#কি_নামে_ডাকবো_তোমায়
#আফরিন_সিকদার
পর্ব[৩]
তীব্র জ্বর আর শরীরের ব্যাথা নিয়ে মৃন্ময়ী ঘুম থেকে উঠে বসে।চারিপাশে ফযরের আযানের প্রতিধ্বনি কানে ভেসে আসছে।বিছানা থেকে পা নামিয়ে মেঝেতে দাঁড়াতেই মাথা ঘুরে উঠে।দুটোদিন অনাহারে থেকে শরীর প্রায় অচল হয়ে গেছে।মৃন্ময়ী ধীরে ধীরে গোসলখানায় ঢুকে গোসলটা সেড়ে নেয়।ছেড়া শাড়িখানা কোনোরকম গুজে গায়ে পেচিয়ে নেয়।অযু করে বাইরে বের হয়।হাতে সেলাই করা জায়নামাজ খানা মেঝেতে পেতে নামাজে দাঁড়ায়।ফযরের চার রাকাআত নামাজ শেষ করে মোনাজাত ধরে।আখিযুগল ছলছলে ভেজা গলায় ফরিয়াদি করে আল্লাহর দরবারে।মোনাজতা শেষে উঠে দাঁড়ায়। রান্নাঘরের বাসি বাসন মেজে আশপাশটায় চোখ বুলিয়ে নেয়।আজ ও কোনো চাল,সবজি আনেনি নওশাদ। মৃন্ময়ীর চোখ ভিজে যায়।কিভাবে পাড় করবে আজ সারাটাদিন। না খেয়ে কতদিনই বা থাকা যায়।মৃন্ময়ী দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে শাহেদা বেগমের কক্ষের দিকে পা বাড়ায়।শাহেদা বেগম ভোর রাতে ঘুম থেকে উঠে।যদিও নামাজ,কালাম বা সংসারেট কোনো কাজে হাত দেয়না।ভোর রাতেই তার ক্ষুধা পায়। বিস্কুট, রুটি যাই হোক সেটা তাকে খেতে হয়।দরজার পাশে দাড়িয়ে মৃন্ময়ী আলতো হাতে টোকা দেয় কয়েকবার।শাহেদা বেগম গলা উচিয়ে বলে,
“কেডা?”
“আমি ফুপুআম্মা!”
“সাত সকালে কি চাই?আমার ঘুমডাও তোর সহ্য হয়না? এতো সকালে ডাকোস ক্যান?”
“একটু কথা বলবো।”
“অহন আমি ঘুমামু।পড়ে আহিস যা।সোফার উপর আমার কাপড় রাইখা দিছি ওগুলো ধুইয়া ছাদে মেলে দিয়ে আহিস তো।”
“একটু জরুরি ছিলো ফুপুআম্মা দুটো মিনিট শুধু। ”
শাহেদা বেগম এবার বেশ বিরক্ত হয়।হাতের বিস্কুটের প্যাকেট বালিশের তলায় লুকিয়ে বিছানা ছেড়ে এগিয়ে আসে দরজার পাশে।দরজার কপাট খুলে দিতেই মুখোমুখি হয় মৃন্ময়ীর।মৃন্ময়ী দূর্বল শরীরে দেওয়ালের সাথে হেলে পড়েছে খানিকটা।শাহেদা বেগম ভ্রুযুগল গোটায়।মৃন্ময়ীকে বেশ অস্বাভাবিক লাগছে।রাশভারি গলায় শুধায়,
“কি হয়েছে বল!”
মৃন্ময়ী নিভু নিভু স্বরে বলে,
“আমি একটু মতি ভাবির বাড়িতে যাবো ফুপুআম্মা।আপনার ভাতিজা ঘুমায়।ওনি উঠলে বলে দিবেন একটু।কিছু টাকা পাই ভাবির থেকে ওগুলো আনতে যাবো।”
“তোরে যে কইলাম আমার জামা কাপড় গুলান ধুইয়া দিতে?
” বাড়ি ফিরে ধুয়ে দিবো।আমি যাবো আর আসবো।”
“তাড়াতাড়ি ফিরবি।নওশাদরে আমি ওতো কৈফিয়ত দিতে পারুম না বলে দিলাম।”
“ঠিক আছে।”
মৃন্ময়ী দূর্বল শরীরে পা বাড়ায় বাসার বাইরে।গলির রাস্তা এখনো ব্লক করা।সকাল আটটার আগে খোলা হবেনা।মৃন্ময়ী বড়ো রাস্তার দিকে পা বাড়ায়।সবে আলো ফুটেছে।ডাস্টবিনে ফেলে রাখা নষ্ট খাবার খেতে কাকেদের হুড়োহুড়ি। মৃন্ময়ী মনে মনে ভাবে,
“সে যদি কাক হতো।তাহলে ওই খাবারটা সেও বেশ তৃপ্তি করে খেতে পারতো।”
সাইকেলে বেল বাজিয়ে ছুটে চলেছে ঘোষেরা।বাড়িতে বাড়িতে বাড়িতে দুধ পৌছে দেওয়াই তাদের কাজ।বড়ো রাস্তা পেরিয়ে মৃন্ময়ী এসে দাঁড়ায় মতির বাড়ির সামনে।গেট পেরিয়ে সদর দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।কলিংবেল বাজিয়ে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে।হাতে তসবিহ গায়ে সাদা সুতির শাড়ি। বয়সের ভারে কোমর বেকে গেছে মতির শাশুড়ী রেনুর।কোনো রকম সোজা হয়ে সদর দরজা খুলে দেয়।দরজা খুলতেই চোখ পড়ে মৃন্ময়ীর দিকে।ঠোঁটে ফোটে এক পশলা হাসি।দাঁত বিহীন রেনু ফোকলা হেসে ভাঙা স্বরে বলে,
“তুই আইছোস মৃন্ময়ী? ভেতরে আয় মা।”
মৃন্ময়ী সালাম দেয় রেনুকে।শান্ত স্বরে বলে,
“মতি ভাবি কি ঘুম থেকে উঠেছে চাচীআম্মা?”
“না উঠে নাই।ক্যান ওরে কিছু কবি?”
“আসলে ভাবির ব্লাউজ সেলাই করে দিয়েছিলাম তো।”
“ওহ বুঝেছি ট্যাহা পাবি তাই তো?আয় ভিতরে আইসা বোস আমি ডাইকা দিচ্ছি।”
মৃন্ময়ী রেনুর সাথে বাসার ভিতরে ঢোকে।রেনু মৃন্ময়ীকে সোফায় বসতে দিয়ে লাঠি ভরে এগিয়ে যায় মতির রুমের দিকে।মতির রুমে টোকা দিতে মতি বাইরে বের হয়।কড়া গলায় শুধায়,
” কি হয়েছে?সাত সকালে দরজায় টোকা দেন কেনো?”
রেনু ভয়ে গুটিয়ে নেয় নিজেকে।শান্ত স্বরে বলে,
“মৃন্ময়ী আয়ছে তোমার লগে কথা আছে নাকি।”
মতি তেলেবেগুনে জ্বলে যায় মৃন্ময়ীর নাম শুনতেই।রাগে হিসহিসিয়ে এগিয়ে যায় ড্রয়িং রুমের দিকে।মৃন্ময়ী সোফায় বসে আছে।মতিকে দেখে উঠে দাড়ায়।মুখে কিঞ্চিৎ হাসির রেখা টেনে কিছু বলার আগেই মতি খ্যাক খ্যাক করে উঠে। ভাড়ি গলায় শুধায়,
“কি চাই?”
মৃন্ময়ী খানিক অবাক হয়।তবে ঠোঁটের কোনায় হাসির রেখা টেনে বলে,
“কাল বলেছিলেন আজ এসে যেনো টাকাটা নিয়ে যাই।আসলে খুব দরকার তো তাই সকাল হতেই চলে এসেছি ভাবি।মনে নিবেন না কিছু?”
“কিসের টাকা? কাল স্বামী পাঠিয়ে আমার গলায় ছুরি ঠেকিয়ে গুনে গুনে হাজার টাকা নিয়ে গিয়েছিস।সেটায় হয়নি?ডাকাতি শুরু করেছিস জামাই বউ মিলে?আইজ তোদের ডাকাতি বের করে ছাড়বো।”
মৃন্ময়ী কেঁপে উঠে। কম্পিত স্বরে বলে,
“কি যা—তা বলছেন ভাবি?”
“কাল তোর স্বামী নিয়ে যাইনি টাকা?”
মৃন্ময়ীর মুখের কথা থেমে যায়।কাল সে বলেছিলো মতির কাছে টাকা পায়।হয়তো তখন নিয়ে গেছে।মৃন্ময়ী মাথা নিচু করে ফেলে।শান্ত স্বরে বলে,
“আমি জানতাম না ভাবি।জানলে কখনো আসতাম না টাকা নিতে।”
“এই খবরদার নাটক করবিনা।তোর নাটক বের করে দিবো আজ।কি ভেবেছিস এভাবে বোকা বানিয়ে টাকা নিয়ে যাবি আর আমরা সুরসুর করে টাকা দিয়ে দিবো?তোর নাটক আজ বের করছি।”
মতি পাশে ফেলে রাখা ঝাড়ু তুলে হাতে নেয়।ঝাড়ু হাতে শক্ত করে চেপে ধরে এগিয়ে যায় মৃন্ময়ীর পাশটায়।মৃন্ময়ীর চুলের মুঠি শক্ত করে চেপে ধরে ঝাড়ু দিয়ে আঘাত করে মৃন্ময়ীর পিঠে।প্রতিটা আঘাতে আর্তনাদ করে মৃন্ময়ী। মতি রাগে হিসহিস করছে।মৃন্ময়ী ঢলে পরে মেঝেতে।মতি থামেনা তবুও এক নাগাড়ে আঘাত করে যাচ্ছে।ফের আঘাত করতে গেলে শক্ত হাতে কেউ চেপে ধরে মতির ঝারু।মতি ঘুরে তাকায়।ইয়াশকে চোখে পড়তেই গায়ের শাড়িখানা ঠিক করে নেয়।শুকনো ঢোক গিলে শুধায়,
“আরেহ ইয়াশ যে কখন আসলে ভাই?”
ইয়াশ জবাব দেয়না কথার।পাল্টা প্রশ্ন ছোড়ে মতিকে।রাগী গলায় বলে,
“ওনার গায়ে তুলছেন কেনো আপনি?”
মতি শান্ত স্বরে বলে,
“ওরে পুলিশের হাতে দেওয়া উচিত ছিলো।আমি তো শুধু গায়ে হাত তুলেছি।”
“কেনো কি করেছে ওনি?”
“তুমি ওসব বাদ দাও ভাই।এতোদিন পর আসলে। বসো চা নাস্তার ব্যাবস্থা করি।”
মেঝেতে উপর হয়ে পড়ে আছে মৃন্ময়ী। পিঠে শাড়ি সরে গেছে কিছুটা।ছেড়া ব্লাউজের ফাকে গলিয়ে উকি দিচ্ছে অজস্র মারের দাগ।ইয়াশ না চাইতেও তাকায় পড়ে থাকা মানুষটার দিকে।শরীরে তাজা আঘাতের সাথে কাল সিটে মারের দাগ স্পষ্ট। তার মানে আগেও মারা হয়েছে মানুষটাকে। সুক্ষ্ম নেত্রে চেয়ে কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে গেলে মেয়েটা দূর্বল শরীরে সোজা হয়ে বসে।মৃন্ময়ীর মুখশ্রী চোখে পড়তেই ইয়াশ কেঁপে উঠে। উদ্বীগ্ন গলায় শুধায়,
“মৃন্ময়ী তুমি?”
খানিক চমকায় মতি।মৃন্ময়ী ঘাড় তুলে তাকায় ইয়াশের দিকে।চট করে শাড়ির আচল তুলে শরীর ঢেকে নেয়।হাতের ব্যাগখানা নিচে ফসকে পড়ে ইয়াশের।বোন মারা যাওয়ার পর ইয়াশ এ বাড়িতে যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছে প্রায় তিন বছর।মাঝেমধ্যে আত্মীয়তা সম্পর্ক বজায় রাখতে বাড়ির সবার জন্য দামী উপহার নিয়ে হাজির হয়।টাকা পয়সা দিয়ে ও সাহায্য করে এ বাড়ির সবাইকে।মতি এজন্য একটু বেশিই সুন্দর ব্যবহার করার চেষ্টা করে ইয়াশের সাথে।ইয়াশ চট করে গিয়ে বসে মৃন্ময়ীর পাশটায়।ব্যস্ত স্বরে বলে,
“মিনু ওনি তোমার গায়ে আঘাত করলো কেনো?দয়া করে বলো আমায়।তোমাকে সেদিন দেখেও আমার কাছে স্বাভাবিক লাগেনি।প্লিজ বলোনা কি হয়েছে।”
মৃন্ময়ী তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে।জবাবে কিছু না বলে দুই হাতের ভরে উঠে দাড়ায়। দুই হাত তুলে দাড়ায় মতির মুখোমুখি। ভেজা গলায় বলে,
“ক্ষমা করে দিবেন ভাবি।আসছি আমি।”
মৃন্ময়ী টলতেটলতে বেড়িয়ে যায় মতির বাসা থেকে।ইয়াশ ও পিছু নেয় মৃন্ময়ীর।এতো সময় গায়ের জোর খাটিয়ে চললেও মৃন্ময়ীয় পা জোরা যেনো এবার থেমে যায়।মাথা ঘুরে যায়।ঢলে নিচে পড়ার আগেই ইয়াশ শক্ত হাতে চেপে ধরে মৃন্ময়ীকে।মৃন্ময়ী চেতনায় আসতেই ইয়াশের বাহুডোর থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে।ইয়াশ এতো সময় চুপচাপ সবটা মেনে নিলেও এবার বজ্রধমক দেয় মৃন্ময়ীকে।গম্ভীর গলায় বলে,
“আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি মৃন্ময়ী। আজ তোমাকে সবটা খুলে বলতে হবে।তোমাকে এভাবে দেখার পর থেকে আমি একটা মূহুর্ত ও শান্তি পাচ্ছিনা।অস্থীর হয়ে আছি তোমার মুখে সবটা শোনার জন্য। বলো না কি হয়েছে তোমার?”
মৃন্ময়ী ফুপিয়ে কেঁদে উঠে।মতির সাথে ঘটে যাওয়া সবটা খুলে বলে ইয়াশকে।ইয়াশ ভ্রুযুগল গুটিয়ে নেয়।ভাবুক গলায় শুধায়,
“তোমার হাসবেন্ড তোমার গায়ে হাত তোলে মৃন্ময়ী? ”
মৃন্ময়ী আমতাআমতা করে বলে,”না।”
“মিথ্যা বলোনা মৃন্ময়ী। আমি তোমার শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখেছি।”
“বললাম তো আমাকে কেউ অত্যাচার করেনা।পরস্ত্রীর শরীরের দিকে তাকানোর স্বভাবটা বন্ধ করুন।সরুন আমার সামনে থেকে।”
মৃন্ময়ী ইয়াশকে পাশ কাটিয়ে যেতে নিলেই ইয়াশ শক্ত হাতে চেপে ধরে মৃন্ময়ীর হাত। গম্ভীর গলায় বলে,
“আমার সাথে এসো।”
মৃন্ময়ী আটকাতে গেলেও শোনেনা ইয়াশ।রাস্তা ক্রস করলেই নুরানী ভাতের হোটেল।মৃন্ময়ীকে হোটেলে নিয়ে গিয়ে বসায় একটা চেয়ারে।হোটেলের কর্মচারীকে ডেকে ঠান্ডাস্বরে বলে,
“ভাত হয়েছে কি ভাই?”
“জ্যা না স্যার।ভাত হয়নাই।সকালে খিচুরি ডিম ভুনা আর গরুর মাংসের কালা ভুনা পাবেন।দুপুরে আর রাইতে ভাত পাবেন।”
“ঠিক আছে যা যা আছে সেটাই নিয়ে আসো।”
কর্মচারী প্লেট ভর্তি ঝরঝরে বাসমতী চালের খিচুড়ি। ডিম ভাজি, আর গরুর মাংসের কালো ভুনা এনে রাখে মৃন্ময়ীর সামনে।খাবারের গন্ধ নাকে যেতেই সুঘ্রাণে পেটের খুদা আরো দীগুন বেড়ে যায় মৃন্ময়ীর।
ইয়াশ শান্ত স্বরে বলে,
“খেয়ে নাও মৃন্ময়ী।আমি জানি তুমি খাওনি। তোমার শরীর,তোমার মুখ বলে দিচ্ছে তুমি অনাহারে আছো।”
মৃন্ময়ী ছলছল চোখে তাকায় খাবারের দিকে।পেটের ক্ষুধা ভুলিয়ে দেয় ইয়াশের প্রতি সকল অভিমান।খিচুড়ির প্লেট টেনে আনে নিজের কাছে।মৃদু স্বরে বলে এগুলো লাগবেনা।তরকারি ফেরত দিন।”
“লাগবে।শুকনো খিচুড়ি খাবে কি করে?”
মৃন্ময়ী খিচুড়ির থালায় হাত দিতেই থালা ছিটকে গিয়ে পড়ে দেওয়ালের উপর। পাশেই দাড়িয়ে থাকা নওশাদ চুলের মুঠি চেপে ধরে মৃন্ময়ীর।হোটেলের গরম খুন্তি চেপে ধরে মৃন্ময়ীর হাতে।দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“শা/লা/র মা/গী নোংরামো করবার লাগছোস?নাগোরের লগে হোটেলে ভাত খাইতে আসা তোর বের করছি শা/লী।জন্মের মতো ভাত খাইয়ে ছাড়বো তোর।”
ব্যাথায় মৃদু চিৎকার দেয় মৃন্ময়ী। ইয়াশ উঠে নওশাদের হাত চেপে ধরে। খানিক ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় কিছুটা দূরে।রাগী গলায় বলে,
“কি হচ্ছেটা কি?এভাবে অসভ্যতামি করছেন কেনো?কে আপনি? ওর গায়ে হাত তুলছেন কেনো?”
নওশাদ চেপে ধরে ইয়াশের গলা। দুইহাত দ্বারা গলা শক্ত করে চেপে ধরে টেনে নিয়ে যায় দেওয়ালের দিকে।দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“আমি ওর স্বামী।বাইচো** আমার বউরে হোটেলে এনে নোংরামো হচ্ছে? ”
ইয়াশ আপাদমস্তক পরখ করে নওশাদের।লম্বা বলিষ্ঠ দেহের অধিকারী নওশাদ। গায়ের রঙটা মলিন দেখায় যত্নের অভাবে।মৃন্ময়ী নওশাদের হাত চেপে ধরে ভেজা গলায় বলে,
“ওনারে ছেড়ে দিন বলছি।”
নওশাদের মুখাভঙ্গী আরো বদলায়।ইয়াশকে ছেড়ে দিয়ে চেপে ধরে মৃন্ময়ীর গলা।দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“খা** পরপুরুষের জন্য এতো দরদ তোর?আইজ তোর শেষে দিন হবে।”
নওশাদ আশপাশটায় চোখ বুলিয়ে নিয়ে হাতে তুলে নেয় শুকনো কাঠের লাকড়ি। মৃন্ময়ীয় বুকে লাথি দিয়ে ফেলে শরীরে অজস্র আঘাত করতে থাকে।খেই হারাই এবার ইয়াশ।পিছন থেকে স্বজোরে লাথি দেয় নওশাদের পিঠে।নওশাদ ছিটকে পড়ে খানিক দূরে।ইয়াশ নওশাদের গলা খাবলে ধরে এবার।দুই হাত দ্বারা গলা টিপে ধরে রাগে হিসহিসিয়ে বলে,
“জানো/য়ার, কাপুরুষ কোথাকার। স্ত্রীর গায়ে হাত দিতে লজ্জা করেনা? তোকে আজ আমি জেলের ভাত খাইয়ে তবেই ছাড়বো।”
ইয়াশ নওশাদের শার্টের কলার চেপে ধরে বাইরে বের হতে গেলে মৃন্ময়ী বাঁধা দেয়।নওশাদকে ছাড়িয়ে নিয়ে রাশভারি গলায় বলে,
“আমাদের স্বামী স্ত্রীর মাঝে কথা বলার আপনি কে?আর একটা আঘাত ও করবেন না আমার স্বামীর গায়ে।চলে যান বলছি এখান থেকে।”
ইয়াশ অবিশ্বাস্য চোখে তাকায় মৃন্ময়ীর পানে।মৃন্ময়ী রাগী স্বরে বলে,
“কি হলো যান বলছি।”
ইয়াশ রাগে দুঃখে বেড়িয়ে আসে সেখান থেকে।
।
।
বাসায় ফিরতেই নওশাদ আবার চড়াও হয়েছে মৃন্ময়ীর উপর। গায়ে অজস্র আঘাত করে মৃন্ময়ীকে ফেলে রেখেছে বদ্ধ ঘরের কোনায়।রুমে আলোর ছিটেফোটা টুকুও নেই।হাতের পলিথিনে শুকনো খিচুড়ি নিয়ে দুপুরে বাসায় ফিরেছে নওশাদ।হাতের সিগারেট। নাক মুখ দিয়ে ধোঁয়া ছেড়ে রুমের দিকে পা বাড়াতে গেলেই শাহেদা বেগম ডাকে।ব্যস্ত স্বরে শুধায়, “তোর হাতে কি?”
“খিচুড়ি! ”
“ঘরে লইয়া যাইতাছিস ওই চরিত্রহীন বউয়ের খাওয়াইতে?”
নওশাদ চোখ পাকিয়ে তাকায় শাহেদা বেগমের দিকে।রাগী গলায় বলে,
“তোমারে বহুদিন কইছি কিন্তু ফুপু আমার বউরে তুমি কিছু কবা না।যা কওনের আমি কমু।আমারে তুমি খুব ভালো কইরা চিনো।রাগ মটকায় উঠডা গেলে তোমারেও ছাড়ুম না।”
শাহেদা বেগম খ্যাকখ্যাক করে উঠে।শাড়ির আচল ঝাঁকি দিয়ে আঙুল তুলে নওশাদের মুখ বরাবর।খানিক অভিনয় করে কান্নার।ভেজা স্বরে বলে,
“সারাদিন যে না খাইয়া আছি।একবারো খোঁজ নিছিস?ক্যান আমার জন্য কি খাবার আনতে পারোস নাই?আমারে না খাওয়াইয়া মারতে চাস?”
নওশাদ প্রচন্ড বিরক্ত হয়।হাতের পলিথিন এগিয়ে দিয়ে বলে,
“ধর অর্ধেক খিচুড়ি রাইখা অর্ধেক দে।”
শাহেদা বেগম ব্যাগ হাতে নেয় চট করে।পলিথিন থেকে ঢেলে নেয় খিচুড়ি তিন ভাগ।অল্প কিছু খিচুড়ি পড়ে আছে পলিথিনের তলানিতে। শাহেদা পলিথিন এগিয়ে দিয়ে বলে,
“যা ধর নিয়ে যা।”
নওশাদ কিছু বলতে চেয়েও থেমে যায়।দরজা ধাক্কা দিয়ে রুমে ভিতরে ঢোকে।সুইচ বোর্ড টিপে আলো জ্বালিয়ে নেয়।মেঝেতে শুয়ে কুকড়াচ্ছে মৃন্ময়ী। নওশাদ প্যাকেট ছুড়ে মারে মৃন্ময়ীর দিকে।রাশভারি গলায় বলে,
“জন্মের খিচুড়ি খাইয়া লো উঠ খইতাছি।”
খাবারের দিকে চোখ পড়তেই মৃন্ময়ী উঠে বসে।প্যাকেট হাত তুলে নিয়ে নোংরা হাতেই খাওয়া শুরু করে।হাত ভরে খিচুড়ি পুরে নেয় মুখে।নওশাদ শার্ট খোলার ছলে তাকায় মৃন্ময়ীর দিকে।মৃন্ময়ীর এমন খাওয়া থেকে অবাক ও হয়।
।
।
#চলমান