#কি_নামে_ডাকবো_তোমায়
#আফরিন_সিকদার
পর্ব:৪
খিঁচুড়ি পুরোটা মুখে পুরে নিতেই মৃন্ময়ী খুকখুক করে কাশি উঠে যায়। গলায় আটকে যায় খাবার।মৃন্ময়ী চোখ ঘুরিয়ে তাকায় আশপাশটায়।ব্যাস্ত পায়ে উঠে যায় টেবিলের উপর রাখা জগের দিকে।শুকনো জগে পানির ছিটেফোঁটা ও দেখা যায় না।মৃন্ময়ী দৌড়ে বেড়িয়ে আসে রুম থেকে।রান্নাঘরে ট্যাপ ছেড়ে ঢকঢক করে পানি খেয়ে নেয়।প্যাকেটের অল্প খিচুড়িতে ক্ষুধার্ত মৃন্ময়ীর পেট ভরেনা। পুরো তিনটাদিন পর মুখে খাবারের স্বাদ পেতেই খাবারের প্রতি চাহিদা আরো বাড়ে।মৃন্ময়ী শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখে লেগে থাকা এটো মুছে নেয়।গ্লাস ভরে আরো দুগ্লাস পানি খেয়ে রুমে ছুটে আসে।নওশাদ বিছানায় বসে আছে হাটু ভাজ করে।মৃন্ময়ীকে আড় চোখে দেখে নিয়ে হাতের লাল শপিং ব্যাগটা পিছনে লুকায়।
তবে মৃন্ময়ীর চোখ এড়ানো দ্বায়।নওশাদকে এভাবে ব্যাগ লুকাতে দেখে মৃন্ময়ী ভ্রুযুগল গোটায়।সন্দেহ বুকে বাসা বাঁধে। নির্লিপ্ত স্বরে শুধায়,
“কি লুকালেন?”
নওশাদ আমতাআমতা করে বলে,
“কি লুকিয়েছি মানেডা কি?কি লুকাতে যাবো?”
“আমি দেখেছি।আপনার পিছনে ব্যাগে কিছু একটা আছে যেটা আপনি লুকালেন।”
“তুই আমারে সন্দেহ করিস?”
মৃন্ময়ী তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে।ব্যাঙ্গ গলায় বলে,
“বিশ্বাস করার সুযোগ দিয়েছেন কখনো? যেখানে এক আনার বিশ্বাস নেই।সেখানে নতুন করে সন্দেহ শব্দটা আবার যুক্ত হয় কি করে?”
নওশাদ তেলে বেগুনে জ্বলে যায়।দাঁতে দাঁত চেপে উঠে দাঁড়ায়।মৃন্ময়ীর দিকে তেড়ে আসতে গেলে।মৃন্ময়ী দৌড়ে গিয়ে ব্যাগখানা নিজের দখলে নেয়।ব্যাগ থেকে টেনে বের করে তার বিয়ের বেনারসি শাড়ি খানা।মৃন্ময়ী চমকায়।অবাক চোখে তাকায় নওশাদের দিকে।কাঁপাকাপা স্বরে বলে,
“এটা নিয়ে আপনি কোথায় যাচ্ছেন?এটা বের করেছেন কেনো?”
“সে কৈফিয়ত আমি তোরে দিমু না।”
“একশোবার দিবেন।আপনি জবাবদিহি দিতে বাধ্য। আমার শাড়ি নিয়ে আপনি কোথায় যাচ্ছেন? ”
“এটা বাজার মূল্য কত?”
মৃন্ময়ীর কথা থেমে যায়।আখিযুগল ভিজে যায়।থেমে থেমে বলে,
“আপনি শাড়িটা বিক্রি করতে যাচ্ছিলেন?”
“তোরে যেটা জিজ্ঞেস করলাম সেটা কো।কয় ট্যাহা দিয়ে কিনে দিয়েছিলো তোর বাপে?”
মৃন্ময়ী শাড়ি খানা বুকের সাথে আগলে ধরে।এটাই তার মায়ের রেখে যাওয়ার শেষ স্মৃতি অবশিষ্ট তার কাছে।মায়ের বিয়ের শাড়ি পড়ে মৃন্ময়ী বিয়েটা হয়।ভালোবাসার কাছ থেকে তীব্র আঘাত পেয়ে মৃন্ময়ী ভেঙে জর্জরিত হয়।ছোট থেকেই একঘুয়ে মৃন্ময়ী।পুরান ঢাকায় ছোট সেকেলে বাড়িতে বেড়ে উঠা মৃন্ময়ীর।বাবাহীন মৃন্ময়ী সেভাবে কারো সাথে না মিশলেও মায়ের সাথে ছিলো তার বড্ডভাব।এসএসসি, এইচএসসিতে আটানব্বই পার্সেন্ট মার্কস পেয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার পর মৃন্ময়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনবিভাগ নিয়ে ভর্তি হয়।চুপচাপ স্বভাবে আর সাধারন জীবন যাপন দেখে তেমন বন্ধুবান্ধব জোটেনি তার কপালে।ভার্সিটিতে সবাই যখন ক্যান্টিনে ফাস্টফুড খেতে ব্যাস্ত।মৃন্ময়ী তখন প্লাস্টিকের বক্স থেকে চিনি রুটি বের করে চিবোতো।আধুনিকের ছোয়া লাগা সদ্য গ্রাম থেকে শহরে আসার মেয়েরাও মৃন্ময়ীকে দেখে হো হো করে হাসতো।যদিও মৃন্ময়ী এসবে কখনো পাত্তা দেয়নি।ছোট থেকে এক মাত্র মা ছাড়া সবার থেকে এতোটা অবহেলা পেয়েছে যে কারো তুচ্ছতাচ্ছিল্য আর এখন ওভাবে গায়ে লাগেনা। ভার্সিটির ক্লাস শেষে মৃন্ময়ী কখনো একাকি ক্যাম্পাসে বসে সবার আড্ডা দেওয়া দেখে।আবার কখনো ক্লাস শেষে ব্যস্ত রাস্তায় হেটে বাসায় ফেরে।ভার্সিটি,বাড়ি এই গন্ডীর ভেতরই ছিলো মৃন্ময়ীর জীবন সীমাবদ্ধ। এই বদ্ধতা কাটে একটা সময়।ভার্সিটির আইন বিভাগের প্রফেসর গোলাম আযমের একমাত্র পুত্র সোহরাব ইয়াশের সাথে যেদিন বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে।ইয়াশ পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে মাস্টার্স করছে তখন ভার্সিটিতে।চুপচাপ স্বভাবের সাধারণ জীবন যাপন করা মৃন্ময়ী আকৃষ্ট করে তাকে।সিনিয়র হওয়ার সর্তেও আগ বাড়িয়ে নিজেই বন্ধত্বের হাত বাড়িয়ে দেয়।মৃন্ময়ী যদিও প্রথমে সারা দেয়নি।তবে ইয়াশের ব্যবহার আচরনে একটা সময় মুগ্ধ হয়ে বন্ধু হতে রাজি হয়।ইয়াশ পুরো শহর চেনায় মৃন্ময়ীকে।কখনো মৃন্ময়ীর আনা সাধারন টিফিন বক্স থেকে রুটি চিনি খেয়ে দুপুরের লাঞ্চ সারতো।আবার কখনো মৃন্ময়ীকে নিয়ে যেতো ক্যান্টিনে ভালোমন্দ দুটো খাওয়াতে।বন্ধুত্বের সম্পর্ক থেকে ধীরে ধীরে সম্পর্কটা রুপ নেয় ভালোবাসার।
সম্পর্কের পূর্নতা দিতে ইয়াশ বাড়িতে জানায় তার আর মৃন্ময়ীর সম্পর্কের কথা।ইয়াশের মা ইয়াসমিন জাহান সম্পূর্ণ নাকচ করে দেন। এমন ছোট লোক ঘরের মেয়েকে সে কিছুতেই পুত্রবধূ করতে চায়না।তবে হাল ছাড়ে না ইয়াশ।নানা রকম ইমোশনাল ব্লাকমেইল করে রাজি করায় মাকে।
সেদিন শুক্রবার ইয়াশ তার পরিবার সহ হাজির হয় মৃন্ময়ীদের বাসায়।মৃন্ময়ীর মা দিশেহারা হয়ে পড়েন।এতোবড়ো ঘর থেকে তার মেয়ের বিয়ের সম্বন্ধ এসেছে এটা যেমন তার কাছে ভালো লাগার আবার চিন্তার ও।ঘরে খাবার বলতে কিছু নেই।তাদের চা নাস্তা কিছু না দিলে খুবই বাজে দেখায়।রুমিনা বেগম বাসার পিছন দরজা দিয়ে বাইরে বেড়িয়ে যায়।পাশের বাসার ভাবির কাছে হাত পাতে চাপাতা চিনি আর কয়টা বিস্কুট দেওয়ার জন্য। প্রতিবেশী তখন হাতের কাজে ভিশন ব্যস্ত।হাসি মুখে বলে
“এতো উদ্বীগ্ন হবেন না তো ভাবি।মৃন্ময়ী তো আমার মেয়ের মতোই।ওকে দেখতে এসেছে এটা তো খুশির সংবাদ। আমি একটু কাজে ব্যস্ত আছি।আপনি রান্না ঘর থেকে বিস্কুট, চাপাতা চিনি নিয়ে যান।ফ্রীজে বক্সে দেখবেন মিষ্টি আছে।ওগুলোও নিয়ে যাবেন।শুধু চা বিস্কুট দিলে তো হবেনা।”
রুমিনা বেগম ইতস্ততায় ভোগে।নাকচ করে বলে,
“আপনি দিবেন চলুন ভাবি।আমি নিজ হাতে কিভাবে নেই?”
“এতো ভাববেন না তো।যান নিয়ে নিন।”
রুমিনা বেগম বাধ্য হয়ে রান্নাঘরে ঢোকে। চাপাতা থেকে কয়েক চামচ চা ঢেলে নেয় পেপারে।বিস্কুট আর চিনি আলাদা পেপারে মুড়িয়ে ফ্রীজ খুলতেই পিছন থেকে কেউ চেপে ধরে রুমিনার চুলের মুঠি। সামিরুন বেগম পানের পিক থু মেরে জানালা দিয়ে ফেলে রাগে হিসহিসিয়ে বলে,
“চোরের হালায়! আমার পোলার বউ রান্নাঘরে কামে ব্যাস্ত, আর তুই ফাঁক পাইয়া মাল টানতে ঢুইকা পড়ছিস?”
রুমিনা ব্যাথায় কুকরিয়ে উঠে।হাত জোর করে ভেজা গলায় বলে,
“আমি চুরি করিনি চাচী আম্মা।ভাবি আমারে বললো নিতে তাই এগুলো নিচ্ছিলাম।”
“আবার মুখে মুখে তর্ক করবার লাগছোস।”
সামিরুন রুমিনার চুলের মুঠি চেপে ধরে উঠানে টেনে আনে। রাগী গলায় বেশ তেজে দেখিয়ে চিৎকার দিয়ে বলে,
“শফিক! সালেহা! বাইর আইস, চোর ধরছি। হেইরে চুল ছাইটা নাক্কে খড় গুজা দিয়া বাড়ি পাঠাইয়া দিমু!”
মায়ের ডাক কানে পৌছাতেই সালেহা, শফিক বাইরে বের হয়।সামিরুন স্বচক্ষে দেখা সবটা খুলে বলে ছেলে মেয়েদের। শফিক শুকনো কাঠের লাকড়ি হাতে তুলে রুমিনার চুলের মুঠি শক্ত করে চেপে ধরে।বেধর মার মেরে চুল কাটতে আসলে রুমিনা হাত জোর করে বলে,
“আমার মেয়েটাকে দেখতে এসেছে।আমারে আজ কিছু করোনা।ওর বিয়াডা হয়ে গেলে তখন তোমরা আমারে মেরে ফেললেও আফসোস থাকবেনা আমার।”
সালেহা রুমিনা চুল পেচিয়ে হাতে ধরে টেনে হিঁচড়ে বাড়ির দিকে নিয়ে যায়।গলির মধ্যে পৌঁছে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“পাত্র পক্ষের সামনে নিয়া যাবো চল।তাদের দেখাতে হবে তোর আসল রুপ।কোন চোরে মাইয়া তারা ঘরে তুলতে যাচ্ছে সেটা জানার দরকার।”
রুমিনা হাউমাউ করে কেঁদে উঠে।হাত জোর করে বলে,
“এমন করোনা তোমরা।আমারে ছেড়ে দাও।”
সালেহা,সমিরুন,শফিক টেনে হিচড়ে রুমিনাকে বাড়িতে নিয়ে যায়।শফিক লাথি দিয়ে রুমিনাকে ফেলে দেয় বসার ঘরের মেঝেতে।বসার ঘরের ভাঙাচোরা কাঠের চেয়ারে বসে ছিলো, ইয়াশ আর তার বাবা মা।পাশেই ঘোমটা টেনে দাড়িয়ে আছে মৃন্ময়ী। মাকে এভাবে ছুড়ে ফেলায় মৃন্ময়ী ছুটে আসে মায়ের পাশে।মায়ের বাহুতে হাত রেখে তুলতে গেলে শফিক পা তুলে লাথি দেয় মৃন্ময়ীর বুক বরাবর। চিৎকার দিয়ে বলে,
“চোরের ঘরের চোর কোথাকার! চুরি করতে গেছিলো আমার বাসায়।রান্নাঘরের ফ্রিজ খুলে চুরি করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা খায়।”
গোলাম আজম বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। ইয়াশ রাগী গলায় বলে,
“কি যা-তা বলছেন?আপনি ওনার গায়ে এভাবে হাত তুললেন কেনো?”
“কতোবার কমু চুরি করতে গিয়ে ধরা খাইছে।হাতেনাতে ধরার পর তার গায়ে হাত না তুলে চুমু খাবো বুঝি?”
ইয়াসমিন বেগম রাগে হিসহিস করছে।রাশভারি গলায় বলল,
“গরীব সমস্যা ছিলোনা আমার।তাই বলে চোর?চোরের ঘরে ছেলে বিয়ে দিবো?এই মেয়ের ও এমন স্বভাব আছে হয়তো।”
ইয়াশের দিকে তাকিয়ে বলে,
“এই মেয়েকে এখনো বিয়ে করবে তুমি?”
রুমিনা বেগম হাত জোর করে বলে,”আমি চুরি করিনি।আমার মেয়ে অসহায়। না খেয়ে থাকলেও কারো জিনিসের দিকে তাকায় না। ওরে ভুল বুঝবেন না আপনারা।আমার মেয়ের বিয়েডা ভাঙবেননা।”
শফিক সালেহার হাত থেকে পানিতে গোলানো চুনকালি ঢেলে দেয় রুমিনার গায়ে।মৃন্ময়ী ডুকরে কেঁদে উঠে মাকে আগলে নেয় বুকে।শফিক মৃন্ময়ীর চুলের গোছা ধরে টেনে তুলে আছড়ে ফেলে দেওয়ালের সাথে।ইয়াশ হাতের মুঠো পাকায়। শফিকের দিকে তেড়ে আসতে গেলে ইয়াসমিন চেপে ধরে ছেলের হাত।দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“এক পা ও নড়বেনা তুমি।”
শফিক কাঁচি দিয়ে রুমিনার চুলের গোছা কেটে ফেলে।রুমিনা লজ্জায় অপমানে দুইহাত দ্বারা মুখ ঢেকে ফেলে।গোলাম আযম রাশভারি গলায় বলে,
“চলো সবাই এখান থেকে।কোনো চোরের সন্তানকে আমি আমার পুত্রবধূ বানাবোনা।”
ইয়াশের অসহায় দৃষ্টি বাবার পানে।রুমিনা বেগম গোলাম আজমের পা দুটো জরিয়ে ধরে।গোলাম আজম সরিয়ে নেয় নিজেকে।ইয়াশের দিকে চোখ পাকিয়ে ধমক স্বরে বলে,
“বের হবে তুমি?”
ইয়াশ তাকায় মৃন্ময়ীর দিকে।মৃন্ময়ী মাকে জরিয়ে বসে আছে।হাউমাউ করে কাঁদছে। অসহায় ইয়াশ চাইলে ও থাকতে পারেনা মৃন্ময়ীর পাশটায়।মাথা নিচু করে বেড়িয়ে যায় মৃন্ময়ীদের বাসা থেকে।রুমিনা বেগম ডুকরে কেঁদে উঠে।মেয়ের এতো ভালো সম্বন্ধটা এভাবে ভেঙে গেলো।
সারাদিন কান্নাকাটি করে রাতে মাকে জরিয়ে ঘুমায় মৃন্ময়ী। মাঝরাতে হাতরে মাকে না পেয়ে হুড়মুড়িয়ে উঠে বসে।শোয়ার ঘর পেরিয়ে বসার ঘরে আসতেই জোরে চিৎকার দেয়। সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলছে রুমিনার নিথর দেহ।বাবা হারা মৃন্ময়ী মাকে হারিয়ে সম্পূর্ণ একা হয়ে যায়।
দূরসম্পর্কের নানী মৃন্ময়ীকে আশ্রয় দেয়।কোনো রকম ভিক্ষা করে দিন যাপন চলে তার।নওশাদের মায়ের সাথে পরিচয় হয় ভিক্ষা করতে গিয়ে। নওশাদের মা ছেলের জন্য সুন্দরী পাত্রী খুজছিলেন। মৃন্ময়ীর নানী সাহস করে নাতনির কথাটা বলে দেয়।নওশাদের মা মৃন্ময়ীকে দেখে পছন্দ করে।প্রথম দেখায় বিয়ের পাকা কথা বলে দেয়।পরেরদিনই ছেলে নিয়ে হাজির হয় বিয়ে পড়াতে। সাথে কোনো শাড়ি গয়না না নিয়ে যাওয়ায় মৃন্ময়ীর মায়ের বিয়ের শাড়িটা পড়িয়ে বিবাহ কার্যক্রম সম্পূর্ণ করা হয়।দুচোখ ভরা সংসারে স্বপ্ন নিয়ে মৃন্ময়ী পা রাখে নওশাদের বাড়িতে।বিয়ের এক সপ্তাহ পেরুতেই নওশাদের আসল রুপ উন্মোচন হয়।জুয়ার নেশায় মৃন্ময়ীর ছোট ছোট গয়না গুলো বিক্রি শুরু করে।
পুরোনো স্মৃতি মনে পড়তেই মৃন্ময়ীর চোখ ভিজে যায়।হ্যাচকা টানে শাড়িখানা নিজের দখলে নিয়ে আসে।বাঘিনীর ন্যায় হুংকার ছেড়ে বলে,
“খুন করে ফেলবো যদি আমার মায়ের শেষ স্মৃতির দিকে চোখ তুলে তাকান।”
নওশাদের মুখোভঙ্গী বদলায়।দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“কি বললি শালী?তুই আমারে মেরে ফেলবি?শালী পেটে খাওন পড়ার সাথে সাথে তেজ বাইড়া গেলো?শাড়ি দে কইতাছি।সামিউলের কাছে সাতশত টাকা দেনা হয়েছি। শালা আমারে চিটার কয় লোক সমাজে।বাপ মা তুলে গালি দেয়।শাড়ি বেইচা ওরে টাকা দিয়ে দেখামু নওশাদ চিটার না। ”
“ক্ষমতা থাকলে ইনকাম করে দেনা শোধ করুন।আমার মায়ের শাড়িতে হাত দিবেন না।এটা আমার মায়ের বিয়ের শাড়ি।আমার বাবার একমাত্র স্মৃতি। ”
“স্মৃতি ধুইয়া পানি খাবি শালী?শাড়ি দে কইতাছি। ”
“দিবোনা।”
“দিবি না?”
“না বলছি তো।”
নওশাদ মৃন্ময়ীর চিবুক খামচে ধরে।মুখে অজস্র থাপড় দিয়ে বলে,
“শাড়ি না দিলে তোরে বেইচা আজ দেনা দিমু আয় শালী।”
মৃন্ময়ীর হাত শক্ত করে চেপে ধরে নওশাদ।টেনে হিচরে বাইরে বের করে।পাশেই টং দোকানে এগিয়ে গিয়ে বলে,
“পঞ্চাশ ট্যাহা খুচরা দেও তো।আইসা দিচ্ছি।”
দোকানদার কড়া চোখে তাকায় নওশাদের দিকে।রাশভারি গলায় বলে,
“তোমারে কোনো টাকা ধার দেওয়া যাবেনা।তুমি সরো তো এখান থেকে।”
নওশাদ বিশ্রী গালি দিয়ে মৃন্ময়ীকে শক্ত হাতে চেপে ধরে হাটা শুরু করে রাস্তা বরাবর।মৃন্ময়ী নিজেকে ছাড়াতে অক্ষম। নওশাদ বড়ো রাস্ত ক্রস করে গলি ধরে।গলির মাথায় ভাঙা চোরা টিনশিটের ঘর। ঘরের ভিতরে সামিউলদের আড্ডাখানা।সেথায় মৃন্ময়ীকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে বলে,
“জমা দিয়ে গেলাম।ট্যাহা দিয়ে ছাড়াইয়া নিয়া যামু।”
।
।
#চলমান