#কি_নামে_ডাকবো_তোমায়
#আফরিন_সিকদার
সূচনা পর্ব
সদ্য পোড়া হাতে লবন ডলে নিয়ে মৃন্ময়ী রান্নায় মনোযোগী হলো।গায়ের ছেড়াছোটা শাড়িখানায় তরল রক্তে চিপচিপ করছে।ডালে ফোঁড়ন দিয়ে চামচ হাতে নিতেই পাশের রুম থেকে ভাঙচুরের আওয়াজ কানে ভেসে আসে।মৃন্ময়ী আঁতকে উঠে।চুলার আঁচ কমিয়ে ছুটে যায় বাইরে।বসার ঘরে ভাঙা প্লেটের টুকরো।শাহেদা বেগম চেচিয়ে বলে,
“নওশাদ এই বদজাত মাইয়াডারে আইজ যদি বাড়ি ছাড়া না করিস, তাহলে আমি ছাইড়া দিমু তোর ঘর।”
মৃন্ময়ী কম্পিত পায়ে এগিয়ে যায় শাহেদা বেগমের দিকে।কাঁপা কাঁপা স্বরে বলে,
“কি হয়েছে ফুপুআম্মা!”
তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে এবার শাহেদা বেগম।শাড়ির আঁচল কোমড়ে পেচিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। হাত দিয়ে চেপে ধরে মৃন্ময়ীয় চুলের গোছা।হাতের পিতলের প্লেট দিয়ে কয়েক ঘা বসিয়ে দেয় মৃন্ময়ীর পিঠে।দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“গোলামের বেটি!তুই জানোস না আমার ডায়বেটিস আছে?সকাল সকাল আমার খাওন লাগে। অহন বাজে কয়টা?বেলা বারোটা বাজতে চললো অহনো তোর রান্ধন হলো না কেনো?”
মৃন্ময়ী ভেজা স্বরে বলে,
“বাড়িতে চাল,সবজি,তেল কিছুই ছিলোনা ফুপুআম্মা।পাশের দোকানে বাকি পড়ে গেছে অনেক।সকাল থেকে দোকানের পাশে ঠাই দাঁড়িয়ে থাকলাম দোকানদার বাকি দিতে নারাজ।হাতে টাকা ছিলো না নানীর কাছে হেটে গিয়ে কিছু চাল আর ডাল এনে তবেই রান্না চরিয়েছি। আর একটু অপেক্ষা করুন হয়ে গেছে প্রায়।আমি এখনি খাবার এনে দিচ্ছি। ”
শাহেদা বেগম মৃন্ময়ীয় চিবুক খামচে ধরে বলল,
“তোর নানীর ভিক্ষা করা চাল ডাল শাহেদা খাবে?ছোটলোকের বাচ্চা।”
মৃন্ময়ী গর্জে উঠে এবার।তেজ নিয়ে বলে,
“আমারে যা বলার বলুন আমার বাবা মা তুলে গালি দিবেন না খবরদার।”
“কি করবি তুই?”
শাহেদা বেগম চেঁচিয়ে উঠে এবার।গলা ছেড়ে বলে,”নওশাদ! শুয়ো/রের বাচ্চা বউ লাগিয়ে দিয়ে মরার ঘুম ঘুমাচ্ছিস?তোর বউ আমারে মারতে চায়।তুই অহনো চুপচাপ থাকবি?”
ঢিলেঢালা শার্ট পরনে।হাতে জ্বলন্ত সিগারেট। দরজার পর্দা সরিয়ে নওশাদ ঢুকলো শাহেদা বেগমের কক্ষে। রাশভারি গলায় বলল,
“শালীর মেয়ে সকাল সকাল তোর মরনের ডাক উঠে প্রতিদিন!”
“তোর বউ আমারে মারতে চায়।রান্না না কইরা সারা মহল্লা টেলিং কইরা আসলো, তুই আইসা আমারে গালি দেস?”
নওশাদ অগ্নিচোখে তাকায় মৃন্ময়ীর দিকে।জ্বলন্ত সিগারেট ছুড়ে ফেলে মেঝেতে। সিংহের ন্যায় খাবলে ধরে মৃন্ময়ীর চুলের মুঠি। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“ওই শালার লগে দেখা করতে গেছিলি তাইনা?শালী তোর এতো কামড়?জামাই দিয়া হয়না?”
মৃন্ময়ী তেজ দেখিয়ে ছাড়িয়ে নেয় নিজেকে।দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“সম্মান দিয়ে কথা বলবেন।নিজের চরিত্রের সাথে অন্যের চরিত্র গোলাবেন না।সারা রাত পরনারীর সাথে কাটিয়ে এসে ভোরবেলা স্ত্রীর গায়ে হাত তোলেন।এখন আবার তার চরিত্র নিয়ে কথা তুলছেন। লজ্জা লাগেনা কাপুরষ কোথাকার!”
নওশাদের রাগ মাথায় চেপে উঠে। মৃন্ময়ীর গলা শক্ত করে চেপে ধরে বলে,
“কি বললি শালী?কারে কাপুরুষ বললি?নওশাদ মাহরাবকে?আয় তোরে বোঝাবো আমি কাপুরষ নাকি সুপুরুষ।”
নওশাদ মৃন্ময়ীর চুলের মুঠি চেপে ধরে টেনে নিয়ে যায় নিজ কক্ষে। ঘাড় ধরে ছুড়ে ফেলে দেয় বিছানার উপর। গায়ের ঢিলেঢালা শার্ট খানা খুলে মেঝেতে রাখে।কোমড়ে তীব্র ব্যাথা পেয়ে কুকরে যায় মৃন্ময়ী। নওশাদ মৃন্ময়ীর দুইহাত শক্ত করে চেপে কামড়ে ধরে মৃন্ময়ীর ঘাড়।মৃন্ময়ী উশখুশ করছে নিজেকে ছাড়াতে।নওশাদ মৃন্ময়ীয় শাড়ির আঁচল টেনে নিচে নামিয়ে দেয়। খুলে ফেলে মৃন্ময়ী সকল পোশাক।আজ এই মৃহুর্ত ব্যস্ত সে নিজের পুরুষত্বের প্রমান দিতে।নওশাদের অত্যাচার দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে নেয় মৃন্ময়ী। নিজের কার্যসিদ্ধি শেষ হলে নওশাদ উঠে বসে।পাশে ফেলে রাখা লুঙ্গিখানা পড়ে নিয়ে উঠে দাঁড়ায়।গলায় গামছা পেচিয়ে ঢোকে ওয়াশরুমে।
সর্ব শরীরে ব্যাথা নিয়ে মৃন্ময়ী উঠে বসে। বিছানার চাদর টেনে নগ্ন শরীর ঢাকে।খামচে ধরে বিছানার চাদর।নিঃশব্দে চোখের অশ্রু বিসর্জন দেয়।
।
।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়েছে পেটে একটা দানা ও পড়েনি মৃন্ময়ীর।নানীর থেকে চাল ডাল এনে রান্না করেছে শোনার পর নওশাদ সব খাবার ফেলে দিয়েছে।দূর্বল শরীর নিয়ে হাটাচলাও দ্বায়।পাশের গলির মতি ভাবির পাঁচটা ব্লাউজের সেলাইয়ের কাজ সেড়েছে। তার কাছ থেকে কিছু টাকা পাওয়া যাবে।টাকা গুলো দিয়ে কিছু চাল, আর কিছু সবজি কিনলে রাতের রান্নাটা করা যাবে।মৃন্ময়ী দূর্বল শরীর নিয়ে উঠে বসলো। সুতির ব্যাগের ভিতর ভরে নিলো পাঁচটা ব্লাউজ।হাতের কাজ মৃন্ময়ীর অসাধারণ। ব্লাউজ গুলোতে সুইসুতোয় সুন্দর কারুকার্যে ফুটিয়ে তুলেছে।শাহেদা বেগম ঘুমোচ্ছে এখন। হোটেল থেকে ভাত তরকারি কিনে এনে ফুপি ভাতিজা দুপুরের খাওয়াটা সেড়েছে।শুধু খাবার জোটেনি মৃন্ময়ীয় ভাগ্যে।
হাতে ব্যাগ গায়ে মলিন শাড়ি।আঁচলে অংশে অনেক জায়গায় ছেড়া।কোনো রকম আচল টেনে শরীর ঢেকে মৃন্ময়ী বের হলো বাসার বাইরে।হাঁটা ধরলো ডান দিকের গলিতে।গলি পেরিয়ে দুটো বাড়ি পরই মতি ভাবির বাড়ি।মৃন্ময়ী এসে দাঁড়ালো মতির গেটের সামনে।বাড়ির ভিতর থেকে তীব্র চেচামেচির আওয়াজ ভেসে আসছে।খিটখিটে মেজাজের মতি পান থেকে চুন খসলেই তেতে উঠে।চিৎকার চেচামেচি করে বাড়ি মাথায় তোলে।মৃন্ময়ী গেটে বেল বাজালো কয়েকবার।দরজা খুলতে ঢের সময় লাগলো।মতি শব্দ করে দরজা খুলে মুখোমুখি হলো মৃন্ময়ীর।রাগী স্বরে বলল,
“কি চাই সন্ধ্যাবেলা?”
আমতা আমতা করছে মৃন্ময়ী। শান্তস্বরে বললো,
“ব্লাউজ সেলাই হয়ে গেছে ভাবি।”
“ওহ মনে আছে তোমার ব্লাউজের কথা?আমি ভাবলাম তোমার জুয়োখোর জামাই আমার ব্লাউজ বিক্রি করে জুয়ো খেলেছে।”
মৃন্ময়ী মাথা নিচু করে দাঁড়ায়।গত সপ্তাহে উকিল সাহেবের বউ শাড়িতে হ্যান্ডপিন্ট করতে দিয়েছিলো মৃন্ময়ীর কাছে।নওশাদ সেটা বিক্রি করে জুয়া খেলেছে।সে খবর পৌঁছে গেছে সারা মহল্লায়।মৃন্ময়ীকে এটা নিয়ে নানা ভাবে অপমানিত হতে হয়েছে মহল্লাবাসীর কাছে।শুধু অপমান করে তারা ক্ষান্ত হননি জরিমানা হিসেবে নিয়েছে মৃন্ময়ীর শেষ সম্বল রুপোর ছোট কানের দুল জোরা।মৃন্ময়ী শান্তস্বরে বলল,
“ব্যাগটা ধরুন ভাবি।”
মতি মৃন্ময়ীর আপাদমস্তক পরখ করে শান্ত স্বরে বললো,
“ভিতরে আসো দেখি! কাজ ঠিকঠাক করছো নাকি দেখে নেই।”
মৃন্ময়ী ঢোকে বাসার ভিতরে। মতি ব্যাগ খুলে গুনে নেয় ব্লাউজ গুলো।খুটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে নেয় কাজ গুলো।গম্ভীর গলায় বলে,
“কত টাকা দিতে হবে?”
“পাঁচটা ব্লাউজ এক হাজার টাকা ভাবি।”
মতির মুখাভঙ্গী কঠিন হয়।কড়া গলায় বলে,
“বিয়ে খাওয়ার জন্য ব্লাউজের কাজ করতে দিয়েছিলাম।পরশু ভাইয়ের মেয়ের বিয়ে।একদিনে কোন দর্জি আমার ব্লাউজ বানিয়ে দিবে?সেই তো টাকা খরচ করে নতুন করে ব্লাউজ কিনতে হবে।তোমার জন্য আমার লস হলো সেই টাকা দিবে কে?পাঁচশো টাকার এক টাকা ও বেশি দিতে পারবোনা।”
মৃন্ময়ী অনুরোধ স্বরে বলে,
“ভাবি এমন করবেন না দয়া করে।টাকাটা আমার দরকার।”
“জামাইকে দিবে জুয়া খেলতে?কাল এসে পাঁচশো টাকা নিয়ে যেও ঘ্যানঘ্যান করলে এক টাকাও দিবোনা।”
মৃন্ময়ী চোখ ভিজে যায়।কাঁপাকাঁপা স্বরে বলে,
“ঠিক আছে পাঁচশো টাকাই দিন।তবে আজই দিন ভাবি।টাকাটা আমার খুবই দরকার।”
“টাকা চাইলেই পাওয়া যায়?আজ নেই যাও বলছি।”
মৃন্ময়ী হতাশায় দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে পা বাড়ায় চলে আসার জন্য। মতি পিছু ডেকে বলে,
“শোন!”
মৃন্ময়ী ঘুরে তাকায়।মতি কোমড়ে হাত ঠেকিয়ে ব্যাথাতুর গলায় বলে,
“কোমড়ের ব্যাথায় কাজ করতে পারছিনা।দাড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে। মেয়েটা পোয়া পিঠা খাওয়ার জন্য জিদ করছে।তুমি নাকি পিঠাটিঠা ভালো বানাতে পারো। একটু বানিয়ে দিয়ে যাবে?”
মৃন্ময়ী উশখুশ করছে।নওশাদ এসে যদি দেখে সে বাসায় নেই হুলুস্থুল কান্ড ঘটাবে।তবে ছোট মেহুলকে তার বড্ড পছন্দ। বাচ্চা মেয়েটা খেতে চেয়েছে জন্য না করতে পারেনা আর। মাথা দুলিয়ে বলে,
“আচ্ছা। ”
চালের গুঁড়ো, আটা মিশিয়ে, তাতে পরিমান মতো লবন গুড় আর হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে ঘনো ব্যাটার তৈরি করে নেয় মৃন্ময়ী। ডুবো তেলে ফুলকো ফুলকো পিঠা ভেজে রাখে প্লাস্টিকের ঝুরিতে।পিঠার গন্ধে মৃন্ময়ীর পেটে ইদুর দৌড়াদৌড়ি শুরু করে।রাত থেকে পেটে একটা দানাও পড়েনি তার।ক্ষুধায় দাড়িয়ে থাকা দ্বায়।মৃন্ময়ীর পিঠা বানানো শেষ। রান্নাঘরের নোংরা বাসন গুলো মেজে দিয়ে বাইরে বের হয়।ড্রয়িং রুমে বসে সবাই পিঠা খাচ্ছে।ছোটছোট কামড়ে পিঠা চিবোচ্ছে মেহুল।মৃন্ময়ীকে দেখে মেহুল পিঠার বাটি হাতে এগিয়ে আসে।গরম পিঠা তুলে বলে,
“মিমি পঠা খাও।অনেক মজা।”
মৃন্ময়ী আদুরে স্বরে বলে,
“তুমি খাও মা।আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে বাড়ি যাবো।”
মেহুল শোনেনা! বায়না ধরে পিঠা খাওয়ার জন্য। মৃন্ময়ী বাধ্য হয়ে পিঠা নেওয়ার জন্য হাত বাড়ায়। ভাড়ি গলায় ধমকায় মতি।মেয়ের বাহু শক্ত করে চেপে ধরে বলে,
“তোমাকে খেয়ে পড়তে বসতে বলিনি?যাও বলছি এখান থেকে।”
মৃন্ময়ীর মুখে নামে আঁধার।মতি রাশভারী গলায় বলে,
“এখন তুমি এসো।কাল এসে টাকা নিয়ে যেও।”
মৃন্ময়ী মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।আমতাআমতা করে বলে,
“এক গ্লাস পানি হবে ভাবি?”
মতি কপাল কুচকে তাকায় মৃন্ময়ীর দিকে।গাম্ভীর্যতা বজায় রেখে বলে,”দাঁড়া আনছি।”
রান্নাঘরে ফেলে রাখা পুরোনো প্লাস্টিকের মগে ট্যাপ থেকে পানি ভরে মৃন্ময়ীকে খেতে দেয় মতি।মৃন্ময়ী এক ঢোকে পানি খেয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেড়িয়ে আসে বাসা থেকে।
গলির ভিতরের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে।সন্ধ্যা নামলে জুয়াখোররা গলির ভেতরে আড্ডায় মাতে।সিগারেট গাঁজায় মেতে উঠে তারা।অনেকে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে।এজন্য মহল্লাবাসি নিজেদের সেফটির কথা ভেবে গলির রাস্তা অফ করেছে।মৃন্ময়ী হাটা শুরু করে বড়ো রাস্তা ধরে।দূর্বলশরীরে মৃদু পায়ে কয়েক কদক এগোতেই চোখ আটকায় রাস্তার অপজিটে। চার পাঁচ বছরের ফুটফুটে মেয়ে রাস্তা পার হওয়ার জন্য চেষ্টা করছে।ব্যস্ত রাস্তায় বড়ো বড়ো গাড়ি চলাচলা করছে।বাচ্চা মেয়েটি ছোটছোট পায়ে রাস্তার উপর উঠে আসে।মৃন্ময়ী চিৎকার দিয়ে থামতে বলে।বাচ্চার কানে হয়তো পৌঁছায় না মৃন্ময়ীর ডাক।আলতো পায়ে সে নিজের মতো হাটছে।মৃন্ময়ী ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকায় দূর থেকে ছুটে আসা ব্যস্ত ট্রাকটার দিকে।শাড়ির কুচি চেপে ধরে মৃন্ময়ী একুল অকুল না ভেবে দৌড়ায়।মেয়েটিকে কোলে তুলে নিয়ে রাস্তার কিনারে চলে আসে।মুখে হাত বুলিয়ে ব্যস্ত গলায় শুধায়,
“কে তুমি?কার সাথে এসেছো?এভাবে রাস্তা কেনো পাড় হচ্ছিলে?”
বাচ্চাটি ফুপিয়ে কেঁদে উঠে।ভেজা গলায় বলে,”মামার কাছে যাবো।মামা কই আমার?”
“তুমি তোমার মামার সাথে এসেছো মা?”
“হুম!”
“কোথায় তোমার মামা?”
মামা চিপস কিনতে দোকানে ঢুকেছে।আমি আর খুঁজে পাচ্ছিনা মামাকে।”
“কাঁদেনা মা আমি খুঁজে দিচ্ছি চলো তোমার মামাকে।”
হাতের চিপস,চকলেটের প্যাকেট।কপাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে ঘামের নোনা জল।বুকের ভেতর হারিয়ে ফেলার ভয়।নিজের পরিবারকে হারিয়ে বেঁচে থাকার সম্বল বলে আছে শুধু একমাত্র ভাগ্নী আস্থা।সবে দোকানের সামনে দাঁড় করিয়ে দোকানের ভেতরে চকলেট চিপস কিনতে ঢুকেছিলো ইয়াশ।কয়েক মিনিটের ব্যবধানে হারিয়ে ফেললো তার কলিজাকে।ইয়াশ দোকান ছাড়িয়ে বড়ো রাস্তায় উঠলো।ঘাড় ঘুরিয়ে এদিক ওদিক চেয়ে ডান দিকে দৌঁড়ালো।মোড় ঘুরতেই চোখ আটকালো মৃন্ময়ীর উপর। ইয়াশ থমকে যায়।বুকের ভেতর মুচড়ে উঠে।হাতপা ভেঙে আসে।মৃন্ময়ীর কোলে শান্ত হয়ে আছে আস্তামনি।ইয়াশ ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে মৃন্ময়ীর কাছে।মৃন্ময়ী হয়তো তাকে দেখেনি।সে এদিক ওদিক চোখ বুলিয়ে খুঁজছে কাউকে।ইয়াশ মোলায়েম স্বরে ডাকে,
“মৃন্ময়ী! ”
চমকায় মৃন্ময়ী। চট করে ঘুরে তাকায় ইয়াশের দিকে।বা—পাজরে তীব্র ব্যাথা।চোখ দুটো ছলছল করে উঠে।ইয়াশ আপাদমস্তক পরখ করে নেয় মৃন্ময়ীর।শঙ্কিত গলায় শুধায়,
“একি অবস্থা হয়েছে তোমার মৃন্ময়ী? ”
মৃন্ময়ী মৃদুহাসে।ইয়াশকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে গেলে আস্থা হাত বাড়িয়ে দেয়, ইয়াশের দিকে।আলতো স্বরে ডাকে,,
“মামা!”
মৃন্ময়ী চমকায়।ব্যস্ত গলায় বলে,
“ও আপনার ভাগ্নি?”
“হুম!”
“দেখে রাখতে পারেন না? এখনি তো বড়ো দূর্ঘটনা ঘটে যেতো।”
ইয়াশ কোলে তুলে নেয় আস্থাকে।শান্ত স্বরে বলে,
“তুমি ভালো আছো মৃন্ময়ী? ”
মৃন্ময়ী তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে।শান্তস্বরে বলে,
“মৃন্ময়ীরা কখনো খারাপ থাকেনা।তারা খারাপ থাকতে জানেনা।জীবনের সকল খারাপের প্রতিকুলে চলে তারা। ”
“মিনু!”
“ডাকবেন না এ নামে।”
“কি নামে ডাকবো তোমায়?”
।
।
#চলমান