#ক্যামেলিয়া
#ফারহানা_চৌধুরী
[পর্ব ৭]
❌কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ❌
ধ্রুবর মা নাসিমা বেগম আর বাবা আফতাব সাহেব বেশ আগেই ইনায়াদের বাসায় এসে পৌঁছেছেন। ইশিতা আর ইনায়া মিলে তাদের আপ্যায়নের কাজ করছে। ইশমাম রান্নাঘরে সালাদ কাটছে। আজকে যেহেতু সুমিতা বেগম আর রহমান সাহেবের অ্যানিভার্সারির অনুষ্ঠান তাই, তারা তাদের আজকে কোনো কাজ করতে দিচ্ছে না। তিন ভাই বোন মিলে নিজেদের মতোন সবটা করছে। সুমিতা বেগম হাজার বারণ করলেও তারা শোনেনি৷ রহমান সাহেব অবশ্য কিছু বলেননি। হেসেছেন শুধু। সুমিতাকেও বলে কয়ে থামিয়েছে। করছে যখন, করুক নিজেদের মতোন। সমস্যা কোথায়? কিছু কিছু সময় ছেলেমেয়েদের মন মতোন কাজ করা খারাপ কিছু না।
ড্রইংরুমে রহমান, আফতাব, সুমিতা আর নাসিমা বসে আছেন। গল্পগুজব করছেন চারজন মিলে। ধ্রুব আসার অপেক্ষায় আছেন তারা মূলত। সে আসলেই অনুষ্ঠান শুরু হবে। সবার কথাবার্তার মাঝে তখন ইনায়া চা নিয়ে এলো তাদের জন্য। নাসিমা ইনায়াকে দেখে খুশি হলেন। চকচকে দাঁত মেলে হাসলেন। বললেন—“মা, এদিকে এসো।”
ইনায়া হাসল হালকা। ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে নাসিমা বেগমের পাশে বসলো। উনি হাসলেন ওকে দেখে। মাথায় আদুরে ভঙ্গিতে হাত বুলিয়ে বললেন—“মাশাল্লাহ! কি মিষ্টি লাগছে মা! কারো নজর না লাগুক।”
বলে ইনায়ার থুতনিতে পাঁচ আঙুলের ডগা ছুঁইয়ে সেখানে চুমু খেলেন৷ পাশ থেকে আফতাব সাহেব বললেন—“আর কারো না, তোমারই এবার নজর লাগবে।” বলে হেসে ফেললেন তিনি। বাকিরাও তার কথায় হেসে উঠলো। নাসিমা বললেন—“আমার মেয়ে-ই এমন, যে ওকে দেখলে তাকিয়েই থাকতে মন চায়। সাধে কি ধ্রুব বিয়ে করতে লাফিয়েছে এতো?”
বলে হাসলেন উনি। সকলে হাসলেও নাসিমার বলা শেষ কথায় ইনায়া আটকালো। কথাটা প্রচন্ড ভাবে মস্তিষ্কে হিট করতেই ও চমকে গেলো। ধ্রুব বিয়ে করতে লাফিয়েছে মানে? ধ্রুব আগে থেকে সব জানতো? ইনায়ার মাথা কাজ করলো না। বারবার একই জিনিস ঘুরপাক খেতে লাগলো। আচ্ছা, এমন নয় তো; ধ্রুবই এই বিয়ে অ্যারেঞ্জ করেছে? ধ্রুবর জন্যই এই বিয়ে হয়েছে?
“ইনায়া?”
কাঁধে হালকা ঝাঁকুনি খেয়ে ইনায়া চমকে তাকালো নাসিমার দিকে। নাসিমা বেগম অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন—“কি হয়েছে মা? শরীর খারাপ লাগছে?”
সুমিতা বেগম চিন্তিত মুখে তাকালেন তার দিকে। হুট করে এমন হওয়ায় ইনায়া অপ্রস্তুত হলো। বলল—“তেমন কিছু না আন্টি। এমনিই আর কি।”
“সে কি! আন্টি কিসের?”
ইনায়া হেসে ফেললো—“তেমন কিছু না আম্মু।”
“এবার ঠিক আছে!”
বলে নাসিমা হাসলেন। নাসিমা- ইনায়াকে দেখে সুমিতা বেগম আর রহমান সাহেব খুশি হলেন। যাক, অন্তত মেয়ের জন্য ভালো একটা পরিবারই পেয়েছেন তারা। এবার মরলেও শান্তি পাবেন।
_____
কলিংবেল বাজলে সুমিতা বেগম ইনায়াকে বলে দরজা খুলতে। ইনায়া এগিয়ে গিয়ে দরজা খুললো। হুট করে দরজা খুলেই সামনে ফুল হাতে দাঁড়ানো, সাদা শার্ট আর ফর্মাল প্যান্ট পরিহিত ধ্রুবকে দেখে চমকালো কিছুটা। একবার ফুলের দিকে তাকিয়ে ধ্রুবর দিকে তাকালো সে, যে আপাতত হা করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ইনায়া তার এমন করে তাকানোর কারণ বুঝলো না। নিজের দিকে তাকালো একবার৷ সবই তো ঠিক আছে৷ সে বিরক্ত চোখে ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে বলল—“ওভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?”
ধ্রুব হুট করে ইমায়ার কথায় থতমত খেলো। হকচকিয়ে গিয়ে ইনায়ার দিকে তাকালো। মেয়েটা আজকে শাড়ি পরেছে! কি মারাত্মক লাগছে তাকে! ধ্রুব দ্রুত হাতে হাতের ফুলের বুকেটা ইনায়ার দিকে বাড়িয়ে দিলো। ইনায়া তা দেখে ধ্রুবর দিকে তাকালো। হালকা হেসে জিজ্ঞেস করল—“ফুল কেন?”
ধ্রুব মন্ত্রমুগ্ধের মতো সেই হাসি দেখলো। হুঁশ জ্ঞান হারিয়ে বসলো সেখানে। আনমনেই জবাব দিলো—“অ্যানিভার্সারি তাই।”
ইনায়া ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল—“তো অ্যানিভার্সারি কি আমার?”
হুট করে ওর কর্কশ গলা শুনে ধ্রুবর হুঁশ এলো যেন। হেসে বলল—“তোমার কেন হবে? আমাদের তো সবে বিয়ে হলো।”
বলে লাজুক হাসলো ছেলেটা। ধ্রুবর ঢং দেখে ইনায়া অতিষ্ঠ ভঙ্গিতে মাথা নাড়ালো দুপাশে। বলল—“তো আমাকে বুকে কেন দিচ্ছেন? যাদের এনিভার্সারি তাদের দিন। ভেতরে আসুন।”
বলে সরে দাঁড়ালো সে। ধ্রুব হেসে ঘরে ঢুকলো। ইনায়ার দরজা আটকানো পর্যন্ত সেখানেই দাঁড়ালো। ইনায়া দরজা লাগিয়ে ধ্রুবকে দেখলো। তারপর আগে হেঁটে ভেতরে গেলো। ধ্রুব দেখলো সবটা। আচমকা বুকে হাত রেখে দাঁড়িয়ে পড়লো।
উফ! বুকটা এমন ধরাস ধরাস করছে কেন? মেয়েটার চোখ ধাঁধানো রূপে বুঝি? সে তো ইনায়াকে প্রতিদিনই একই রকম লাগে। আজকে আলাদা কিছু একটা আছে। সেটা কি? উম্— হ্যাঁ! ইনায়া আজকে শাড়ি পরেছে। এজন্যই এতো মারাত্মক লাগছে। এজন্যই বুকটা এমন করছে। এই প্রথম কি সে ইনায়াকে শাড়ি পরা দেখলো? ধ্রুব ভাবলো। নাহ্! আগেও একবার দেখেছে তো! তাদের বিয়ের দিন৷ দুজনের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার দিন।
_____
ইনায়া কিছুদূর গিয়েও যখন ধ্রুবকে আসতে দেখলো না, তখন সে পিছনে ফিরে তাকালো। দেখলো, ধ্রুব এখনো দরজার ওখানটাতেই দাঁড়িয়ে আছে। তাও বুকে হাত দিয়ে! ইনায়া তার দাঁড়ানোর ধরণ দেকে ভ্রু কুঁচকে ফেললো। এই ছেলের আবার কি হলো? ওমন স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কেন? সে আবারও গিয়ে দাঁড়ালো ধ্রুবর সামনে। ধ্রুব তাকালো তার দিকে। তবে দাঁড়ানোর ধরণ বদলায় নি। ইনায়া ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো—“এভাবে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? ভেতরে আসবেন তো, নাকি?”
ধ্রুব এবার ফোঁস করে একটা শ্বাস ফেললো। ধীর পায়ে এগিয়ে এলো ইনায়ার কাছে। ইনায়া তা দেখে পেছালো। এভাবেই পালাক্রমে চলতে লাগলে এক পর্যায়ে ইনায়ার পিঠ ঠেকলো দেয়ালে। হুট করে ধ্রুবকে নিজের এতো কাছে দেখে আঁতকে উঠে ইনায়া দূরে সরে যেতে চাইলো। তখন ধ্রুব এগিয়ে এসে দুই হাত রাখলো ইনায়ার দুপাশের দেয়ালে। মেয়েটা আটকা পড়লো। চমকে গিয়ে একবার ভেতরের দিকে তাকিয়ে আরেকবার ধ্রুবর দিকে তাকালো। যেহেতু ড্রইংরুমের থেকে বেশ অনেকটা দূরে কর্ণারের দিকে তারা দাঁড়িয়ে, তাই কারোর তাদের দেখার সুযোগ নেই। তবুও বেচারি ভয় পেলো এবার। কেউ দেখে নিলে কি ভাববে? ধ্রুবর আপাতত সেদিকে খেয়াল নেই। সে ইনায়ার দিকে তাকিয়ে। তার পুরো মুখে নিজের চোখ ছুঁলো। প্রথমে চোখে। তারপর নাকে। তারপর— ঠোঁটে। সেখানেই চোখ আটকালো। ইনায়া ঘাবড়ে গেলো ধ্রুবর এমন নজরে৷ হুট করে কি করবে বুঝে পেলো না। সে কোনোমতে ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করল—“কি করছেন? দূরে সরুন প্লিজ!”
ধ্রুব করলো না। বরং ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে দাড়ালো। ইনায়া আরো সেঁটে গেলো দেয়ালের সাথে। ধ্রুব আঙুলের ডগা দিয়ে মেয়েটার কানের ঝুমকা নাড়িয়ে হালকা গলায় জিজ্ঞেস করল—“শাড়ি পরেছো কেন?”
ইনায়ার শ্বাস আটকে আসার উপক্রম। সে কোনোমতে বলল—“মা বলেছে।”
“কেন?”
“আপনারা আসবেন তাই।”
“সবার জন্য পরেছো, নাকি শুধু আমার জন্য?”
ইনায়া মুখ তুলে তাকালো ধ্রুবর দিকে। এটা আবার কেমন প্রশ্ন? সবার জন্যই পড়ুক, বা তার জন্য; সমস্যা কোথায়? সে জবাব দিলো—“সবার জন্য।”
ধ্রুবর চেহারার সেই মুগ্ধতা কমে এলো যেন। আরেকটু গা ঘেঁষে দাঁড়ালো৷ ইনায়াকে একপ্রকার শাসিয়ে বলল—“আর কখনো পরবে না। তুমি সাজবেও আমার জন্য, শাড়িও পরবে আমার জন্য। অন্যকারো জন্য এসব কখনো করবে না। বুঝেছো?”
ইনায়া ততক্ষণাৎ ভ্রু গুটিয়ে ফেললো—“আপনার কথা মতো?”
“হ্যাঁ।”
ইনায়া রেগে বলল—“আমি কেন মানবো আপনার কথা? কে আপনি?”
ধ্রুব হাসলো। হেসে হেসেই জবাব দিলে—“গুড কোয়শ্চন! এন্ড দ্যা অ্যান্সার উড বি, ‘আ’ম ইউর বিলাভড্ হাজবেন্ড!”
#চলবে…