কুহকিনী পর্ব-০৩

0
4

#কুহকিনী
#হুমায়রা_শাম্মী
পর্ব সংখ্যা —-৩

নয়িম কলিংবেল বাজায়।জাবিন দ্রুত দরজা খুলে তাকে ভিতরে আসতে বলে।নয়িম রুমে ঢুকলে জাবিন দরজা বন্ধ করে দেয়।নয়িম বলল, “ফোন করে আসতে বারণ করলে কেনো?”

“আপনাকে এক ছেলে খুঁজছিল।ইমতিয়াজকে তারা ধরে নিয়ে গিয়েছে।ইমতিয়াজ নাকি কোন মেয়েকে কিড*ন্যাপ করে এনেছি?”

“তাকে ধরে নিয়ে গিয়েছে!!”

“তারা আপনাকেও সন্দেহ করছে।তাই আপনাকে তারা খুঁজছিল।আপনি কি সেটার মাঝে জড়িত? ”

নয়িম জাবিনের দিকে তাকায়।তার মুখের ভাব বলে দিচ্ছে নয়িম সেটাতে জড়িত না হোক।নয়িম চেয়ারে বসে বলল,” না,আমি তার বন্ধু বলে আমাকে হয়তো সন্দেহ করছে।”

জাবিন সেই সময়ের সবকিছু বিস্তারিত বলে।নয়িম মনে মনে বলল,” এটা তো টেনশনের বিষয়।ইমতিয়াজ তো খুব বিপদে আছে।কে জানত সাইমার ভাইয়ের এত ক্ষমতা। আমি একা তো তাকে উদ্ধার করতে পারব না।”

“তারা আবার আসতে পারে।আপনি কিছুদিন লুকিয়ে থাকুন।”

“আমি লুকাবো কেনো?আমি তো নির্দোষ। ”

“তবুও।আমি আপনাকে অনেক বিশ্বাস করি।আমি জানতাম আপনি কখনো এমন কাজে জড়িত হবেন না।”

নয়িম চেয়ার থেকে উঠে খাটে শোয়ে যায়।এটা চিন্তার বিষয়।সে ঢাকার স্হানীয় না।আর সাইমার পরিবার স্হানীয়। সে তো পড়াশোনার জন্য ঢাকায় এসেছিল।ইমতিয়াজ তার কলেজের বন্ধু। সেও নয়িমের সাথে একসাথে থেকে পড়াশোনা করে।ভার্সিটিতে উঠলে ইমতিয়াজ সাইমাকে পছন্দ করে।সাইমার রিজেক্ট করলে সে রাগান্বিত হয়।সাইমার হলুদ সন্ধ্যায় ইমতিয়াজ নয়িমকে নিয়ে তাকে কিড*ন্যাপ করতে যায়।ইমতিয়াজকে সে উদ্ধার করতে পারবে না।বাহাদুরের মতো যাওয়া বোকামি হবে।নয়িম ঠিক করে কিছুদিন চুপিচুপি থাকতে হবে।বন্ধু হিসাবে ইমতিয়াজের জন্য কিছু করবে না এমন নয়।সে চেষ্টা করবে।এতে যদি ইমতিয়াজের কোনো উপকার হয়।নয়িম খাট থেকে উঠে বসে।জাবিনকে বলল,” একটা কাজ করে দিতে পারবে?”

“কি কাজ?”

“যে ইমতিয়াজকে ধরে নিয়ে গিয়েছে তার ঠিকানা তোমাকে দিবো।তুমি সেই ঠিকানায় গিয়ে কোনো ভাবে জানতে পারবে ইমতিয়াজ কোথায় আছে।”

“আমি পারব না।আমি কিভাবে জানব!তাছাড়া সেই ছেলেটা আমাকে চিনে।আমাকে সন্দেহের তালিকায় রেখেছে।”

নয়িম কপালে দু’টি আঙুল রেখে বলল ,”এখন কি করব?”

_________________________
বড় জ্যামে তানিম পড়েছে।সে বিরক্ত হয়।ইমতিয়াজকে জেলে পাঠাঁনোতে সে অপেক্ষা করতে পারছে না।পুলিশকে মোটা অংকের কিছু টাকা দিবে।যাতে সে কখনো জেল থেকে বের হতে না পারে।
ইমতিয়াজ জিপে বসে আছে।পিছমোড়া করে হাত বাঁধা।সূর্যের তেজি তাপে তার শরীর থেকে ঘাম বের হচ্ছে।গলা শুকিয়ে আছে।একটু পানি হলে ভালো হবে।ইমতিয়াজ সামনের গাড়ির দিকে তাকায়।সাইমার অর্ধেক মুখ দেখা যাচ্ছে।ইমতিয়াজ দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।তার জন্য কি অপেক্ষা করছে সে তা জানে না।তার পরিবার অনেক আশা নিয়ে তাকে ঢাকায় পাঠিঁয়েছে।ছেলে পড়াশোনা করে বড় চাকরি করবে।কিন্তু এটা হলো কোথায়।ঘরে বিয়ের উপযুক্ত বোন আছে। তাকে বিয়ে দিতে হবে।ছোট ভাই আছে।তার বাবা এত বড় সংসারের হাল ধরতে কষ্ট হয়।ইমতিয়াজের মন কেঁদে উঠে।যদি তারা জানে তাহলে কত কষ্ট পাবে।ইমতিয়াজ আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল, “আল্লাহ একটা সুযোগ দাও।আমাকে বাঁচাও।আমার নামে মামলা যদি হয় তাহলে বাবার এত টাকা নেয় যা দিয়ে মামলা চালাবে।তুমি বাঁচাও।”

জ্যাম ছুটছে না।তানিম একজনকে সেভেন আপ কিনতে পাঠাঁয়।ইমতিয়াজ পাশে যে লোকটা বসা ছিলো সে কিনতে যায়।ইমতিয়াজ একটু হলেও সুযোগ পায়।জিপ থেকে লাফ দিয়ে পড়ে।তার পাশের জন চিৎকার করে বলল,” ভাই পালাচ্ছে। ”

ইমতিয়াজ জ্যামের মাঝ দিয়ে দৌড়াতে থাকে।তার পিছনে তানিমের লোকেরা।পিছনে হাত বাঁধায় সে তেমন দৌড়াতে পারছে না।সে ব্রিজের কাছে থেমে যায়।তার চেয়ে একটু দূরে তানিমের লোকেরা। ইমতিয়াজ ব্রিজ থেকে লাফ দেয়।নিচ দিয়ে লঞ্চ যাচ্ছিল।ইমতিয়াজ সেটার ছাদে পড়ে।তানিম তার পালিয়ে যাওয়া দেখতে পায়।সে রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে।সে অবশ্যই ইমতিয়াজকে শাস্তি দিয়ে ছাড়বে।

“হ্যালো কে?”

ওপাশ থেকে ব্যথায় আহ শব্দ শুনা গেলো।সাথে লঞ্চের শব্দ।ইমতিয়াজ বলল,” নয়িম, আমি।”

নয়িম খুশি হয়।মুখে খুশির আভাস রেখে বলল,” তুই ঠিক আছিস?”

“হ্যাঁ,আমি পালিয়েছি।চিন্তা করিস না।”

“কোথায় তুই?”

“লঞ্চে,দেখি কোথায় নিয়ে যায়।রাখি,এটা আমার ফোন না।শুন তুই কিছুদিন লুকিয়ে থাক।তারা খুব ভয়ানক। তোকেও ছাড়বে না।”

নয়িম কিছু বলতে নেয়।কিন্তু তার আগে ফোনের লাইন কেটে যায়।

__________________________

তুবা দরজা খুলে।অপরিচিত কাউকে দেখে বলল, “কাকে চায়?”

ইমতিয়াজ মেয়েটার দিকে তাকায়।কত বড় হয়ে গিয়েছে। ছবিতে একবার দেখেছিল।ইমতিয়াজ তার পা চেপে ধরে বলল,” আমি ইমতিয়াজ। তোমার ভাইয়ের বন্ধু। তুমি আমাকে চিনবে না।”

মেয়েটা সন্দিহান দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে বলল, “বাড়িতে কেউ নেয়।আপনি বাহিরে অপেক্ষা করেন।”

–আচ্ছা।
তুবা দরজা লাগিয়ে দেয়।ইমতিয়াজ অপেক্ষা করতে থাকে।তার বন্ধু খায়ের তাকে দেখে কেমন অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে পারে?খায়ের তার এত কাছের বন্ধু না।তাই ইমতিয়াজ সন্দিহানে আছে।ব্রিজ থেকে লাফ দিয়ে পড়ায় ইমতিয়াজ পায়ে ব্যথা পেয়েছে।তাই দাঁড়িয়ে থাকতে তার কষ্ট হচ্ছে। ইমতিয়াজ ভাবল একটা চেয়ার চেয়ে নিবে।কিন্তু পরে চায় নি।ইমতিয়াজ একটু দূরে খায়েরকে দেখতে পায়।খায়ের তাকে দেখে কতক্ষণ দূরে দাঁড়িয়ে থাকে। পড়ে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে বলল,” তুই কতদিন পর।আমার কত ভালো লাগছে।তা এতদিন পর আসতে ইচ্ছে করল।”

“হ্যাঁ,তোর আমার কথা মনে আছে?আমি তো ভাবলাম পাঁচ বছরে তুই অনেকটা আমাকে ভুলে গিয়েছিস।”

“এই কথা তোকে আমি বলব।এখন তুই বলছিস।চল ভিতরে যাই।তোকে তুবা ভিতরে ঢুকতে দেয় নি?তুই তাকে বলেস নি তুই আমার বন্ধু হস?”

–বলেছি।

“দাঁড়া তুবাকে মজা দেখাচ্ছি। ”
খায়ের কলিংবেল বাজায়।তুবা দরজা খুললে সে তুবার কান টেনে ধরে বলল, “তুই তাকে ভিতরে ঢুকতে দিলি না কেনো?”

“ছাড়ো ব্যথা লাগছে।”

“আগে বল ঢুকতে দিলি না কেনো? ”

“আমি তোমার সব ফ্রেন্ডদের চিনি। তাকে চিনতে পারিনি বলে ঢুকতে দেই নি।”

ইমতিয়াজ বলল,” ছাড় তাকে।অপরিচিত কাউকে তোর বোন কেনো ঢুকতে দিবে।”

খায়ের তাকে ছাড়ে।ইমতিয়াজ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে থাকে।তা দেখে খায়ের বলল, “তোর পায়ে কি হলো?”

“ব্যথা পেয়েছি।”

“এতক্ষণ পায়ে ব্যথা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলি?”

–হ্যাঁ,

খায়ের রাগে বোনের দিকে ফিরে বলল,” অন্তত তাকে বসতে চেয়ার দিতি।”

“স্যরি ভাই।”

খায়ের তাকে নিয়ে নিজ রুমে ঢুকে।ইমতিয়াজ রুমের এদিক সেদিন বাচ্চাদের কাপড় ছড়িয়ে থাকতে দেখে বলল, “তুই বিয়ে করেছিস?”

“হ্যাঁ,আমার পাচঁ বছরের বাচ্চা আছে।”

“বউ কোথায়? ”

“ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে একটু গিয়েছে। এখনি চলে আসবে।তুই আজ থাকবি বুঝলি।”

“থাকতেই আসছি।”

ইমতিয়াজকে ছাদে যাওয়ার সিঁড়ির কাছের রুমে থাকতে দেওয়া হলো।ইমতিয়াজ খাবার খেয়ে শোয়ে পড়ে।খুব বেশি ক্লান্ত লাগছে।বাড়িতে সে ফোন করে বলেছে তার ফোন নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তাই না কেনা অব্দি অন্যের ফোন দিয়ে কল করবে।

ইমতিয়াজ দরজার ওপাশ থেকে তুবার কণ্ঠ পায়।সে কাউকে বলছে, “এই মেহমান ভালো না বুঝলি রাফি।সে মজা আনে নি।”

ইমতিয়াজ কথা বলার ধরণ দেখে বুঝতে পারে সে কোনো বাচ্চা ছেলের সাথে কথা বলছে।নাম শুনে নিশ্চিত হয় খায়েরের বাচ্চার সাথে কথা বলছে।তুবা আরো বলল, “এই পঁচা মেহমান মজা আনে নি।তুই তার কাছে যাবি না।”

ইমতিয়াজ এমন কথা শুনে হাসল।তবে তখন নিজের মনে কিঞ্চিৎ লজ্জা হয়।হাতে কিছু আনার দরকার ছিলো।কিন্তু পকেটে সীমিত টাকা ছিল।এটা দিয়ে অন্য কিছু আনতে পারে নি।ইমতিয়াজ কাঁথা দিয়ে মুখ ঢাকে।কোনো চকলেট তো আনতে পারত।দরজায় করাঘাত হয়।ইমতিয়াজ আসতে বলে।তুবা রাফিকে নিয়ে রুমে ঢুকে।তুবার হাতে নুডলস। সে খাটে প্লেট রেখে বলল, “ঘুমানোর আগে এটা খেয়ে নিন।”

“তোমরা শোয়ার আগে নুডলস খাও?”

“না,তবে সন্ধ্যা রান্না করা হয়েছিল।আপনি ঘুমিয়ে ছিলেন তাই দেই নি।পরে মনে ছিল না।এখন যেহেতু মনে হয়েছে তাই নিয়ে আসছি।”

“বাসি খাবার খাওয়াচ্ছ?”

“বাসি হবে কেনো?সন্ধ্যায় রান্না করেছি।এখন রাত দশটা বাজে।আমি গরম করে এনেছি।”

“তোমরা খেয়ে নাও।আমি কিছু আনতে পারলাম না।তাই এটা তার বদলে খেয়ে নাও।”

রাফি বলল, “আমাদের খাবার আমাদের খেতে বলছেন।ফুপি ঠিক বলেছে আপনি পঁচা। ”

ইমতিয়াজ লজ্জা পায়।তুবা সেটা দেখে মৃদু হাসল।রাফিকে নিয়ে চলে যায়।ইমতিয়াজ কাঁথা দিয়ে মুখ ঢেকে বলল,” আমি কেনো এটা বলতে গেলাম।”

চলবে,,,,,,