খেরোখাতার ছেঁড়াপাতা পর্ব-৯+১০

0
105

#খেরোখাতার_ছেঁড়াপাতা –৯

মোবারক মাস্টারের গলাকাটা লাশ পাওয়া গেলো ধান খেতের আইলে।

সারা এলাকা তোলপাড় অবস্থা, লোকে লোকারণ্য,পুলিশ এসেছে গাড়ি বহর নিয়ে। গ্রামবাসীর কাছ থেকে সাক্ষ্য প্রমাণ নিচ্ছে, সন্দেহের একটা তীর মিয়া সাবের দিকে তাক করা, অন্যটা মাস্টারের পরিবারের দিকে এই বিষয়ে তদন্তে করছে পুলিশ। সন্দেহ প্রমাণিত হলে মিয়াসাবকে এরেস্ট করা হতে পারে।
মিয়াসাব মহা ফাঁপড়ে পড়েছেন, ধরা পড়লে তার সারাজীবনের কামাইকৃত সুনাম ধুলায় মিশে যাবে। যেভাবেই হোক সমস্ত ঘটনা ধামাচাপা দিতে হবে, পূর্বেকার ঘটনার মতো সাক্ষ্য প্রমাণ লোপাট করতে হবে। টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করতে হবে, বন্ধ করতে হবে যত সব ফাঁকফোকর আছে।

এমপি সাহেবের কাছে ফোন দিলো মিয়াসাব, ফোনের ওপার থেকে কল রিসিভ করতেই,
—- হ্যালো ভাইজান কেমন আছেন?
— ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ
— ভাইজান ঘটনা তো একটা ঘটে গেছে?
— কি ঘটনা?
— মোবারক মাস্টার তো খুন হইয়া গেছে।
— কি বলছো? তুমি এসবের সাথে জড়িত না তো?
— না না ভাইজান, সত্য বলছি আমি এসবের মধ্যে নাই। অনেকদিন যাবত ওনার ভাইদের সাথে জমিজমা সংক্রান্ত গন্ডগোল চলতেছে, পারিবারিক বিরোধই হবে।
— মরে গেছে তোমার পথ পরিস্কার, কিন্তু যদি তুমি জড়িয়ে থাকো, আমি কিন্তু তোমাকে বাঁচাতে আসবো না। আমি কোন অকারেন্সে জড়াবো না, আমার ক্যারিয়ার ঝুঁকিতে ফেলবো না।

ফোন রেখে মিয়াসাব কোৎ করে একটা ঢোক গিললেন। চিন্তার পাহাড় ভেঙে পড়ছে মাথায়, মেয়ে পালিয়ে যাবার পর মাথা ঠিক ছিলো না। সন্ধ্যার পর মতিনকে ডেকেছিলেন, আজকাল মতিনকে দিয়েই তিনি বেশিরভাগ কাজ করান । তমিজ আজকাল বয়সের কারণে চোখে কম দেখে তাছাড়া শরীরের শক্তিও কমে এসেছে। অপরদিকে মতিন এখনো তাগড়া জোয়ান লম্বা কালো চওড়া পেটানো শরীর, শরীরের জোর খাটিয়ে অনেককিছু করতে পারে। মতিন বারান্দায় এসে হাক মেরেছিলো,
— মিয়াসাব, বাড়িতে আছেননি?
— কেডা মতিন নাকি? ব আইতাছি।
— জ্বে
মিয়াসাব রুম থেকে বেরিয়ে এসে ইজি চেয়ারে গা ছেড়ে বসলেন।
— কল্লা ফালানের কথা কি য্যান কইছিলি?
— হ
— ফালাই দে,
— জ্বে!
— কিন্তু ঘটনা দেইখা য্যান অন্যকিছু লাগে, আমার দিকে য্যান নিশানা না আহে।
— কেমনে?
— যেই জমিন লইয়া গন্ডগোল চলতাছে মাস্টারের ভাইয়েগ মধ্যে ওই জমিনেই লাশ থাকবো।
— জ্বে আইচ্ছা
— সাপও মরবো লাঠিও ভাঙবি না।

সেদিনের কথা মনে পড়তেই, গলা শুকিয়ে আসে মিয়া সাবের। কোন কুক্ষণে যে এমন মতিছাড়া হয়েছিলেন? এখন যদি তদন্তে নাম আসে তাইলে তো একুলওকুল সব কুল শেষ হইবো।
আহহারে, নির্বাচনের এই মুহূর্তে গোছা গোছা টাকা যাইতেছে, এখন তো বান্ডিল বান্ডিলেও কুলাইবো না। মামলা ধামাচাপা দিতে যে কত টাকা ঢালা লাগবে আল্লাহ জানে, ক্যান যে এমন জ্ঞানশূন্য হইলাম। এখন মাথা ভাইঙা ফালাইলেও কুনু কাজ হইবো না।
শুনলাম মাস্টারের পোলায় নাকি থানায় অজ্ঞাতনামা আসামির নামে কেস করছে। অজ্ঞাতনামা তো আর থাকবো না, নামেভেদে তো ঠিকই বাইর হইবো। এবারের ওসি নাকি ভীষণ কড়া ঘুষটুষ খায়না, আগ বাড়াইয়া টাকা পয়সা দিতে গেলে তো ফাঁসতে হইবো।

.
রান্নাঘরে হাতের কাজগুলো সেরে এককাপ চা হাতে ড্রয়িংরুমে আসলো সাবেরা, ল এন্ড জাস্টিসের শেষ বর্ষের ফাইনাল সেমিস্টার পরীক্ষা দেবে। পড়াশোনার প্রচন্ড চাপ তবুও সংসার সামলে নিয়ম করে পত্রিকার খুটিনাটি পড়ে কারণ কয়েকমাস পরেই এক স্বনামধন্য এডভোকেটের প্রাইভেট ফার্মে সহকারী হিসাবে জয়েন করবে এমনটা কথা হয়ে আছে। তাই পত্রিকা পড়ে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত ঘটনার ধরণ ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা নেয়, প্রয়োজনীয় কিছু পেলে নোটস করে রাখে।

চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে পত্রিকার পাতা উল্টাতেই চোখে পড়লো লেখাটা, বড় বড় অক্ষরে শিরোনাম ” জাফরগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মোবারক হোসেন মাস্টারের রহস্যজনক হত্যাকাণ্ড ” চক্ষু স্থির হয়ে গেলো এক জায়গায়, আরেহ এতো সাবেরাদের গ্রামের এলাকার ঘটনা!

ভেতরের বিস্তারিত পড়েই সাবেরা বুঝে নিলো এটা তার বাবার কাজ। মেয়ের বিনিময়ে স্বার্থ হাসিল করতে না পেরে, পুরনো পথে আবার হাটলো, এবার যদি সঠিক তদন্ত হয় তবে তো তার ভরাডুবি শুরু । হয়তো পুলিশ প্রশাসনকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে মামলা ভিন্নখাতেও নিতে পারে, তার পূর্বেকার অতীত তো তাই বলে।

বাড়ি থেকে আসার পর সিমটা খুলে রেখে দিয়ে নতুন সিম লাগিয়েছিলো। এখন পুরনো সিমটা মোবাইলে সেট করে মাকে ফোন দিলো? অপরপক্ষ থেকে কল রিসিভ হতেই
— হ্যালো মা
—- সাবেরা! মা তুই কেমন আছিস?
— আছি আলহামদুলিল্লাহ, তুমি কেমন আছো?
— আছি ভালোই, তোর খবর কি?
—- আমি বিয়ে করেছি মা।
— আলহামদুলিল্লা…. আলহামদুলিল্লাহ , নাম কি বাবাজীর, কি করে?
— নাম অয়ন, একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে জব করে।
— সে মানুষ কেমন রে?
— সে অনেক ভালো একজন মানুষ মা।
— যাক মা আমাকে নিশ্চিত করলি, আমি দুই রাকাত নফল নামাজ পড়বো।
— মোবারক স্যার কি করে মারা গেলেন মা?
— কি জানি জানিনা রে মা, ধান ক্ষেতে আইলে গলাকাটা লাশ পাওয়া গেছে।
— সত্যিই কিছু জানো না, নাকি সারাজীবনের মতো না জানার ভান করছো?
—- আমি সত্যিই কিছু জানিনা, তবে কানাঘুষা চলছে, তোর বাবার নামও বলাবলি করছে মানুষ।
— করবেই তো, সারাজীবনে কোন ভালো কাজ তো আর করেনি।
—- একটা কথা বলি সাবেরা?
— বলো।
—– তোর বাবা যদি কোনো কারণে ফেঁসে যায়, তুই বাঁচাতে আসবি না?

দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে সাবেরা বলে
— মা রাখছি, ক্লাস আছে বেরুবো।

.
তনুশ্রীর উপর সব চাপিয়ে দিয়ে কিছুটা স্বস্তিতেই আছে বকুল, যেকোনো উছিলায় কিচেনে আর আসা লাগে না আবীর ভাইয়ার। তনুশ্রী সবসময় তার কখন কী লাগবে সে দায়িত্বে তৎপর যেটা অনেক সময় আবীরের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
না চাইতেই অনেককিছু করছে তনুশ্রী, নিয়ম করে চা দেয়া, ঘর গুছিয়ে রাখা, ধোয়া কাপড়চোপড় ইস্ত্রি করা ইত্যাদি আবীর মনেমনে বিরক্ত, মাকে বললো কী আর মা বুঝলো কি?

এদিকে বকুল সংসারের সব কাজকর্ম সেরে নিয়মিত ক্লাস করছে, অর্ডারী কাজগুলো ঠিকঠাক করতে পারছে, ঠিক সময়ে ডেলিভারি দিতে পারছে। মনেমনে স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছে তার শঙ্কাকে নির্ভুল প্রমাণ করাতে।
বকুল আপনকাজে মগ্ন হয়ে কাঁথায় ফোঁড় দিচ্ছে।
হাসনা পারভীন একবাটি চানাচুর মুড়িমাখা হাতে বকুলের রুমে ঢুকলেন।
— কি রে বকুল সবাই নাস্তা খাচ্ছে তুই খেলি না।
— আমার খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না।
— আচ্ছা বকুল একটা কথা বল তো?
— জি বলুন।
—- তনুশ্রীর সাথে আবীরকে মানাবে তো?
— জি মামী মানাবে, আপনি ভাইয়াকে এই ব্যাপারে কিছু বলেছেন?
— না রে তেমন কিছু বলিনি, আগে দেখি ওদের মধ্যে ভাব কেমন হয়, তারপর না হয় দুজনকেই ইঙ্গিত দেবো।
— জি সেটাই ভালো হবে, সিদ্ধান্ত নিতেও সহজ হবে।
— তাছাড়া তনুশ্রী বয়সে ছোট আর একটু বেশিই চঞ্চল, আমার কিন্তু ডাক্তার মেয়েটাই পছন্দ।

রুমের বাইরে কারো উত্তেজিত কথাবার্তার আওয়াজে দুজন থেমে গেলো।
দরজায় গিয়ে দেখা গেলো, আবীর রাগারাগি করছে। হাসনা পারভীন আবীরের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করলেন,
— এত রেগে আছিস কেনো?
— তোমার ভাইয়ের মেয়ে জেদ ধরেছে ওকে নিয়ে বাইরে ঘুরতে যেতে।
— তাতে কি হয়েছে?
— আমার আর কোন কাজ নেই, ওকে নিয়ে ঘুরতে বেরুবো। আর মা ওর সারাক্ষণ আমার রুমের আশেপাশে থাকা লাগবে কেনো?
— আমিই তো বলেছি তোর খেয়াল রাখতে।
— আমার খেয়াল রাখা লাগবে না, আমি নিজের খেয়াল নিজেই রাখতে পারি।

তনুশ্রী চুপচাপ মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছে।
বকুল তাদের কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়াতেই, আবীর থেমে গিয়ে পলকহীন স্থির চোখে তাকিয়ে রইলো।
এমন অন্তরভেদী দৃষ্টি দেখে বকুলের অস্বস্তি লাগলে সে রুমে চলে গেলো।

আবীরও বাসা থেকে বেরিয়ে গিয়ে লিফটের সামনে দাঁড়ালো।

বিষয়টা হাসনা পারভীনের চোখ এড়ালো না।

সারারাত ঘুমাতে পারেননি হাসনা পারভীন উসখুস করে রাত পার হয়ে গেছে।

ভোরে আজানের সাথে সাথে উঠে অজু করে নামাজ পড়ে দীর্ঘ মোনাজাতে করলেন । জায়নামাজে বসেই ভাবতে লাগলেন, দুধ দিয়ে কালসাপ পুষছি না তো? মেয়েটি ভালো নিসন্দেহে কিন্তু এ কোন সর্বনাশের ইঙ্গিত পাচ্ছি? ছেলের চাহনিতে অশনিসংকেত দেখা যাচ্ছে। এই মুহূর্তে মেয়েটিকে বের করেও দেয়া যাচ্ছে না কোথায় যাবে সে ? আর বকুলের তরফ থেকে তো কিছুই দেখা যাচ্ছে না, কোন দোষে পথে নামাবো? ভেবে ভেবে কোন কুল কিনারা পাচ্ছেন না।

উঠে গিয়ে বারান্দায় বসলেন, ভোরের ঝিরিঝিরি হাওয়া শরীর ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে কিন্তু মনে কষ্টের কালো মেঘ তাই প্রকৃতির এই নির্মলতা তাকে স্পর্শ করছে না।
কতক্ষণ ঘোরের মধ্যে বসে ছিলেন জানেননা, গায়ে রোদ লাগাতে উঠে পড়লেন এবং রান্নাঘরের দিকে গেলেন। গিয়ে দেখেন বকুল রুটি বেলছে, এক চুলায় খাসির মাথা দিয়ে মুগডাল অন্য চুলা কুচো আলুভাজি হচ্ছে ঢাকনা তুলে তরকারির চেহারা দেখে রেখে দিলেন। বকুল বারবার মামী দুপুরবেলা কি রাঁধবো কয়েকবার জিজ্ঞাসা করার পরও কিচ্ছু না বলে এমনকি বকুলের দিকে একবারও না তাকিয়ে নিজের রুমে চলে গেলেন।

বকুলের বিষয়টা খুব অবাক লাগলো, এই বাড়িতে আসার বয়সে মামীর এমন আচরণ সে দেখেনি। মনে মনে আহত হলো, কিন্তু কিছু জিজ্ঞাসা করার সাহস হলো না। ভাবলো হয়তো কোন কারণে মন খারাপ তাই এমন করেছেন। মন ভালো হলে ঠিকই ডেকে কথা বলবেন।

সকালের নাস্তার টেবিলেও মামী চুপচাপ রইলেন, বকুল দ্রুত হাতে সব কাজ গুছিয়ে, দুপুরের রান্নাবান্না সেরে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বের হয়ে গেলো।
গলি রাস্তা পেরিয়ে মোড়ে এসে রিকশার জন্য দাঁড়ালো। হঠাৎ সাঁ করে একটা প্রাইভেট কার এসে পাশে দাঁড়ালো, চমকে সরে দাঁড়াতেই দরজা খুলে গেলো। বকুল অবাক হয়ে দেখে আবীর ভাইয়া ভেতরে বসা,
— হ্যালো লোটাস ভেতরে উঠে বসো।
— ধন্যবাদ ভাইয়া আমি এখানেই ঠিক আছি।
— কথা বাড়িয়ো না, উঠে আসতে বলেছি আসো।
অগ্যতা বকুল গাড়িতে উঠে বসলো।

গাড়ী একটি ক্যাফের সামনে এসে থামলো, আবীর নেমে বকুলকে ওর পেছনে আসতে বললো। বকুলের খুব হার্টবিট হচ্ছে, ভয়ে হাত পা কাঁপছে চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। একেবারে কর্নারে একটা ক্যাবিনের ভেতর গিয়ে বসলো দুজন, বকুলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।
— কি ব্যাপার চেহারার এই হাল হয়েছে কেনো? আরে বাবা ভয় নেই তোমাকে খেয়ে ফেলবো না।

বকুল ভয়ার্ত চোখে একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নেয়।
— কি খাবে বলো?
— কিছু খাবো না।
— অন্তত একটা জুস খাও
বেয়ারাকে ডেকে দুটো মিক্স ফুটস ককটেল স্মুদির অর্ডার দিলো।
বকুল উসখুস করতে করতে বললো
— ভাইয়া আমি যাই, আমার ক্লাসে দেরি হচ্ছে।
— আজকে ক্লাসে যেতে হবে না, চুপ করে বসো আমার জরুরি কথা আছে।
— আমি শুনবো না ভাইয়া।
— চুপ শুনতে হবে, আমার কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াও কেনো? আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি এটা তুমি বুঝতে পারো না?
—- আমি ব্যস্ত থাকি ভাইয়া।
—- পড়ালেখা শেষ হতে আর ক’বছর লাগবে।
— বছর তিনেক
— আমি ততোদিন অপেক্ষা করবো।
— কিসের?
— তোমার পরীক্ষা শেষের, তারপর আমরা বিয়ে করবো।
— না এ হয় না, আমি বিধবা, ধর্ষিতা।
— পাশ্চাত্যে এসব ব্যাপার নয়।
— পাশ্চাত্যে ব্যাপার নয় তবে এদেশে অনেক বড় ব্যাপার, পরিবার, সমাজ মেনে নেবে না এই সম্পর্ক।
— আমি তোমাকে নিয়ে বিদেশ চলে যাবো।
— আমি যাবো না।

উঠে বকুল হনহন করে হেটে ক্যাফে থেকে বের হয়ে গেলো।

হাসনা পারভীন টেবিলে খাবার সাজাচ্ছেন, আবীর প্রচন্ড মনখারাপ নিয়ে বাসায় ফিরলো।
ছেলেকে ফিরতে দেখে তার রুমে গেলেন হাসনা পারভীন, গিয়ে দেখেন বাইরের কাপড়জামা না ছেড়েই ছেলে কপালে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। ছেলের কাছে গিয়ে মাথায় রাখলেন
— কি রে বাবু, ফ্রেশ না হয়ে শুয়ে পড়লি?
— ভালো লাগছে না মা।
— কি হয়েছে বাবা? উঠে গোসল করে খাওয়াদাওয়া কর ভালো লাগবে।

আবীর কপালে রাখা মায়ের হাতটা চেপে ধরে বললো
— মা আমি যদি কোন অসহায় দুস্থ মেয়েকে বিয়ে করি তোমরা কি মেনে নেবে না?

হাসনা পারভীনের বুক ধরাস করে উঠে অন্তরাত্মা কাঁপতে লাগলো, নিজেকে সামনে নিয়ে বললেন
— কোথাকার মেয়ে?
— এই ধরো আশেপাশের বা আমাদের কাছাকাছির।

উত্তর শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলেন হাসনা পারভীন, কি জবার দেবেন ছেলেকে? ভেতরটা ভেঙে কান্না আসতে চাইলো। কোন মতে ছেলেকে বললেন
— ফ্রেস হয়ে খেতে আয়।

.
ছেলেকে কিছু বলতে না পারলেও আক্রোশে নিজের চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে হাসনা পারভীনের। কেনো যে বকুলকে আশ্রয় দিলেন, কেনো পড়ালেখা করার সুযোগ দিলেন কাজের মেয়ে বানিয়ে রাখলেই হয়তো ভালো ছিলো। এখন তো মনে হচ্ছে খালকেটে কুমির আনলেন, নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারলেন ।

শেষ বিকেলে বকুল বাসায় ফিরতেই হাসনা পারভীন ধমকে উঠলেন
— এতক্ষণ কোথায় ছিলি?
— রাস্তায় জ্যাম ছিলো মামী।
— জ্যাম ছিলো, অজুহাত আর খুঁজে পাস না, তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাস্তা বানাতে যা। বেশি লাই দিলে মাথায় উঠে বসে একেবারে।

বকুল একেবারে আকাশ থেকে পড়লো, সে কল্পনা করতে পারছে না যে মামী তাকে পথ থেকে তুলে বুকে জায়গা দিয়েছেন, তিনি তার সাথে এই ব্যবহার করছেন।
অপমানে চোখে পানি চলে এলেও, কষ্ট গিলে খেয়ে, হাতমুখ ধুয়ে রান্নাঘরে গিয়ে নাসতা বানাতে লাগলো।

আফজাল আহমেদ দূরে দাঁড়িয়ে সবটুকু দৃশ্য দেখলেন, হাসনা পারভীন রুমে ঢুকতেই বললেন
— মেয়েটার সাথে এমন করছো কেনো হাসু? ওর কি দোষ বলতে পারো?
— ওর কোনো দোষ নেই তা সত্যি, কিন্তু আমি কি করবো বলে দাও রুমার বাবা?
— মাথা ঠান্ডা করো, এত উত্তেজিত হলে সমাধান হবে না।
— মেয়ে সুন্দর, গুণবতী, লেখাপড়াও করছে, কিন্তু জেনেশুনে আমার বাড়ির আশ্রিতাকে ছেলের বউ করি কি করে?
— হুমম বুঝলাম
— সেটাও না হয় চলতো, কিন্তু বিধবা ধর্ষিতা একটা মেয়েকে ছেলের বউ! এ আমি ভাবতেও পারছি না।
— কিন্তু মেয়েটাকে কি করে বাড়ি থেকে বের করে দেই বলো তো।
— হ্যা সেটাই তো ভাবছি, একসময় বুকে তুলে নিয়েছি এখন তো ছুঁড়েও ফেলতে পারছি না।
— হ্যা সেটাই তো।
— আমি উভয় সঙ্কটে পড়ে আছি।
বলেই কাঁদতে লাগলেন হাসনা পারভীন।

.
পরের বেশ কয়েকদিন হাসনা পারভীন বকুলের সাথে তেমন প্রয়োজন ছাড়া কথা বলেননি। বকুলও শামুকের মতো গুটিয়ে নিজেকে রুমবন্দি করে রেখেছে, পারতপক্ষে রুম থেকে বের হয়নি। কাজকর্ম সেরে চুপচাপ ভার্সিটিতে যেতো আসতো।
এমনিতেই কষ্টেভরা জীবন, তার উপরে ইদানীং মামা মামীর আচরণ তাকে অনেক ব্যথিত করছে। বাসার কেউ তার সাথে তেমন কথা বলছে না। মনে বড় শঙ্কা আবার না পথে নামতে হয়, আবার না পায়ের তলার মাটি সরে যায়। মামী সেদিন একটা কথাই বলেছিলেন, “কারো উপকারের বিনিময়ে তার বুকে ছোরা বসাতে নেই।”
বকুল বুঝে গেছে আবীরই তার প্রতি সবার অসন্তুষ্ট হবার কারণ, এবার বুঝি দিন ফুরিয়ে এলো।
বহুদিন পর বকুল অঝোরে কাঁদলো, এই পরিবারের আদরে কান্না ভুলে গিয়েছিলো, আবার বুঝি পুরনো দিন নতুন করে ফিরে এলো, আবার জীবনে অনিশ্চয়তা গিয়ে ঠেকলো। তবে এবার ভেঙে পড়লে চলবে না, এবার কাঁধ অনেকটা শক্ত, মনে অনেক সাহস সঞ্চয় হয়েছে।

দিনকতেক থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে ঘরে, এরইমধ্যে আবীর বন্ধুদের সাথে দলবেঁধে কক্সবাজার চলে গেলো।

বকুল ভাবলো এখনি সুযোগ, কিছু একটা করার এখনি সময়।

.
চলবে

#খেরোখাতার_ছেঁড়াপাতা– ১১

আয়ানের বুকে মাথা রেখে সাবেরা শুয়ে আছে, আয়ান অন্য হাত দিয়ে চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে।

স্বেচ্ছায় ও মন থেকে কাছে আসার যে ব্রত দুজন নিয়েছিলো সেটাতে তারা আজ সফল। একসাথে থাকতে থাকতে চলতে ফিরতে একসময় মায়ার জন্ম নেয়, মায়াটা মাকড়ের জালের মতো ছড়িয়ে যায় সম্পর্কের মাঝখানে । লতা যেমন বৃক্ষকে এক সময় নিজের অলক্ষে জড়িয়ে ধরে তেমনি মানুষও একে অপরের সঙ্গের কাঙাল হয়, চলতে চলতে অভ্যস্ত হয়ে যায়। এভাবেই হয়তো ভালোবাসা জন্মে মায়ার বাঁধনে বেঁধে সংসারে টিকে যায়, একে অপরে আর বাঁধন ছেড়ে বেরুতে পারে না। তেমনি সাবেরা আর আয়ান একসময় একে অপরের কাছাকাছি চলে আসে আর একটা সময় নিজেকে সমর্পণ করে দেয়, একে অন্যের মাঝে ভালোবাসায় বিলীন হয়ে যায়। জেগে যায় স্নায়ু শিরা উপশিরা রন্ধেরন্ধে অনিন্দ সুখের জন্য পাগল হয়ে যায়, ঝড় উঠে দুটি তনুতে একসময় শান্তশ্রান্ত হয়ে সুখের আবেশ ছড়িয়ে থেমে যায় সেই সুখের ঝড়।
তেমনি এক অন্তরঙ্গ মুহূর্ত শেষে ক্লান্তশ্রান্ত আয়ানের বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে সাবেরা। আয়ান প্রশ্ন করলো
— তোমার বাবাকে বাঁচাতে তুমি কিছুই করবে না?
— না।
— তিনি তো তোমার বাবা!
— তিনি একজন অপরাধী।
— তবু্ও বাবা তো?
— অপরাধীর কোন স্ত্রী সন্তান নেই, পরিবার নেই, অপরাধীর একটাই পরিচয়, সে অপরাধী।
— তাহলে একজন উকিল ঠিক করে দাও?
— সে নিজেই পারবে। আর তাছাড়া তার শাস্তি প্রয়োজন, ঈশ্বর পাপের গড়া পূর্ণ হলে যার পাপ তার উপরই ঢেলে দেন। তুমি আর প্লিজ এসব নিয়ে কথা বলো না আয়ান। আমার ভালো লাগে না শুনতে।

আয়ানের মুখে আর কথা যোগায় না, সে চুপ হয়ে যায়।

.
রাত থেকেই নাফিসার ভীষণ পেটব্যথা হচ্ছে, বকুল একা কি করবে কিছু বুঝে উঠতে পারছে না। বিপদের সময় মেয়েটা তাকে আশ্রয় দিয়েছে তার জন্য কিছু করা বকুলের কর্তব্য, কিন্তু কি করবে বুঝতে পারছে না । যাদের সাথে সাবলেটে ওরা থাকে তাদেরকে উপায় অন্ত না পেয়ে বকুল ডেকে এনেছে।
ব্যথা কিছুতেই কমছে না অবস্থা বেগতিক দেখে সবাই মিলে দ্রুত ঢাকা মেডিকেলে ইমারজেন্সীতে নিয়ে যাওয়া হলো সাথে নিলো দুজনার জমানো সমস্ত টাকা।
ডিউটি ডাক্তার সব দেখে বললেন এপেন্ডিসাইটিস এর ব্যথা দ্রুত অপারেশন করতে হবে, নয়তো রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।
জরুরি ভিত্তিতে রাতেই অপারেশন করা হলো, রোগীর সঙ্গী হিসাবে সেবা যত্নের জন্য বকুল হাসপাতালে রয়ে গেলো, সাথের ওরা বাসায় ফিরে গেলো।

দুই দিন পর রোগী কিছুটা সুস্থ হলে তাকে নিয়মাবলি বেঁধে দিয়ে ডিসচার্জ দিয়ে দেয় ডাক্তার। বকুলের কাঁধে ভর রেখে নাফিজা হাসপাতাল করিডোর দিয়ে আস্তে আস্তে বের হয়ে আসছে। হঠাৎ খুব দুর্বল কণ্ঠে কেউ ডেকে উঠলো বকুল…
থমকে দাঁড়ালো বকুল!
কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ভ্রম মনে করে সামনে এগিয়ে যেতেই আবার জোরালো অথচ দুর্বল কন্ঠে আবার কেউ ডাকলো– বকুল, মা আমার।
এবার ডাকটা স্পষ্ট শুনলো দুজনে, নাফিসাকে পাশের একটা বেঞ্চিতে বসিয়ে খুঁজতে লাগলো ডাকের উৎস।

একটু পেছনে এসে খুঁজতে খুঁজতে একটা কেবিনের সামনের দরজায় এসে চক্ষুস্থির হয়ে গেলো, একেবারে সামনের সিটে শুয়ে আছে তার বাবা লোকমান শেখ।
বকুল ধীরেধীরে কাছে এগিয়ে গেলো, মেয়েকে এগিয়ে আসতে দেখে লোকমান শেখ ঝরঝর করে কেঁদে ফেললেন। বকুলও বাবার হাত ধরে কেঁদে ফেললো। সৎমা বাবার পায়ের কাছে বসা, তিনিও আশ্চর্য হয়ে গেছেন, এমনভাবে বকুলকে দেখবেন হয়তো ভাবতে পারেননি।

লোকমান শেখ মেয়ের মাথায় পিঠে হাত বুলাতে লাগলেন, আপ্লূত হয়ে কাঁদতে লাগলেন।
— মা তুই! তুই এইখানে কেমন কইরা?
— বাবা আমার বান্ধবীর অপারেশন হইছে আমি তার সাথে আসছি।
— এতদিন কই ছিলি মা, তোরে তো ভাবছিলাম জনমের তরে হারায়ে ফেলছি। তুই কেমন আছিস মা।
— মইরা বাঁইচা আছি বাবা।
— জাফরগঞ্জের মিয়া সাব বাড়িতে তোর খোঁজে লোক পাঠাইছিলো।
— কি বলো বাবা? ওইটা আস্ত একটা পিশাচ, নরপশু ওর লোক বাড়িতে জায়গা দিও না।
— শুনছি খুনের অপরাধে হেরে পুলিশে ধইরা নিছে।
— সত্যি বাবা! সত্যি!…. শুনে বুকটাতে আমার স্বস্তিতে ভরে গেল , আমার জীবনটারে লণ্ডভণ্ড কইরা দিচ্ছে ওই হারামী মানুষটা।
— তুই যখন বাড়ি থেকে পালাইয়া গেলি ভাবছিলাম জীবনেও তোর মুখ দেখমু না।
— আমি বাড়ি থেইক্কা পলাই নাই বাবা, ছোট মা আমারে বাড়ি থেইক্কা বাইর কইরা দিছিলো। ঠিক কই না ছোট মা?
ছোট মায়ের মুখ পাংশুটে হয়ে যায়, মুখে রা আসে না। বাবা তাজ্জব হয়ে জিজ্ঞেস করে,
— কি? কি কস এইসব?
— হ বাবা, ছোট মার ভাইয়ের কুনজর থেইক্কা বাঁচাইতে আমারে বাড়িত থেইক্কা বাইর কইরা দিছিলো।

ছোট মা এগিয়ে এসে বকুলের হাত ধরে কেঁদে ফেলে,
— আমারে মাফ কইরা দে বকুল, আমি তোরে অনেক কষ্ট দিছি, কিন্তু আমার ভাইয়ের হাত থেইক্কা বাঁচাইতে তোরে আমি সবুজের হাতে তুইল্লা দিছিলাম। এছাড়া আমার কোনো উপায় আছিলো না। আমারে তুই মাফ কর মা, নইলে আল্লাহ ও মাফ করবো না।
— কষ্টে কষ্টে তো জীবন কাটলো ছোট মা, আমি সবই আমার নিয়তি মেনে নিয়েছি। কিন্তু তোমরা এইখানে ক্যান?
— তোর বাবার হার্ণিয়া অপারেশন হয়েছে, আমরা তাই এইখানে আসছি।
— আমারে দেখলা কি কিভাবে ?
— তোর বাবায় দেখছে আর বলতেছে, আমার বকুল, আমি নিষেধ করছিলাম ডাকতে। কারণ কারে দেখতে কারে দেখছে কিন্তু হে শোনে নাই, ঠিকই চিনছে তোরে।

লোকমান শেখ মেয়েকে কাছে টেনে নিলেন, মা রে তুই কেমন আছিস? কোথায় আছিস? কি হালে আছিস? আমারে খুইল্লা ক? তোর জীবনের সব দুঃখ আমার কারণে। আমি যদি শক্ত হইতাম তোর উপর এত অত্যাচার করার সাহস হইতো না তোর ছোট মায়ের। আমারে মাফ কইরা দে মা।
— এইভাবে বইলো না বাবা… আমি এখন ভালো আছি, পড়াশোনা করতেছি চাকুরী করি, কিন্তু মাঝখানের সময়টা কচুরিপানার মতো ভাসতে ভাসতে এক ফেরেশতার বুকে ঠাঁই পাইছিলাম, বুক দিয়া আগলাইয়া রাখছিলো আমারে, আল্লাহ তার ভালো করুন।
— তুই আমার সাথে বাড়ি চল মা, তোরে আর এই শহরে রাইখা যামুনা।
— না বাবা আমি এখন আর কোথাও যামু না, আমার পড়ালেখা আগে শেষ হোক, নিজের পায়ে দাঁড়াই, স্বাবলম্বী হই তখন যামু বাবা। আমার জন্য তুমি শুধু দোয়া করিও বাবা।

লোকমান শেখ মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন।

.
খুনের মামলার মোড় নতুন দিকে ঘুরে গেলো, পুরাতন যত কেসের ফাইল ধামাচাপা দিয়ে রাখা ছিলো একে একে সব ওপেন হতে লাগলো।
মিয়া সাবের বিরুদ্ধে যত আলামত আছে সবই সংগ্রহে নামলেন ওসি সাহেব, জোর তদন্ত শুরু হলো। এমপি সাহেবও যথাসম্ভব সাহায্য করবেন বলেছেন। অথচ তার খুটির জোরে মিয়াসাব এতো অরাজকতা, এত জুলুম, নির্যাতন করতো। কথায় বলে না বিপদের সময় নিজের ছায়াটাও পাশে থাকে না। এলাকায় কানাঘুষা চলছে এবার আর মিয়াসাবের বাঁচার উপায় নেই।
পুরনো মামলায় সংশ্লিষ্টতার সন্দেহে তমিজ সর্দারকেও গ্রেফতার করা হয়েছে, মিয়া সাবের সমস্ত সহযোগীদের খুঁজে খুঁজে গ্রেফতার করা হচ্ছে, অতীত বর্তমানের কেউ যেনো বাদ না পড়ে প্রশাসনের কড়া নির্দেশ।

আসামীদের আদালতে তুলে পুলিশ রিমান্ড চাইলো, আদালত তা মঞ্জুর করলে। রিমান্ডে বেশ কয়েকদিন কথা বের করার সমস্ত পুলিশী কৌশল প্রয়োগ করা হলে সবাই একে মুখ খুঁলতে লাগলো। বর্ডারের কাছ থেকে অন্যতম আসামি মতিনকেও আটক করা হলো। মারের ভয় আর বয়সের কারণে হোক, পুলিশের প্রস্তাবে তমিজ রাজসাক্ষী হতে রাজী হয়ে গেলো।
দীর্ঘ মেয়াদি সময় নিয়ে মামলা চলতে লাগলো।

.
রাহেলা নাওয়াখাওয়া ভুলে হন্যে হয়ে উকিল খুঁজে বেড়াচ্ছেন, যতই খারাপ লোক হোক না কেনো মিয়াসাব তার স্বামী, স্ত্রী হয়ে স্বামীর এমন বিপদে ঘরে তো আর বসে থাকতে পারেন না। সদরে গিয়ে উকিলদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ফিরে আসছেন বারবার কড়া নাড়ছেন । কেউ কেস হাতে নিতে রাজী নন সবাই ফিরিয়ে দিচ্ছেন, দিনরাত সব ভুলে স্বামীকে ছাড়ানোর প্রচেষ্টায় আছেন।
এমপি সাহেবের কাছে গিয়ে হাতেপায়ে ধরে এসেছেন, তিনি কোন সাহায্য করবেন না সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।
নিরাশ হয়ে রাহেলা মিয়াসাবের সাথে দেখা করতে গেলেন,
— ছোট আম্মায় কি ফোন করছিলো?
— না।
— কুনু যোগাযোগ করে নাই!
— ফোন করলে ধরে না, হে আপনের নামও শুনতে চায় না।
— তা চাইবো ক্যান? এখন বড় হইছে, পাখনা গজাইছে, বাপ মা চিনবো ক্যান?
— কাইল একবার ফোন দিমুনি, দেহি ধরে নাকি।
— তাইলে আমার লাইগা কিছুই করতে পারলা না? বেকুব মহিলা সারাজীবন তোমাগোরে লালনপালন কইরা আমার কি লাভ হইলো? বেঈমানের তাবেদারী কইরা গেলাম, সব নিমকহারামের দল।
(স্ত্রী মুখে সব শুনে আক্রোশে ফেটে পড়লেন মিয়াসাব)
— ভালা কাম তো জীবনে একটাও করেন নাই, যদি করতেন তাইলে আর আইজকা এই পরিনতি হইতো না। যত অপকর্ম করছেন সব নিজের খায়েশে করছেন, আমাগো লাইগা করেন নাই।
— চোওওওপ, চোপা বাড়ছে নাহ? বাইর হই একবার থোতা ভাইঙ্গা ফালামু।
— হ আপনে সেই আশায় থাকেন।

.
চলবে

#শামীমা_সুমি