কুন্দ ফুলের মালা পর্ব-১৮

0
16

#কুন্দ_ফুলের_মালা
#পর্ব-১৮
একটু আগে অনিন্দিতাকে বলা শব্দটা আকাশের মাথায় ঘুরেছে, কিন্তু শব্দটা যে বলা উচিত হয় নি সেটা বোধগম্য হতেই ও সরি বলল। অনিন্দিতা ঘরে চলে গেল। ফিরে এলো স্বাভাবিক পোশাক পরে। আকাশ দ্বিতীয়বার সরি বলে অনিন্দিতা কে অনুনয়ের সুরে বলল,

“আই নিড স্পেস অনিন্দিতা। ”

অনিন্দিতার শক্ত মুখ। এই শব্দটা অনেকের মুখে ও শুনেছে। আড়ালে অনেকেই বলে কিন্তু তাতে ওর যায় আসে না। কিন্তু ওর মুখোমুখি বসা মানুষটার মুখ থেকে আশা করে নি।

“তুমি আমাদের রিলেশনশিপ থেকে কুইট করতে চাইছ?”

“আমি শান্তি চাইছি। হৃদয়, ঝিলমিল, চৈতী, ঘরের ঝামেলা আর সেই সঙ্গে তোমার স্ট্রেস এসব থেকে মুক্তি চাইছি।”

“আমি কী করেছি আকাশ? আজ পর্যন্ত তোমার ক্ষতি হোক, এমন কিছু করেছি? ”

“না। তুমি আমাকে মেন্টালি অনেক হেল্প করেছ? আমাদের একটা দারুণ সময় কেটেছে, আমি মনখুলে তোমার সঙ্গে সবকিছু শেয়ার করেছি। আমি সম্পর্ক টা’কে অস্বীকার করছি না। ”

“তবুও আজ তোমার মুখ থেকে আমার জন্য বে*শ্যা শব্দটা বেরোলো!”

“আই এম সরি অনিন্দিতা। ইনটেনশনালি ওই শব্দটা তোমার জন্য ইউজ করতে চাই নি। আমি অনেক কিছু নিয়ে আপসেট, তাই…..

অনিন্দিতা শান্ত হলো আকাশের আত্মপক্ষ সমর্থনে। ও আকাশের পাশে এসে বসে হাত ধরলো। বলল,

“আমি তোমার লাইফে কোনো ঝামেলা করিনি। অপূর্ব’র ব্যাপার টা নিয়ে কিন্তু অনুতপ্ত। ছেলেটা বড় হয়েছে তো তাই আমার কথা শুনছে না।”

“সেজন্যই আমাদের উচিত লিমিটের মধ্যে থাকা। ”

“অবশ্যই। আমি আরও সচেতন হবো। ওর ও লেভেল শেষ হলেই ইন্ডিয়া পাঠিয়ে দেব দাদার কাছে। ”

আকাশ অধৈর্য্য গলায় বলল,

“আমি তোমাকে বোঝাতে পারছি না যে আমার এখন স্পেস প্রয়োজন। তোমার কাছে আসা আগে আমার জন্য আনন্দদায়ক মনে হলেও এখন মনে হচ্ছে কোনো টাস্ক। কিংবা কোনো প্রজেক্ট। না চাইতেও স্ট্রেস নিয়ে সেটাকে করতে হচ্ছে। ”

অনিন্দিতা মেনে নিতে পারে না। ওর চোখ ভরে যায় জলে। বলে,

“আমি তোমার খারাপ চাই না। কিন্তু আমাকে ছেড়ে দিও না।”

“না না। তোমাকে আমি ছাড়ব সেটা তো বলি নি। আমার এখন সময় দরকার মানে, কিছু মাস হয়তো আমি এখানে আর এলাম না। কিংবা যোগাযোগ কম রাখলাম। ”

“ঠিক কত মাস?”

আকাশ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

“আমি তোমাকে জানাব। ”

অনিন্দিতা ওর হাতের মুঠোয় থাকা আকাশের হাত টা আরও শক্ত করে ধরে রইলো। চোখের জলে যতটুকু আকাশকে গলানো যায় জানতো আজ সেটা ভুল প্রমাণ হয়েছে।

আকাশের মুখ থেকে স্ল্যাং শোনার পর প্রতিক্রিয়া অন্যরকম হওয়া উচিত ছিলো। অনিন্দিতার প্রশ্ন করা উচিত ছিলো আমি যদি বে*শ্যা হই তবে নিজেকে কী শব্দে বিশেষায়িত করছ! বে*শ্যার পুরুষবাচক শব্দ টা কী!

কিন্তু অনিন্দিতা যেকোনো ভাবেই চায় আকাশ ওর জীবনে থাকুক। স্বামীর সঙ্গে ওর এখন শুধু টাকার সম্পর্ক। সন্তানদের দেখভাল আর টাকা ছাড়া সেই মানুষটার প্রতি ওর আর কিছু অবশিষ্ট নেই। তিনি দেশে আসলে রান্না করে খাওয়ানোর কর্তব্য টুকু ছাড়া কিছুই করেন না। শেষ কবে বিছানায় এক সঙ্গে দুজন শুয়েছিল সেটাও মনে পড়ে না। অনিন্দিতা তার স্বামীকে ঘৃনা করে। কারণ লোকটা হারভাঙা খাটুনি করে কামলা ধরনের চেহারা বানিয়েছে। সেই লোকটাকে ভিডিও কলে দেখে প্রেম প্রেম অনুভূতি আসে না। যে সময়ে ওর আদর, ভালোবাসার দরকার ছিলো সেই সময়ে তিনি সংসার আর ছোট বাচ্চার দায়িত্ব কাঁধে চাপিয়ে ক্যাশ বানাতে চলে যান। অনিন্দিতা সুখ খুঁজে নিয়েছে অন্যভাবে। আকাশের আগে আরেকজন ছিলো। সুবীর নামে অপূর্ব’র এক কাকা। অনিন্দিতার মামাতো দেবর। তাকে ও ধরে রাখার চেষ্টা করে নি। বিয়ে করে বউ নিয়ে চলে গেছে ভারতে। এখন আকাশও ও’কে ছেড়ে চলে যাবে! আর ও কিছু করতে পারবে না!

আকাশ অনিন্দিতার বাসা থেকে বেরিয়ে এলো। সত্যিটা ও অনিন্দিতাকে বলতে পারে নি, তাই অন্যকিছু বলে ব্যাপার টা ম্যানেজ করে নিলো। আকাশ এই ঝুকিপূর্ণ লাইফ আর নিতে পারছে না। অনিন্দিতা হয়তো ব্যাপার টা মানতো না, তাই শান্তভাবে ব্যাপার টা বুঝিয়েছে।

আকাশ দিনের পর দিন একটা অনৈতিক সম্পর্ক চালিয়েও কখনো ন্যায়, অন্যায়ের তফাৎ সম্পর্কে ভাবে না। নিজের বিবেক বিসর্জন দিয়েও ওভার কনফিডেন্ট থাকে যে এই সত্যটা কখনো সামনে আসবে না। অথচ কথায় আছে সত্য কখনো চাপা থাকে না। অনিন্দিতার কথায় অগাধ বিশ্বাসও থাকে, যাদের কাছে ওর মুখোশ খুলে সত্যি রুপ ধরা দেয়, তাদেরও তেমন কোনো কিছু হাতে নেই যে ও’কে পরাস্ত করতে পারবে। কিন্তু আকাশ একসময় ভয় পেতে থাকে, এবং সম্পর্কটাও তিক্ত লাগতে শুরু করে।

টিপিক্যাল পুরুষ মেন্টালিটির কারণে আকাশের এখন মনে হচ্ছে যে ওর আর অনিন্দিতার গল্পে অনিন্দিতাই একমাত্র ভিলেন। ও জালে ফেসেছে। অথচ নিজের সে*ক্স হরমোন কে কন্ট্রোল করে অনিন্দিতা কে উপেক্ষা করার মতো সাহসী পদক্ষেপ নিতে পারে নি। রাহুলের সঙ্গে ওর দেখা, সাক্ষাৎ, যোগাযোগ কিছুই নেই। তবুও ওর একটা ভাবনা তৈরী হলো যে রাহুল নিজে বাঁচতে ও’কে বলি দিয়েছে। আসলে আকাশ মনে মনে প্রস্তত হচ্ছে যদি কখনো ঘটনাটি সামনে আসে তবে ও কিভাবে ভিক্টিম রোল প্লে করবে। অথচ এই সম্পর্কে অনিন্দিতার সাথে সাথে ও স্বতঃস্ফূর্ত ছিলো সমানই।

আকাশের জীবনে সবকিছু শান্তিপূর্ণ ভাবে চলছে। সংসার জীবনে যেটা ঝামেলা হতে পারে সেটা এই নিষিদ্ধ সম্পর্কটা। তাই এই সম্পর্কের একপাক্ষিক ইতি টেনে অনিন্দিতাকে সমস্ত সাইট থেকে ব্লক করে দিলো।

***
ঝিলমিল তার বিবাহিত জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়টি অতিবাহিত করছে। হৃদয় মানুষ হিসেবে একটু রাগী, জেদি হলেও স্বামী হিসেবে চমৎকার। ঝিলমিলের মনে হয় ওরা স্বামী, স্ত্রী না প্রেমিক, প্রেমিকা। যেভাবে আগলে রাখে, যত্ন নেয় তাতে স্বামী কম প্রেমিকই বেশী মনে হয়। যদি ক্ষমতা থাকতো তবে অতীতে প্রাক্তনের জন্য যে সময় টা নষ্ট করেছে সেটা ও হৃদয়কে দিয়ে দিতো। সুদর্শন, স্মার্ট পড়ুয়া ছেলেটার জন্য যে অনুভূতি প্রকাশ করেছিল সেটা না করে আড্ডাবাজ বাইক নিয়ে ঘোরা ছেলেটার জন্য রাখতো। হৃদয় ওর জেদকে প্রশ্রয় দেবার পাশাপাশি আরও একটা কাজ করে নিয়েছে ইতিমধ্যে। ঝিলমিলের ভাঙা মনের অনেকখানি জায়গা জুড়ে দখল করে নিয়েছে।

হৃদয়কে অনেকক্ষন না দেখলে, দেখতে ইচ্ছে করা, কল রিসিভ না করলে বিপদের কথা ভেবে ভয় পাওয়া, আবার চোখে চোখ রাখলে, স্পর্শ করলে উত্তেজনা, উন্মাদনা তৈরী হওয়া সবকিছু যে প্রেমের অনুভব ঝিলমিল জানে। হৃদয় হয়তো বুঝতে পারে, তাই ও’কে আয়োজন করে ভালোবাসি বলার প্রয়োজনও বোধহয় নেই। একই অনুভূতির সঙ্গে হৃদয়ও তো সমানভাবে পরিচিত।

***
দুই মাস পর

আকাশ নতুন ফ্ল্যাট দেখেছে। ফার্নিচার কেনা, ফ্ল্যাট রেডি হতে তিন মাসের একটা সময় নিয়েছিল। চৈতী ভীষণ খুশি কারণ স্বামী তার কথা শুনেছে। অন্যদিকে বাবা, মা দু:খ পেলেও সেটা প্রকাশ করে বিশেষ সহানুভূতি অর্জন করলো না। আকাশ সরাসরি তাদের দিকে আঙুল তুলে বলেছে যে তাদের ডিসিশনে ওর জীবনে অনেক ভুল হয়েছে। আর এখন নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নেবার মতো ম্যাচুরিটি ওর আছে তাই ও’কে কোনো ধরনের পরামর্শ দেবার দরকার নেই।

সবকিছু ঠিকঠাক করে সপ্তাহ খানেক এর মধ্যে নতুন বাসায় উঠবে। সুযোগ পেলেই চৈতী চলে যায় শপিং করতে। ঘর সাজানো শখের জিনিস কিনে ফেলে।

আজ আকাশ কে নিয়ে বেরিয়েছে আড়ংয়ে যাবে বলে। সন্ধ্যের পর গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছে। চৈতীর চাচা গাড়ি ফিরিয়ে দিয়েছে। আকাশ নির্লজ্জের মতো সেই গাড়ি ব্যবহার করলেও বাড়ির অন্যকেউ করে নি এখনো।

মিঠাপুকুর লেন থেকে গাড়ি বেরোনোর সময় চৈতী আকাশ কে বলল,

“এই জান একটু গাড়ি থামাও। ”

আকাশ গাড়ি থামিয়ে জানতে চাইলো,

“কিছু কিনবে? ”

গাড়িটা থেমেছে একটা স্টেশনারি দোকানের সামনে। চৈতীর বাইরে বেরোলে মুখ চলতে থাকে। চিপস, চকলেট, আইসক্রিম কিনে খেতে থাকে। চৈতী গাড়ির কাঁচ নামিয়ে একজন কে ডাকলো,

“এই আপু কেমন আছেন? ”

আপুটা আর কেউ নয়, ঝিলমিলই। টুটুলের ক্লাশমেট পিংকির সাথে হঠাৎ দেখা হওয়ায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলছিল। ঝিলমিল স্বর্নার বাসায় যাবে বলে বেরিয়েছে। আজ আবার স্বর্নাকে দেখতে পাত্রপক্ষ আসবে। ঝিলমিল প্রথমে খেয়াল করলো না। চৈতী এবার নাম ধরে ডাকলো,

“এই ঝিলমিল আপু!”

আকাশ হকচকিয়ে গেল। ঝিলমিল কে ও স্পষ্ট দেখে নি তাই প্রথমে বুঝতে পারে নি। ও চাপা গলায় বলল,

“ও’কে ডাকছ কেন?”

“ক্যান কী সমস্যা? জ্বলে নাকি?”

আকাশ দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

“মাইন্ড ইওর ল্যাঙ্গুয়েজ চৈতী। সিন ক্রিয়েট কোরো না। ”

চৈতী স্মিত হেসে গাড়ি থেকে নেমে গেল। ঝিলমিল শুনতে পেয়েও রেসপন্স করে নি। চৈতী গিয়ে বলল,

“শুনতে পাচ্ছেন না আমি ডাকছিলাম? ”

ঝিলমিল তাকালো। আজও একটা মিষ্টি হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে রেখেছে। কিন্তু ও’কে এক্ষুনি যে প্রশ্নটা করলো সেটা বলার ধরন কর্কশ স্বরে ছিলো।

“না। ওর সঙ্গে কথা বলছিলাম। ”

“কেমন আছেন? সেই যে দেখা হলো তারপর তো আর আপনাদের দেখিই না।”

ঝিলমিল বিরক্ত হলো। এই মেয়ে স্বামীকে গাড়িতে বসিয়ে ওর সঙ্গে খেজুরে আলাপ জুড়েছে। নিশ্চয়ই অন্য উদ্দেশ্য আছে। অপমান করতে চাইছে আবার! এদের তো একটাই কাজ। ঝিলমিলের রাগ হলো। এভাবে রাস্তায় অপমান করবে!

“আমি ভালো। ”

“কোথাও যাচ্ছেন?”

“হ্যাঁ। ”

“কোথায় যাবেন? চলেন নামিয়ে দেই। ”

ঝিলমিল হঠাৎ আগুন চোখে তাকিয়ে বলল,

“আমি হৃদয়ের জন্য অপেক্ষা করছি। ”

“আরেহ ভাইয়া তো আছেই সবসময় আপনার সেবায়। আজ আমাদের সাথে চলেন। আপনার ভাইয়া ড্রাইভার হিসেবে ভালো। ”

ঝিলমিল কঠিন গলায় বলল,

“আমি যাব না। আপনি যান এখন।”

চৈতী এবার ঝিলমিলের হাত ধরে বলল,

“আরেহ চলেন না!”

এই পর্যায়ে ঝিলমিল ধৈর্যহারা হয়ে চৈতীকে ধাক্কা দিয়ে বলল,

“আমি বললাম না যে যাব না। তারপরও হাত ধরে টানছেন কেন?”

চৈতী ধাক্কাটা সামলে উঠতে পারলো না। পড়ে গেল। আকাশ এতক্ষণ গাড়িতে বসে সবকিছু দেখছিল। চৈতীকে পড়ে যেতে দেখে বেরিয়ে এলো। ঝিলমিল প্রচন্ড চিৎকার করে বলল,

“অসভ্য, ইতরের দল কী চাস তোরা?”

চৈতী একাই উঠে দাঁড়ালো। স্টেশনারি দোকানে ছোট কিছু ছেলে ছিলো। ওরা দৌড়ে এলো৷ এতক্ষন ওরাও দেখছিল ব্যাপার টা। একজন এসে জিজ্ঞেস করলো,

“ঝিলমিল আপা কী হইছে?”

ঝিলমিল তখন রাগে কাঁপছে। বলল,

“আমার হাত ধরে টানা হ্যাচড়া করছে! কেন করছে জানিনা!”

আকাশ চৈতীকে ধরে গাড়িতে বসিয়ে গাড়ি স্টার্ট করে বেরোতে গেল। পাড়ার ছেলেপেলে গুলো গাড়ি আটকে দিলো। অল্পবয়সী ছেলেগুলো একটা উপলক্ষ্য পেয়েছে, তাই তারা ঝাপিয়েও পড়েছে।

***
রাত আটটা বাজে। হৃদয়দের বসার ঘরে বসে আছে সবাই। দুজনের বাড়ির লোক ছাড়াও পাড়ার কয়েকজন মুরব্বি। হৃদয় থম মেরে বসে আছে। ঝিলমিল নিজের ঘরে। স্বর্নাকে টেক্সট পাঠিয়ে জানিয়েছে যে ও যেতে পারছে না। ওর জীবনে এই একটা মাত্র সমস্যা আছে যেটা কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না।

জাহানারা আক্ষেপ করে কার কাছে যেন বলছেন,

“ওগো নজর খারাপ। একদিন আসছিলো বউ দেখতে। তারপর পনেরো দিন বউ বিছানা ছেড়ে উঠতে পারে না। বুঝেন কী জিনিস। তালুকদারের বউ তো কা*লনাগিনী। ”

হৃদয় স্থির হয়ে বসে আছে। আজ যেটা ঘটেছে সেটা মাত্রাতিরিক্ত ছিলো। আর তো চুপ করে বসে থাকা যায় না। হৃদয়ের আজ মারামারি করার মেজাজ ছিলো। কিন্তু সবাই মিলে সামলেছে। পাড়ায় দুজনের ঝামেলা আছে, দ্বন্দ আছে সেটা সবাই জানে। দুজন দুজনকে এড়িয়ে চলবে এটাও স্বাভাবিক তবুও কেন দুদিন পর পর নাটক হচ্ছে।

হৃদয় এতক্ষন ঝিলমিলের কাছে আসে নি। আজ ওর রাগ দেখে ঝিলমিলেরও ভয় লাগছে। ওই পরিস্থিতিতে যেটুকু প্রতিক্রিয়া ওর দেখানো উচিত সেটুকুই দেখিয়েছিল। হৃদয় আবার ওর উপর রেগে নেই তো!

ঘরে এসে শার্ট টা খুলে বিছানার উপর ছুড়ে মারলো। ঝিলমিল শুকনো ঢোক গিলল। ও বুঝতে পারছে না রাগ টা আসলে ওর জন্য নাকি শয়তান গুলোর জন্য।

ঝিলমিল পানির গ্লাস টা এগিয়ে দিয়ে বলল,

“পানি খাও।”

হৃদয় রাগী গলায় বলল,

“আমি পানি চেয়েছি?”

ঝিলমিল গ্লাস টা সরিয়ে রাখলো। হৃদয় দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

“এতো বড় সাহস ওদের! একেবারে খু*ন করে ফেলতে ইচ্ছে করছে। ”

ঝিলমিল স্মিত হাসলো। রাতের অনেকটা সময় ও হৃদয়ের এই রাগ দেখলো। একের পর এক সিগারেট ধরিয়ে ফেলে দিয়ে রাগের বহিঃপ্রকাশ করেছে, মাঝেমধ্যে আকাশ কে খুব খারাপ গালি দিয়েও রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। ঝিলমিল হৃদয়ের এই রুপ উপভোগ করেছে। ঘুমাতে যেতে বলায় আবারও ওর দিকে কঠিন চোখে তাকালো। এবারও ঝিলমিল খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে হৃদয়ের পাশে বসলো। কিছু সময় পলকহীন চোখে হৃদয়কে দেখলো। হৃদয় নরম গলায় জিজ্ঞেস করলো,

“কী?”

ঝিলমিল জবাবে কিছু বলল না। হৃদয়ের মুখ টা নিজের দিকে টেনে ওর ঠোঁটে গাঢ় একটা চুমু খেল।

চলবে…..