#কি_নামে_ডাকব_তোমায়
#আফরিন_সিকদার
এ
পর্ব:[২]
মৃন্ময়ী দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।ইয়াশের সাথে দেখা প্রায় পাঁচ বছর পর।এই পাঁচ বছরে জীবনের অনেক কিছু বদলে গেছে মৃন্ময়ীর।ভার্সিটির টপার মেয়েটা এখন দুমুঠো ভাতের জন্য প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করছে।স্বামী নামক অমানুষটার জন্য সম্মান হারিয়েছে অনেক আগেই।মৃন্ময়ী ইয়াশকে পাশ কাটিয়ে সামনের দিকে পা বাড়ায়।ইয়াশ আলতো স্বরে ডাকে,
“মিনু!”
মৃন্ময়ী থমকে দাঁড়ায়। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় ইয়াশের দিকে।ইয়াশ আলতো স্বরে শুধায়,
“আন্টি কেমন আছেন মৃন্ময়ী! ”
মৃন্ময়ী বা পাঁজরে কেমন ব্যাথা অনুভব হয়।পাঁচ বছর আগেই সে হারিয়েছে তার জননীকে।শান্ত স্বরে বলে,
“মা নেই!ওনি আমাকে ছেড়ে অনেক আগেই চলে গেছেন।”
ইয়াশের আঁতকে উঠে।অনুশোচনায় চোখ জোরা ভিজে যায়।কাঁপাকাপা স্বরে বলে,
“তুমি আমার উপর এখনো রেগে আছো?”
“না কারো উপর রাগ নেই আমার।”
“একটা অনুরোধ রাখবে মৃন্ময়ী? প্লিজ না বলো না।”
“বলুন!”
“পাঁচটা মিনিট বসবে কোথাও আমার সাথে?একটু কথা ছিলো।”
“আমার সময় নেই। ”
“জাস্ট পাঁচটা মিনিট।”
“আজ হবেনা।ফিরতে দেরি হয়ে যাবে আমার।”
“ঠিক আছে।তাহলে কবে সময় পাবে বলো আমায়।”
“যদি কখনো দেখা হয় আবার।নির্দিষ্ট কোনো সময় বলতে পারছিনা।”
মৃন্ময়ী থামেনা আর।কথা খানা শেষ করে রওনা হয় বাসার দিকে।সারাটা দিন অনাহারে। পা জোরা ভেঙে আসছে এখন।হেঁটে বাড়ি যাওয়া দ্বায়।মৃন্ময়ী দূর্বল শরীরে বাড়িতে এসে পৌঁছায়। বসার ঘরে পাতা ভাঙা দুখানা কাঠের চেয়ার।চেয়ারে পা তুলে বসে সন্ধ্যায় মুড়ি চানাচুর খাচ্ছে শাহেদা বেগম।পাশের চেয়ারে বসা নওশাদ রাগে হিসহিস করছে।মৃন্ময়ী বাসায় ঢুকে শোয়ার ঘরের দিকে পা বাড়ায়।একটু বিশ্রাম নেওয়া জরুরি। নওশাদ রাশভারি গলায় ডাকে,
“দাঁড়া!”
মৃন্ময়ী থমকে দাঁড়ায়।
নওশাদ চেয়ার ছেড়ে এগিয়ে যায় মৃন্ময়ীর পাশটায়।দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“ভর সন্ধ্যাবেলা কই ছিলি তুই?”
“দরকার ছিলো।”
“কি দরকার ছিলো আমি সেটাই জিজ্ঞেস করছি।”
“আমি বলার প্রয়োজন মনে করছিনা।”
নওশাদের রাগ মাথায় চেপে বসে।দাঁড় কিড়মিড় করছে।শাহেদা বেগম মুড়ির বাটিখানা নিয়ে উঠে দাঁড়ায়।নওশাদের দিকে তাকিয়ে বলে,
“এমন অবাধ্য বউ লইয়া তোর সংসার করাই লাগবে?তোরে কত দিন কইছি তালাক দে।এমন তেজ,অবাধ্য বউ রাইখা কি করবি?মুখের উপর জুতার বাড়ি দিতে পারিস না!”
মৃন্ময়ী গর্জে উঠে।চিৎকার দিয়ে বলে,
“স্বামী স্ত্রী কথা বলছে এখানে।সমস্যা আমাদের দুজনের। আপনি সব সময় দু’জনের মধ্যে ঢুকতে আসেন কেনো?”
শাহেদা বেগম মুড়ির বাটি ছুড়ে মেরে তাকায় নওশাদের দিকে।দাঁতে দাঁত পিষে বলে,
“বউ দিয়া কথা শোনাইতাছোস?ঘাড় ধইরা বাইর কইরা দিমু দুইডারে।মনে রাহোস বাড়ি আমার বাপের। আমার বাপের বাড়ি দাঁড়িয়ে আমারে কথা শোনাবি হেইডা তো আমি মানবো না।”
নওশাদ চুলের মুঠি চেপে ধরে মৃন্ময়ীর।হুংকার ছেড়ে বলে,
“মুখ থেতলে দিবো কইলাম।ভালোই ভালো কো কই ছিলি।আমি বাড়ি না থাকলেই তোর পা লম্বা হয়ে যায়।কার লগে দেখা করতে গেছিলি কো কইতাছি।”
মৃন্ময়ী তেজ দেখিয়ে ছাড়িয়ে নেয় নিজের চুলের মুঠি।নওশাদের বুকে ধাক্কা দিয়ে খানিক দূরে সরিয়ে দেয়।চিৎকার দিয়ে বলে,
“ভিক্ষা করতে গেছিলাম।দুটো টাকা জন্য সবার দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেছি।মনকে সান্ত্বনা দিতে পারলেও পেটকে কি বলে সান্ত্বনা দিবো?”
নওশাদ থামেনা সে বেশ জানে মৃন্ময়ী মরে যাবে তবুও কারো দুয়ারে হাত পাতবে না।কড়া গলায় বলে,
“মিথ্যা কবিনা।সত্যি করে কো কই গেছিলি।”
মৃন্ময়ী ফুপিয়ে কেঁদে উঠে ভেজা গলায় বলে,
“অসভ্য জানোয়ার স্বামীর কুকর্মের খেসারত দিয়ে আসলাম।”
নওশাদ নিজের নিয়ন্ত্রণ হারালো।মৃন্ময়ীর গলা শক্ত করে চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“তুই ভালো কথা শোনার মানুষ না।অহন কো কই গেছিলি।আল্লাহর কসম কইরা কইতাছি অহন যদি সত্যি কথা না বলিস তোরে খুন কইরা উঠানে পুতে ফেলবো।”
মৃন্ময়ী ব্যাথাতুর গলায় থেমে থেমে বলল,
“মতি ভাবির বাড়ি!”
মৃন্ময়ীর গলা ছেড়ে দেয় নওশাদ। কিছুটা শান্ত স্বরে শুধায়,
“ক্যান গেছিলি?”
মৃন্ময়ী ভেজা গলায় খুলে বলে সবটা।নওশাদের মুখাভঙ্গী বদলায়।ঢিলেঢালা শার্টের সামনের দুটো বোতাম খোলা। শার্টের কলার পেছনের দিকে ঢেলে দিয়ে কপালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এলোমেলো চুলে হাত বুলিয়ে বের হয়ে যায়।
টিয়ে কালার রঙের দোতলা বাড়ি মতির।বাড়ির চারপাশে প্রাচীরে ঘেড়া।প্রাচীরের মাথায় লাগানো হরেক রকমের লাইট।লাইটের আলোয়া ঝলমলে পরিবেশ।নওশাদ লাথি দিয়ে খুলে ফেললো মতির বাড়ির গেট।সদর দরজার সামনে দাড়িয়ে এক নাগাড়ে বেল বাজানো শুরু করলো।
মতি সবে মেহুলকে নিয়ে পড়াতে বসেছে।এমন বেপরোয়া বেল বাজানোর শব্দে বেশ বিরক্ত হয়।বিছানা ছেড়ে উঠে এগিয়ে আসে ড্রয়িং রুমের দিকে। খ্যাকখ্যাক করে বলে,
“কে?আস্তে বেল বাজানো যায়না?”
মতির কন্ঠস্বর কানে যেতেই নওশাদ আরো জোরে জোরে বেল বাজানো শুরু করে।মতি বিরক্তের চরম পর্যায়ে গিয়ে ব্যস্ত হাতে খুলে দেয় দরজা।দরজা খুলতেই মুখোমুখি হয় নওশাদের।রাশভারি গলায় শুধায়,
“তুমি এখানে?এটা গুন্ডামী করার জায়গা?হিরোখোর কোথাকার।এটা ভদ্রলোকের বাড়ি।”
নওশাদ হুড়োহুড়িয়ে বাসার ভিতরে ঢোকে।সোফায় পা তুলে বসে।ভাড়ি গলায় বলে,
“ট্যাহা দে।”
“কিসের টাকা।”
“আমার বউরে খাটায়ে যে ট্যাহা গুলো দিসনাই ওই ট্যাহা দে।”
“আজ হবেনা।কাল দিয়ে দিবো বলছি তো।”
“অহন লাগবে মানে অহনি লাগবে।শালী মুটকি আমার মাথা গরম হওয়ার আগে ট্যাহা নিয়ে আয়।”
“এখানে গুন্ডামী হচ্ছে? আমি তো বলছি কাল টাকা দিয়ে দিবো।আর একটা ফালতু কথা বললে আমি কিন্তু লোকজড়ো করবো।”
“কর জড়ো দেহি কেমন পারিস।ট্যাহা আনবি নাকি একাই তোর আলমারি ভাইঙ্গা লইয়া যাবো?”
মতি রাগে হিসহিস করছে।চোখ পাকিয়ে বলে,
“এখানে বসে থাকো আনছি আমি।”
মতি তাড়াহুড়ো করে শোয়ার ঘরের দিকে রওনা হয়।কোমড়ে গুজে রাখা রুপোর কিরিং হাতে নিয়ে আলমারি খুলে, টাকা বের করে আবার বসার ঘরে ছুটে আসে।পাঁচশো টাকার চকচকে নোট ছুঁড়ে মারে নওশাদের মুখের উপর। নওশাদ টাকা কুড়িয়ে হাতে নেয়।বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে রাগী গলায় বলে,
“আর ট্যাহা কই?আমার বউ তোর থেকে হাজার ট্যাহা পায়।এক ট্যাহা কম দেওয়ার চেষ্টা করলে তোর অবস্থা খারাপ কইরা ফালামু কইলাম।”
মতি রাগে থরথরে কাঁপছে। আঁচলে বেধে রাখা আরো পাঁচশো টাকার নোট বের করে নওশাদের সামনে ধরে।নওশাদ টাকা হাতে নিয়ে পকেটে ভরে রাখে।মতির কাছাকাছি এগিয়ে এসে হুমকিসরুপ বলে,
“আমার বউরে পরবর্তীতে কোনো খারাপ কথা শোনানোর আগে দুইবার ভাববি।আমার বউরে মারলেও আমি মারুম কাটলেও আমি কাটুম।কোনো শালী কিছু বললে সেটা আমি বরদাস্ত করবো না বলে দিলাম।”
নওশাদ কথাখানা শেষ করে হনহনিয়ে বেড়িয়ে আসে বাসা থেকে।বড়ো রাস্তা পেরিয়ে আসতেই মুদিখানার দোকান।নওশাদ ঢোকে দোকানের ভিতরে। রুক্ষ গলায় বলে,
“শানু ভাই সিগারেট দেও একটা।”
শানু সিগারেট প্যাকেট থেকে একখানা সিগারেট বের করে দিয়ে বলে,
“বাকি হবেনা বলে দিলাম।টাকা দিয়ে যাবে।গত দুইদিন সিগারেট নিছো টাকা দাওনি।আজকের টা দিয়ে দাম হইলো সত্তর টাকা।”
নওশাদ দোকানে ঝুলিয়ে রাখা লাইটার দিয়ে সিগারেট খানা জ্বালিয়ে নেয়।ধোঁয়ার কুন্ডলী নাক মুখ দিয়ে ছেড়ে বলে,
“নওশাদ ট্যাহা মাইরা খায়না।ধরো তোমার ট্যাহা।”
পকেট থেকে মতির দেওয়া পাঁচশোটাকার একটা নোট বের করে এগিয়ে দেয় শানুর দিকে।শানু মুচকি হেসে বলে,
“বাহ বড়ো নোট দেহি যে।তা টাকাটা পাইলা কই?”
“সেটা তোমার জানা লাগবেনা। দাও দেহি দুই কেজি চাল, আড়াইশোগ্রাম ডাল,হাফলিটার তেল।”
শানু চাল,ডাল মেপে ব্যাগে ভরে হাফ লিটারের তেলের বোতল হাতে তুলে এগিয়ে দেয় নওশাদের দিকে।নওশাদ ব্যাগখানা হাতে নেওয়ার আগেই ফজলুল হাত রাখে নওশাদের কাঁধে। নওশাদের হাত থেকে সিগারেটখানা নিয়ে বলে,
“চল এক ম্যাচ খেলা হয়ে যাক।সমীর ভাইয়েরা বাগানে বইসা আছে।আইজ বড়ো দাইন আছে।জিততে পারলেই বিশ হাজার ট্যাহা।”
নওশাদ রাশভারি গলায় আফসোস স্বরে বলে,
“আইজ ট্যাহা নাই সমুন্ধীর ছাওয়াল।ট্যাহা না থাকলে তো জয়েন হতে পারুম না।”
“আরেহ সমীর ভাই কইলো তোগো যা আছে হেইডাই ধরবি। আমি একাই ধরুম বিশ হাজার।এই ধর হাজার খানিক ট্যাহা হলে জয়েন হতে পারুম।জিতুম তো আমরাই।ট্যাহা হবে আমগোরে। তোর কাছে হবে হাজার ট্যাহা?”
নওশাদ ভাবে কিছু সময়।চাল ডালের ব্যাগ শানুর দিকে ফিরিয়ে দিয়ে বলে,
“রাহো ব্যাগখানা আমি একটু পর আইসা লইয়া যাচ্ছি। আর তোমারে যে ট্যাহাডা দিলাম ওইডা ফিরাইয়া দাও।আমি আইসা তোমারে ডাবল ট্যাহা দিমু।”
শানু দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। নওশাদ যে আর ফিরবেনা সেটা খুব জানে।পাঁচশো টাকা ফিরিয়ে দিয়ে বলে,
“এসব ছাড়লেই তো পারো।বউডা তোমার কতো কষ্ট করে।”
“আমার বউয়ের কষ্ট তুমি উপলব্ধি করতে যাও কেনো শানু ভাই?”
শানু কথা বলে না আর।নওশাদ ক্রুর হেসে বেড়িয়ে যায় দোকান ছেড়ে।
।
।
রাত গভীর গলীর মাথায় কুকুর গুলো ঘেউঘেউ করে ডাকছে।শুনশান নিরাবতায় ঢাকা চারিপাশ।মৃন্ময়ী পেটের ক্ষুধায় ছটফট করছে।সকালের মারের ব্যাথায় জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে।মৃন্ময়ী দূর্বল শরীর নিয়ে দরজা খুলে বাইরে এসে দাড়ালো। গলির ভিতরের টং দোকান এখনো খোলা আছে।মৃন্ময়ী হেটে যায় দোকানের পাশটায়।দোকানী মর্জিনার দিকে তাকিয়ে মৃদুস্বরে বলে,
“চাচী দুইটা বিস্কুট দিন।কাল সকালে এসে টাকা দিয়ে যাবো।”
মর্জিনা খ্যাকখ্যাক করে উঠে।মুখের ভিতরে জমানো পানির পিক থু দিয়ে ফেলে বিশ্রী ভাবে কথা শুনিয়ে বলে,
“চোরের ঘরেরর চোর।তোরে কে বাকি দেয়?তুই ট্যাহা আনলেও আমি জিনিস দিমু না।সইরা যা সামনে থাইকা।গুনে গুনে পনেরোশো ট্যাহা পাই।ট্যাহা তো দিলিই না তারপর তোর বদজাত বেজন্মা জামাইডা আমারে গায়ে হাত তুলতে আসলো।”
মৃন্ময়ী লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে।দোকানের সামনে কিছু সময় দাড়িয়ে থেকে পা বাড়ায় বাসার থেকে।দোকানে বসে থাকা অর্ধবয়সী আজাদ এগিয়ে আসে মৃন্ময়ীর পাশটায়।হাতে তার জ্বলন্ত সিগারেট। পরনে ঢিলেঢালা নীল চেকশার্ট।নাকমুখ দিয়ে ধোয়া ছেড়ে বলে,
“রাইত বিরাতে বিস্কুট দিয়ে কি হবে?ভাত খাইস নাই?”
মৃন্ময়ী মাথা নিচু করে দাঁড়ায়।আজাদ আরো একটু এগিয়ে এসে বলে,
“চল তোরে আইজ বিরিয়ানি খাওয়াবো।টাক্কু ভাইয়ের ছাগলের মাংসের বিরিয়ানি। বিনিময়ে তোর সুন্দর শরীরখানা একটু মাপতে দিবি শুধু! তাতেই হবে।”
মৃন্ময়ীর চোখ আগুনের ন্যায় জ্বলে উঠে।শক্ত হাতে থাপ্পড় বসায় আজাদের মুখে।আজাদ চেপে ধরে মৃন্ময়ী চুলের গোছা। মৃন্ময়ীকে ঠেলে দেওয়ালে সিটিয়ে ধরে।আজাদ বিশ্রী হেসে বলে,
“মা/গী দেহি আগেই গরম হইয়া আছোস।দাঁড়া ঠান্ডা কইরা দিচ্ছি।”
মৃন্ময়ী আজাদের বুকের আঘাত করে দুই হাত দ্বারা।শাড়ির আচল ঠিক করে দৌড়ায় বাসার দিকে।বাড়িতে ঢুকেই আটকে দেয় দরজা।দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠে। কান্নার তোপে কাশি উঠে যায় মৃন্ময়ীর।এক নাগাড়ে কাশিতে দম প্রায় বেড়িয়ে যাওয়ার উপক্রম। মৃন্ময়ী আখিযুগল অস্বাভাবিক বড়ো হয়।জিহ্বা বেড়িয়ে আসে ঠোঁট ভেদ করে।হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরতেই মুখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে তরল রক্ত।হাত জোড়া ফাঁকা করে মৃন্ময়ী তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে।শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ মুছে এগিয়ে যায় ওয়াশরুমের দিকে।ওয়াশরুম থেকে মাথায় পানি নিয়ে রান্না ঘরে ঢোকে।ক্ষুধায় দূর্বল শরীরটা তরতর করে কাঁপছে। সকল হাড়ি পাতিল তন্নতন্ন করে ও পায়না কোনো খাবার।জগ থেকে ঠান্ডা পানি ঢেলে এক গ্লাস পানি খেয়ে মৃন্ময়ী আবার রুমে চলে আসে।তোশক বিহিন শক্ত চৌকিতে মৃন্ময়ী গা এলিয়ে শুয়ে পড়ে।পেটের ক্ষুধা, অসুস্থ শরীর নিয়ে ঘুম ও চোখে ধরা দেয়না।মৃন্ময়ী দীর্ঘ সময় ছটফট করে একটা সময় ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দেয়।
দরজায় খটখট শব্দ অনবরত। শাহেদা বেগম এক রাশ বিরক্ত নিয়ে বিছানা ছাড়ে।রাগী গলায় বলে,
“জমিদারের বেটি কাজ কইরা খাইতে মন চায়না।সোয়ামী বাড়ি ফিরলো নাকি সে দিকে ও তার খেয়াল নেই।নবাবজাদি পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছে। শাহেদা দরজা খুলে দাড়ায় নওশাদের মুখোমুখি। হাতে চকচকে মদের বোতল,নওশাদ টলতে টলতে বাসার ভিতরে ঢোকে।অস্পষ্ট স্বরে বলে,
” আইজ মজা পাইলাম।হারছি তো কি হয়ছে প্রান ভইরা মদ তো খাইছি ফুপু।”
শাহেদা বেগম রাগে গজগজ করছে।হেঁচকা টানে শব্দ করে দরজা বন্ধ করে বলে,
“তোর বউ তোর কোনো খোঁজ লয়?রাতে ফিরছিস নাকি সেটাও তো তোয়াক্কা করেনা।ওই মাইয়া অহনো বাড়ি রাখবি?গ্রামের ফুলির কথা কইলাম না তোরে?ভাইবা দেখতে পারিস।ফুলির মায়ের সুদের ব্যাবসা বহু টাকা পায় প্রতি মাসে।তোর লগে মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি।তুই খালি আপদটারে বিদেয় কর।”
নওশাদ শব্দ করে ঢেকুর তোলে।বোতল বুকে চেপে ধরে রুমে ঢোকে।খট করে দরজা লাগিয়ে দেয় শাহেদা বেগমের মুখের উপর। টেবিলের উপর মদের বোতল রেখে গায়ের শার্টখানা খুলে ফেলে অর্ধমাতাল নওশাদ। বিছানায় মৃন্ময়ীর পাশটায় শুয়ে মৃন্ময়ীকে টেনে আনে নিজের কাছে।নেশাগ্রস্ত কন্ঠস্বরে ডাকে কয়েকবার।মৃন্ময়ী জাগ্রত হয়না।গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন সে।নওশাদ ঘুমন্ত মৃন্ময়ীর শাড়ির আচল টেনে খুলে ফেলে শাড়ি।নিজের শরীরের চাহিদা মেটাতে যেনো মৃন্ময়ী তার রক্তে-মাংসে গড়া একটা মেশিন।ঘুমন্ত মৃন্ময়ী জাগ্রত হয় এবার।নওশাদ নিজ কাজে ব্যস্ত।মৃন্ময়ী ঘুমন্ত চোখে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে।নওশাদ রাগী গলায় বলে,
“শালী বাড়ি আসার পর তোরে মরা পাই কেনো প্রতিদিন? ”
মৃন্ময়ী মুখ ঘুরিয়ে নেয়।নওশাদ তেজ দেখিয়ে খাবলে ধরে মৃন্ময়ী উন্মুক্ত পেট।নওশাদের প্রতিটা ছোয়ায় মৃন্ময়ী চোখের অশ্রু বিসর্জন দেয়।স্বামী নামক জানোয়ারে হাতে প্রতিদিন ধর্ষিত হয় সে।নওশাদ শারীরিক তৃপ্তি মেটাতেই মৃন্ময়ীকে ছেড়ে উল্টো দিকে ঘুরে শুয়ে পড়ে।
।
।
#চলমান