কাশফুলের মেলা পর্ব-১২

0
342

#কাশফুলের_মেলা
#পর্ব_১২
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

অনু আবিরের কথা শুনে ওর দিকে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।ওর সঙ্গে যাবে কী না সেটা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দে ভুগছে।এক প্রকার মনের সাথে যুদ্ধ করছে বলতে গেলে। মন বলছে আবিরের সাথে যেতে কিন্তু মস্তিষ্ক না করছে।আজকালকার ছেলেদের বিশ্বাস নেই।ওরা যেকোনো সময় যেকোনো অঘটন ঘটিয়ে ফেলতে পারে।

অনুকে এমন বিষন্নভাবে কিছু ভাবতে দেখে আবির এবার বেশ সুক্ষ্ম দৃষ্টি নিয়ে ওর দিকে তাকালো। হালকা পাতলা গায়ের গঠন দেখতে একদমি খারাপ না।আবির এবার বেশ শক্ত কন্ঠেই বলল,,

“দেখো আমি এতো টাইম নষ্ট করতে পারবনা। তুমি যদি যেতে চাও তাহলে আসো তা নাহলে এখানেই পরে থাকো।

অনু নিজের তর্জনী আঙুলের নখটা কামড়াতে কামড়াতে বলল,,

“আগে বলুন আপনি আমার কোনো ক্ষতি করবেননা?

“মানে তোমার কী আমাকে ধর্ষক মনে হয়?

অনু ওর ভ্রু দুটি দুই দিকে প্রসারিত করে বলল,

“আমি সেটা কখন বললাম?

“তুমি তো সেটাই মিন করছো।দেখো তোমাকে সাহায্য করছি বলে এটা ভাববে না যে আমার তোমার প্রতি ইন্টারেস্ট আছে।তোমাদের মতো মেয়েদের প্রতি আবির রায়হান চৌধুরীর কোনো ইন্টারেস্ট নেই। আমি আর একবার বলব আসার কথা তারপর আসা না আসা এজ ইওর উইশ।

অনু কিছুক্ষণ ভাবার ভঙ্গি করে বলল,

“আচ্ছা ঠিকাছে চলুন।

অনু আবিরের সাথেই শহরে যাচ্ছে।যতই সামনে এগুচ্ছে ক্রমশ তার মনের ভয় বেরে চলেছে।আদৌ সে পাবে তো তার বাবা মাকে খুঁজে।আবেগে তো চলে এলো গাও ছেড়ে।নিজের শৈশবকে বড্ড মিস করছে।আবির বেশ কয়েকবার অনুর দিকে আঁড়চোখে তাকিয়েছে।অনু ওর বড় ওরনাটা দিয়ে সারা শরীর ডেকে রেখেছে।চুল বেয়ে টপটপ করে পানি পরছে এখনও।বেবি হেয়ারগুলো কপালের সাথে ভিজে লেপ্টে আছে। আবির কিছুক্ষন নিরব থেকে গলা খাকারি দিয়ে বলল,

“হুয়াট সঙ্গস্ ডু ইউ লিসেন টু?

আবিরের কথা শুনে অনু ওর দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।আবির কী বলেছে কিছুই মাথায় ঢুকেনি ওর। অনুকে এভাবে আবিরের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আবিরও ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।যেন সে অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছে। তারপরও নিজেকে কিছুটা ঠিক করে বলল,

“তুমি কী আমার কথা বুঝতে পারনি একটু আগে আমি যা বললাম?

অনু মাথা নাড়িয়ে না বলল।আবির আবারও রিপিট করে বলল,

“হুয়াট সঙ্গস্ ডু ইউ লিসেন টু?

অনু ভ্রু কুঁচকে বলল,

“এটার মানে কী?

আবির বেশ অবাক চোখে ওর দিকে তাকিয়ে বলল,

“কেনো তুমি জানোনা?

“না।

“ইয়ার্কি করেন নাকি?এখনকার দিনে ইংলিশ জানেনা সেটা ভাবা যায়।

“দেখুন আমি ইয়ার্কি করছিনা সবই তো আর আপনাদের মতো বড়লোক না যে বড় বড় ইস্কুলে ভর্তি করবে।

“ওটা ইস্কুল না স্কুল হবে।

“হ্যাঁ হ্যাঁ জানি আমি।আমাকে শিখাতে হবেনা। আমি যথেষ্ট শিক্ষিত।

“হ্যাঁ তুমি তো অনেক শিক্ষিত মানুষ। আর আমরা তো মূর্খ হাহাহা।

আবিরকে হাসতে দেখে অনু ওর দিকে ছোটছোট চোখে তাকালো।

“আপনি কী আমাকে কোনো ভাবে অপমান করছেন?

“একদম না।

“দেখুন আমি তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছি। তাই আমি যথেষ্ট শিক্ষিত আছি।

“তৃতীয় শ্রেণী!!!!!ওহ মাই গড!!!! তৃতীয় শ্রেনীতে তো আমি জীবনেও লেখাপড়া করিনি। ডিগ্রীর পর আর কতটুকু পড়লে আমি তৃতীয় শ্রেনীর নাগাল পাবো একটু বলবে?

অনু ভেঙচি কেটে মুখ ঘুরিয়ে নিলো।যতটুকু বুঝতে পারল এই ছেলেটার সাথে কথায় পেরে ওটা অসম্ভব।
অনুকে নিরব দেখে আবির হুহু করে হেঁসে দিলো।
আবিরকে এভাবে প্রানখুলে হাসতে দেখে অনু এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।হাসলে আবিরের দুই গালেই টুল পরে। সামনের চুল গুলো বারবার এসে কপালে পরছে আর আবির সেগুলো হাত দিয়ে উপরে তুলছে।এই মুহুর্তে আবিরকে অনুর চোখে অন্যরকম লাগছে।অনু বেশিক্ষণ আর তাকালো না চোখ ঘুরিয়ে নিলো
গাড়িতে কেউই আর কোনো কথা বলেনি দুজনই খুব চুপচাপ ছিলো।শহরে পৌঁছে আবির গাড়ি থামাল। টিস্যুটা দিয়ে নিজের নাখটা মুছে পাশে তাকিয়ে দেখলো অনু সিটে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে।অগোছালো চুলগুলো সব মুখে এসে পরেছে।আবির অনুর চুলগুলো কানের পিটে গুজে দিলো। আবিরের ছুঁয়াতে অনু একটু কেঁপে উঠলেও ঘুম থেকে উঠলোনা।আবির কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে অনুকে ডাকতে লাগল।তাকেও বাসায় ফিরতে হবে।অনেক লেট হয়ে গেছে।অনু উঠছেনা দেখে আবির ওর গালে আস্তে একটা তাপ্পর দিলো।অনু তারাতাড়ি চোখ মেলে সে কোথায় আছে সেটা বুঝার চেষ্টা করলো।

“এই যে ম্যাডাম কোথায় যাবেন এখন?

অনু এবার ভাবনায় পরে গেছে।সত্যিইতো কোথায় যাবে সে।এই শহরের কাউকেই চেনা নেই তার।ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছে শহরের মানুষগুলো খারাপ থাকে গ্রামের মানুষের মতো সহজসরল নয়। এই রাতের বেলা কোথায়ই যাবে সে।তার ওপর এখনকার যা দিনকাল।

“কী হলো বলো?

অনু মুখ কাঁদো কাঁদো করে বলল,

“আমাকে একটু সাহায্য করুন। এই শহরের কাউকেই চিনিনা আমি শুধু আপনাকে ছাড়া।এখন সাহায্য করতে পারলে একমাত্র আপনিই করতে পারেন।দয়া করে আমাকে সাহায্য করুন।

আবির কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,

“ঠিকাছে কয়দিন নাহয় আপনি আমার বাসায়ই থাকবেন।এই কয়দিনে তুমি তোমার যাওয়ার জায়গা বের করে নিতে পারবে?

“হুম চেষ্টা করব।

আবির অনুকে নিয়ে ওর বাসার সামনে দাঁড়িয়ে কলিংবেল চাপলো।অনুর বুক ধুকপুক ধুকপুক করছে।কী ভাববে আবিরের পরিবার ওকে নিয়ে।আর ওকে থাকতেই বা দিবে কী ওদের কাছে। অনুর ভাবনার মাঝেই একজন মধ্যবয়সী মহিলা এসে দরজা খুলে দিলো। আবির হেসে ভিতরে ঢুকার আগেই একটা মেয়ে এসে চিৎকার করে উঠল,

“ভাইয়া তুমি বিয়ে করে বউ নিয়ে এসেছো আর আমরা জানিইনা।

আবির ওর বোনের মুখে কথাটা শুনে হাসবে না কাঁদবে বুঝতেই পারছেনা।সে বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

“দেখ না জেনে কিছু বলিস না।মেয়েটির যাওয়ার মতো কোথাও নেই তাই আপাতত আমাদের বাসায় থাকবে কয়েকদিন এখন সর এখান থেকে।আর এই যে আপনি ভেতরে আসুন নাকি ফুল দিয়ে বরণ করে বাসায় তুলব।

আবিরের কথা হয়তো অনুর কান অব্দি পৌছায়নি। তাই তো সে কোনো পতিক্রিয়া না করে চোখ বড় বড় করে বাসার চারিদিক দেখায় ব্যস্ত।আবির এবার জোড়ে ডাক দিলো ওকে। তারপর ওর বোনকে ইশারা করলো যাতে অনুকে বাসার ভিতরে নিয়ে আসে।
ড্রয়িংরুমে বসেও অনু বারবার চারিদিকে তাকাচ্ছে। এর আগে এত বাড়ি চোখেও দেখেনি সে আর আজ থেকে এই বাড়িতেই থাকবে কথাটি ভাবতেই অনুর মন খুশিতে বরে গেলো।পরক্ষনে যখন মনে হলো এই বাড়িতে তো সে কয়েকদিনের জন্য আছে তখনি আবার মনটা খারাপ হয়ে গেলো।আবিরের বোন এসে অনুকে ওর সঙ্গে রুমে নিয়ে গেলো।

“আচ্ছা তোমার নামটাই তো জানা হলো না কী নাম তোমার?

“অনু।৷

“ওয়াও নাইস নেম।মাই নেম ইজ আরুহি।

অনু ইংলিশ না জানলেও এতটকু বুঝতে পেরেছে মেয়েটির নাম আরুহি।প্রতিউত্তুরে সে একটু মুচকি হাসলো

“বাই দ্যা ওয়ে এই নাও ড্রেস আর বাথরুমে চলে যাও।বৃষ্টিতে ভিজেছো এখন গোসল করতে হবে নইলে বৃষ্টির পানি শরীরে থাকলে জ্বর, সর্দি লেগে যাবে।

“আপনি কী ডাক্তার?

অনুর কথা শুনে আরুহি হেসে দিয়ে বলল,,

“ডাক্তার কেনো মনে হলো তোমার কাছে? তোমাকে এডভাইস দিয়েছি তাই হাহাহা?।না আমি ডাক্তার নই।

অনু আর কোনো কথা না বারিয়ে বাথরুমে চলে গেলো। এখন সমস্যা হলো গিয়ে দরজা লাগাবে কী করে সেটা বুঝতে পারছেনা।অনুকে এভাবে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আরুহি ওর দিকে এগিয়ে গেলো।

“কিছু লাগবে?

“না

“তাহলে দাঁড়িয়ে আছে যে?

“আসলে দরজাটা কী করে লাগায় বুঝতে পারছিনা।

“লক মানে ওইটায় মুচড় দাও তাহলে লেগে যাবে। আবার বেড়িয়ে আসার সময় উল্টো মুচড় দিও তাহলে খুলে যাবে।

“আচ্ছা ঠিকাছে।

অনু বাথরুমে গিয়ে আরও অবাক।

“হায় আল্লাহ্ এই বাড়িতে এত যন্ত্রপাতি কেনো?আর বাথরুমেই তো বেশি।এত বড় বোল এখানে আল্লাহ্, এটাতে কী করে গোসল করে।আমিই বা গোসল করবো কীভাবে।

হঠাৎ অনুর চোখ পরলো শাওয়ারের দিকে।

“আরেহ বাহ্ এটা আবার কী?দরজার লকের মতোই তো লাগছে দেখিতো এটাতে মুচড় দিয়ে।

শাওয়ারের কলে মুচড় দেওয়ার সাথেসাথেই পানি পরতে শুরু করলো।অনুতো সেই লেভেলের খুশি।

“হু বড়লোকের বিরাট কারবার।এদের মনে হয় বৃষ্টিতে ভেজার শখ হলে এটার নিচে এসে দাঁড়িয়ে থাকে।

ইচ্ছে মতে শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে ভিজছে।দরজা খুলার আওয়াজে অনু তারাতাড়ি পিছন ফিরে দেখে আবির।

#চলবে..…..