খেরোখাতার ছেঁড়াপাতা পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব

0
322

#খেরোখাতার_ছেঁড়াপাতা — শেষ পর্ব

গরাদের শিক ধরে দাঁড়িয়ে আছে সাবেরা অশ্রুসিক্ত দুচোখ কোলে তার চার মাসের পুত্র সন্তান , সামনে নতমুখে অঝোরে কাঁদছে মিয়াসাব,
— ছোট আম্মা আপনে আমারে দেখতে আইছেন, আমার যে কী খুশি লাগতাছে কইয়া বুঝাইতে পারুম না।
— আব্বা আপনি কি আপিল করবেন না?
— না আম্মা কোনো লাভ নাই, খুন তো আর একটা দুইটা করি নাই? করছি তো ৮/১০টা যখন যারে পথের কাঁটা মনে হইছে তারেই মাইরা ফেলছি। কোনোদিন এইডা খেয়ালই করি নাই সবকিছুরই শেষ আছে? আমার পাপের ঘড়া পূর্ণ হইয়া গেছে আম্মাজান।
— আব্বা কেনো আপনি এত খারাপ হলেন।
— ক্ষমতার লোভ আম্মা, ক্ষমতার লোভ মানুষরে অমানুষ বানায়ে দেয়। ভয় দেহাইয়া জয় করতে চাইছি, ভালোবাসলে ভালোবাসা ফেরত দিতে অয় আম্মা, ভয় দিতে হয় না, তাই ভয় দেহাইয়া রাজা থাকতে চাইছি।
— আব্বা….(ডুকরে কেঁদে উঠে)
মিয়াসাব শিকের ফাঁকে হাত বাড়িয়ে মাথায় রাখে।
— এই যে আইজ আপনে আমার কাছে আইছেন, কত্তবছর পরে আব্বা কইয়া ডাকছেন কথা কইতাছেন এইডাই আমার সবচেয়ে বড় শান্তি। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শাস্তি সন্তানের চোখে ঘৃণা, আমি ওই শাস্তিটাও পাইছি আমার দুই আম্মাজান আমারে ঘৃণা করে এর থেইক্কা আমার মরণও বালা।

অশ্রুসিক্ত কান্নাভেজা কন্ঠে আকুতি ঝরে পড়ে
— আমি কি কিছু করবো আব্বা।
—- না আম্মা না, কোনো লাভ নাই।
আম্মা আমার সব জায়গা সম্পদ আপনেগ দুইবোনরে লেইখা দিছি। আপনারে পাওয়ার অফ এটর্নি দিছি। যাদের যাদের জমি মিথ্যা মিথ্যি জবরদখল করছি তাদের একটা লিস্ট দেয়া আছে, তাদের সব জমিজমা আপনি ফিরাইয়া দিয়েন। আমার ধন সম্পদগুলো ভালো কাজে লাগাইয়েন, য্যান পরকালে আমার আমলনামায় সামান্য হইলেও নেকি জমা হয়। আমি খারাপ মানুষ একথা ঠিক,তবে আমি খারাপ বাপ না, আপনেগরে আমি খুব ভালোবাসি। আপনার মায়েরে আমি এই জীবনে সুখ দিতে পারি নাই, তারে আপনার হাতে রাইখা গেলাম আপনে তারে দেইখা রাইখেন।
এহন যান আম্মা, আমার আর দুনিয়াদারির প্রতি মায়া বাড়ায়ে দিয়েন না।

.
কারাগার থেকে বেরিয়ে পথে নামে সাবেরা, দুদিন আগে সকালের পেপার পড়তে গিয়ে চোখে পড়েছে খবরের শিরোনাম, ” বহু হত্যা মামলার মুল হোতা তবারুক মিয়ার ফাঁসি ও তার সহযোগীদের যাবতজ্জীবন কারাদন্ডের রায় ঘোষণা করা হয়েছে। ” খবরটা পড়ে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি সাবেরা। মন্দ হোক আর ভালো হোক জন্মদাতা বাবা তো, ওই পিঠে ওই ঘাড়ে কত ঘোড়ার সাওয়ারী হয়েছে। ওই হাতে লোকমা দেয়া ভাত খেয়েছে, হাত ধরে বৈশাখী মেলায় ঘুরেছে, হঠাৎ করে চিরচেনা বাবাটা বদলে অমানুষ হয়ে গেলো। দুচোখ জলে ঝাপসা হয়ে গেলো, সামনের পথ আর কিছু দেখতে পাচ্ছিলো না সাবেরা, কাছাকাছি একটা চা দোকানে গিয়ে বসলো, পানির বোতল কিনে চোখেমুখে জলের ঝাপটা দিলো।

সাবেরার উপর এখন অনেক দায়িত্ব তাকে ভেঙে পড়লে চলবে না, সমস্ত জমিজমার ব্যাপার স্যাপার বুঝে নিতে হবে। বাবার জবরদখলী জমি জিরাত মালিকদের হাতে হস্তান্তর করতে হবে। বাকী সমস্ত জমিজিরাত বিক্রি করে মূল বসত বাড়িটাতে অসহায় দুস্থ নারীও শিশুদের জন্য আশ্রয়স্থল গড়ে তুলবে। বাবা জেলে যাবার পর মাকে অনেকবার নিজের কাছে নিয়ে রাখতে চেয়েছে সাবেরা, কিন্তু উনি স্বামীর ভিটেমাটি আঁকড়ে পড়ে থাকতে চান, তাই উনাকে এসব দেখভালের দায়িত্ব দিয়ে রাখবে যাতে এসব নিয়ে উনি ভালো থাকেন, সবকিছু ভুলে থাকেন।

.
লাল বেনারশীতে জড়োসড়ো হয়ে বিছানায় বসে আছে বকুল, ইয়াশ একটা কাজে কিছুক্ষণের জন্য বাইরে গেছে।

আজ ফুলশয্যার রাত বকুলের যেখানে খুশি হবার কথা সেখানে কেনো যেনো সে খুশি হতে পারছে না, বারবার সবুজের কথা মনে পড়ছে তার। সবুজ বেঁচে থাকলে জীবনটা অন্যরকম হতো। মাটির ঘরে দুজনার খুনসুটি ভরা সংসার, হঠাৎ করে এক নিদারুণ ঝড় এসে সব তছনছ করে দিলো।
অথচ ইয়াশের মতো ছেলের সাথে বিয়ে হওয়া সবটাই স্বপ্নের মতো। হয়তো এমন একটা জীবনই বকুলের প্রাপ্য ছিলো কিন্তু নিয়তি তাকে বহু বাধা বিঘ্নতার পর এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। বিয়েতে বাবা এসেছে ছোট মাকে আনতে চায়নি কিন্তু ছোট মা কেঁদেকেটে জোর করে এসেছে, নিজের কৃতকর্মের জন্য সে লজ্জিত বারবার ক্ষমা চায়, বকুল জানে তার সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে সবই পরিবর্তন হয়েছে, যাক তবু্ও তো হয়েছে।

ইয়াশের পদশব্দে বকুল সচকিত হলো মাথার ঘোমটাটা টেনে দিলো, ইয়াশ হাতে একগুচ্ছ গোলাপ আর একটা জুয়েলারি বক্স নিয়ে রুমে ঢুকলো। দরজা আটকে দিয়ে বিছানায় এসে বসলো, গোলাপ গুচ্ছ বকুলের হাতে তুলে দিলো, বকুল আড়চোখে তাকালো। বকুলের সামনাসামনি বসে মাথায় ঘোমটা সরিয়ে থুতনি ধরে অধোমুখী বকুলের মুখটা তুললো।
— সুবাহান আল্লাহ! তুমি এত সুন্দর!
বলেই কপালে একটি চুম্বন এঁকে দিলো, বকুল লজ্জায় রাঙা হয়ে গেলো। ইয়াশ মুগ্ধতায় চেয়ে থেকে আবার বললো
— তোমাকে যেদিন প্রথম দেখেছি, আমার ভাবনা জুড়ে তুমি ঠাঁই নিয়েছো। এই মুখ, এই কাজলকালো গভীর চোখ, গোলাপ পাপড়ি ঠোঁট, রক্তিম অধর, নির্মোহ অভিব্যক্তি সবকিছু আমাকে ধীরেধীরে তোমার দিকে টেনেছে। আমি কায়মনে তোমাকে প্রার্থনা করেছি স্রষ্টার কাছে, তিনি তোমাকে মিলিয়ে দিয়েছেন আমার পরম সৌভাগ্য। চুপ করে আছো কেনো বকুল! কিছু বলো?
— কি বলবো?
— আমাকে তোমার পছন্দ কিনা? বা আমি কেমন এসব?
—তুমি অনেক সুন্দর, তারচেয়েও সুন্দর তোমার মনটা, আর তুমি ভীষণ সাহসী। আমার পরম সৌভাগ্য তোমার মতো মানুষকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়েছি।
— আজ এই পবিত্র রাতে কি চাও তুমি?
— তোমার ভালোবাসা ছাড়া আর কিছুই চাই না আমি।
— তবুও মুখ দেখে কিছু দিতে হয়, এই নাও সামান্য উপহার। (বলেই জুয়েলারি বক্সটা খুলে বকুলের হাতে তুলে দিলো)

বকুল হাতে নিয়ে দেখে একটা ডায়মন্ড সেট, বকুল খুশিমনে হাত বুলিয়ে দেখতে থাকে।
— বকুল
— হুমম
— আমায় উপহার কিছু দেবে না?
— কি দেবো? আমার তো দেবার মতো কিছুই নেই।
— তোমার কাছে সব আছে, ভালোবাসা মায়া মমতা
বলেই বকুলকে বুকে জড়িয়ে নিলো।

বুকের খাঁচায় বকুল দুরুদুরু বক্ষে কাঁপতে লাগলো, বহুদিনের প্রেমাকাঙ্ক্ষী দুটি চাতকসম হৃদয় মুহূর্তে আন্দোলিত হলো। তৃষ্ণার্ত দুটি দেহে ভালোবাসার ফোয়ারা ছুটলো, জেগে উঠলো দুজনে, যেনো এক জোড়া আদিম মানবমানবী বন্য ভালোবাসায় ভেসে গেলো, একে অন্যের মাঝে বিলীন হয়ে সার্থক হলো দুজনার অতৃপ্ত মনোবাসনা।

আফজাল আহমেদ ও হাসনা পারভীন নবদম্পতিকে বাড়িতে দাওয়াত করে নিয়ে গেলেন। দুপুরের লাঞ্চ শেষে বকুলের হাতে একটা চামড়ার ব্যাগ তুলে দিলেন। ব্যাগ খুঁলে বকুল দেখে অনেকগুলো টাকা।
— মামা এত টাকা কিসের?
— সব তোর টাকা।
— আমার টাকা? আমি কখন এত টাকা জমালাম?
— তোর জন্য যে ডিপিএসটা ছিলো, সেটার সময় পূর্ণ হয়ে গেছে। আমি ভেঙে দিয়ে টাকাটা তুলে রেখেছি। তোর স্বপ্ন ছিলো একটা বুটিকস শপ করার, এখন এই টাকাটায় তোর কাজ এগিয়ে যাবে।
— না মামা আমি এই টাকা নিতে পারবো না, এটা সম্পূর্ণ আপনার টাকা।
— না রে সবটাই তোর প্রাপ্য।
.
সময় গড়িয়ে দিন মাস করে করে ২ বছর পেরুলো, বকুলের বুটিকস শপ বেশ জমজমাট। সংসার বুটিক শপ সামলে বকুলের হিমসিম অবস্থা, দোকান চালায় কর্মচারীরা বকুল সন্ধ্যায় হিসেবটুকু নিতে যায়। দোকানের দায়িত্ব নিয়েছে বকুলের পূর্বের রুমমেট ও বান্ধবী নাফিসা।

এরই মধ্যে এক প্রভাবশালী অপরাধীকে এরেস্ট করা এবং তার সাথে আপোষ না করার অপরাধে ঘুষখোর বড়কর্তারা ইয়াশকে রাঙামাটি ট্রান্সফার করে দিয়েছে। পুলিশ ডিপার্টমেন্টের তরফ থেকে পাওয়া কোয়ার্টারে এলোমেলো মালপত্র সব গোছগাছ করে সেট করা শেষ। এখন এখানে সংসার পাতার পালা শুরু। বাধ্য হয়ে বকুলকে ঢাকার বুটিকস শপ বিক্রি করে দিতে হয়েছে, মনেমনে চিন্তা করে রেখেছে এখানকার আদিবাসী নারীদের নিয়ে কিছু একটা করবে। স্বপ্নকে শেষ হতে দেবে না সে কারণ স্বপ্নই তাকে বাঁচিয়ে রেখেছিলো আর এতদূর এনেছে।

কোয়ার্টার গোছানোর সব কাজ সম্পন্ন করার পর বকুল তার কাপড়চোপড় ইয়াশের ফাইলপত্র নিজ হাতে গুছিয়ে আলমারিতে রাখছে। ফাইল তুলে জায়গা মতো রাখতে গিয়ে হঠাৎ ফাইল থেকে একটা ভারী হলুদ খাম নিচে খসে পড়লো। ওটা তুলে যথাস্থানে রাখতে যেতেই চোখে পড়লো খামের উপর স্পষ্টাক্ষরে বকুলের নাম লেখা। বকুল খাম খুললো, একটা চিঠি আর একটা দলিল, দলিলে বকুলের নাম লেখা। সে এই দলিলের আগামাথা কিছুই বুঝলো না। এবার চিঠিটা খুললো, প্রেরকের নাম দেখে হাজার ভোল্টের শক খেলো বকুল, আরেহ এতো সবুজ!

প্রিয় বকুল

কেমন আছো তুমি? আমার এই চিঠি যখন হাতে পাবে তখন আমি এই জগতে নেই পরপারে পাড়ি জমিয়েছি। তোমাকে একা মিয়াসাবের ভরসায় রেখে আমি যখন চোরাইপথে মালয়েশিয়া চলে আসি। পথে কতশত বিপদসংকুল পথ পাড়ি দিয়েছি তার ইয়াত্তা নেই। আমার সঙ্গীদের প্রায় সবাই মারা যায়, আমি হতভাগা কোনভাবে প্রানে বেঁচে যাই। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমার পিছু ছাড়েনি, অনাহারে অর্ধাহারে মৃতপ্রায় আমাকে উদ্ধার করে একদল মাদক চোরাকারবারি। আমাকে খাবার পানি দিয়ে বাঁচায় ঠিকই কিন্তু ওদের হয়ে কাজ করতে হতো আমাকে। দেশে যোগাযোগ করার সুযোগ, টাকা পয়সা কিছুই ছিলো না আমার। একদিন পুলিশের সাথে গোলাগুলি হয় ওদের অনেকে মারা যায়, বাকী যারা ছিলো পুলিশ আমি সহ পুরো দলটাকে এরেস্ট করে নিয়ে যায়। আমাকে উদ্ধার করার কেউ ছিলো না, ওখানে থেকে আমি তোমার কথা অনেক ভেবেছি, কিন্তু তোমার কাছে আসার কোন সুযোগ আমার ছিলো না প্রতি মুহূর্ত মন কাঁদতো। মাদকপাচার,চোরাচালানী সহ বিভিন্ন মামলাতে কোন কিছু না করেও আমাকে ফাঁসানো হয়। পুলিশ এমনভাবে মারতো মনে হতো মৃত্যু দরজা থেকে নরক যন্ত্রণা সহ্য করে প্রতিবার ফিরে এসেছি। আমার ১০বছরের জেল হয়, আমি জেলে পঁচতে থাকি আর তুমি দ্বারেদ্বারে ঠোকর খেতে থাকো। জানিনা জেলে থাকতে থাকতেই কখন কিভাবে যেনো আমার শরীরে মরণ ব্যাধি লিভার সিরোসিসের জীবাণু ঢুকে যায়। সঠিক চিকিৎসার অভাবে তা ক্যান্সারে রূপ নেয় ডাক্তার আমাকে সময় বেঁধে দেয় আর মাত্র ৪ মাস বাঁচবো। জেল কর্তৃপক্ষ আমাকে বের করে দেয়, বাংলাদেশ দূতাবাস আমাকে দেশে পাঠিয়ে দেয়। দীর্ঘ ৯/১০বছর পর দেশের মাটিতে পা রাখি। ছুটে যাই গ্রামের বাড়িতে তোমার কাছে, গিয়ে শুনি তুমি নেই, মিয়াসাবের অত্যাচারে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছ। গ্রামবাসী তুমিসহ সবাই জানো আমি মরে গেছি বহু আগেই। অপরাধে জর্জরিত মিয়াসাব জেলে, আমি তমিজ সর্দারের সাথে দেখা করে জানলাম তুমি ঢাকা আছো পড়ালেখা করছো চাকুরী করছো। ভাবলাম আমার অস্তিত্ব তোমাকে আর জানান দেবো না, এমনিতেও তো আমি আর বেশিদিন এই দুনিয়ায় নেই , শুধু শুধু তুমি জেনে কষ্ট পাবে। মিয়া সাব আমার জমিজিরাত সব ফিরিয়ে দিয়েছে ওগুলো সব তোমার নামে লিখে দিলাম। তোমার বাবার সাথে দেখা করতে গেলাম কারণ আমি তার পুরনো কর্মচারী ছিলাম , আমি বেঁচে থাকতে আমার কথা তোমাকে না জানাতে প্রতিজ্ঞা করালাম। তার বাড়িতে আমাকে শেষ কয়েকটা দিন থাকার আশ্রয় দিলেন, উনার কাছে শুনলাম তোমার বিয়ে ঠিক হয়েছে অনেক বড় পুলিশ অফিসারের সাথে মাসখানেক পর বিয়ে । আমি ভীষণ খুশি হয়েছি এই সুখটুকু তুমি পাওনা, নিয়তির কাছে পরকালে তোমাকে চাইবো না, কারণ আমি কোনো কালেই তোমার যোগ্য ছিলাম না। আমার হাতে সময় আর বেশিদিন নেই, তোমাকে দেখতে ভীষণ ইচ্ছে করছিলো কিন্তু তোমার সুখের পথে কাঁটা হতে চাই না। তুমি সুখী হও , জগতের কোনো অশুভ ছায়া তোমাকে ছুঁতে না পারুক। তোমার শুভ কামনাই তোমার চির শুভাকাঙ্ক্ষী।

সবুজ

বকুল অশ্রুসজল চোখে দাঁড়িয়ে আছে, দুচোখে তার শ্রাবণের বারিধারা ঝরছে। ইয়াশ এসে কাঁধে হাত রাখে।
— কি হয়েছে বকুল? তুমি কাঁদছো কেনো?
বকুল হাতের চিঠিটা বাড়িয়ে দেয়, ইয়াশ হাতে নিয়ে পড়তে থাকে।
— এটা কোথায় পেলে বকুল?
— পুরনো ফাইলের সাথে। আমাকে এর কথা জানাওনি কেনো ইয়াশ?
— আসলে আমাদের বৌভাতের সময় বাবা গোপনে আমার হাতে দিয়ে যান। তোমাকে বলবো বলবো করেও আর বলা হয়নি। আসলে এত পথ পাড়ি দিয়ে সুখের মুখ দেখেছ, সে সুখটুকু নষ্ট করতে চাইনি। তোমার মলিন মুখ, অশ্রুসিক্ত চোখ দেখতে চাইনা আমি।
—- তবুও বললে পারতে।
— আমাদের বিয়ের এক সপ্তাহ আগে সে মারা গেছে, যে যাবার সে গেছে আর ফিরে আসবে না, এখন আমরা পুরনো কথা না ভেবে নতুন করে বাঁচবো, ঠিক আছে?

ইয়াশ কাছে এসে বকুলের চোখের পানি দুহাতে মুছে দিয়ে, বুকে টেনে নিয়ে কপালে চুমো খেলো।

খিলখিল হাসির শব্দে সচকিত হয়ে দুজনে জানালার কাছে গেলো, গিয়ে দেখলো ঐশী তার ১১ মাস বয়সী ভাই দীপ্তকে হাত ধরে হাঁটিহাঁটি পা পা করে হাঁটা শেখাচ্ছে আর হোসনে আরা মোড়ায় বসে থেকে খুশি হয়ে হাততালি দিচ্ছেন।

ওদের দেখে মন খুশিতে ভরে উঠলো বকুলের মনেমনে বললো, জীবন অনেক সুন্দর । কিন্তু স্বচ্ছ কাঁচের মতো ঠুনকো এই জীবন টোকা লাগলেই ঝুরঝুর ঝরে পড়ে। অথচ এই নিয়ে মানুষের বাহাদুরির শেষ নেই। জীবনের খেরোখাতার শেষ পাতাটা অন্য একটা জীবন সাজাতে রয়ে যায়।
জীবন অনেক সুন্দর!

#শামীমা_সুমি