কাশফুলের ভালোবাসা পর্ব-২৭

0
676

#কাশফুলের_ভালোবাসা
#পর্বঃ২৭
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

অথৈ আর রিফা মেহেকের মুড ঠিক করার জন্য ভার্সিটি শেষে তাকে একটা ফুসকার স্টলে।অথৈ এসেছে তাই তার পেছন পেছন শান্তও চলে আসে।লিজা জেদ ধরেছে সেও ফুচকা খাবে তাই আদিব আর মহুয়া তার পেছন পেছন চলে আসে।সবাই যখন চলেই এলো তাই বেচারা সৌন্দর্য আর স্পর্শ তাদের পেছন পেছন ফুসকার স্টলে চলে এলো।

সবাই সবার ইচ্ছে মতো ফুসকা অর্ডার দেয়।মেহেক খেতে না চাইলেও রিফার তার মুখে জোর করে একটা ফুসকা ঢুকিয়ে দেয়।মেহেকও আর কোন কথা না বলে ফুসকা চিবুতে থাকে।প্রথমটা শেষ হলে অনেকটা সময় পর মেহেক আরেকটা ফুসকা মুখে পুড়ে।তবে দ্বিতীয়টা খাবার পর মেহেকের অবস্থা খুবই খারাপ কারণ ফুসকাগুলো মাত্রাধিক ঝাল দেওয়া।মেহেক তার ব্যাগ থেকে পানির বোতলটা বের করে ঢকঢক করে সবটুকু পানি খেয়ে ফেলে তবে তাও তার ঝাল কমেনা।

” রিফু,পানি আছে?”

” হুম আছে তো কিন্তু কেন?”

” পানির বোতল দে তাড়াতাড়ি।”

রিফা তার ব্যাগ থেকে পানি দেয়।মেহেক রিফার সব পানিও খেয়ে ফেলে কিন্তু তাও তার ঝাল কমার নামই নিচ্ছেনা।

” কিরে কি হয়েছে?এভাবে পানি খাচ্ছিস কেন?”

” রিফু ঝাল লাগছে।প্লিজ কিছু কর।”

” আচ্ছা দাঁড়া দেখছি কি করা যায়।তুই একটু দাঁড়া।”

রিফা দৌড়ে সাইডে চলে যায় যেখানে ছেলেরা দাঁড়িয়ে ছিল।রিফা গিয়ে তাদের কিছু বলে।রিফার কথা শুনে সৌন্দর্য তাড়াতাড়ি কোথাও চলে যায় আর কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে রিফার হাতে কিছু দেয়।রিফাও সৌন্দর্যের দেওয়া জিনিসটা নিয়ে মেহেকের কাছে নিয়ে আসে।

” মেহু এইনে আইসক্রিমটা তাড়াতাড়ি খেয়ে নেয়।”

মেহেক কোনকিছু না ভেবে প্যাকেট খুলে আইসক্রিম খেতে থাকে।আইসক্রিম খাওয়া কয়েক সেকেন্ড পর মেহেক ঝাল কমে যায়।ঝাল কমায় মেহেক স্বস্তির নিশ্বাস নেয়।হঠাৎ মেহেকের খেয়াল হয় সে তাড়াহুড়োতে আইসক্রিম খেয়ে ফেলেছে।

” রিফু তুই এটা কি করলি?”

” কেন?আমি আবার কি করলাম?”

” তুই আমাকে আইসক্রিম দিলি!এবার যদি ঠান্ডা লেগে যায় তো?”

” ও আচ্ছা এই ব্যপার,আমি তো ভাবলাম কিনা কি।শোন একদিন আইসক্রিম খেলে কিছু হবেনা।আর বেশি সমস্যা মনে হলে বাসায় গিয়ে আগেভাগে ওষুধ খেয়ে নিস।তাহলে আর কিছু হবেনা।”

” হুম সেটা ঠিক বলেছিস।আচ্ছা তোকে আইসক্রিম কে দিয়ে?”

” দাভাই দিয়েছে।”

” ওনাকে আবার বলতে গেলি কেন?”

” তো কি হয়েছে?খা এবার,প্লাস্টিক মেয়ে একটা।একটুও ঝাল খেতে পারেনা।আমি তো আরো মামা বলতে যাচ্ছিলাম আরো ঝাল বাড়িয়ে দিতে।”

” হ্যাঁ আমি প্লাস্টিক আর তুই ওয়ানডার ওমেন।খা ঝাল,ঝালের সাগরে ডুবকি মার।”

” ওই তোরা না খেয়ে কি এতো ফুসুরফুসুর করছিস?” অথৈ বলে।

” কিছুনা।খাওয়াতে মন দে।”

এদিকে মহুয়া কঠিন মুখ করে আবারো মেহেকের দিকে তাকিয়ে আছে।মেহেকের প্রতি সৌন্দর্যের এতো কেয়ার মহুয়ার পছন্দ হচ্ছে না।মহুয়া “আমার হয়ে গিয়েছে” বলে সেখান থেকে চলে যেতে নেয়।মহুয়ার যাওয়া দেখে লিজাও সবার থেকে বিদায় নিয়ে তাড়াতাড়ি মহুয়ার পেছন পেছন যেতে থাকে।

” কিরে এভাবে চলে এলি যে?ফুসকাও তো খেলিনা।”

” কিছুনা।”

” সৌন্দর্যের কাজটা তোর ভালো লাগেনি তাইনা?”

লিজার প্রশ্ন শুনে মহুয়া তার দিকে তাকাই তবে কিছু বলেনা।

” তুই সৌন্দর্যকে বলে দিচ্ছিনা কেন বলতো?বলে দেনা।আর কত নিজে নিজে কষ্ট পাবি?কিরে শুনতে পাচ্ছিস আমি কি বলছি?এই মহুয়া?”

লিজা মহুয়াকে ডেকেই চলেছে কিন্তু মহুয়া লিজাকে ইগনোর করে সেখান থেকে চলে যায়।
_________________________________________

নিজের ক্লাসের দিকে যাচ্ছে অথৈ তবে কারো আওয়াজ শুনে সে থেমে যায়।অথৈ পেছনে ফিরে দেখে রুদ্র তাকে ডেকেছে।রুদ্রকে দেখে অথৈয়ের কপাল কুচকে যায় বিরক্ততে।রুদ্র দৌড়ে এসে অথৈয়ের সামনে দাঁড়ায়।

” হেই ব্ল্যাকপিংক।”

” আমার নাম ব্ল্যাকপিংক না।” বিরক্ত নিয়ে বলে অথৈ।

” তো কি তোমার নাম?”

” আমার নাম অথৈ ইসলাম।সো নেক্সট টাইম নাম ধরে ডাকবেন।”

” ওকে বাট নট ইন্টারেস্ট।আমি তো ব্ল্যাকপিংকই বলবো।”

রুদ্রের উওর শুনে অথৈয়ের বিরক্তিবোধ আরো বেড়ে যায়।

” তো ব্ল্যাকপিংক কেমন আছো?”

” দেখতেই তো পাচ্ছেন কেমন আছি।”

” হুম দেখেছি।” অথৈকে একবার উপর থেকে নিচে পড়ক করে নেয় রুদ্র।রুদ্রের চাহনি অথৈয়ের মোটেও ভালো লাগেনি।

” কোথায় যাচ্ছো এখন ব্ল্যাকপিংক?”

” ভার্সিটিতে যখন এসেছি তখন নিশ্চয়ই ক্লাসেই যাবো।ক্লাস ফাঁকি দিয়ে তো আর ক্যাম্পাসে ঘুরবোনা।” রুদ্র বুঝতে পারে অথৈ কথাটা তাকেই ইঙ্গিত করে বলেছে তবে সে এটাকে তেমন একটা পাত্তা দেয়না।

” আই লাইক ইউ এটিটিউট এন্ড ইউ আর সো হট।” বাঁকা হেসে বলে রুদ্র।

রুদ্রের মুখে এসব বাজে শব্দ শুনে অথৈয়ের ইচ্ছে করছে তাকে দুটো থাপ্পড় দিতে।তবে অথৈ কোন সিংরেট করতে চাইনা বলে সে নিজেকের সংযত করে।

” তুমি এখানে কি করছো?”

কারো শব্দ শুনে রুদ্র আর অথৈ পেছন ফিরে তাকাই।তাদের পেছনে পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শান্ত।শান্ত দেখে অথৈ মোটামুটি খুশি হলেও রুদ্র মোটেও খুশি হয়নি।

” তোমার কি ক্লাস নেই এখন?” গম্ভীরভাবে অথৈকে জিজ্ঞেস করে শান্ত।

অথৈ মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সম্মতি দেয়।

” তো ক্লাসে না গিয়ে এখানে কি করছো?যাও ক্লাসে যাও।” কিছুটা চিৎকার করে বলে শান্ত।

শান্তের বিহেভিয়ারে অথৈ ভয় তো পায়নি বরং তার বিরক্তবোধ আরো কয়েকগুণ বের গিয়েছে।অথৈ বিরবির করে শান্ত আর রুদ্রকে বকা দিতে দিতে সেই স্থান ত্যাগ করে।অথৈ চলে যেতেই শান্ত রাগী রাগী ফেইস করে রুদ্রের দিকে তাকাই তবে রুদ্র সেটাকে পাত্তাই দেয়না।শান্ত রুদ্রের কাছে এসে বলে—

” ও আমার।সো ওর থেকে কোন এক্সপেক্টটেশন না রাখাই ভালো।”

” আমিও দেখবো ও কার হয়।” ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে কথাটা বলে চলে যায় রুদ্র।রুদ্রের কথা শুনে শান্তের রাগ আরো বেরে যায়।সে পাশে থাকা একটা গাছে পাঞ্চ মারে।
___________________________________________

পার্কে বসে রিফার জন্য অপেক্ষা করছে ইভান।

” কেন দেখা করতে ডেকেছো?” তাড়াহুড়ো করে বলে রিফা।রিফাকে দেখে ইভার মুচকি হাসে।

” এসেছো তুমি!বসো।”

” আমি বসবোনা।বাসায় কাউকে বলে আসিনি।কেউ জানতে পারলে অনেক সমস্যা হয়ে যাবে।”

” সমস্যা যেন না হয় সেটারই সমাধান নিয়ে এসেছি।”

” মানে?”

” বসো আগে তুমি।” জোর করে রিফাকে বেঞ্জে বসিয়ে দেয় ইভান।তারপর তার হাত ধরে প্রশ্ন করে “তুমি আমাকে সত্যিকারের ভালোবাসো তো শ্যামলীনি?”

” এটা কোন ধরনের প্রশ্ন ইভান?” নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে রিফা।

” আমি যা জিজ্ঞেস করছি তার উওর দাও শ্যামলীনি।”

” অবশ্যই ভালোবাসি।কিন্তু হঠাৎ এ প্রশ্ন করছো কেন?”

” আমি জানতাম তুমি উওরে এটাই বলবে।আই আম সো হ্যাপি।”

” তুমি আমাকে এটা জিজ্ঞেস করা জন্য ডেকেছো?” কিছু বিরক্ত নিয়ে বলে রিফা।

” আরে না না এর থেকেও বড় কিছু বলবো তোমাকে।আমার কথা শুনে তুমি খুশিতে পাগল হয়ে যাবে।”

” কি বলবে শুনি?”

” চলো শ্যামবতী আমরা বিয়ে করে ফেলি।”

” কি?” হুট করে দাঁড়িয়ে পড়ে রিফা।

” আরে দাঁড়িয়ে পড়লে কেন?বসো বসো।”

” আরে রাখোতো তোমার বসা।এই তুমি আবার বলোতো তুমি কি বলেছো?”

” বলেছি চলো বাড়িতে আমাদের সবার কথা বলে দিয় আর বিয়ে করে ফেলি।”

” ইভান তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে?কিসব বলছো?তুমি এখনো ডাক্তারি পড়ছো আর আমিও পড়াশোনা করছি।আমার কথা না হয় বাদ দিলাম কিন্তু তুমি এখনো সেটেল না,তুমি এখনো তোমার বাবা-মার উপর নির্ভরশীল।এখন যদি বাড়ির লোকেরা আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারে জানতে পারে তো লাভের লাভতো কিছুই হবেনা বরং উল্টো সবাই আমাদের ধরে বেঁধে অন্যকারোর সাথে বিয়ে দিয়ে দেবে।”

” আরে এরকম কিছু হবেনা।আর তোমার আব্বু আর আমার আব্বু তো ফ্রেন্ড।তারা এতো আমারো খুশি হবে।”

” না না আমি তোমার সিদ্ধান্তে মোটেও সহমত নয়।”

” আরে আমি ছেলে হয়ে বলছি চলো বিয়ে করে ফেলি কোথাই তুমি তা শুনে খুশি হবে কিন্তু তুমি তো উল্টোটা করছো।”

” যায় বলোনা কেন আমি কোন রিক্স নিতে চাইনা।প্লিজ তুমি আর আমাকে জোর করোনা।বাই।”

রিফা রেগে পার্ক থেকে বেরিয়ে যায়।ইভান তাকে পেছন থেকে ডাকেই চলেছে তবে রিফা একবারের জন্যও পেছন ফিরে তাকাইনা।

চলবে…..