#গালিব_মির্জা
#পর্ব_৯
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া
রাতের অন্ধকার কেটে চারপাশে আলো ছড়িয়ে পড়ছে ধীরে ধীরে। রাস্তার ধারে বড় বড় বিল্ডিংয়ের পাশে দোকানগুলো খুলতে শুরু করেছে। কোথাও গরুর গাড়ি চলছে, আবার কোথাও ট্রাকের হর্নে সকালটা একটু চঞ্চল হয়ে উঠছে। হালকা কুয়াশা ভাসছে বাতাসে, সাথে মিশে আছে সদ্য রান্না হওয়া ভাপা ভাত আর চায়ের দোকানের ধোঁয়ার গন্ধ। রাস্তায় ছুটছে অফিসগামী মানুষ, স্কুলের ইউনিফর্ম পরে বের হচ্ছে বাচ্চারা।
সকালটা এখনও কুয়াশামাখা, রোদ উঠেছে বটে, তবে পুরো ঘর যেনো আধো-আলোয় ঢাকা। গালিবের রুমের জানালা খোলা, বাইরে থেকে হালকা বাতাস ভেতরে ঢুকছে। টেবিলের ওপর বই খোলা, পাশেই রাখা চশমা। গালিব আধশোয়া ভঙ্গিতে বিছানায় বসে খবরের কাগজ পড়ছে। মুখভর্তি নীরবতা, যেনো ভাবনায় ডুবে আছে সে।
এই সময় নিঃশব্দে নিজের রুম থেকে বেরিয়ে এলো তামসী। কালো রঙের টপস, সাথে ওড়না , প্লাজো পরে আছে, চুলগুলো এলোমেলো খোলা। গালিবের রুমের সামনে এসে থমকাল সে। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বুক ধড়ফড় করছে। ভিতরে ঢুকবে, নাকি চলে যাবে– এই দ্বিধায় কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো। সারারাত অনেক ভেবেছে সে। গালিবের একটা ব্যাপারই ভালো লাগে না ওর সেটা হলো হুটহাট ধমক দেওয়া, আর গম্ভীর হয়ে থাকা। এগুলো বাদে ভদ্রলোক একজন চমৎকার মানুষ। গালিবকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে হঠাৎ সাহস সঞ্চয় করে আস্তে করে দরজায় টোকা দিলো তামসী।
গালিব ভ্রু কুঁচকে চোখ তুলল, খবরের কাগজ ভাঁজ করে রেখে দিলো পাশে। দেয়ালঘড়ির দিকে তাকাল, সকাল সাড়ে ছয়টা বাজলো কেবল! এতো সকালে তো কারোর আসার কথা না…
“কে?”
তামসীর গলা কেঁপে উঠলো, ফিসফিস স্বরে বলল
“আমি… তামসী।”
গালিবের ঠোঁটের কোণে একফোঁটা হালকা হাসির রেখা ভেসে উঠলো। তামসী এসেছে!
বিছানা থেকে উঠে বসে সে অলস ভঙ্গিতে দু’হাত মাথার ওপরে তুলে আড়মোড়া ভাঙলো। তারপর নিঃশব্দে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলো।
দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে থাকা তামসীর বুক হঠাৎ কেঁপে উঠলো, হৃদস্পন্দন যেন বেড়ে গেলো কয়েকগুণ। সামনে দাঁড়ানো গালিবের পরনে কেবল একটি ট্রাউজার, উন্মুক্ত বুকের দৃশ্য তাকে আরও অস্থির করে তুললো। তামসীর চোখ এক মুহূর্তের জন্য গালিবের দিকেই আটকে রইলো, তারপরই দ্রুত দৃষ্টি নামিয়ে নিলো লজ্জায়।
“ ভেতরে আয়। “
গালিবের কথামতো দ্রুত রুমের ভেতর ঢুকে দাঁড়াল তামসী। গালিব দরজা আঁটকে দিয়ে বিছানায় গিয়ে বসলো আবার। তামসী চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে শুধু।
“ কী রে? এমনভাবে দাঁড়িয়ে রইলি কেন? “
তামসী ইতস্ততভাবে বলল,
“ আপনি.. আপনি এমন কেন? জামাকাপড় নেই আপনার? “
গালিব অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে নিজের বুকের দিকে তাকালো, তারপর ঠোঁট টিপে হাসি সামলে রাখল। এই মেয়ে আজকাল বারবার তাকে হাসিয়ে দেয়, অথচ গালিব হাসিটা চেপে রাখে। তার মনে হয়, জোরে হেসে উঠলেই বুঝি সর্বনাশ ঘটবে!
“না নেই। তুই শপিং করে দিস আজকে।”
“আমি? আমি কি জব করি নাকি!”
“তোর বর করে। বরের পকেট কেটে কাজিনকে শপিং করে দিবি।”
তামসী হেসে ফেলল জোরে। গালিবও হয়তো হালকা হাসলো।
“বিয়েটা হয়নি এখনও।”
“বিয়ে করতে চাস বলেই তো এই সাতসকালে রুমে এসে বকবক করছিস তুই। নইলে কি আমার সামনে আসতিস?”
তামসী মুচকি হাসল। কথায় লজিক আছে। গালিব ইশারায় তামসীকে ওর পাশে বসতে বললো। তামসী আঁড়চোখে আরেকবার গালিবের দিকে তাকিয়ে দেখলো। ইশ! খালি গায়ে কেমন যেন দুষ্ট দুষ্ট লাগছে ভদ্রলোককে। তামসী নিজের ভাবনাতেই লজ্জায় লাল-নীল হয়ে গেলো। গালিব ওর হাবভাব দেখে বলল,
“ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কল্পনায় লজ্জা না পেয়ে, পাশে এসে বসে সত্যি সত্যি লজ্জা পেলে বেটার হয়৷ “
বিষম খেলো তামসী। গালিব ভ্রু কুঁচকে ফেলল। পানির গ্লাসটা নিয়ে তামসীর দিকে এগিয়ে দিলো সে। তামসী পানিটুকু খেলো। গালিব গ্লাসটা খাটের পাশের টি-টেবিলের ওপর রাখলো গালিব ।
“কী হয়েছে তোর? এত ভ্যাবলা টাইপের হয়ে গেলি কবে থেকে, তামসী?”
গালিবের কণ্ঠে মৃদু ধমকের সুর। তামসী চোখ তুলে তাকালো তার দিকে। সত্যিই তো, সে তো এত ভীতু নয়! তাহলে গালিবের সামনে এলেই কেন যেন চুপসে যায়?
“আপনি এভাবে ধমকালেই আমি আপনাকে বিয়ে করব না।”
দৃঢ় স্বরে বলল তামসী।
গালিব ঠোঁটে হাসি টেনে তামসীর দুই কাঁধে হাত রাখল, তারপর আলতো করে বিছানায় বসিয়ে দিলো।
“ওহ সরি! আমার ভুল হয়ে গেছে। বিয়ের আগে আর কখনো ধমকে কথা বলব না।”
“তারমানে বিয়ের পর ধমকাবেন?”
“অবশ্যই।”
তামসীর মুখ মলিন হয়ে গেল। ভদ্রলোক মজা করছে নাকি ওর সাথে!
ভাবনার ছেদ পড়ল হঠাৎ গালিবের হাতের স্পর্শে। সেদিনের মতো আজও ওর হাত ধরে আছে সে।
“এভাবে হাত ধরে কী দেখেন?” – বিস্মিত তামসী।
গালিব শান্ত ভঙ্গিতে বলল,
“হাতে তেমন কিছু নেই, তবু আমার ভালো লাগে। তোর হাত ধরলেই কেমন এক অদ্ভুত শান্তি পাই।”
সোজাসাপ্টা উত্তর শুনে লজ্জা পাওয়ার কথা থাকলেও তামসী উল্টো হেসে ফেলল।
“বেশ, শুনুন?”
“বল।”
“আমি আপনার রুমে এসেছিলাম—এটা কাউকে বলবেন না। একসাথে শপিংয়ে গেলেই সবাই বুঝে যাবে।”
“ঠিক আছে।”
“বিয়ে করবেন কবে?”
হঠাৎ প্রশ্ন করে ফেলল তামসী। মুহূর্তেই তার গাল লাল হয়ে উঠল। ইশ! কী ভাবলেন গালিব ভাইয়া!
গালিব শুধু মুচকি হাসল।
“এই মাসের মধ্যেই। জানিস তো, আমার এক মাস ছুটি।”
“তারমানে তারপর চলে যাবেন! স্বামী বিদেশি মার্কা মেয়ে হব আমি?”
গালিব হেসে আলতো করে তার কান মলে দিলো। চমকে উঠল তামসী।
“না।”
“তাহলে?”
“তোকে সঙ্গে নিয়ে যাব।”
“সত্যি?”
“তিন সত্যি।”
তামসীর মুখ আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে উঠল। দেশের বাইরে যাওয়ার শখটা এবার সত্যিই পূরণ হবে। তাছাড়া গালিব তো বাইরের কেউ নয়, তাই বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার কষ্টটাও থাকবে না।
কিছুক্ষণ পর তামসী উঠে দাঁড়াল।
“এখন যাই আমি?”
গালিবও উঠে দাঁড়াল। মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সামান্য ঝুঁকে বলল,
“যাবি?”
“হুম।”
“শোন।”
“বলো।”
“বিয়ের আগে আর কখনো একা আমার রুমে আসবি না।”
অবাক তামসী জিজ্ঞেস করল,
“কেন ভাইয়া?”
গালিব দুষ্টুমি ভরা চোখে তাকিয়ে উত্তর দিল,
“ভাইয়া থেকে সাইয়্যা হওয়ার সুযোগ যদি নিয়ে ফেলি, তখন কী করবি?”
কিছু না বলে লজ্জায় ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল তামসী।
আর ভেতরে দাঁড়িয়ে বদ্ধ ঘরে উচ্চস্বরে হেসে উঠল গালিব।
কিছুক্ষণ আগেই তামসীকে নিয়ে শপিংয়ে বেরিয়েছে গালিব। ব্রেকফাস্ট করতে বসেছিলো রাবিন। জানালার ফাঁক দিয়ে ওদের একসাথে বেরোতে দেখেই তার বুকটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগল। চামচে ধরা খাবার হঠাৎই নিস্বাদ হয়ে গেলো। অর্ধেক ব্রেকফাস্ট শেষ করেই কোনো কারণ না দেখিয়ে তাড়াতাড়ি ভার্সিটির পথে বেরিয়ে পড়ল সে।
আজ রাবিনের পরনে সাদা শার্ট আর ব্লু জিন্স। কপালের ওপর চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে, যেন অগোছালো ভেতরের মানসিক অবস্থার প্রতিচ্ছবি। ক্যাম্পাসে এসে এক কোণে সবুজ ঘাসের ওপর হাত-পা ছড়িয়ে বসে রইল। দৃষ্টি শূন্য, ভেতরে ভেতরে ঝড় বয়ে যাচ্ছে তার।
সেই সময়ই ফিজা ওদিকে এগিয়ে এল। রাবিনকে ওভাবে বসে থাকতে দেখে খানিক অবাকই হলো সে। ফিজা রাবিনের সিনিয়র, মাস্টার্স শেষ করেছে কয়েকদিন হলো। আজ ছোটো বোন বিথিকে নিয়ে এসেছে ক্যাম্পাসে, বিথি সদ্য অনার্সে ভর্তি হয়েছে।
দু’বোনের স্বভাব একেবারেই বিপরীত। ফিজা রুক্ষ, মারকুটে ধরনের মেয়ে—সবসময় জিন্স-শার্টে ছেলেদের মতো গেটআপে থাকে। অন্যদিকে বিথি যেন সম্পূর্ণ উল্টো, তার মধ্যে মায়া আর কোমলতার এক অদ্ভুত আভা আছে। দুই বোন পাশাপাশি দাঁড়ালেই যেন শক্তি আর স্নিগ্ধতার এক মিশ্র ছবি চোখে ভাসে।
“কী রে রাবিন? ভেটকিমাছের মতো বসে আছিস কেন?”
ফিজার কণ্ঠস্বর শুনে সামনে তাকালো রাবিন। চোখে পানি চিকচিক করছে। গলায় কাঁপা স্বর,
“সিনিয়র আপু… ভেটকিমাছ কি বসে?”
ফিজা বিরক্তিতে একটা “চ্” জাতীয় শব্দ করে সামনে এগিয়ে এলো। ছেলেটার চোখমুখ দেখে বোঝাই যাচ্ছে, যেকোনো মুহূর্তে ফুঁপিয়ে কেঁদে ফেলবে। শেষমেশ ওর পাশে বসে পড়ল ফিজা।
“সে আমি জানি না। তোর কী হইছে ভাই? ছ্যাঁকা খাইছিস নাকি?”
শব্দটা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠল রাবিন। হঠাৎই ঝাঁপিয়ে পড়ে জড়িয়ে ধরল ফিজাকে।
“যাকে বউ করতে চেয়েছিলাম, সেই মাতারি না-কি আমার ভাইয়ের হবু বউ! আহা আহহহহ… ওরে তামসী রে এএএএ…”
ফিজা অবাক হলেও ছেলেটার পিঠে আলতো চাপর মেরে শান্ত করতে লাগল।
“আহারে! থাক, কাঁদিস না।”
কিন্তু রাবিন থামল না তাড়াতাড়ি। ওর কান্না যেন বুকের ভেতর জমে থাকা সব কষ্ট একসাথে উজাড় করে দিচ্ছিল। কিছুক্ষণ পর ধীরে ধীরে কান্না কমল। আর ফিজা পাশে বসে শুধু মুচকি হেসে গেল।
এমন সরল, ভোলা-ভালা একটা ছেলে–তা-ও আবার সামান্য কষ্টে ভেঙে এভাবে ভ্যা ভ্যা করে কাঁদে! অদ্ভুতভাবে ভালো লাগতে লাগল ফিজার কাছে।
এদিকে দৃশ্যটা দেখে ফেলেছে রাবিনের কয়েকজন বন্ধু। ফিজার সঙ্গে ওকে এভাবে জড়িয়ে থাকতে দেখে তারা হাসাহাসি করতে করতে এগিয়ে আসছে। রকি হাঁক ছেড়ে বলল,
“কী রে মামা? ক্যাম্পাসের মধ্যে এসব কী করছিস?”
রাবিন তাড়াতাড়ি ফিজাকে ছেড়ে দিল। ফিজাও সোজা হয়ে রকির দিকে তাকাল।
“তোদের বন্ধু ভ্যা ভ্যা করে কাঁদছিল। তাই শান্তনা দিচ্ছিলাম।”
সবাই হো হো করে হেসে উঠল। অয়ন ফিক করে বলে উঠল,
“তা তো দেখলাম, কেমন শান্তনা দিচ্ছিলে!”
ফিজা কটমট করে তাকাতেই শার্টের হাতা গুটিয়ে ফেলল। অয়ন সঙ্গে সঙ্গে চুপসে গেল। মাঝখান থেকে রকি এসে ফিজার সামনে দাঁড়িয়ে পড়ল, যেন অয়নকে বাঁচাচ্ছে। ক্যাম্পাসে সবাই জানে, ফিজা ছেলেদের মতোই মারকুটে স্বভাবের মেয়ে।
“ফিজা আপু, মজা করেছে ও। তুমি রাগ করতেছ কেন?”
রকির কথায় থেমে গেল ফিজা। এদিকে রাবিন ভেতরে ভেতরে কেবল একটাই ভাবছে– তামসী আসলেই এক হাড়বজ্জাত মেয়ে। এতদিন ধরে রাবিন ওকে কতবার প্রপোজ করলো কিন্তু একবার বিয়েতে হ্যাঁ বলল না। অথচ গালিব প্রস্তাব দিতেই ঢং করে রাজি হয়ে গেল! এসব ভেবেই আবারও ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে উঠল রাবিন।
সবার চোখ বিস্ফারিত। একদম সহ্য করতে না পেরে রকি গিয়ে রাবিনের গালে হালকা ঘুষি দিল। ব্যথায় থেমে গেল রাবিনের কান্না। ফিজা কপাল কুঁচকে তাকাল রকির দিকে, রাবিনকে কেন মারল ও? ছেলেটা যে কতটা ভালো, সেজন্যই তো এমনভাবে কাঁদছে।
রকি দাঁত চেপে বলল,
“চুপ শালা! আর একবার মরার মতো কাঁদলে আরেকটা মারব। তোর কাজিন তো তোকে কোনোদিন পছন্দ করেনি, না তো কিছু বলেছে। তুই জানতিস না বলে পছন্দ করেছিলি, ঠিক আছে। কিন্তু এখন তো জানিস, সে তোর ভাইয়ের হবু বউ। তাও এমন করছিস কেন? বলদের বাচ্চা!”
রাবিন মুখটা দুঃখী করে ফিসফিস করে বলল,
“তুই বলদ, তোর বাপ বলদ, তোর দাদা বলদ, তোর নানা বলদ, তোর মামা-চাচা সব বলদ… আর তোর ভবিষ্যত বউও বলদ…”
সবাই হো হো করে হেসে উঠল আবার। রকি এগিয়ে গিয়ে রাবিনকে জড়িয়ে ধরল।
রাবিনও ভেতরে ভেতরে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল– যা হওয়ার হয়ে গেছে। তামসী এখন তার ভাবি, নট ক্রাশ। তাই আজ থেকে ওকে কেবল একটাই
নামে ডাকবে তানসীকে, সেটা হলো ভাবি!
শোরুমে ঢুকতেই চারপাশের ঝকঝকে আলোয় আরও মনটা ফুরফুরে হয়ে উঠলো তামসীর। মেয়েটা একটু ইতস্তত করে গালিবের পেছনেই হাঁটছিল। গালিব বেশ স্বচ্ছন্দ ভঙ্গিতে একে একে শাড়ি, লং গাউন, টপস বের করে দেখছিল।
“এইটা কেমন লাগছে?”
একটা অফ-হোয়াইট লং গাউন তুলে ধরল গালিব। তামসী আয়নার সামনে গায়ে ধরতেই থমকে গেল। মৃদু লাজুক হাসি ফুটে উঠল মুখে। ভদ্রলোকের পছন্দ আছে বলতে হবে।
“খারাপ না… তবে দামটা হয়তো বেশি…”
গালিব গালিবের কথা থামিয়ে দিল।
“তুই দাম দেখবি না। আমি দেখব। তোকে শুধু সাজতে হবে। সন্ধ্যায় লং ড্রাইভে যাবো ভাবছি। এটা পরেই যাবি তখন৷ ”
তামসীর গাল লাল হয়ে উঠল।
“ ঠিক আছে। আপনি তো দেখিছ পুকি শখের বেডা। “
গালিব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“ কী?”
“ পুকি!আপনি আমার পুকি শখের বেডা।”
“ কী যে বললি কিছু বুঝলাম না। যাইহোক রাতে বুঝে নেবো। “
তামসী চোখ বড়ো বড়ো করে ফেলল হঠাৎ। গালিব ফিসফিস করে বলল,
“ পুকি কাকে বলে সেটা বুঝে নেবো বলেছি, অন্য কিছু না। “
তামসী হাসলো শুধু কিছু বললো না। গাউন নেওয়ার পর এরপর গালিব নিজের পছন্দমতো একটা লাল-কালো শাড়ি তুলে নিল।
“এইটা তুই পরলে সবার চোখ আটকাবে।”
তামসী মুচকি হেসে মাথা নেড়ে বলল,
“সবাই নয়, আপনার চোখেই আটকাবে। সোজা কথায় বললেই হয়। “
গালিব চোখে চোখ রেখে মৃদু স্বরে উত্তর দিল,
“ হু ওটাই, আমার চোখেই আটকালে যথেষ্ট।”
তামসী হাসলো। গালিবের সাথে এতক্ষণ ধরে আছে অথচ সে ধমক দেয়নি তাতেই তামসী মহাখুশি।
শাড়ির সাথে মিলিয়ে স্যান্ডেল, ব্যাগ আর হালকা জুয়েলারিও কিনে দিল গালিব। বিক্রেতারা অবাক হয়ে তাকাচ্ছিল এই কারণে– এমন ভদ্রলোক, যিনি প্রতিটা জিনিস বেছে নিচ্ছেন একেবারে যত্ন করে। লিপস্টিকের কালার কোনটা কেমন সেটাও গালিবের হাতে লাগিয়ে লাগিয়ে চেক করে কিনেছে তামসী। ভদ্রলোক তার সঙ্গীনিকে এভাবে ট্রিট করছে সেটা দেখেও সবার ভালো লেগেছে।
সবকিছু কেনাকাটা শেষে ক্যাশ কাউন্টারে দাঁড়িয়ে যখন বিল পরিশোধ করছিল গালিব, তামসী পাশে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে বলল,
“এত খরচ করতে হলো কেন?”
গালিব শান্ত ভঙ্গিতে উত্তর দিল,
“তুই আমার হবু বউ। তোর উপর খরচ করলে সেটা অপচয় নয়, ইনভেস্টমেন্ট। এ বিষয় বিস্তারিত সন্ধ্যায় বলবো। ”
তামসী মুখ ঘুরিয়ে হাসিটা চাপা দিল। বুকের ভেতর কোথাও যেন নরম একটা প্রশান্তি নামল। এরকম মারাত্মক একজন পুরুষকে সে কীভাবে রিজেক্ট করতে চেয়েছিল সেই ভেবে একটুআধটু খারাপও লাগলো।
চলবে