ক্যামেলিয়া পর্ব-০৯

0
268

#ক্যামেলিয়া
#ফারহানা_চৌধুরী
[পর্ব ৯]

❌কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ❌

ইনায়া বিছানায় গিয়ে বসতেই ধ্রুব কোলে বালিশ নিয়ে হাতে মাথা ঠেকিয়ে তাকালো তার দিকে।
ইনায়ার লজ্জায় মরি মরি অবস্থা। ও কোনোমতে পড়া শুরু করতে গেলে ধ্রুব বইটা হাতে নিলো। ইনায়া তাকালো তার দিকে। ধ্রুব একটা পেজ সিলেক্ট করে ইনায়া হাতে দিয়ে বলল—“এখান থেকে পড়ো।”

পেজ দেখে ইনায়া চমকালো। চকিতে চাইলো ধ্রুবর দিকে। ছেলেটা নির্বিকার গালে হাত দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ইশারায় বলল—“পড়ো।”

ইনায়া ঝাঁঝিয়ে উঠলো—“আপনি এতো নির্লজ্জ, অসভ্য কেন? কিসব পেজ বের করে করে দিয়েছেন?”

ধ্রুব চোখ ছোট করে তাকালো তার দিকে। মাথা নাড়িয়ে বলল—“আজব! তুমি নরমালি পড়তে পারো এসব, এখন আমি বলছি আর এখনই পড়তে পারছো না?”

ইনায়া তেঁতে গিয়ে উঠে বলল—“পারবো না আমি এসব পড়তে। বাজে লোক একটা!”

ধ্রুবও উঠে দাঁড়ালো। কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল—“তাহলে আমিও ইশমাম, বড়ো আপু আর আম্মুকে গিয়ে দেখাই তাদের মেয়ে কিসব পড়ে বেড়ায় সারাদিন।”

ইনায়া এগিয়ে গিয়ে তার সামনে দাঁড়ালো। আঙুল তুলে বলল—“আপনি আমার পিছে পড়ে থাকেন কেন সবসময়? সমস্যা কি আপনার?”

ধ্রুব ঝুঁকলো তার দিকে। ইনায়া পিছিয়ে গেলো ক’কদম। ধ্রুব তা দেখে হাসলো। ধীর পায়ে তার সামনে এগোতে লাগলো। ইনায়া পেছাতে পেছাতে বলল—“ক..কি হয়েছে?”

ধ্রুব কাঁধ ঝাঁকালো—“কি হবে?”
“তো আপনি এগোচ্ছেন কেন?”
“তুমি পেছাচ্ছো কেন?”
“আপনি এগোচ্ছেন তাই। কেন এগোচ্ছেন আপনি?”
“তুমি পেছাচ্ছো তাই।”

ইনায়া একদম দেয়ালে ঠেকে গেলো। আর পিছোবার জায়গা নেই। ধ্রুব আরেক কদম এগিয়ে এসে তার একেবারে সামনে দাঁড়ালো। চোখ দুটো হাসছে ধ্রুবর, ঠোঁটের কোণে হাসি। ইনায়া গলা শুকিয়ে এলো। সে কোনোমতে বলল—“দূরে যান আপনি। এসব ঠিক না।”

ধ্রুব মাথা কাত করে বলল—“ঠিক না? কিসে ঠিক না? আমি তো শুধু কথা বলছি।”
“আপনার কথা বলার ভঙ্গিই তো ঠিক না!”

ধ্রুব হঠাৎই গম্ভীর হয়ে গেলো—“তুমি জানো এটা, আমি কখনো তোমায় আঘাত করবো না। কিন্তু তুমি যেভাবে রিঅ্যাক্ট করো, মনে হয় আমি কোনো বাঘ-ভাল্লুক। তোমায় খেয়ে ফেলবো যেন।”
“তার চেয়েও খারাপ আপনি।”

ধ্রুব হাসলো। ধীর গলায় বলল—“খারাপ হই বা ভালো হই। তোমারই তো।”

ইনায়া থমকালো। কথা বলার ভাষা হারালো। মুহূর্তের নীরবতায় সব ঢাকা পড়লে, তা ভেঙে ইনায়া ধীরে ধীরে বলল—“আপনি এমন করেন কেন? একটু শান্ত থাকতে পারেন না?”

ধ্রুব হালকা হেসে বলল—“তোমার সাথে শান্ত থাকা যায় না ক্যামেলিয়া। তুমি নিজেই একখানা ঝড়।”

ইনায়া চমকে তাকালো। অস্পষ্ট স্বরে কন্ঠনালি ভেদ করে বের হলো—“কি বললেন?”
“কি বললাম?”
“কেবল কি বলে ডাকলেন?”

ধ্রুব হাসলো। টেনে টেনে বলল—“ক্যা—মে—লিয়া”

ইনায়া কথার খেই হারিয়ে বসলো। তীব্র অস্বস্তি নিয়ে বলল—“রাত হয়েছে। খাবেন না?”

হুট করে এমন তর্ক-বিতর্কের মাঝে খাওয়ার কথা শুনে অবাক হওয়ার কথা ছিলো ধ্রুবের। তবে সে অবাক হলো না। বরং সরে বিছানায় গিয়ে বসলো। হালকা গলায় বলল—“খাব।”
“ঘরে নিয়ে আসি?”

ধ্রুব ঘাড় কাত করে সায় দিলো। ইনায়া ঘরের বাইরে গেলো খাবার আনতে। সবাই খাওয়া দাওয়া করলেও ইনায়া করেনি। ইনায়া না খাওয়ার জন্য ধ্রুবও খায়নি। ইনায়া রান্নাঘরে গিয়ে একটা প্লেটে খাবার বাড়তে লাগলো। আজকে সে-ই রান্না করেছে। রান্না পারে সে। বেশ ভালোই পারে। খাবার দুটো প্লেটে বেড়ে ঘরে নিয়ে এলো। বিছানায় প্লেট রেখে টেবিল থেকে গ্লাস নিয়ে তাতে পানি ঢাললো। ধ্রুবর হাতে তা ধরিয়ে দিলে ধ্রুব পানি খেলো। তারপর বলল—“বসো। খেয়ে নাও।”

ইনায়া বসলো। ধ্রুব কয়েক লোকমা খেয়ে বলল—“খাবার কে রান্না করেছে?”

ইনায়া খেতে খেতে জবাব দিলো—“আমি।”
“তুমি রান্না করেছো?”
“হুম। কেমন হয়েছে?”

ধ্রুব তাকালো ইনায়ার দিকে। হেসে বলল—“টেস্টি। বাট—”
“বাট?”

ধ্রুব মাথা এগিয়ে এনে হেসে বলল—“তোমার চেয়ে বেশি না।”

ইনায়া চোখ রাঙালো। অতিষ্ঠ হয়ে বলল—“আপনি! এতো নির্লজ্জের মতোন কথা বলেন কেন আপনি?”
“নির্লজ্জের মতোন কই কি বললাম? ঠিকই তো বললাম।”

বেচারির কান ঝাঁ ঝাঁ করে উঠলো। সে কোনোমতে বলল—“থাক! আপনি খান প্লিজ আর চুপ থাকেন।”

ধ্রুব হাসলো আর কিছু বলল না।

______
খেয়ে দেয়ে তারা শুয়ে পড়লে, মাঝরাতে ঘুম ভাঙলো ধ্রুবর। ঘুমঘুম চোখে মেলে তাকিয়ে দেখলো বৃষ্টি হচ্ছে। খোলা জানালা থেকে পানির ছেঁটা ঘরে আসছে। সে উঠে বসলো। পাশে তাকিয়ে দেখলো ইনায়া নেই বিছানায়। সে চমকালো। আশেপাশে তাকালো। অস্থির হয়ে উঠে গিয়ে জানালা আটকালো। ওয়াশরুমের কাছে গিয়ে দেলকো বাইরে থেকে তা লক করা। ইনায়া ভেতরে নেই। ধ্রুব দরজার দিকে চাইলো। দরজা ভেজানো। দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুললো সে। চুপচাপ বাড়িতে খুঁজলো ইনায়াকে। পেলো না। অস্থিরতায় বুকটা কাঁপছে তার। ইনায়া কোথায়? এই বৃষ্টির মাঝে কোথায় খুঁজবে ওকে এখন? এখনো ছাঁদ খোঁজা হয়নি। ধ্রুব দৌড়ে ছাদে গেলো। দরজার সামনে যেতেই থেমে গেলো। ইনায়া ভেতরে। বৃষ্টিতে ভিজছে। ধ্রুব স্বস্তির শ্বাস ফেললো তাকে পেয়ে। সেভাবেই তাকিয়ে রইলো।

ইনায়া দু হাত ছড়িয়ে চঞ্চল পায়ে ঘুরছে এদিক সেদিক। এ যেন মেয়েটার অন্য রূপ। এই রূপ বড্ড কোমল, শান্ত, মিষ্টি৷ ধ্রুবর কিছু একটা হলো। ধীর পায়ে ভেতরে এলো ছাদের। বৃষ্টির পানি তাকে ভিজিয়ে দিলেও ছেলেটার ভাবান্তর হলো না। পায়ের স্যান্ডেল পানিতে ভিজে চুপচুপে। সে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো। ইনায়া হঠাৎ থেমে গেলো। মূলত ধ্রুবকে দেখেই। অস্বস্তিতে কি বলবে খুঁজে পেলো না। সে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলেই ধ্রুব তার হাত টেনে নিজের দিকে ঘুরিয়ে তার কাছে আনলো। এক হাতে কোমড় জড়িয়ে ধরলো। একদম হুট করে এমন হওয়ায় ইনায়া চমকালো। ভীত চোখে তাকালো ধ্রুবর দিকে। অবাক হয়ে চঞ্চল চোখজোড়া দ্বারা অবলোকন করলো ছেলেটার শ্যামবর্ণ মুখবিবর। হঠাৎ এমন ঘনিষ্ঠতা আশা করেনি সে। টেনে আনার ফলে ভেজা চুল মুখ জুড়ে ছিটিয়ে পড়েছে। ধ্রুব ইনায়ার চোখের দিকে তাকালো। কতোটা সুন্দর এই চোখ! ধ্রুবর কি যে ভালো লাগলো! পরপর চোখ বোলালো পুরো মুখে। হাত উঁচিয়ে ধীরে ধীরে ইনায়ার মুখ থেকে চুলগুলো সরিয়ে কানে গুঁজে দিলো। বৃষ্টির জল ধ্রুবর কপোল বেয়ে তার কপালে পড়ছে। মেয়েটার শরীর কাঁপলো। দাঁড়িয়ে থাকার ক্ষমতা খুইয়ে বসেছে যেন। চোখ খিঁচে নিলো। তিরতির করে কাঁপতে লাগলো সামান্য গোলাপি রঙের ঠোঁট জোড়া৷ ধ্রুব তার এতো কাছে! মেয়েটা মরে যাচ্ছে। ইনায়া মাথা নুইয়ে নিলো। শ্বাস আঁটকে কোনোমতে বলল—“ধ্রুব, ঘরে চলুন।”

ধ্রুব হাসলো—“কেন?”
“ঘুমাবো।”
“ছাদে কেন এসেছো এতো রাতে?”
“বৃষ্টি হচ্ছিলো তাই।”
“তোমার বৃষ্টি পছন্দ?”

ইনায়া তাকালো ধ্রুবর দিকে। মাথা দুলিয়ে জবাব জানালো। তার বৃষ্টি পছন্দ। খুব বেশিই পছন্দ। ধ্রুব হাসলো—“আর আমার কি পছন্দ জানো?”
“ক..কি?”
“তোমাকে।”

বলে আবারো হাসলো ধ্রুব। ইনায়ার বুক কাঁপছে। এতো সহজ সীকারক্তি! ধ্রুবর একটু হলেও লজ্জা পাওয়া উচিত ছিলো। ইনায়া ঠোঁট ঠোঁট চেপে ধরলো। ধ্রুব দেখলো সবটা। বৃষ্টির পানি কপাল বেয়ে এসে তার ঠোঁটে গিয়ে পিষছে। ধ্রুব হাত বাড়িয়ে ইনায়ার থুতনি ধরলো। ইনায়া চোখ তুলে তাকালো তার দিকে। ধ্রুব আচমকা ঠোঁট বাঁড়িয়ে দিয়ে। ওষ্টপুটের খায়েশ মেটালো। ইনায়া তিরতির করে কাঁপতে থাকা চোখ খিঁচে নিলো। ওষ্ঠের লড়াইয়ে কাহিল হলো। উথাল পাথাল অনুভূতিতে মেয়েটার প্রাণ যায় অবস্থা। তখন দূর থেকে ভেসে এলো চেনা জানা কিছু পরিচিত গানের লাইন—

“বাতাসে গুণগুণ, এসেছে ফাগুন।
বুঝিনি তোমার,
শুধু ছোঁয়ায় এতো যে
আগুন।”

#চলবে…