয়েটা আরও একা হয়ে পড়বে৷ আমি সবকিছু ভেবেই পিছিয়ে এসেছি।

আর একটা কথা আন্দালিব। আমি সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করি। আমি মনে করি, আল্লাহ আমার ভাগ্যে যদি কিছু পাওয়া লিখে থাকেন সেটা আমার থেকে আর কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। আমি জানি, তুই আজ আমার কাছে কেন এসেছিস। তুই ভাবছিস, নৈশী তোর প্রস্তাবে রাজি হলে আমি হয়তো সেটা কোনোভাবে ভেস্তে দেব৷ সেজন্যই আজ আমাকে এসব কথা বলে কনভিন্স করতে এসেছিস।

এতবছরের বন্ধুত্বেও তুই আমাকে চিনতেই পারিসনি আন্দালিব। যাই হোক, নতুন করে আজ আর আমি নিজেকে চেনাতে যাব না তোর কাছে। শুধু কিছু কথা বলতে চাই তোকে। বলতে পারিস সাবধান করে দিচ্ছি। আমি, মা, সাব্বির আমাদের সবার কাছেই নৈশী খুব প্রিয়। যদি ও তোকে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নেয় তাহলে ওকে কষ্ট দিস না কখনও, ওর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার চেষ্টাও করিস না। যদি কখনও নৈশী তোর জন্য হার্ট হয়, সেটা খুব একটা ভালো হবে না তোর জন্য।

আমার মনেহয় তোর সাথে আমার যেটুকু দরকারি কথা ছিল তা হয়ে গেছে। আর কি কিছু বলতে চাস তুই আমাকে?”

আন্দালিব আর কোনো জবাব দিল না সারজিমের কথার। চুপচাপ উঠে বের হয়ে গেল বাসা থেকে। সারজিম আবার নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। বাহ্যিকভাবে দেখলে মনে হবে কিছুই হয়নি আসলে। কিন্তু সবচেয়ে কাছের বন্ধুটির এভাবে বদলে যাওয়া আর প্রতিহিংসাপরায়ণ মনোভাব অনেকটাই আঘাত করল সারজিমের মনে। নৈশীর প্রতি সারজিমের অনুভূতি জানা সত্ত্বেও আন্দালিব নৈশীকে প্রপোজ করায় ও কষ্ট পেয়েছে ঠিকই, কিন্তু তারচেয়ে অনেক বেশি কষ্ট পেয়েছে সারজিমের কাছে সবকিছু লুকিয়ে যাওয়া এবং ওর সম্পর্কে মনে মনে নেতিবাচক ধারনা পুষে রাখায়৷ এতগুলো বছরের বন্ধুত্বের তবে এই মূল্য দিল আন্দালিব! সব মিলিয়ে মনে মনে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েই নিল সারজিম, এরপর থেকে পারতপক্ষে আন্দালিবকে এড়িয়ে চলবে ও।

দিনগুলো পার হতে লাগল। সারজিম সত্যি সত্যিই এড়িয়ে চলতে শুরু করল আন্দালিবকে। আন্দালিবের অবশ্য তাতে কিছু এসে গেল না। সে শুধু নৈশীর ভাবনায় বুদ হয়ে থাকে সারাদিন। যেহেতু সারজিমকে জানানো হয়েছে সব, তাই এখন আর লুকোছাপা নেই তেমন। ইচ্ছে করেই ঘনঘন তাই সারজিমদের বাসায় আসছে সে। আসার সময় নৈশীকে ইমপ্রেস করার জন্য নানারকম জিনিস নিয়ে আসছে। নৈশী অবশ্য সেসব জিনিসের প্রতি খুব একটা আগ্রহ দেখায় না। তবুও আন্দালিব হাল ছাড়ে না। যতদিন অব্দি না নৈশী রাজি হচ্ছে ততদিন এসব চালিয়ে যেতেই হবে। তাছাড়া সারজিমকেও ওর ভরসা হয় না একদম। আন্দালিবের সাথে নৈশীর দেখা হয় কয়েকদিন পরপর। এদিকে সারজিমের সাথে রোজ। যদি নৈশীর মন বদলে যায়। যদি সারজিম নৈশীকে নিজের দিকে টেনে নেয়। এই আতঙ্কেই দিন পার হয় ওর।

যদিও আন্দালিব মুখ ফুটে কিছু বলে না। তবুও ওর মনের কথাগুলো বেশিরভাগই বুঝে যায় সারজিম। এতবছরের বন্ধুত্বে আন্দালিবের সাইকোলজি সম্পর্কে বেশ একটা পাকাপোক্ত ধারনা আছে ওর। আন্দালিবের ইর্ষামূলক চাহনি সবটা পরিস্কার করে দেয় আরও। এই চোখের ভাষা তো সারজিম চেনে। ক্লাসে আন্দালিবের চেয়ে কেউ বেশি মার্কস পেলে এভাবেই তাকে দেখতে আন্দালিব, নিজের পছন্দের কোনো জিনিস ভাগ্যক্রমে অন্যের হাতে চলে গেলে আন্দালিব ঠিক এমন আচরণই করত। সারজিমের আফসোস লাগে। আন্দালিবের এই ধরণের দৃষ্টি যে কখনও ওর উপরেও পড়বে সেটা সারজিম ভাবতে পারেনি। আন্দালিবকে তো ও বলেই দিয়েছিল নৈশী আর ওর মধ্যে সারজিম তৃতীয় ব্যক্তি হয়ে ঢুকবে না কখনও। তবুও এত অবিশ্বাস! অনেকগুলো বছর হেসেখেলে কাটিয়ে দেওয়ার পর এখন সারজিমের মনে হচ্ছে, বন্ধু নির্বাচনে ভুল হয়ে গেল বোধহয়।

সারজিম ওকে এড়িয়ে যেতে চাইলেও ওদের বাসায় আন্দালিবের এই ঘনঘন যাতায়তের কারণে সেটা খুব একটা হয়ে ওঠে না। অফিস থেকে ফেরার পথে নানারকম জল্পনা কল্পনায় ডুবে ছিল সারজিম। বাসায় ফিরে দরজার সামনে দাঁড়াতেই আন্দালিবের গলার আওয়াজ পেল ভেতর থেকে৷ কী একটা বিষয় নিয়ে উচ্চস্বরে হাসছে সে। সারজিম বেল চাপল। দরজা খুলে দিল জ্যোতি। বসার ঘরে সাব্বির আর আন্দালিব বসে আছে। সারজিম ওদের দিকে একবার তাকিয়ে নিজের রুমে রওয়ানা হলো। রুমে ঢুকতে গিয়েও কী মনে করে আবার রান্নাঘরে উঁকি দিল। নৈশী রান্না করছে বোধহয় কিছু একটা। আফরোজা বেগম দাঁড়িয়ে আছেন পাশেই। না চাইতেও দুজনের কথোপকথন কানে এলো সারজিমের।
“কখন থেকে বলছি তুই যা। এতটুকু সন্ধার নাস্তা বানানো, এটা আমিই করে নিতে পারব। আন্দালিব সেই কখন থেকে বসে আছে।”

“ভালোই বলেছ, আমি এখান থেকে চলে যাবো আর তুমি অসুস্থ শরীর নিয়ে এখন কাজ করবে, তাই না?”
“কিন্তু আন্দালিব…।”
“আন্দালিব কী? সে এসেছে বসুক। সে আসলেই আমাকে তার কাছে গিয়ে বসে থাকতে হবে, এমন তো কোনো কথা নেই। তাছাড়া আমি তার সাথে এখনও কোনো কমিটমেন্টে যাইনি।…”

সারজিম আর দাঁড়াল না। নিজের রুমে চলে গেল ফ্রেশ হতে। সন্ধ্যার নাস্তার পর কিছুক্ষন গল্প হলো। রাতের খাবারটাও ওদের সাথেই খেল আন্দালিব। খাওয়ার পরে আবার একদফা আড্ডা। ওদের আলাপে থাকবে না বলে আফরোজা বেগম আগেই গিয়ে শুয়ে পড়লেন। সবার জন্য এটা শুধুই আড্ডা হলেও আন্দালিবের জন্য এটা একটা মিশন। নৈশীকে ইমপ্রেস করার মিশন। আন্দালিব বলল,
“নৈশী, তুমি তো খুব ভালো কবিতা আবৃত্তি করো, আমি তো ততটা ভালো পারি না, তবুও তোমাকে শোনানোর জন্য একটা কবিতা শিখেছি। শুনবে?
“অবশ্যই, বলুন তাহলে।” নৈশীর হাস্যোজ্জ্বল উত্তর।

আন্দালিব শুরু করল মাঝখান থেকে,
“চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা।
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য…।”

এই পর্যায়ে সাব্বির থামিয়ে দিল আন্দালিবকে,
“আন্দালিব ভাই, মাঝপথে ইন্টারাপ্ট করার জন্য দুঃখিত। আমার মনেহয় তুমি ভুল কবিতা বাছাই করেছ নৈশী আপুর জন্য।”

আন্দালিব একইসাথে বিরক্ত এবং বিস্মিত, “মানে?”
“এই যে বললে, চুল অন্ধকার বিদিশার নিশা, এখানে মূলত বনলতা সেনের চুলের সাথে বিদিশা নগরীর রাতের কালো অন্ধকারকে তুলনা করা হয়েছে। মানে বনলতা সেনের চুল ঘন এবং কালো এটা বোঝাতেই এই উপমা। এদিকে আমাদের নৈশী আপুর চুল গোল্ডেন কালারের অনেকটা। তাই আমার মনেহয় নৈশী আপুকে ইমপ্রেস করার জন্য তোমার নতুন কোনো কবিতা বাছাই করা উচিৎ।”

সাব্বিরের কথায় জ্যোতি আর নৈশী মুখ টিপে হেসে ফেলল। সারজিম নির্বিকার বসে আছে একপাশে। আন্দালিবের মনে মনে প্রচন্ড রাগ হলেও ওদের সাথে হেসে উড়িয়ে দিল ব্যাপারটা।

(চলবে ইনশাআল্লাহ)

নোট:- এই পর্বে উল্লিখিত কবিতাটি জীবনানন্দ দাশের৷