#কুড়িয়ে_পাওয়া_ধন
#পার্ট_১৬
জাওয়াদ জামী
ডক্টরকে দেখিয়ে কান্তাকে নিয়ে বাসায় আসে আরমান। আসার পথে প্রয়োজনীয় ঔষধসহ কিছু শুকনা খাবার ও ফলমূল কিনে।
ডক্টর বলেছে, চিন্তা করার কারন নেই। সিজনাল জ্বর। নিয়মিত ঔষধ সেবন করলে আর বিশ্রাম নিলেই সেরে যাবে।
আরমান বাসায় এসেই কান্তাকে ঔষধ খাওয়ায়। জ্বর থাকায় কান্তা কথা না বাড়িয়ে ঔষধ খেয়ে চুপচাপ শুয়ে পরে।
আরমানও গোসল সেরে এসে বিছানায় শরীর এলিয়ে দেয়। গতরাতে ঘুম না হওয়ায় শোয়ার সাথে সাথে ঘুমিয়ে পরে।
এপাশ-ওপাশ করতে করতে কান্তাও একসময় ঘুমিয়ে পরে।
ওদের যখন ঘুম ভাঙ্গে তখন চারপাশ মাগরিবের আজানের সুমধুর ধ্বনিতে মুখরিত।
কান্তা উঠে বসে। শরীরটা মোটামুটি ভালো লাগছে। জ্বরও নেই।
পাশে আরমানকে বেঘোরে ঘুমাতে দেখে মুচকি হেসে তাকে ডাক দেয়।
চারদিন পর পুরোপুরি সুস্থ হয় কান্তা। আরমান দুইদিন ভার্সিটি ও কোচিং থেকে ছুটি নেয়। দুইদিন কান্তার পাশে থেকে ওর সেবাযত্ন করেছে। চারদিন পর পুরোপুরি সুস্থ হয়ে কান্তা রান্নাঘরে যায়।
শিখা সকাল থেকে রান্নাঘরে কাটাচ্ছে। আজ ওর বাবা-মা, ভাই-বোন সবাই ওদের বাড়িতে বেড়াতে আসবে। শিখা জাবেদকে আগেই বাজার করতে বলেছিল। জাবেদও স্ত্রীর কথামত নানারকম মাছ-মাংস, সবজি কিনে এনেছে।
শিখা খুশি মনে রান্না করছে। থেকে থেকেই ও খুশিতে মুচকি হাসছে।
আরাফ মায়ের আশেপাশে ঘুরঘুর করছে। অনেক দিন থেকেই ও ফুপিকে দেখেনি। ফুপিও এখানে আসেনি। ওর খুব ইচ্ছে করছে আজ ফুপি ওদের বাড়িতে আসুক। সেটা মাকেই বলতে ও এমন ঘুরঘুর করছে।
” আমার বাবুটা এভাবে মনমরা হয়ে মায়ের কাছে বসে আছে কেন? কি হয়েছে আমার বাবার? ” শিখা রান্না করতে করতে বলে।
” আম্মু, আজ নানু বাড়ি থেকে সবাই বেড়াতে আসবে কিন্তু আমার ফুপি আসবেনা? ফুপি কতদিন এখানে আসেনি। ফুপির জন্য মনটা কেমন কেমন করে। তুমি একটু ফুপিকে আসতে বলনা। ” মায়ের কথা শুনে উৎসাহ নিয়ে বলে আরাফ।
” কি বললি তুই? ফুপির জন্য তোর মন কেমন করে! বেইমানের বাচ্চা বেইমান, আমার বাপ, ভাই যে তোকে এত ভালোবাসে, তোকে কতকিছু দেয় তবুও ওদের প্রতি তোর কোন ভালোবাসা নেই। যত ভালোবাসা ঐ অ’প’য়া হা’রা’ম’জা’দি জন্য? হা’রা’ম’জা’দি বাড়ি থেকে বিদায় হয়েও আমার পিছু ছাড়েনি। দূর হ শ’কু’নে’র জা’ত। আমার চোখের সামনে থেকে দূর হ। তোর সাধের ফুপিকে দেখার কথা ভুলে যা। ঐ অ’প’য়া’র বিয়ের সাথে সাথেই ওর জন্য এই বাড়ির দরজা বন্ধ হয়ে গেছে। আর যদি কখনও তোর মুখে ঐ হা’রা’ম’জা’দি’র নাম শুনি, তবে তোর হাত-পা ভে’ঙ্গে ঘরে বসিয়ে রাখব। ” আরাফের কথা কানে যেতেই এভাবে খেঁ’কি’য়ে উঠে শিখা।
আরাফ মুখটা ছোট করে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসে। মায়ের কথা শুনে ওর কান্না পাচ্ছে। মা কেন ফুপিকে পছন্দ করেনা, আর কেনইবা ফুপির সাথে দূর্ব্যবহার করে তা ওর ছোট্ট মস্তিষ্কে ঢোকেনা।
একছুটে ও বেরিয়ে যায় বাড়ি থেকে।
” আপনি আজ ভার্সিটি যাবেননা? সাড়ে আটটা বাজে অথচ আপনি এখনও রেডি হননি। খাবেন কখন আর ভার্সিটিতে যাবেন কখন! ”
” আজ ভার্সিটিতে যাবনা। তুমি খাবার রুমে নিয়ে আস। শোন, আজ একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। নয়টার দিকে বেড়োতে হবে। তুমি একটু দোয়া করো, যাতে আমার কাজটা সুষ্ঠুভাবে হয়ে যায়। ”
” ফি আমানিল্লাহ। আল্লাহ আপনার কাজ সহজ করে দিন। এবার ফ্রেশ হয়ে আসুন। আমি খাবার নিয়ে আসছি। ”
আরমান খেয়ে ব্যাগে করে কিসব ফাইল নিয়ে বেরিয়ে যায়।
ও বেরিয়ে গেলে কান্তা অজু করে এসে জায়নামাজে দাঁড়ায়। পরপর কয়েক রাকাআত নফল নামাজ আদায় করে দোয়া করে আরমানের জন্য। মানুষটা মুখ ফুটে আজ ওর কাছ থেকে দোয়া চেয়েছে।
সন্ধ্যায় ক্লান্ত হয়ে আরমান বাড়ি ফিরে। ওকে দেখেই কান্তা হাসিমুখে এগিয়ে আসে।
” আপনি যেই কাজে গিয়েছিলেন সেটা ভালোভাবে সম্পন্ন হয়েছে? ”
” তুমি বেশি বেশি দোয়া করো। বাকিটা আল্লাহর হাতে। খুব ক্ষুধা লেগেছে। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি, তুমি খাবার নিয়ে আস। ”
আরমান সোজা ওয়াশরুমে ঢোকে।
” উফ এই মানুষটাকে নিয়ে পারিনা। বিয়ের তিনমাস হতে চলল। অথচ আজ পর্যন্ত একটা কথাও মন খুলে বললনা! ” আপন মনেই কথাগুলো বলে রান্নাঘরে যায় কান্তা।
কান্তার পরীক্ষার আর দুইমাস বাকি আছে। আরমান ওকে রান্নাঘরে যেতে বারণ করেছে। পরীক্ষার আগ পর্যন্ত কান্তাকে কোন কাজ করতে দিতে চায়না সে৷ কিন্তু কান্তা আরমানের জন্যই রান্নাঘরে যায়। ও চায়না আরমান সকালে না খেয়ে বাড়ি থেকে বের হোক কিংবা দুপুরে না খেয়ে থাকুক। তাই আরমানের হাজার বারণ স্বত্বেও ও রান্নাঘরে যায়।
এরইমধ্যে কান্তা আরমানের সাথে নিজের কলেজে যেয়ে রেজিষ্ট্রেশনসহ যাবতীয় কিছু করে এসেছে।
কান্তা ওর বাবার বাড়িতে যেতে চাইলে আরমান ওকে নিয়ে যায়নি।
এতে কান্তার একটু মন খারাপ হয়। আসলে ও আরাফকে দেখতে চাইছিল। ছেলেটাকে ও কতদিন ধরে দেখেনি। তাই ওর জন্য মন কেমন করছিল।
কান্তা ইদানীং লক্ষ্য করেছে শুভ বাসায় থাকেনা। আবার রাতেও অনেক দেরিতে বাসায় ফিরে। কোন কোনদিন রাতে বাসায়ই আসেনা। এ নিয়ে আকলিমা খানম ও রাজিয়া খানমকে আড়ালে-আবডালে আলোচনা করতে শুনেছে কান্তা। তারাও বিষয়টা নিয়ে ভিষণ চিন্তিত।
যদিও এখন পর্যন্ত এই কথাটা শহিদ আহমেদের কানে তোলেনি তার মা, বউ।
আজ শুক্রবার হওয়ায় সবাই বাসায়ই আছে। সকালে আরমান সবার সাথে এক টেবিলে বসে খেয়েছে। এরপর নিজে বাজারে গিয়ে পছন্দমত বাজার করেছে।
দুপুরে সবাই খাবার টেবিলে বসে শুভর জন্য অপেক্ষা করছে। বেলা আড়াইটা বাজে অথচ তার আসার নামই নেই। উপায় না দেখে শ্রীজা তাকে ডাকতে যায়।
শুভ যখন খেতে আসে তখন তিনটা বেজে গেছে।
ও আসলেই সবাই খাওয়া শুরু করে।
খাওয়া শেষ হলে শহিদ আহমেদ গিয়ে ড্রয়িংরুমে বসেন। আরমান হাত ধুয়ে এসে ডাইনিং টেবিলের সামনে দাঁড়ায়। শুভ তখনও খাচ্ছে। ধীরেসুস্থে ও খাওয়া শেষ করে। এরপর হাত ধুয়ে নিজের রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই আরমান ওকে ডাক দেয়।
” শুভ, ড্রয়িংরুমে আয়। তোর সাথে কিছু কথা আছে। ”
শুভ আরমানের সামনে এসে দাঁড়ায়।
” কি বলবে বল। একটু তারাতারি বল, আমার বাইরে যেতে হবে। ”
” তুই ঘুম থেকে উঠলি কিছুক্ষণ আগে। এখনই আবার বাইরে যাবি? তুই কি জানিস এত বেলা করে ঘুমানো শরীরের জন্য ক্ষ’তি’ক’র? রাত জেগে কি করিস? ”
” তুমি কি এসব জ্ঞান দেয়ার জন্য আমাকে ডেকেছ? তোমার কাছে সবকিছুর কৈফিয়ত দিতে হবে? আমার কাছে কৈফিয়ত চাওয়ার তুমি কে? ” উদ্ধতভাবে জবাব দেয় শুভ।
” শুভ, তুমি এভাবে কথা বলছ কেন? আরমান তোমার বড় ভাই। সে তোমার কাছে কোনকিছু জিজ্ঞেস করতেই পারে। সে অধিকার ওর আছে। ” শুভর কথার ধরন ভালো লাগেনা শহিদ আহমেদের কাছে। তাই তিনি সঙ্গে সঙ্গে শুভর কথার প্রতিবাদ করেন।
” আমার বিষয় আমিই ভালো বুঝব। তাকে কে মাথা ঘামাতে বলেছে? ”
” তোর বিষয়, তুই-ই বুঝবি তা ঠিক আছে। কিন্তু এতসব কিছু বুঝতে যেয়ে নিজের পড়াশোনা ঠিকমত করছিস তো? আমি শুনলাম তুই ঠিকমত ক্লাস করিসনা? আজেবাজে ছেলেদের সাথে মিশছিস? তোদের কেউ না হলেও এ বাড়িতেই যেহেতু থাকি সেহেতু অধিকার একটু জন্মায়ই। শোন, তোর যথেষ্ট বয়স হয়েছে, এতটুকু বোঝার মত বুদ্ধি তোর আছে, যে তুই যাদের সাথে মিশছিস তারা ভালো ছেলে নয়। ওদের সাথে মেশার পরিনতি খুব ভালো হবেনা। ”
আরমান ঠান্ডা গলায় বলে।
কান্তা রান্নাঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে ওদের কথা শুনছে। সেই সাথে ওর বুক দুরুদুরু করছে। সবাই যদি আরমানকে অপমান করে!
” আমার ভালো আমাকেই বুঝতে দাও। তোমার এতে মাথা না ঘামালেও চলবে। শুধু শুধু ভাইয়ের ভূমিকা পালন করতে এসোনা। আমার এসব পছন্দ নয়। ”
শহিদ আহমেদ ছোট ছেলের কথা শুনে অবাক হয়ে গেছেন। এই ছেলে এতটা বেয়াদব হয়েছে!
” এখন থেকেই ওর রাশ টেনে ধরুন। তাছাড়া দেখবেন ভবিষ্যতে খারাপ কিছু ঘটেছে। প্রথমেই ওর বাহিরে যাওয়া বন্ধ করুন। ছেলেকে ভালোবাসবেন ঠিক আছে, প্রয়োজনে তাকে শাসনও করতে হবে। ” আরমান আকলিমা খানমের দিকে তাকিয়ে বলে।
” আমি কি করব না করব সেটা আমিই বুঝব। আমার ছেলের ব্যাপারে তোমার নাক না গলালেও চলবে। সব সময়ই নিজের পাণ্ডিত্য জাহির করতে তোমার বোধহয় খুব ভালো লাগে? বাবার সামনে ছেলেকে খারাপ প্রমান করতে উঠেপড়ে লেগেছ? তবে শুনে রাখ তোমার সেই স্বপ্ন সফল হবেনা। ” আকলিমা খানম ছেলেকে শাসন না করে আরমানকেই কথা শোনায়।
” কারও সামনে পাণ্ডিত্য জাহির করতেও ভালো লাগেনা, আবার কাউকে খারাপ প্রমান করতেও ভালো লাগেনা। আমি শুধু বড় ভাইয়ের দ্বায়িত্ব পালন করতে চাইছিলাম। তবে এখন বুঝতে পারছি, আমি ভুল করেছি। আমি যাকে আপন ভাবতে চাই সে যে আমাকে আপন ভাবেনা, এটা আমার আগেই বোঝা উচিত ছিল। আমার ভাবা উচিত ছিল, সে আপনার সন্তান। আর আপনার সন্তান যে আমার আপন নয়, সেটা বারবার ভুলে যাই। ”
” আরমান, মায়ের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় সেটা কি তোমাকে শিখিয়ে দিতে হবে? আমাকে তো সম্মান করইনা, আবার মায়ের সাথেও দূর্ব্যবহার করছ? আপন-পর নিয়ে প্রশ্ন তুলছ? সবাই যদি তোমার পরই হবে, তবে এতবড় হয়েছ কেমন করে? লেখাপড়া শিখেছ কেমন করে? মোটকথা বেঁচে আছো কেমন করে? ” শহিদ আহমেদ রে’গে গেছেন।
” শহিদ, তোর বড় ছেলে একটা বেইমান। এতদিন খাইয়ে, পড়িয়ে দুধ কলা দিয়ে কা’ল’সা’প পুষেছিস। যে এখন তোকেই ছো’ব’ল মারতে চাচ্ছে। শুভকে সবার সামনে খারাপ বানাতে চাচ্ছে। যার খেয়েপড়ে এত বড় হয়েছে, তারি বুকের ওপর পা দিয়ে দাঁড়াতে চাচ্ছে। সা’পে’র পেট থেকে সা’পে’র বাচ্চাই জন্ম নেয়। আর তারা বি’ষ’ধ’র হবে এটাই স্বাভাবিক। ” শহিদ আহমেদকে উস্কে দেয়ার সুযোগ হাতছাড়া করেনা রাজিয়া খানম।
” অনেক বলেছেন। এবার চুপ করুন। আমি এ পর্যন্ত এসেছি নিজের চেষ্টায়। কেউ আমাকে এতটুকুও সাহায্য করেনি। আর জন্ম দিলেই বাবা হওয়া যেমন যায়না, তেমনি সেই বাবার মা-ও আপন হয়না। কি করেছেন আমার জন্য? শুভ, শ্রীজাকে যেভাবে মানুষ করেছেন, ওদের পেছনে যেভাবে অঢেল টাকা খরচ করেছেন, আমার জন্য কি করেছেন? আমি দেখেছি আপনি আপনার দুই নাতি-নাতনিকে তিনবেলা মুখে তুলে খাইয়ে দিয়েছেন। আমাকে খাওয়ানো তো দূরের কথা আদর করে মাথায় হাত বুলিয়েছেন কখনও? বি’ষ’ধ’র সাপ আমি নই। বি’ষ’ধ’র সাপ আপনারা সবাই। ” আরমান যেন আজ নিজের মধ্যে নেই।
রা’গে ওর চোখমুখ লাল হয়ে গেছে। কান্তা বুঝতে পারছে সামনের ঘটনাগুলো সুখকর হতে যাচ্ছেনা। তাই ও এগিয়ে এসে আরমানকে রুমে নিয়ে যেতে চায়। ওকে থামাতে চায়।
” এসব কি বলছেন আপনি! চলুন, ভেতরে চলুন। বাবা-মা, দাদিমাকে কেউ এভাবে কথা বলে কষ্ট দেয়। আপনি আমার সাথে আসুন। ” কান্তা আরমানের হাত ধরে ওকে টেনে নিয়ে যেতে চায়৷
” হাত ছাড়ো। তোমাকে এখানে এসে কে কথা বলতে বলেছে? কে আমার বাবা? আর কেইবা মা? উনি আমার সৎ মা। কোন মা’কে কখনও দেখেছ সন্তানকে না খাইয়ে বাড়ি থেকে বের হতে দিতে? কিন্তু তিনি বছরের পর বছর এমন করেছেন আমার সাথে। আর বাবার কথা বললেনা? তিনি শুধু নামেই আমার বাবা। যার বাবার এত সম্পদ, তার ছেলেকে সেই ছোট থেকেই নিজের খরচে চলতে হয়েছে। নিজের পড়াশোনার খরচটাও নিজেকেই জোগাড় করতে হয়েছে। এতবড় বাড়িতে সবাই যখন আলিশান রুমে থাকে, তখন আমি কেন ঐ খুপরি ঘরে থাকি, তোমার মনে এই প্রশ্নটা কখনও আসেনি? তুমি যা জানোনা সেটা নিয়ে কথা বলতে এসোনা। ”
কান্তা আরমানের কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেছে।
” বেইমান কি আর সাধে বলি। বাপের দয়ায় বেঁচে আছে, হাত-পা গজিয়েছে সেটা আজ অস্বীকার করছে। আমার ছেলে না থাকলে কোথায় ভেসে যেত, ডাষ্টবিনে ওর লা’শ কুকুরে খেত। আজ সে-ই আমার ছেলের দিকে আঙুল তুলছে! ” রাজিয়া খানম যেন দমে যাওয়ার পাত্রী নন৷
” আপনার ছেলে না থাকলে আমি বেঁচে যেতাম। মায়ের কথা তো মনেই পরেনা। শুনেছি মায়ের পর দাদি বেশি আপন হয়। মা না থাকলে দাদি তার নাতি-নাতনিকে আগলে রাখে। কিন্তু আপনি সেটা করেননিই, উল্টো ছেলের কাছে আমাকে খারাপ প্রমান করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। ছোট্ট ছেলেটা যখন ক্ষুধায় ছটফট করছে, তখন আপনি তাকে খাবার না দিয়ে কটু কথা শুনিয়েছেন। আবার নিজের রাজত্ব ধরে রাখতে ভাইয়ের মেয়ের সাথে ছেলের বিয়ে দিয়েছেন। এরপর দুজন মিলে আমাকে অত্যাচার করেছেন। কি দোষ ছিল আমার? নিজের বাবার এতবড় বাড়ি থাকতে কেন কখনও দারোয়ান চাচা আবার কখনও খালার কাছে ঘুমাতে হয়েছে? তখন সেই বাবা কোথায় ছিল? তার চোখে এসব পরেনি? তার ছোট দুই ছেলে-মেয়েকে নামীদামী স্কুলে পড়িয়েছেন। কিন্তু আমাকে কেন প্রাইমারী স্কুলে পড়তে হয়েছে? পরীক্ষার ফি কিংবা স্কুলের কয়টা টাকা বেতনের জন্য খালার কাছে হাত পাততে হয়েছে? সিক্সে ওঠার পর থেকে কেন স্কুলের পর গ্যারাজে কাজ করতে হয়েছে? আমার জন্য একটা টাকাও আপনার ছেলের বরাদ্দ ছিলনা। বাধ্য হয়ে নিজের খরচ মেটাতে গ্যারাজে কাজ করতে হয়েছে। তখন কোথায় ছিল আপনার এই বড় বড় বুলি? নিজেরা হাজার রকম খাবার খেয়েছেন, আমাকে কখনও দিয়েছেন? কিংবা পাশে বসিয়ে নিয়ে খেয়েছেন? এরকম আরও কতশত ঘটনা আমার মনে আছে। সেসব যদি বলি তবে সহ্য করতে পারবেন? আপনার ছেলে শুধু আমার জন্মদাতা। আর জন্মদাতা হলেই যে সে বাবা হবে এটা আমি মানতে পারিনা। তিনি শুধু শুভ, শ্রীজার বাবা। বিনা দোষে যিনি তার ছয় বছরের ছেলেকে পর করে দিত পারে, সে কখনও বাবা হতে পারেনা। আমার মা আমাকে ছেড়ে অন্য কোথাও চলে গেছে, সেই দোষ আমার? ছয় বছরের কোন ছেলের এ সম্পর্কে কোন ধারনা আদৌ থাকতে পারে? আপনার ছেলের এত নীতিবোধ তখন কোথায় ছিল? মা চলে গেছে তাই ছেলেকে দোষী বানিয়েছে সে। সে যদি আমাকে একটু ভালোবাসা দিত তবে আমার শৈশবও অন্যরকম হতে পারত। আমার বয়সী আর পাঁচটা ছেলে যেখানে হেসেখেলে কাটিয়েছে, সেখানে আমাকে হাতের ফোস্কা নিয়ে গ্যারেজে কাজ করতে হয়েছে, নিজের ভবিষ্যতের জন্য। আর সেই ছেলের মা হয়ে আপনি আমাকে বেইমান বলছেন? যখন আপনার সামনে অকারনে আপনার ছেলের বউ আমাকে মে’রে’ছে, না খাইয়ে রেখেছে, আপনার ছেলের কাছে মিথ্যা বলে আমাকে মা’র খাইয়ে নিয়েছে, তখন কোথায় ছিল আপনার এত বড় বড় কথা? সব কিছুরই সাক্ষী এই খালা আর দারোয়ান চাচা। আপনারা আমার কথাকে মিথ্যা বলতে পারেন, কি তারা সব সত্যিই জানে। বেইমান আমি নই, বেইমান আপনারা। ” আরমানের চোখে পানি। কান্তা স্তব্ধ হয়ে যায় আরমানের কথা শুনে। কতটা আঘাতে একজন পুরুষের চোখে পানি আসে, তার সাক্ষী আজ কান্তা।
ড্রয়িংরুম জুড়ে পিনপতন নীরবতা। শহিদ আহমেদ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছেন। সত্যিইতো তিনি তার ছেলের সাথে অবিচার করেছেন।
শ্রীজা ভাইয়ার কথা শুনে কাঁদছে। তার ভাই এত কষ্ট করেছে! সে বারবার মায়ের দিকে তাকাচ্ছে। ওর মা এতটাই খারাপ!
আরমান আর সেখানে দাঁড়ায়না। চোখ মুছতে মুছতে রুমে চলে আসে।
চলবে…
#কুড়িয়ে_পাওয়া_ধন
#পার্ট_১৭
জাওয়াদ জামী
কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার পর স্বম্বিৎ ফিরে কান্তার। ও দৌড়ে রুমে আসে। ততক্ষণে আরমান রুমে চলে গেছে।
রুমে ঢুকে কান্তা আরমানকে দেখতে পেলোনা। চোখের পানি মুছতে মুছতে বারান্দার দিকে পা বাড়ায়।
আরমান মেঝেতে মাথা নিচু করে বসে আছে। স্থির চোখে তাকিয়ে আছে মেঝের দিকে। যেন মনযোগ দিয়ে দেখছে টাইলসের নকশা।
কান্তা দরজার সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে আরমানের পাশে যেয়ে বসে। এক ঝটকায় আরমানের বাহু জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দেয়।
” আমি এতদিন ভেবে এসেছি, আমিই বোধহয় সবচেয়ে বেশি দুঃখী, আমিই শুধু কষ্ট করেছি। আজকে আমার সেই ভুল ধারণা ভে’ঙে গেছে। আমি আ’ঘা’ত পেয়েছি ভাই-ভাবীর কাছ থেকে। কিন্তু আঘাত পেয়েছেন নিজের বাবার কাছ থেকে, দাদির কাছ থেকে। আমার ভাইদের বোনপ্রীতি ছিলনা, তাই সহজেই ভাবীদের কু’ম’ন্ত্র’ণা’য় তারা দিশা হারিয়েছে। কিন্তু একজন বাবা কিভাবে তার সন্তানকে দূরে ঠেলে দিতে পারে! যার জন্য আপনাকে কত কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। আপনার আ’ঘা’তে’র তুলনায় আমার আ’ঘা’ত কিছুইনা। এত কিছুর পরও আপনি এখানে কেন পরে আছেন! ”
আরমান প্রথমে কান্তার এমন কান্ডে হকচকিয়ে গেলেও পরে নিজেকে সামলে নেয়। হাসি ফুটে ওঠে ওর ঠোঁটের কোনে।
” এই মেয়ে, তুমি এভাবে কাঁদছ কেন! শোন, জীবনে কষ্ট করেছি বলেই আজ এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি। শহিদ আহমেদের করা অবহেলায় আমি নিজেকে চিনতে শিখেছি। রাজিয়া খানমের কথার আ’ঘা’ত, শারিরীক আ’ঘা’ত কিংবা আকলিমা খানমের করা অ’ত্যা’চা’র আমাকে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করেছে। আমার সাথে হওয়া অবিচারের কারনেই আমার ভেতরে বড় হওয়ার জিদ চেপেছিল। এতটা বড় হতে চেয়েছিলাম, যতটা বড় হলে কেউ আর অপমান করার সাহস করবেনা। আজ আমি আমার লক্ষ্যের কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। সেখানে পৌছানো এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। এতকিছুর পরও এ বাড়িতে কেন পরে আছি যান? আমার মায়ের জন্য। তার চেহারা, তার কোন কথা কিংবা তাকে নিয়ে কোন স্মৃতি আমার মনে নেই। এখানে থাকলে আমি তাকে অনুভব করতে পারি। এই বাড়ির দেয়ালগুলো ছুঁয়ে দিলে মনে হয় আমি মাকেই ছুঁয়ে দিচ্ছি। একদিন এই বাড়িই তো তার পদচারণায় মুখরিত ছিল। হোকনা সে খারাপ। তবুও সে তো মা। কোন নারী যখন মায়ের রূপে বিরাজ করে তখন সে শুধুই দয়াময়ী। আর মায়ের রূপে নারীরা কখনোই খারাপ হয়না। মায়েরা সব সময়ই মায়াবতী হয়। ” আরমানের গলা ভারী হয়ে আসে।
” মা কোথায় গিয়েছেন? কেন গিয়েছেন? ” ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করে কান্তা।
” আমি এত কিছু জানিনা। আবার মনেও নেই। ছয় বছর বয়সে মায়ের সাথে মামার বাড়ি গিয়েছিলাম। সেখানে নাকি কয়েকদিন ছিলাম। তারপর সেখান থেকে দাদুর গ্রামে আমাকে নিয়ে যায় মা। সেখানে তিনদিন ছিল। এরপর একরাতে নাকি কাউকে কিছু না বলে উধাও হয়ে যায়। অনেক খুঁজেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে সবাই বলাবলি করতে শুরু করে, মা কারও সাথে পালিয়েছে৷ অবশ্য সেসব কথা আমার স্মৃতিতেও নেই। আমি রাজিয়া খানমের মুখ থেকে সেসব কথা শুনতে শুনতে বড় হয়েছি৷ মা নিখোঁজ হবার পর থেকেই বাবা আমাকে ঘৃ’ণা করতে শুরু করে। আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয়। তার যুক্তি ছিল, খারাপ মায়ের সন্তান কখনোই ভালো হতে পারেনা৷ আমার কোন খরচ বহন করতনা। দারোয়ান চাচার কাছে থাকতাম। তিনিই প্রাইমারী স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন। আমার সকল ব্যায়ভার তিনিই বহন করতেন। একটু একটু করে সবার অনাদরে বড় হতে থাকলাম। শুভর মা এ বাড়িতে বউ হয়ে আসল। শুরু হল আমার ন’র’কে’র দিন। এরপর একদিন খালা আসল এখানে। ধীরে ধীরে সে হয়ে উঠল আমার মা। ”
কান্তার মুখে কোন কথা জোগায়না। সন্তানের জন্য কোন বাবা এতটাও নি’ঠু’র হতে পারে! ও অনবরত কাঁদতেই থাকে।
” আজ থেকে এ বাড়ির কাউকে আর ভালোবাসতে পারবনা। তাদেরকে দেখলেই আপনার সাথে হওয়া অবিচারগুলো মনে পরবে। কিভাবে ছিলেন এতদিন তাদের মাঝে! না জানি কত কষ্ট হয়েছে আপনার। নিজের দুঃখগুলোকে আজ নগন্য মনে হচ্ছে। ” কান্তা ফুঁপিয়ে কাঁদছে।
” শোন মেয়ে, এ বাড়ি থেকে পাততাড়ি গোটানোর সময় এসে গেছে। এতদিন মায়ের ছোঁয়া পাবার আশায় এখানে পরে থেকেছি, কিন্তু আজ শুভর কথা শোনার পর থেকে সেই ইচ্ছে ম’রে গেছে।মনে মনে তৈরি থেক। যেকোন দিন এখান থেকে বেরিয়ে যাব। এখন কান্না বন্ধ কর। স্বামী-স্ত্রীর দুজনের মধ্যে কারও কোন সমস্যা হলে, একজনকে শক্ত হতে হয়, অপরজনকে শান্তনা দিতে হয়, আশার বানী শোনাতে হয়। কিন্তু তুমি সেসব না করে কেঁদেই চলেছ! তোমাকে দিয়ে কিচ্ছুটি হবেনা। ” কপট রা’গ দেখায় আরমান।
কান্তা মুখ খুলতে গেলেই দরজায় টোকা দেয় কেউ। শব্দ শুনে কান্তা উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেয়।
শ্রীজা মাথা নিচু করে রুমে ঢোকে। সেখানে ভাইকে দেখতে না পেয়ে বারান্দায় যায়।
আরমান তখনও সেখানে ঠাঁয় বসা।
শ্রীজাও ভাইয়ের পাশে যেয়ে বসে।
” ভাইয়া, সেই ছোটবেলা থেকেই তোমাকে আমার ভাই বলে জেনে এসেছি। তুমি আমার সৎ ভাই সেই কথা কখনও মনে আসতে দিইনি। ছোট ভাইয়ার থেকেও তোমাকে বেশি ভালোবেসেছি। তেমনি তুমিও সেই ছোটবেলা থেকেই সবটা দিয়ে আমাকে ভালোবেসেছ, আগলে রেখেছ। ছোট হওয়ায় তোমার অতীত সম্পর্কে জানতে পারিনি। হয়তো কখনো জানতেই চাইনি। তাই এতদিন অজ্ঞ ছিলাম। কিন্তু আজ যখন জানলাম তোমার জীবনযুদ্ধের কথা, আর নিশ্চুপ থাকতে পারলামনা। ওরা সবাই তোমার সাথে অন্যায় করেছে ভাইয়া। সবাই সমান দোষী। ঘৃণা জন্মেছে সবার ওপর। জানো ভাইয়া, মা, দাদিমা যখন তোমার সাথে দুর্বব্যহার করত আমার ভিষণ রা’গ হত। তাদেরকে বলতাম তোমার সাথে এমন না করতে। কিন্তু তারা কখনোই আমার কথা শোনেনি। উল্টো তোমার সাথে কথা বলতে নিষেধ করেছে। কিন্তু আমাকে ঠেকানোর সাধ্য কার। আমি আমার অতিপ্রিয় ভাইয়ের সাথে কথা বলব। বাঁধা দিয়ে তারা কি করতে পারবে। কিন্তু দেখ এতকিছুর পরও তোমার সাথে হওয়া অন্যায় আমি রুখতে পারিনি। কিন্তু আজ ওরা সীমা ছাড়িয়েছে। তুমি ওদের ক্ষমা করোনা ভাইয়া। কেন পরে আছ এখানে! চলে যাও, নিজের আপন দুনিয়া গড়ে তোল। এখানে থাকলে ওরা তোমার সাথে সাথে ভাবীর জীবনও দুর্বিষহ করে তুলবে। হয়তো দেখলে তোমার সংসারটাই তছনছ করে দিল। এই নি’ষ্টু’র জগতে সে-ই একমাত্র তোমার সুখ-দুঃখের সাথী। কেউ তোমার পাশে না থাকলেও ভাবী সকল পরিস্থিতিতে তোমার পাশে থাকবে। আর আমি দূর থেকে তোমাকে সাপোর্ট দিয়ে যাব। তবে যেখানেই যাও আমার সাথে যোগাযোগ রেখ। তোমাকে না দেখলে, তোমার সাথে কথা না বললে আমার ভিষণ কষ্ট হবে। ” শ্রীজা হুহু করে কেঁদে উঠে।
বোনের কান্না দেখে আরমান ওকে কাছে টেনে নেয়। ও খুব ভালো করেই জানে ওর বোন ওকে কত ভালোবাসে।
” অনেক কেঁদেছিস। এবার কান্না থামা। বেশি কাঁদলে তোকে দেখতে খুব বাজে লাগে। কাঁদতে কাঁদতে চেহারা যদি এমন বাজে হয়ে যায়, তখন তোকে বিয়ে করবে কে! তখন তোর বাবার অনেক খরচ হবে। কিংবা দেখা গেল কোন রিকসাওয়ালার সাথে বিয়ে দিয়ে দিল। বিষয়টা কিন্তু খুবই বাজে হবে, ভেবে দেখেছিস? ”
” তুমি যতই আমাকে খোঁ’চা’ও, আজ আমি একটুও রা’গ’ব’না। যার সাথে খুশি বিয়ে দিও। তোমাকে ছাড়া কাউকে আমার পাশে দরকার নেই। ” নাক টানতে টানতে জবাব দেয় শ্রীজা।
কান্তা রুম থেকে দুই ভাই-বোনের কথপোকথন শুনছিল।
” শ্রীজু, আমি খুব তারাতারি তোদের ঘাড় থেকে নেমে যাব বুঝলি। এমনও হতে পারে ঢাকাতেই আর থাকবনা। তবে আমি যেখানেই যাই, তুই জানবি। কিন্তু তোর কাছে অনুরোধ থাকবে, তুই সেই কথা কাউকে বলবিনা। এমনকি তোর বাবাকেও না। আমি কোন পিছুটান রাখতে চাইনা। ”
এতক্ষণ ভাইকে অনেক কিছু বললেও, ভাইয়ের মুখ থেকে চলে যাওয়ার কথা শুনে শ্রীজা আওয়াজ করে কেঁদে উঠে। ও ভাইকে না দেখে কিভাবে থাকবে!
শহিদ আহমেদ নিজের রুমে বসে আছেন। আজকে আরমানের কথাগুলো তার কলিজায় কাঁপন ধরিয়েছে। এত বছর আইরিনের ওপর রা’গে’র জন্য নিজের ছেলেকে তিনি দূরে সরিয়ে দিয়েছেন। একটাবারও ভাবেননি তার ছোট্ট ছেলেটা কি পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। সেই ছোট থেকেই ছেলেটাকে দূর দূর করেছেন। তার কোলে উঠতে চাইলে ঠেলে সরিয়ে দিয়েছেন। তার কাছে বসতে চাইলে ধমক দিয়েছেন। ছেলেটার পেছনে একটা টাকাও খরচ করেননি। একটাবারও ভাবেননি ছেলেটার স্কুলে টাকার দরকার হতে পারে, ছেলেটার কোন টিউশনের দরকার হতে পারে। ছেলেটা কিভাবে পড়াশোনার খরচটা চালিয়েছে সেটা জানার কোন প্রয়োজনই বোধ করেননি তিনি। এত বছর পর আজ তিনি শুনছেন, তার ছেলেটা পড়াশোনার খরচ জোগাতে ক্লাস সিক্স থেকেই গ্যারেজে কাজ করেছে! আজ নিজের প্রতি ঘৃণা জন্মেছে তার। কি করে পারল নিজের সন্তানকে এভাবে আ’ঘা’ত করতে! তার এসব আচরণের জন্যই বোধহয় ছেলেটা তাকে বাবা বলে ডাকেনা। কত বছর ছেলের মুখে বাবা ডাক শোনেননা তিনি! তিনি মনে মনে হিসাব কষছেন। কিন্তু তিনি হিসেব কষতে ব্যর্থ হন। তিনি হেরে গেছেন। পিতৃত্বের অহঙ্কার তার জন্য নয়। যে পিতা এক সন্তানকে অন্ধকারে রেখে অন্য সন্তানদের আলো দিতে চান, তিনি পিতা হবার যোগ্য নন।
” আইরিন, তুমি কেন এমন করলে? আমাকে ভালোবেসে তুমি আমার হাত ধরেছিলে। কিন্তু মাঝপথে সেই হাত ছেড়ে কেন অন্য হাত ধরলে? কি দোষ ছিল আমার? ছেড়েই যদি যাবে, তবে কেন এসেছিলে আমার জীবনে? আরমানের মুখের দিকে তাকালে আমি তোমাকে দেখতে পাই। তাইতো বারবার ছেলেটাকে আ’ঘা’ত করেছি। কিন্তু আজ সেই আ’ঘা’ত শতসহস্রগুন ভারী হয়ে আমার বুকেই আছড়ে পড়েছে। আমি ছেলেটার কাছে চিরকালের মত দোষী হয়ে রইলাম। ” অঝোরে কাঁদছেন শহিদ আহমেদ।
আকলিমা খানম বিছানা থেকে স্বামীর কান্না দেখছে আর রা’গে দাঁত কটমট করছে।
চলবে..