কাননে ফুটিল ফুল — ১৭ (১৬৭০+ শব্দ)
ওদের দিন কাটতে লাগল হাসি আনন্দে। কিন্তু তখনও ওরা জানত না সামনের দিনগুলোতে ওদের জন্য ঠিক কী অপেক্ষা করছে।
জানলে হয়তো নৈশী সারজিমকে আঁচলে বেঁধে রাখত। হয়তো আফরোজা বেগমের মনের মধ্যে খচখচ করা পরেও সারজিমকে সে ঘরের বাইরে বের হতে দিত না। হয়তো সাব্বির ভাইয়ের সাথে আটকে থাকত ছায়ার মতো।
কিন্তু আফসোস! মানুষ ভবিষ্যত দেখতে পারে না।
২০.
নিজেদের নিত্যনৈমিত্তিক কাজে ব্যস্ত থাকতে থাকতে ওরা সবাই প্রায় ভুলেই গিয়েছিল আন্দালিবকে। এরমধ্যেই হঠাৎ একদিন সারজিমদের বাসায় এসে হাজির হলো ও। সারজিম বাসাতেই ছিল তখন। আন্দালিবকে দেখে সৌজন্য আলাপের মধ্যে গেল না ও। সরাসরি প্রশ্ন করল, “তুই এখানে কেন এসেছিস?”
“এখনও রেগে আছিস আমার উপর? পুরোনো কথা ভুলে যা ভাই। একদিন নৈশীকে নিয়ে আয় আমার বাসায়। আমার ভালো লাগবে তাহলে।”
“আন্দালিব, তোর দরকারি কোনো কথা থাকলে বল। নইলে এখন তুই আসতে পারিস।” সারজিমের কাটা কাটা জবাব।
আন্দালিব বুঝল, এখন আর এসব ছেলেভুলানো কথায় কাজ হবে না। ও আস্তে করে উঠে বেরিয়ে গেল বাসা থেকে।
আন্দালিব বের হয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই সারজিম দরজা লক করে দিল৷ আন্দালিবের মতো নোংরা নরকের কীটকে আর নিজেদের জীবনে জায়গা দিতে চায় না সারজিম।
সময় গড়াতে লাগল। জ্যোতির গর্ভাবস্থার বয়স যখন পাঁচমাস, তখন জানা গেল নৈশীও অন্তঃসত্ত্বা। আরেকবার খুশির জোয়ার এলো ওদের জীবনে।
নৈশী অবশ্যে আগেই বুঝতে পেরেছিল ব্যাপারটা। পরে নিশ্চিত হয়ে সারজিমকে সারপ্রাইজ দিল ও। কোনো নাটকীয়তা নয়৷ সারজিম অফিস থেকে ফেরার পর ওর সামনাসামনি দাঁড়িয়ে গালে ছোট্ট করে একটা চুমু দিল। সারজিম হেসে প্রশ্ন করল, “ব্যাপারটা কী? আজ বাসায় ফিরতে না ফিরতেই এত ভালোবাসা যে?”
নৈশী ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে আস্তে করে বলল, “অভিনন্দন সারজিম, তুমি বাবা হতে চলেছ।”
সারজিম বলল, “আলহামদুলিল্লাহ।” তারপর নৈশীর মতো একইরকমভাবে ওর গালে একটা চুমু দিয়ে বলল, “তোমাকেও অভিনন্দন নৈশী, হবু মা হওয়ার জন্য। বাসার সবাই জানে খবরটা?”
“এখনও না। সবার আগে আপনাকেই জানালাম৷ কাল সবাইকে বলব ইনশাআল্লাহ।”
সারজিম বলল, “শান্তি পাচ্ছি না একদম, বুঝলে। এখন তোমার সাথে সাথে থাকতে ইচ্ছে করছে। অথচ কালই অফিসিয়াল কাজে বান্দরবান যেতে হবে এক সপ্তাহের জন্য।”
নৈশী সারজিমের গাল টেনে বলল, “এক সপ্তাহের ব্যাপার তো। দেখতে দেখতে চলে যাবে। এতে মন খারাপ করার কিছু হয়নি সাহেব।”
সেদিন অনেক রাত অব্দি গল্প আর খুনশুটিতে মেতে থাকল ওরা। কথা নৈশীই শুরু করল আগে। “অনেকগুলো দিন চলে গেল সারজিম। সেই বিয়ের রাতে তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আমাকে পছন্দ করা স্বত্বেও আগে কেন বলনি? তখন বলেছিলে পরে বলবে সব। কিন্তু আজ পর্যন্ত শোনা হয়ে ওঠেনি তোমার কথাগুলো। আজ সেগুলো শুনতে চাই তোমার মুখ থেকেই।”
সারজিম নৈশীকে নিজের খুব কাছে টেনে নিয়ে বলতে শুরু করল, “আমি ছোটবেলা থেকেই প্রচন্ড বাস্তববাদি ছিলাম। নিজের পছন্দের জিনিসটা সংকোচহীনভাবে অকপটে চেয়ে ফেলতাম। তারচেয়ে বড় কথা আমি ‘না’ শব্দটা এক্সেপ্ট করতে পারতাম খুব সহজে। কোনো কিছু চেয়ে পাইনি, ইটস ওকে। আমি মেনে নিতাম সেটা, ভাবতাম আল্লাহ আমার ভাগ্যে লিখে রাখলে আমি একদিন ঠিকই পাব। আর যদি চেয়েও না পাই তাহলে ভেবে নিতাম, সেটা হয়তো আমার জন্য মঙ্গলজনক হবে না। সেজন্যই আল্লাহ আমাকে সেটা পেতে দেননি।
এবার আসল কথায় আসি। তোমার ফটো আমি প্রথম সাব্বিরের কাছেই দেখেছিলাম। প্রথম দেখাতেই পছন্দ হয়ে গেল তোমাকে। তখন আমার একাডেমিক লাইফ শেষ হয়নি। চাকরি বাকরি কিছু করি না তবুও মায়ের কাছে গিয়ে সরাসরি বললাম তোমাকে বিয়ে করতে চাই। মা জানেন আমি সিরিয়াস প্রকৃতির ছেলে তাই তিনি মেনে নিলেন আমার আবদার। ছোট খালাম্মা মানে তোমার মায়ের সাথে কথা বললেন সেদিনই।
তোমার মা তোমার সাথে আলাপ করলেন কিন্তু তুমি বারণ করে দিলে। পড়াশোনার মধ্যে তুমি বিয়েশাদির ঝামেলায় যেতে চাও না।”
নৈশীর চকিতে মনে পড়ে গেল সব। ও কন্ঠে বিষ্ময় ঢেলে বলল, “মনের মধ্যে তুমি তখন আসন গেড়ে বসেছিলে, সেজন্যই পড়াশোনার বাহানায় বিয়েতে অমত করেছিলাম। অথচ সেটা তোমার দেওয়া প্রস্তাবই ছিল। আমি আসলেই একটা বোকার হদ্দ। সেদিন মায়ের থেকে পুরো কথাটা যদি একবার শুনতাম”
সারজিম হাসল। বলতে শুরু করল ও আবার
“খালাম্মা বললেন তোমার গ্রাজুয়েশনের পর তিনি তোমার সাথে এই বিষয়ে কথা বলবেন আবার। কিন্তু যদি তুমি মত দাও তাহলেই কেবল কথা এগুবে৷ নানাজান মানে তার বাবার মতো স্বার্থপর তিনি হতে পারবেন না। জীবনসঙ্গী নির্বাচনের ব্যাপারে তোমার সিদ্ধান্তই অগ্রাধিকার পাবে৷
যেহেতু সবটা অনিশ্চিত ছিল তাই আমার গ্রাজুয়েশনের আর চাকরি পাওয়ার পরে মা চেয়েছিলেন অন্য কোথাও মেয়ে দেখতে। কিন্তু এরকম মাঝপথ থেকে সরে যেতে আমার মন সায় দিচ্ছিল না। এমন নয় যে তোমাকে না পেলে আমার জীবন থেমে থাকত। কিছুটা খারাপ লাগলেও আমি এগিয়ে যেতাম সামনে। কিন্তু আমি আসকে তোমার থেকে একটা ক্লিয়ার কাট অ্যান্সার চাইছিলাম, হ্যাঁ অথবা না।
আমি অপেক্ষা করতে থাকলাম। তোমার অ্যাকাডেমিক পড়াশোনা শেষ হওয়ার আগেই একে একে খালাম্মা আর খালু দুজনেই মারা গেলেন। খালুর মৃত্যুর পর মা ভয় পাচ্ছিলেন। যদিও খালু মাকে বলে রেখেছিলেন। তিনি যদি বেঁচে না থাকেন, তাহলে তোমার গ্রাজুয়েশনের পর মা যেন আমাদের বিয়ের ব্যাপারে কথা বলে তোমার চুড়ান্ত মতামত নেয়৷ তবুও মায়ের মনে হয়েছিল যদি তুমি ওখানেই বিয়ে করে সেটেল হয়ে যাও তাই মা আগেভাগেই তোমাকে সব বলে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমি বারণ করলাম মাকে। এমনিতেই খালাম্মা এবং এবং খালুর মৃত্যুর শোক তোমার মাথার উপরে, তারপরে আবার পড়াশোনার চাপ, এরমধ্যে নতুন কোনো টেনশন দিতে চাইছিলাম না তোমাকে। মাকে বললাম, তুমি দেশে ফেরার পর যেন তোমার সাথে সরাসরিই সবটা আলাপ করে নেয়।
একসময় তোমার আসার তারিখও ফিক্সড হয়ে গেল। কথা ছিল আমি, মা আর সাব্বির মিলে তোমাকে আনতে যাব৷ কিন্তু হঠাৎ করে আমার অফিসিয়াল খুব ইম্পর্টেন্ট একটা কাজে থাইল্যান্ড যেতে হলো। বাধ্য হয়েই তাই আন্দালিব কে পাঠালাম। আর সেখানেই সবচেয়ে বড় ভুলটা করলাম আমি, আন্দালিবকে বিশ্বাস করে৷ তোমার প্রতি আমার অনুভূতি তৈরি হওয়ার প্রথম দিন থেকেই সবটা জানত আন্দালিব, আমি নিজেই ওকে বলতাম। ও আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু ছিল। এমনকি সাব্বির আমাকে বড়ভাই হিসেবে যতটা সম্মান করে ঠিক ততটা আন্দালিবকেও করত। মা যেদিন থেকে জানতে পেরেছিল যে আন্দালিবের বাবা-মা নেই, সেদিন থেকে আমার চেয়ে কম ভালোবাসেননি কখনও ওকে৷ সবকিছু জানা স্বত্বেও ও যে এরকম বিট্রে করবে আমার সাথে সেটা আমি কল্পনাও করিনি।
সাব্বির ফোনে আমাকে সব জানাত। আন্দালিব নানা ছুতোয় তোমার সাথে দেখা করছে এসব বলত। এমনকি আন্দালিব যেদিন তোমাকে প্রপোজ করল সেদিনই সেই কথা আমাকে বলে দিয়েছিল সাব্বির। মাও জানত সব। মা চেয়েছিলেন আমার ব্যাপারে সবটা তোমাকে বলে দিতে কিন্তু এবারও আমি বাধা দিলাম। মনে হলো, আন্দালিবের প্রতি যদি তোমার পজিটিভ অনুভূতি থাকে তাহলে শুধু শুধু আমার কথা শুনে বিব্রত হবে। তারচেয়ে অপেক্ষা করে দেখি কিছুদিন। যদি আন্দালিবকে তুমি রিজেক্ট করে দাও তখন নাহয় ভেবে দেখা যাবে।
তাছাড়া মনে হচ্ছিল, হয়তো তুমি আন্দালিবকেই চুজ করবে। আন্দালিবের বিশাল আলিশান বাড়ি আছে, গাড়ি আছে সেই তুলনায় আমার কিছু নেই। বিশাল পারিবারিক ব্যাবসার হাল ধরেছে আন্দালিব৷ আর আমি ছাপোষা চাকুরিজীবী। আন্দালিব দেখতেও আমার চেয়ে সুন্দর। সব মিলিয়ে মনে হলো হয়তো আন্দালিবকেই মনে ধরবে তোমার।”
“আমার মা আমাকে সবসময় শিখিয়েছে, মানুষকে তার বাহ্যিক সৌন্দর্য নয়, মনের সৌন্দর্য দিয়ে বিচার করতে হয়। তাছাড়া ধবধবে ফর্সা গায়ের রঙ থাকা মানেই যে সুন্দর, সেটা তোমাকে কে বলল?
আর রইল তার বাড়ি, গাড়ি আর ব্যবসার কথা? আমি অহংকার করছি না তবে বাবা আমার জন্য যতটুকু রেখে গেছেন তা দিয়ে ওরকম একটা কোম্পানি আমি কিনে নিতে পারি যেকোনো সময়।
কিন্তু তুমি একটা কথা বলো তো, আন্দালিব এতবড় একটা বেইমানি করল তোমার সাথে। তারপরেও তুমি সব মেনে নিয়ে হাসিমুখে তার সাথে কথা বলতে কেন?”
“তোমার জন্য। আন্দালিবের সাথে যেহেতু তোমার একটা সুসম্পর্ক ছিল। এবং বিয়ে হওয়ার সম্ভাবনাও ছিল। তাই না চাইলেও ওর সাথে বন্ধুত্বটা রেখেছিলাম।”
“এখন আমার খুব রাগ হচ্ছে তোমার উপর। কেন তুমি একবার নিজের মনের কথাগুলো বললে না আমাকে? যদি আন্দালিবের মতো ওরকম একটা বাজে লোকের সাথে বিয়েটা হয়ে যেত। তাহলে এত ভালো একটা বর আমি কোথায় পেতাম?”
সারজিম উত্তর দিল, “তোমাকে আমি পছন্দ করতাম নৈশী। কিন্তু তোমার দিকে থেকে কিছু ছিল নাকি আমার অনুভূতি একতরফাই ছিল সেটা আমি জানতাম না৷ তুমি সম্পর্কে শুধুই আমার খালাতো বোন ছিলে। এমনকি তোমার সাথে একটাদিন আমার কথা পর্যন্ত হয়নি। কোন অধিকারে তোমাকে নিজের মনের কথাগুলো বলি বলো তো?”
নৈশী হঠাৎ প্রশ্ন করল,
“আচ্ছা আন্দালিব যদি আবারও আমাকে ওর লাইফে চায়?”
“জ্যান্ত পুঁতে ফেলব ওকে। আগের নৈশীর উপর আমার কোনো অধিকার ছিল না কিন্তু এখনকার নৈশীর শরীর, মন সবকিছুর উপর শুধুই আমার একচ্ছত্র আধিপত্য থাকবে। এরপর তোমার দিকে কেউ চোখ তুলে তাকালেও তার খবর আছে।”
সারজিমের কন্ঠস্বরে রাগের উত্তাপ টের পেল নৈশী৷ আগেরদিন রাতেও আন্দালিব নৈশীকে নিজের ভালোবাসার গভীরতা বর্ণনা করে বিশালাকৃতির অনেকগুলো টেক্সট করেছে। সেই কথা সারজিম বলবে ভেবেছিল ও। কিন্তু সারজিমের রাগের বহর দেখে আর সেসব কথা তুললা না ও। তারচেয়ে সারজিম বান্দরবান ট্যুর থেকে ফিরলে নাহয় এসব বলা যাবে।
পরেরদিন সকাল সকালই রওয়ানা হলো সারজিম৷ ওর অফিসের বস যাবে আরও একদিন পর। সারজিমকে যেতে হবে একদিন আগেই৷ সারজিম বাসার সবার থেকে বিদায় নিল। আফরোজা বেগমের দিকে তাকিয়ে হেসে বলল, “নৈশীর দিকে খেয়াল রেখো আম্মা। আমি আসছি।”
বরাবরের মতো ছেলের হাসিমুখ দেখে নজর লাগার ভয়ে চোখ নামিয়ে নিলেন আফরোজা বেগম৷ কিন্তু মনের মধ্যে কেমন একটা উচাটন টের পাচ্ছিলেন।
সারজিম বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর নৈশী দৌড়ে ব্যালকনিতে গেল। সারজিম রাস্তায় নেমে আবার তাকাল ব্যলকনির দিকে। তারপর হাত নেড়ে নৈশীকে বিদায় জানিয়ে সামনে পা বাড়াল। নৈশী তাকিয়েই থাকল রাস্তার দিকে যতক্ষন না সারজিম চোখের আড়াল হয়ে গেল।
কথা ছিল ওখানে পৌঁছেই সারজিম ফোন করে জানাবে। কিন্তু গভীর রাত হয়ে যাওয়ার পরেও সারজিমের কল এলো না। নৈশী কল দিল অনেকবার, ফোন সুইচড অফ। পরেরদিন কল করা হলো সারজিমের বসকে। সে জানাল, বান্দরবান যে রিসোর্টে গিয়ে সারজিমের ওঠার কথা ছিল সেখানে সারজিম পৌঁছায়নি আগেরদিন। তৎক্ষনাৎ থানায় জিডি করা হলো। সাব্বির ওর একদল বন্ধুবান্ধব নিয়ে বান্দরবান রওয়ানা হলো সারজিমকে খোঁজার উদ্দেশ্যে। এক সপ্তাহ চলে গেল। ব্যর্থ সাব্বির ফিরে এলো বাসায়৷ ঘরে ঢুকে মাকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো হাউমাউ করে কাঁদল,
“কোথাও পেলাম না, আম্মু। এত খুঁজলাম সবাই মিলে তারপরেও পেলাম না। ভাইয়া আমাদের একা করে দিয়ে কোথায় হারিয়ে গেল।”
ঘরের প্রত্যেকটা সদস্যই তখন কাঁদছে। শুধু নৈশী সোফার এককোনে বসে শূন্যদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল। ভেতরে ভেতরে ভেঙে চুরমার হয়ে গেলেও বাহ্যিক দিক থেকে শক্ত থাকার প্রাণপণে চেষ্টা করে যাচ্ছিল ও। ওর ভালো থাকার সাথে যে আরও একজনের ভালো থাকা জড়িয়ে আছে এখন। সারজিম হারিয়ে গেছে কিন্তু যাওয়ার আগে নৈশীর জীবনের সবচেয়ে বড় উপহারটা দিয়ে গেছে ওকে।
২১.
“বহুদিন ভালোবাসাহীন,
বহুদিন উথালপাথাল
বহুদিন কারো হাত পড়েনি কপালে
বহুদিন দুচোখের অশ্রু কেউ মোছায়নি আর;
বহুদিন দূর দ্বীপে বহুদিন একা নির্বাসনে
একফোঁটা দেয়নি তৃষ্ণার জল কেউ
বহুদিন কেউ পাঠায়নি একখানি নীলবর্ণ খাম
বহুদিন ভালোবাসাহীন, বহুদিন এলোমেলো।
বহুদিন বুকের ভেতরে এই খাঁ খাঁ গ্রীষ্মকাল
দীর্ঘ গুমোট
একবিন্দু জল কেউ দেয়নি সস্নেহে…।”
চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ে অবিরত। কিন্তু কন্ঠস্বর নির্বিকার। ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে দূর দিগন্তে তাকিয়ে নৈশী আওড়ে যায় কবিতার লাইনগুলো। হৃদয় চিড়ে বেরিয়ে আসে হাহাকার। এই ব্যালকনি, হ্যাঁ, এখান থেকেই শেষবার নৈশী দেখেছিল সেই হাসিমুখ। খরস্রোতা নদীর মতো বয়ে চলে সময়। কেউ চাইলেও তাকে থামাতে পারে না। সময় এগিয়ে চলে তার নিজের ছন্দে আর গতিতে। সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে চারপাশের মানুষগুলোরও পরিবর্তন আসবে।
সারজিম নিখোঁজ হয়েছে চারমাস হতে চলেছে প্রায়৷ এই চারমাসে অনেককিছুই বদলেছে।
(চলবে ইনশাআল্লাহ)
নোট:- এই পর্বের কবিতাংশটি মহাদেব সাহার কবিতার অংশবিশেষ।