কার্নিশ_ছোঁয়া_অলকমেঘ পর্ব-১১+১২

0
157

#কার্নিশ_ছোঁয়া_অলকমেঘ
লেখনীতে: মিথিলা মাশরেকা

১১.

হিলের আওয়াজ শুনে ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে সিড়ির দিকে তাকালেন তৈয়ব আলফেজ। কাধে ব্যাগ নিয়ে, চুইংগাম চিবোতে চিবোতে নিচে নামছে তাথৈ। পরীক্ষা আছে ওর আজ। সৌভাগ্যবশত জ্বরটা আর নেই। আগেররাত মনের মতো করে পড়েছে ও। কোনোদিন না তাকিয়ে তাথৈ বেরিয়ে যাচ্ছিলো। মুখের সিগারেটটা নামিয়ে এ্যাশট্রেতে নেভালেন তৈয়ব আলফেজ। বললেন,

– একটাদিন বাসায় ব্রেকফাস্ট করো না। সকালে কোথায় কি খাও?

তাথৈ আটকে গেলো। অবাক চেহারা করে পেছন ফিরলো ও। স্বরে রাজ্যের বিস্ময় মিশিয়ে বললো,

– আমি কি ঠিক শুনলাম ড্যাড? তুমি আমাকে ব্রেকফাস্টের কথা জিজ্ঞেস করছো?

তৈয়ব আলফেজ উঠে দাড়ালেন। দৃষ্টি এদিকওদিক করে বললেন,

– তোমার জন্মদাতা হবার দায়িত্বপালন করলাম। আর কিছুনা।

– না খেয়ে থাকিনা ড্যাড। নিজের যত্ন নিজেই করি। জানিতো! আমাকে ভালোবেসে যত্ন করার মতো কেউ নেই। যে আছে, সে শুধু দায়িত্ব পালন করে। আর কিছুনা।

তৈয়ব আলফেজ চলে গেলেন। তাথৈ একদৃষ্টিতে বাবার চলে যাওয়া দেখে তাচ্ছিল্যে হাসলো। পরে বেরিয়ে আসলো অম্বুনীড় থেকে। গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে, সিটবেল্ট বেধে নিলো। চাবি ঘুরিয়ে স্টার্ট দিতে যাবে, গাড়ি স্টার্ট নিলোনা। তাথৈ বিব্রত হয়। উঁকিঝুঁকি দিয়ে দেখে নিয়ে, আবারো চেষ্টা করলো গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার। এবারেও গাড়ি স্টার্ট নিলোনা। ঠিক সেসময়েই পাশে তুল্যর গাড়ি থামে। তুল্য জানালা দিয়ে তাথৈয়ের দিকে তাকিয়ে, উত্তেজনা নিয়ে বললো,

– ওয়াও! তোর গাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে? ট্রিট দে তাথৈ!

কটমটে চোখে ভাইয়ের দিকে তাকালো তাথৈ। শক্তহাতে আঁকড়ে ধরলো স্টেয়ারিং। তুল্য ভয় পাওয়ার ভান করে বললো,

– উউউ! তাথৈ তো রেগে গেছে! তাথৈয়ের গাড়ি খারাপ হয়ে গেছে! তাথৈ আমার বা তার ড্যাডের গাড়ি ইউজ করে না! তাথৈ ভার্সিটির বাস কিংবা রিকশায়ও কমফোর্টেবল না! আজ আবার তাথৈয়ের এক্সাম! এবার তাথৈ কি করবে?

তাথৈ ভাইয়ের দিকে অগ্নিচক্ষু করে তাকিয়ে, রাগে বড়বড় শ্বাস ফেলতে লাগলো। পাশের সিটে পরে থাকা ব্যাগ হাতড়ে ফোন বের করলো। তুল্য ওপাশ থেকে বলছে,

– এবার তাথৈ উবারে কল করবে। কারন তাথৈয়ের সবুর নাই, উবার আছে।

কানে ফোন ধরে আরেকবার ভাইয়ের দিকে তীক্ষ্ণদৃষ্টি তাক করে তাথৈ। সত্যিই উবারে কল করেছে ও। কলটা রিসিভ হতেই তাথৈ লোকেশন বলে দিয়ে দশমিনিটের মধ্যে গাড়ি পাঠাতে বললো। এপাশে তুল্য বলে চলেছে,

– তাথৈ চিল্লালো। কিন্তু ওদিকে উবার ভাইয়ের সবুরও আছে। সে তাথৈয়ের চিল্লানি শুনেও বলবে, ‘ওকে ম্যাম, পাঠাচ্ছি গাড়ি।
তবে তবে তবে! দশমিনিটে হবেনা। আপনার লোকেশনে গাড়ি পৌছাতে মিনিমাম চল্লিশ মিনিট লাগবে ম্যাম।’

তুল্যর দিকে এবার বিস্ময়ে তাকালো তাথৈ। ফোনের ওপাড় থেকে হুবহু একই কথা বলা হয়েছে ওকে। কল কেটে নিরবে ফোন কান থেকে নামিয়ে নিলো তাথৈ। গাড়ি থেকে নেমে দাড়ালো। তুল্য বিশ্বজয়ের হাসি দিয়ে লুকিং মিরর দেখে দুহাতে মাথার চুল উল্টালো। বললো,

– এইদিকের রোডে সংস্কারকাজ চলছে বেহেন। গাড়ি অন্যরোড হয়ে ঘুরে আসতে মিনিমাম চল্লিশমিনিট তো লাগ…

তুল্যের বলা শেষ করার আগেই কিছু একটা ভাঙার আওয়াজ কানে আসে ওর। তৎক্ষনাৎ জানালা দিয়ে মুখ বের করে উকি দেয় ও। বাসার ঠিক সামনে মাটির ছোটছোট টবে সাকুলেন্ট গাছ ছিলো। সেগুলোর একটাতে তাথৈ লাথি ছুড়েছে। আর সেটা একপ্রকার উড়ে গিয়ে তুল্যর গাড়িতে লেগেছে। টবটা তো ভেঙেছেই, সে সাথে তুল্যর সাদা গাড়িতেও দাগ পরে গেছে। তুল্যর মাথায়ও রাগ চড়ে যায় এবারে। চেচিয়ে বলে,

– জানতাম তুই গাড়িকেই তাক করবি!

– আর জেনেও তুই আমাকে রাগাতে আসিস।

– আমি ইনফো দিয়ে তোকে হেল্প করছিলাম ড্যাম!

– গো টু হেল উইথ ইওর হেল্প!

এতোক্ষণ বাসার ভেতরে থেকে চিৎকার চেচামেচি শুনলেও এবার বেরিয়ে আসলেন তৈয়ব আলফেজ। ভাঙা টব আর তুল্যর গাড়ির দাগ দেখে তার বুঝতে বাকি রইলো না কি ঘটেছে। তৈয়ব আলফেজ তাথৈকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

– মায়ের মতোই হয়েছো। শুধু ভাঙতে জানো।

তাথৈ এমনিতেই রেগে ছিলো। বাবার কথা শুনে টুপ করে ওর চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে আসলো। তুল্য বোনের চোখের জল দেখে, গলা উচিয়ে বললো,

– বাবার মতোই বেশি হয়েছে। অনুভূতিশুন্য!

ছেলের জবাব শুনে, ফোন কানে তুলে ভেতরে চলে গেলেন তৈয়ব আলফেজ। কলে তিনি কাউকে বলছেন, ‘টবসহ দুটো সাকুলেন্ট লাগবে।’ তাথৈয়ের স্থির দৃষ্টি। তবে কাদছে না ও। তুল্য বললো,

– গাড়িতে ওঠ! প্রক্সি পরীক্ষা আছে তোর। আজ পরীক্ষা না দিলে সবমিলিয়ে ফাইনালে কম পাবি।

তাথৈ হাতের পিঠে গাল মুছলো। ওকে ঘুরতে দেখে তুল্য কিছুটা শ্বাস নেয়। কিন্তু সেকেন্ডত্রিশেক পেরিয়ে যাওয়ার পরেও ব্যাকসিটে উঠে বসেনা তাথৈ। তুল্য আবারো জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে ওকে খোজে। দুবার ডাক লাগায়। কিন্তু সাড়া পায়না। তৃতীয়বার ডাকতে যাবে, তার আগেই মুখ রীতিমতো তালাবন্ধ হয়ে যায় ওর। ওকে, ওর গাড়িকে অদৃশ্য বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, পাশ কাটিয়ে চলে গেছে তাথৈ। ওর কাধে ব্যাগ, কানে হেডফোন, হাতে স্টিক আর পায়ে, স্কেটিংয়ের জুতা। বাসা থেকে ভার্সিটি, আজ স্কেটিং করেই যাবে তাথৈ।

ঘড়ির কাটা বারোটার ঘরে। বিরক্ত হয়ে হাতঘড়ি থেকে চোখ তুললো তাশদীদ৷ সামনে তাকিয়ে দেখলো গাড়ির কোনোরুপ নড়চড় হচ্ছে কিনা। না। নেই। শুধুমাত্র বাস্কেটবল খেলার জন্য ক্যাম্পাস এসেছে ও। অথচ জ্যামেই লোকাল বাসটা আটকা পরে আছে প্রায় বিশমিনিট। শাহবাগ চত্বর থেকে বিশমিনিটে বিশ সেন্টিমিটারও হেলেনি বাসটা। গরমে সিদ্ধ হয়ে যাবার উপক্রম সব যাত্রীদের। তাশদীদ বুকের ওপরের আরেকটা বোতাম খুলে শার্টটা ঝারা মারলো। হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে ঘেমে শার্টের হাতাও ভিজে যাচ্ছে ওর। হাল ছাড়লো তাশদীদ। ভাড়া মিটিয়ে নেমে আসলো বাস থেকে। পুরো রাস্তা আটকানো দেখে ঠিক করলো, বাকিটুক হেটেই এগোবে ও। মিনিট পনেরোর মতো লাগবে আর। অসহনীয় গরমে জ্যামে বসার চেয়ে হেটে এগোনোই শ্রেয়। শার্ট ঝেরে আবারো বুকে বাতাস লাগানোর চেষ্টা করলো তাশদীদ। হাতের ওপরপিঠ থুতনিতে ডলা মেরে ফুটপাত দিয়ে হাটা লাগালো।

কিন্তু কয়েকপা এগোতেই পায়ের গতি কমে তাশদীদের। ওর চোখ আটকায় শাহবাগের ফুটপাতে সাজানো ফুলের দোকানগুলোতে। একটা দোকানের সামনে গিয়ে দাড়িয়েই যায় ও। পকেটে দুহাত গুজে দাড়িয়ে, পুরো দোকানের সবগুলো ফুলে চোখ বুলায়৷ ফুলের প্রতি ভালোলাগা থাকলেও এখনো অবদি কেনা হয়নি ওর। মুলত কিনতে ইচ্ছে করেনি। কিন্তু আজ প্রথমবার ওর ফুল কিনতে ইচ্ছে করছে। দোকানের সব ফুল কিনতে ইচ্ছে করছে। অকস্মাৎ ওর মনে হলো, একগুচ্ছ লাল গোলাপে, প্রেম আঁকাই যেতো। এই সাদা গাজরা, নীলশাড়ি পরিহিত ব্যক্তিগত অপ্সরীর খোঁপায় গুজে দেওয়াই যেতো। বেলির মালাগুলো তার চুড়িবিহীন হাতে মোড়ানোই যেতো। নিজের অদ্ভুত চিন্তাগুলোতে হেসে ফেলে তাশদীদ। মাথাটা চুলকে পা বাড়ায় আরো সামনে।

চাকাওয়ালা জুতোয় ভর করে ছুটে চলেছে তাথৈ। শখ হিসেবে শেখা স্কেটিং ওর জীবনে অনেক কাজে দিয়েছে। চরম বিষন্নতার রাতগুলোতে ফাকা রাস্তায় যখন ও স্কেটিং করতো, কিছুটা হলেও হালকা লাগতো ওর। আজ ওর পরীক্ষায় বসতে পারাটাও এই স্কেটিংয়ের জন্যই হয়েছে। বেশ ভালো পরীক্ষা দিয়ে মনটা ফুরফুরে ওর। তাথৈ দেখলো এদিকটার পুরো রাস্তা জ্যামে আটকানো। সকালেও এমনই ছিলো। উবারে বেরোলেও ও ঠিকঠাক সময়ে ক্যাম্পাসে পৌছাতে পারতো না। রুমন-শার্লি ক্যাম্পাসেই। ক্লাসব্রেকে মনটাকে আরেকটু প্রশান্ত করতেই স্কেটিং করছে তাথৈ। উল্টোদিকের রাস্তার একপাশ দিয়ে এগোচ্ছে ও। জ্যামে আটকে থাকা গাড়িগুলোর বেশিরভাগ চোখ তখন ওর দিকে স্থির। সেগুলোর মাঝে একটা স্কুলভ্যানও ছিলো। ভ্যানে থাকা পাঁচছয়টা বাচ্চা তাথৈকে দেখে হাততালি দিলো। বাচ্চাগুলোকে দেখে, গতি কমিয়ে দিলো তাথৈ। হেসে চোখটিপে দিলো একবার। একটা বাচ্চা মেয়ে চেচিয়ে বললো,

– আপু রিঙ্গা রিঙ্গা রোজেজ করো! টিভিতে যেমন করে, ওমন! ওমন করো!

মেয়েটার সাথে বাকি বাচ্চাগুলোও সায় দিলো। তাথৈয়ের মেয়েটার কথা মোটেও ফেলতে ইচ্ছে করলো না আজ। আশেপাশের অন্যকোনো দৃষ্টিকে পাত্তা না দিয়ে বাধ বেয়ে ফুটপাতে উঠে গেলো ও। বাচ্চাগুলো খুশিতে চেচিয়ে উঠলো। তাথৈ দু আঙুলে একবার নিজের চোখ, আরেকবার ওর পায়ের দিক দেখালো ওদের। তারপর ফুটপাতের একটা ল্যাম্পপোস্ট একহাতে ধরে কৌশলে ঘুর্নন তুলে বেরিয়ে গেলো। বাচ্চাগুলো একসাথে হৈহৈ করে উঠলো। তাথৈ ঘাড় ঘুরিয়ে ওদের হাসি দেখতে থাকে। ভুলে যায়, ওর পা চলমান। কিন্তু হুট করে একটা বড় গাছের মুল চলে আসে ওর সামনে। হোচট খেয়ে হুশ ফেরে তাথৈয়ের। এক সেকেন্ডের জন্য সামনে তাকিয়ে, চেচিয়ে বলে ওঠে,

– স্টেপ আসাইড!

তাশদীদ হাটতে হাটতে শার্টের তিন নম্বর বোতামটা লাগাচ্ছিলো। হঠাৎ সামনে থেকে ইংরেজীতে ‘সরে দাড়াও’ শুনে হচকিয়ে দাড়িয়ে যায় ও। একপলক দেখায় চোখে পরে, নেভী ব্লু টপস আর কালো জিন্স পরিহিত এক রমনী স্কেটিং শু পরে টালমাটাল গতিতে একদম ওর বরাবর অগ্রসর হচ্ছে। তার মাথায় উল্টো করে পরা ফিতেযুক্ত ক্যাপ, দুই ঝুটি করে গলার দুপাশে দেওয়া চুল, গলায় হেডফোন ঝুলানো, আর হাতে স্টিক। তাথৈ নিজেকে থামাতে স্টিকের ধরার দিকটা দোকানের এক গাদাফুলের ঝালরে বাঝিয়ে দিলো। কিন্তু লাভ হলো না। ওর গতির জন্য পুরো ঝালরটাই চলে আসে স্টিকের সাথে। নিজেকে সামলাতে না পেরে তাশদীদকে নিয়েই মাটিতে পরে যায় ও।

চোখ বন্ধ করে নেয় তাশদীদ। নির্দিষ্ট কারনে ওর মস্তিষ্ক চোখ খুলতে অসম্মতি জানায়। কিন্তু তাথৈয়ের বিস্ফোরিত চাওনি। বাহাতের স্টিক ছেড়ে, ডানহাতে তাশদীদের শার্ট খামচে ধরে ও। বুকে জড়িয়ে যাওয়া মানুষটার বন্ধ চোখে তাকায়। তাথৈয়ের মনে হতে লাগলো, এই ছেলের বুকের বা পাশ খামচে ধরায় ওর নিজেরই হৃদস্পন্দকে থেমে যেতে চাইছে। অতি সন্নিকটের নিশ্বাসবায়ুতে এই পুরুষ ওকে শ্বাসরুদ্ধ করতে চাইছে। প্রথমবার কোনো ছেলের ওর এতোটা সন্নিকটে আসা ওকে সর্বহারা করতে চলেছে। পাশ থেকে দোকানী ছুটে আসছে তার ফুলের ঝালর ফেরত নিতে। বাকিসবার মতো তার দৃষ্টিতে, সেখানে কেবলই আকস্মিকতায় জড়িয়ে যাওয়া তাথৈ-তাশদীদ। কিন্তু সে তো আর জানেনা, ঝালরের আড়ালে জমা পরেছে আরেক ভিন্ন আঙ্গিকের গল্প। কমলা গাদার আড়ালে লুকিয়েছে প্রনয়লাজ। পরস্পরকে অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শ জানিয়ে, থমকে যাওয়া দুজোড়া ঠোঁট। অভূতপূর্ব শিহরনী ছোঁয়ায় থমকে যাওয়া, তাশদীদ-তাথৈয়ের ঠোঁট।

#চলবে…

#কার্নিশ_ছোঁয়া_অলকমেঘ
লেখনীতে: মিথিলা মাশরেকা

১২.

পিঠের ঝালড় সরে যাচ্ছে টের পেয়ে তাথৈ মাথা তুললো কিছুটা। চোখ মেললো তাশদীদ। বুকের ওপর পরে থাকা রমনীর চুল কাধের দুপাশ দিয়ে সামনে পরেছে। তার শক্তপোক্ত চাওনি ওর চোখে স্থির। বুকের বা পাশটায় নখের আঁচড়ের মতে মৃদ্যু ব্যথাও অনুভব হচ্ছে তাশদীদের। কিচ্ছুটি বললো না ও। কেবল চেয়ে রইলো তাথৈয়ের দৃষ্টিতে। কিছুক্ষণ আগে যা ঘটেছে, তাতে যেকোনো মেয়ের অপ্রস্তুত হয়ে এতোক্ষণে ছুটে পালানোর কথা। অথচ তাথৈ পালানো তো দুর, উল্টো ওকে চিবিয়ে নেওয়ার মতো করে তাকিয়ে আছে। সেটাও আবার ওরই বুকের ওপর পরে থেকে। গায়ের ওপর থেকে ফুলের পুরু পাল্লাটা সরতেই উঠে হাটুতে বসলো তাথৈ। তাশদীদ উঠে দাড়ালো। গায়ে যতোটুকো ধুলো, ফুল লেগেছে, ঝেরে নিলো। খেয়াল করলো তাথৈ তখনো স্থির হয়ে বসে। ততক্ষণে জ্যাম ছেড়েছে। আশেপাশে সবাই যারযার মতো ব্যস্ত। ওদের দিক খেয়াল নেই কারো। এক হাটু গেরে তাথৈর পাশে বসে গেলো তাশদীদ। বললো,

– কি ম্যাডাম? এভাবেই বসে থাকবেন?

– সে সরি।

শান্তশিষ্ট জবাব দিলো তাথৈ। তাশদীদ হতাশের মতো করে মাথা দুলালো। কিছুটা দুরে পরে থাকা স্টিকটা তাথৈয়ের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো,

– দোষ না করে সরি বলা আমার স্বভাবে নেই।

তাথৈ তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো ওর দিকে। কটমটে গলায় বললো,

– আমি সরে দাড়াতে বলেছিলাম!

– আর বলার পর ন্যানোসেকেন্ডও সময় দাওনি। তার আগেই…

বলা শেষ না করে তালুর ওপরপিঠে ঠোঁট মুছলো তাশদীদ। তাথৈয়ের মাথায় রক্ত চড়ে যায়। রাগান্বিত মুখটার পরিবর্তে তাশদীদের চোখ গেলো ওর হাতঘড়িতে। টুর্নামেন্টের সময় হয়ে এসেছে দেখে আর সময় নিলো না ও। উঠতে যাবে, কি মনে করে আরেকবার তাথৈয়ের দিকে তাকালো তাশদীদ। ওর চুলে কয়েকটা গাদার পাপড়ি লেগে আছে। তাশদীদের মনে পরে যায়, এর আগেও একবার এই চুলগুলোতে বাগানবিলাস লেগে থাকতে দেখেছিলো ও। ইচ্ছে তে করে ফুলগুলো হাতে সরিয়ে দিতে। কিন্তু মুখে বললো,

– ক্যাম্পাসে অনেক জায়গা আছে। এরপর থেকে স্টান্ট করার প্রয়োজনবোধ করলে সেখানেই করো। মাঝরাস্তায় না।

উঠে চলে গেলো তাশদীদ। তাথৈ রাস্তা থেকে উঠলো না। অল্পবয়স্ক ফুলের দোকানী এসে বললো,

– এইযে আপু? আপনি তো আমার গাদার মালা সব নষ্ট করে দিছেন। এখন এগুলো কি করবো বলেন।

তাথৈ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। মালা সবগুলো পুরোপুরি নষ্ট হয়নি। শুধু যে দিকটা রাস্তায় পরেছিলো, পাপড়ি মুচড়ে গেছে সে দিকটার। তাও কয়েকটার। ব্যাগ নামিয়ে সেখান থেকে হাজার টাকার চকচকে পাঁচটা নোট বের করলো তাথৈ। রাগ নিয়ে নোটগুলো বাড়িয়ে দিলো। দোকানীর মুখের দিকেও তাকালো না। চকচকে চোখে টাকাগুলো হাতিয়ে নেয় ছেলেটা৷ মনের খুশিটা বাইরে চোখেমুখেও প্রকাশ পেলো ওর। বড়লোকের ছেলেমেয়েদের রাগ অনেক কাজের হয়।
গা ভর্তি রাগ নিয়ে নিরব ঝড়ের মতো ক্লাসের জন্য আবারো ক্যাম্পাসে ফিরলো তাথৈ। শার্লি একাকি করিডরে ছিলো। রুমন নিজের ক্লাসে। এগিয়ে আসলো শার্লি। তাথৈ কাধ থেকে ব্যাগ নামালো। শার্লির হাতে বাঝিয়ে স্কেটিংয়ের জুতা খুলতে খুলতে বললো,

– জুতাটা দে তোর।

শার্লি জুতা খুলে খালি পায়ে দাড়ালো৷ আর তাথৈ ওর জুতা নিয়ে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। পানির কল ঘুরিয়ে আগে চেহারায় দুবার পানির ঝারা মারলো। তারপর চোখ তুলে তাকালো বেসিনের আয়নার। ওর চোখের সামনে তৎক্ষণাৎ ফুটে ওঠে কিছুক্ষণ আগের ঘটনাটাই। মাঝদুপুর, মাঝরাস্তা, শখানেক লোক, ফুলের ঝালড়ে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে তাশদীদের বুকে গিয়ে পরা ও, আকস্মিকতায় চোখ বন্ধ করে নেওয়া সে যুবক, আর তার ঠোঁট ছুইয়ে নিজেদের নির্লজ্জ প্রমাণ করা ওর ঠোঁট! তাথৈয়ের চোয়াল শক্ত হয়ে আসে। পাশের দেয়ালে ঠেকানো স্কেটিংয়ের স্টিকটা হাতে নেয় ও। শরীর সব রাগসমেত, সর্বোচ্চ শক্তিতে বারি লাগায় আয়নায়। ভেঙে গুড়োগুড়ো হয়ে যায় আয়নাটা। বাইরে থেকে কাচভাঙা আওয়াজ শুনে আঁতকে ওঠে শার্লি। তখনতখন ভেতরে উঁকি দেয় ও। তাথৈয়ের হাতের স্টিক দেখতে ওর বুঝের বাকি থাকে না যে ওই বেসিনের সামনের আয়না ভেঙে ফেলেছে। শার্লি আতংকিতভাবে বললো,

– এটা কি করলি? কেনো করলি?

তাথৈ নিচে পরে থাকা কাচের টুকরোর দিকে তাকিয়ে আছে। সেখানে নিজের আংশিক অবয়বগুলো দেখে, শান্তস্বরে বললো,

– ইট ওয়াজ এন এক্সিডেন্টাল কিস।

– কিহ? তুই নিজের হাতে ভাঙলি এটা। আর বলছিস এক্সিডেন্ট…

বলার মাঝপথে থেমে যায় শার্লি। ওর হুশ হয়, এক্সিডেন্ট না, এক্সিডেন্টাল কিস বলেছে তাথৈ। হা করে তাকিয়ে রইলো ও তাথৈয়ের দিকে। তাথৈ নিজের ঠোঁট ছুয়ে দিলো। শার্লির কাছ থেকে ব্যাগ নিয়ে, ওর জুতাও খুললো। একহাতে নিজের স্কেটিং শু আর স্টিক নিয়ে খালি পায়ে হাটা লাগালো ক্লাসের দিকে। হতবুদ্ধির মতো পা বাড়ালো শার্লিও। কিন্তু করিডোরে আসতেই কারো সাথে ধাক্কা লাগে ওর। মানুষটাকে না দেখেই ও খিচিয়ে বললো,

– চোখ কি…

– আমার চোখ ঠিকই আছে।

তুল্যর আওয়াজ শুনে, ওকে দেখে তেজী স্বর নিভে যায় শার্লির। তুল্য একপলক ক্লাসের দিকে তাকিয়ে বললো,

– তোর বান্ধবীর কি হয়েছে?

– প্রশ্নটা আমার। কি হয়েছে তোর বোনের? সবে ওয়াশরুমের বেসিনের আয়না ভেঙে এসেছে ও। একটুপরেই ম্যাম ওকে ডেকে পাঠাবে দেখিস।

আলো ওদেরকে পাশ কাটিয়ে আসছিলো। তুল্য আর শার্লি যে নিয়ম করে ঝগড়া করে, এটা ক্লাসের সবাই জানে। নতুন না। কিন্তু শার্লির কথায় পা থেমে যায় ওর। কিছুটা বিচলিত কন্ঠে বলে,

– আসার সময় শুনলাম কিছু মেয়ে প্রভোস্ট ম্যামের কেবিনে ওয়াশরুমের ভাঙা আয়না নিয়ে বলাবলি করছে। ওটা তাথৈ ভেঙেছে?

নিচু আওয়াজ শুনে ভ্রুকুচকে পাশে তাকালো তুল্য। যেমনটা ও ধারনা করেছিলো। তাথৈকে নিয়ে চিন্তা আর কে করবে? আর এতো নিচু স্বরে কেই বা কথা বলবে? এটা আলো। ওর কথার জবাবে শার্লি মাথা ওপরনিচ করে হ্যাঁ বুঝালো। আলো মাথা নাড়াতে নাড়াতে ক্লাসের দিকে পা বাড়ালো। বিড়বিড়িয়ে বলছেও, ‘এ মেয়েকে নিয়ে আর পারি না।’ সেটাও কানে আসলে তুল্যর। শার্লিও আলোর পেছনপেছন চলে আসতে উদ্যত হয়। অকস্মাৎ ওর হাত ধরে ফেলে তুল্য। ক্ষীপ্ত গলায় বললো,

– হোই? তুই কোথায় যাচ্ছিস? তোর সাথে আমার বোঝাপরা আছে।

– কিসের বোঝাপরা? তোর বোঝাপরা তো রুমনের সাথে থাকার কথা। ওকে ডাকবো?

তুল্য আরো শক্তিতে ওর হাত মুঠো করে ধরে। প্রথমে চমকালেও এবার ব্যথাতুর শব্দ করে ওঠে শার্লি। তুল্য ওকে আরেকটু কাছে টেনে দাড় করিয়ে বললো,

– খুব তো ছেলেদের মতো সাজ আর ভাব নিয়ে ঘুরিস, পারিস না তুল্যর সাথে? আর তুই থাকতেও তাথৈ ভাঙচুর করে কেনো? বান্ধবীকে সামলাতে পারিস না?

– তুই পারিস না তোর বোনকে সামলাতে?

পাল্টা প্রশ্ন শুনে রাগ হয় তুল্যর। ঝারা মেরে শার্লির হাত ছিড়ে দিলো ও। তেমনি ঝাঝালো গলায় বললো,

– গায়ের জোরে না পেরে কথার জোরে ঠিকই পার পেয়ে যাস। মেয়েদের মতো!

‘আমি মেয়েই!’ বলতে গিয়েও বললো না শার্লি। তখনই ক্লাসটিচার পাশ কাটাচ্ছিলো ওদের। তুল্য দুদন্ড শার্লিকে রাগ নিয়ে দেখে ক্লাসে ঢুকে গেলো। শার্লি হাফ ছাড়লো। তুল্য ওর যে হাত ধরেছিলো, সে কবজি মুঠো করে নিয়ে বুকে আঁকড়ে ধরলো। ভ্রুকুটি করে বিরবিরিয়ে বললো, ‘ভাই-বোন দুইটাই দিয়াশলাইয়ের ডগা! একটু এদিক থেকে ওদিক হলেই ঠাস করে আপন শক্তিতে জ্বলে ওঠে!’

তাশদীদ চেন্জ করে আয়নার সামনে দাড়ালো।
একটুপরেই টুর্নামেন্ট শুরু হবে। সেমিফাইনাল ম্যাচ। ইতিমধ্যে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ কোয়াটার জিতে ফাইনালে পৌছে গেছে। এই ম্যাচ জিতলে, ওদের সাথে মাস্টার্স প্রথম বর্ষ ফাইনাল ম্যাচ খেলবে। বড় আয়নাটায় তাকিয়ে বুকের বা পাশে হাত রাখলো তাশদীদ। সেখানটায় ব্যথা। জ্বলছে। জার্সির আড়ালে লালচে দাগ ওর বুকে। আর ওটা তাথৈয়ের নখের আঁচড়। রাস্তায় পরে থাকা সময়টায় তাথৈ সর্বশক্তিতে নখ বসিয়েছিলো ওর বুকে। শান্ত তাশদীদের পাশে এসে দাড়ালো। আয়না দেখে দুহাতে চুল উল্টে দিয়ে দেখে তাশদীদ বুকে হাত দিয়ে দাড়ানো। তাশদীদকে ধাক্কা লাগিয়ে বললো,

– কিরে? ওয়ার্ল্ড কাপ খেলবি নাকি? বুকে হাত দিয়ে জাতীয় সঙ্গীত গাচ্ছিস?

তাশদীদ শ্বাস ছাড়লো। ছোট্ট করে বললো,

– আমি আজ না খেললে হয় না শান্ত?

– কিহ? টুর্নামেন্টের আগে এসব কি বলছিস তুই?

চোখ কপালে তুলে বললো শান্ত। তাশদীদের বুঝ আসলো, আসলেই এসময় এটা বলা ঠিক হলো না। কিন্তু ওই বা কি করবে? মনমস্তিষ্ক ঠিক নেই ওর। আর খেলতে গেলে খেলার ধাচ ধরে রাখাটা জরুরি। শান্ত বিচলিত হয়ে বললো,

– খেলবি না কেনো তুই? আমি স্পেশাল রিকুয়েস্টে তোকে টিমে এনেছি। তুই এখন না খেললে টিম আমাকে ক্যালাবে তাশদীদ। বুঝতে পারছিস?

তাশদীদ একটু সময় নিলো। তারপর স্বাভাবিক হয়ে, হাসিমুখে বললো,

– এমনি বলেছি। খেলবো চল।

শান্ত যেনো হাফ ছেড়ে বাচলো। ঠিক সময়মতো কোর্টে নামলো দু দল। খেলা শুরু হয়। কিন্তু তাশদীদ শুরু থেকেই খেলা থেকে পুরোপুরিভাবে বিচ্যুত ছিলো। এক অনাকাঙ্ক্ষিত রমনী, অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ওর বুকে এসে পরেছে, ওর বুকের বা পাশ আঁচড়ে দিয়েছে। সেখানে না থেমে, ওর ঠোঁটে ঠোঁট ছুয়ে গেছে। সে দৃশ্য, সে মুহুর্তের রেশ তাশদীদের মাথা থেকে বেরোচ্ছেই না। বল বাউন্স করাতে করাতেই অকস্মাক হাত থেমে যাচ্ছে ওর, বাস্কেটের কাছাকাছি গিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে বল প্রতিপক্ষের হাতে ছেড়ে দিচ্ছে, মাথায় ঘুরঘুর করতে থাকা ভাবনার জন্য ঠিকঠাকমতো বাস্কেটে বল ছুড়তে পারছে না। কলেজ, ভার্সিটিতে আঙুলের ডগায় বল নিয়ে বাস্কেটবলের কোর্ট দাপিয়ে বেড়ানো তাশদীদ আজ খেলায় হারার বন্দোবস্ত করে দিচ্ছে। শান্ত প্রথমে বিস্ময় নিয়ে দেখছিলো। কিন্তু এবার ওর রাগ হচ্ছে। অর্ধবিরতির ঘন্টা পরতেই তাশদীদ প্রচন্ড বিব্রতি নিয়ে কোর্টের বাইরে বসে গেলো। শান্ত হনহনিয়ে এসে ওর পাশে দাড়িয়ে বললো,

– কি করছিস কি তাশদীদ? খেলছিস নাকি খেলার মাঝে কোনো স্বপ্নলোকে ভ্রমণ করছিস?

তাশদীদ আঙুলে কপাল ডললো। বললো,

– স্কোর কতো?

– বাস্কেট করেছিস যে স্কোর জানতে চাস? স্কোরবোর্ড দেখ! ওরা ১৬-৯ এ আগানো। তুই তো একটাও বাস্কেট করিসনি৷ পোলাপাইন ডিফেন্ড না করলে এতোক্ষণে ৩০-৯ হয়ে যেতো!

তাশদীদ সেভাবেই কপাল ডলছে। টিটু একটা পানির বোতল নিয়ে আসলো। ও খেলছে না। বোতলটা তাশদীদকে দিয়ে বললো,

– কি হইছে তোর? কিসের টেনশনে আছিস?

তাশদীদ পানি খেয়ে সামনে তাকালো। ওর চোখ গেলো কোর্টের বিপরীত পাশের রাস্তায় দাড়ানো তুল্যর দিকে। ক্লাস শেষে ফাইনালের প্রতিদ্বন্দ্বী দল দেখতে কোর্টে এসেছে তুল্য। স্কোরবোর্ড দেখে তুল্য হাসি দিলো একটা। তাশদীদের বিপরীত দলের টিমলিডারকে চেনে ও। ডাক লাগিয়ে বললো,

– ভাই? দেখা হচ্ছে ফাইনালে। বরাবরের মতো কালকেও আমার টিম এটাকে খেলবে। টিমমেম্বারদের ডিফেন্ড শিখিয়ে নিয়ে আসিয়েন।

তাশদীদ মুচকি হাসলো। তুল্য ধরেই নিয়েছে তাশদীদের দল জিতবে না। সবচেয়ে বড় কথা, তুল্যর আত্মবিশ্বাস! কি পরিমানে আত্নবিশ্বাস থাকলে কেউ প্রতিপক্ষ দলকে গেমপ্লান বলে? তাশদীদ দেখলো তুল্যর ওপাশ দিয়ে তাথৈ স্কেটিং করে যাচ্ছে। ভাইয়ের কথা শুনেছে ও। কাধের ব্যাগটা ডানহাতে ধরে ছিলো তাথৈ। তাশদীদের সাথে চোখাচোখি হতেই ডানহাতের বৃদ্ধাঙ্গুল আর শাহাদত আঙুল ছেড়ে দিয়ে ‘L’ বোঝালো তাথৈ। যার মানে, Loser(পরাজিত) তাশদীদ হেসে উঠে দাড়ালো। পানির বোতলটা টিটুকে ছুড়ে মেরে, গলা উচিয়ে বললো,

– মিস্টার তুল্য?

তুল্য কোর্টের বিপরীতপাশে দাড়ানো তাশদীদের দিকে তাকালো। গতি কমালো তাথৈও। তাশদীদ তেমনি জোরেশোরে বললো,

– কাল ফাইনালে আমরা এটাকে খেলবো। আই থিংক এ ম্যাচের জন্য আপনার টিমের ডিফেন্ড শিখে আসা উচিত।

তাশদীদের সম্মুখ প্রতিযোগীতার আহবান শুনে দুহাত মুঠো করে নিলো তুল্য। ডিপার্টমেন্টের বাইরে ক্যাম্পাসেও ওর বাস্কেটবল খেলা নিয়ে নামডাক আছে। সেটা খন্ডন হবার মতো কিছু ও কল্পনাও করতে পারেনা। তাথৈ আর শার্লি তুল্যর কিছুটা পেছনেই ছিলো। তাশদীদ মুচকি হেসে বলটা হাতে নিলো৷ শান্তও হাসলো এবারে। তাশদীদের কথা, প্রতিক্রিয়ার কারন না জানলেও, ফলাফলটা ওর অনুকুলে, এটুক বঝতে বাকি নেই ওর। দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরু হয়ে যায়। আর তার কয়েকসেকেন্ডের মধ্যেই দর্শকদের মাঝে হৈহৈ রব। এনাউন্স আসে, ‘তাশদীদ ওয়াসীরের প্রথম বাস্কেট! সর্বনিম্ন সাত সেকেন্ডে বাস্কেট করার রেকর্ড করেছে সে।’

তুল্য নিজের কানকে বিশ্বাস করলো না। কিন্তু চোখে দেখা ম্যাচ অবিশ্বাস করার উপায়ও ওর নেই। সত্যিই কোর্টের মাঝখান থেকে ঝড়ের বেগে বল নিয়ে বাস্কেট করেছে তাশদীদ। দুর থেকে তাথৈ, শার্লিকে দেখে রুমনও ছুটতে ছুটতে হাজির। কিন্তু এসেই তাশদীদের নাম শুনে খুশি হয়ে গেলো ও। উকিঝুকি দিয়ে তাশদীদকে খুজতে লাগলো। তাশদীদ বাস্কেট করে মৃদ্যুবেগে কোর্টের একপাশে আসলো। তাথৈয়ের দিক তাকিয়ে, বা হাতের ওপরপিঠে ঠোঁটটা ডলা দিলো ও। একইসাথে শাহাদত আর মধ্য আঙুলে ‘V’ দেখালো। দুপুরের ঘটনা, সাথে Loser বলার জবাব, দুটো কারনেই তাথৈয়ের গা রাগে শিরশির করে ওঠে। তুল্যর অবিশ্বাসী চাওনি আর তাথৈয়ের রাগ, দুটোকে বল বানিয়ে তাশদীদ যখন খেলায় ব্যস্ত, তাথৈয়ের পাশে দাড়িয়ে রুমন তখন হা হয়ে ওকে দেখছে আর বলছে,

– জিতলে আমাকে কিস করবে, ছেলেটা কি ইশারায় আমাকে এমন কিছু মিন করলো শার্লি?

#চলবে…