কাশফুলের ভালোবাসা পর্ব-১৯

0
687

#কাশফুলের_ভালোবাসা
#পর্বঃ১৯
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

আজ ভার্সিটিতে তাড়াতাড়ি এসেছে অথৈ।সে একা একা ক্যাম্পাসটা ঘুরে দেখছে।ঘুরতে ঘুরতে অথৈ একটা নির্জন জায়গায় চলে আসে।জায়গাটা নির্জন যে তা না তবে ভালো স্টুডেন্টরা এদিকটায় কম আসে।

” এইযে ব্ল্যাকপিংক এদিকে এসো।”

অথৈ নিজের দিকে তাকাই।দেখে সেই আজ ব্ল্যাক আর পিংকের কমবিশেনে একটা ড্রেস পড়েছে।অথৈ কিছুনা ভেবেই তাদের সামনে এসে দাঁড়ায়।

” কি হয়েছে?”

” আমরা তোমার সিনিয়ার সো রেসপেক্ট দিয়ে কথা বলো।” একটা মেয়ে বলে।

” আমাকে কেন ডেকেছো?”

” বাহ্ মেয়ের ঝাঁঝ আছে বলতে হবে।” একটা ছেলে বলে।

” ওসব ঝাঁঝটাঝ না আমাদের সামনে চলবেনা।” আরেকটা ছেলে বলে।

” আমি কোন মরিচ বা কোলড্রিংকের বোতল না যে আমার মধ্যে ঝাঁঝ থাকবে।আর থাকলেও তোমাদের তাকে কি?কি জন্য ডেকেছো সেটা বলো নয়তো ফুটো।”

” আই লাইক ইউর এটিটিউট।” প্রথম ছেলেটা বলে।

অথৈ বিরক্তদৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকাই।

” তো ব্ল্যাকপিংক তুমি এখন একটা কাজ করবে।” প্রথম ছেলেটা বলে।

” কি কাজ তাড়াতাড়ি বলো।তোমাদের মতো এতো ঢং করার সময় আমার নেই।”

” যেই ছেলেটা প্রথম এই গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকবে তাকে গিয়ে একটা কিস করে আসবে।”

” আর যদি না করি তো?” ভাবলেশহীন ভাবে বলে অথৈ।

” না করলে তোমার পানিশমেন্ট আছে।” মেয়েটা বলে।

” করবোনা।দাও পানিশমেন্ট।”

” এই মেয়ে তোমার আমাদের ভয় লাগছেনা?” প্রথম ছেলেটা বলে।

” ভয় কেন লাগবো?অবশ্য ছোট বাচ্চা হলে ঠিকই ভয় পেতো।তোমাদের আচরণের যা অবস্থা।আর শোন আমি নিউ স্টুডেন্ট না।আমি সেকেন্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট আর তোমরা থার্ড ইয়ারে।মানে এক ইয়ার সিনিয়র জুনিয়ার।সো আমি তোমাদের কোনকালেই ভয় পাবোনা।আর তোমরা আমার থেকে আরো বড় হলেও আমি ভয় পেতাম না।”

অথৈ চলে যেতে নেয়।তবে কিছুদূর গিয়ে আবার পেছন ফিরে তাকাই।

” আর হ্যাঁ রেগিংটা না ভালো করে করতে শিখো।তোমাদের এই ফুদুসা রেগিং দেখে কেউ ভয় পাবেনা।এবার একটু নতুন স্টাইলে রেগিং করতে শিখো।আর যদি না জানো তাহলে আমার কাছে এসো আমি টিপস দিবো আসল রেগিং কিভাবে করতে হয়।বাই বাই।”

অথৈ হেলেদুলে সেখান থেকে চলে যায়।সবাই অবাক হয়ে অথৈয়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।তাদের সাথে আগেও অনেকে এভাবে কথা বলেছে কিন্তু কেউ কখনো বলেনি ‘রেগিং এর টিপস লাগছে আমার কাছে এসো।’ অথৈ এর অদ্ভুত কথায় সবাই অবাকের চূড়ান্ত পর্যায় চলে গিয়েছে।তবে প্রথম ছেলেটা এক অদ্ভুত দৃষ্টিতে অথৈয়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছিল।তবে এতোক্ষণ পর্যন্ত এই ঘটনাটা যে শুধু মাত্র চারজন ব্যক্তি দেখছিল তা কিন্তু না এখানে একজন পঞ্চম ব্যক্তিও ছিল আর সেটা আর কেউ নয় বরং শান্ত।অথৈয়ের সবকথা শান্ত শুনেছে আর অথৈয়ের এসব কথা শুনে শান্ত অবাক প্লাস অনেকটা হ্যাপি এটা জেনে যে অথৈ নিজেই নিজেকে প্রটেক্ট করতে পারে।তবে শান্ত ওই প্রথম ছেলেটার হাবভাবও খেয়াল করেছে।ছেলেটার নাম রুদ্র।প্লে-বয় টাইপের ছেলে।কাপড়ের মতো সে মেয়ে চেঞ্জ করে।এই বিষয় নিয়ে শান্তের কিছুটা চিন্তা হচ্ছে তবে আজকের ঘটনায় শান্ত বুঝে গিয়ে অথৈয়ের কোন সমস্যা হলে সে নিজেই সলভ করতে পারবে।আর তা না হলে সে আছে তো।
_________________________________________

ক্লাসে টিচার পড়াছে।সবাই মন দিয়ে স্যারের কথা শুনছে কিন্তু মেহেকের পড়ায় কোন মন নেই।তার মন অন্যকোথাও।আজ আবারো মেহেকের মুগ্ধের কথা মনে পড়েছে।সে এখন মুগ্ধের কথায় ভাবছে।

” এই মেয়ে দাঁড়াও।”

স্যার মেহেককে ডাকছে কিন্তু সে তো তার চিন্তা মগ্ন।

” মেহু,স্যার ডাকছে।” রিফা আস্তে আস্তে মেহেককে বলে।কিন্তু মেহেক এখনো নিজের চিন্তায় মগ্ন।

” মেহু স্যার ডাকছে।” অথৈ মেহেককে ধাক্কা দেয়।ধাক্কা খেয়ে মেহেক নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে।ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসলে মেহেক তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়ায়।

” মন কোথায় তোমার?” স্যার রেগে বলে।

স্যারের রাগি গলা শুনে মেহেকের জান যায় যায় অবস্থা।

” পড়া পারবে?”

মেহেক মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে।স্যার পড়া জিজ্ঞেস করলে ভয়ের চোটে মেহেক সব গুলিয়ে ফেলে আর কিছুই ঠিক মতো বলতে পারেনা।স্যার রেগে মেহেককে দাঁড়িয়ে থাকতে বলে।

মেহেক চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।হঠাৎ তার চোখ যায় জানালার বাইরে।সৌন্দর্য তার দিকে ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে আছে।সৌন্দর্যকে দেখে মেহেক জিভে কামড় দেয়।

” হায় আল্লাহ মিস্টার সৌন্দর্য আমাকে শাস্তি পেতে দেখে নিয়েছে।ছিঃ,ছিঃ,ছিঃ এবার না জানি উনি আমার ব্যপারে কি ভাববে।”

মেহেক আস্তে আস্তে জানালার দিকে তাকাই তবে এবার সে আর সৌন্দর্যকে দেখতে পাইনা।এটা দেখে মেহেক স্বস্তির নিশ্বাস নেই।

ক্যাম্পাসে একটা গাছের নিচে বসে আছে মেহেক,অথৈ আর রিফা।মেহেক আবারো মুগ্ধের খেয়ালে ডুবে গিয়েছে।অথৈ আর রিফা নিজের মতে কথা বলছে।হঠাৎ তাদের খেয়াল হয় মেহেক আবারো ভাবনায় ডুবে গিয়েছে।

” মেহু,মেহু এই মেহু।” ধাক্কা দিয়ে বলে রিফা।

” হ্যাঁ বল।”

” কি হ্যাঁ বল?সবসময় কোথায় হারিয়ে যাস?ক্লাসেও তুই অন্যমন্সক ছিলিস আর এখানো অন্যমন্সক আছিস।কি হয়েছে বলতো।” অথৈ বলে।

” না কিছু হয়নি।”

” সত্যি তো?” সন্দেহ নিয়ে জিজ্ঞেস করে অথৈ।

” আরে বাবা হ্যাঁ।এই রিফু তোর ফোন বাজছে।দেখ কে ফোন করেছে।”

রিফা ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখে ইভান ফোন দিয়েছে।ইভানের ফোন দেখে বাঁকা হাসে রিফা।

” কে আপনি?আর আমার নম্বর কোথা থেকে পেলেন?”

” কে আপনি মানে?বাবু আমি ইভান,তুমি আমাকে ভুলে গেলে।”

” কে আপনি?আপনাকে তো আমি চিনিইনা ভুলবো কেমন করে?”

” বাবু এরকম করোনা।আমার কান্না পাচ্ছে।” ঢং করে বলে ইভান।

” ওলে আমার বাবুরে।কেন?সেদিন না কে জেনো বলেছিল আমাকে আর ফোন দিবেনা।”

” আরে সেটা তো কথার কথার বলেছিলাম।কিন্তু তুমি তো সত্যিই আমার সাথে কথা বলোনি।কাল কতো বার ফোন করেছিলাম।”

” ধরবেনা বললে কেন?যাও তুমি তোমার রোমান্টিক মুড নিয়ে থাকো।আমার সাথে কথা বলা লাগবেনা।”

” আরে বাবু রাগ করোনা।আচ্ছা তুমি এখন কোথাই?”

” ভার্সিটি।তুমিও মনে হয় কলেজে?”

” হুম।ব্রেক ছিলো তাই ভাবলাম তোমাকে একটা কল দিয়।”

” এই আমাকে দে অনেক্ষণ কথা বলেছিস।” এটা বলেই অথৈ এর হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে নেয় অথৈ।

” বাবু কেমন আছো তুমি?” ঢং করে বলে অথৈ।

” আরে আমার কলিজাটা কতদিন পর তোমাকে দেখলাম।জানো কত মিস করেছি আমি তোমাকে।”

” হু….সব মিথ্যা কথা।তুমি আমাকে একটুও মিস করোনি।মিস করলে কি আর আমার সাথে কথা না বলে থাকতে নাকি?” রাগ করার অভিনয় করে বলে অথৈ।

” আরে কলিজা বোঝোনা,ওই রিফু আছেনা ওর জন্যই তো আমার তোমার কাছ থেকে দূরে দূরে থাকতে হয়।”

” হু….ওতোটা একটা পেত্নী।ও হচ্ছে বিরিয়ানির মধ্যে এলাচি।বোঝোনা ও আমাদের ভালোবাসা দেখে জ্বলে।”

” ঠিক বলেছো কলিজা।”

” আমি কিন্তু এখানে আছি।”

” তো কি হয়েছে?তোরে ভয় পাই নাকি আমি।” ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে অথৈ।

” ইভান সোনা তোমার না এখন ক্লাস আছে?”

” হুম আছে তো।”

” তো যা ক্লাসে যা।লুইচ্চা বেটা।”

অথৈর এর থেকে ফোনটা নিয়ে কট করে কেটে দেয় রিফা।অথৈয়ের দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকে মুখ ভেঙিয়ে ব্যাগ নিয়ে ক্লাসে উদ্দেশ্য যেতে থাকে রিফা।রিফাকে রাগাতে পেরে তো অথৈ অনেক খুশি।

” তুই আবার মেয়েটাকে রাগিয়ে দিলি।” ব্যাগ গোছাতে গোছাতে মেহেক বলে।

” কি করবো বল,ওরে রাগাতে ভালোই লাগে।”
__________________________________________

ভার্সিটি থেকে এসে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামে মেহেক।তবে আজ নিচে নেমে কেন যেন মেহেকের ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।মেহেক এদিক-ওদিক খুঁজে রান্নাঘরের দিকে যেতে থাকে।

” আপুনি,আপুনি,এই আপুনি।”

কিন্তু সৃষ্টির কোন সাড়াশব্দ মেহেক পাচ্ছেনা।মেহেক আগ্রহ নিয়ে রান্নাঘরে যায় কিন্তু যে যা দেখে তা সে কখনোই আশাকরি।

” আপুনি….” চিৎকার বলে উঠে মেহেক।

চলবে…….