গল্প ঃ ক্ষ্যাত_ ছেলে
পর্ব ঃ__১৫
লেখক ঃ অভ্র নীল
আঙ্কেলের সাথে আরও কিছু গল্প করে আমি আমার রুমে চলে আসলাম।
পরের দিন সকালে উঠে আমি সোজা ভাসিটিতে চলে গেলাম।
ভাসিটির একটা আম গাছের নিচে একা বসে আছি। এই গাছের নিচে আমরা কতই না আড্ডা দিয়েছি, কতই না গল্প করেছ, মারামারি করেছি। কিন্তু আজ আমি একা। এটাই হয়তো আমার কপালে ছিল। আমি এক অভাগা। আমার কপালে ভালো কিছু বেশিদিন টিকে না।
আমি বসে বসে এসব কথা ভাবছি। তখন পিছন থেকে লিজা বলল–
লিজা– কি রে অভ্র তুই এখানে কী করিস?
অভ্র — কিছু না রে এমনি। তুই এখানে কী করিস? এখন তো ক্লাসও নেই! তাহলে তুই এখানে কী করিস?
লিজা– আমাকে স্যার ডেকেছিল। তাই আসছি! আর আমি এসব কী শুনছি? সানজিদার না কী বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে!
আমি মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললাম–
অভ্র — হুম তুই ঠিক শুনেছিস।
লিজা– তোরা তো একে-অপরকে ভালোবাসিস!
অভ্র — সব ভালোবাসায় পূর্ণতা পায় না রে! কিছু ভালোবাসা সারাজীবন এইভাবেই থেকে যায়। আমি হয়তো সানজিদা কে আপন করে পাবো না। কিন্তু তাকে আমি সারাজীবন ভালোবাসবো।
লিজা– তুই যখন ওরে এতই ভালোবাসিস তাহলে তুই গিয়ে আঙ্কেলকে বুঝিয়ে বল!
অভ্র — না রে এটা আমি করতে পারবো না। আমি তার নুন ভাত খাইছি, তারে আমি ধোকা দিতে পারবো না। আর সানজিদা যদি ওই ছেলেকে বিয়ে করে তাহলে সে সুখেই থাকবে। হয়তো কিছুদিন কষ্ট পাবে, কিন্তু তারপর ঠিক হয়ে যাবে।
লিজা– আর তুই?
অভ্র — জানি না রে! হয়তো তাকে মনে করে প্রতিটা রাত পাড় করবো।
আমি লিজার সাতে কথা বলছি হঠাৎ আমার ফোনটা বেজে উঠলো। তাকিয়ে দেখি আঙ্কেল ফোন দিয়েছেন। আমি ফোন রিসিভ করলাম। তখন আঙ্কেল বললেন–
আঙ্কেল– বাবা তুমি কই? তুমিতো তোমার রুমেও নেই। কই তুমি?
অভ্র — এইতো আঙ্কেল ভাসিটিতে একটু এসেছিলাম। একটা কাজে!
আঙ্কেল– আচ্ছা কাজটা তাড়াতাড়ি শেষ করে বাসায় আসো। সানজিদার বিয়ের শপিং করতে যেতে হবে৷
অভ্র — আচ্ছা আঙ্কেল!
এটা বলে আমি ফোন কেটে দিলাম। আর লিজাকে বললাম–
অভ্র — আচ্ছা থাক! তোর বান্ধবীর বিয়ের শপিং করতে যেতে হবে।😅
লিজা– তুই এমন কেন রে? তুই নিজে কষ্ট পেলেও তুই কাওকে কিছু বুঝতে দেস না?
আমি মুচকি একটা হেসে সেই জায়গাটা ত্যাগ করলাম।
বাসায় এসে আঙ্কেল, আন্টি, সানজিদা আর জান্নাত কে নিয়ে চলে আসলাম একটা শপিং মলে। সানজিদার এখনও মন খারাপ করে আছে। আমি তার সামনে মিথ্যা একটা হাসির ভাব ধরে আছি।
শপিং শেষে আমরা বাসায় চলে আসলাম।
★★★★
একদিন, সানজিদার হবু বর আসলো। বাসায় শুধু আমি আর আঙ্কেলই আছি। তাই আঙ্কেল মিলনের সাথে গল্প করতে লাগলেন। আর আমি গেলাম তাদের জন্য কিছু হালকা খাবার রেডি করতে।
খাবার রেডি করে আমি নিয়ে আসলাম৷ যেই আমি খাবার টা টেবিলের উপরে রখবো ঠিক তখনই মিলনের উপর কিছুটা খাবার পরে গেল। মিলনের গায়ে খাবার পড়তে দেরি আমার গালে চর মারতে সে আর দেরি করলো না৷ আমাকে চর মারতে দেখে আঙ্কেলও দেড়িয়ে গেলেন। তখন মিলন বলতে লাগল–
মিলন– এই তুই জানিস আমার এই শার্টের দাম কত? ইসসস রে কী করলি এটা!
বাবা আপনি এইরকম ছেলেদের নিজের বাসায় রেখেছেন কেন? এদের তো বাসায় না এদের রাস্তায় রাখা উচিত…..
সে আরও অনেক কথা বলতে লাগল। আমি শুধু মাথা নিচু করে তার কথা শুনছি। তখন আঙ্কেল একটু রেগে গিয়ে বললেন–
আঙ্কেল– মিলন থামো! আর তুমি আমাকে কোন হিসেবে বাবা ডাকছো? সানজিদা আর তোমার তো এখনো বিয়ে হয় নি? এটা একটু ভেবে দেখো! আর শোনো আমার বাসায় আমি কাকে রাখবো, আর কাকে রাখবো না, এটা তোমাকে বলে রাখতে হবে না কী? তুমি এখন এখান থেকে যাও!
মিলন– বাবা! ওহ সরি আঙ্কেল! আপনি আমাকে এই ক্ষ্যাত একটা ছেলের জন্য আমার সাথে এইরকম ব্যবহার করছেন! আমি কিন্তু আপনার হবু জামায় এটা কিন্তু মনে রাখবেন৷
এটা বলে মিলন রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে চলে গেল।
আমি এখনও সেখানে ঠাঁই দাড়িয়ে আছি। আঙ্কেল আমার কাছে এসে, আমার ঘাড়ে হাত দিয়ে বললেন–
আঙ্কেল– বাবা! তুমি ওর কথায় কিছু মনে করো না।
অভ্র — আরে না আঙ্কেল সমস্যা নাই! আচ্ছা আঙ্কেল আপনি রুমে যান। আমি এগুলো পরিষ্কার করছি।
এটা বলে আমি সেগুলো পরিষ্কার করতে শুরু করলাম।
পরিষ্কার করা শেষে আমি আমার রুমে চলে আসলাম।
চলবে……?
ভুলত্রুটি মার্জনীয়🙂