কুঁড়েঘর পর্ব-৩৯+৪০

0
550

#কুঁড়েঘর
#লেখিকা–মার্জিয়া রহমান হিমা
[ দ্বিতীয় পরিচ্ছদ ]
। পর্ব ৩৯।

জোতি আসতেই রিধিশা অগ্নিচোখে তার দিকে তাকিয়ে রেগে বললো
“তুই বিয়ের কথা জানতি তাই না? তুই আমাকে মিথ্যা বলতে পারলি?” জোতি ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে বললো
” সরি। ভাইয়ার নিষেধ ছিলো তাই কিছু বলতে পারিনি।”
” ওও আচ্ছা এখন নিশাদ বড় হয়ে গিয়েছে তোর কাছে? আমি কিছুই না তাই না?”

” তুই তো অনেক কিছু কিন্তু ভাইয়া তো এখন দুলাভাই হবে তাহলে সম্পর্কটা কতো বড় বুঝিস? দুলাভাই এর কথা মানবো না তো কার কথা মানবো?” রিধিশা রেগে বললো
” আমার কথা মানবি। এখন চুপচাপ আমার ফোন’টা এনে দে আমি বাসায় কথা বলবো। আমি কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করতে পারবো না।” জোতি ঢোক গিলে বললো
” আমিও বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু ভাইয়া বলতে দেয়নি। একদম সাফ সাফ মানা যাতে কারো সাথে কন্টাক্ট করতে না পারি দুজন তাই আমার আর তোর দুজনের ফোন নিয়ে গিয়েছে।”

রিধিশা অসহায় ভাবে বসে থাকে। দরজার দুবার নক করে ঠাস করে ঢুকে পড়লো নিশাদ। রিধিশা তাকালো না রাগে। নিশাদ জোতিকে বললো
” তুমি রিধিশাকে শাড়ি পড়িয়ে দাও। ভাবিও আসছে হেল্প করবে তোমাকে। আর বেশি সমস্যা হলে পড়তে হবে না এমনি বিয়ে হবে।” জোতি মাথায় নেড়ে সায় জানায়। নিশাদ ঠাস ঠাস করে চলে গেলো। রিধিশা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে।

কিছুক্ষণ পর হেনা আসে। জোতি আর হেনা মিলে রিধিশাকে শাড়ি পড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু রিধিশা ব্যাথায় অধৈর্য হয়ে পড়ে শেষ পর্যন্ত। হেনা আর জোতি অনেক চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দেয়। নিশাদকে জানালো এভাবেই বিয়ে করতে হবে তাকে।

সূর্য, সাদি কাজি সাহেবকে নিয়ে হাজির হয়েছে অনেক আগে। সব লিখালিখি শেষ করে এখন বিয়ে পড়ানোর পালা।
নিশাদকে কবুল বলতে বললে নিশাদ তিনবার কবুল বলে আরেকবার কবুল বললো। রেহানদের হাসির রোল পড়লো। নিশাদ কিছুটা লজ্জা পায় কারণ জলদি বলতে গিয়ে খেয়াল করেনি কতোবার বলেছে।
কাজি সাহেবকে রিধিশার রুমে নিয়ে আসা হয়। রিধিশাকে কবুম বলতে বললে রিধিশা চুপ করে বসে আছে। কয়েকবার বলার পরও কবুল না বলায় নিশাদ উড়ে চলে এলো।

নিশাদ ভ্রু কুঁচকে বললো
” কি সমস্যা এখনও? বলছো না কেনো কিছু?”
সাজেদা বেগম থামিয়ে বললো
” আহ নিশাদ! পরিবারের কথা মনে পড়ছে হয়তো। তোকে কতো করে বললাম আগে পরিবারকে জানানোর দরকার। কাজটা তো তুই ঠিক করিসনি এখন মেয়েটাকে বকছিস?”
নিশাদ ফুস করে নিশ্বাস ছেড়ে বললো
” বাড়িতে কথা বলবে?” রিধিশা অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে মাথা ঝাকায়। নিশাদ গম্ভীর গলায় বললো
” কবুল বলে দাও তারপর যতো ইচ্ছে কথা বলবে।”

“আগে কথা বলবো আমি। বিয়ে করবো তো বলেছি আমি।”
” না আমাকে কি এতোটা পাষাণ মনে হয় তোমার? বাড়িতে জানানোর পর বড়দের আদেশ শুনলে হয়তো পড়ে আমি নিজেও বিয়ে মাঝপথে আটকে দেবো।
তাই আগে বিয়ে তারপর সব।” রিধিশা কাঁদতে কাঁদতে কবুল বললো তিনবার। সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠে।
নিশাদ রিধিশার হাতে ফোন দিয়ে চলে গেলো কাজি সাহব আর সবাইকে নিয়ে।

রিধিশা হৃদকে ফোন করলো। হৃদ কল রিসিভ করতেই রিধিশা হু হু করে কেঁদে দেয়। হৃদ হতবাক হয়ে যায়। বিস্ময়ের সাথে জিজ্ঞেস করলো
” রিধি! কি হয়েছে? কাঁদছিস কেনো?” রিধিশা কান্নার জন্য কথা বলতে পারলো না। জোতি একটা টিস্যু এগিয়ে দিতেই রিধিশা সরিয়ে দিলো। হৃদ বারবার জিজ্ঞেস করতে থাকে কি হয়েছে। ধীরেধীরে বেগ থামিয়ে বললো
” ভাইয়া, আমার বিয়ে হয়ে গেছে।”

হৃদ বোবার মতো চুপ করে থাকে। রিধিশার কান্না আবার কানে আসতেই হৃদ ধ্যান ভাঙ্গে। অবাক হয়ে বললো
” রিধি! বিয়ে হয়েছে মানে কি? তুই বাড়িতে গেলি কবে? আর কার সাথে বিয়ে হয়েছে? বাবা বলেছিলো তোর অনুমতি ছাড়া বিয়ে দেবে না। আমার অনুপস্থিতিতে এসব করেছে কি করে?” রিধিশা ভাঙ্গা ভাঙ্গা শব্দে বললো
” বাবা বিয়ে দেয়নি, আমি বাড়িতেও যাইনি। এখানেই একা বিয়ে হয়ে গিয়েছে।”

হৃদ হতভম্ব হয়ে বললো
” কি! তুই পাগল নাকি? কি বলছিস বুঝতে পারছি না আমি। ভালো করে বুঝিয়ে বল। কোথায় তুই? এড্রেস দে আমি এখনই আসছি।” নিশাস এসে রিধিশার কান থেকে ফোন নিয়ে নেয়। রিধিশা চমকে বললো
” আরে আমার ফোন দিন!” নিশাদ ইশারায় আশ্বস্ত করে ফোন কানে দিয়ে সালাম দিলো। হৃদ উত্তর দিয়ে বললো
” কে আপনি? রিধিশার কাছে ফোন দিন।”

নিশাদ শান্ত গলায় বললো
” আমি নিশাদ। আপনাদের একমাত্র নতুন জামাই ভাইয়া। রিধিশার এক্সিডেন্ট হয়েছে কয়েনক ঘণ্টা আগে তারপ দশমিনিট আগেই বিয়ের কাজ সেরেছি। রিধিশা অসুস্থ হয়ে পরেছে এতো ঝামেলার মাঝে। তাই আমি কথা বলছি।”
হৃদ আরো চমকে উঠে বললো
” এক্সিডেন্ট? এক্সিডেন্ট কিভাবে হলো? ঠিকাছে তো রিধি?” নিশাদ রিধিশার দিকে তাকিয়ে বললো
” হ্যা, ঠিকাছে। একটা হাত আর পা ভেঙ্গেছে শুধু। আমি এড্রেস পাঠিয়ে দেবো আপনাকে কালকে চলে আসবেন আমার শশুড় শাশুড়ি’কে নিয়ে।”

হৃদ রাগি গলায় বললো
” ভারী বেয়াদব আর নির্লজ্জ ছেলে তো তুমি? ঠাস ঠাস করে কথা বলে যাচ্ছো। এখনই এড্রেস দাও আমাকে আমি এখনই আসবো। আমার বোনের কি হয়েছে কে জানে! চেনা নেই জানা নেই নতুন জামাই বললেই হলো? তোমাদের কোনো বিয়ে মানি না আমি।”
” বিয়ে হয়ে গিয়েছে তাই মেনে নিতে হবে আর রিধিশাকে নিয়ে চিন্তা করবেন না। আমি আছি ওর পাশে। কালকে আপনারা চলে আসবেন আমি অপেক্ষায় থাকবো। কালকে আসলে ভালো করে কথা বলবো। আল্লাহ হাফেজ ভাইয়া।” নিশাদ ফোন কেটে দিলো।

হৃদ চোখ বড় বড় করে ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকে। একের পর এক দুইটা চমক। এক্সিডেন্ট, বিয়ে! কি করবে বুঝতে পারছে। এক্সিডেন্টের কথায় প্রেশার লো হয়ে যাচ্ছে আবার বিয়ের চিন্তায় হাই হয়ে যাচ্ছে। হৃদ বাড়িতে ফোন করলো।

.
নিশাদ রিধিশার পাশে বসতেই জোতি হেসে বললো
” তোমরা থাকো আমি যাচ্ছি।” জোতি চলে যায় রুম থেকে। যাওয়ার আগে দরজা ভিরিয়ে গেলো। নিশাদ রিধিশার দুই গালে হাত রেখে চোখের পানি যত্ন সহকারে মুছে দেয়। গালের নিচে কাটা জায়গায় নিশাদের হাত লাগতেই জ্বলে উঠে। রিধিশা কুঁকড়ে উঠতেই নিশাদ অস্থির হয়ে বললো
” সরি, সরি আমি খেয়াল করিনি।” রিধিশা মাথা নিচু করে হেলান দিয়ে শুয়ে থাকে।

” আন্টি বলছিলো আজকে এখানেই থাকতে তোমাকে। কিন্তু আমি নিয়ে যেতে চাইছি। এই অবস্থায় একা ছাড়বো না।” রিধিশা ভেংচি দিয়ে বললো
” সারাদিন একা রেখে এক্সিডেন্ট করিয়ে এখন নাকি একা ছাড়বে না, ঢং!” নিশাদ ঠোঁট চেপে বললো
” আরে আমি কি জানতাম নাকি এক্সিডেন্ট হবে? জানলে কখনোই একা ছাড়তাম না। আমি তো বিয়ের আয়োজন করতে হবে দেখেই যাইনি আজকে। ছুটি নিয়েছি।”

রিধিশা কোণা চোখে তাকিয়ে বললো
” আমি এখানেই থাকবো ঠিক না হওয়া পর্যন্ত। আপনি বাসায় চলে যান। আপনি আমাকে কাঁদিয়ে কাঁদিয়ে, না জানিয়ে বিয়ে করেছেন তাই আমাকে আপনার সাথে নিয়ে যাওয়ার কোনো অধিকার নেই এখন।” নিশাদ চোখ ছোট ছোট করে তাকায়।
” বললেই হলো নাকি তুমি আমার সাথে যাবে। তোমাকে আমার সাথে থেকে ঝগড়া করার জন্য বিয়ে করেছি এখানে রেখে যাওয়ার জন্য নাকি?”
রিধিশা মুখ ঘুরিয়ে বললো
” যাবো না আমি।” নিশাদ রাগি গলায় বললো
” যাবে না মানে? যেতেই হবে। তুমিও যাবে কালকে আমার শশুড় বাড়ির সবাইও যাবে।”

রিধিশা মুখ ফিরিয়ে বললো
” জোতি থাকে আমার সাথে আজকে আর কিছু শুনবো না আমি। এক ঘণ্টাও হয়নি এখনই অধিকার দেখাচ্ছে, বজ্জাত ছেলে। আমার খিধে পেয়েছে সারাদিন ধরে খাইনি কেউ খোঁজ নেয় না। আমি ঘুমাবো খেয়ে।”
নিশাদ হেসে উঠে চলে গেলো।

.
হেনা আর জোতি রিধিশা আর নিশাদের খাবার দিয়ে গেলো। রিধিশা হেনার দিকে তাকিয়ে বললো
” এতো খাবার কেনো?” হেনা মুচকি হেসে রিধিশার গাল টেনে বললো
” ওমা! তুমি বিয়ের পর জামাই বউ একসাথে খাবে। এক চিমটি খাবার দেবো নাকি?” রিধিশা লজ্জা পেয়ে যায়। হেনা আর জোতি হাসতে হাসতে চলে যায়।

নিশাদ আসলো কিছুক্ষণের মধ্যে। রিধিশা হাত দিয়ে খেতে নিচ্ছিলো নিশাদ ধমক দিয়ে উঠে। রিধিশা চোখ বড়বড় করে বললো
” অসভ্য ছেলে। বিয়ে হয়েছে বলে কি এখন ধমকও দেবেন?” নিশাদ চোখ গরম করে তাকাতেই রিধিশা চুপ করে যায়। এগিয়ে এসে পাঞ্জাবীর জ্যাকেট খুলে রাখতে রাখতে বললো
” হাত, পা ভেঙ্গে মাথাও গুলিয়ে ফেলেছো মনে হয়।
হাত না ধুয়েই খাওয়া শুরু করেছো! রাস্তার ময়লা গুলো’কে কি পেটে জায়গা করে দেবে?”
রিধিশা রেগে অতিষ্ঠ হয়ে বললো
” ইশশ! কি করবো আমি? বললাম তো খিধে পেয়েছে। সেই সকালে খেয়েছিলাম।”

নিশাদ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো
” আমি খাইয়ে দিচ্ছি। দুপুরে খাওনি কেনো? অফিসে ক্যান্টিনে গিয়ে খেয়ে নিতে পারতে না?” রিধিশা ফ্যালফ্যাল করে তাকালো। নিশাদ রিধিশাকে খাইয়ে দিতে থাকে। রিধিশা নিশাদকে পরখ করে বললো
” লাল পাঞ্জাবী পড়েছেন কেনো?” নিশাদ ভ্রু নাচিয়ে বললো
” একটু আগে বিয়ে করেছি ভুলে গেছো? বিয়ের সময় বিয়ের পোশাক পড়তে হয়। কিন্তু তুমি তো পড়তে পারলে না। আমি একাই পড়লাম।” রিধিশা’কে খাইয়ে নিজেও খেয়ে নিলো।

রিধিশাকে ঔষধ দিয়ে ঘুমিয়ে যেতে বললো। রিধিশা গা এলিয়ে দিতে দিতেই ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যায়।
নিশাদ রিধিশার পাশে বসে থাকে অনেক সময়। কিছুক্ষণ পর রেহানের ডাক পড়তেই নিশাদ রিধিশার মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলো।
সূর্য বললো
” কিরে ফ্ল্যাটে যাবি?” নিশাদ মাথা নেড়ে বললো
” হ্যা, চল।” রেহান জোতিকে বললো
” আমাদের প্রাণের ভাইয়ের একমাত্র বউ রিধিশা। আমাদের নতুন ভাবির খেয়াল রেখো কিন্তু।” রেহানের কথা শুনে হেসে দেয় সবাই। জোতি চোখ ছোট ছোট করে তাকায়। রেহান দাঁত কেলিয়ে চলে যায়।

চলবে……

#কুঁড়েঘর
#লেখিকা–মার্জিয়া রহমান হিমা
[ দ্বিতীয় পরিচ্ছদ ]
। পর্ব ৪০।

সকাল হতেই নিশাদের বাড়িতে হৃদ আর তার মা, বাবার হামলা পড়লো। হৃদকে নিশাদের ফ্ল্যাটের ঠিকানা দিয়েছে নিশাদ। সকাল ৭টা বাজেই ওরা এসে পড়বে নিশাদের ধারণা ছিলো না তাই বেচারা এখনও ঘুমাচ্ছে। রিধিশার চিন্তায় রাতে ঘুমাতে দেড়ি হয়েছিলো।
সবার কানের পোকা বের করার মতো অবস্থা। হৃদের অনবরত কলিং বেল বাজানো বন্ধ করতে সাদি ঘুম থেকে দৌঁড়ে চলে আসে। দরজা খুলেই সাদি চোখ বড় বড় চেঁচিয়ে বললো
” আরে পাগল নাকি? সাত সকালে এভাবে কেউ কলিং বেল বাজায় নাকি? বিল্ডিং এর সব মানুষ এসে পড়বে আপনার জন্য।”

হৃদ রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কথা না বাড়িয়ে রিধিশা ডাকতে ডাকতে ভেতরে ঢুকে গেলো। হৃদের পেছনে শফিক উদ্দিন, সাদিয়া বেগম, লিমা বেগ্মও ঢুকলো। শফিক উদ্দিন হাসি মুখে ঢুকে দুই হাত ভরতি মিষ্টি গুলো সাদির হাতে দিয়ে বললো
” আমার মেয়ে আর মেয়ে জামাই কোথায়?” সাদি বোকার মতো তাকিয়ে বললো
” ভেতরে আংকেল।” রিধিশার বাবা মাথা নেড়ে হাসলো।

হৃদের হাক ছাড়া গলার ডাক শুনে বাকি তিনজনের ঘুম ভেঙ্গে গেলো। নিশাদ চোখ ডলতে ডলতে উঠে আসে। নিশাদ রেগে বের হয়ে আসে রুম থেকে কিন্তু
এসেই শান্ত করে নিলো নিজেকে। মুখে হাসি টেনে বললো
” আরে আপনারা এসে পরেছেন? বসুন বসুন!”
হৃদ অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো
” এখানে বসতে আসিনি আমরা। তুমিই সে না কালকে রাতে বেয়াদবের মতো কথা বলে ফোন কেটে দিয়েছো! আমার বোন কোথায়? ডাকো ওকে!”

শফিক উদ্দিন গম্ভীর গলায় হৃদের উদ্দেশ্যে বললো
” হৃদ! কার সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় ভুলে গিয়েছো? ভদ্র ভাবে কথা বলো। যতোই হোক ছেলেটা আমাদের জামাই এখন।” নিশাদ অবাক হয়ে রিধিশার বাবার দিকে তাকায়। নিশাদ আর রেহানরা একে অপরের দিকে তাকায়। নিশাদ ভেবেছিলো রিধিশার বাবা পুলিশ নিয়ে না এসে পড়ে! এখন তো পুরোই উল্টো।

বাবার কথা শুনে হৃদ চেঁচামেচি বন্ধ করে গম্ভীর গলায় বললো
” আমার বোন কোথায় তাড়াতাড়ি বলো!” নিশাদ গলা ঝেড়ে বললো
” আপনারা একটু বসুন তারপর সব কথা হবে। রিধিশার কথাও বলছি।” শফিক উদ্দিন আরামে সোফায় বসে পড়লো। সাদিয়া বেগম আর লিমা বেগম স্বামীর কাজ দেখে একে অপরের দিকে তাকাচ্ছে। চারজন সোফায় শান্ত হয়ে বসে।

নিশাদ মাথা চুলকায় কি বলবে সে খুঁজে পাচ্ছে না। সাদি আর রেহান কিচেনে চলে যায়। নিশাদ শান্ত গলায় বললো
” গতকাল অফিস থেকে আসার সময় রিধিশার এক্সিডেন্ট হয়েছে। রিধিশা আপনাদের সাথে দেখা না করে এখানে আসতে চাইছিলো না তাই রিধিশা ওর বাসায়ই রয়েছে।” হৃদ চোখ বড় বড় করে বললো
” কি! এতো দায়িত্বহীন ছেলে তুমি? আহত বউ’কে একা রেখে এসে এখানে নিজে ঘুমাচ্ছো! তাহলে বিয়ে করেছো কেনো আমার বোন কে?”

নিশাদ থমথমে চাহনিতে তাকায়। গম্ভীর গলায় বললো
” এতোটাও বুদ্ধিহীন ছেলে নই। নিজের দায়িত্ব কিভাবে পালন করতে হয় আমি ভালো করেই জানি। রিধিশার কথার প্রাধান্য দিয়েই আমি ওকে বাসায় রেখে এসেছি। আর রিধিশা একা নয় ওর সাথে জোতি রয়েছে। রিধিশাকে একা রেখে আসতে আমার মন সায় দেয়নি কিন্তু এই অবস্থায় আমার সাথে থাকলে হয়তো অস্বস্তি হতো তাই আমি চলে এসেছি।”
হৃদ থমথমে চেহারায় বসে থাকে।

লিমা বেগম বললো
” তোমাদের বিয়ে কি করে হয়েছে? আমাদের জানা মনে আমাদের মেয়ের কোনো ছেলের সাথে সম্পর্ক ছিলো না। তার উপর পরিবারের অনুমতি ছাড়া তোমরা বিয়ে করে ফেলেছো। তারপর আবার কল করে জানিয়েছো। এভাবে সব কিছু করাটা কে কি ছেলে মেয়ের অধপতন হিসেবে ধরে নেবো?” নিশাদ মাথা কিছু করে বললো
” দুঃখিত আন্টি। আসলে এই বিষয়ে কারো কোনো হাত ছিলো না মানে বেশ করে রিধিশার। রিধিশা জানতো না আমাদের বিয়ে ছিলো। হুট করেই সব করেছি আমি। বাসায় আসার পর রিধিশাকে বিয়ের কথা বলেছি। রিধিশা আপনাদের ছাড়া বিয়েতে দিতে চাইনি কিন্তু আমি বিয়ের আগে আপনাদেত সাথে কথা বলার সুযোগ দিইনি। সব দোষ আমারই বলতে পারেন।”

লিমা, সাদিয়া, শফিক সাহেব তিনজন একে অপরের দিলে তাকিয়ে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে। হৃদ সরু দৃষ্টিতে তাকায় নিশাদের দিকে। নিশাদ সব স্বীকার করে নেওয়ায় রাগটা কিছুটা কমেছে। হৃদ গম্ভীর গলায় বললো
” বিয়ের ব্যাপার তো পরেই দেখছি আমি। আগে আমাদের রিধিশার কাছে নিয়ে চলো! ওকে দেখবো আমরা।” নিশাদ মাথা নেড়ে বললো
” হ্যা, নিয়ে যাচ্ছি। আগে একটু চা নাস্তা করে নিন!”
” চা নাস্তা খেতে এসেছি নাকি? পুলিশ নিয়ে আসলে চা নাস্তা দিয়ে আপ্যায়ন করতে তোমরা? তাড়াতাড়ি চলো!” হৃদ কথা শেষ করে হনহনিয়ে ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে গেলো।

লিমা আর সাদিয়া বেগমও উঠে বের হলো। শফিক উদ্দিন নিশাদের কাছে এসে হাসি মুখে বললো
” চিন্তা করো না তুমি। হৃদ মাথা গরম ছেলে। তোমাকে আমার পছন্দ হয়েছে। শেষ পর্যন্ত মেয়ে বিয়ে তো করেছে! এতেই খুশি। বিয়ে নিয়ে কতো কাণ্ড হয়েছিলো। এখন শান্তি পাচ্ছি মেয়ের সুবুদ্ধি হয়েছে বিয়েটা অন্তত করেছে। তা বাবা তোমার নাম কি?”
নিশাদ আলতো হেসে বললো
” নিশাদ শাহ।”
” বাহ! আচ্ছা জলদি নিয়ে যাও আমাদের নাহলে আবার ঝড় উঠাবে।” শফিক উদ্দিন চলে যেতেই নিশাদ রুম থেকে জ্যাকেট নিয়ে আসে।

রেহান হেসে বললো
” ভাই তোর কপাল তো খুলে গেলো! শশুড় তো একেবারে unexpected level এর support করছে তোকে।” সূর্য সচেতন গলায় বললো
” শুধু শশুড় হলে মানতাম কিন্তু ভাই ও আছে। নিশাদের মতোই রাগি মনে হচ্ছে। বিয়েটা মানলেই চলে।” নিশাদ জ্যাকেট পড়তে পড়তে বললো
” মানবে না মানে? যেভাবেই হোক মানতেই হবে। বউ ছাড়ার জন্য তো আর বিয়ে করেনি? সংসার করেই ছারবো।”
” বাহ আমাদের নিশাদ ভাইয়ের মতো মানুষকে রিধিশাকে কিভাবে চেঞ্জ করে ফেললো তাই না? প্রেমের কথা শুনতে পারতো না আর এখন বিয়ে করে সংসারও বাধিয়ে ফেলেছে। তাও আবার কার সাথে! যার সাথে প্রথম দিন থেকে আগুন পানির মতো কেউ কাউকে সহ্য করতে পারতো না তাকে।” রেহান আর সূর্য হেসে উঠে সাদির কথায়।

নিশাদ এসব কানে না দিয়ে দৌঁড়ে নিচে গেলো। হৃদদের নিয়ে রিধিশার বাসায় গেলো। রুমে ঢুকতে ঢুকতে চেঁচামেচি শুনতে পেলো রিধিশার রুম থেকে। নিশাদ সবাইকে রেখেই দ্রুত চলে গেলো। ঢুকেই দেখে হেনা আর সাজেদা বেগম রিধিশা কাছে বসে কিছু বলছে। রিধিশা হাত ধরে চোখ মুখ শক্ত করে বসে আছে। নিশাদ রিধিশার কাছে গিয়ে চিন্তিত গলায় বললো
” কি হয়েছে?” জোতি অস্থির গলায় বললো
” ঘুমের মাঝে হাতে কিভাবে যেনো ব্যাথা পেয়েছে।”

নিশাদ রিধিশার দিকে তাকিয়ে রেগে বললো
” কিভাবে মানে কি? কিভাবে ঘুমাও তুমি? হাতের নিচে বালিয়ে দিয়ে গিয়েছিলাম না?” রিধিশা ফুস করে তাকালো কিন্তু সাজেদা বেগম থাকায় কিছু বলতে পারলো না। হেনা বললো
” আরে ঘুমের মাঝে কি এসব বলা যায় নাকি?”
নিশাদ কিছু বলার আগেই হৃদরা সবাই রুমে ঢুকলো।
রিধিশা ওদের দেখে খুশি হয়ে যায়। জোতি হৃদ আর সাদিয়া বেগমকে দেখতে থাকে।
সাজেদা বেগম আর হেনা ফ্ল্যাটে চলে গেলো।

লিমা আর সাদিয়া বেগম এসে রিধিশার পাশে বসে।
রিধিশা লিমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়। হৃদ রাগি গলায় বললো
” তোর জেদের কারণেই এসব হয় তোর সাথে। চাকরি করতে চাস! একা থাকতে চাস! চাকরি করতে গিয়ে এখন ভাঙ্গা হাত পা নিয়ে বসে থাক।”
রিধিশা মুখ ফুলিয়ে বললো
” আরে মানুষের কি এক্সিডেন্ট হয় না নাকি? কতো মানুষেরই তো এক্সিডেন্ট হয়। আমার তো ছোট এক্সিডেন্টই হয়েছে। বড় এক্সিডেন্ট হলে তো মরেই যেতাম। তুমি এসেই আমাকে বকা শুরুতেই করেছো!”

নিশাদ হাত মুঠো করে চোয়াল শক্ত করে রিধিশার দিকে তাকিয়ে থাকে। সবাই রিধিশার সাথে কথা বলতে থাকে। নিশাদের ফোন আসতেই নিশাদ বাবার
নাম দেখে সূর্যকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো। জোতি গুটি গুটি পায়ে রেহানের কাছে গিয়ে দাঁড়ায় চুপচাপ। রেহান ভ্রু কুঁচকে বললো
” তোমাকে না আমার ভাবির খেয়াল রাখতে বলেছিলাম? একটা কাজও করতে পারো না তুমি! আমার এক্সিডেন্ট হলে তো আমার হাতই নাড়াতে পারবে না।”

জোতি চোখ রাঙ্গিয়ে তাকায়। রেহানও উল্টো চোখ রাঙ্গায়। জোতি হৃদকে দেখিয়ে ফিসফিস করে বললো
” ভাইয়া’কে দেখেছো? আমি যদি আগে ভাইয়াকে দেখতাম না! ভাইয়ার সাথেই প্রেম করতাম। কি হ্যান্ডসাম!”
রেহান কটমট করে তাকিয়ে বললো
” লুচ্চি মেয়ে! বয়ফ্রেন্ড এর সামনে আরেক ছেলের সাথে প্রেম করার কথা বলছো! সাহস তো কম না তোমার! উঠিয়ে নিয়ে নিশাদের মতো বিয়ে করে ফেলবো!” জোতি ভেংচি দিয়ে বললো
” ওতো সাহস তোমার আছে নাকি? নিশাদ ভাইয়ের মতো ছেলে একটাই হয়। দেখেছো ভাইয়াকে? প্রেমও করেনি ঠাস করে বিয়ে করে নিয়েছে। তোমার তো বাবাকে বিয়ের কথা বলতেই হাত, পা কাঁপবে।”
রেহান কোণা চোখে তাকায়।

হৃদ গম্ভীর গলায় বললো
” তুই আমাদের সাথে বাড়িতে যাচ্ছিস এটাই ফাইনাল। একে তো না জানিয়ে এমন আকস্মিক কাজ করেছিস তার উপর এই অবস্থায় তো আরো আগে রাখছি না আমি।” শফিক উদ্দিন শাসন গলায় বললো
” আহ, হৃদ! কি শুরু করেছো? তখন থেকে নিয়ে যাবে নিয়ে যাবে! আগে সব ঠিক ঠাক হোক তারপর তো এসব কথা। আর বিয়ে হয়ে গিয়েছে কেউ না মানলেও এটা কাগজে কলমে হয়েছে এটা অস্বীকার করতে পারবে না।” হৃদ চোয়াল শক্ত করে রাখে।

.
নিশাদের বাবা এসেছে। নিশাদ তার বাবাকে আগেই সব জানিয়ে রেখেছিলো। মৃণাল সাহেব তাই সময় থাকতেই রওনা দিয়েছেন। নিশাদ মৃণাল সাহেবকে ফ্ল্যাটে নিয়ে আসতেই তিনি বললেন
” কোথায় তোর শশুড় শাশুড়ি? ফ্ল্যাট তো পুরোই খালি!” নিশাদ হেসে বললো
” তোমার বউ মার কাছে এখন। তুমি আগে ফ্রেশ হয়ে নাও তারপর নিয়ে যাচ্ছি।” মৃণাল সাহেব নিশ্বাস ফেলে বললো
” নিয়ে তো যাবি বুঝলাম। হুট করে কি কি যে করিস তুই আজও বুঝলাম না! কখন কোন কাজের ভূত মাথায় চাপে তোর। একবার চাকরি একবার বিয়ে আরো কতো কি! আর এখন সব ঝড় আমার উপর দিয়ে যাবে।”

সূর্য শব্দ করে হেসে বললো
” আংকেল তোমার ছেলে তোমাকে অল্প বয়সে বুড়ো বানিয়ে সংসার করে দেখিয়ে দিচ্ছে। তারপর দাদা বানাবে।” মৃণাল সাহেব হেসে বললো
” তা ঠিক। তোমরাও বিয়ে করে ফেলো তাহলে সবাই একসাথে টুনাটুনির সংসার করবে।” নিশাদ আর সূর্য ফিক ফিক করে হেসে দেয়। নিশাদ বাবাকে বলে আবার রিধিশার কাছে চলে আসে।

.
সাজেদা আন্টি সবাইকে তার ঘরে নিয়ে গিয়েছে। রিধিশা’কে নাস্তা খাইয়ে দিচ্ছিলো হৃদ। নিশাদ ঢুকে পড়ে না দেখেই। হৃদ আর রিধিশা নিশাদের দিকে তাকায়। হৃদ নিশাদ বললো
” এই ছেলে এদিক এসে বসো!” নিশাদ হালকা কেশে রুমে চোখ বুলায়। চেয়ার না দেখে এসে বসে খাটের এক কোণায়। রিধিশা শংকিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। হৃদ গম্ভীর গলায় বললো
” কি করো তুমি? পরিবার কোথায় থাকে?” নিশাদ রিধিশার দিকে এক পলক তাকিয়ে বললো
” রিধিশার সাথে একই অফিসে নতুন চাকরি করছি।
মাস্টার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়াশোনা করছি। পরিবার নরসিংদী থাকে আর আমি আমার ফ্ল্যাটে থাকি।”

হৃদ বলে উঠলো
” আমার বোনকে বিয়ে করেছো কেনো?” হৃদের উদ্ভট প্রশ্ন শুনে রিধিশা আর নিশাদ দুজনই বিষম খায়। হৃদ এর গম্ভীর চাহনি দেখে এবার নিশাদ বিরক্ত হলো। এমন ভাবে তাকানোর কি আছে? নিশাদ শান্ত ভাবে গললো
” বিয়ের আবার কারণ হয় নাকি?”
” তোর ডিভোর্সের ও তো কারণ হয় না। আমার বোনকে দুদিন পর ডিভোর্স দেবে না বা সুখি রাখবে তার কি যুক্তি আছে?” নিশাদ রেগে যায় কথা শুনে। কিন্তু রাগ দেখালো না। ঠাণ্ডা গলায় বললো
” যুক্তি নেই। ডিভোর্স দেওয়ার জন্য তো আর বিয়ে করিনি! সেচ্ছায় আর নিজে বিয়ে করেছি রিধিশাকে। রিধিশার প্রাপ্য জিনিস গুলোর সাথে সাথে সুখ সহ সব কিছু পাবে। কোনো অভিযোগ রাখার সুযোগ দেবো না।”

হৃদ আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না। রিধিশাকে খাইয়ে দিয়ে চলে গেলো। নিশাদ হুরমুরিয়ে এসে রিধিশার সামনে বসে বললো
” এই তোমার ভাই’টা এমন কেনো? আসার পর থেকে কেমন করে কথা বলছে! কোন পাকা ধানে মই দিয়েছি আমি? আমার রাগের সামনে তোমার ভাইয়ের রাগ তো কিছুই না। আমি একবারও রাগ দেখাইনি অথচ তোমার ভাই, উফফ!”

রিধিশা রেগে বললো
” একদম আমার ভাইয়াকে কিছু বলবেন না। ভাইয়ের বোন এভাবে বিয়ে করেছেন তাহলে এমন করবে না তো কি করবে? আপনার বোন হলে ছেড়ে দিতেন নাকি? আপনি তো হার গোর ভেঙ্গে দিয়ে আসতেন। আমি চিনি না নাকি? আমার ভাই তো কিছুই করেনি সেই তুলনায়।” নিশাদ মুখ বাঁকিয়ে বললো
” হুহ! তুমি আমাকে রেখে নাস্তা করে ফেলেছো কেনো? অবলা স্বামীকে রেখে একাই খেয়ে নিলো। স্বামীর সাথে খেতে হয় জানো না?”
” আমাকে ভাইয়া জোর করে খাইয়ে দিয়েছে। আমি কি বলবো ভাইয়াকে? নিশাদ আসলে খাবো!”
নিশাদ সায় দিয়ে বললো
” হ্যা, তাই তো বলবে! তুমি বলো নি কেনো? একসাথে খাওয়া আমাদের অধিকার।”

রিধিশা চোখ কপালে তুলে ফেলে। নিশাদ গম্ভীর গলায় বললো
” হয়েছে আর কিছু বলতে হবে না। তুমি তো চাও না আমার সাথে থাকতে আমি তো জোর করে বিয়ে করেছি বলে। যাই হোক ধরো ঔষধ খাও।” রিধিশা পানি হাতে নিয়ে বললো
” আমি এমন কিছু বলিনি। আপনি বেশি বুঝেন কেনো এতো? ঠিকাছে কালকে থেকে আপনার জন্য বসে থাকবো।” নিশাদ রিধিশা ঔষধ খাইয়ে দিয়ে সব গুছিয়ে রেখে বসলো পাশে। শান্ত চাহনি দিয়ে বললো
” তোমাকে নিয়ে যেতে চাইলে কি বলবে? আমি কিন্তু যেতে দেবো না।”

রিধিশা নিশাদ দিকে তাকিয়ে বললো
” ভাইয়া বলেছে না নিয়ে যাবে না।” নিশাদ রেগে বললো
” বললেই হলো নাকি? আমি তোমাকে তো যেতে দিচ্ছি না। তুমি যদি আগ বাড়িয়ে যেতে চেয়েছো না!”
রিধিশা করুণ স্বরে বললো
” আরে! এখন যাবো না তো কখন যাবো? আমি অসুস্থ এখন মায়ের কাছে থাকবো না!”
” না থাকবে না। আমি আছি কি করতে? তুমি কোথাও যাবে না শেষ কথা আমার।” নিশাদ রেগে হনহনিয়ে বেরিয়ে গেলো। রিধিশা চুপ করে বসে থাকে। মনে হচ্ছে পাইপের মাঝখানে আটকে আছে।

.
বিচারের আসর বসেছে সাজেদা আন্টির ড্রইংরুমে। পুরোটাই নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে কারণ হলো নিশাদের বাবাকে দেখে। শফিক উদ্দিন তব্দা মেরে বসেছে তাকে দেখে। মৃণাল সাহেব, শফিক উদ্দিনের সেই ঘনিষ্ঠ বন্ধুর চাচাতো ভাই। দুজন দুজনকে দেখে চমকেছে যেমন তেমনই শফিক উদ্দিন আরো চমকেছে তার বন্ধু কয়েক মাস আগে মারা গিয়েছে শুনে। নিশাদ আর রিধিশা বাদে সবার উপস্থিতি রয়েছে।

চলবে…….