#কি_নেশায়_জড়ালে
#পর্ব_২০
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
চোখে সূর্যের আলো পড়তেই ঘুম ভেঙে যায় আহনাফের৷ পিটপিট চোখ খুলে উপরে তাকিয়ে ভয় পেয়ে যায়।
মাহতিম চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে ঝুঁকে আছে আহনাফ এর উপরে।
আহনাফ মাহতিম কে দেখে উঠে বসলো।
মাহতিমঃ ভাই তুমি সারা রাত এখানেই ছিলে..?
আহনাফঃ দেখে কি মনে হয়..!
মাহতিমঃ গালে লাল লাল এই গুলা কি..?
আহনাফঃ মশার ভালোবাসা।
মাহতিম হাসতে হাসতে বললো,’ ভাবি বুঝি রাগ করে আটকে রেখে ছিলো..?
আহনাফ অবাক হয়ে বললো ” ভাবি!!”
মাহতিমঃ আরে ভাই নতুন নতুন বিয়ে হলে মানুষের কতো ভালোবাসা আর তোমরা কিনা ঝগড়া করে একজন হাত পা ভেঙেছো আরেকজন ছাঁদে বসে মশার ভালোবাসা উপলব্ধি করেছো! বাহ্
মাহতিম এর কথা শুনে আহনাফ অবাক হয়ে গেলো।
~ হাত পা কে ভেঙেছে..?
মাহতিম সবটা খুলে বললো আহনাফ কে।
আহনাফ রেগে নিচে নেমে আসলো।
রূপা রান্না করছে আর সোহা হেল্প করছে।
আহনাফ রেগে রূপার পেছনে গিয়ে বলে উঠলো, ‘ তুমি ইচ্ছে করে মৌ কে ফেলেছো তাই না! তুমি ওর এই অবস্থা করেছো।
রূপা গরম খুন্তি হাতে নিয়ে পেছন ঘুরতেই সেই খুন্তি আহনাফ এর বুকে লাগলো। বেচারা ব্যথায় চোখ বন্ধ করে নিলো।
রূপার হাত থেকে সাথে সাথে খুন্তি নিচে পড়ে গেলো। সেই খুন্তি গিয়ে আহনাফ এর পায়ে পরলো।
বেচারা এবার রেগে রূপাকে কিছু না বলেই বেরিয়ে গেলো রান্না ঘর থেকে৷
আহনাফ বেরিয়ে যেতেই সোহা বলে উঠলো, ‘ এটা কি করলি..? বেচারার বুক একদম কালচে হয়ে গেছে। পায়েও বেশ ব্যথা পেয়েছে।
রূপাঃ আমি তো ইচ্ছে করে দেইনি। রান্না ঘরে এমন একটু আধটু খেতে হয়।
মাহি একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে।
আরিয়ান এই রেস্টুরেন্টের নাম বলে ছিলো।
মাহির সামনে তাকিয়ে দেখে আরিয়ান আসছে।
আরিয়ানঃ সরি সুমাইয়া তোমাকে অপেক্ষা করানোর জন্য।
মাহি আর আরিয়ানের মাঝে অনেক কথা হলো।
আরিয়ান এক পর্যায়ে মাহি কে জিজ্ঞেস করলো,’ মহুয়া তোমার বোনের নাম..?
মাহি কিছুটা অবাক হলো। তাও হেঁসে বললো, ‘ জ্বি’
আরিয়ানঃ মনে পড়ে মহুয়ার কথা..?
মাহিঃ আপনি কে..?
আরিয়ান হেঁসে বললো, ‘ আমি মহুয়া কে ভালোবাসি। ‘
মাহিঃ কিইই!! কিন্তু আপু তো নেই।
আরিয়ানঃ জানি আমি। সে তোমাদের কাছে নেই আমার কাছে সব সময় আমার পাশে থাকে।
মাহি থমথমে মুখে বলে উঠলো, ‘ আপনি জানেন আপু একজন কে ভীষণ ভালোবাসতো..?
আরিয়ানঃ তুমি দেখেছো কখনো তোমার আপু কাকে ভালোবাসতো..?
মাহি মাথা নেড়ে না বুঝালো।
আরিয়ান কথা ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করলো ‘ কি খাবে..?’
মাহিঃ আপনি আপুর সেই ভালোবাসার মানুষটি তাই না!!???
আরিয়ান শান্ত দৃষ্টিতে মাহির দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো।
মৌ সোফায় বসে আছে।
সবাই জিজ্ঞেস করছে কাল ওর সাথে কি হয়ে ছিলো..?
মৌ রাগী চোখে সুমাইয়ার দিকে তাকালো।
সবাই সুমাইয়ার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই মৌ বলবো, ‘ আমি পা বেজে পড়ে গিয়ে ছিলাম। ‘
মাহতিমঃ সাপের মতো ফুসফুস করে হাঁটলে শুধু বাসায় না কোন দিন জানি ফুস করে উপরে চলে যান।
মৌ রেগে মাহতিম এর দিকে তাকালো।
মাহতিম মোবাইল হাতে নিয়ে চলে যেতেই মৌ ন্যাকা কান্না করে বলে উঠলো, ‘ দেখলে আহনাফ তোমার এই বাড়িতে আমার কোনো সম্মান নেই। আমি আজকেই আমার আব্বুর কাছে চলে যাবো।
আহনাফঃ রেডি হয়ে নাও। আমি গাড়ির ডাইভার কে বলে দিবো তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসবে।
মৌঃ তুমিও এখন আমাকে সহ্য করতে পারছো না তাই না..?
আহনাফঃ বিষয়টা এমন নয়। তুমি রেস্ট নাও তোমার বাড়ি গিয়ে। বলেই আহনাফ বেরিয়ে গেলো।
মৌ রেগে রান্না ঘরের দিকে তাকিয়ে আছে। একটা কেও ছাড়বে না শুধু একটু সুস্থ হোক।
মাহি রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে রাস্তায় আস্তেই মাহতিম এর সাথে দেখা হয়ে গেলো। পেছনে আরিয়ানকে দেখেই বুঝলো মাহি আরিয়ান এর সাথে দেখা করতে এসেছে।
মাহিঃ কেমন আছেন..?
পেছন থেকে আরিয়ান মাহতিম কে বলে মাহি কে বাসা অবধি পৌঁছে দিতে।
মাহতিম কিছু বলার আগেই আরিয়ান গাড়ি নিয়ে চলে যায়৷
মাহতিম মাহির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ আপনি কান্না করেছেন..? ‘
মাহি হেঁসে বললো,’ না.. চলুন হেঁটে হেঁটে কথা বলা যায়।
মাহতিম ও হেঁসে মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। তবে মনে তো সন্দেহ রয়েই গেলো। কি হয়েছে..? মাহি কেনো কেঁদেছে..?
সাজ্জাদ আজ অফিস থেকে একটু জলদি চলে আসলো।
রূপা হাতে শাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর ভাবছে কিভাবে পড়বে। একা একা পড়তে পারে না। সবটা পড়লেও কুঁচি গুলো কেউ যত্ন করে ধরে দিতে হয়।
রূপা এসব ভাবছে তখনি সাজ্জাদ রুমে আসলো।
রূপাঃ আপনি কি আমার কুঁচি গুলো একটু ধরবেন..?
রূপার মুখে এমন কথা শুনে সাজ্জাদ অনেক অবাক হলো।
রূপা কে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সাজ্জাদ বললো,চলো হেল্প করি..’
রূপা সুন্দর করে রেডি হয়ে নিলো।
সাজ্জাদ এই প্রথম রূপাকে নিয়ে ঘুরতে যাবে।
চুলগুলো সুন্দর করে আঁচড়ে ছেড়ে দিলো।
সাজ্জাদ রূপার পেছনে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো ” তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে। লোক দেখলে বলবে আমি আমার ঘরে যত্ন করে এক চাঁদ লুকিয়ে রেখেছি। ‘
রূপা লজ্জায় মাথা নিচু করে নিলো৷
সাজ্জাদঃ তুমি কি জানো লজ্জা পেলে তোমাকে এতো বেশি আকর্ষণীয় করে তুলে যার কারনে আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে কষ্ট দায়ক হয়ে যায়। কখন না জানি ভুলে কিছু করে ফেলি। আচ্ছা আমার দাঁড়া ছোটো একটা ভুল হয়ে গেলে তুমি ক্ষমা করে দিবে তো..?’
রূপা কিছু বলার আগে সাজ্জাদ রূপাকে কাছে টেনে কপালে খুব যত্ন করে নিজের ঠোঁট ছোঁয়ালো।
রূপা জেনো একদম জমে গেছে।
সাজ্জাদ হেঁসে বললো,” ক্ষমা না করলে এই ছোটো ছোটো ভুল আমি বার বার করবো..”
চলবে…..
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।
#কি_নেশায়_জড়ালে
#পর্ব_২১
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
মাহতিম বাসায় এসে শুনে আজ রাতেই নাকি আরিয়ান চাচ্চু দেশ ছাড়বেন।
এটা শুনেই বেশ অবাক হলো মাহতিম। আরিয়ান চাচ্চু তো বলে ছিলো আর যাবে না!!..
মাহতিম বেশ কয়েক বার আরিয়ানকে কল দিলো কিন্তু আরিয়ান এর মোবাইল বন্ধ দেখাচ্ছে।
মাহতিম চোখ বন্ধ করে বড় একটা শ্বাস নিলো। মাহির কান্না করা চোখ গুলো ভেসে উঠলো। মাহতিমের কিছু একটা ভেবে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো।
মৌ রেগে আহনাফ কে বলে উঠলো, ‘ আমি এখন যেতে চাচ্ছি না আহনাফ। তুমি ভুলে যেও না আমাদের শর্তের কথা..!! আমি কিন্তু এখন এই মুহূর্তে সবাই কে সত্যটা বলে দিলে তোমার অবস্থা কি হবে ভাবতে পারছো..?
আহনাফ রেগে মৌ এর গাল শক্ত করে চেপে ধরে বলে উঠলো, ‘ তুই আমাকে ভয় দেখাচ্ছিস..! এতো বড় সাহস তোর..? আমি খুব ভালো করেই জানি তুই রূপার ক্ষতি করতে গিয়ে ছিলি ভাগ্য ভালো সুমাইয়া দেখে ফেলে ছিলো।
মৌ ভয়ে ভয়ে আমতা আমতা করে বলে উঠলো, ‘ সুমাইয়া..??”
আহনাফ তাচ্ছিল্যের সুরে হেঁসে বললো, ‘ সুমু আমাকে সবটা বলেছে। আমি তোকে এখানে এনেছি ভাইকে বিয়ে করার জন্য। ভাইকে ইমপ্রেস করে নিজের করে নেওয়ার জন্য। আমার পিছু পিছু ঘুরবার জন্য নিয়ে আসেনি।
মৌঃ সাজ্জাদ তো ফিরেও তাকায় না ইমপ্রেস কিভাবে করবো..? সাজ্জাদ রূপা ছাড়া কিছুই বুঝে না।
আহনাফ নিজের থেকে মৌ কে দূরে সরিয়ে বলে উঠলো, ‘ ওদের সম্পর্কে যত তারাতারি সম্ভব ফাটল ধরা চাই..!! সাত দিন সময় দিলাম এর মধ্যে যা করার করবি কিন্তু রূপার জেনো কোনো ক্ষতি না হয়।
মৌ ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো, ‘ তুমি আসলে কি করতে চাচ্ছো..??
আহনাফঃ সব জলদি হওয়া চাই। আর দ্বিতীয় বার আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করার আগে ভেবে নিবি। আমি তোকে আমার প্লেন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার অধিকার দেইনি।
মৌঃ সব তো এখানে শেষ হয়ে যায়। সাজ্জাদ কে রাস্তা থেকে সরিয়ে ফেলো আর না হয় রূপা কে। একজন কে শেষ করে দিলে খেলা এখানে শেষ।
আহনাফ রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো,’ বাহ্ খুব সুন্দর প্লেন।’
মৌ শয়তানি হাসি দিয়ে মনে মনে বলে উঠলো ” তুমি কিছু না করলেও আমি রূপাকে শেষ করে দিবো সাথে এই বাড়ির সব কটাকে এক এক করে শিক্ষা দিয়ে তোমাকে আমার করে নিবো আহনাফ।
রূপা দাঁড়িয়ে আছে ব্যালকনিতে সাজ্জাদ হাতে দুই কাপ কফি নিয়ে এসে রূপার পাশে দাঁড়ালো।
রূপা তাকাতেই সাজ্জাদ রূপার দিকে এক কাপ কফি এগিয়ে দিল।
রূপা হালকা হেঁসে কফি নিলো।
কিছু সময় বেশ নিরবতা কাটলো।
রূপা কফি শেষ করে রুমে আসতে নিলেই সাজ্জাদ বলে উঠলো, ‘ আমি দিন দিন তোমার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছি রূপা। আমি ভীষণ ভালোবাসি তোমাকে। এই যে তুমি আমার পাশে এতো সময় দাঁড়িয়ে ছিলে কিন্তু আমি চাইলেই তোমার হাত টাও স্পর্শ করতে পারছি না। ভালোবেসে তোমায় বুকের সাথে মিশিয়ে নিতে পারছি না। তোমার এলোমেলো চুলে হাত ঠিক করে দিতে পারছি না। তোমার চোখে ভালোবেসে তাকিয়ে থাকতে পারছি না। এই গুলো ইদানীং প্রতি নিয়ত আমাকে কষ্ট দিচ্ছে রূপা তুমি কি তা বুঝতে পারো..? আমাকে একটু ভালোবাসা যায় না রূপা..? বেশি চাই না একটু ভালোবাসো!! তোমার একটু ভালোবেসে হাতটা স্পর্শ করাই আমার জন্য এক সমুদ্র ভালোবাসা পাওয়া সমান।
রূপা মাথা নিচু করে চুপচাপ রুমে চলে যায়।
সাজ্জাদ মন খারাপ করে আকাশের দিকে তাকায়। কবে রূপা বুঝবে ওর ভালোবাসা..? কবে একবার নিজ থেকে ওর হাত ধরে বলবে ভীষণ ভালোবাসি আমার স্বামী কে। সাজ্জাদ নিজের ভাবনার উপর নিজেই হাসলো রূপা কখনো তাকে ভালোবাসবে না।
সাজ্জাদ রুমে এসে দেখে রূপা ঘুমিয়ে পড়েছে। সাজ্জাদ মন ভরে রূপাকে দেখলো। ইচ্ছে করলো এলোমেলো চুল গুলো যত্ন করে সরিয়ে দিতে। হাতটা শক্ত করে ধরে বলতে ভীষণ ভালোবাসে। কপালে নিজের ঠোঁট ছুঁইয়ে বলতে মৃত্যুর পরেও তোমার পিছু নিবো আমি, তখনো বলবো ভীষণ ভালোবাসি, এবার তো একটু ভালোবাসো রূপা। তখন নিশ্চয়ই এভাবে মুখ ফিরিয়ে নিবে না তুমি..?
সাজ্জাদ রূপার পাশে শুয়ে পরলো।
কিছু সময় পর রূপা চোখ খুলে তাকালো। চোখ দিয়ে পানি ঝরছে। পাশ ফিরে একবার সাজ্জাদের দিকে তাকালো ঘুমাচ্ছে। আবার নিজের চোখ বন্ধ করে নিলো। আজ জেনো ঘুমেরা ছুটি নিয়েছে।
ছাঁদে পাশাপাশি বসে আছে মাহতিম আর মাহি।
ছাঁদের দরজা বন্ধ।
মাহিঃ আমাকে আম্মু খুঁজবে…
মাহতিমঃ বলবে ছাঁদে ঘুমিয়ে গিয়ে ছিলাম।
মাহিঃ পাগল নাকি! আম্মু জানে আমি ভীষণ ভীতু ছাঁদে রাতে একা থাকা ইম্পসিবল।
মাহতিমঃ সময় বেশি নিবো না।
মাহিঃ দুই ঘন্টা ধরে বসে আছি আর তুই বলছো সময় নিবে না! বাহ্।
মাহতিমঃ তুমি কি বসে বসে সময় গুণছো..?
মাহি হেঁসে বললো, ‘ একদম না মাহতিম। এবার বলো কেনো এতো রাতে আমার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলে..? কি হয়েছে..?
মাহতিমঃ তোমার কি বেশি সমস্যা করে ফেললাম..?
মাহিঃ আমি তা কখন বললাম। তুমি তো প্রয়োজন না পরলে একটা কল ও দাওনা। আমি কল দিলেও ধরো না তাই বললাম।
মাহতিম মাহির দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ আজ তোমি আর আরিয়ান চাচ্চু দেখা করে ছিলে..?’
মাহি হেঁসে বললো, ‘ তা তো তুমি দেখেছো এখন আবার জিজ্ঞেস করার কি আছে..?
মাহতিমঃ চাচ্চু আবার দেশ ছেড়ে চলে যাবে।
মাহিঃ কিন্তু কেনো..?
মাহতিমঃ আমিও জানিনা আজ তোমার সাথে দেখা করার পর হঠাৎ বাসায় এসে বললো। আমি ভাবলাম তোমার আর চাচ্চুর মধ্যে কি কোনো সমস্যা হয়েছে..?
মাহিঃ আমাদের মধ্যে কি সমস্যা হবে..? চাচ্চু আমাকে আপুর বিষয় জিজ্ঞেস করলো।
মাহতিমঃ আপু!!! কি জিজ্ঞেস করেছে..?
মাহিঃ আমার আপুর সম্পর্কে সব। আপুর সাথে আমাদের সম্পর্ক ঠিক কেমন ছিলো..?
মাহতিমঃ তোমার আপুর নাম কি মহুয়া..?
মাহিঃ হুম। তোমরা সবাই কিভাবে চেনো আপুকে..?
মাহতিম কিছু সময় থমকে গেলো। নিজেকে সামলে মাহতিম মাহির দিকে তাকালো।
মাহতিমঃ এই জন্যই কি এতো গুলো বছর পর চাচ্চুর মনে মহুয়া চাচি ছাড়া অন্য কেউ আসতে পেরেছে..?
মাহি কিছুই বুঝলোনা মাহতিম এর কথার।
মাহিঃ মহুয়া চাচি.. ?
মাহতিমঃ আরিয়ান চাচ্চু আর মহুয়া চাচি ভালোবেসে বিয়ে করে ছিলো। কিন্তু..
মাহিঃ কিন্তু কি..?
মাহতিমঃ বিয়ের দিন তাদের গাড়ি এক্সিডেন্ট হয়। চাচ্চু বেঁচে যায় কিন্তু চাচিকে ডাক্তার বাঁচাতে পারেনি। মহুয়া চাচির বাড়ির লোক সম্পর্কে আমি কিছুই জানতাম না চাচ্চুর অবস্থাও ভালো ছিলো না তাই চাচির হোস্টেলে কল দিয়ে জানিয়ে ছিলাম স্যার আর কিছু ফ্রেন্ড এসে ছিলো। আমি উনাদের কাছে চাচিকে দিয়ে বলি বাড়ির লোকজনদের কল দিয়ে জানাতে আর আমাদের পরিবারের লোকজন চাচি সম্পর্কেও জানতো না। তাই চাচ্চুকে নিয়ে আমি আর বড় আব্বু দেশ ছেড়ে যাই ভালো উন্নতমানের চিকিৎসার জন্য । চাচ্চু যখন জ্ঞান ফিরে প্রথমেই মহুয়ার কথা জিজ্ঞেস করে। আমি বলতে চাইনি কিন্তু চাচ্চু বেশ উত্তেজিত হয়ে পড়ে তাই সত্যিটা বলতে হয়। চাচ্চু ওইদিন ওই ঘটনার পর একদম চেঞ্জ হয়ে যায়। দেশেও আর আসতে চায়নি আমি চাচির খুঁজ নিয়ে জানতে পেরে ছিলাম উনার পরিবার এসে ছিলো। তারপর আর খোঁজ নেওয়া হয়নি উনার পরিবারের। আরিয়ান চাচ্চু কখনো উনার আর মহুয়া চাচির বিষয় কিছুই বলেননি। তাদের দেখা হওয়া পরিচয় কিছুই না। আমি অনেক বার জিজ্ঞেস করে ছিলাম।
মাহি কিছু বলার আগেই ছাঁদের দরজায় আঘাত হলো।
ভয়ে মাহি মাহতিম এর দিকে তাকালো।
মাহতিমের সেই দিকে কোনো হেলদোল নেই।
মাহিঃ আব্বু মনে হয়।
মাহতিমঃ দরজা খুলে দাও।
মাহিঃ কি বলছো মাথা ঠিক আছে!!..? তারাতারি নেমে যাও।
মাহতিমঃ এতো ভয় পাচ্ছো কেনো..?
দরজা আবার আঘাত হলো।
মাহতিম উঠে একটা গাছের সামনে গিয়ে বললো,’ কাল তাহলে বাকি কথা শেষ হবে..?’
মাহিঃ আবার আসবে কাল..?
মাহতিমঃ শেষ তো হয়নি…
মাহি হঠাৎ বলে উঠলো, ‘ আবার কাকে মনে জায়গা দিয়েছে তোমার চাচ্চু..?
মাহতিম হেঁসে বললো, ‘ যদি বলি তোমাকে..!
সাথে সাথে মাহি স্তব্ধ হয়ে গেলো।
মাহিঃ মজা না করে সত্যি বলো..?
মাহতিমঃ আমি মজা করছি না মাহি। গাছ বেয়ে নেমে গেলো মাহতিম।
মাহি সেই একই ভাবে এখনো দাঁড়িয়ে আছে। কেমন জেনো মাথা ঘুরছে এটা কি করে হয়? এমনটা কিভাবে হলো? নাকি মাহতিম মিথ্যা বললো..? এক ঝাঁক প্রশ্ন মাথায় নিয়ে দরজার দিকে গেলো মাহি। এখন কি বলবে নিজের আব্বু আম্মুকে..?
আজ ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরি হয়ে গেলো রূপার।
সাজ্জাদ অফিসে চলে গেছে। রূপার নিজের উপর রাগ হলো সারা রাত এপাশ ওপাশ করে সকালের দিকে ঘুমিয়েছে। কখন সাজ্জাদ অফিসে গিয়েছে তাও বলতে পারে না।
রূপার আজ সারা দিন একদম ভালো লাগেনি।
সন্ধ্যায় নিজের রুমে বসে মায়ের সাথে কথা বলে কল রাখতেই পেছন থেকে কেউ এসে যত্ন করে জড়িয়ে ধরলো।
রূপা ভয় পেয়ে চিৎকার দিতে গেলেই সাজ্জাদ বলে উঠলো, ‘ বউ আমি..’
সাজ্জাদের মুখে বউ ডাক শুনেই রূপা লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।
রূপাঃ আপনি এতো জলদি বাসায়..?
সাজ্জাদ রূপাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে বললো,’ বউ আমার অনেক বড় রোগ হয়েছে..?’
রূপা উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলো, ‘ কি হয়েছে আপনার..? সাজ্জাদের আরও কাছে গিয়ে বললো,’ কি হয়েছে বলুন না..? ডাক্তার দেখিয়েছেন.??
সাজ্জাদঃ এই রোগ তো ডাক্তার সারাতে পারবে না বলে দিয়েছে।
রূপা অনেকটা ভয় পেয়ে বললো,’ তাহলে কে সারাতে পারবে..? আপনি ভালো ডাক্তার দেখিয়েছেন তো..? আপনি চলুন আমার সাথে আমি ভালো ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো।
সাজ্জাদ রূপার আরও কাছে আসলো। ওদের মাজে এখন এক ইঞ্চিও জায়গা নেই।
‘ আমার হঠাৎ হঠাৎ নিজের বউকে দেখার রোগে আক্রান্ত হয়েছি। বউকে বুকে জড়িয়ে ধরতে চাওয়ার রোগে আক্রান্ত হয়েছি। বউয়ের দিকে ঘন্টার পর ঘন্টা তাকিয়ে থাকার রোগে আক্রান্ত হয়েছি। মোট কথা আমি বউয়ের রোগে আক্রান্ত হয়েছি।এবার বলো এই রোগের ডাক্তার কোথায় পাবো..?
চলবে….
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।