কুঞ্জলতার মায়ায় পর্ব-০৬

0
164

#কুঞ্জলতার_মায়ায়
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ০৬

কালো সুটবুট পড়া যুবকটি রাগান্বিত কন্ঠে বলল
-“তোকে বলেছিলাম সর্তকতার সঙ্গে কাজ করতে। এখন তোর জন‍্য যদি আমার প্লানের কিছু উল্টাপাল্টা হয় না তুই শেষ।”

কথাগুলো বলেই সামনে থাকা কাঁচের গ্লাসটা ছুড়ে মারলো সেই যুবকের দিকে।

যুবকের মাথা ফেটে গলগল করে রক্ত গড়িয়ে পরতে লাগল। দুইজন বডিগার্ড এসে নিয়ে গেল যুবকটিকে।

লোকটা রাগে ফোস ফোস করতে বলল
-“এই এক কাব‍্য আমার জীবন‍টাকে শেষ করে দিলো। কোনো কাজ করে শান্তি নেই। সারাটা জীবন আমার প্লান নষ্ট করে আসছে এই কাব‍্য। এবার আমি আর তোকে ছাড়ছি না। এবার আমি বুঝিয়ে দিবো আমি কে।”

বলেই পাগলের মতো হাসতে লাগল লোকটা।

——————–

রাত এগারোটার সময় কাব‍্য দাঁড়িয়ে আছে বাস স্টপেজে। বারবার হাতের ঘড়ি দেখছে সে। বিরক্তিতে নাকমুখ কুচকে রেখেছে। সে সবসময়ই সময় মাফিক কাজ করতে পছন্দ করে। কিন্তু এই হাসান ছেলে‍টার জন‍্য কখনোই তা হয়।

হাসান হাঁপাতে হাঁপাতে কাব‍্যের সামনে এসে বলল
-“আজকেও দেড়ি হয়ে গেল আসলে।”

কাব‍্য হাসানকে থামিয়ে দিয়ে বলল
-“কিছু বলতে হবেনা। গিয়ে কিছু খাবার কিনে নে বাস এখনি আসবে।”

বলতে বলতেই বাস এসে গেল। কাব‍্য উঠে পরলো বাসে। হাসান ফুস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে কিছু চিপস আর পানি নিয়ে বাসে উঠলো।

বাস চলছে নিজের আপন গতিতে। কাব‍্য চিপস খাচ্ছে। হাসান চোখ ছোট ছোট করে কাব‍্যকে বলল
-“আজ কি বলে বের হয়েছিস।”

কাব‍্য চিপস খাওয়ায় মনোযোগ দিয়েই বলল
-“কি আর বলবো। বললাম মাহমুদের বিয়ে তাই যাচ্ছি।”

হাসান ভ্রু কুচকে বলল
-“কে মাহমুদ!”

কাব‍্য জানালা খুলে নিলো। মৃদু বাতাস বইছে। কাব‍্য বাহিরের দিকে তাকিয়ে বলল
-“আমার বন্ধু। তোর পুরো নাম কি ভেবে দেখ তাহলেই সবটা বুঝে যাবি।”

হাসান কিছু সময় ভেবে বলল
-“হালা আর কাউকে পেলিনা আমার মতো সিঙ্গেল মানুষকে এখন তুই বিবাহিত বানিয়ে দিবি।”

কাব‍্য হাসানের কথায় মুখ টিপে হাসলো। কাব‍্যের ফোন বেজে উঠতেই ও কলটা রিসিভ করলো। শুভ্রতা রিনরিনে কন্ঠে বলল
-“গাড়িতে উঠেছেন।”

কাব‍্য সি‍টে হেলান দিয়ে শুয়ে ছোট্ট করে বলল
-“হুম”

শুভ্রতা আবারো নিম্ন সুরে বলে উঠলো
-“আপনি এখন ঘুমাবেন।”

কাব‍্য কপাল কুচকে বলল
-“আস্তে আস্তে কথা বলছো কেন! কি হয়েছে?”

শুভ্রতা জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলল
-“তেমন কিছু না। সাবা আমার পাশে ঘুমিয়েছে তো। জোরে কথা বললে ওর আবার ঘুম নষ্ট হবে।”

কাব‍্য আবারো ছোট্ট করে বলল
-“ওও”

শুভ্রতা শোয়া থেকে উঠে বসে বলল
-“আপনি কি বিরক্ত হচ্ছে আমার এখন কথা বলায়!”

কাব‍্য ভ্রু কুচকে বলল
-“কেন এমনটা মনে হলো তোমার।”

শুভ্রতা উঠে বারান্দার দোলনায় গিয়ে বসে বলল
-“না মানে আপনি শুধু হু হা করছেন তো তাই জিঙ্গাসা করলাম। বিরক্ত লাগলে বলতে পারেন। আমি কিছু মনে করবো না।”

কাব‍্য হাসানের দিকে তাকালো। হাসান ঘুমিয়ে গেছে। কাব‍্য মনে মনে ভাবলো এই ছেলেটা এতো ঘুমাতে পারে কিভাবে। কাব‍্যের ভাবনায় ছেদ ঘটলো শুভ্রতার কন্ঠে। শুভ্রতা বলল
-“কি হলো কিছু বলছেন না যে। আমি কি কল রেখে দিবো।”

কাব‍্য চোখ বুজে বলল
-“না আমি কি রাখতে বলেছি তোমায়। আমার বন্ধু হাসান এতোক্ষণ জেগেছিল তাই হু হা করছিলাম। যাইহোক তোমার কি হয়েছে আবার। ঘুম ধরছে না নাকি।”

শুভ্রতা পা দোলাতে দোলাতে বলল
-“না তেমন কিছু না। আচ্ছা ঠিক আছে আপনি তাহলে ঘুমান।”

বলেই খট করে কল কেটে দিলো শুভ্রতা। কাব‍্য কিছুক্ষণ ফোনের দিকে রইলো। সে হেসে ফেলল শুভ্রতার কাজে।

——————-

কেটে গেছে পাঁচদিন। শুভ্রতা ঘুম থেকে উঠে বসার রুমে আসতেই দেখতে পায় দুইজন মহিলা বসে আছে। শুভ্রতা দ্রুত পায়ে রান্নাঘরে গিয়ে ওর মাকে বলল
-“মা এই সকাল সকাল এই পাশের বাসার আন্টিরা কি করছে।”

শাবরিণ বেগম চায়ের ট্রে শুভ্রতার হাতে দিয়ে বলল
-“তোর সঙ্গে দেখা করতে আসছে। যা গিয়ে কথাবার্তা বল।”

শুভ্রতা নাকমুখ কুচকে বলল
-“হয়ে গেলো তাহলে”

বলেই গটগট পায়ে চা নিয়ে। মহিলারা দাঁত বের করে হাসে। এক মহিলা বলল
-“তুমি নাকি প্লাস পেয়েছো। তা ভালো। কিন্তু বলো তো তোমার বিয়ে ভেঙে গেল কিভাবে।”

শাবরিণ বেগম কিছু বলতে নিবে তার আগে আরেক মহিলা বলল
-“তোমার সঙ্গে কি সম্পর্ক ছিল নাকি ওই ছেলেটার যে তোমাকে বিয়ে করেছে। তা শুনলাম ছেলে মনে হয় বাবার টাকায় খায়।”

অন‍্য মহিলা বলল
-“তোমাকে কি আবার ছেড়ে চলে গেছে নাকি। বাপের বাড়িই আছো দেখছি।”

পিছনে থেকে গম্ভীর কন্ঠে কাব‍্য বলল
-“এই ছেলে নিজের ভালো বুঝতে না পেরে শুভ্রতাকে ছেড়েছে। এটা ওই ছেলের দোষ যে ওকে ছেড়ে গিয়েছে। আর বাকি রইলো আমার আর ওর মধ্যে কোনো সম্পর্ক ছিল নাকি। হ‍্যাঁ ছিল তা হলো ভাই বোনের। কারণ আমি ওকে নিজের ছোট বোন মনে করে পড়াইছি আন্টির অনুরোধে। আর আমার আম্মু নিজের মেয়ের মতো করে ওকে বাড়ি নিয়ে গেছে। আর আমি বাবার টাকায় খাওয়া বেকার না। আমি একটা কলেজের শিক্ষক। আমি আমার বউকে রেজাল্টের পর কিছুটা সময় নিজের বাবা মার কাছে আনন্দ করার জন‍্য পাঠিয়েছি। আর আপনাদের কিভাবে মনে হলো যে এমন মায়াবী বউকে আমি ছেড়ে দিবো।”

কাব‍্য আরো সামনে এসে এক মহিলার সামনে এসে বলল
-“আগে নিজের মেয়েকে দেখুন রাস্তার বখাটে ছেলেদের সঙ্গে মিশছে। তারপর না হয় আমার বউয়ের পিছনে লাগতে আসবেন।”

বলেই শিশ বাজাতে বাজাতে শুভ্রতার রুমে চলে গেল।

মহিলা দুটো মুখ নিচু করে তাড়াতাড়ি করে চলে গেল। সাবা খুশিতে গদোগদো হয়ে বলল
-“আপুই দুলাভাই তো একেবারে ফাটিয়ে দিয়েছে।”

শুভ্রতা দৌড়ে রুমে গেল। কাব‍্য ব‍্যাগটা সোফায় রাখতেই পিছন থেকে শুভ্রতা কা‍ব‍্যকে আকড়ে ধরলো। কাব‍্য হতভম্ব হয়ে গেলো। শুভ্রতা হু হু করে কেঁদে উঠলো।

কাব‍্য চুপ করে রইলো কিছুক্ষণ। পরপর কয়েকটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ঘুরে দাড়িয়ে শুভ্রতার কান্নাভেজা মুখটাকে নিজের দুইহাতের মধ্যে আবদ্ধ করে বলল
-“কান্না করছো কেন বলো তো! বোঝতে পারো না তুমি যতোটা নরম হবে সমাজের মানুষ তোমার মাথায় উঠে নাচকে। এসব মানুষের খেয়ে দেয়ে কোনো কাজ নেই শুধু অন‍্যজনের পিছনে লেগে থাকে। এসব মানুষের কথা কানে নিলে হবে। তোমাকে নিজের জীবনে উন্নতি আনতে হলে এসব কথা ঝেড়ে ফেলতে হবে।”

শুভ্রতা ফোপাতে ফোপাতে বলল
-“আমার জন‍্যই কি ‍বিয়েটা ভেঙে গেলো। আমিই কি দোষী!”

কাব‍্য শুভ্রতার চোখ মুছিয়ে দিয়ে বলল
-“ধুর পাগলী তুমি পবিত্র মায়াবী কন‍্যা। বৃষ্টির পানির মতো স্বচ্ছ তুমি। যে তোমাকে হারিয়েছে তার আসলে কপাল খারাপ। বুঝলে পাগলী।”

শুভ্রতা জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলল
-“আপনিও কি ছেড়ে যাবেন আমায়।”

কাব‍্য শুভ্রতাকে নিজের বুকের মাঝে আকড়ে ধরে বলল
-“আমি তোমায় প্রমিস করলাম মৃত্যু ছাড়া আমি কখনোই ছেড়ে যাবো না। আর তুমি তো জানো এই কাব‍্য চৌধুরী সবসময় নিজের কথা রাখে।”

শুভ্রতা শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো কাব‍্যকে। কাব‍্য কিছুক্ষণ পর বলল
-“এখন তো ছাড়ো আমায়। আমি ফ্রেশ হয়ে আসি। খুব ক্ষুধা লেগেছে খাবার দেও। আবার বাসায় যেতে হবে তো। ওখানে থেকে গ্রামের বাসায় যেতে হবে। দাদু অসুস্থ যেতে হবে।”

শুভ্রতা চলে গেলো দৌড়ে। কাব‍্য বুঝতে পারলো শুভ্রতা লজ্জা পেয়েছে। কাব‍্য বাঁকা হাসলো।

শুভ্রতাকে লজ্জা পাওয়া অবস্থায় দেখে সাবা ভ্রু কুচকে বলল
-“কিরে আপু। তুই আবার লজ্জায় লাল নীল ও হয়ে যাস। আগে তো জানতাম না আপু।”

বলেই মিটিমিটি হাসছে দেখে শুভ্রতা ক্ষেপে গিয়ে বলল
-“সর তো এখান থেকে পড়াশোনা কর গিয়ে। তোর না এসাইনমেন্ট আছে অনেকগুলো কর গিয়ে।”

মুহুর্তেই মুখ চুপছে গেলো সাবার। নাকমুখ কুচকে ‍বলল
-“এখন কি মনে করিয়ে দেওয়ার খুব প্রয়োজন ছিল। ধুত আমার আর ভালো লাগে না।”

বলেই গটগট পায়ে চলে গেল সাবা। শুভ্রতা সাবার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাসলো।

#চলবে