কুঞ্জলতার মায়ায় পর্ব-০২

0
205

#কুঞ্জলতার_মায়ায়
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ০২

শুভ্রতা হেসে বলল
-“আচ্ছা আম্মু তুমি কি আজ আমায় করুণা করলে। আমার বিয়েটা শেষ মুহূর্তে ভেঙে যাওয়ায় স‍্যারকে আমার সঙ্গে বিয়ে দেওয়াটা তোমার ভুল সিদ্ধান্ত হয়ে গেল না তো আম্মু?”

কবিতা বেগম শুভ্রতার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতেই বলল
-“ধুর মেয়ে এমন কেন হবে! আর প্রথমে আমি আমার ছেলের সঙ্গে তোর বিয়ে দিতে চেয়েছিলাম।”

শুভ্রতা উঠে বসলো কবিতা বেগমের হাত ধরে বলল
-“কিন্তু আম্মু স‍্যার তো ইশিতা আপুকে পছন্দ করে অনেক আগে থেকে। সেই জায়গায় আমাকে মেনে নিবে কিভাবে বলো।”

কবিতা বেগম শুভ্রতার দুইহাত নিজের দুই হাতের মাঝে আবদ্ধ করে বলল
-“দেখ মা জন্ম মৃত্যু বিয়ে সব সৃষ্টিকর্তা ঠিক করে রাখেন। আজ যখন তোর মায়ের ঠিক করা ছেলেটা বিয়ের কিছু মুহূর্ত আগে পালিয়ে যায়। তখন পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে যায়। আমি প্রথমেই তোর মাকে বলেছিলাম এতো তাড়াতাড়ি মেয়েকে বিয়ে না দিতে কেবল এসএসসি দিছিস রেজাল্ট। সুপাত্র দেখে হুট করেই বিয়ে ঠিক হয়ে গেল। আর আমার আগের থেকেই ইশিতা মেয়েটাকে পছন্দ না। মেয়েটাকে আমি অনেক ছেলের সঙ্গে মিশতে দেখেছি। কিন্তু আমার ছেলে তো আমার ছেলেই। কিছুতেই আমি ওকে ওই মেয়েটার সাথে মেশা থেকে বিরত রাখতে পারিনা।”

শুভ্রতা মিনমিন করে বলল
-“কিন্তু বরাবরই আমি শিক্ষককে অন‍্য জায়গায় রেখে এসেছি। শিক্ষক শিক্ষকের জায়গায় তাকে এমন একটা জায়গায় আমার পক্ষে মেনে নেওয়ার ব‍্যাপারটা আসলে।”

কবিতা বেগম হেসে বললেন
-“পাগলি একটা। আগে আমি তোর মায়ের ছোট বলার বান্ধবী। আর তোর ম‍্যাথে কিছু সমস্যা ছিল বলে কাব‍্য একটু দেখিয়ে দিছে। এতে এতো ওকে স‍্যার স‍্যার করতে হবেনা।”

শুভ্রতা কপালে ভাঁজ ফেলে বলল
-“কিন্তু!”

কবিতা বেগম শুভ্রতাকে শুয়ে দিয়ে বলল
-“এখন কোনো কিন্তু না। অনেক রাত হয়েছে ঘুমা তো পরশু আবার তোর রেজাল্ট দিবে। আমি জানি তুই খুব ভালো করবি। আমি নিজে তোকে অনেক দূর পযর্ন্ত পড়াবো ইনশাআল্লাহ।”

—————————

ফজরের আযান কানে আসতেই শুভ্রতার ঘুম ভেঙে গেল। সে চোখ পিটপিট করে তাকাতেই সোফায় শুয়ে থাকা কাব‍্যের দিকে চোখ পরলো। ধপ করে উঠে বসলো শুভ্রতা। একবার কাব‍্যের দিকে তাকিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল ওযু করতে।

ওযু করে নামাজ আদায় করে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। পরপর কয়েক‍টা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এই সময়টায় সে এক কাপ কফি খায়। কিন্তু কি আর করার। জীবনটা যে হুট করেই এমন অগোছালো হয়ে যাবে ভাবতেও পারেনি ও। সূর্য উদয় দেখে শুভ্রতা বিরবির করে বলল
-“নতুন জীবন সূচনার পথটা কেমন হবে কিন্তু আল্লাহ তুমি আমাকে সহ‍্য শক্তি দেও ভালো মন্দ মেনে নেওয়ার।”

হাতের মেহেদীর দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের এক হাসি দিলো শুভ্রতা। ফোনটা বেজে উঠতেই শুভ্রতা কপাল কুচকে কলটা রিসিভ করলো।

অপরপাশ থেকে শিশির বলে উঠলো
-“সরি এতো সকালে কল করার জন‍্য। আর আমাকে দয়া করে মাফ করে দিও।”

শুভ্রতা ঠোঁটে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটিয়ে বলল
-“আপনি তো পারতেন বিয়েটা প্রথমেই ভেঙে দিতে। এমন করে আমার গায়ে কলঙ্ক লাগানোর কি খুব দরকার ছিল।”

শিশির অপরাধী কন্ঠে বলল
-“আমি আসলে আমার বাবার কাছে কিছু বলতে পারিনি। ওনি আমার ভালোবাসাকে মেনে নিতেন না। আর আমি ওকে ছাড়া তোমার সঙ্গে কিভাবে জীবন অতিবাহিত করতাম বলো তো।”

শুভ্রতা হাসলো। বলল
-“আপনার জন‍্য তো আজ আমি কলঙ্কিত। যাইহোক আল্লাহ হয় তো এটার মধ্যেই কিছু ভালো রেখেছেন। বাদ দে ভালো থাকবেন। যার জন‍্য গিয়েছে তাকে ভালো রাখবেন। আল্লাহ হাফেজ।”

বলেই খট করে কল কেটে দিলো শুভ্রতা। আর কিছু শুনতে মন চাইলো না তার। থাক না এতো কথা বাড়িয়ে কি লাভ। ফ্রেশ হয়ে নিলো। কাব‍্য এখনো ঘুমাচ্ছে সোফায়। শুভ্রতা সেইদিকে একবার তাকিয়ে চলে গেল রান্নাঘরে।

কবিতা বেগম সকালের নাস্তা বানাচ্ছিল। শুভ্রতাকে দেখে মুচকি হেসে বলল
-“এতো তাড়াতাড়ি উঠতে গেলে কেন মা! কাল রাতে তো ওকে রাতে ঘুমিয়েছিলে।”

শুভ্রতা কবিতা বেগমের কাছে এসে দাড়িয়ে মুচকি হেসে বলল
-“সমস‍্যা নেই আম্মু। আমি ফজরের সময় উঠি তো আমার অভ‍্যাস আছে।”

পাশ থেকে কাব‍্যের ফুফু যিনি কালকে রাতেই এসেছেন ওনি বলে উঠলেন
-“এখনকার মেয়ে বাবা উঠেছে ঠিকই কিন্তু এখন এসেছে কাজ করতে। কবিতা আসলেই তুমি বোকা হুদাই এই অলক্ষী মেয়েটাকে কেন যে বউ করে নিয়ে আসলে বুঝিনা বাপু। এমনিতে কি আর বিয়ে ভেঙে যায়। হয় তো মাইয়ার মধ্যে কোনো খুত আছে। আর আমাগো পোলা কি সুন্দর দুধে আলতা গায়ের রঙ। মাইয়ার গায়ের রঙও ভাল না। কি যে করোনা তুমি।”

কথাগুলো শুনে শুভ্রতার চোখ বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পরলো। এই কথাগুলোর ভয়ই করছিল সে। কবিতা বেগম কপাল কুচকে রাগান্বিত কন্ঠে কাব‍্যের ফুফুকে বললেন
-“আপা আমি দেখেশুনেই আমার ছেলের বিয়ে দিয়েছি। আর গায়ের রঙ নিয়ে যে কথা বলছো আমিও কিন্তু ফর্সা না। যুগ বদলে গেছে এখনো তুমি সেই গায়ের রঙ নিয়ে পরে আছো। ছি তোমার মতো মানুষের জন‍্য সমাজের এই অবস্থা।”

কাব‍্যের ফুফু দমে গেলেন না কিছু বলতে নিবেন তার আগেই কাব‍্যের বাবা মি.কবির চৌধুরী চশমা ঠিক করতে করতে বললেন
-“আপা, আমাকে কিছু বলতে বাধ‍্য করিস না।”

শুভ্রতা মাথা নিচু করে ছিলো। কবির চৌধুরী শুভ্রতার মাথায় হাত রেখে বললেন
-“মা কুকুরের কাজ ঘেউ ঘেউ করা। সেইদিকে খেয়াল করলে চলবে। এগুলো খেয়াল করলে শুধু শুধু তোমার সময় নষ্ট হবে। যাইহোক বাদ দেও তো এসব। আমার জন‍্য এক কাপ চা নিয়ে আসো তো। আমরা একসঙ্গে আজ অনেক গল্প করবো।”

কবির চৌধুরীর কথা শুনে ওনার বোন রহিমা গটগট পায়ে সেই জায়গা ছেড়ে চলে গেলেন। কবিতা বেগম হাসলেন। শুভ্রতা মুখটা উচু করে চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বললেন
-“জানিস তো মায়াবতীর চোখের জল একদম মানায় না। আমরা জানি তুই কেমন। কে কি বললো তাতে আমাদের কিছু আসে যায় না। যা চা বানিয়ে তোর বাবাকে দিয়ে আয়। ও ভালো কথা কাব‍্য ঘুম থেকে উঠেছে নাকি দেখিস তো। না উঠলে উঠিয়ে নিয়ে আসিস নাস্তা করে কথা আছে।”

শুভ্রতা হ‍্যাঁবোধক উত্তর দিয়ে খুব যত্ন করে চা বানিয়ে কবির চৌধুরীর কাছে গিয়ে দিলো। কবির চৌধুরী খুব খুশি হলেন। তৃপ্তি নিয়ে চা খেতে লাগলেন।

শুভ্রতা পর্দাটা একটা সরিয়ে সোফায় তাকিয়ে কাব‍্যকে না দেখে কপাল কুচকে ফেলল। চোখ ঘুরিয়ে খাটের উপর তাকাতেই দেখলো কাব‍্য উল্টো হয়ে শুয়ে আছে। শুভ্রতা ধীর পায়ে এগিয়ে গেল বিছানার দিকে। গলাটা পরিষ্কার করে বলল
-“স‍্যার উঠুন আপনার আম্মু আপনাকে ডাকছে।”

কাব‍্যের কোনো হুশ নেই। শুভ্রতার ডাকটা তার কান পযর্ন্ত পৌঁছাচ্ছেনা কাব‍্যের। শুভ্রতা ইতস্তত হয়ে হালকা করে ধাক্কা দিতেই কাব‍্য হুড়মুড় করে উঠে গোল গোল চোখে শুভ্রতার দিকে তাকায়। অবাক কন্ঠে বলল
-“এই তুমি এখানে কি করছো। তোমার রেজাল্ট বের হয়েছে নাকি। তুমি কি ম‍্যাথে ফেল করেছো। আমার কোনো দোষ নাই বাবা সব দোষ তোমার।”

কাব‍্যের কথায় শুভ্রতা বিরক্তিতে কপাল কুচকে কোমরে হাত দিয়ে বলল
-“হয়েছে আপনের ফাউল কথা। এখন উঠুন কাল যে বিয়ে করলেন ভুলে গেছেন।”

কাব‍্যের সব কথা মনে পরতেই দাঁত বের করে বলদের মতো একটা হাসি দিয়ে চলে গেল ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে।

শুভ্রতা ধপ করে বিছানায় বসে পরলো। তার এখন থেকেই টেনশন লেগে গেছে। কাল রেজাল্ট দিবে কি জানি কি হয়।

শুভ্রতার ভাবনায় ছেদ ঘটলো কাব‍্যের গাট্টা খেয়ে। কাব‍্য মুখ মুছতে মুছতে বলল
-“টেনশন করে কি করবে বিয়া করছো ফেল করলেও কেউ কিছু বলবেনা। এখন চলো খেতে।”

বলেই চলে গেল কাব‍্য রুম ছেড়ে। কাব‍্যের এমন কথায় খুব মন খারাপ হলো শুভ্রতার। চোখ বেয়ে কয়েক ফোঁটা নোনা জল গড়িয়ে পরলো।

কবিতা বেগমের ডাক শুনে শুভ্রতা তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে চলে গেল খাবার টেবিলে। শুভ্রতা মন খারাপ করে খাবার খেতে দেখে কবিতা বেগম জিঙ্গাসা করলেন কিছু হয়েছে নাকি। কিন্তু শুভ্রতা কথা এড়িয়ে গেল।

———————–

বিকাল হয়ে গেছে। যতো সময় যাচ্ছে শুভ্রতার টেনশন বাড়ছে। কাল রাতে কাব‍্য ইশিতার কাছে কেন গেছে। কিহলো সেখানে কিছুই জিঙ্গাসা করে নি শুভ্রতা। জানার কোনো ইচ্ছাও নেই। শুভ্রতা দাঁড়িয়ে ছিল ছাদের কাণিশ ঘেষে।

আবহাওয়া বেশি একটা ভালো না বৃষ্টি আসতে পারে। হাওয়ায় শুভ্রতা ঘন কালো চুলগুলো উড়ছে। কাব‍্যের সকালের কথাটা খুব আঘাত করেছে শুভ্রতাকে। রহিমা বেগম ও তখন কথা শোনালেন। এমনিতে কালকের রেজাল্টের টেনশনে ভালো লাগছেনা তার উপর এগুলো ঝামেলা আর ভালো লাগছেনা তার।

#চলবে