কার্নিশ_ছোঁয়া_অলকমেঘ পর্ব-৩৭+৩৮+৩৯

0
199

#কার্নিশ_ছোঁয়া_অলকমেঘ
লেখনীতে: মিথিলা মাশরেকা

৩৭.

শার্লি, রুমন ক্যাফেটেরিয়ায় বসে চা খাচ্ছিলো আর প্রীতিকার্নিশ নিয়ে কথা বলছিলো। দুর থেকে সেটা দেখে তিননম্বর সিগারেটটায় টান দিলো তুল্য। প্রথমবার রুমনকে দেখে নিজের চোখকে বিশ্বাসই করেনি ও। চিনতেই পারছিলো না বলা চলে। রুমনের পোশাকআশাকে এতোটাই বদল এসেছে। শার্লিকে একটা ছেলের সাথে এমন হাসিখুশিভাবে বসতে দেখে শুরুতে রাগ হলেও, রুমনকে চেনার পর কিছুক্ষণের জন্য কমেছিলো সেটা। কিন্তু রুমনও একটা ছেলে, আবারো এটা মনে পরতেই রাগ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে তুল্যর। সিগারেট মাটিতে ফেলে, পায়ে পিষে এগিয়ে গেলো ও। শার্লি ওকে এগোতে দেখলো। তারপর ইচ্ছে করেই রুমনের ঘড়িটা ঠিক করার ভঙিমা করলো ও। তুল্যর রাগ তরতরিয়ে বাড়ে। হনহনিয়ে পা চালিয়ে এসে রুমনের পাশে পরিপুর্ণ ভাব নিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে গেলো ও। বললো,

– তোর পান্জাবীর স্টক আউট হয়ে গেছে রে রুমন? শার্টপ্যান্ট পরে খুব জেন্টলম্যান সাজছিস দেখছি!

রুমন টেবিলে হাত রেখে গালে হাত দিয়ে বসলো। মুচকি হেসে বললো,

– তুমি ঠিক কোনবেশে আমাকে চাইছো তুল্যবাবু? লক্ষণ তো ভালো না তোমার।

তুল্য এমন জবাব আশা করেনি৷ সোজা হয়ে ঠিকঠাক হয়ে বসলো ও। একবার শার্লিকে দেখে নিয়ে কড়াভাবে বললো,

– মেয়েদের থেকে দুরে থাক!

– কেনো? তোমার জ্বলে?

কথাটাতে সত্যিই জ্বলে উঠলো তুল্য। একদম তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠার মতোই। তেড়ে রুমনের দিকে হাত বাড়াচ্ছিলো ও। কিন্তু কোত্থেকে অন্য আরেকটা হাত এসে ওর হাত ধরে ফেলে। তুল্য মেজাজ নিয়ে পাশে তাকায়৷ দেখে বা হাতে ডাল পরোটার প্লেট ধরে ডানহাতে শান্ত ওর হাত ধরে আছে। পেছনে টিটুও দাড়ানো। পরোটা ডালে চুবিয়ে খেতে খেতে যেনো দ্বন্দ্ব-যুদ্ধের মজা নিচ্ছে সে। শান্ত তুল্যর হাত ছেড়ে দিয়ে বললো,

– ওকে হ্যারাজ করা বন্ধ কর তুল্য! নইলে তোর এগেইনিস্টে আমি সোজা ডিন বরাবর নালিশ জানাবো।

তুল্য টেবিলে আওয়াজ করে চড় মেরে উঠে দাড়ালো। ওকে ওভাবে দাড়াতে দেখে শার্লি-রুমনও ভয়ে দাড়িয়ে যায়। টিটু একপা পিছিয়েছে। কিন্তু শান্ত স্থির। কোনোরুপ শব্দ ছাড়াই কেবল চাওনিতে ওর তুল্যর মাঝে একটা যুদ্ধ চলছে যেনো। একটুসময় ওভাবে থেকে শার্লির দিকে অগ্নিদৃষ্টি তাক করলো তুল্য। পরমুহূর্তেই চলে গেলো ওখান থেকে।
শার্লি শুকনো ঢোক গিললো একটা। ও বুঝলো, আজ আর ওর রক্ষে নেই। আলফেজ পুত্রর রাগ আজ ওকে ভষ্মই করে দেবে। ও নিশ্চিত!
শান্ত কিছুক্ষণ শার্লির ভয়টা চেয়েচেয়ে দেখলো। রুমন বললো,

– শ্ শান্ত ভাই? আপনি শান্ত হোন। তুল্য এমনই আসলে। আমি কিছু মনে করিনি।

শান্ত জবাব দিলো না কোনো। দুরের টেবিলে গিয়ে খাবার খেতে লাগালো। ধপ করে চেয়ারে বসে গেলো শার্লি-রুমন। তার দু সেকেন্ড পরেই ক্যাফেটেরিয়ায় ঢোকে তাথৈ। একটা কোকের কাচের বোতল নিয়ে এসে বসে গেলো শার্লিদের টেবিলে। দুজনের রঙ চটে যাওয়া চেহারা দেখে বললো,

– কি সমস্যা?

তাথৈয়ের আওয়াজ শুনে ওরা দুজনেই বুঝলো, সকালসকাল মেজাজ চরে আছে আলফেজ ডটারেরও। একটা ছোট শ্বাস ফেললো রুমন। বললো,

– তোর কি হয়েছে? রেগে আছিস কেনো?

– ক্লাস দেরিতে নেবে সেটা আগে বলতে পারে না? পড়তে সেমিনারে গেলাম, সেখানে যায়গা নেই!

শার্লি কপাল ধরে বসে রইলো। ভাবতে লাগলো এই দুই ভাইবোনকে ওপরওয়ালা ঠিক কি ধাতুতে গড়িয়েছেন। মিনমিনে গলায় বললো,

– তাশদীদ ভাইয়ের ফোনে নাকি তোর কক্সবাজারের সিঙ্গেল ছবি আছে তাথৈ। জানিস এ বিষয়ে কিছু?

অস্থির হয়ে থাকা তাথৈ মুহুর্তেই নিরব হয়ে যায়। বিস্ময়, আনন্দ সবটা সংবরন করে প্রশ্নসূচক চাইলো ও। শার্লি বললো,

– তামজীদ বলেছে। ও নাকি দেখেছে তাশদীদ ভাইয়ের ফোনে তোর ছবি আছে।

তাথৈ জবাব দিলো না। কথাটা শুনে ওর ভেতরে কি ধরনের সুখ অনুভূত হচ্ছে, তা ও ধারণাও করতে পারছে না। শার্লি দেখলো ও ব্যস্ত হয়ে পরছে। হাতের কোকের বোতল রুমনকে ঠেলে দিচ্ছে, আবার নিজের দিকে নিচ্ছে, স্ট্র নিয়ে ব্যাগে ঢুকাচ্ছে, আবার কলম বের করে কোকের বোতলে ঢুকাচ্ছে। রুমন লুকিয়ে-চুরিয়ে হাসছে এসব দেখে। শার্লির নিজেরও হাসি পেলো। হাত কপাল থেকে সরিয়ে তাতে মাথা ঠেকালো। শব্দহীন হেসে বললো,

– সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে পড়বি চল।

– লাইব্রেরী কার্ড নেই আমার।

– আজ করে নিস। চল।

রুমন উঠে দাড়িয়ে ব্যাগ কাধে নিলো। তাথৈ বারন করলো না। তিনজনে মিলে এগোলো কেন্দ্রীয় পাঠাগারে। শার্লি লক্ষ করলো, তাথৈয়ের হাতপা মৃদ্যু কাপছিলো। রিসেপশনে গিয়ে স্টুডেন্ট আইডিকার্ড দেখিয়ে লাইব্রেরী কার্ড বানানোর নিয়মকানুন শেষ করে ওরা। চলে আসতে যাবে, পেছন থেকে অকস্মাৎ চেনা স্বরে নিজের নাম শুনতে পায় তাথৈ। শার্লি-রুমন পেছনে তাকিয়ে দেখে পেছনে তাশদীদ দাড়ানো। কিছু না বলে ওরা দুজন চলে যায়। তাথৈ পেছন ফিরে স্থির রইলো আর তাশদীদ এগোলো। তার পরনে কালচে খয়েরী আর সাদা চেইকের শার্ট, কাধে ব্যাগ, হাতে দুটো মোটামোটা বই। তাশদীদ বললো,

– জীবনে যতোযাই হও না কেনো, এনআইডির ছবি সেই গরিবির মতোই হবে। তোমার ছবিটাকেও ওরা ছাড় দেয়নি দ্য তাথৈ আলফেজ! স্তু স্তু! আফসোস!

তাথৈ ভ্রু কুচকালো। তাশদীদ হাতের আইডিকার্ড ওর সামনে তুলে ধরে বললো,

– রিসেপশনে ফেলে এসেছিলে।

তাথৈ হাতে নিলো কার্ডটা। বুঝলো স্টুডেন্ট আইডি বের করতে গিয়ে ওটাও হয়তো পরে গিয়েছিলো। তাশদীদ একবার তাথৈয়ের পেছনেউকি দিয়ে শার্লিদের খুজে বললো,

– ওরা চলে গেলো কেনো?

– হয়তো আপনার সাথে দেখা করতে চায়না। তাই!

তাথৈয়ের জবাবটা মোটেও ভালো লাগলো না তাশদীদের। মনেমনে হয়তো বললো, ‘এমন কর্কশ মেয়ের উপকার করাটা উচিত না!’ একপা এগিয়ে বেশ হেয়ালি করেই বললো,

– ভুল জানো তুমি। তাশদীদ ওয়াসীরের সাথে দেখা করার জন্য মানুষ লাইন দিয়ে দাড়ায়।

‘সত্যিটাই বলেছো তাশদীদ ওয়াসীর। কিন্তু আসল কথা হলো, সে লাইনের শুরুতে আমি দাড়িয়ে গেছি। এন্ড ট্রাস্ট মি, আমি পেছনের কাউকে আগানোর সুযোগ দেবো না।’
মনেমনে এতোগুলো কথা স্বীকার করলেও মুখে কেবল ‘থ্যাংকস্’ বললো তাথৈ। তাশদীদ মজা করেই বললো,

– তোমার ধন্যবাদ পেয়ে আমি ধন্য।

পাশ কাটাচ্ছিলো তাশদীদ। কি মনে করে আবারো পেছন ফিরলো ও। বললো,

– বাই দা ওয়ে, হ্যাপি বার্থডে তাথৈ! সব সুখ তোমার হোক।

তাথৈ স্তব্ধ। মোবাইলে দৃষ্টি রেখে লাইব্রেরীর দিকে চলে গেলো তাশদীদ। তাথৈয়ের চোখ খুশির জলে ভরে ওঠে। শেষবার জন্মদিনের উইশটা ওকে তুল্য করেছিলো। বিদেশ যাওয়ার আগে। তারপর এই উইশ পাওয়ার সব রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে ও। কাউকে সুযোগ দেয়নি। টুপটাপ দুফোঁটা পানি বেরিয়ে আসে ওর চোখ থেকে। চোখ মুছতে মুছতে এক ছুটে বাইরের কনফেকশনারির দোকানে চলে আসলো তাথৈ। হাঁপাতে হাঁপাতে, তবে চোখমুখে উচ্ছ্বাস নিয়ে দোকানীকে বললো,

– ওয়ান নিউটেলা চকলেট কেক প্লিজ!

দোকানী অন্য ক্রেতার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। তাথৈয়ের কান্না আর হাসিমিশ্রিত আনন্দ দেখে সেসব ছেড়ে এগিয়ে আসলেন তিনি। বললেন,

– কয় পাউন্ড?

– দ্য লার্জ ওয়ান! সবার বড়টা!

মাথা ওপরনিচ করলেন দোকানী। বড় কেকটা বের করতে করতে বললেন,

– ওপরে কি লিখবো?

– হ্যাপি বার্থডে!

– কোনো নাম?

তাথৈ মনে করলো, তাশদীদ ওকে নাম ধরে উইশ করেছে কি না। পরে নাম বলে দিলো দোকানীকে। ভদ্রলোক কথাটা লিখলেন। তাথৈ ফোন বের করে রুমনকে ম্যাসেজ করলো। তারপর কেক, চাকু, পার্টি স্প্রে, জন্মদিনের টুপি সব কিনলো। সেগুলো নিয়ে এসে বসলো টিএসসির মাঠে। অপেক্ষা না করে কেকটা একাএকাই কাটলো তাথৈ। একফোটা চোখের জল ফেলে হাসিমুখে নিজেনিজেই বললো,

– হ্যাপি বার্থডে তাথৈ। সব সুখ তোর হোক!

কেকের বড়সর একটা অংশ মুখে পোরে তাথৈ। সেটা শেষ করে আবারো আরেকটুকরো কাটে ও। এই কেক ওর পছন্দের। খায়নি বহুকাল। এরমাঝেই রুমন শার্লিকে সাথে করে সেখানে হাজির হলো। কিন্তু এখানে এসে জন্মদিনের সব জিনিসপত্র দেখে মুখ হা হয়ে যায় ওদের দুজনের। তাথৈ কাদছেও, হাসছেও। হতবিহ্বল হয়ে শার্লি বসে যায় ওর পাশে। তাথৈ একটা টুপি মাথায় পরে ওরদিক স্প্রে এগিয়ে দিলো। জলভরা চোখে বললো,

– উইশ মি ডুড! আ’ম দ্য বার্থডে গার্ল। তাশদীদ ওয়াসীর উইশ করেছে আমাকে।

শার্লি বিমুঢ়। ওর নিজের চোখের কোনেও জল জমেছে। রুমন মাথা নেড়ে নিশব্দে হাসলো। এতোগুলো বছরের বন্ধুত্বে প্রথমবারের মতো তাথৈ ওদেরকে উইশ করার সুযোগ দিয়েছে। ভালোবাসা মানুষকে এভাবেও বদলে দেয়।

সাভারের প্রান্তীয় এলাকা। মুলসড়কটা বেয়ে নামলে একটা শালবাগান। আর বাগানের খানিকটা ভেতরে কাঠ রাখার জন্য টিনশেডের একটা বড়সর গুদামঘর। লম্বামতোন ঘরটার টিনের ছাদটাও অনেক উচু। টিনশেডে সৌরবিদ্যুতের চার্জারে রোদ পরে সেটা চিকচিক করছে। ঘরের ভেতরে দক্ষিণদিকটায় খড় রাখা। সেখানে তিনচারটে খরগোশ। খড়ের গাদার পাশেই একাধারে চার চারটে কাচের এ্যাকুরিয়াম। পানিভরা এ্যাকুরিয়ামগুলোর একটাতে কয়েকপ্রকার মাছ, একটাতে কয়েকপ্রকার সামুদ্রিক ঘাস, একটাতে ঝিনুক, আরেকটা আপাতদৃষ্টিতে ফাঁকা। এ্যাকুরিয়ামের পেছনে একটা কাঠের তাক। তার চারটে স্তরে ছোটবড় বয়াম রাখা। পশ্চিমে একটা লোহার গ্রিল করা বাকানো জানালা আছে৷ সেখানটায় কয়েকরকমের গাছ, ফুল৷ ফুলের ওপর দু চারটে প্রজাপতিও দেখা যায়৷ তবে সেগুলোও পুঁজি করা। পলিথিনের দেয়াল তুলে তাদের আবদ্ধ করা হয়েছে ওই সীমাতেই। বেশ অনেকগুলো টব রাখা আছে। একেক টবে একেক রকমের গাছ। উত্তরদিকে থাইগ্লাসের জানালা। তার সামনে বসানো টেবিলটায় কাজ করছে তাশদীদ। মোবাইলের রিংটোন শুনে অণুবীক্ষণ থেকে চোখ সরালো ও। হ্যান্ড গ্লাভস খুলতে খুলতে তাশদীদ পাশের টেবিলের দিকে এগোলো। স্ক্রিনে রিংকির বাবার নম্বর। তাশদীদ কল রিসিভ করে সালাম দিলো। ওপাশ থেকে হন্তদন্ত স্বরে ভেসে এলো,

– হ্ হ্যালো? তাশদীদ? তাশদীদ রিংকি অনেকক্ষণ হলো ঘরের দরজা লক করে রেখেছে। দরজা খুলছে না, রেসপন্স করছে না, আমাদের কোনো কথা শুনছে না। তুমি একটু আসো প্লিজ! প্লিজ তাশদীদ!

তাশদীদ হচকিয়ে যায়। অপ্রস্তুত হয়ে বলে,

– দরজা লক করে রেখেছে মানে? কি হয়েছে?

– ঢ্ ঢাবি এডমিশনের রেজাল্ট দিয়েছে কিছুক্ষণ আগে। ও্ ওর চান্স হয়নি! এজন্য…

ভদ্রলোক কেদে উঠলেন। পাশেই ওনার মিসেস হাউমাউ করে কাদছে আর দরজা ধাক্কাচ্ছে। চোখ বন্ধ করে কপাল চেপে ধরে তাশদীদ। একদন্ড সময় নিয়ে কঠোর আওয়াজে বললো,

– ওকে ডাকতে থাকো আঙ্কেল। কথা বলতে থাকো। আর আশপাশে কাউকে ডেকে দ্রুত দরজা ভেঙে ফেলার ব্যবস্থা করো। আমি আসছি।

কল কেটে দ্রুততার সাথে ঘরটা থেকে বেরিয়ে আসলো তাশদীদ। ভাড়ায় চালিত বাইকে করে মিনিটদশেকের মধ্যে এসে পৌছালো রিংকিদের বাসায়। একপ্রকার দৌড়ে সিড়ি বেয়ে উপরে ওঠে ও। বাসার ভেতরে ঢুকে দেখে রিংকির রুমের সামনে ওর বাবা মা কপালে হাত রেখে ফ্লোরে বসে আছে। রোজি ওর মেয়েকে কোলে নিয়ে পিঠে আস্তেধীরে থাপড়াচ্ছে আর এপাশ ওপাশে হাটছে। তাশদীদকে দেখে রোজি থেমে যায়৷ অদ্ভুতভাবে ওর চোখ ভরে ওঠে। রোজি অস্ফুটস্বরে তাশদীদের নাম ধরে ডাকলো। ওর বাবা তখনতখন চোখ তুলে তাকালো। তাশদীদ শুকনো ঢোক গিললো। ওর মনেও ভয় ঢুকে গেছে, ও পৌছাতে দেরি করে ফেলেছে কিনা। রিংকির মা তাশদীদের উপস্থিতি টের পেতেই হুড়মুড়িয়ে পায়ে পরে গেলো ওর। তাশদীদ তাকে ধরে তৎক্ষনাৎ নিচে বসে গেলো। মহিলা কাদতে কাদতে বললেন,

– আমার মেয়েটাকে বাচাও তাশদীদ! আমার মেয়েটাকে বাচাও!

তার কথা শুনে তাশদীদ বুঝলো এখনো সবটা হাতের বাইরে যায়নি। ‘শান্ত হও আন্টি। রিংকির কিছু হবেনা।’ একটুকো বলে মহিলাকে ছেড়ে দিলো তাশদীদ। ও নিজে দরজায় আঘাত করতে যাচ্ছিলো। রোজি বললো,

– তাশদীদ থামো! রিংকি বলেছে দরজায় আঘাতের আওয়াজ পেলে ও তখনতখন সুইসাইড করবে।

তাশদীদ তৎক্ষণাৎ থেমে যায়৷ রোজির বাবা নিচে পরে থাকা মোবাইলটা এগিয়ে দিলো। তাশদীদ ফোনটা হাতে নেয়। সেখানে একটা ভিডিও ম্যাসেজ। ভিডিওতে রিংকি একটা ব্লেড হাতে ধরে রেখে বলছে, ‘তাশদীদ ভাইকে ডাকো আব্বু। নয়তো আমাকে বাচানোর অন্য যে চেষ্টাই করবে, আই স্যয়ার আই’ল কমিট সুইসাইড দেন এন্ড দেন।’

ভিডিও দেখে মাথার চুল উল্টে ধরলো তাশদীদ। একদন্ড চোখ বন্ধ রেখে, জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে, নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরলো। শার্টের নেমে আসা বা হাতাটা ডানহাতে টান মেরে, রিংকির দরজায় হাতে শব্দ করলো তাশদীদ। উচুগলায় বললো,

– দরজা খোলো রিংকি। এটা আমি। তাশদীদ।

– আমাকে বিয়ে করবেন তাশদীদ ভাই?

দরজার ওপার থেকে এমন কথাটা শুনে তাশদীদ বড়সর একটা ধাক্কা খায়। এই মুহুর্তে এমন কথাটা ওর আশাতীত ছিলো। রোজির মেয়ে ঘুমিয়ে গেছে৷ মেয়েকে কোলে রেখে ও তাশদীদের অবস্থা অনুধাবনের চেষ্টা করলো৷ ও আগেই বুঝেছিলো, বোনের সব জেদের মুলকথা এটাই। রিংকি তাশদীদকে ডেকে এনে এমন একটা পরিস্থিতিতে ফেলবে, এমনটা আন্দাজে ছিলো ওর। তাশদীদ একপলক রিংকির মা বাবার দিকে তাকালো। রিংকির মা পাগলের মতো করে বললো,

– তাশদীদ! রাজি হয়ে যাও বাবা! হ্যাঁ বলে দাও ওকে! আমার মেয়েটা নয়তো যা খুশি করে ফেলবে বাবা! আমি তোমার পায়ে…

তাশদীদ আবারো পিছিয়ে যায়। রিংকির বাবাও আহাজারি করে বললেন,

– আমি ওকে অনেক বুঝিয়েছি তাশদীদ। ও মানেনি। তুমি প্লিজ হ্যাঁ বলে দাও! আমার মেয়েটাকে বাচিয়ে নাও প্লিজ!

অবাক হলো তাশদীদ। শুধু এক রিংকিকে বুঝানোটা হয়তো সম্ভব ছিলো। কিন্তু এই পুরো পরিবারকে ও কি করে বুঝাবে? কি একটা ভেবে পকেট থেকে ফোন বের করলো ও৷ ঠিক তখনই রিংকির বাবার ফোনে ভিডিও কল করলো রিংকি। ফোনটা তাশদীদের হাতে থাকায় ওই কলটা রিসিভ করে৷ রিংকি মলিন হেসে বললো,

– আপনার আমার অনেক আগে থেকেই সম্পর্ক তাশদীদ ভাই। পড়াতে আসার নাম করে আপনি মুলত আমার সাথে প্রেম করতেন। আমাকে বিয়ের মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে গভীর সম্পর্কেও জরিয়েছেন। কিন্তু এখন আপনার আমার থেকে মন উঠে গেছে। আপনি আমার সাথে আর সম্পর্ক রাখতে চাইছেন না। আর যখন দেখলেন আমার চান্স হয়নি, আপনি সেই অযুহাত দেখিয়ে আপনি এখনই সব শেষ করে দিতে চাইছেন। অথচ আমাদের সম্পর্কটা এতোই গভীর যে আপনি আমাকে ছেড়ে গেলে আমি সমাজে মুখ দেখাতে পারবো না। আপনি ছাড়া অন্যকারো স্বামীত্ব বরণের সামর্থ্য আমার নেই। তাই আমি সুইসাইড করতে বাধ্য হয়েছি।

রিংকির কথাগুলো শুনে তাশদীদের পায়ের তলার মাটি সরে যায়৷ অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে চেয়ে রয় ও হাসিমুখে জঘণ্যতম মিথ্যে বলতে থাকা মেয়েটির দিকে। রোজি বিস্ফোরিত চোখে ফোনের স্ক্রিনে তাকানো। তাশদীদের বিরুদ্ধে এতোবড় মিথ্যাচার শুনে ওর নিজেরই ইচ্ছে করছিলো রিংকির গলা টিপে ধরতে। কিন্তু রিংকির কোনোরুপ ভাবান্তর নেই। ও তেমনই হেসে বললো,

– সুইসাইড নোটে এটুকো লেখা যথেষ্ট হবে না তাশদীদ ভাই?

রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে আসে তাশদীদের। চোয়াল শক্ত করে চেয়ে রয় ও রিংকির দিকে। রিংকি বিন্দুমাত্র বিচলিত হলো না। তেমনই মুগ্ধ চোখে চেয়ে তাশদীদের রাগী চেহারাটা দেখতে লাগলো ও। বললো,

– বিশ্বাস করুন তাশদীদ ভাই! আপনি যা যা পড়িয়েছেন, ঠিক তাই তাই প্রশ্নে ছিলো। সব কমন ছিলো আমার। লেখার জন্য হাত নিশপিশ করছিলো! বিশ্বাস করুন! তবুও লিখিনি। এতোগুলো দিন আপনার সবরকম বিরক্তি, উপেক্ষা সহ্য করেছি। আপনাকে পাওয়ার জন্য, এডমিশনকে নোংরার মতো ছুড়ে ফেলাটাও ছিলো আমার কাছে অতি সামান্য ব্যাপার! সেখানে নিজেকে আঘাত করাটাও আহামরি কিছু হবে না। এখন আপনি যাই করার চেষ্টা করুন না কেনো, আমার কাজ শুধু হবে একটা আঁচড়। আমার কিছু হলে আপনার কিছু আসবে যাবে কিনা জানিনা। কিন্তু আপনাকে নিয়ে অপবাদ রটলে তাতে আমার খারাপ লাগবে তাশদীদ ভাই। বিশ্বাস করুন!

তাশদীদ ঘৃণ্য দৃষ্টিতে রিংকির বাবার দিকে তাকালো। সে লোক নিজেও হতবাক। তার মেয়ে এতোটা বিশ্রিভাবে সবটা সাজিয়েছে, সে সম্পর্কে বিন্দুমাত্র আঁচ ছিলো না তার। রিংকি কোনোদিক পাত্তা না দিয়ে হাতে ধরে থাকা ব্লেডটা দেখিয়ে বললো,

– এখানে চারটে রগ দেখা যাচ্ছে তাশদীদ ভাই। বলুন! সবগুলো কাটলে কি বাচার সম্ভবনা আছে? একটু দ্রুত বলুন! আমার হাতে সময় নেই! আপনাকে সময় দেওয়ার মতো চরম ভুল আমি করতে চাইছি না! তাই দ্রুত বলুন প্লিজ! আপনি আমাকে বিয়ে করছেন, কি না?

#চলবে…

#কার্নিশ_ছোঁয়া_অলকমেঘ
লেখনীতে: মিথিলা মাশরেকা

৩৮.

– এখানে চারটে রগ দেখা যাচ্ছে তাশদীদ ভাই। বলুন! সবগুলো কাটলে কি বাচার সম্ভবনা আছে? একটু দ্রুত বলুন প্লিজ! আমার হাতে সময় নেই! আপনাকে সময় দেওয়ার মতো চরম ভুল আমি করতে চাইছি না!

– ডু হোয়াটএভার ইউ ওয়ান্ট।

নির্বিঘ্নে কথাটা বলে ফোনটা সোফায় ছুড়ে মারলো তাশদীদ। কোনোদিক না তাকিয়ে ও বেরিয়ে আসছিলো রিংকিদের বাসা থেকে। রিংকির মা ছুটে এসে ওর পথ আটকে দেয়। আহাজারি করে বলে ওঠে,

– এমনটা করো না তাশদীদ! ওর আবদার মেনে নাও প্লিজ। নইলে ও নিজেকে শেষ করে দেবে! আমার মেয়েটা অনেক জেদী।

– বিয়ে তো তুমি একদিন না একদিন করবেই তাশদীদ! হয়তো এখন ও তোমার জীবনসঙ্গী হিসেবে পছন্দ না, কিন্তু ও তোমার জন্য নিজেকে তৈরী করে নেবে দেখো। আমি কথা দিচ্ছি! ও তেমনই করে নিজেকে তৈরী করবে যেমন তুমি চাও! ও…

তাশদীদ কিংকর্তব্যবিমূঢ়। মেয়ের চিন্তায় এরা স্বামী-স্ত্রী দুজনেই যে অবুঝ হয়ে গেছে তা বুঝলো ও। বললো,

– পাগল হয়ে গেছো তোমরা? তোমার মেয়ে অসুস্থ আঙ্কেল! ওর আমাকে না, মানসিক চিকিৎসার দরকার! তোমরা কোথায় ওকে বোঝাবে তা না আমাকে…

রোজি এগিয়ে আসলো এবারে। বললো,

– রিংকি এখন নিজের মাঝে নেই তাশদীদ। ও এখন সব পারে। নিজের সাথে তোমার সম্মানটাও ধূলিসাৎ করে দেবে ও।

আবারো ভিডিও কল আসে রিংকির বাবার ফোনে। ভদ্রলোক ছুটে গিয়ে কল রিসিভ করতেই হাউমাউ করে কেদে উঠলেন। তাশদীদের দিকে ধরতেই ও দেখলো রিংকির হাতজুড়ে টকটকে রক্ত। ও হাতে ব্লে’ড চালিয়েছে ভেবে দৃষ্টি প্রসারিত হয় তাশদীদের। একমুহূর্তের জন্য ওর মনে হয়েছিলো আর যাই হোক, রিংকি আত্মহত্যার মতো ভয়ংকর পদক্ষেপ নেবে না৷ কিন্তু ওর ধারণা ভুল ছিলো। রিংকির মা আরো জোরে কাদছে, দরজা ধাক্কাচ্ছে। ওদিকে রিংকি টলমলো স্বরে বলে চলেছে,

– সুইসাইড নোটটা কোথায় রাখা সেটা ইন্সপেক্টরকে ম্যাসেজ করবো তাশদীদ ভাই। আপনি বাসা থেকে বেরোলেই টেক্সট সেন্ড হয়ে যাবে। আসুন আপনি।

– ওকে ফাইন। আমি রাজি।

তাশদীদের জবাব শুনে রিংকির বাবা মা কান্না থামালেন তৎক্ষনাৎ। রোজি বিস্ময়ে তাকালো তাশদীদের দিকে। কিন্তু ওই অবস্থাতেও রিংকি হেসে ফেললো। বললো,

– মিথ্যে বলছেন?

– দরজা খোলো।

– আপনি জানেন যদি আপনি কথার খেলাপ করেন, বা কোনোরকম চতুরতা দেখান তাহলে আমি কি করবো?

– আপনার জন্য প্রীতিকার্নিশের বাকি সবাইও ফেঁসে যাবে তাশদীদ ভাই।

সর্বশক্তিতে হাত মুঠো করে নিয়ে নিজেকে সংবরন করলো তাশদীদ। আর রিংকি মুগ্ধ হয়ে সেই রাগ দেখছে। তাশদীদ তেমনি শান্ত কন্ঠে বললো,

– তুমি যা চাইছো, তাই হবে। আমার কাছে আমার আর আমার ফ্যামিলির সম্মানের চেয়ে বড় কিছুইনা। নাও ওপেন দ্যা ডোর।

রিংকির ঠোঁটে বিশ্বজয়ের হাসি ফুটলো। ও হয়তো জানতো ওর শেষ কথায় তাশদীদ রাজি হবে। কল কেটে রিংকি খুলে দেয় দরজা। তাশদীদ একমুহুর্ত দেরি না করে ভেতরে ঢোকে৷ দরজার পেছনের হ্যাঙ্গারে থাকা ওড়না নিয়ে রিংকির হাতে প্যাঁচ দিতে উদ্যত হয়। ওর সে স্পর্শটুকোতে খুশি হয়ে যায় রিংকি। এই ব্যস্ততাই ওকে প্রতিবার তাশদীদ নামে পাগল করে। ওড়না বাধার সময় তাশদীদ খেয়াল করলো ড্রেসিংটেবিলের কোনায় বোতলে লাল তরলজাতীয় কিছু রাখা। ওর বুঝতে বাকি রইলো না কি ঘটেছে৷ রিংকির মা মেয়েকে জড়িয়ে ধরতে যাচ্ছিলো। কিন্তু তাশদীদ তাকে সুযোগ দিলো না। সশব্দে চড় বসালো রিংকির গালে।
পুরো বাসাটা যেমন কোলাহলে পুর্ণ ছিলো, ততোটাই শূনশানের রুপ নেয়। একমুহুর্তের জন্য পাথর হয়ে যায় রোজি আর ওর বাবা মা। চড়ের জন্য রিংকি একপ্রকার উড়ে গিয়ে বিছানায় পরেছে। ওর চারপাশ ঘুরছে। তাশদীদের শক্তপোক্ত হাতের চড়টা খেয়ে গালে হাত রেখে ওমনই উপুড় হয়ে রইলো ও। মাথা তোলার চেষ্টা করেও পারলো না৷ বুঝ ফিরতেই রিংকির মা ‘তাশদীদ!’ বলে চেচিয়ে উঠলো। তাশদীদ গায়ে মাখলো না সে উচুস্বর। শার্টের হাতা ভাজ দিয়ে টেনে দাড় করালো রিংকিকে। বললো,

– এটা এই জঘণ্য মিথ্যেগুলোর জন্য।

রিংকি মাথা ঝারা মারলো। চোখ খোলা রাখার চেষ্টা করেও পারছে না ও। টলছে। আবছা চোখে দেখলো রাগে লম্বা নিঃশ্বাস ফেলছে তাশদীদ। অফ হোয়াইট শার্টের আড়ালে ওর প্রশস্ত বুকের ছাতি ওঠানামা করছে। কিছু বলার জন্য মুখ খুলবে, তার আগে আরো একটা চড় পরে রিংকির গালে। আবারো ঘুরে উঠে বিছানায় পরে যায় ও৷ ওর মা সাথেসাথে বিছানায় গিয়ে মেয়েকে জরিয়ে ধরলো। তাশদীদ বললো,

– আর এটা এই জঘণ্য মিথ্যেগুলোর মাঝে আমার ফ্যামিলিকে ইনক্লুড করার দুঃসাহস দেখানোর জন্য৷

রিংকিকে কয়েকবার ডাকলো ওর মা। কিন্তু সাড়াশব্দ নেই ওর কোনো। আহাজারি করে কেদে উঠলো সে। আওয়াজের জন্য বাসার নিচে লোক জড়ো হয়েছে অনেক আগেই। তাশদীদ একবার জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো। হাতের ঘড়ি ঠিক করতে করতে বললো,

– রিল্যাক্স আন্টি। কোনো হাতটাত কাটেনি তোমার মেয়ে। চড়ের জন্য সেন্সলেস হয়ে গেছে। চাইলে হসপিটালে নিয়ে যেতে পারো।

– তুমি আমার মেয়ের গায়ে এভাবে হাত তুলতে পারো না তাশদীদ!

রিংকির বাবার জোরালো কথায় তাশদীদ চোখ তুলে তাকালো। ওর শান্ত চাওনি দেখে লোক হয়তো কিছুটা দমে গেলেন। তাশদীদ দুইপা এগিয়ে তার চোখে চোখ রেখে বললো,

– রিংকির জেদ তোমরা আমার ওপর চাপাতে পারো না আঙ্কেল। তোমারও সেটা বোঝা উচিত ছিলো।

– যাইহোক! আজকের সম্পুর্ন ঘটনাটা আমি বাবাকে জানাবো। তারপর তোমার সাথে সে কেমন সম্পর্ক রাখবে, সেটা বাবা নিজে ডিসাইড করবে। কিন্তু আমার সাথে তোমাদের কোনো যোগাযোগ থাকছে না। তোমার মেয়ের জ্ঞান ফিরলে ওকে বলে দিও, ওর যা খুশি তাই করতে। তাশদীদ ওয়াসীর ওর সবরকমের ধমকিধামকি দেখে নেবে।

একপলক রোজির দিকে তাকালো তাশদীদ। রোজির চোখ ছলছল করছে। তাশদীদ দ্রুতপদে ও বাসা থেকে বেরিয়ে আসলো। প্রীতিকার্নিশ ঢোকার আগে পুকুরপাড়ে গিয়ে চোখেমুখে পানির ছিটা দিয়ে নিলো। সিড়িতে বসে ওযু শেষ করে, বাসায় ঢুকে নফল নামাজ পরলো। মিসেস ওয়াসীর অসময়ে ওকে নামাজ পরতে দেখে কিছুটা চিন্তা নিয়ে এগিয়ে আসলেন৷ তাশদীদ বইয়ের তাকে বই খুজছিলো। মিসেস ওয়াসীর এসে ছেলের পাশে দাঁড়িয়ে বললেন,

– কি হয়েছে তাশদীদ? আজকে তো ক্লাস ছিলোনা। কোথায় গিয়েছিলি তুই? কোনো সমস্যা?

তাশদীদ পুরোপুরি মায়ের দিকে ফিরলো না। কিছুটা ঘাড় ঘুরিয়ে বললো,

– বাবা ফিরেছে কলেজ থেকে?

– হ্যাঁ। ফ্রেশ হচ্ছে। কেনো বলতো?

তাশদীদ মায়ের দিকে ফিরলো। বহুদিন পর ছেলের চোখমুখে অস্বস্তির রেশ চোখে পরে মিসেস ওয়াসীরের। ব্যস্ত হয়ে উঠলেন তিনি। তাশদীদ মাকে এনে বারান্দায় বসালো। তারপর বাবা ভাইয়ের সামনে রিংকির ঘটনা খুলে বললো। সবটা শুনে বিমূঢ় হয়ে গেলেন ওয়াসীর সাহেব। তিনি জানেন তাশদীদ সব পরিস্থিতি সামলাতে জানে। কিন্তু বন্ধুর বাসায় ছেলের জন্য এমন পরিস্থিতি তৈরী হবে, তা ধারণায় ছিলো না তার। মিসেস ওয়াসীর অবিশ্বাসী চোখে চেয়ে আছেন ছেলের দিকে। তাশদীদকে বললেন,

– এইটুকুন মেয়ে! ওর সাহস কি করে হলো তোকে এইসব বলার? আর সৈয়দ ভাই, ভাবীও মেয়েকে বোঝানোর পরিবর্তে সমর্থন করেছেন?

তাশদীদ চুপ রইলো। নিজেকে প্রশ্ন করলো, এই পরিস্থিতিগুলোতে ওরদিক থেকে কি কোনো ভুল ছিলো কি না? কোনোভাবে ও রিংকিকে সুযোগ দিয়েছিলো কিনা এতোসব করার? ওর বিবেক ওকে জবাব দেয়, ওর ভুল ছিলো না৷ ওর কেবল অপারগতা ছিলো। রিংকি মনেমনে এমন জঘণ্য পরিকল্পনা করতে জানে, তার আন্দাজ না থাকাটাই ওর অপারগতা। ওয়াসীর সাহেব বললেন,

– যা হবার হয়েছে। তুমি এক কাজ করো তাশদীদ। এ বিষয়ে হান্নানের হেল্প নাও। আমি ওকে আসতে বলছি বাসায়। আর আমিও সৈয়দের সাথে আরেকবার কথা বলবো। এসব…

– হান্নান আঙ্কেলকে এসবে ইনভল্ব করার প্রয়োজন নেই বাবা। আমি সামলে নিতে পারবো সবটা। আমার শুধু তোমাদের জানানোর ছিলো। দ্যাটস ইট।

– আর ইউ শিওর?

মাথা ওপরনিচ করলো তাশদীদ। পরিস্থিতি বুঝে তামজীদ একটা কথাও বললো না। এখানে মুখ খোলা মানেই ওর বিপদ। দুহাত একত্রে মুঠো করে তাতে থুতনি ঠেকিয়ে ও মনোযোগ দিয়ে শুনলো সবার কথা। সবটা শোনার পর তামজীদের একটা কথাই মাথায় আসলো৷ রিংকির কান্ডকারখানা তাথৈয়ের জানা উচিত। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ও চেয়ে রইলো টেবিলে থাকা তাশদীদের ফোনের দিকে। আপনমনে বললো,
‘যে ফোনে ভাবীর ছবি আছে, আশাকরি ওই ফোনে ভাবীর নাম্বারও আছে। না থাকলে বুঝবো, ভাই আমার ঠিকঠাক ভালোবাসেনি।’

তাথৈ মাঝদুপুরে বাসা থেকে বেরোচ্ছিলো। পরপর দুইদিন ক্লাস নেই ওর। আগেরদিন অম্বুনীড়েই ছিলো। বেরোয়নি। তাই আজকে বেরোবে বলে রুমন-শার্লিকে কল করেছে ও। রুমন ক্লাসশেষে আসবে বলে অসময়ে বের হতে হচ্ছে ওকে। বুজো তাথৈয়ের আগেআগে বেরোলো রুম থেকে। তুল্য হাফপ্যান্ট আর গেঞ্জি পরে ডাম্বেল হাতে করিডর দিয়ে হাটছিলো। বুজোকে ওমন উৎফুল্ল হয়ে বেরোতে দেখে বললো,

– কিরে? তোর মনে এতো রঙ কেনো?

– তোর মনের রঙ তুই দেখাবি না বলে বাকিরাও বেরঙ হয়ে থাকবে নাকি?

তাথৈয়ের জবাব শুনে তুল্য সোজা হয়ে দাড়ালো। পাল্টা প্রশ্ন ছুড়লো,

– তুই দেখাচ্ছিস? তোর মনের রঙ?

তাথৈ নিজেও আটকে যায়। ও জানে, শার্লি তুল্যকে তাশদীদের বিষয়ে কিছু বলেনি। তাই তুল্যর এমনভাবে বলার কথা না। কড়াভাবে জিজ্ঞেস করলো,

– হুয়াট ডু ইউ মিন?

– কিছুনা।

গা ছাড়া ভাবে বোনকে পাশ কাটালো তুল্য। তাথৈ ভাবার সময় নেয় না। বুজোকে সাথে করে বেরিয়ে পরে। একটা রুফটপ কফিশপে বসে তিনজন মিলে। কোথথেকে টেরেন্স হাজির হয় সেখানে।ওকে এগোতে দেখে রুমন পেছনে দেখার জন্য ইশারা করলো তাথৈকে। তাথৈ তাকালো না। টেরেন্স ওর পাশে এসে দাড়িয়ে, একটা ফোকলা হাসি দিয়ে ইংরেজিতে বললো,

– কেমন আছো তাথৈ? আবারো দেখা হয়ে গেলো আমাদের।

তাথৈয়ের মেজাজ খারাপ হলো। উঠে দাড়িয়ে বুকে হাত গুজে দাড়ালো ও। সোজাসাপ্টা গলায় শুধালো,

– ফলো করছো কেনো আমাকে? আমাকে কিভাবে চেনো তুমি?

এই এটুকোতেই হাসি থেমে যায় টেরেন্সের। রুমন কফির স্ট্র তে চুমুক দিয়ে আস্তেকরে বললো, ‘ওর কথার তেজই কথাই সহ্য করতে পারেনা, খুব এসেছে তাথৈ আলফেজকে লাইন মারতে।’
আড়চোখে আশপাশ দেখলো টেরেন্স। জোরালো হেসে বললো,

– ওই এমনই। তোমাকে…

– ঠিকঠাক জবাব দাও টেরেন্স। নয়তো তুমি জানোও না আমি কি করতে পারি।

– ওকে রিল্যাক্স রিল্যাক্স।

– রিল্যাক্স হবো কি হবো না সেটা তোমার জবাবের ওপর নির্ভর করছে। নাও, সে!

টেরেন্স বাহাতে থুতনি ডললো। কিছু একটা ভেবে বললো,

– আসলে তোমার মমি…

মোবাইল বেজে ওঠে তাথৈয়ের। তাথৈ নম্বর না দেখে কল রিসিভ করলো। টেরেন্সের দিকে তাকিয়ে থেকে ‘হ্যালো’ বললো। ওপাশ থেকে ভেসে এলো,

– কি ভাবী? খোঁজখবর নাওনা কেনো আমার? একমাত্র দেবর হইনা? খোঁজ নিবে তো নাকি?

তামজীদের গলা শুনে কান থেকে ফোন নামিয়ে নম্বর দেখলো তাথৈ। ওটা তাশদীদের নম্বর না। টেরেন্সের কথা ভুলে গেলো তাথৈ। কলদাতাকে চেনার পরও ইচ্ছে করে বললো,

– কে বলছেন?

– আমাকে চিনছো না? তোমাকে আর কে ভাবি ডাকে হু? আর কাকে কাকে ‘মুসলিমরা ভাই ভাই বলে’ দেবর বানিয়ে রেখেছো তুমি?

উচুগলায় বলে তামজীদ বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলো। পরপরই জিভ কামড়ে বসে গেলো। উকি দিলো বন্ধ দরজায়। ভাইয়ের ফোন থেকে নম্বর নিয়ে, মায়ের ফোন থেকে চোরের মতো কল করাটা কতোটা ঝুকিপূর্ণ, তার হিসেব কষেনি ও। তাথৈ মুচকি হেসে কফিশপের পার্শ্ব দিকে এগোলো। ওকে ওমন হাসতে দেখে কিছুটা অবাক হলো টেরেন্স। তাথৈয়ের মা ওকে বলেছিলো তাথৈ হাসে না। অথচ ওর মুচকি হাসিটা যেনো পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর হাসি। টেরেন্স গিয়ে একটা চেয়ারে বসে তাথৈকে দেখতে লাগলো। তাথৈ ফোনে বললো,

– এমনটা হলে মন্দ কি? আমিতো আক্ষরিক অর্থে একজনকেই দেবর মানতে চাইছি। আমার ইন্টেনশন তো খারাপ না।

– বেচে গেলে! নইলে খবর ছিলো!

ফিসফিসিয়ে বললো তামজীদ। তাথৈ আবারো নিশব্দে হাসলো। বললো,

– তোমার মা-বাবা কেমন আছেন তামজীদ?

– ভালো নেই। রিংকি ম্যাডাম মোটামুটি সবাইকেই চিন্তায় ফেলেছে। ওসব জানাবো বলেই তো কল করলাম তোমাকে।

তাথৈয়ের হাসি থামে। তামজীদ গরগরিয়ে ওকে বলে দেয় সবটা। রিংকির চান্স না পাওয়া, সুইসাইডের ভয় দেখিয়ে তাশদীদকে বাসায় ডাকা, অতঃপর মানহানীর ধমকি। সবটা শুনতে শুনতে পায়ের তলার মাটিটা অবদি যেনো গরম হয়ে যায় তাথৈয়ের। উচু হিলটা টেনে খুলে খালি পায়ে দাড়ায় ও। শার্লি কফির স্ট্র তে চুমুক দিয়ে দেখলো তাথৈ জুতা খুলছে। বিরবিরয়ে বললো,

– ওইটা কি এই ছাদের কপালে নাচছে রে রুমন?

– আমার মনেহচ্ছে ফোনের ওপাশে কিছু ঘটেছে।

রুমনের কৌতুহলী চোখ তাথৈয়ের দিকে। তাথৈ কল কেটে, জুতা হাতে করে শার্লিদের কাছে আসলো৷ টেবিলে থাকা পার্স আর সানগ্লাসটা আরেকহাতে নিয়ে হনহনিয়ে পা বাড়ালো। বুজোও ওর সামনে ছুটেছে। শার্লি-রুমন কফির বোতল সমেত তাথৈয়ের পিছনে ছুটলো। কি হলো সেটা টেরেন্স বোঝার চেষ্টা করতে করতেই তাথৈ চোখের আড়াল। দরজা খুলতেই বুজো ভেতরে ঢুকে গেলো ও। ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো। শার্লি বাইরে থেকে বললো,

– কি হলো তোর?

– সাভার যাচ্ছি। সেখানে ভালো কিছু ঘটবে না। আর আমি চাইনা তোরাও তাতে ইনভল্ব হ।

একমুহুর্ত দেরি না করে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায় তাথৈ। চিন্তিত চোখে ওর চলে যাওয়া দেখলো রুমন-শার্লি।

হসপিটালের বেডে আধশোয়া হয়ে বসে আছে রিংকি। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে চাদরের দিকে। ওর মা ওকে স্যুপ খাইয়ে দিচ্ছে। আজ দুইদিন হলো রিংকি হসপিটালে। তাশদীদের চড়ের জন্য অজ্ঞান হবার পরপরই ওকে হাসপাতালে আনেন সৈয়দ সাহেব। এখানে আনার পর ওর জ্ঞান ফিরেছে ঠিকই, কিন্তু সাথে গা কাপিয়ে জ্বরও এসেছে। প্রথমদিন জ্বরে রিংকির অবস্থা এতোবেশি খারাপ ছিলো যে ডক্টররাই ওকে ছাড়তে নারাজ ছিলো। তুলনামুলক সুস্থ হওয়ায় আজ ওকে ছাড়বে জানিয়েছে। রোজি বাচ্চা কোলে নিয়ে এককোনে দাড়ানো। ওর মেয়েটা একটু পরপর কাশি দিচ্ছে। রিংকির ঘটনায় মেয়ের যত্নও নেওয়া হচ্ছে না ওর। স্যুপ ওই বানিয়ে এনেছে বাসা থেকে। রোজি একপলক মায়ের দিকে তাকালো। সে বোধহয় ভুলে যায়, শুরু রিংকি না, ওউ তার মেয়ে৷ রিংকিকে নিয়ে সে ভদ্রমহিলা দুদিন হলো পাগলপারা৷ এ দুদিনে একটা সেকেন্ডের জন্য মেয়ের কাছ থেকে সরেনি সে। রিংকির বাবা কাগজপত্র হাতে কেবিনে ঢুকলেন। সেগুলো দেখে স্ত্রীকে বললেন,

– তোমরা ওকে নিয়ে এসো। আমি গাড়ি ডাকছি।

উনি চলে গেলেন। রিংকি হাতের উল্টোপিঠে মুখ মুছলো। বিছানা থেকে নেমে, জানালার দিকে এগোলো। ওর চোখের সামনে ভেসে ওঠে, তাশদীদ ওকে দু দুটো চড় দিয়েছে। চোখ খিচে বন্ধ করে নেয় রিংকি। পরে চোখ খুলে, গালে হাত বুলাতে বুলাতে বললো,

– এই দুটো চড়ও আপনার প্রতি আমার ঘৃণা জন্মাতে ব্যর্থ তাশদীদ ভাই। আপনি আমার! আপনাকে সর্বাবস্থায় আমার হতে হবে!

কথাগুলো শুনে রোজি তেড়ে আসলো বোনের দিকে। ওর হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরালো।চেচিয়ে বললো,

– কি বলছিস কি তুই? তোর লজ্জা করছে না এখনো এসব বলতে? তাশদীদ বলে গেছে, তুই যাই করবি, ও দেখে নেবে! তুই বুঝছিস না তাশদীদ তোকে চায় না? তাহলে কেনো করছিস এসব? কেনো জ্বালাচ্ছিস ওকে?

– দুলাভাইও তো তোকে চায় না আপু। তারপরও তুই কেনো তাকে জ্বালাস?

ছোটবোনের কথায় রোজির চোখ জ্বলে ভরে ওঠে। ছলছল চোখে মায়ের দিকে তাকালো ও। সে মহিলা এগিয়ে এসে রিংকিকে বললেন,

– রিংকি? মা আমার? তুই যা চাস, তাই হবে। শুধু তুই কোনো পাগলামি করিস না মা। আমরা তাশদীদকে বোঝাবো। তোর বাবা ওয়াসীর ভাইয়ের সাথে কথা বলবে। আমরা…

– যে মিথ্যের জন্য তাশদীদ ভাই আমার গায়ে হাত তুলেছে, সে মিথ্যেটাই এবার সবাই জানবে আম্মু। যে পরিবারের জন্য সে আমার প্রতি এতোটা কঠোর হলো, ওই পবিবারের সমস্ত মান সম্মান যদি আমি ধুলোয় মিশিয়ে না দেই, তাহলে আমিও রিংকি না।

রোজি প্রসারিত চোখে তাকালো। ওয়ার্ডবয় এসে জানিয়ে গেলো নিচে গাড়ির মালিক রিংকিদের যেতে বলেছে। ওরা হসপিটালের বাইরে এসে দেখে একটা সিএনজি দাড় করানো। ড্রাইভার এগিয়ে এসে রিংকিকে বললো,

– এই গাড়িতেই যাইতে কইছে।

দুর্বল শরীরটা নিয়ে পেছনের সিটে উঠে বসে রিংকি। ও উঠতেই ড্রাইভার সিএনজির দরজা লক করে দেয়। আঁতকে ওঠে রিংকি। রোজি আর ওর মা বাইরেই দাড়ানো। অল্পবয়সী ড্রাইভার সিএনজি স্টার্ট দিয়েছে। পেছনে তাকিয়ে একটা নিস্পাপ হাসি দিয়ে বলে উঠলো,

– খালি আপনারেই নিয়া যাইতে কইছে।

#চলবে…

#কার্নিশ_ছোঁয়া_অলকমেঘ
লেখনীতে: মিথিলা মাশরেকা

৩৯.

সাদা আর লাল রঙ করা একটা ব্রীজের ওপর এসে সিএনজি থামলো। পেছনের সিটে বসা অবস্থায় শুকনো ঢোক গিললো রিংকি। গাড়ি ছাড়ার পরপরই ওর ওপর চেতনানাশক স্প্রে করেছিলো চালক। পরে লোকালয় পেরিয়ে এসে পানি ছুড়ে জ্ঞান ফিরিয়েছে। তখন থেকেই চেচানো শুরু করেছে রিংকি। চেচাতে চেচাতে গলা বসে গেছে ওর। অনেকরকমের ধমকিও দিয়েছে ও সিএনজিচালককে। কিন্তু সে একবিন্দুও ভরকায়নি। রিংকি দেখলো হাতের ডানের রোডে একটু পরপর দু একটা মালবাহী ট্রাক আর বাস চলে যাচ্ছে। সিএনজির দুই দরজাতেই ছোট্ট তালা ঝুলছে। গাড়ি থামিয়ে চালক ফোন কানে নিলো। বললো,

– এসেছি তো। আপনি কই?

ওপাশের জবাব শুনে কল কাটে সে। রিংকি হাতের পিঠে গলা মুছলো। ওর শরীরের তাপমাত্রা তরতরিয়ে বাড়ছে। ও বুঝতে পারছে, ওকে জেনেবুঝে নিয়ে আসা হয়েছে। ভয় পেলেও রিংকি জোশ খোয়ালো না। জোরালো কন্ঠে সিএনজিচালককে শুধালো,

– দরজা খুলুন! নামিয়ে দিন আমাকে!

– কি হলো? শুনতে পারছেন না? কাকে ফোন করেছিলেন আপনি? কে বলেছে আমাকে এখানে আনতে?

– তাথৈ আলফেজ। নাম তো সুনা হি হোগা?

জবাব শুনে চমকে উঠে হাতের বামে তাকায় রিংকি। সিএনজির দরজায় একপা ঠেকিয়ে, ফুটপাত থেকে ঝুকে দাড়ানো রমনী সত্যিই অন্যকেউ নয়, তাথৈ আলফেজ। পরনে খয়েরী টপস আর ছাইরঙা জিন্স। ছাড়া চুলের কিছু সামনে এসেছে। গলার ইটালিক হরফের Tathai লেখা লকেটটা জ্বলজ্বল করছে। ছাদে ঠেস দিয়ে রাখা বা হাতে কালো ব্রেসলেট ঝুলছে। কিঞ্চিৎ ঘাড় বাকিয়ে, চুইংগাম চিবাতে চিবাতে রিংকির দিকে তাকিয়ে আছে সে। রিংকির আকাশপাতাল এক হয়ে যায় তাথৈকে দেখে। বিস্ময়ে ওর চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম হয়। তাথৈ মুখ থেকে চুইংগাম ফেলে হুট করেই ব্যস্ত হয়ে উঠলো। রিংকির বিস্ময়ের সমপরিমাণ বিস্ময় নিয়ে বললো,

– অবাক হচ্ছো যে? শোনোনি এ নাম?

– নাকি আমি তোমাকে এভাবে সাক্ষাৎ দেবো সেটা ভাবতে পারছো না?

রিংকি দমে যায়৷ না চাইতেও ভয় ঢুকে যায় ওর ভেতরে। মনে পরে আগেরবার সাক্ষাতে তাথৈয়ের বলা কথাগুলো। তাথৈ সামনে বসা চালককে ইশারা করলো ওরদিকের দরজাটা খুলে দিতে। সিএনজিচালক দরজার তালায় চাবি ঘুরাতে ঘুরাতে বললো,

– এরে যে ছাড়তে কইতাছেন, যদি ছুইটা পালায়?

তাথৈ জবাব দিলো না। ও জানে, ওকে দেখেই রিংকি হুশ হারিয়েছে। তবুও সুযোগ না দিয়ে দরজা খুলে ও নিজেই উঠলো সিএনজিতে। একহাতে সিটের পেছনদিক ধরে, পায়ের ওপর পা রেখে আড়াআড়ি হয়ে বসলো ও। বললো,

– তুমি চালাক মেয়ে। এতোক্ষণে অবশ্যই বুঝে গেছো, তোমাকে কিডন্যাপ করা সিএনজিচালক আমার পরিচিত৷ চাইলে তুমিও পরিচিত হতে পারো ওর সাথে। সিএনজি ড্রাইভারের পাশাপাশি ও এক পারটাইম মাফিয়া। স্পেশালী তোমার সাথে দেখা করবো বলে আজ ওকে ডেকেছি। যাইহোক। তুমি কমফোর্টেবল তো? টপিকে আসি?

রিংকি বড়বড় চোখে একবার সিএনজিচালককে দেখলো। তাথৈ বলতে লাগলো,

– শুনলাম তাশদীদ তোমাকে প্রেমের জালে ফাঁসিয়েছে, বিয়ের কথা বলে অন্তরঙ্গ হয়ে এখন তোমার সাথে সম্পর্ক রাখতে চাইছে না, ওর ফ্যামিলিও সবটা জানে। তাশদীদ তোমাকে বিয়ে না করলে তুমি সমাজে মুখ দেখাতে পারবে না এন্ড অল! আর তুমি নাকি এজন্য সু’ইসাইড করতে যাচ্ছিলে?

রিংকির ভয় বাড়তে থাকে। তাথৈ যতোটা সাবলীলভাবে কথাগুলো বলছে, পরিস্থিতি যে ততোটা স্বাভাবিক না তা ও বেশ বুঝছে। তবে নিজের ভয় প্রকাশ করলো না ও। বললো,

– আমাকে এখানে কেনো এনেছেন?

– তোমার হেল্প করতে।

জবাব দিয়ে তাথৈ নিজের সাইডব্যাগে হাত ঢুকালো। কিছু একটা খুজছে ও। ওর জবাব পেয়ে রিংকি ছোটখাটো আরেকটা ধাক্কা খায়। আর তাথৈ সে ধাক্কাকে কয়েকগুন বাড়িয়ে, সাইডব্যাগ থেকে একটা চাকু বের করলো। কারুকাজকরা হাতলবিশিষ্ট চাকুর ধারালো প্রান্ত আঙুলে পরখ করতে করতে বললো,

– এডমিশনের সাথেসাথে সুইসাইড এটেম্পটেও ফেইল করেছো। ব্যাপার না! লেট মি হেল্প ইউ টু ডাই। মরার জন্য কোন হাত কাটতে যাচ্ছিলে তুমি? দেখি দেখাও তো!

রীতিমতো আকাশ থেকে পরলো রিংকি। তাথৈ সবে ওর হাত ছুঁয়েছে, হুড়মুড়িয়ে পিছিয়ে সিএনজির দরজায় লেগে যায় ও। দুহাত একসাথে শক্তমুঠো করে, বুকে গুজে চেচিয়ে বললো,

– আমি কিন্তু আপনাকে ভয় পাই না।

– আমাকে দেখেই জ্বর ওয়ান জিরো টু তে তুলে ফেলেছো। আমি এখানে আর পাঁচমিনিট থাকলে তোমার কুটিল আত্মা বিনাবাক্যে দেহত্যাগ করতে বাধ্য। এটা অবশ্য ভালো আইডিয়া। হাত কাটাকুটির দরকার পরবে না। তুমি চেয়েচেয়ে আমাকে দেখো, আর আমি তোমার ইতি দেখি।

হেলান দিয়ে আরামে বসলো তাথৈ। রিংকির চেহারায় ভয় প্রকাশ পেতে শুরু করেছে এবারে। একদন্ড চুপ থেকে তাথৈ যেনো অধৈর্য্য হয়ে পরলো। বললো,

– এই প্রসিডিউরে সময় বেশি লাগছে। অন্যের উপকার করার জন্য এতো সময় নেই আমার হাতে।

– আপনি আমাকে এভাবে হেনস্তা করতে পারেন না!

রিংকি পুনরায় তেজ দেখিয়ে বললো। তবে তাথৈয়ের চাওনির পরিবর্তন হলো না। তেমনি নিস্প্রান চেয়ে থেকে জবাব দিলো,

– তাথৈ আলফেজ সব পারে। ওয়ার্ন করেছিলাম তোমাকে। তবুও তুমি আমাকে নিয়ে রিসার্চ না করে, তাশদীদকে ধমকি দিতে চলে গেলে।

– আমি তাশদীদ ভাইকে ভালোবাসি! যা করেছি তাকে পাওয়ার জন্…

– কিছুই করোনি তুমি তাশদীদকে পাওয়ার জন্য।

রিংকি থেমে যায়। তাথৈ হাতের চাকুটা ওকে এগিয়ে দিয়ে বললো,

– ইউ থিংক তুমি তাশদীদকে পাওয়ার জন্য সব করতে পারো রাইট? তাহলে এক কাজ করো। মরে দেখাও। তুমি মরে গেলেই আমি মেনে নেবো তুমি তাশদীদকে পাগলের মতো ভালোবাসো, তোমার ভালোবাসায় কোনো খুঁত নেই। সো কাম অন। ডু ইট!

রিংকি স্তব্ধ। ও একবার তাথৈয়ের দিকে তাকায়, তো একবার তাকায় চাকুটার দিকে। ওদিকে সিএনজিচালক পকেটে হাত ঢুকিয়ে বসে। পেছনে ঘাড় ঘুরিয়ে বিটকালী হাসছে সে। রিংকি বুঝলো, ওই হাসির মানে ওর একটু এদিক ওদিক ব্যবহারে সেও ওর সাথে খারাপ কিছু করবে। তাথৈ কি ভেবে সিএনজি থেকে নেমে গেলো। বাইরে থেকে বললো,

– বুঝেছি। শিরা কেটে মরার সাহস তোমার নেই৷ বাইরে এসো।

ওর কথা শুনে রিংকি আরো গুটিয়ে বসে গেলো। ওর মাথায় কেবল ঘুরছে, সামনের মেয়েটা সুবিধের না। যে তাথৈ অবলীলায় ওকে মরতে বলছে, সে নিজের হাতে থাকা চাকুটা খপ করে ওর বুকের মাঝে বিধিয়ে দিতেও দুবার ভাববে না। তাথৈ বললো,

– এক কথা আমার বারবার বলার অভ্যাস নেই রিংকি।

সামনে থেকে আওয়াজ শুনে রিংকি সিএনজিচালকের দিকে তাকালো৷ সে সিএনজির ড্রয়ার থেকে একেএকে স্প্রে, রশি, ছু’ড়ি বের করতে শুরু করেছে। রিংকি দ্রুততার সাথে সিএনজি থেকে বেরিয়ে আসে। অস্থিরচিত্ত্বে আশপাশ দেখে পালানোর পথ খুজতে থাকে। এই খোলা আকাশের নিচেও তাথৈ যে ওর প্রাণশংকা তৈরী করে দিয়েছে, সেটা ভেবেই গলা শুকিয়ে আসছে ওর বারবার। তাথৈ সানগ্লাস চোখে দিয়ে আকাশে তাকিয়ে বললো,

– এখান থেকে তুমি ঠিকঠাক তখনই যেতে পারবে, যখন আমি এলাও করবো। সো পালানোর ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো।

রিংকি আর ভাবার ঝুঁকি নিলো না। ইশারায় ওকে ব্রীজের কিনারায় এগোতে বললো তাথৈ। রিংকি করলোও তাই৷ তাথৈ বললো,

– নিচে কি?

– ম্ মানে?

তাথৈ প্রতিত্তর করলো না। তবে রিংকি ওর চাওনিতেই জবাব পেয়ে গেলো। ‘তাথৈ এক কথা বারবার বলে না।’ প্রশ্নের উত্তর দিতে, একটা ঢোক গিলে ব্রীজের নিচে উঁকি দিলো রিংকি। জড়ানো স্বরে বললো,

– ন্ নদী।

– মনেকরো ওটা নদী না। ওটা তাশদীদ। আর এইযে তুমি দাঁড়িয়ে আছো, এটা তোমার জীবন, তোমার বেঁচে থাকা। নাও চুজ। তোমার কোনটা চাই? তাশদীদ? নাকি বেঁচে থাকা?

রিংকি জবাব দেওয়া ভুলে যায়। সাতার জানে না বিধায় অসহায়ের মতো করে তাকিয়ে রয় তাথৈয়ের দিকে। তাথৈ অনড়, নিস্প্রভ। সিএনজিচালক গাড়িতে বসে গলা খেঁকিয়ে বললো,

– আর জবাব না দিলে গুম হওয়া। এ অপশনটা বললেন না আপু?

– জীবন! বেঁচে থাকা! আমি বাচতে চাই আপু! তাশদীদ ভাইকে চাইনা! আমায় ছেড়ে দিন প্লিজ! যেতে দিন!

ফট করে জবাব দিলো রিংকি। তাথৈ ঠোঁটে একটুখানি হাসি টেনে ওকে ইশারা করলো সিএনজিতে উঠে বসার জন্য। এটুকো স্বীকারোক্তিতে ছেড়ে দিচ্ছে ভেবে রিংকি অবাক হলো। তবে তাথৈকে ঘাটানের মতো বোকামো করলো না। রিংকি সবে সিএনজির দিকে এগোবে, পেছন থেকে তাথৈ বলে উঠলো,

– বাইদাওয়ে রিংকি, তুমিতো সিএনজিতে বেশ কিছুক্ষণ সেন্সলেস ছিলে। ওসময় তোমার সাথে কিছু হয়নি তো?

রিংকি দাঁড়িয়ে যায়৷ সর্বোচ্চ আতঙ্ক নিয়ে নিজের দিকে তাকায় ও। গায়ে হাত বুলিয়ে পরখ করে নেয় জামা ঠিকঠাক কিনা। তাথৈ এগোলো। চোখ সানগ্লাস খুলে, হাসিমুখে বললো,

– কলেজে ভর্তির পর ড্রাগে জড়িয়েছো। ওইসময় বন্ধুবান্ধবীদের সাথে তুমি দৈনিক হ্যাঙআউট করতে। পড়াশোনা ঠিকমতো করো নি। রেজাল্ট ঠিক রাখার জন্য তোমার বাবা-মা মিলে স্যারদের ঘুষ দিয়েছে। এমনকি কলেজের নাম করে তুমি তখন ছেলে ফ্রেন্ডদের বাসায়ও যেতে।

– কি বলছেন কি আপনি?

– রিল্যাক্স! আ’ম নট ডান ইয়েট! কোথায় ছিলাম যেনো? ও হ্যাঁ! তো এইচএসসির সময় তোমার একটা সিরিয়াস প্রেম হয়। ওই যে সিএনজিওয়ালা তোমাকে এক্সাম হলে নিয়ে যেতো, তার সাথে। ইভেন তোমাদের দুজনের ঘনিষ্ট মুহুর্তের বেশকিছু ছবিও তার কাছে।

এটুকো বলে তাথৈ সিএনজিচালকের দিকে ইশারা করলো। রিংকি ওর ইশারা মতো সিএনজিচালকের দিকে চেয়ে দেখে সে একপ্রকার নতুন বউয়ের মতো লজ্জা পাচ্ছে। তাথৈ বলে চলেছে,

– তো এরইমাঝে তোমার বাবা ব্যাপারটা জেনে যায়৷ সে তোমাকে বুঝায়, তার মেয়েকে সে কোনো সিএনজিচালকের হাতে তুলে দেবে না। কিন্তু তুমি তো তুমিই! সিএনজিওয়ালার প্রেমে মাতোয়ারা হয়ে গেছো! বাবার এই সিদ্ধান্ত তুমি নিতে পারলে না। এরপর তুমি কি করলে? ইউ ট্রায়েড টু কমিট সুইসাইড। তারপর যখন দেখলে তোমাকে মরতে দেখেও তোমার বাবা বেচারা সিএনজিচালককে মেনে নিচ্ছে না, তুমি হসপিটাল থেকেই সেই সিএনজিচালকের সিএনজিতে বেরিয়ে গেলে।

রিংকি শ্বাস আটকে শুনতে থাকে। ওর চারপাশ তাক লেগে যায়৷ যেমন মিথ্যে ও তাশদীদের বিপরীতে সাজিয়েছিলো, ঠিক তেমনই মিথ্যেতে তাথৈ ওর ভবিষ্যৎ কলুষিত করতে উদ্যত। ওকে থমকে যেতে দেখে তাথৈও থামলো। একদমই স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বললো,

– এই কথাগুলো প্রমাণসমেত দুনিয়াজুড়ে ছড়িয়ে দিতে আমার খুব একটা কষ্ট হবে না রিংকি। আর আমি এমনটা করলে কি হবে, তা তুমি বেশ ভালোমতোই জানো।

– কি চাইছেন?

– ওয়েল, আগেরবার কি চাই না সেটা বুঝিয়েছিলাম। তুমি বুঝোনি। এবার কি চাই সেটাই বলছি। আমি চাই তুমি ‘তাশদীদ’ ফ্যাক্ট ভুলে যাও। এই মুহুর্ত থেকে তাশদীদ ওয়াসীর নামটা তোমার কাছে অপরিচিত। এ নামের কাউকে তুৃমি চেনো না, ওর ফ্যামিলির কাউকে চেনো না, প্রীতিকার্নিশের পথটাও চেনো না, এমনকি ওর সাথে জড়িয়ে থাকা আমাকেও চেনো না। তুমি বুঝতে পারছো রিংকি, আমি কি চাই?

রিংকি ভাষাহীন। যতোটা চতুরতার সাথে ও তাশদীদকে ফাঁসাতে চেয়েছিলো, তাথৈ যে তারচেয়েও নিখুঁত পরিকল্পনা সাজিয়ে এসেছে, তা বুঝতে বেশি সময় লাগলো না ওর। তাথৈয়ের চাওনি বদলালো। হুট করেই ওর চেহারাজুড়ে নেমে আসে রাজ্যের রাগ, আক্রোশ, ক্ষোভ। বুকে গোজা হাত ছেড়ে সাইডব্যাগের ফিতে আঁকড়ে ধরলো ও। দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

– তুমি তাশদীদকে ওর মান নিয়ে থ্রেট দিয়েছিলে না? আমি তোমাকে তোমার প্রাণ-মান দুটোর শংকায় রেখে শেষবারের মতো সুযোগ দিলাম রিংকি। আজকের পর, কোনোভাবে যদি তুমি তাশদীদের লাইফে ইনভল্ব হও, আই সয়্যার আজ যা যা ঘটেনি, সেদিন সে সবকিছু ঘটবে। তোমার, তোমার ফ্যামিলির সমস্ত মানসম্মান আমি মাটিতে মিশিয়ে দেবো। শুধু তাশদীদের জীবন থেকে কেনো, তোমাকে সবার থেকে সরিয়ে দিতেও আমি দুবার ভাববো না। তাথৈ আলফেজ প্রমিসেস ইউ দ্যাট! এন্ড ট্রাস্ট মি, আই টোটালি মিন ইট!

তাথৈয়ের দিকে তাকিয়ে দুপা পেছোলো রিংকি। পরপরই ছুটে গিয়ে সিএনজিতে উঠে বসলো। ওর হাতপা ঘামছে। তাথৈ কানে গোজা হেডফোনে বললো, ‘পৌছে দিয়ে আয়।’
সিএনজি চলতে শুরু করে। কিছুক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে থেকে ব্রীজের কিনারায় এগোলো তাথৈ। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো নিচের স্থির পানির দিকে। মুচকি হেসে পিলারের ওপর বসে যায় ও। অবচেতন মনে বলে ওঠে,

– বিশ্বাস করো তাশদীদ, কেউ যদি আমাকে বলতো, ‘তাশদীদ ওয়াসীর? নাকি বেঁচে থাকা?’ আমি নির্দ্বিধায় আত্ম্যাহুতি দিতাম। আমার না থাকায় যদি তুমি সুখী হও, আমি বিনাবাক্যে নিজেকে শেষ করে দিতে জানি। তোমাকে ভালোবেসে আমি ভয় পেতে শিখেছি। বিশ্বাস করো তাশদীদ! সেই তোমার জন্য একবার নয়, হাজারবার মরে যেতেও আমার ভয় নেই, দ্বিধা নেই!

তাথৈয়ের চোখ জলে ভরে ওঠে। কিছুটা দুরের লোকাল বাসের ভাড়া মিটিয়ে তাড়াহুড়ো করে নামলো রুমন-শার্লি। ঝামেলায় তাথৈকে একা ছাড়ার পক্ষে ওরা না। দুজনে মিলে তাই চলে এসেছে সাভার। পথিমধ্যে তাথৈয়ের গাড়িটা চোখে পরে ওদের। তাথৈকে ব্রীজের পিলারে বসে থাকতে দেখে, বাস থেকে নেমে দৌড়াতে থাকে দুজনে। রুমন দৌড়াতে দৌড়াতে মানিব্যাগ পকেটে পুরছে৷ শার্লি দৌড়াতে দৌড়াতে সবে তাথৈকে ডাক লাগাতে যাবে, তার আগেই ‘ঝপাং’ শব্দ হয় নদীর পানিতে। রুমন-শার্লি আটকে যায়। তাথৈ পিলারে বসে নেই। কেউ অপশন না দিলেও আপনমনে ভালোবাসা জাহির করে ফেলেছে ও। নদীর শান্ত-স্নিগ্ধ জলকে তাশদীদ ধরে নিয়ে, তাথৈ পানিতে ঝাঁপ দিয়েছে।

#চলবে…