কুন্দ ফুলের মালা পর্ব-১২

0
16

#কুন্দ_ফুলের_মালা
#পর্ব-১২
ইশিকা ঝিলমিল কে ব্লক করেছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। কোনো তর্ক কিংবা ঝগড়াঝাটি কিছুই হয় নি। ব্লক করার কারণ ছিলো ঝিলমিল কে সূক্ষ্ম অপমান করা। অবশ্য ঝিলমিলের মান, অপমান বোধ আছে কী না সেটা নিয়েও এখন সন্দিহান। আশ্চর্য ঝিলমিল এতো টা নির্লজ্জ! আকাশের রিজেক্ট করার কারণে হৃদয়কে বিয়ে করে মিঠাপুকুর লেনে থেকে গেছে! এই ঝিলমিল ওদের খুব অচেনা। মনে হচ্ছে ওরা আসলেই চিনতে পারে নি মেয়েটাকে ভালো করে।

ইশিকা ঝিলমিল কে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে ব্লক করার পরও বিয়ে, গায়ে হলুদ, বউভাতের ছবিগুলো স্বর্নার প্রোফাইল থেকে দেখতে পেল। একটুও দু:খকাতর লাগছে না ছবিগুলোয়৷ একটা ছবিতে তো লাজুক বধূর মতো মুখে লজ্জামিশ্রিত হাসিও ছিলো।

নীরবতা নাকি ভয়ংকর অস্ত্র হয়। ঝিলমিল কী চুপ থেকে নিজেকে শাণিত করছে! ইশিকার কেন যেন মনে হচ্ছে আকাশের জীবনে ও অনেক ঝামেলা করবে। ভাইয়ের জীবন নিয়ে বাবা, মায়ের সিদ্ধান্ত ওর কাছে একশ ভাগ ঠিক মনে হয়। ঝিলমিল রা কোনো দিক থেকে ওদের স্ট্যাটাস এর সঙ্গে যায় না। ইশিকার শ্বশুর বাড়ির লোকজনও সবাই বড়লোক। তাদের কাছে চৈতীর ব্যাপারে গল্প করার সময় ইশিতার গর্ব হয়। কিন্তু চৈতীর পরিবর্তে ঝিলমিল থাকলেই ব্যাপার টা অন্যরকম হতো।

ইশিকা আজ বাড়িতে এসেছে চৈতীর কথায়। ভাবী হিসেবে চৈতীকে ভালো করে আবিষ্কার এখনো করতে পারে নি। মাঝেমধ্যে ওর চৈতীকে পানির মতো মনে হয়, মাঝেমধ্যে মনে হয় কঠিন বরফ। ও চেষ্টা করছে সখ্যতা বাড়ানোর, তবে চৈতীর দিক থেকে সেরকম চেষ্টা নেই বললেই চলে।

“কেমন আছ ইশিকাপু?”

“ভালো। তুমি কেমন আছ? ”

“ভালো। ”

চৈতী সোফায় ইশিকার মুখোমুখি বসলো। মুখে ফেসপ্যাক লাগিয়েছে। নিজের রুপ নিয়ে বাড়তি সচেতনতা আছে ওর। সবসময় সুন্দর দেখানোর জন্য অনেক কিছু মেইনটেইন করে। ওদের রান্না, খাওয়া নিয়েও নাক শিটকালো কদিন খুব। সব তরকারিতে তেল, মশলা বেশী খায়। সবজিতেও তেল কেন বেশী হয় এই নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিল শাশুড়ীর কাছে। রাহেলা এখন কম মশলায় রান্নার চেষ্টা করছেন। কিন্তু সেসব খাবার অন্যদের মন মতো হচ্ছে না।

“ভাইয়ার কী খবর? সে তো আসেই না। ”

“খুব ব্যস্ত ব্যবসা নিয়ে। বাড়িতে আসে মাঝরাতে।”

“এতো ব্যস্ততাও ভালো না কিন্তু। খেয়াল রেখো। ”

ইশিকা হেসে বলে,

“আরেহ না ভাবী। যত ব্যস্ত থাকুক, বউয়ের খোঁজ নিতে ভুল করে না।”

“ভালো তো। তা তুমি তোমার বন্ধুর বিয়েতে থাকলে না যে?”

ইশিকা এই ধরনের প্রশ্ন আশা করে নি। বলল,

“কেন তুমি জানো না? ওর সঙ্গে তো বন্ধুত্ব শেষ হয়ে গেছে। যখন ওর মতলব বুঝতে পারলাম, তখনই সবকিছু শেষ করে দিছি।”

“আচ্ছা। কিন্তু একটা সমস্যা আছে। ”

“কী সমস্যা? ”

“আমাকে সেদিন যে আংটি দিয়ে গেল সে নাকি তোমার বন্ধুর শাশুড়ী। আমার মন খচখচ করছে। কেউ গিফট দিলে রিটার্ন না দেয়া অবধি ভালো লাগে না।”

ইশিকা বিস্মিত গলায় বলল,

“ঝিলমিল কে গিফট পাঠাতে চাও?”

“ঝিলমিল কে তো আমি চিনি না। তবে সেই আন্টির ছেলের বউকে গিফট টা পাঠানো দরকার। ”

কিছু একটা ভেবে ইশিকার মুখ টা উজ্জ্বল হলো। বলল,

“খুব ভালো বলেছ তো। আমি মা’কে বলব। ”

“তোমার কেন বলতে হবে? আমিই বলব। কিন্তু ভাবছি আমি নিজেই যাব। আমি না গেলে ব্যাপার টা খারাপ দেখায়। তোমাকে সঙ্গে নিয়ে যাই? আম্মু তো মনে হলো খুব রাগ ওনাদের সঙ্গে। আম্মুকে নেয়া ঠিক হবে না। ”

ইশিকার উজ্জ্বল মুখটা ফ্যাকাসে হলো।

***
বউভাত শেষ হবার পর অনেকে চলে গেছে। কারোর স্কুল আছে, কারোর কলেজ আছে সেসব কারণে থাকা হলো না অনেকেরই৷ বাড়িতে এখন অল্প কয়েকজন মানুষ আছে। হৃদয়ের খালা আর তার ছেলেমেয়েরা আরও কিছুদিন থাকবেন। ঝিলমিল এতো দিন রান্নাঘরে যায় নি। মা কল করে বললেন, এখন রান্নাঘরে গিয়ে শাশুড়ীকে কাজে সাহায্য করতে। ঝিলমিল তেমন কাজ পারে না। রান্নাবান্না অল্প শিখেছে। ডিম ভাজা, ডাল, ভাত, মাংস রান্না এসব টুকটাক পারে। এই বাড়িতে সবাই সকালে রুটি, পরোটা খায়। এদিকে ওর রুটি মাঝেমধ্যে মালদ্বীপের মানচিত্রের সমান হয়। তবুও সংকোচ কে এক পাশে রেখে রান্নাঘরে গেল৷

জাহানারা রুটি করছিল। হৃদয়ের বাবা তার হাতের রান্না হলে ভালো করে পেট ভরে খান। অন্য কেউ রেঁধে দিলে অভিযোগ করেন না ঠিকই তবে অল্প করে খান। ঝিলমিল কে রান্নাঘরে দেখে জিজ্ঞেস করলেন,

“তোমার ক্ষুধা লাগছে? ”

“না না। আমি এমনিই এসেছি। ”

তিনি চেয়ার এগিয়ে দিলেন। বড় রান্নাঘর, ওদের মতো চাপা না। ঝিলমিল না বসে বলল,

“আমি কিছু করব?”

“না থাক। তুমি নতুন এখনো। তোমার এখনই কিছু করা লাগবে না। তোমার কাজ সেজেগুজে বসে থাকা।”

ঝিলমিল স্মিত হাসলো। শাশুড়ীকে ওর একটু ভয় লাগে, তার গলার স্বরও গম্ভীর। শ্বশুর রসিক ধরনের মানুষ। হাসি দিয়ে কথা বলেন, কথা বলার সময় অতো বাছ বিচার করেন না। হৃদয় ওর মায়ের গম্ভীরতা পেয়েছে পুরোটাই। রিহান সম্ভবত বাবার টা পেয়েছে৷ হৃদয়ের গম্ভীর স্বভাবের কারণেও বোধহয় অনেকে ও’কে ভয় পায়।

“তুমি ঘরে যাও। এখানে গরম অনেক। ”

“আমি চা করি৷ ”

জাহানারা একটু ভেবে বললেন,

“আচ্ছা করো। চা করতে তো তেমন ঝামেলা নাই। সংসারের ঝামেলা এখনই মাথায় নিও না, নতুন বিয়ে হইছে তো, পুরান হও, তারপর সংসারের ঝামেলা নিও। ”

ঝিলমিল হাসিমুখেই চা করতে গেল।

***
হৃদয় চায়ের কাপ হাতে নিয়ে ঘরে এসে বলল,

“শুনলাম তুমি নাকি রান্নাঘরে কাজ করতে গিয়েছিলে? মা তো দেখলাম খুব খুশি। ”

“হ্যাঁ। মা তো কাজ করতে দিলো না। ”

ঝিলমিল আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলে ব্রাশ করছিল। হৃদয় ওর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। তাকিয়ে আছে বেহায়া চোখে। এরকম তাকিয়ে থাকতো আনাস ভাইয়ের দোকানে বসে৷ ঝিলমিল এক দুইবার সেটা খেয়াল করেও বিরক্ত হয়েছিল। তখন তো ও জানতো যে আকাশের সঙ্গে ওর সম্পর্ক আছে। তবুও বেহায়া চোখে তাকিয়ে কেন থাকতো। তখন হৃদয়কে ওর ভালো মনে হতো না, শয়তান মনে হতো। সেটা কাউকে বলে নি, এখন তো আরও বলা যাবে না। ঝিলমিল জিজ্ঞেস করলো,

“কিছু বলবেন? ”

“তোমার আপনি বলা শুনে বিরক্ত লাগছে। ”

ঝিলমিলের ঠোঁটে আচমকা চলে আসা হাসিটা ও আড়াল করার চেষ্টা করে বলল,

“আপনার একটু বেশীই তাড়াহুড়ো। ”

“উঁহু একদম ভুল কথা। তাড়াহুড়ো তুমিই করেছিলে। আমি তো এখন বিয়ের জন্য রাজীই ছিলাম না।”

ঝিলমিল তাকালো হৃদয়ের দিকে। ও তাকিয়ে আছে। মনে আসা প্রশ্নটা করবে কী না সেটা নিয়ে একটু দ্বিধায় আছে। তবুও জিজ্ঞেস করলো,

“ইচ্ছে যখন ছিলো না, তখন রাজি কেন হলেন?”

“প্রথমে না বলেছিলাম যে! পরে ভাবলাম বিয়ের জন্য তুমি এতো ডেস্পারেট! ”

ঝিলমিলের গাল, নাক লাল হয়ে গেল মুহুর্তেই। হৃদয় ও’কে রাগিয়ে দেবার জন্যই কথাগুলো বলেছিল। ঝিলমিল আর কথা বাড়ালো না। বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। হৃদয় হাসলো আপনমনে।

হৃদয়ের মধ্যে তাড়াহুড়ো ব্যাপার টা আছে সেটা মিথ্যে নয়। একটা আমার আমার ব্যাপারও আছে। বিয়ের পর থেকে একটা ব্যাপার ওর মাথার মধ্যে ঢুকে গেছে। ঝিলমিল এখন ওর। ওর রাগ, অভিমান, হাসি, চোখের জল সবকিছুই ওর।

***
ঝিলমিল বিকেলে ঘুমিয়েছিল। হৃদয় কখন ওর পাশ থেকে উঠে চলে গেছে টের পায় নি। ঘুম ভাঙলো শাশুড়ীর ডাকে। দরজা খোলা পেয়ে উনি ঘরে ঢুকেছেন। ঝিলমিলের ঘুম ভাঙিয়ে বললেন,

“বাসায় মেহমান আসছে। তাদের বসাইয়া রাখা যায় না, তাই ডাকলাম। রাগ হইয়ো না।”

“না আম্মা। আমি আসছি ফ্রেশ হয়ে। ”

“একটা শাড়ি পইরো, সুন্দর করে সাজ দিও।”

ঝিলমিল ভাবলো হৃদয়ের আত্মীয়দের মধ্যে কেউ হবে। জাহানারার কথামতো শাড়ি পরে হালকা সাজলো। সাজ বলতে কাজল, লিপস্টিক আর শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে কিছু গয়না। বসার ঘরে যখন গেল তখনও ও স্বাভাবিক ছিলো। কিন্তু বসে থাকা তিনজনের দুজন কে দেখে নার্ভাস হলো। ইশিকা, রাহেলা আর অন্যজন চৈতী। চৈতীকে না দেখলেও ঝিলমিল বুঝতে পারলো যে কে হতে পারে! জাহানারা বললেন,

“তুমি আমার পাশে বসো। তোমারে দেখতে আসছেন তারা। ”

ঝিলমিল বসলো শাশুড়ীর পাশে। পায়ের পাতায় ঝিনঝিন অনুভূতি। কেউ কোনো কথা বলছে না। জাহানারা চৈতীকে বললেন,

“এই হইলো ঝিলমিল। আমার পোলা হৃদয়ের বউ। তুমি তো আগে দেখো নাই। ভাবী আর ইশিকা তো ছোট থেকে দেখছে। তোমাগো বাসার সামনের চুন কালারের বিল্ডিং টায় ওরা থাকতো। ইশিকার সাথে তো কলেজ পর্যন্ত পড়ছে। ”

চৈতী ঝিলমিলের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

“কেমন আছেন আপু?”

ঝিলমিল চমকে উঠলো। নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,

“আমি ভালো। আপনি? ”

“আলহামদুলিল্লাহ। ”

ঝিলমিল তাকালো চৈতীর দিকে। কমলা রঙের সালোয়ার কামিজ পরেছে। মুখটা গোলাকার, ফর্সা, চোখ দুটো ছোট। চুল রিবন্ডিং করা। দেখতে মিষ্টি লাগছে, হাসিটাও মিষ্টি। এই মেয়েটার কাছে ও’কে খারাপ ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে হয়তো, তবুও কেন আজ এখানে এলো। ঝিলমিল এক নজর পাশে বসা ইশিকার দিকে তাকালো। ইশিকার মুখটা থমথমে। নিশ্চয়ই ভয় পাচ্ছে। ঝিলমিল হঠাৎ বলল,

“আপনারা বসেন, আমি চা নিয়ে আসি। ”

জাহানারা বাঁধা দিয়ে বললেন,

“তুমি বসো। তোমার খালামনি নামাজ পড়ে চা, নাশতা নিয়া আসবে। ”

ঝিলমিল পালানোর চেষ্টা করেও পারলো না। তবে ও’কে অনেক টা বাঁচিয়ে দিলো রিহান। ও এসে ঝিলমিলের পাশে বসে রাহেলাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

“কাকী কেমন আছেন? অনেক দিন পর দেখলাম আপনাকে। ”

রাহেলা জোর করে হাসার চেষ্টা করে বললেন,

“দেখবা কেমনে। বাসায় আসলে তো কাকীদের খোঁজ খবর নাও না।”

জাহানারা তাল মিলিয়ে বললেন,

“ঘরে থাকে না। পায়ের নিচে চাক্কা নিয়ে কোথায় কোথায় যে ঘুরে। ”

রিহান ঝিলমিলের কানে আস্তে করে বলল,

“ভাইয়াকে কল করেছি। আসছে সে, তুমি রিলাক্স মুডে থাকো।”

ঝিলমিল অনেক টা নিশ্চিন্ত হলো। হঠাৎ ওর চোখ গেল চৈতীর দিকে। পলকহীন চোখে তাকিয়ে রইলো ঝিলমিলের দিকে। চোখাচোখি হতেই মিষ্টি করে হাসলো। একটু সুযোগ পেতেই বলল,

“আপু আপনার বিয়ের ছবিগুলো দেখান। ”

ঝিলমিল অপ্রস্তুত গলায় বলল,

“আমার ফোন টা তো…

রিহান বলল,

“আমি দেখাই। আমার ফোনে একশ, দেড়শ ছবি আছে।”

চৈতী উঠে এসে ঝিলমিলের পাশে বসলো৷ ঠিক তখনই ইশিকা তার মায়ের দিকে তাকালো। রাহেলা বিরক্ত চোখে দেখা ছাড়া কিছুই করতে পারছেন না। চৈতী ছবিগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে আর টুকটাক প্রশ্ন করছে। গায়ে হলুদের সাজ টা কোন পার্লার থেকে করেছে। ব্রাইডাল সাজ টা কেমন ছিলো৷ বউভাতের শাড়িটা জামদানী নাকি বেনারশী এই ধরনের প্রশ্ন। ঝিলমিল কে বিভ্রান্ত দেখালো একটু।

খানিক বাদেই হৃদয়ের খালামনি সাত রকমের নাশতা নিয়ে হাজির হলেন। নাশতা খাবার সময় কথাবার্তা, গল্পগুজব হলো খুব। রাহেলা স্বতঃস্ফূর্ত হতে পারছেন না। জাহানারা মিষ্টির প্লেট ধরিয়ে দিয়ে বললেন,

“এইটা খান, হৃদয়ের শ্বশুরে আনছে এইটা।”

রাহেলা মিষ্টির প্লেট হাতে নিয়ে শক্ত হয়ে বসে রইলেন। এরমধ্যে জাহানারা ইশিকার নেইলপেইন্ট দেখে প্রশ্ন করলেন,

“কিরে তুই নামাজ পড়স না। তালুকদার সাবে হজ্ব করছে আর তার মাইয়া নখে নেলপালিশ দেয়। ”

ইশিকা হতভম্ব মুখ করে বসে রইলো।

হৃদয় একটু দেরি করে ফেলেছে আসতে। ঘরে ঢোকামাত্রই চৈতী ও’কে সালাম দিলো। বলল,

“আপনাকে কিন্তু আমি চিনি। ওইদিন দেখছি, যেদিন আকাশের সঙ্গে ঝগড়া করতে গিয়েছিলেন। ”

পুরো ড্রইং রুম স্তব্ধ। জাহানারা বিস্মিত চোখে দেখলেন মেয়েটাকে। তাকে সবাই অসামাজিক বলে, এই মেয়েকে দেখলে কী বলবে! সেদিন বিয়ে করে এলো আর কী টকাস টকাস কথাবার্তা। শাশুড়ীর চুল টেনেটুনে ছিড়ে ফেলতে পারবে। জাহানারা সেটা ভেবেও আনন্দ পেলেন। রাহেলার খুব দেমাগ, বউও হয়েছে দেমাগি।

হৃদয় হেসে বলল,

“ভাবী, ঝগড়াঝাটি কিছু না। আর আকাশের সঙ্গে তো আমার ঝামেলা নেই কোনো। ইশিকা আমার বউকে নাকি অনেক আজেবাজে কথা শুনিয়েছে। আর আমার আবার মাথাগরম তো, এজন্য গিয়েছিলাম…. ইশিকা এতো বড় একটা দামড়ি মেয়ে, বিয়ে করে সংসার করছে অথচ ঝগড়া করে বেড়ায় আর বড় ভাই হিসেবে আকাশ বোনকে ম্যানারস শিখাতে পারে নি, তাই ওর উপর রাগ টা ঝেড়েছি। ”

ইশিকা উঠে দাঁড়ালো। রাহেলা স্থির হয়ে বসে আছেন। ইশিকা মায়ের উদ্দেশ্য বলল,

“আমি যাই মা৷ ”

রাহেলা ধমকের সুরে বললেন,

“বসো চুপচাপ। ”

ইশিকা মায়ের ধমক কে তোয়াক্কা না করে বেড়িয়ে গেল। চৈতী বলল,

“পুরানো ঝামেলা বাদ। এখন একবেলা আমাদের বাসায় ডালভাত খাবেন। কবে খাবেন বলেন? ”

হৃদয় বলল,

“বিয়ে তো আগে আপনাদের হইছে। আপনারা আগে ডালভাত খাবেন আমাদের বাসায়।”

“না ভাই, আমি দাওয়াত করতে আসছি। আপনি কিন্তু যান নাই। ”

“আমি তো আমার বিয়ের কার্ড পাঠিয়েছিলাম, মিষ্টিসহ। আপনারা ঠিক কী কারণে এলেন না? বিয়ের মেন্যুতে ডালভাত ছিলো না তাই? ”

“আচ্ছা ঠিক আছে। দেখা যাবে সব। ”

এরপর চৈতী ব্যাগ খুলে ঝিলমিলের হাতে আংটির বক্স, আর হৃদয়কে ঘড়ির বক্স দিলো। যাবার আগে ঝিলমিলের হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার নিয়ে গেল। ড্রইং রুমে ঘটে যাওয়া নাটকে নীরব দর্শকের ভূমিকায় থাকা রাহেলা চতুর চৈতীকে দেখে স্তম্ভিত হলো শুধু।

আর ঝিলমিলের মাথা ব্যথা শুরু হলো। এসব কী নাটক চলছে ওর সঙ্গে! হৃদয় ঝিলমিলের উদ্দেশ্যে বলল,

“কী করবে এখন? ডাল ভাত খাবার প্রিপারেশন নিবে?”

চলবে…..