#কি_নেশায়_জড়ালে
#পর্ব_১৪
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
সুমাইয়ার ধাক্কাধাক্কি তে ঘুম ভাঙে রূপার।
চোখ খোলে তাকিয়ে দেখে সুমাইয়া হাসি হাসি মুখে রূপার দিকে তাকিয়ে উঠতে বলছে।
রূপা শুয়া থেকে উঠে ঘড়ির দিকে তাকালো হায় আল্লাহ দশটা বেজে গেছে!!
রূপা অবাক হয়ে সুমাইয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ এতো দেরি কিভাবে হলো। আরো আগে ডাকলে না সুমাইয়া… ‘
সুমাইয়াঃ ভাবি আমি আপনাকে ডাকতে এসে ছিলাম কিন্তু ভাই নিষেধ করে দিয়েছে । আপনার ঘুম না ভাঙা অবদ্ধি জেনো আপনাকে কেউ না ডাকে। আপনার ঘুমের জেনো কোনো সমস্যা না হয়।
রূপার সাজ্জাদের কথা মনে পড়তেই কাল রাতের কথা মনে পড়লো।রাতে সাজ্জাদ অনেক ঘুরেছে রূপাকে নিয়ে। ঘুরতে ঘুরতে এক পর্যায় রূপা ঘুমিয়ে গিয়ে ছিলো। তাহলে রুমে কিভাবে আসলো! সাজ্জাদ ওকে নিয়ে এসেছে!.?
রূপা রুমের এদিক ওদিক তাকাতেই সুমাইয়া বলে উঠলো, ‘ ভাবি ভাইয়া তো বাহিরে গেছে। ‘
সোহা রূপার কাছে এসে বললো,’ ফ্রেশ হয়ে আয়। বাহিরে মেহমান চলে এসেছে সবাই বউ দেখতে চাইছে।’
রূপা সোহার দিকে তাকালো। মাশাল্লাহ কতো সুন্দর লাগছে সোহা কে। আরিফ ভাই এখন দেখলে নির্বাচন পলক ফেলতে ভুলে যেতো।
সুমাইয়া কে দেখেই বলে উঠলো সোহা,’ সুমু তুমি নিজের রুমে যাও৷ আর নিজের ড্রেস চেঞ্জ করো।’
সুমাইয়া রূপার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ ভাবি আমি আর কিছুটা সময় আপনার কাছে থাকি না প্লিজ..?’
রূপা হেঁসে বললো,’ বসো তুমি আমি ফ্রেশ হয়ে নেই। ‘
রূপা রুমের দিকে তাকিয়ে অবাক হলো। কাল রাতে সারা রুম ফুলে ফুলে সাজানো ছিলো এখনো ঠিক সেভাবেই আছে।
আরিয়ান চাচ্চু হাতের সব কাজ শেষ করে এসে মাহতিম পাশে বসলো।
মাহতিম মোবাইলে গেইম খেলছে আর হাসছে।
আরিয়ান চাচ্চুঃ এভাবে পাগলের মতো হাসছিস কেনো..?
মাহতিমঃ এবার মনে হচ্ছে আবার আরেকটা বিয়ের ঘন্টা বাজবে।
আরিয়ান চাচ্চু মাহতিম এর কথা পাত্তা দিলো না।
মাহতিম আবার বলে উঠলো, ‘ এতো বছর পর যে নারী আমার চাচ্চুর ঘুম উড়িয়ে দিয়েছে সে কোনো সাধারণ নারী নয়। তাকে তো দেখতেই হবে।
আরিয়ান চাচ্চু ভ্রু কুঁচকে মাহতিম এর দিকে তাকিয়ে বললো,’ কি আবল তাবল বকছিস।’
মাহতিম মোবাইল পাশে রেখে চাচ্চুর দিকে তাকালো।
মাহতিমঃ আমার কেনো জেনো মনে হচ্ছে আমার চাচ্চু প্রেমে পড়েছে।
আরিয়ান চাচ্চুঃ তা আপনার এমনটা কেনো মনে হচ্ছে..?
মাহতিমঃ আমি খেয়াল করছি আপনার চোখ মুখে কাউকে দেখার তীব্র ইচ্ছে। আমি আপনার মন বুঝতে পারছি তার ভাবনা আপনাকে ঘুমাতেও দিচ্ছে না। আমি আপনার মুখ দেখে বুঝে ফেলতে পারি আপনার মনে এখন কি চলছে।
আরিয়ান চাচ্চু মাহতিম এর কথা শুনে হেঁসে উঠলো। তবে কিছুই বললো না।
সুবর্ণা বেগম নিজের পছন্দ মতো বৌভাত এর অনুষ্ঠান করেছেন।
সাজ্জাদের বাড়িটা বিশাল বড়, বাহিরে বিশাল বড় গার্ডেন।
বাহিরে খুব সুন্দর করে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
স্টেজ সাজিয়েছে আহনাফ নিজের হাতে।
রূপাকে সুন্দর করে সুমাইয়া, সোহা আরও দুইটা পার্লারের মেয়ে সাজিয়ে দিলো।
সুবর্ণা বেগম রূপার জন্য রুমে খাবার পাঠালো সাজ্জাদকে দিয়ে।
সাজ্জাদ রুমে আসতেই সবাই বেরিয়ে গেলো৷
সাজ্জাদ খাবার রাখলো রূপার সামনে।
রূপার পেটেও খুব খিদে কিন্তু এমন একটা ভাব নিলো জেনো একটুও খিদে লাগেনি।
সাজ্জাদঃ খাবারটা আগে খেয়ে নাও।
রূপা কিছু না বলে খাবারের দিকে তাকালো৷
খাবারে হাত দেওয়ার আগেই মাহতিম ছু মেরে খাবার নিজের হাতে নিয়ে নিলো।
সাজ্জাদ মাহতিম এর দিকে তাকাতেই মাহতিম বলে উঠলো, ‘ সকাল থেকে ভাবির রুমে আসতে কড়া নিষেধ করা হয়েছে কিন্তু কেনো..? তোমরা তো রোমাঞ্চ করছো না তাহলে আসতে কেনো নিষেধ..?
রূপা লজ্জা পেয়ে মাতা নিচু করে নিলো। সাজ্জাদ মাহতিম এর দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো, ‘ রুম থেকে এখন যাবি নাকি আম্মুকে ডাকবো..? ‘
মাহতিমঃ তুমি যাই করো ভাই আমি এক পা ও নড়ছি না। ভাবির হাতে মেহেদী ভাবি কিভাবে খাবে..?
সাজ্জাদ রূপার হাতের দিকে তাকালো হাতের মেহেদী দেওয়া।
সাজ্জাদঃ এখন হাতে মেহেদী কেনো..?
রূপা কিছু বলার আগেই মাহতিম বলে উঠলো, ‘ ভাবি তো মেহেদী দেয়নি তাই এখন দিয়ে দিয়েছে।
সাজ্জাদঃ তুই এতো কিছু কিভাবে জানলি..?
মাহতিমঃ এটা সবাই জানে শুধু তুমি বাদে।
সাজ্জাদ নিজেকে নিজে বলে উঠলো, ‘ আমি আসলেই কোনো কাজের না বউয়ের এতো টুকু খোঁজ রাখতে পারলাম না।
মাহতিম সাজ্জাদ কে দেখিয়ে রূপার সামনে গিয়ে খাবারের লুকমা এগিয়ে দিলো।
সাজ্জাদ মাহতিম এর হাত থেকে খাবারের প্লেট নিয়ে ওকে রুম থেকে বের করে দরজা আটকে দিলো।
মাহতিম রুমের বাহিরে কাঁদো কাঁদো মুখ করে দরজার দিকে তাকালো, সুমাইয়া আর সোহা ভাবির মাহতিম কে দেখেই হাসা শুরু করলো।
রূপা চোখ বড় বড় করে দুই ভাইয়ের কাহিনি দেখছিলো।
সাজ্জাদ রূপার সামনে গিয়ে বলে উঠলো, ‘ সরি আসলে আমি খেয়াল করিনি তোমার হাতে মেহেদী ছিলো। ‘
রূপাঃ সরি বলতে হবে না। আপনি খাবারটা রাখুন আমি হাত ধুয়ে খেয়ে নিবো।
সাজ্জাদ আমতা আমতা করে বললো,’ আমি খাইয়ে দিলে কি খুব বেশি প্রবলেম হয়ে যাবে..?
রূপা মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।
সাজ্জাদ খুশি হলো তবে তা মুখে প্রকাশ করলো না।
রূপাকে জোর করে সবটা খাইয়ে দিলো।
সুবর্ণা বেগম আসলো রূপার কাছে।
রূপার মুখে হাত দিয়ে বললো” মাশাল্লাহ..
হাতে বালা আর গলায় নিজের একটা চেইন পড়িয়ে দিলো রূপা কে।
~ এটা আমার পক্ষ থেকে আমার ছেলের বউ এর ছোটো একটা উপহার।
রূপা শাশুড়ির দিকে তাকিয়ে হাসলো।
রূপার বাড়ি থেকে সবাই আসলো।
মাহি গিয়ে রূপাকে জড়িয়ে ধরলো।
নাহিদা চুপচাপ রূপার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
রূপাকে সুন্দর করে স্টেজে বসানো হলো পাশে সাজ্জাদ।
মাহতিম নজর রাখছে আরিয়ান চাচ্চুর উপর। কোন মেয়ে ঘুম উড়িয়েছে আজ খুঁজে বের করে ছাড়বে।
আরিয়ান কখনো এদিকে তাকাচ্ছে তো আবার অন্য দিকে তাকাচ্ছে।
মাহতিম বিরক্ত হয়ে অন্য পাশে তাকালো।
আহনাফ এক দৃষ্টিতে রূপার দিকে তাকিয়ে আছে।
রাগে হাতের কাছের গ্লাসটা চেপে ধরে আছে।
মাহতিম আহনাফ কে ধাক্কা দিয়ে বললো,’ কি হয়েছে..? ‘
আহনাফ হেঁসে বলে উঠলো, ‘ এখনো কিছু হয়নি’
মাহতিম কিছু বলার আগেই ওর চোখ গেলো রূপার পাশে দাঁড়ানো মেয়েটার দিকে। আবার তাকালো আরিয়ান চাচ্চুর দিকে।
এক অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মাহতিম বসা থেকে দাঁড়িয়ে মেয়েটার পাশে দাঁড়ালো।
মাহতিম প্রথমে জিজ্ঞেস করলো, ‘ আপনার নাম কি বেয়াইন..? ‘
মাহি সামনে অচেনা ছেলে দেখে রূপার দিকে তাকালো।
মাহতিম রূপার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ বাহ্ ভাবি আপনার মতো কিউট, গুলোমুলো আপনার বোন..’
রূপা হেঁসে বলল,আমার বান্ধবী.. ‘
মাহতিমঃ বাহ্ মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি।
মাহিঃ মানে..
মাহতিমঃ ভাবছি এক বাড়িতে আপনাদের দুই বান্ধবীর বিয়ে হলে কেমন হবে..?
মাহি আহনাফ এর দিকে তাকিয়ে বললো,’ খুবি জগন্ন্য হবে।’
মাহতিম মাহির চোখের দিকে তাকিয়ে আহনাফ এর দিকে তাকালো।
আহনাফ আরিয়ান চাচ্চুর সাথে কথা বলছে।
আরিয়ান চাচ্চু মাহতিম এর দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকালো। মাহতিম দাঁত বের করে হেঁসে আবার মাহির সাথে কথা বলতে শুরু করলো। কথা নয় ফ্লার্ট করতে শুরু করলো।
সাজ্জাদ বার কয়েক রূপার দিকে তাকালো।
আহনাফ বাঁকা হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে।
সাজ্জাদ এর সামনে এসে মৌ দাঁড়ালো।
সাজ্জাদ মৌ কে দেখে অবাক হলো। সে এখানে কি করছে..?
মৌ রাগে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে সাজ্জাদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
সুবর্ণা বেগম মৌ এসেছে শুনে ভয় পেলেন। ছোটো খাটো ঝড় বয়ে যাবে এখন বিয়ে বাড়ি দিয়ে।
সেই ছোটো বেলা কথা দিয়েছেন মৌ কে সাজ্জাদের বউ বানিয়ে আনবেন।
মৌ এর আব্বু মিরাজ সাহেব আদি চৌধুরীর বন্ধু। সেই সূত্রে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য এই বিয়ের কথা বলা। মৌ তো এখন দেশের বাহিরে তাহলে এখানে আসলো কিভাবে..? কে বলেছে বিয়ে সম্পর্কে..? বিয়ে সাধারণ ভাবে করানো হয়েছে জেনো মৌ এর পরিবার না জানতে পারে। বিয়ের কয়েক মাস চলে গেলে সব ঠিক সামলে নিতো কিন্তু এখন সব কিভাবে সামলাবে!!..?
মৌ রাগে সাজ্জাদের সামনে গিয়ে বলে উঠলো, ‘ এইসব কি সাজ্জাদ..!!?’
সাজ্জাদ মৌ এর দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো, ‘ দেখতেই তো পাচ্ছো..
মৌঃ ভুলে যেও না আমার সাথে তোমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো। আমাকে কিভাবে ঠকাতে পারলে তোমরা..!!
রূপা অবাক হয়ে মৌ এর দিকে তাকালো।
রূপার একদম চিনতে ভুল হয়নি এই মেয়েই তো আহনাফ এর গার্লফ্রেন্ড তাহলে আজ আবার সাজ্জাদকে এইসব কেনো বলছে..?
সুবর্ণা বেগম মৌ এর কাছে এসে বলে উঠলো, ‘ মৌ সিনক্রিয়েট করো না। এখানে মিডিয়ার লোকজন ও আছে। রুমে আসো আমি বুঝিয়ে বলছি।
মৌ রেগে সুবর্ণা বেগম এর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ আর আপনি কিভাবে পারলেন আমাদের সাথে প্রতারণা করতে। আমি দেশের বাহিরে যেতে না যেতেই সুযোগ বুঝে ছেলের বিয়ে দিয়ে দিলেন। আমি এই বিয়ে মানি না। আজ এই মুহূর্তে সাজ্জাদ আমাকে বিয়ে করবে।
সুবর্ণা বেগমঃ পাগলামো বন্ধ করো৷ তোমার মানা আর না মানায় কিছুই পাল্টাবে না। এটাই ভালো হবে এসেছো বসো বিয়ের দাওয়াত খেয়ে যাও।’
মৌঃ আমার বাসার কাজের লোকরা ও এর থেকে ভালো খাবার খায়। আমি আবারও বলছি এই মেয়েকে ডিভোর্স দিয়ে সাজ্জাদকে বলুন আমাকে বিয়ে করে নিতে । এতে আপনাদের কোম্পানির অনেক লাভ হবে। আর না হলে আমি পুলিশে দিতে বাধ্য হবো আপনাদের সবাই কে।
আহনাফ দূর থেকে দেখছে আর হাসছে। এইতো কেবল শুরু।
অনুষ্ঠানের সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে৷
মিডিয়ার লোকজন এসে ভরে গেছে সব মৌ এর কথায় এসেছে তবে প্লেন সবটা আহনাফ এর।
পুলিশ সামনে আসতেই সুবর্ণা বেগম উনার স্বামীর দিকে তাকালেন।
পাশেই আদি চৌধুরীর বড়, মেঝো ভাই দাঁড়িয়ে ছিলো।
সবাই অনেক বুঝানোর চেষ্টা করলো কিন্তু মৌ নিজের সিদ্ধান্তে অটুট তাকে হয় সাজ্জাদ বিয়ে করবে না হলে সে বাধ্য হবে পুলিশের কাছে সবাইকে ধরিয়ে দিতে।
সাজ্জাদ বাঁকা চোখে আহনাফ এর দিকে তাকালো।
আহনাফ এর চোখে মুখে বিজয়ী হাসি।
সাজ্জাদ হাসলো আহনাফ এর দিকে তাকিয়ে।
সাজ্জাদ মৌ এর সামনে এসে বলে উঠলো, ‘ আচ্ছা তোমার বলা শেষ নাকি আরও বাকি আছে..?’
মৌ কিছু বলার আগে সাজ্জাদ ওর সামনে একটা ভিডিও তুলে ধরলো মৌ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো সেই ভিডিও দিকে।
চলবে…
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।