কৃষ্ণডাহুক পর্ব-২১+২২

0
317

#কৃষ্ণডাহুক – ২১
আয়ানা আরা (ছদ্মনাম)

মানুষ যতই পরীক্ষা দিক! যতই পারুক কিন্তু পরীক্ষার হলে প্রবেশ করলে মানুষের মধ্যে ভীতি কাজ করবেই! মীরার ক্ষেত্রেও তাই! ভয়ে বারবার ঘাম ঝরছে মীরার। ভীতি কাটাতে কাটাতে ইতিমধ্যে এক প্যাকেট টিস্যুও শেষ। পরীক্ষা শুরু না হওয়ার দরুন আদ্রিক সেসময় মীরার পাশেই ছিলো। পরীক্ষা শুরু হতে আরো আধা ঘন্টা বাকি। তারা দুজনেই বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে। আদ্রিক বারবার মীরাকে দেখছে, ভয়ে মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে আছে। অস্থির দৃষ্টি মীরার। আদ্রিক মীরাকে অভয় দিয়ে বলল,’ আরে! ভয় পেও না। সামান্য একটা পরীক্ষাই তো! এতো ভয় পেলে আবার সব ভুলে যাবে তুমি। ‘

‘ এই একসপ্তাহ কানের কাছে এসে চব্বিশ ঘন্টাই বলেছেন,’পরীক্ষা কিন্তু সহজ হবে না, ভালো করে প্রস্তুতি নাও। নাহলে কিছু পারবে না।’ এগুলো বলার পর আপনার মনে হয় আমি শান্ত থাকতে পারবো?শান্তিতে পরীক্ষা দিতে পারবো? নিজেই ভয় দেখিয়েছেন এখন আবার নিজেই বলছেন ভয় না পেতে! ‘

মীরার কথায় আদ্রিক বোকা হাসলো,বলল,’ ওটা আমি তোমাকে এমনিই বলেছিলাম যাতে তুমি ভয় পেয়ে পড়ো ভালো করে। ‘

মীরার রাগ লাগলো আদ্রিকের উপর খুব! লোকটা তো পল্টিবাজ! কথার ছলে কিভাবে পল্টি নিয়ে নেয়! মীরা কিছু বলবে তার আগেই আদ্রিক বলল,’ দেখো তোমার পরীক্ষা শুরু হতে আর মাত্র পঁচিশ মিনিট বাকি। এখনই ভেতরে যাওয়া উচিত তোমার। পরীক্ষার্থী যদি পরীক্ষার দশ মিনিট আগে যায় কেমন দেখায়? তাই এখনই যাও।’

আদ্রিকের দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকালো মীরা। দাঁতে দাঁত চেপে ভেতরে চলে গেলো। মীরার যেতেই আদ্রিক স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো!

_

মীরা সবে পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে মনমরা ভাব নিয়ে। আদ্রিক তা দেখলো,বুঝলো হয়তোবা! মীরার কাছে যেয়ে না বুঝার ভাণ করে বলল,’ কেমন দিয়েছো পরীক্ষা? ‘

মীরা ছলছল দৃষ্টিতে তাকালো আদ্রিকের দিকে। তা দেখে আদ্রিক থতমত খেলো, পিটপিট করে বলল,’ কি হয়েছে? ‘

‘ মনে হয় চান্স পাবো না। ভালো হয়নি পরীক্ষা। ‘
‘শুধু শুধু চিন্তা করছো তুমি! চান্স পেতেও পারো। ‘
মীরা প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে বলল,’ রেজাল্ট কবে জানি দিবে? ‘

‘ এই সপ্তাহ’র মধ্যেই দিয়ে দিবে। ‘

_

‘ আদ্রিকের সাথে তোমার এতো কি মীরা? বেশ অনেকদিন ধরেই আমি লক্ষ্য করছি। ‘
অরিনের রাগী কণ্ঠস্বর। মীরা কে হচকিয়ে তুললো,পরক্ষণেই অরিনের কথার অর্থ বুঝতে পেরে মীরার রাগ হলো খুব, কঠিন কণ্ঠে অরিনকে বলল,’ আমার তোমার সাথে কোনো সম্পর্ক নেই যে তোমাকে আমার কৈফিয়ত দিতে হবে। আর তারচেয়েও বড় কথা আমাকে প্রশ্ন করার কেউ নও তুমি! ‘

অরিন মীরার কথায় হাসলো, বলল,’ কথাটা কিন্তু ছোট মুখে এতো বড় কথা প্রবাদটার সাথে মিলে গেলো মীরা৷ এই বাড়ির খেয়ে এই বাড়ির পড়ে তুমি এই বাড়ির ছেলের সাথে রংঢং করছো?ঢলাঢলি করছ?এতিম মেয়ে বলে কি বড়লোকের গলায় ঝুলে পড়তে চাইছো?’

‘ আমি এই বাড়ির খাই, এই বাড়ির পড়ি কিন্তু আমি তোমার খাই না তোমার পড়িও না। তো তোমার কোনো অধিকার নেই আমাকে কথা শোনানোর!আর এতিম বলে বড়লোকের গলায় তোমার মতো ঝুলে পড়তে চাওয়ার মন-মানসিকতা আমার নেই। নিজেকে আমার সাথে গুলিয়ে ফেলো না। ‘

মীরার এহেন জবাবে অরিন থতমত খেলো বেশ! রাগী দৃষ্টিতে তাকালো মীরার দিকে। মীরাকে যেনো চোখ দিয়েই গিলে খাবে। অরিন জানে মীরার সাথে সে কথায় কখনো পারবে না শুধু শুধু যেচে পড়ে অপমান হওয়া ছাড়া। মটমট দৃষ্টি মীরার দিকে তাকিয়ে অরিন যেতে যেতে বলল,’ আদ্রিকের থেকে দূরে থাকো নয়তো তোমার এই বাড়ি ছাড়ার ব্যবস্থা করছি আমি! একদম পথে বসে যাবে। ‘

মীরার কোনো হেলদোল দেখা গেলো না অরিনের কথা শোনেও। মীরার হাত পা রাগে অসম্ভব রকমের কাঁপছে। পরীক্ষা শেষে আদ্রিক তাকে বাড়ি দিয়ে কাজে চলে গেলো তা হয়তোবা অরিন বারান্দা দিয়ে দেখেছে তাই সবটা না জেনেই তাকে এতোগুলা কথা শুনিয়ে চলে গিয়েছে।

ক্লান্ত দেহ নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো মীরা। এতো অশান্তি নিতে পারছে না সে। ভার্সিটিটায় চান্স পেয়ে গেলে একটা কিনারা হবে তার! পাশাপাশি স্কুল আর দু/তিনটে টিউশনি জোগাড় করতে পারলেই বিন্দাস দিন চলে যাবে তার। তার আগে ভার্সিটিতে চান্স পাওয়াটা জরুরি! শেষে দেখা গেলো ভার্সিটিতেই চান্স হলো না তাহলে সব আশা ভরসা ভেঙে যাবে, শেষ কূল কিনারাও হারিয়ে ফেলবে।

_

পরপর তিনদিন কেটে গেলো। চোখের পলকেই যেনো রেজাল্টের দিন চলে এলো। সকাল থেকেই মীরা ভয়ে উশখুশ করছে। দুপুর ১২ টায় রেজাল্ট প্রকাশিত হবে। এখন বাজে ১১:৫৫! আর মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যেই রেজাল্ট প্রকাশিত হবে হয়তো এর আগেই হয়ে যাবে প্রকাশিত। আদ্রিককে এ নিয়ে বেশ ভাবলেশহীন দেখাচ্ছে অথচ আদ্রিককেই চিন্তিত হওয়া উচিত ছিলো। এই নিয়ে মীরা বেশ অবাক হলেও যেচে কোনো প্রশ্ন করলো না। বারোটা বেজে গেলো এখনো রেজাল্ট দেখতে পারেনি মীরা। না পেরে আদ্রিককে বলল,’ রেজাল্ট এখন পাবলিশ হয়নি? বারোটা তো বেজে গিয়েছে। ‘

‘ অপেক্ষা করো, কোনো প্রবলেম হয়েছে তো। ‘ ভাবলেশহীন হয়ে জবাব দিলো আদ্রিক। মীরা অবাক হলেও মুখে কিছু না বলে চিন্তিত ভঙ্গিতে বসে রইলো তা দেখে আদ্রিক বলল,’ চিন্তা করো না, চান্স হয়ে যাবে। ‘

মীরা আড়চোখে আদ্রিককে দেখলো তখনই ওয়েবসাইটে রেজাল্ট দেখা গেলো। মীরা উৎসুক হয়ে ল্যাপটপের দিকে তাকালো নিজের নামের আশায়। আচমকা নিজের নামটা চোখে পড়ায় উত্তেজিত হয়ে গেলো মীরা! লাফিয়ে উঠলো আনন্দে। আদ্রিক তা দেখে হাসলো। মীরা পরক্ষণেই গম্ভির স্বরে বলল,’ মীরা হুমায়ূন? মানে কি এর? ‘

‘ তোমার নামের আগে পিছে কোনো সারনেম ছিলো না তাই ভাবলাম হুমায়ূন নামটাই দিয়ে দেই। এর জন্য পুনরায় আমার বার্থ সার্টিফিকেট বানানো লেগেছে কত কষ্টে! জানো তুমি? ‘

মীরা আরো কিছু বলবে তার আগেই আদ্রিক তাকে থামিয়ে বলল,’ চান্স পেয়েছো তার খুশি উদযাপন না করে তুমি আমাকে প্রশ্ন করা শুরু করেছো কেনো? ‘

আদ্রিকের কথায় মীরা হাসলো, মন খুলে হাসছে মীরা! আদ্রিক তা দেখে ঠোঁট প্রসারিত করলো। দরজার আড়াল থেকে কেউ তা দেখে বিশ্রী পরিকল্পনা তৈরি করলো!

চলবে?

#কৃষ্ণডাহুক – ২২ | অতিরিক্ত পর্ব |
আয়ানা আরা (ছদ্মনাম)

মা সম মানুষটা যখন ভালোবেসে কাছে ডাকে না। আগের মতো মা বলে আদর করে না তখন ভীষণ কষ্ট লাগে। মীরার ক্ষেত্রে সেই কষ্টটা একটু বেশিই। সারাজীবন না পেলো মা বাবার ভালোবাসা আর না বিয়ের পর পেলো দিত্বীয় মা অর্থাৎ শাশুড়ির ভালোবাসা। কিন্তু এখানে আসার পর ভেবেছিলো হয়তো মার অভাবটা পূরণ হবে! কিন্তু তার কপালে যে সুখ সয় না বেশিদিন! একটা মা পেতে না পেতেই হারিয়ে ফেললো মীরা। মার্জিয়া বেগমের অবহেলা সহ্য হচ্ছে না মীরার! তার সাথে কথা না বলা অবধি হয়তো সব ঠিক ছিলো কিন্তু যেদিন মার্জিয়া বেগম হুট করে তার কাছে এসে বললেন,’ মীরা, প্রথমেই দুঃখ দেওয়ার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আমার মনে হয় এই বাড়িতে তোমার থাকা উচিত না। তুমি অবিবাহিত এক মেয়ে বাড়িতে আবার অবিবাহিত পুরুষ আছে। অবিবাহিত মেয়ে আর অবিবাহিত পুরুষ একত্রে হলে কি হয় নিশ্চয়ই জানো? তোমাকে আর ব্যাখা দেওয়ার দরকার মনে করছি না৷ তুমি আমার মেয়ের মতোই, তবে এই বাড়ির মেয়ে নও। আমি নিশ্চয়ই চাবো না বাহিরের মেয়ের জন্য আমার বাড়ির পুরুষেরা পথভ্রষ্ট হোক! ‘

মার্জিয়া বেগমের কথায় মীরা হতবাক, নির্বাক হয়ে তাকালো। হতবিহ্বল চাহনিই জানান দিচ্ছে সে কতোটা অবাক হয়েছে মার্জিয়ার কথায়। সুখ বুঝি এতো তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাবে? মীরা মনে মনে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো, বুক চিড়ে এক দলা কান্না এলেও নিজেকে সামলালো! নিজেকে শক্ত, নির্বিকার রাখলো। যেনো এই মূহুর্তে কিছুই হয়নি, শান্ত চোখে বলল,’ জ্বী, বুঝেছি। অনেকদিন ধরেই ভাবছিলাম বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো পায়ের নিচের মাটি শক্ত না থাকায়, তখনই যেতে পারিনি। এখন ভার্সিটিতে যাচ্ছি সহজেই বন্ধুদের সাথে মেসে উঠতে পারবো। ‘

মার্জিয়া বেগম স্মিত হাসলেন, উজ্জ্বল হাসির রঙ। তিনি যেতে যেতে বললেন,’ গোছগাছ করা শুরু করে দিও, তাড়াতাড়ি না গেলে তোমার জায়গা আবার কেউ নিয়ে নিলে সমস্যা। মেহমান হয়ে এসেছো যেহেতু এই বাড়িতে সেহেতু মেহমান হয়েই যাবে তুমি! আপ্যায়নের ত্রুটি রাখবো না। ‘

মীরা গম্ভির মুখে তাকিয়ে রইলো। ভার্সিটিতে যাচ্ছে আজ একমাস! অবাক করা বিষয়! সেদিনই ভর্তি হলো, সময় এতো দ্রুত কেটে গেলো যে ইতিমধ্যে একমাস চলে গিয়েছে। মীরা জানতো এমনই দিন আসবে যেদিন মার্জিয়া বেগম নিজেই বলবেন তাকে চলে যেতে। এই দিনের জন্য গত একমাস ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। নিজের ভার্সিটির দুজন নতুন বান্ধুবিকে বলে তাদের সাথে মেসে উঠার পরিকল্পনা করলো। এটাতে তেমন দখল হয়নি কিন্তু দখল হলো টিউশনি খুঁজতে। অনেক কষ্টে তিনটে টিউশনি জোগাড় করতে পেরেছে মীরা। তিনটে টিউশনি থেকেই মোট মাইনে সাত হাজার। যা দিয়ে মোটামুটি চলে যাবে তার। অনন্ত হুমায়ূনের স্কুল চাকরীটাও ছেড়ে দিবে মীরা। এখনো এসব কিছু আদ্রিক জানেনা। যা করেছে তার আড়ালেই করেছে। কারণ আদ্রিক জানলে এইসব কখনোই হতে দিবে না। মীরাও বলেনি আদ্রিককে! প্রয়োজন মনে করেনি।

এতোকিছুর পর মীরা ঠিক করলে আগামীকালই সে মেসে উঠবে। আর কিছুদিন তাদের ঘাড়ে বসে খেতে পারবে না সে, গলা দিয়ে না এই বাড়ির খাবার নামবে আর না এই বাড়ির পানি! কাল থেকে শুরু করে তার আসল সংগ্রাম! বেঁচে থাকার সংগ্রাম!

_

‘ মীরা, চলে যাচ্ছো? বলেছিলাম একবার আদ্রিকের থেকে দূরে থাকো নয়তো এই বাড়ি ছাড়া করবো তোমাকে। শোনোনি আমার কথা সেহেতু পঁচতাতে তো হবেই। ‘

অরিনের টিটকারি মারা কথা শোনে মীরা হাসলো। বলল,’ আমি তো আগেই বুঝেছিলাম এইসবের পেছনে তোমার হাত আছে কিন্তু বুঝেও কিছু বললাম না! তুমি এই বাড়ির হবু বউ যা খুশি করতেই পারো! ‘

অরিন হাসলো মীরার কথায়, বিশ্বজয়ের হাসি, বলল,’ বাড়ি থেকে চলে যাচ্ছো বলে কিন্তু আমাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করো না মীরা। আমার আর আদ্রিকের বিয়েতে আসতে হবে না বুঝি তোমায়? ‘

মীরা ভ্রুঁকুচকে তাকালো অরিনের দিকে। মীরার থেকে কোনো জবাব পেলো না বিধায় অরিন নিজেই বলল,’ আমাদের বিয়েতে আসার ইচ্ছে না থাকলেও তোমায় আসতে হবে মীরা! তুমি দেখবে কিভাবে আদ্রিককে আমি পাই! সেদিন তোমার আফসোসের শেষ হবেনা! তুমি ভাববে আদ্রিকের মনের কোণে বাস করেও তার ঘরের কোণে থাকার জায়গাটুকু হারিয়েছো। ‘

অরিনের কথায় মীরা শব্দ করে হাসলো। এখানে যেনো দু মানবীর প্রতিযোগিতা চলছে! মীরা তাচ্ছিল্য হেসে বলল,’ জানো, পৃথিবীতে দু ধরণের এতিমেরা বাস করে, এক ধরণের এতিম আমার মতো হয় আর আরেকধরণের এতিম তোমার মতো হয়। ‘

বলেই মীরা ব্যাগ নিয়ে হাঁটা ধরলো। সেদিক তাকিয়ে রইলো অরিন। আদ্রিক আজ একসপ্তাহ হলো বন্ধুদের সাথে ঘুরতে গিয়েছে দূরে কোথাও তাই বাড়ির কোনো খবরই তার কাছে নেই! কেউ দেয়ও নি!

মীরার যেতেই বাড়িটা আবার মৃত রূপে রুপান্তরিত হলো। সবাই জানে এবং দেখলো মীরা চলে যাচ্ছে কিন্তু কেউ কিছুই বললো না, মার্জিয়া বেগমের আদেশ! সাহিল হুমায়ূনও দেখলেন, কিন্তু প্রতিবাদ করার আগ্রহ পেলেন না! তার মনে হলো মেয়েটা এখানে থাকলে কষ্টই পাবে সবার থেকে, এর চেয়ে বরং বাহিরের দুনিয়া ঘুরুক! রঙিন জীবনটা উপভোগ করুক!

_

ঘড়ির কাটা টিক টিক শব্দ করে রাত্রি এগারোটায় ছুঁলো। ক্লান্ত দেহ নিয়ে বিছানায় ছুঁয়ে আছে মীরা। চোখে ঘুম নেই, আনমনা ভাব নিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিছানায় শুঁয়ে আছে। চোখ ঘুর্ণায়মান ফ্যানের দিকে। জীবনটা কিভাবে যেনো চোখের পলকেই বদলে গেলো! জীবন মানেই হয়তো এটা, ভাগ্যের কোনো এক প্রান্তে এসে আচমকাই তার মোড় ঘুরে যায়। মোড় গুলো তাকে খুব চিকন সরু পথের মতো। তাতে হাঁটতে হাঁটতে পরে গেলেই জীবনে হেরে যাবে আর যদি বুদ্ধির সাথে হাঁটো, সবকিছুর মোকাবিলা করো তাহলে এই জীবনের আসল বিজয়ী তুমি! না থেমে, না হেরে বুদ্ধির সাথে সবকিছুর মোকাবিলা করলে একসময় সকল অর্জন তোমার হাতে! নিজের জীবনটা তোমার হাতে থাকবে, একবার সফল হলে এই জীবনকে যেমন ভাবে চালাতে চাবে ঠিক তেমনি ভাবে জীবনটা চলবে। কিন্তু জীবনে থেমে গেলে তো হেরে গেলে! সকল অর্জন, সফলতা তোমার দুয়ারে এসে দাঁড়িয়ে থাকলেও সেই দুয়ার কোনোদিন খুলবেনা কারণ তুমি তো হেরে গিয়েছো!

একনাগারে কথাগুলো ভাবলো মীরা। বিচলিত চাহনি তার। বিছানা থেকে লাফিয়া উঠলো! মনে মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করলো সে সফল হবে একদিন! এই জীবনে জিতে দেখাবে নিজের বেঁচে থাকার সংগ্রামেও একদিন সফল হবে সে দিন খুব দ্রুতই আসছে।

_
অনিমা – তনিমা দুবোন। বোন ঠিকই কিন্তু তারা জমজ। সেই সাথে তারা মীরার খুব ভালো বান্ধুবিও। তাদের সাথেই মেসে উঠেছে। ভার্সিটিতে আসার পর শুরু থেকেই তাদের সাথে সখ্যতা হয়। একমাসেই এই সখ্যতা দৃঢ় হয়। মীরাকে টিউশনি খুঁজে দিতে এই দুবোনেরই অবদান বেশি ছিলো।

সকাল সকাল তনিমা আর অনিমা মীরার কাছে আসলো। মীরা তখন পড়ছিলো একমনে। একটুপর ভার্সিটিতে যেতে হবে,আজ নাকি টেস্ট হবে ভার্সিটিতে তারই প্রস্তুতি। তনিমা আর অনিমা দীর্ঘশ্বাস ফেললো, এতো পড়া তারা জনমেও পড়েনি সেই পড়া মীরা একদিনেই পড়ছে। অনিমা বলল,’ মীরা তোর পড়া হয়নি? তোর জন্য একটা গুড নিউজ আছে তো! ‘

অনিমার কথায় মীরা পড়তে পড়তেই বলল,’ ব্যাড নিউজ থাকলে সেটাই বল! ‘

‘ গুড নিউজ শুনতে চাস না? ‘

‘ চাই কিন্তু গুড জিনিসটা আমার সাথে যায়না! তাই বললাম ব্যাড নিউজ থাকলে আগে সেটাই বল। ‘

তনিমা ফট করে বলল,’ ব্যাড নিউজ নেই তবে খালি একটা গুড নিউজ আছে। ‘

‘ সেটাই বল তাহলে। ‘

‘ তোর জন্য আরেকটা টিউশনি জোগাড় করতে পেরেছি। একটা ছেলেকে পড়াবি, ক্লাস মনে হয় থ্রি! বাসাটাও বেশি দূরে নয় এখান থেকে ১৫/২০মিনিটের রাস্তা। ‘

চলবে?