কি নেশায় জড়ালে পর্ব-২৩ এবং শেষ পর্ব

0
484

#কি_নেশায়_জড়ালে
#পর্ব_২৩ (শেষ পর্ব)
লেখিকা#Sabihatul_Sabha

ICU সামনে দাঁড়িয়ে আছে সবাই।
কিছু সময় পর ডাক্তার ICU থেকে বেরিয়ে আসলো।
সাজ্জাদঃ ডাক্তার আরিয়ান চাচ্চু..!!
ডাক্তারঃ সরি আমরা অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু কোনো ভাবে উনাকে বাঁচানো যায়নি।
এই একটা কথায় জেনো সবাই স্তব্ধ হয়ে গেলো।
আরিফ দৌড়ে আরিয়ানের কাছে গেলো।
সবাই কান্নায় ভেঙে পড়লো।

ট্রাকের সামনে আরিয়ান পড়ে ছিলো।আর ওর রক্তাক্ত দেহ দেখেই সবাই অবাক হয়ে গিয়ে ছিলো।
আরিয়ান অনেক বার মাহতিম কে কল দেয় জানানোর জন্য সে দেশে চলে এসেছে। কিন্তু কোনো রেসপন্স না পেয়ে ওর লোকেশন দেখে সেখানে পৌঁছে যায় রাস্তা পার হতে নিলেই একটা ট্রাক এসে ওকে ধাক্কা দেয়।

আরিয়ান এর এমন মৃত্যুতে ভেঙে পরলেন আমেনা বেগম।
নিজের ভাইয়ের মতো দেখে এসেছেন সব সময় আরিয়ানকে আজ হঠাৎ এমন মৃত্যুর খবর কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছেন না।

আহনাফ, মাহতিম, সাজ্জাদ সবাই জেনো নিজেদের সব থেকে প্রিয় মানুষটাকে হারিয়ে ফেললো।

আরিয়ানকে হসপিটাল আনার পর এক বার চোখ খোলে তাকিয়ে ছিলো সবার দিকে। ICU রুমে যাওয়ার সময় মাহির দিকে তাকিয়ে হেঁসে ছিলো। অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে ছিলো মাহির দিকে। যা কারো নজরে না পরলেও মাহি ঠিক খেয়াল করেছে।

আজ একমাস হয়ে গেছে আরিয়ানের মৃত্যুর।
আমেনা বেগম ভীষণ ভেঙে পড়েছেন। তিনি আরিয়ানকে নিজের ভাইয়ের মতো স্নেহ করতেন।

মাহতিম একদম চুপচাপ হয়ে গেছে হঠাৎ করে এতো প্রিয় একজন মানুষ এভাবে চলে যাবে সে হয়তো ভাবতে পারেনি।

মাহি অনেক বার কল দিয়েছে মাহতিম কে। ঘুরতে গিয়েছে মন ভালো করার চেষ্টা করেছে। মাহতিম সব কিছু ভুলে থাকার জন্য অফিসে জয়েন করলো।

সকালে রূপা সোহা মিলে রান্না করছে। বেশ কয়েক বার মৌ রান্না ঘরের আশেপাশে ঘুরলো। কিন্তু সাহস করে বলতে পারলো না ওর হেল্প করতে চায় ওদের।

খাবার টেবিলে সবাই বসতেই আহনাফ বলে উঠলো, ‘ আমি কিছু বলতে চাই সবাই কে…’
সবাই আহনাফ এর দিকে তাকালো।
আহনাফ মৌ কে ইশারায় পাশে আসতে বললো।
মৌ আসতেই আহনাফ বললো,’ আমি একটা সত্যি কথা আজকে সবাইকে জানাতে চাই..

~ এতো কথা না ঘুরিয়ে কি বলবে বলো..?

আহনাফঃ বড় আব্বু আমার আর মৌ এর মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা শুধুই ফ্রেন্ড।

আহনাফ এর আব্বু রেগে বলে উঠলেন,’ তুমি কি সব কিছু পুতুল খেলা পেয়েছো..? যা ইচ্ছে হচ্ছে তাই করে যাচ্ছো। আগে তো এমন ছিলে না।
আহনাফঃ সরি আমি সব কিছুর জন্য।

~সব কিছু সরি বললে সমাধান হয়ে যায় না। তোমার জন্য সমাজে আর মুখ দেখাতে পারবো না।
আদি চৌধুরী ভাইকে বুঝিয়ে থামালেন।
আমেনা বেগমঃ এমনটা কেনো করলে তোমরা..?
আহনাফঃ সরি আম্মু।তুমি যেই শাস্তি দিবে আমি মাথা পেতে নিবো। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ আম্মু।
আমেনা বেগমের চোখ দিয়ে পানি ঝরছে।
আমেনা বেগমঃ তুমি আমার কথার উত্তর দাও আহনাফ..?
আহনাফঃ সরি আম্মু আমি বলতে পারবো না।
আমেনা বেগম রেগে বলে উঠলো, ‘ তুমি তোমার এই মুখ আমাকে আর কোনো দিন দেখাবে না। তোমরা একটা ভাই কেও আমি মানুষের কতো শিক্ষা দিতে পারিনি। তোমার ছোটো ভাই আজ এই মেয়ে কাল আরেক মেয়ে নিয়ে ঘুরে বেড়াতো। রাতে নেশা জাতীয় জিনিস খেয়ে বাসায় আসতো। আমি ভেবে ছিলাম হয়তো তুমি ভালো হবে তুমি তো ওর থেকেও জগন্ন্য।

আহনাফ মাথা নিচু করে বাসা থেকে বেরিয়ে যায় । সে আজ জানতে পেরেছে তার ভাই কেনো আত্মহত্যা করে ছিলো। নিজের ভাইয়ের বেস্ট ফ্রেন্ড থেকে।
রূপা হাতে এভাবে সবার সামনে জুতার মাইর খেয়ে সেদিন রাতে সে অনেক মদ খেয়ে নেয়। পাশে নিজের প্রেমিকা কে দেখে রূপা ভাবতে থাকে আর মদের বোতল দিয়ে আঘাত করতে করতে সেখানেই মেরে ফেলে নিজের প্রেমিকা কে। আর হুস ফিরার পর সে মানতেই পারেনা সে খু*ন করেছে তাও নিজের প্রিয় মানুষ কে। আসতে আসতে সে ডিপ্রেশনে পড়ে যায়। এক পর্যায়ে আত্মহত্যা করে। আর আহনাফ ভাবে রূপার সেই দিনের ভিডিও জন্য হয়তো তার ভাই আত্মহত্যা করেছে।

আহনাফের নিজের উপর রাগ হচ্ছে। আজ ওর জন্য রূপা কতো কষ্ট পেয়েছে আজ সে নিজের ভুল বুঝতে পারছে। খুব ভালো করে বুঝতে পারছে সে কতো বড় ভুল করেছে। কতো বড় অন্যায় করেছে রূপার সাথে । রূপা হয়তো কখনো ওকে ক্ষমা করবে না। সে রূপা আর সাজ্জাদের জীবন থেকে অনেক দূরে চলে যাবে। আজ এই মুহূর্ত থেকে।

মৌ সবার কাছে ক্ষমা চায় সব কিছুর জন্য । আহনাফ ওকে অনুরোধ করেছে এই পরিবার ছেড়ে চলে যেতে।
মৌ সেই ছোটো থেকে আহনাফ কে ভালোবাসে। আজ এতো কাছে এসেও বলা হলো না ভালোবাসি। তবে জীবনের শেষ নিশ্বাস অবধি সে আহনাফকেই ভালোবাসবে খুব বাজে ভাবে আহনাফ এর নেশা ওকে জড়িয়ে নিয়েছে চাইলেও সে এই নেশা কাটিয়ে অন্য কাউকে ভালোবাসতে কখনো পারবে না। আবারও বাড়ির দিকে তাকিয়ে বেরিয়ে গেলো।

আরিয়ান এর মৃত্যুর পর সব কেমন নিস্তব্ধতা চাপা পড়ে যাচ্ছে। এক এক করে সবাই নিরব হয়ে যাচ্ছে।

আহনাফ ব্যাগ গুছিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতেই সামনে এসে দাঁড়ালো নিধি।
নিধিঃ কোথায় যাচ্ছেন..?
আহনাফঃ একদম চলে যাচ্ছি । তুমি দাদীজানকে সত্যিটা বলে দিও। আমার আজ রাতেই ফ্লাইট।
নিধি কেমন সব কিছু গলায় আঁটকে আসথে। নিজেকে শান্ত করে বললো,’ আপনি সত্যি চলে যাচ্ছেন..?
আহনাফঃ হুম।
নিধিঃ কিন্তু কেনো..?
আহনাফঃ আমার দেরি হচ্ছে নিধি আমার যেতে হবে।
নিধিঃ আমার কিছু বলার ছিলো।
আহনাফ থামলো পেছন ফিরে বললো,’ বলো..?
নিধিঃ আমি আপনাকে ভালোবাসি।
আহনাফঃ সবটাই আবেগ।
নিধিঃ আপনার কাছে আবেগ মনে হচ্ছে কিন্তু এটাই আমার কাছে ভালোবাসা।
আহনাফ হেঁসে ফিরে হাঁটা ধরলো।
নিধিঃ আমি অপেক্ষা করবো আপনার।

আহনাফ মনে মনে হাসলো, ‘ বোকা মেয়ে জানেই না আহনাফ এর মন প্রাণ জুড়ে অন্য কেউ আছে। শেষ নিশ্বাস অবধি আহনাফ সেই একজনকেই ভালোবেসে যাবে। হোকনা সেই মানুষটি অন্য কারো তাতে কি। নেশা কি শুধু মদ খেলেই হয়! কারো মায়ায় জড়িয়ে যাওয়ার মতো বাজে নেশা আর কিছুতে থাকে না। শুধু তার উদ্দেশ্য একটাই কথা ‘ হয়তো তোমার আমার মিলন উপর ওয়ালা লিখে রাখেননি। আমাদের এভাবে প্রতিশোধের নেশা ভালোবাসায় পরিনত করার পরেই দুইজন আলাদা । তুমি ভালোবাসার পর আমি কষ্ট দিলাম তোমাকে আঘাত করলাম আর আমি ভালোবাসার পর তুমি অন্য কারো। এই জীবনে তাকে নাই পেলাম মৃত্যুর পর তার পিছু নিবো আমি তখন অন্য কারো সাধ্য নেই আমার থেকে তোমাকে ছিনিয়ে নেওয়ার রূপা। মৃত্যুর পর আমি আমার আল্লাহর কাছে একটা জিনিস চাওয়ার সুযোগ পেলে তোমাকে চেয়ে নিবো। তোমাকে অন্য কারো পাশে দেখার মতো শক্তি আমার মধ্যে নেই তাই চলে যাচ্ছি বহু দূরে।

মাহতিম মাহির সাথে বসে আরিয়ানের একটা ডায়রী পড়লো। সেখানে মহুয়া আর আরিয়ানের কিছু মুহূর্তের কথা লেখা আছে আর বাকি পৃষ্ঠা ছিঁড়ে ফেলেছে। লাস্ট পৃষ্ঠায় লেখা ” তোমার পর দ্বিতীয় কাউকে মন দেইনি আমি। কারো দিকে তাকাতে ইচ্ছে হয়নি। আজ আমি ভুল করেছি আমাকে ক্ষমা করে দাও মহুয়া। আমি তোমারি মতো কাউকে দেখে ভুল কিছু ভাবতে বসেছি। আমার শেষ নিশ্বাস অবধি তুমি আমার সব মৃত্যুর পর আমাদের আবার দেখা হবে। তখনো আমি তোমাকেই ভালোবাসবো।’

লেখাটা পড়ে মাহি হাসলো। কতোটা ভাগ্যবতী ছিলো মহুয়া। আরিয়ানের মতো ভালোবাসার মানুষ পেয়েছে।

মাহতিম মাহির দিকে তাকিয়ে বললো,’ তাদের ভালোবাসাটা কতোটা সুন্দর ছিলো।’
মাহিঃ আমার জীবনেও কেউ আসুক আরিয়ান চাচ্চুর মতো।
মাহতিম মাহির দিকে তাকিয়ে হেঁসে বললো, ‘ আমার চাচ্চু এক পিস উনার কপি নেই। তুমি বরং হিরো আলমের মতো খুঁজে নাও। ‘
মাহি রেগে মাহতিমকে মারতে গেলো। মাহতিমও সামনের দিকে দৌড়ে দিলো পিছু পিছু মাহিও দৌড় দিলো মাহতিমকে ধরার জন্য।

রূপা আর সাজ্জাদ ছাঁদে বসে আছে।
রূপা সাজ্জাদের হাতটা যত্ন করে ধরে কাঁধে মাথা রাখলো।
সাজ্জাদ খুশি হয়ে রূপার দিকে তাকালো।
রূপাঃ আপনার মুখে এই হাসিটা আজ কতো গুলো দিন পর দেখলাম।
সাজ্জাদঃ এক এক করে বাড়ি থেকে একদম সব আনন্দ চলে গেলো। আরিয়ানের মৃত্যু তারপর আহনাফের চলে যাওয়া। মেঝো আম্মু অসুস্থ হয়ে পড়া সব মিলিয়ে মানুষিক ভাবে ভেঙে পড়ে ছিলাম।
রূপা সাজ্জাদের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ সব ঠিক হয়ে যাবে। আপনি ভেঙে পড়বেন না আমি আপনার পাশে আছি। ‘
সাজ্জাদ খুশি হয়ে রূপাকে জড়িয়ে ধরলো। রূপাও সাজ্জাদকেজড়িয়ে ধরলো।

সাজ্জাদঃসময়ের সাথে ধীরে ধীরে সব একদিন ঠিক হয়ে যাবে শুধু তুমি পাশে থেকো রূপা।

সমাপ্ত…

ভুলত্রুটি মার্জনীয়।