কাননে ফুটিল ফুল — ১৪ (১৮৩০+ শব্দ)
আন্দালিব হকচকাল নৈশীর কথা শুনে। এত সহজে নৈশী ওর সাথে কথা বলতে রাজি হয়ে যাবে, সেটা বুঝতে পারেনি ও।
“ওকে, তাহকে কালই দেখা করি।”
“জ্বি, অবশ্যই।”
কারও প্রতি মনে মনে প্রচন্ড ক্রোধ রেখে হাসিমুখে কথা বলাটা খুব দুস্কর। বাধ্য হয়েই আন্দালিবকে এই কাজটা এখন করতে হচ্ছে৷ ইচ্ছে করছে নৈশীর সব দম্ভ আর অহংকার চূর্ণবিচূর্ণ করে দিয়ে ওকে একটা উচিৎ শিক্ষা দিতে। কিন্তু চাইলেও সব করা যায় না। তাই আপাতত শুধু একটা প্রশ্নেরই উত্তর খোঁজার সিদ্ধান্ত নিল আন্দালিব। নৈশী কেন ওকে এরকম আশায় রেখে শেষপর্যন্ত সারজিমকে বিয়ে করে নিল।
পরেরদিন বিকেলে একটা ছোট্ট কফিশপে আন্দালিবের সাথে দেখা করতে গেল নৈশী। আন্দালিব একা আসেনি, ওর সাথে আরো কয়েকজন আছে। এদের সাথে আরোও একবার দেখা হয়েছিল নৈশীর। আন্দালিব সেদিন হুট করে নৈশীর কাছে এসে বলেছিল ওর কিছু ফ্রেন্ড নৈশীর সাথে দেখা করতে চায়। এদের সাথে আবার যে কখনও মুখোমুখি হতে হবে সেটা ভাবতে পারেনি নৈশী। ও বলল, “দেখাটা আপনি একা করলেই বোধহয় ভালো হতো।”
আন্দালিব হেসে বলল, “কেন? ওদের সামনে সব বলতে অসুবিধা কোথায়? ওরাও আমার মতো জানতে চায়, কেন আমাকে আশায় রেখে তুমি হঠাৎ সারজিমকে বিয়ে করলে।”
আন্দালিবের পাশে বসে থাকা একটা মেয়ে কথা বলে উঠল, “তোমার থেকে আমরা এমনটা আশা করিনি নৈশী। আমরা এই ব্যাপারে আজই একটা ক্লারিটি চাইছি।”
“আমি শেষবারের মতো জানতে চাইছি আন্দালিব ভাই, আপনি সিওর সবার সামনেই সবটা শুনতে চান?”
“হ্যাঁ।”
“ওকে, বলছি তাহলে। আপনার মনে আছে আন্দালিব ভাই, একদিন আপনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, আমি মানুষকে সহজে বিশ্বাস করি নাকি করি না। আমি বলেছিলাম, আমার মনে প্রশ্ন এলে আমি প্রথমে সেটার সত্যতা যাচাইয়ের সর্বোচ্চ চেষ্টা করি৷ তারপরে সিদ্ধান্ত নেই।
আপনাকে নিয়ে প্রথম প্রশ্ন আমার মাথায় এসেছিল দেশে আসার কয়েকদিন পরেই, যেদিন খালামনির বাসায় আপনি এলেন। জ্যোতি আর ফাহিমাও ছিল সেদিন। রান্না শেষ করে আমি গিয়ে দেখলাম আপনি ফাহিমার পাশে বসে আড্ডা দিচ্ছেন। ফাহিমা কথার ছলে আপনার হাত ধরতে গেলে আপনি ছাড়িয়ে নিলেন। সেদিন কিন্তু আমার ফাহিমাকেই সন্দেহ হয়েছিল। মনে হচ্ছিল মেয়েটা হয়তো একটু পুরুষদের গায়ে ঘেসা স্বভাবের। কিন্তু দিনের পর দিন যখন জ্যোতি আর ফাহিমার সাথে মিশতে শুরু করলাম তখন বুঝতে পারলাম ফাহিমা মেয়ে হিসেবে যথেষ্ট ভদ্র। তারপরেই সন্দেহের তীর ঘুরে গেল আপনার দিকে।…”
আন্দালিব নৈশীকে থামিয়ে দিল মাঝপথেই, “ও মাই গড! এই সামান্য বিষয়ের জন্য তুমি এত বড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলে? অথচ এটা তুমি সরাসরি আমাকে আস্ক করতে পারতে।”
“আন্দালিব ভাই, আমার কথা এখনও শেষ হয়নি। আর কথার মাঝে ইন্টারাপ্ট করা আমি একদম পছন্দ করি না।”
মুখের উপরে অপমান আন্দালিবও মেনে নিতে পারে না৷ নৈশীর কথা বলার ধরন দেখে ওখানেই ওর গলা টিপে ধরতে ইচ্ছে হচ্ছিল আন্দালিবের। তবুও ও চুপ থাকল। এখনও আশা আছে ওর মনে। নৈশীর সব কথা শোনার পরে হয়তো আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাবে ও। হয়তো নৈশী নিজের ভুল বুঝতে পেরে ফেরত আসতে চাইবে আন্দালিবের কাছে। টাকা-পয়সা, চেহারা সবদিক থেকে সারজিমের থেকে এগিয়ে থাকার পরেও রাজকন্যা ওই সারজিম পাবে, এটা মেনে নিতে আন্দালিবের ইগোতে লাগছিল খুব।
নৈশী বলতে লাগল, “এরপর থেকে আমি ভাবতে লাগলাম কীভাবে আপনার ব্যাপারে আরও জানতে পারব। ফাহিমাকে ডেকে কৌশলে জিজ্ঞাসা করতেই একটু ইতস্তত করে গড়গড় করে বলে দিল সব৷ আপনি কথা দিয়েছিলেন, ওর ইন্টারমিডিয়েটটা হয়ে গেলেই ওকে বিয়ে করবেন আপনি। আপনাদের তো কয়েকবার লুকিয়ে সিলেট আর বান্দরবান ঘুরতে যাওয়ারও কথা ছিল। ফাহিমা বান্ধবীর বাসায় বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে বের হবে বাসা থেকেই, এমনটাই প্লান হয়েছিল।নেহাৎ ফাহিমা বাসা থেকে পারমিশন পাচ্ছিল না।
আরও একটা ব্যাপারে আমি বুঝে গিয়েছিলাম আপনি আগাগোড়া স্বার্থপর একজন মানুষ। সেবার যখন আমাকে প্রপোজ করার জন্য একা দাওয়াত করলেন আপনার পার্টিতে৷ অথচ সারজিম আপনার এত ভালো বন্ধু হওয়া স্বত্বেও তার জন্য একটাদিন অপেক্ষা করলেন না। এমনকি সাব্বিরককে বলার প্রয়োজন বোধ করলেন না, তখন।
যেটা বলছিলাম, আমি আপনার ব্যাপারে আরও জানতে চাইছিলাম। তাই আপনি বললেই দেখা করতে রাজি হয়ে যেতাম, আপনি কল করলে কথা বলতাম। এতসবের পরেও আমি কোনো ক্ল্যু পাচ্ছিলাম না। এরপরে একদিন সেই রাস্তাটা আমি পেয়ে গেলাম। রুবিনা ভাবি অসুস্থ থাকায় সেদিন তাকে দুপুরের খাবার দিতে গিয়েছিলাম। ওখানে দেখা হলো আপনার সাথে৷ ওইদিন একসাথে অনেকগুলো প্রশ্ন তৈরি হলো আমার মনে। আপনি বললেন, রায়হান ভাইয়ের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন। অথচ আমরা সবাই জানি, ব্যাবসার কাজে বেশিরভাগই বরিশালের বাইরে থাকতে হয় তাকে। এমনকি সারজিমকেও দুইবার আমি দেখেছিলাম, রায়হান ভাইয়ের সাথে দেখা করতে গেলে আগে ফোন করে শিওর হয়ে নেয় যে সে বাসায় আছে কিনা। মনের মধ্যে সন্দেহ নিয়েই আপনাকে পাশ কাটিয়ে আমি ঘরে ঢুকলাম। রুবিনা ভাবির হাতে খাবারের বাটিটা দিতে গিয়ে আমার সন্দেহ আর জোরালো হলো। অনেকসময় ছোট্ট একটা বিষয়ও মনের গোপন কুঠুরিতে লুকিয়ে থাকা রহস্যকে প্রকাশ্যে এনে দেয়। এক্ষেত্রে কাজটা করল আপনার পারফিউম। সেই স্ট্রং স্মেলের জেন্টস পারফিউমটা বোধহয় আপনার খুব প্রিয়, সেটা আপনি প্রায়ই ইউস করেন। এমনকি আজও ওটার স্ট্রং স্মেল এতদূর থেকেও আমি কিছুটা পাচ্ছি। সেদিন খাবারের বাটিটা দিতে আমি রুবিনা ভাবির একেবারে গা ঘেসে দাঁড়ালাম। এবং অপ্রকাশ্য সত্যিটা অনেকটাই সামনে চলে এলো আমার। আপনার সেই পারফিউমের গন্ধ রুবিনা ভাবির শরীর থেকে পাচ্ছিলাম আমি। আরও একটা ক্ল্যু পেয়ে গেলাম না চাইতেই। বাসায় ফিরে ছাদে গেলাম শুকনো কাপর তুলতে। সেখান থেকেই আমি দেখলাম আপনি আপনার সেই গাড়িটায় উঠে চলে গেলেন। অথচ আপনি আমাকে বলেছিলেন, আপনার গাড়ি নষ্ট।
সারারাত ধরে ভাবলাম আমি। তারপরে একে এক সব জট খুলতে শুরু করল। যেহেতু সেদিন মেইন রোডের পাশে আপনি গাড়ি পার্ক করেছিলেন, তাহলে ধরে নেওয়া যায় রুবিনা ভাবির সাথে স্পেশালি দেখা করার সময় আপনি এলাকার মধ্যে গাড়ি নিয়ে ঢোকেন না। মেইন রোড বা আশপাশেই কোথাও গাড়ি পার্ক করেন৷ তাই ওখানকারই একটা দোকানে আমি আপনার আর গাড়ির ছবি দিয়ে এলাম৷
অনেকদিন পর দোকানদার কল করল আমাকে। রাত হয়ে গেছে তখন। তারপর আবার প্রচন্ড বৃষ্টি ছিল। সেজন্যই বোধহয় আপনি আর রুবিনা ভাবি সেরকম সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজনবোধ করেননি। নব ঘুড়িয়ে আমি যখন বাসায় ঢুকলাম, তখন আপনার দুজন নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। একি আন্দলিব ভাই, আপনি এসিতে বসেও ঘামছেন, এটা নিন।”
নৈশী টিস্যু বক্স এগিয়ে দিল। আন্দালিব হাত বাড়িয়ে একটা টিস্যু নিল।
“আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল। কিন্তু সত্যিটা আমার চোখের সামনে ছিল। আমি দেখছিলাম আপনার দক্ষ হাত বিচরণ করছে নারীদেহে। আমি বুঝলাম এটা প্রথমবার নয়৷ এর আগেও বহুবার আপনি এরকম সময় কাটিয়েছেন। হতে পারে সেটা শুধুই রুবিনা ভাবির সাথে আবার হতে পারে অন্য কোনো নারী৷
আমি জানি আন্দালিব ভাই, আপনার মনের মধ্যে এখন মিশ্র অনুভূতি। একইসাথে আপনি আপনার বন্ধুদের সামনে বিব্রত এবং লজ্জিত, আবার নিশ্চই খুব রাগও হচ্ছে আমার প্রতি। আমি নিজেও আসলে এরকম একটা ব্যাপার নিয়ে কথা বলতে বিব্রতবোধ করছি কিন্তু আমি নিরুপায়।”
“বাহ! সারজিমকে বিয়ে করেছ ভালো কথা। কিন্তু আমার নামে মিথ্যে বলে সবার সামনে ছোট করার কোনো রাইট তোমার নেই। তুমি…।”
“এটা যে মিথ্যে নয়, সেটা আপনিও জানেন আন্দালিব ভাই। তবুও যদি প্রমাণ করতে হয় সেই প্রমাণও আমার কাছে আছে। সেদিনের ছোট্ট একটা ভিডিও ক্লিপ আছে আমার কাছে। এটা মূলত আমি রায়হান ভাইকে সত্যিটা বিশ্বাস করানোর জন্য করেছিলাম৷ এই ভিডিওর উপরে ভিত্তি করে রায়হান ভাই গত পরশু তালাক দিয়েছেন রুবিনা ভাবিকে।
তারপর আজকের দিনের জন্য সেটা রেখে দিয়েছি। আপনি চাইলে সেটা আপনার ফ্রেন্ডদের দেখিয়ে ঘটনার সত্যটা প্রমান করে দিতে পারি আমি।”
আন্দালিব এবার উঠে দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে উঠল, “গেট লস্ট। এখানে আর এক মুহুর্ত থাকবে না তুমি।”
নৈশী আন্দালিবের বন্ধুদের উদ্দেশ্যে হেসে বলল, “আপনারা সবাই নিশ্চই উত্তর পেয়ে গেছেন।” আন্দালিবের বন্ধুদের কিছুই বলার রইল না আর। কারণ ওরা সবাই বুঝে গেছে, নৈশীর বলা প্রত্যেকটা কথা সত্যি। একে একে আন্দালিবের সব ফ্রেন্ডরা বের হয়ে গেল। বের হয়ে এলো নৈশীও।
নৈশী কফিশপ থেকে বের হতেই সারজিম এগিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করল, “কোনো সমস্যা হয়নি তো।”
“একদমই না। আজ পুরো বিষয়টা ক্লোজ করে দিয়ে এলাম। এরপর যাতে আর কোনো প্রশ্ন না ওঠে এই বিষয়টা নিয়ে।”
সারজিমের কন্ঠে আদেশের সুর, “আজই কিন্তু শেষ। এরপর আর এভাবে কখনও আন্দালিবের সামনে যাওয়া এলাউ করব না আমি।”
“আমিও কথা দিলাম। আজই শেষ।”
সারজিম হাসল। নৈশী চোখ নামিয়ে নিল। সারজিম প্রশ্ন করল, “চোখ সরালে কেন?”
“যদি নজর লেগে যায়।”
সারজিম শব্দ করে হেসে রিকশা ডাকল।
“আন্দালিবের মতো আমার গাড়ি নেই৷ তাই আপাতত রিকশাতেই ভরসা।”
আন্দালিবের কথার প্রত্যুত্তরে নৈশী চমৎকার হেসে বলল, “আজ থেকে এই রিক্সাই আমার জন্য বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজ, ল্যান্ড-ক্রুজার সব।”
সারজিম রিকশায় উঠে একটা হাত বাড়িয়ে দিল নৈশীর দিকে। সেই হাত ধরে রিকশায় উঠে বসল ও। সারজিম বলল, “ভাবছি সেভিংসের কিছু অংশ ভেঙে এবার একটা গাড়ি নেব।”
নৈশী বলল “আচ্ছা।” নৈশী চাইলেই পারে এখনই একটা গড়ি কিনতে কিন্তু সেটা ও করবে না। সারজিমকে নৈশী চিনতে শুরু করেছে কিছুদিন যাবত। কিন্তু এই ক’দিনেই এতটুকু ধারনা নৈশীর হয়ে গেছে, সারজিমের আত্মসম্মানবোধ প্রবল।
সারজিমের একহাত আঁকরে ধরে কাঁধে মাথা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল নৈশী। মনে মনে বলল, “এখন যেই সুখ সুখ অনুভূতিটা হচ্ছে, পৃথিবীর সকল বিলাসিতা এর কাছে তুচ্ছ, নগন্য।
১৭.
অফিসে ইদানিং প্রচুর কাজের প্রেসার যাচ্ছে সারজিমের। বিবাহিত জীবনের সতেরতম দিনটি চলে যাচ্ছে আজ। বিয়ের পরপরই নৈশীকে নিয়ে বেড়াতে যাওয়ার কথা ছিল। সেটা তো যাওয়াই হয়নি, উপরন্তু বাসায়ও নৈশীকে সেভাবে সময় দেওয়া হয়ে উঠছে না। যদিও নৈশীর কোনো অভিযোগ নেই এসব নিয়ে, তবুও সারজিম বোঝে, নৈশী ওর সাথে সময় কাটাতে চায় খুব করে।
অফিস থেকে বের হয়ে সোজা বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো সারজিম। রাত বেশ অনেকটাই হয়েছে। বাসার সামনে দাঁড়িয়ে বেল বাজাল সারজিম। নৈশী দরজা খুলে সেই চিরচেনা আকাঙ্ক্ষিত হাসিটি দিল। সেই হাসিতে সারজিমের সারাদিনের ক্লান্তির অর্ধেকটা কমে গেল।
সারজিম ঘরের ভেতরে ঢোকার পর নৈশী দরজা বন্ধ করে দিল। রুমের দিকে দুকদম এগুতেই আবার বেল বাজল। নৈশী দরজা খুলতে যাচ্ছিল। সারজিম বলল, “এই অসময়ে আবার কে? তুমি দাঁড়াও, আমি দরজা খুলছি।”
সারজিম দরজা খুলে দেখল, জ্যোতি থমথমে মুখে দাঁড়িয়ে আছে। অনেকক্ষন কেঁদেছে বোধহয়, চোখ ফুলে একেবারে লালচে হয়ে আছে। সারজিমকে পাশ কাটিয়ে ভেতরে ঢুকে সোফায় বসল জ্যোতি। সারজিম জিজ্ঞাসা করল,
“কী হয়েছে রে? কেঁদেছিস কেন?”
জ্যোতি উত্তর না দিয়ে বসে থাকল। সারজিম ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিল, “এভাবে চুপ করে বসে থাকলে বুঝব কিছু? সমস্যা কি সেটা বল।”
“আজ আমাকে পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছিল।”
পরপর কলিং বেলের শব্দ শুনে আফরোজা বেগমও বের হয়ে এসেছিলেন রুম থকে। বসার ঘরে দাঁড়িয়েই তিনি প্রশ্ন করলেন, “হুট করে এমন দেখতে এলো যে?”
“হুট করে নয়। আম্মু আগে থেকে আমাকে না জানিয়ে সব ঠিক করে রেখেছিল। তারপর আজ তারা এলো।”
সারজিম সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বলল, “আর কয়েকমাস পরেই তো তোর এইচএসসি এক্সাম। চাচি এই সময়ে কী শুরু করল। আচ্ছা যা, কাল আমি চাচির সাথে কথা বলে নেব, যাতে এখন এসব বাদ দেয়।”
জ্যোতি এবার আসল কথায় এলো। কোনোরকম রাখঢাক না করে সরাসরি যা বলার বলতে শুরু করল,
“বিয়ে দিতে চাইলে তারা দেবে, তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু তাদের পছন্দ করা ছেলেকে আমি বিয়ে করব না।”
জ্যোতির কথা শুনে আফরোজা বেগম আর সারজিম হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকল ওর দিকে। শুধু নৈশী নির্লিপ্ত। যেহেতু আগে থেকেই ও সাব্বির আর জ্যোতির সম্পর্কের কথা জানে এবং জ্যোতির সাথে এতদিন মিশে ওর নেচার সম্পর্কেও একটা ভালো ধারনা হয়ে গেছে নৈশীর। তাই ও বুঝতে পেরেছিল, জ্যোতি এমন কিছু একটাই বলবে।
সারজিম কিছুক্ষন চুপ থেকে প্রশ্ন করল, “তুই কাউকে পছন্দ করিস?”
জ্যোতি হ্যাঁ-বোধক মাথা নাড়ল।
“কে সে?” আবার প্রশ্ন করল সারজিম।
জ্যোতি চুপ। সারজিম বুঝল, সরাসরি জ্যোতি কিছু বলবে না। প্রশ্ন করে করেই জানতে হবে সব। সারজিম আবার জিজ্ঞাসা করল ওকে,
“আমরা কি তাকে চিনি?” জ্যোতি আবারও উপর নিচে মাথা নেড়ে জানান দিল, হ্যাঁ।
সারজিম চুপ হয়ে গেল। পরিচিতদের মধ্যে কে হতে পারে? অনেক ভেবে কিছুটা দ্বিধা নিয়েই প্রশ্ন করল সারজিম।
“সাব্বির?”
এবার মুখ ফুটে উত্তর দিল জ্যোতি, “হ্যাঁ।”
“সাব্বিরও তোকে পছন্দ করে নাকি শুধু তুই?”
“সেও করে। সে নিজেই তো প্রপোজটা…।” অর্ধেক কথা বলে থামল জ্যোতি। তবুও সারজিম যা বোঝার বুঝে নিল।
আফরোজা বেগমের মাথায় হাত। টের পেলেন দুনিয়াশুদ্ধ সব ঘুরছে তার সামনে। গলার স্বর চড়িয়ে প্রশ্ন করলেন তিনি জ্যোতিকে,
“দুজন একসাথে হলেই তো ঝামেলা বাঁধিয়ে দিস৷ সারাক্ষন চিৎকার, চ্যাঁচামেচি, নালিশ। এরমধ্যে এসব শুরু হলো কবে থেকে শুনি?”
“দুই বছর আগে।” জ্যোতির নির্লিপ্ত উত্তর।
আফরোজা বেগমের মনে হলো, এবার তিনি সেন্সলেস হয়ে পড়ে যাবেন। গত সপ্তাহেও তো দুজনের একপ্রস্থ ঝগড়া হয়ে গেল। অথচ এখন এসব জ্যোতি কী বলছে?
(চলবে ইনশাআল্লাহ)